Wednesday, November 20, 2019

বহুব্রীহি


মানুষ মারা যায় তখন নাকি সব শেষ ;
কিন্তু তার আগেও কেউ কেউ শেষ হয়।
যখন কোনকিছুই আর দাগ কাটেনা।
বন্দুকের গুলি দাগ কাটেনা,
প্রাক্তনের আকুতি দাগ কাটেনা,
যুক্তিতর্ক বাদ-বিবাদ বিস্বাদ লাগে,
নারীর ছলনা দাগ কাটেনা -
রাজনীতি, ঘটি-বাঙালের বাইনারি,
অথবা ইসিজিতে ওঠা শেষ কম্প্লেক্স,
কিছুই আর দাগ কাটেনা।
অথচ সে হাসে, মেশে নির্বিকার প্রেমিকের মত-
বিকেলের পুকুরে হাঁসের মত সদা ব্যস্ত,
নাহলে নদীর পাড়ে যে ন্যাড়া গাছ টা -
এখনো জীবাশ্ম হতে বাকি আছে তার মত,
রাত নামার অপেক্ষা করে।
জীবন এগিয়ে চলে,
গুহায় ধ্যানমগ্ন যোগীকে প্রলুব্ধ করতে চায়-
ভাবনারা স্বর্গের অপ্সরা হয়ে -
সে দেখে, শোনে, হাসে আবার ডুবে যায়,
তবু কিছু দাগ কাটেনা ।।





কিছু মানুষ ভাবে তাকে কে কি ভাবলো যায় আসে না। আসলে তাদের একসময় অনেক যায় আসতো৷ তারপর বুঝতে পেরেছে তাদের সাইকোলজি বোঝানো সম্ভব নয়। অনেকে দূরে সরে গেছে। বোঝাতে গেলে আরো ভুল বুঝবে লোকে। তাই এখন আর যায় আসেনা।





বোবা মেঘে বৃষ্টি আসে,
যে পথের দুদিকে কালো অন্ধকার সাজানো থাকে -
সেই পথের শেষ দিকে মৃত্যুর আলো দেখা যায়।
মৃত্যু যখন আশার আলো দেখায় -
জীবন হয়ে দাঁড়ায় অন্ধকূপ।।





যাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা পাড়ার মোড়ে -
সে মেসেজ দিলে যা হয়।
আনন্দে মন ফুলকো লুচির মতো -
ঘরহারা পাখি আমাদের মত কত শত,
ঘরে ফেরে।
ছুঁতে চাই না, ধরতেও চাইনা।
অন্ধকার হলের কোণ বা ঝোঁপঝাড় -
কিছুই চাইনা।
একটু তোমাকে দেখতে চাই -
 এই ক্ষুদ্র দাবী নিয়ে হয় শুরু।
দোতলার জানালায় তোমার বসে থাকা খোলা চুলে -
আমিও মাঝে মাঝেই চলে যাই ওই রাস্তায় -
পথ ভুলে।
হেসেছিলে আমায় দেখে,
আমার গালে পড়েছিল টোল।
এভাবেই কয়েক বছর চলে।
পথ ভুলে।
তারপর সফল কোন কাঁধ ঝড় নিয়ে আসে,
ময়ূরপঙ্খী করে তোমাকে বসিয়ে নিয়ে যায় -
অলীক সুখের আস্তানায়।
আমি হয়ে যাই ঘরহারা পাখি,
উড়ে বেড়াই এদিক সেদিক বন বাদাড়ে -
যদি কোনদিন পাই দেখতে সে হাসি।
আমাকে লাগবেনা জানি  -
সুখী ঘরে কবিদের ঢোকা মানা।
অপেক্ষা করে যাই, তবু একটা মেসেজ আসেনা।
সুখী ঘরে কবিদের ঢোকা মানা।
সফল কাঁধে চেপে পায়ে মাটি লাগেনা,
আর আমি মাটি, গাছ, পাখি হয়ে আছি।
খুব বেশী কিছু চাইনি,
চেয়েছি শুধু একটু হাসি।
কিন্তু সে হাসি প্লেটনিক প্লেটে মাংসপিণ্ড হয়ে -
খেয়ে যায় যান্ত্রিক মৌমাছি।।




হলুদ গোলাপ


আবছা আলোতে বসেছিলাম নদীর পাড়ে,
একা, একদম একা -
চাঁদ ও একা,
কিন্তু তাকে হাজার নক্ষত্র প্রেম নিবেদন করে।
আমার চাঁদের মত কোন লবি নেই।
আমি নিতান্ত তুচ্ছ শামুকের মত
 একা, একদম একা-
মাটিতে বসে স্রোত গুনছি।
আকাশে তাকিয়ে কুয়াশার ওড়নার আড়াল থেকে-
জোনাকি র মত উঁকি দিয়ে আলপনা কাটছি।
যে আকাশে পাখি ওড়েনা সেটা কিসের আকাশ ;
যে প্রেম ফকির লালন জানেনা সে কিসের প্রেম -
নেটিজেন এর ফোন বেজে ওঠে,
বিচ্ছিন্ন পৃথিবী জুড়তে চায় সুড়ঙ্গ পথে -
উন্মত্ত নীহারিকার সাথে।
জেলে বন্দী আসামীর মত ছটপট করে কুশীলব-
জীবনের নাটকে তারা ক্লান্ত।
মনের আয়না আজ ভাঙচুর -
প্রত্যেকটা কাঁচখন্ড আঙুল তুলে প্রশ্ন করছে -
প্লেটনিক হাঁটাচলা কবিতা ছাড়া কোথায়?
নদীর স্রোত উত্তর দেয় -
আর যাই হোক সে ট্র‍্যাজেডি আনেনা  ||




চারিদিকে ধরাধরি খেলা চলছে -
এ তাকে ধরছে, সে একে ধরছে।
কারোর সময় নেই।
কারোর সময় নেই -
কবি হওয়ার।
পাড়ার মাসিমা তার মেয়ের জন্য ছেলে ধরতে ব্যস্ত,
পাড়ার কাকিমা তার ছেলের জন্য -
ভালো বাড়ি, যেখানে অর্থলাভ আছে,
সেই বাড়ির উচ্চ শিক্ষিত ঘরোয়া মেয়ে খোঁজে।
ছোটবেলার লুকোচুরি ভুলে গিয়ে -
ছেলে মেয়েরা ধরাধরি তে চোখ বোজে।
চোখ খুলে সকাল হলে বাথরুম সেরে,
রুটিন ঘনিষ্ঠতা -
তারপর ডিম পাঁউরুটি ফ্রুটজুস গিলে,
ছেলে বেরোলো টাকা কালেকশনে।
ফিরে এসে রুটিন হাসি,
কখনো রুটিন রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানি -
বা দুদিনের বোহেমিয়ান জীবনের ছবি আপলোড।
বছর পেরোতে না পেরোতো শালী হল মাসি।
নতুন অতিথিকে বলে- কথা বলো।
সে কি অদ্ভুত আব্দার, চাপাচাপি।
চাপ খেয়ে একদিন বলে ওঠে বাপি -
ব্যাস, সে ভুলের শাস্তি তাকে বয়ে বেড়াতে হয়,
সারাটা জীবনময়।
ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখানো -
তারপর আবার শুরু হবে ধরাধরি।
জীবনে কি করলেন?
এ জীবনে প্রেম কোথায়, কবিতা কোথায়-
দুটো রঙীন রেমন্ডস্ আর বেনারসী দিয়ে-
তুমি আকাশ রাঙাতে চাও!???




আজব এ যুগ,
ঘৃণার ভিডিও ভাইরাল,
আর প্রেমের কবিতা ব্যর্থ প্রেমিকের মত-
অন্ধকার ঘরে ছটপট করে মরে।।




অনেক বোঝাতে চেয়েছি নানাভাবে -
বোঝোনি।
সরাসরি বলতে পারিনি কখনো।
তুমি চলে গেছো অন্যের হাত ধরে সুখ খুঁজে নিতে।
আর কতভাবে তোমাকে বোঝাতে পারি,
একবারো ভেবে দেখলেনা যে আমি নারী।
আমি অব্যক্ত শিলালিপি,
তুমি সম্রাট - এসে ভাষা দাও।
তুমি সেই প্রথম পুরুষ, প্রথম ভোর।
তোমার কাছেই রোজ এসে একটিবার থামি-
তুমি আমার, তোমার মধ্যে-
একমাত্র আমি।
অথচ ওরা বলেছিল তুমি বৃষ্টির মত,
অন্য কেউ সে বৃষ্টিতে ভিজলে মন খারাপ করতে নেই।
আজ তবে কেন এ অঝোর বৃষ্টিপাত।
আমি অন্যপুরুষ বেছে নেবো ভেবেও,
কেন তোমার দিকে চেয়ে থাকি,
মুক্তির আশায়।।


আমার পৃথিবী কেন এমন হয়না?
যেখানে কোন ঝগড়া নেই,
যে জীবন এর শুরু কান্না দিয়ে,
সে যেন কাঁদতে পারে, হাসতে পারে।
আমার পৃথিবী কেন এমন হয়না?
যেখানে যারা কাছে, তাদের সাথে দূরত্ব থাকেনা,
যারা দূরে তারা কাছে এসে যায়।
আমার পৃথিবী কেন এমন হয়না?
যে সংসারে সবাই আমরা রাধা -
পরকীয়াতে সবাই আমরা বাঁধা,
সেখানে কোন ধর্ম নেই,
ঘৃণা নেই -
নেই কোন ফেসবুকে ভাইরাল ধর্মীয় নির্যাতন,
আছে শুধু মানুষ আর প্রেম।
আমার পৃথিবী কেন এমন ?
লাখ টাকা খরচ করে মাংস বিলি,
লাখ টাকা গয়না -শাঁখা-পলা পরে,
বধূ ঢোকে ঘরে নির্যাতিতা হতে,
কোথাও বা হয় স্বামী নির্যাতন।
আমার পৃথিবী কেন এমন হয়না?
যেখানে ভালোবাসলে বিয়ে করার তাগাদা নেই,
বিয়ে করলে নিয়ম-নীতির তাগাদা নেই,
সব মেনে নির্যাতনের বালাই নেই -
আমার পৃথিবী কেন এমন হয়না?


১০

কেউ কবিতা লিখে যখন পড়তে বলে-
আমার গায়ে জ্বালা ধরে। 
মনে হয় থাবড়ে দিই। 
সেটা আমি। 
কোন একবেলা আবার নেশার মত -
ভালো কবিতার জন্য হাহাকার করি, 
সেটাও আমি। 
কেউ আঁকতে বললে, 
মুখ থেকে চার অক্ষরের নীচে শব্দ বেরোয় না। 
অথচ আমিই কখনো আট প্রহর না খেয়ে-
মাস্টারপিস আঁকতে চেয়েছি মত্ত বেলায়। 
বলিউডি গান মাইকে বাজলে,
কান চাপা দিই। 
আর আমিই কখনো  নিশুতি রাতে, 
জ্যাকেট গায়ে শব্দ শিকারে বেরোই। 
মেয়েরা হেসে তাকালে,
 মাথা নীচু করে অন্য দিকে পালাই,
এই আমিই নাকি প্রেমিক কখনো-
চোখে চোখ রেখে বলিষ্ঠ নমনীয়তায়। 
রাস্তায় মারামারি দেখলে, 
না দেখার ভান করি-
নিজের সাথে অন্যায় হলে মেনে নিই। 
এই আমিই কখনো, 
বিদ্রোহের মুখ হয়ে উঠি। 
প্রত্যেকটা চেতনা আজ আমি,
নারী-পুরুষ-তৃতীয় লিঙ্গের সবাই আজ আমি;
ঘাস থেকে শিলিং এর টিকিটিকি, 
অথবা নারকেল গাছের গা ধরে বয়ে চলা পিঁপড়ে,
কিংবা তোমার বাড়ির সখের দামী আসবাব। 
এর প্রত্যেকটা আমি। 
আবার কেউ আমি নই।


১১

ঠিক কি সবাই, নাকি কেউ নয় বহুব্রীহি 
কে ঠিক, কে ভুল এই নিয়েই চলছে জীবনে যুদ্ধ -
ভাঙা জানালায় ইশারা দিয়ে আলোর পথে বুদ্ধ।। 

১২

দেশবাসীর সেবা করতে রাষ্ট্র মানুষ খুন করে,
দেশসেবার প্রতিযোগিতায় পার্টিকর্মী মরে।


১৩

বিজয়ীর হাত সবাই ছুঁতে চায়,
 হেরে যাওয়া চোখে মন দিয়ে 
যে নিঃস্ব জীবন কাটায় -
তাদের জয়গান হোক।
কবিতা সবাই লেখে,
কবি হয় কয়জন? 
সবাই চায় পারফেক্ট জীবন,
ক্লাস পাঁচ থেকে আমরণ -
অপূর্ণতার শিশিরে ভেজা ঘাসে,
 নাকি খালে পায়ে হাঁটতে নেই। 
যে সাহস করে নিঃস্ব হতে চায়,
তাদের জয়গান হোক। 
সবাই সখের বোহেমিয়ান ট্রাভেল ব্লগার, 
ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ভরে ওঠে-
বোহেমিয়ান জীবনের কাহিনী তে মেতে। 
যে সাহস করে যাযাবর একা, 
মাসের পর মাস -
পকেট ফাঁকা, 
তাদের জয়গান হোক।। 

১৪

ডাক্তার কে ডাক্তার, পুলিশকে পুলিশ -
উকিলকে উকিল ভেবে গেলে। 
এদেরকে মানুষ ভাবলে কবে? 
যাকে মানুষ হিসেবে চেনোনা, 
তার কাছে মানবিকতা আশা করতে নেই। 
আসলে নিজেও মানুষ হিসেবে নিজেকে জানো নাকি -
তুমি কোন রঙীন রাজনীতির সত্যে বিশ্বাস করো। 
বিশ্বাস করো একমাত্র তোমার ভগবানই মসনদে এলে -
পৃথিবীতে সাম্য আসবে।
এইদিকে কে নেবে মানুষ সেবার গণতান্ত্রিক অধিকার-
লড়াই চলে। 
এ লড়াই থামার নয়, থামবেও না। 
রক্ত বয়, তবু সাম্য আসেনা। 
ভগবানও প্রশ্ন করে -
তুমি নিজেকে মানুষ হিসেবে চেনো নাকি, 
তুমি কোন ধর্মের জলে পা ধোও!!?? 
কেউ নিজেকে মানুষ বলে না আর -
ঠিক না ভুল, সাদা না কালো ;
ডান না বাম, মন্দ না ভালো -
এই বাইনারির ফাঁদে তৃতীয় বিশ্ব। 
কেউ কাউকে মানুষ ভাবেনা আর। 


১৫

জীবন খুব রূক্ষ আমি জানি, 
তবু মনে রোমান্স আনি, 
যেভাবে রোজ সকালে সূর্য ওঠে এক নতুন আশা নিয়ে,
যেভাবে রোজ নদী বয়, 
পাখি ডাকে -
আমিও সেখানে এক কবি পালতোলা.. 
তুমি যখন ব্যালকনিতে চুল খোলা -
একশ মা-ইল দূর থেকে আমি দেখবো চোখ বুজে, 
চোখের দেখা মিছে বাঁধন খুলে -
বাঁধন ছাড়া বাঁধন গেলো মিলে,
সেই হাওয়ায় ভেসে গিয়ে, 
জ্যোত্স্না রাতে ভিজবো। 
অনেক বাঁধন মাঝেও তুমি মানবে তোমায় একা -
তোমার শিথিল ডোপামিনের কারণ আমি লিখবো।।

১৬

 তুমি একদিন হাসলে, 
আমি হাসলাম।
তুমি একদিন মাথা নীচু করে পেরোলে, 
আমিও।
তারপর তুমি হাই র‍্যাংক এ চলে গেলে,
আমি ও প্রেমিকা পেলাম। 
একদিন বুঝলে আসলে দুজনেই হেরে গেছি,
আমি ব্রাত্য হলাম।।


১৭

এক এক করে সবাই চলে গেছে, 
যে মেঘ দেখে চিঠি লিখতাম , চলে গেছে -
যে আকাশের দিকে হাঁ করে চেয়ে তারা গুনতাম 
সেটা কংক্রিটে মোড়া। 
যে গাছের তলায় বুক ভরে নিতাম সবুজ নিঃশ্বাস -
সেখানে পুলিশ পাহারা দেয়। 
অতীত চলে গেছে, বন্ধু চলে গেছে, 
গান লেখার সংগী চলে গেছে, 
ধৈর্য চলে গেছে, সব শেষে তুমি ও চলে গেছো। 
পড়ে আছি শুধু আমি আর আমার কঙ্কাল -
নিঃশব্দে নিঃশেষ। 
তবুও এ মনে পুলক অশেষ, 
যে হাত জাপটে ধরতো সে চলে যেতে সামলেছি,
যে আমার কবিতা শুনে কেঁদেছে -
সেও অন্যের হাত ধরে জানিয়েছে বিদায় সম্ভাষণ।
জানিনা আজ তবে কেন এত কষ্টের কথা বলো-
তুমি নিজের পথে নিজের জন্য চলো। 
আমার জন্য এ গাছ ফুল ফল পাখি রাখা থাক -
আমি এ সবার। । 


১৮


গাছ, ফল-ফুল, আকাশ-বাতাস-পাখি ;
আমাকে দেখাতে হবে আমি কত সুন্দর -
তাই আরেকটু রোদ পড়ুক ফেশ ওয়াস করা গালে। 
গাছ, ফল-ফুল, আকাশ-বাতাস-পাখি ;
আমাকে দেখাতে হবে আমি কত জানি -
তাই ডিগ্রীর জন্য জাল ফেলা, মন্দ কপালে।  
গাছ, ফল-ফুল, আকাশ-বাতাস-পাখি ;
আমাকে দেখাতে হবে আমার দাম কত-
হিসেব কষে কথা বলবো আমি,
কীটস্ কে কীটনাশক দিয়ে মেরে ফেলেছি। 
গাছ, ফল-ফুল, আকাশ-বাতাস-পাখি ;
আমাকে দেখাতে হবে আমার শিল্প -
বিজ্ঞাপনের বাজারে কে খোলা আকাশে 
আপনমনে জীবনানন্দ হতে চায়? 


১৯

কিছু জিনিস ভেঙে গেলে আর আগের মত ফেরেনা, 
সে ফিরে আসতে চাইলেও,
এমন কিছু ঘটে যাওয়া স্মৃতি, 
কোন রাবারে মোছেনা -
আর ফেরানো যায়না। 
ছোটবেলায় যে খেলনা গাড়ি ভেঙে গেছিল,
স্কুলের কোন এক বন্ধু যার নাম ভুলে গেছি,
কথা মনে আছে।
কলেজের কোন এক ঠিক নিজের মত ব্যথিত হৃদয়, 
কাউকে আর ফেরানো যায়না।
মনকে এই সহজ হিসেব বোঝানো যায়না, 
অযথা মেঘের মত জমে থাকে একলা মাঝরাতে। 
কবিমন কাঁদতে চায়,
কপালে বন্দুক ঠেকায় সৈনিক। 
কান্না ভুলে কবিতা লিখে যায়। 


২০

বিলাসবহুল ফ্ল্যাট চাওয়ার মাঝে, 
কয়েকটা কবিতা চাই তোমার কাছে।
আমি এমন মেয়ে,
যার পার্সে শোকানো ফুল রাখা আছে।
ওকে কিনে দিও শাড়ি, 
দোতলা ঘর, দামী গাড়ি। 
আমার জন্য বাঁচিয়ে রেখো 
দুমুঠো স্নিগ্ধ নিঃশ্বাস। 
নিঃসংগ চাঁদের সবুজ পৃথিবী।।

নেহাত কল্পবিজ্ঞান, রূপক নয়

তারিখটা ছিল ১০/০৪/২০১৯.. পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় দিন হতে পারতো। ওইদিন প্রথম ব্ল্যাকহোলের একটি ছবি পৃথিবীর সামনে আসে। কিন্তু হয়ে গেল মানব সভ্যতার বিদায়ের শুরুর দিন। তারপর পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে গেছে। ২০১৯ এর দশ বছরের মধ্যে চীন, রাশিয়া ও জার্মানীর একটা বড় বিজ্ঞানীর দল মিলে ব্ল্যাকহোলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। মহাকাশে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা space station এর ডেটা থেকে। তারপর থেকেই শুরু হয় আসল খেলা। গোপনে কৃত্রিম নক্ষত্র তৈরি করে তার শক্তি কাজে লাগাতে শিখে যায় রাশিয়া। ফসিলস্ ফুয়েলের ধারণা ফসিলস্ হয়ে যায়।
চীন ও পিছিয়ে থাকেনা। চৈনিক মিলিটারিতে আরো দশ বছরের মধ্যে সিংহভাগ দখল করে রোবোট ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শুধু তাই নয়, এয়ারপোর্ট, হাসপাতাল, রাজনৈতিক নেতারাও চীনে নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন রোবোট। এদিকে রাশিয়া থেকে মংগল গ্রহে কৃত্রিম নক্ষত্র এর শক্তি কে কাজে লাগিয়ে বসতি স্থাপন করে ফেলেন কিছু বিজ্ঞানীরা। আমেরিকা চেষ্টা করেও বানিয়ে উঠতে পারেনি ওই কৃত্রিম নক্ষত্র। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধার্মিক প্রতিষ্ঠান গুলো এর বিরোধিতা করতে থাকে। রাজনৈতিক বিরোধ হতে থাকে। উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন জার্মানীর বিজ্ঞানীর একটা বড় দল একটা গোষ্ঠী খোলেন যেখানে একটা এন্ট্রান্স দিয়ে ঢোকা যায়। আইকিউ টেস্ট একরকম। সেটাও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রিত। সেই গোষ্ঠীতে নাম লেখায় রাশিয়া, চীনের নামী বিজ্ঞানীরা। কারণ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন তাদের কাজে বাঁধা দিচ্ছিল৷ গোষ্ঠীর নাম দেওয়া হয় জেন-জেড্।
সেই গোষ্ঠীর কিছু বিজ্ঞানী তাদের প্রচেষ্টায় বানিয়ে ফেলেন ২০৫০ সালের মধ্যে স্পেস-টাইম ট্রাভেল করার ক্ষমতা। প্রথম পরীক্ষা হবে। কিন্তু যাবেন কে? যারা নামী বিজ্ঞানী তারা অনেকেই যেতে রাজী নন। যারা যেতে রাজী তাদের আবার গোষ্ঠী ছাড়তে রাজী নয়। অগত্যা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল জেন-জেড্ এ সদ্য যোগ দেওয়া এক ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্র ও একজন ইংল্যান্ড এর এস্ট্রোনট এলেক্স। তারাও বিজ্ঞানের স্বার্থে রাজী। কোনরকম বিপদ ছাড়াই তাদের মহাকাশ যান মহাকাশে তৈরি করা একটা ওয়ার্মহোল এর মাধ্যমে পৌঁছে গেলো ২১০০ সালে। ভারতীয় বিজ্ঞানীর অনুরোধে তাদের ল্যান্ডিং ফিক্স করা হল ভারতের স্পেস রিসার্চ সেন্টার এ। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ল্যান্ডিং এর আগে কোন মানুষের সাথে কথা বলার অনুমতি মিললনা। তারা পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিয়ে এসেছেন এই আনন্দ তো আর যাই হোক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাথে ভাগ করা যায়না। এলেক্স বললো তার একটু বিশ্রাম দরকার৷ তাই বিলম্ব না করে অত না ভেবে ল্যান্ড করতে৷ চন্দ্র মেনে নিলো। ল্যান্ড করতেই তাদের অবাক করে অভ্যর্থনা জানালো কিছু সশস্ত্র রোবোট৷ তারা বললো - "ওয়েলকাম স্যার৷ উই আর ওয়েটিং ফর ইউ ফর ৫০ ইয়ারস্। উই আর অর্ডার্ড টু টেক ইউ টু জেন-জেড্ চিফ্। প্লিজ কোওপারেট।"
চন্দ্র এইটা ভেবে হতভম্ভ হয়ে গেল তাদের গোষ্ঠী ভারতেও রয়েছে। অথচ পঞ্চাশ বছর আগে সে ছিল প্রথম ভারতীয় মেম্বার ৷ চিফ্ এর ঘরে যেতে যেতে আরো অবাক হল চন্দ্র। কোথাও ভারতের পতাকা নেই। যে কটা পতাকা উড়ছে প্রত্যেকটা জায়গায় একটাই চিন্হ "জেড্"!!
এলেক্স এর দিকে তাকাতে এলেক্স বিস্মিত মুখে চন্দ্র এর মুখের প্রশ্ন কেড়ে বললো - "হু এন্ড হোয়াট দ্য ফাক্ ইজ হ্যপেনিং হেয়ার!? "
চন্দ্র কিছু বলার আগেই রোবোট বলে উঠলো - "ইউ আর নট এলাওড টু সে দ্যাট স্যার। "
এলেক্স উত্তেজিত হয়ে গেল - "হু আর ইউ! ফাকিং মেশিন৷ "
রোবোট টা উত্তরে সজোরে এলেক্সের মুখে ঘুসি চালালো। তারপর বললো - "ইয়া দ্যট্স রাইট৷ আই ফাক্ড ইউ। টেস্ট ইউর ব্লাড। নাও শাট আপ্। "
ভয় পেলো দুজনেই। কিছুক্ষণ এর মধ্যে চলে এল তারা চিফ্ এর ঘরে। চিফ্ এর ঘরের রোবোট হ্যান্ডওভার নিল দুজনকে। আগের রোবোটগুলো বেরিয়ে যেতেই আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে চিফ বেরিয়ে এলেন- "ওয়েলকাম টাইম ট্রাভেলার্স। "
এলেক্স বললো - "ইজ দিস আ ওয়েলকাম!? "
চিফ্ - ওহ্ সরি ফর দ্যট। রোবোটরা মানুষ নয় সেটা বুঝতে হবে।
চন্দ্র - "এখানে কি চলছে? চিফ্ কথাটার মানে এখানে কি? পতাকায় জেড্ কেন? আর এলেক্স কে এভাবে অভ্যর্থনা দেওয়ার মানে কি? আমরা তো বিজ্ঞান আর গোষ্ঠীর স্বার্থেই এই ট্রাভেল এ রাজী হয়েছিলাম..."
চিফ্ - " ডু ইউ রিয়েলি থিংক সো? তোমরা রাজী হয়েছিলে নাকি তোমাদের ভাবানো হয়েছিল যে তোমরা রাজী হয়েছিলে? ( হেসে উঠলেন চিফ্) ইট ওয়াজ আ ডার্টি পলিটিক্স উই আর প্লেয়িং ফর লাস্ট সিক্সটি ইয়ার্স, চাইল্ড। আমরা মানে জেন-জেড্ এখন এই গোটা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তার করে শাসন করছে । এটা আমাদের বাইশ জন এর একটা অনেক অনেক বছরের প্ল্যান্ড্ গেম। তোমরা এখানে গিনিপিগ মাত্র। বাইশ জন কোর মেম্বার, মানে 'আমাদের ' স্পেশ্যালি চুজ করেছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর আমি তাদের মধ্যে ইলেক্টেড এজ চিফ। যে আমাকে মানবেনা আমার অংগুলি হেলনে তাকে মেরে ফেলা হবে। আমরা অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীকে শাসন করছি। "
তারপরের কথোপকথন আর বেশি এগোয়নি। এলেক্স পালাতে চেষ্টা করে আর তারপর রোবোট তাদের দুজন কে ধরে চিফের নির্দেশে রেখে দেয় মহাকাশে তৈরি হওয়া একটা কারাগারে। তাদের সাথে বোধহয় আরো কিছু কাজ বাকি আছে৷ তাই প্রাণে মারেনা তাদের৷ একই সেলে রাখেনি তাদের দুজনকে। সেলে টিভি আছে৷ টিভিগুলোতে সবসময় ভয়ংকর ভিডিও চলছে। কত মানুষ আমলা হিসেবে কাজ করছে এই গোষ্ঠীর হয়ে। কত মানুষ গুপ্তচর। কত মানুষ "উই ওয়ান্ট ফ্রিডম্ " লিখে এনে রাস্তায় জমায়েত করাতে রোবোটের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখতে দেখতে নিজের উপরে সন্দেহ হবে। এমনটা নয় ৫০ বছর আগে হতনা এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা। কিন্তু এখন আরো বুদ্ধিমত্তার সাথে অর্গানাইজড ভাবে হচ্ছে। স্তাবকদের ৫০ বছর আগেও অভাব ছিলনা, আজও নেই। মনে হচ্ছে আমিও ওরকম হয়ে গেলেই তো পারি। কি দরকার ঝামেলার!! আগে নেতাদের পা চাটতাম। এখন রোবোটের চাটবো। কে আমি? মানুষ নাকি জেন-জেড্ এর লোক? কি দরকার এদের কথা না শুনে। যা বলে শুনে নিলেই তো হয়।
ইতিমধ্যে কয়েকটা রোবোট এসে কিছু ইলোকট্রোড চন্দ্রর মাথা কামিয়ে লাগিয়ে দিয়ে যায়। এরকম বেশ কিছুদিন চলে মাঝে মাঝে কিছু ইঞ্জেকশন দিয়ে যায় রোবোট। হঠাৎ একদিন এসে তারা চন্দ্রকে ধরে নিয়ে যায় আবার চিফের কাছে।
চিফ্ - তুমি তাহলে রাজি?
চন্দ্র - হ্যাঁ। কিন্তু আপনি বুঝলেন কি করে?
চিফ হাসলেন। তারপর একটা রিমোটের বোতাম টিপলেন।
এলেক্স ( একটি ভিডিও স্ক্রিনে) - জাস্ট লেট মি গো৷ প্লিজ...
চিফ্- ইয়ং ম্যান্, ইউ আর ইন্টেলিজেন্ট এনাফ্ টু রিয়েলাইজ দ্য কনসেকোয়েন্সেস্। জাস্ট টাইম ট্রাভেল এগেইন। পাস্ট এ গিয়ে পাস দিস ডেটা টু চিফ্, ফিফটি ইয়ার্স ইয়ংগার দ্যান মি। বিলিভ মি দিস উইল হেল্প সায়েন্স।
চন্দ্র - ইয়েস আই বিলিভ ইউ।
চিফ্ - বেশ তাহলে নতুন স্পিসিস তৈরির উদ্দেশ্য এ যাত্রা শুরু করে দাও।
চন্দ্রর মাথা থেকে ইলেকট্রোড গুলো খুলে ওকে মহাকাশযান এ বসিয়ে দেওয়া হল। এলেক্স এখনো বন্দী৷ তবে চন্দ্র স্বাধীন হয়েও পরাধীন। চন্দ্র র মনে পড়লো এলেক্স কে একবার প্র্যাংক করেছিল চন্দ্র। একটা অন্ধকার ঘরে আটকে ভয় দেখাচ্ছিল। এলেক্স ঠিক একইভাবে কাঁদছিল আর বলছিল - "জিশাস্, প্লিজ লেট মি গো। "
হেল্পলেস অবস্থায় এলেক্স জিশাস্ বলে বারবার। আজ বলেনি। একবারো। কারণ ভিডিও কৃত্রিম। তৈরি করতে গিয়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভুলে গেছে সেটা লাগাতে। চন্দ্র বুঝতে পারলো এলেক্স আর বেঁচে নেই। হয় এলেক্স র উপর কোন এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে, নাহয় ও পালাতে গিয়ে ও মারা গেছে। মহাকাশযান এখন নির্দিষ্টভাবে ওয়ার্মহোলের খুব কাছে পৌঁছে গেছে। কি করবে চন্দ্র!? তারকাছে দুটো রাস্তা খোলা। যা হচ্ছে হতে দেওয়া নাহয় মৃত্যু বরণ করা। পরাধীনতার সংবাদ দেখে দেখে ব্রেনওয়াশ্ড চন্দ্র, মহাকাশযান ওয়ার্মহোল থেকে ঘুরিয়ে নিল অসীমের দিকে, হারিয়ে গেল সে স্বাধীন শূন্যে। তার শেষ বাক্য ছিল - "স্কাই ইজ not দ্য লিমিট"।।

কৃতীcism

আমার সৌভাগ্যটাও এমন এই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এর রেজাল্টের সপ্তাহে পড়লাম অসুখে। মোবাইল স্ক্রিনে তাকালেই চোখ ব্যথা করছিল। তাই বেশ কিছুদিন মোবাইল থেকে দূরে দূরে ছিলাম, যতটা কম ব্যবহার করা যায়। এই আমি সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে জল খেয়ে পায়খানা করতে যেতাম, তারপর ছুটতাম টিউশনে, আমার আদর্শ এই লোকটি , আমি এই নিয়ে পড়তে চাই, এই হতে চাই। প্রতি বছর এই শুনে শুনে কানে জং পড়ে গেল। এইসব নিউজ ফিড এখন অতীত আমার টাইমলাইনে। পরের বছর আবার চলে আসবে নতুন কৃতী। প্রতি বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট, আই.আই.টি মিলিয়ে যদি ৫০০ জন খুব ভালো রেজাল্ট করা ছাত্র-ছাত্রীকে ধরি গত দশ বছরে হয় ৫০০০ জন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। এরা যায় কোথায় ? ৫০০০ জন মেধাবী যদি ঠিক করে এই দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব পালটে দেবে অনায়াসে সেটা সম্ভব। কিন্তু কি হয়। প্রতি বছর নতুন কৃতী আসে, কেউ বাহবা দেয়, ইন্টারভিউ নেয়। প্রাক্তন কৃতীরা বলে আমাদের সময় কম নাম্বার উঠতো। অতি উত্সাহী কেউ নিজের জ্ঞান যে বেশি নতুনের থেকে তাকে বুঝিয়ে দিয়ে আসে। ডাক্তার হয় কেউ, কেউ যদিও বা গ্রামে যায়, পালিয়ে আসে পরে শহরে। বড় নার্সিংহোমে কনসাল্ট্যান্ট হয়। গ্রাম পড়ে থাকে অন্ধকারে। হাতুড়ে, ওঝা দের ভরসায়। মানুষ এতেই খুশি। ইঞ্জিনিয়ার রা চেষ্টা করে বিদেশে গিয়ে ডলার, ইউরো তে ইনকাম করতে। রিসার্চ স্কলার রা যায় বাইরে তাড়াতাড়ি পেপার পাবলিশ করতে। এতে টাকা ইনকাম ভালো হবে। এই দেশের জনসংখ্যা এদিকে হু হু করতে বাড়তে থাকে। রিসোর্স বাইরে পাচার হয়। যেটুকু পড়ে থাকে সেটা নিয়ে শুরু হয় মারামারি। রিইউনিয়নে প্রতি মাসে কার কত ইনকাম হচ্ছে সেই নিয়ে তুল্যমূল্য বিচার করে নেয় কৃতী জনতা। যখন টেবিলের একটা কোণায় বসে কয়েকজন মেধাবী কৃতী ছাত্র ছাত্রী বসে দাঁড়িপাল্লায় তাদের বেতন ওজন করে, সেই দেশেই ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর প্রায় ৫০% মৃত্যু হয় অপুষ্টি সম্পর্কিত কারণে। প্রতি ৩০ মিনিটে একজনের রেপ হয় আমাদের দেশে। প্রতি বছর প্রতি রাজ্যে কম বেশি ১০০ চিকিৎসক নিগৃহীত হয়। একজন কৃতীও যদি বলত - এরকম দেশের কৃতী হয়ে আমি কি খেয়েছি, কি পড়েছি নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে লজ্জা বোধ করছি !!

গ্লোবাল ওয়ার্ণিং

অ‍্যাভেঞ্জার-ইনফিটি ওয়ার কে শুধু সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে দেখলে খুব বড় ভুল করবেন। কেন ?
এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে থ্যানোস বলে একজন ভিলেন কে। যার নীতি হল একটি জায়গার জনসংখ্যা যদি অর্ধেক করে দেওয়া যায় কোনভাবে তাহলে সেই জায়গায় বেঁচে থাকা বাকি অর্ধেক মানুষ খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। থ্যানোস পৃথিবীতে এই নীতি প্রয়োগ করতে এসেছিল।
কোনটা বেশি প্র‍্যাকটিক্যাল ??
জনসংখ্যা অর্ধেক করা নাকি রিসোর্স বাড়ানোর চেষ্টা করা? আমাদের পৃথিবী কোন দিকে এগোচ্ছে। আসুন একটু পরিসংখ্যান ঘাঁটা যাক।
ইউনাইটেড নেশনস্ প্রতি দুবছর অন্তর পপুলেশন প্রোজেকশন পরিসংখ্যান করে। এর মাধ্যমে জানা যায় আগামী বছরগুলোতে জনসংখ্যা কিরকম দাঁড়াতে পারে। ওরা তিনটে ভ্যারিয়্যান্টে প্রোজেকশন করে। যদি ফার্টিলিটি রেট প্রত্যাশার তুলনায় খুব বেশি কমানো না যায় তাহলে হাই ভ্যারিয়ান্ট। ভালো কমলে লো ভ্যারিয়ান্ট। আর এ দুটির মাঝে একটা মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট। এই রিপোর্ট বলছে গত দশকে মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট উপরের দিকে উঠছে। মানে ফার্টিলিটি রেট সেই হারে কমছেনা। ২০১৭ তে শেষ পেশ করা রিপোর্ট অনুসারে, এইভাবে মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্টে চলতে থাকলে ২০৫০ নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ১০ বিলিয়ন। ২১০০ সালে ওটা গিয়ে দাঁড়াবে ১১.২ বিলিয়নে। যদি লো ভ্যারিয়ান্টে চলতে থাকে তাহলে মজা হল ২০৫০ এর পর জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। আর ২১০০ তে গিয়ে দাঁড়াবে এখনকার ( ৭.৬ বিলিয়ন) থেকেও কম। কিভাবে সেটা সম্ভব?
১) যদি ফার্টিলিটি রেট অনেক কমানো যায় প্রত্যাশার থেকে। এটা প্র‍্যাকটিক্যালি পসিবল নয় বলে আমার মনে হয়।
২) যদি বিশাল কোন বিশ্বযুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক মানুষ মারা যায়।
৩) থ্যানোসের নীতি কেউ যদি প্রয়োগ করে।
বিশ্ব রাজনীতি ও সমাজ নীতি এখন যেদিকে যাচ্ছে অনেকেই এটা উপলব্ধি করছেন যে ২০৫০ এর মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ হওয়া সময়ের অপেক্ষা শুধু।
যদি না হয়, তাহলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিরকম হতে পারে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে বলছে আগামী ১০০ বছরে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আরো কিছু কারণে সমুদ্রের লেভেল ০.৮ থেকে ২ মিটার বাড়তে পারে। এর ফল কি হতে পারে? বে অফ বেংগল এ ৪০০ মিলিমিটার সমুদ্র লেভেল বাড়লে শুধু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এ ৭-১০ মিলিয়ন ক্লাইমেট রিফিউজি তৈরি হবে। তাহলে এবার আন্দাজ করে নিন ৮০০ থেকে ২০০০ মিমি বাড়লে কি হতে পারে!! ইকোসিস্টেম পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে। রোগ, জীবাণু নতুন নতুন আসবে। আর প্রচলিত এন্টিবায়োটিক গুলো রেজিস্ট্যান্ট হতে থাকবে। যারা উদ্বাস্তু হবেন তারা যে ভূমি এখনো জলে ডুববেনা তাদের কাছে গিয়ে উঠবে। রিসোর্স লিমিটেড। ফল একটাই সিভিল ওয়ার। এইভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় জনসংখ্যা লো ভ্যারিয়ান্টে নিয়ে আসতে পারে। আর অতীব ভয়ংকর এই পরিস্থিতি আন্দাজ করে কেউ যদি র‍্যান্ডম সিলেকশন করে থানোসের নীতি নেয় তাহলেও সেটা সম্ভব। তাহলে পুরোটা পড়ে কি অ‍্যাভেঞ্জার-ইনফিটি ওয়ার কে সায়েন্স ফিকশন মনে হল নাকি সুপারহিরো মুভি ?? আর যারা মনে করছেন সমুদ্র লেভেল বাড়া কে নিছক কাকতালীয়। তাদের বলি, মানুষ যখন প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে তার পেট একটু মোটা হয়, হজম হলে আবার ঠিক হয়ে যায়,
কিন্তু সে বিশ্বাস করতে চায়না এভাবেই ৫ বছর পর এক্সারসাইজ না করলে তার একটা স্থায়ী ভুঁড়ি হবে। ব্যাপারটা সেরকম। প্রকৃতির একটা ফিক্সড এরিয়া তে পপুলেশন অ‍্যাকোমোডেট করার ক্ষমতাও ফিক্সড, তাই একটা পিক এর পর জনসংখ্যা কমতে বাধ্য। সেটা অন্য গ্রহে পপুলেশন স্থানান্তর হতে পারে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ যেকোন ভাবেই হোক। থ্যানোস কে এই লেখায় যত অপ্রাসঙ্গিক ই মনে হোক, থ্যানোস কিন্তু যে কোন রূপেই আসতে পারে এ পৃথিবীতে । এটাই গ্লোবাল ওয়ার্ণিং।।

Purpose

আমার ৯ বছরেরও বেশি পুরানো একজন বন্ধুর নাম Swaraj । ছেলেটার সিনেমা বা টিভি সিরিজ এর পছন্দ অদ্ভুত। এত বছরের বন্ধু যখন, কারো কিছু ভালো লাগলে অন্যজনকে সেটা দেখতে বলি, না দেখতে চাইলে জোর করে দেখাই। তো স্বরাজের ব্যাপারটা হল, ও আমাকে একটা ভালো জিনিস দেখালে পরেরটা অতীব জঘন্য জিনিস দেখায় আর সেই সিনেমা টা এতটাই জঘন্য হয় যে ওর পরের সিনেমাটা আমাকে রিকমেন্ড করে দেখাতে হলে ওকে আমাকে জোর করতেই হয়। এরকমই ওর ইচ্ছে তে দুটো জোর করে দেখা কিন্তু আমার খুব ভালো লেগেছে জিনিস হল -
"গেম অফ থ্রনস্ " আর "The Island"
প্রথমটা টিভি সিরিজ। দ্বিতীয়টা সিনেমা। "গেম অফ থ্রনস্ " কে নিয়ে লেখার সময় অনুমপ রায়ের লাইনটা মনে পড়ে - " আমারো তো মনে হয় মাঝে মাঝে ছুঁয়ে দেখি সুযোগটা পাচ্ছি কই। "
ওই জিনিস টা ছুঁতে গেলে অনেক পড়াশোনা করতে হবে। সেটার সময় ও সুযোগ পাচ্ছিনা। কিন্তু ইচ্ছে আছে। লিখবো একদিন নিশ্চিত। এবার আসি "The Island" র কথায়। সিনেমাটা অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। পুরো গল্পটা বলছিনা। জাস্ট একটা কথার প্রসংগ টেনে মূল লেখায় ঢুকবো। ওই সিনেমাতে দেখানো হচ্ছে মানুষের অনেক ক্লোন কে আন্ডারগ্রাউন্ড একটা ল্যাবে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে একটা কথা বলে যে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর লটারি হবে, সেই লটারিতে জিতলে যে কেউ এই ল্যাব ছেড়ে একটা আইল্যান্ড এ যাওয়ার সুযোগ পাবে। এই কথাটা সবার মনে Purpose র জন্ম দেয়। এই Purpose তাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যদিও লটারি ব্যাপারটা পুরো গট আপ। সিনেমাটা দেখলে বুঝতে পারবেন তাই আর বলছিনা। এবার আসি Purpose র কথায়।
এই সিনেমার মত আমরাও বেসিক্যালি এই পৃথিবীর ল্যাবে বন্দী। প্রত্যেকের লাইফে আলাদা Purpose রয়েছে। সেই Purpose তাদের বাঁচিয়ে রাখে, আরো খাটতে সাহায্য করে, তথাকথিত মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। যাদের আমরা এই সমাজের গুন্ডা, বদমাইশ ভাবি তাদের Purpose কিছু মানুষকে মেরে ভয় দেখিয়ে নেতাদের কাছে ভালো হওয়া। এতে তারা ভালো টাকা পাবে, তার বউ বাচ্চা এতে ভালো থাকবে। নাহলে সে বেশি মদ গাঁজা খেতে পারবে। এভাবে ভেবে দেখলে ভালো মানুষ থেকে সমাজের ধর্ষক - বেশ্যা সবার জীবনে যে যার মতন Purpose তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যে রান্না করার লোক আজ কাজ করতে এলোনা বলে গালি দিচ্ছেন সেই লোক কোন Purpose এ ডুব দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এ সার্ভিসে ডাক্তাররা ঢুকছেন বেশিরভাগ টি.আর এর Purpose এ।আধ্যাত্মিক মানুষের Purpose রয়েছে ভগবানের সাক্ষাৎ। আমার লেখার Purpose নিছকই লিখে আনন্দ পাওয়া। Purpose ছাড়া এ পৃথবী অচল।
নোবেল জয়ী বুদ্ধিস্ট দলাই লামা র কথায় - বুদ্ধর কথা কে আমরা বুঝতে ভুল করি। Desire অবশ্যই থাকতে হবে। Desire ছাড়া মানুষ শ্বাস নেবে কি করে, খাবে কি করে। কিন্তু Desire টু হার্ম আদারস্ ইজ হার্মফুল।
এবারে ভাবুন, আপনি অন্যের ক্ষতি চাননা। কিন্তু নিজের Purpose পূর্ণ করতে হলে সেই অন্যের ক্ষতি হয়ে যাবে আপনি কিভাবে নিজেকে রেজিস্ট করবেন !?? পুরোটাই একটা সাইকেলের চাকার মতো। এভাবেই একে অপরের ক্ষতি করে নিজের Purpose পূরণ করে চলে পৃথিবী । আর আমরা আমাদের Purpose সিদ্ধ করার উপর বেস করে কাউকে জাজ করে নিই কেউ ভালো, কেউ খারাপ। একজন রুগী খারাপ আছে বলা খুব সহজ, ভালো আছে বলা কঠিন। তেমনি একজন মানুষকে ভালো বলা খুব কঠিন। মুশকিল টা হল ডুয়্যাল মানুষগুলোর তারা বুঝেই উঠতে পারেনা তাদের আসল Purpose কি !!?? আর পৃথিবীটা এ ধরনের মানুষে ভরে গেছে। নিজের আল্টিমেট Purpose ঠিক থাকলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায় ।।

শূন্য

মানুষের অনেক রকম শখ হয়, কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের শখ মাথায় চেপে বসে৷ যারা তথাকথিত নর্মাল তারা এদেরকে পাগল, ছিটগ্রস্ত, চং, সাইকো, ক্ষ্যাপা এইরকম বিশেষণ এ ভূষিত করে। আর খুবই দুঃখের সাথে বলছি আমি এই অ‍্যাবনর্মাল গ্রুপের মধ্যে পড়ি৷ যদিও আমার ব্যাপার টায় আমার ইনসাইট প্রেজেন্ট থাকে৷ সিপিএম এর মত খানিকটা। ভুল করি, আবার সেই ভুল স্বীকার ও করি। তো এরকমই একসময় গেছে দুবছর আগে যখন আমার রাস্তার ফকির বাউল হিসেবে জীবন কাটানোর খুব শখ হয়েছিল। শখ টা এমনই যে আমার মাথায় চেপে বসল। কিন্তু কোন পেশাকে চুজ করার আগে তার সুবিধে অসুবিধে জেনে নেওয়া দরকার ভালো করে। তাই ঠিক করলাম যারা এরকম গান গেয়ে ফকির বাউল হিসেবে ঘুরে বেড়ায় তাদের সাথে এক দুদিন কাটাবো, দেখবো আমার পক্ষে ওরকম জীবন কাটানো সম্ভব কিনা৷ মনে মনে ব্যাপারটা ঠিক করলাম কাউকে জানালাম না। এর আগে ছোটবেলায় একবার বাড়িতে জানিয়েছিলাম আমি হিমালয় যাবো, ওখানে গিয়ে গুহাতে থাকবো গায়ে ছাই মেখে । আমাকে নিয়ে দাদা-দিদিরা সবাই খুব খিল্লি করেছিল। তারপর থেকে আর নিজের এরকম শখ এর কথা কাউকে মুখ ফুটে বলা যায়না। এমনিতে রাত বিরেতে কোলকাতায় মাঝে মাঝে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছি৷ কিন্তু ওটা কয়েক ঘন্টার ব্যাপার ছিল, এবার সারা জীবন ওরকম পেশার নেশায় আসার আগে একবার যাচাই করা দরকার৷ আমার এক পিসতুতো দাদা আছে। সে আধ-পাগল। মাথায় তার গুলো ঠিক ঠাক জায়গায় নেই। লোকে তারকাটা বলে। কিন্তু আমার মতে, মাথায় তার আছে, শুধু ঠিক ঠাক জায়গায় ঠিক ঠাক নেই৷ মানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি মোদীজি হন, আর পশ্চিমবঙ্গে যদি ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট মুখ্যমন্ত্রী হন তাহলে পৃথিবী যেরকম চলবে ওর মাথাও সেরকম চলে। তার একজন বাউল ক্ষ্যাপার বাড়িতে যাতায়াত আছে। তাকে বললাম - "চল তোর বাউল ক্ষ্যাপার সাথে দুদিন কাটিয়ে আসি৷ "
তখন শীতকাল ছিল। সামনেই জয়দেবের মেলা। দুজন বেরিয়ে পড়লাম। কৃষ্ণনগর লোকাল ধরে কৃষ্ণনগর হয়ে করিমপুর যাওয়ার বাসে উঠলাম। তখন সন্ধ্যে হয়েছে৷ বাসে দাঁড়ানোর জায়গা ছিলনা। আমি বাসের রড ধরে ঝুলে ছিলাম ত্রিভঙ্গমুরারি পজিশনে৷ ঘুমে ঢুলে পড়ছিলাম৷ একটা একটা বাম্পার এ বাসের রড মাথায় গাট্টা মেরে যাচ্ছিল। আমার দাদা বাম্পার গুনছিল। যখন নামলাম আমাদের গন্তব্যে তখন দাদা বললো - বুঝলি ৩৫ খানা বাম্পার।
আমি সায় দিলাম যেন আমিও গুনেছি। রাতের অন্ধকার নেমেছে।
একটা টোটো তে উঠলাম। কিন্তু টোটো তে দেখলাম প্যাকিং তখনো শেষ হয়নি। আমরা দুজন ছাড়াও আরো পাঁচ ছয়জন উঠলো টোটোতে৷ তারপর তাদের লোটাকম্বল দড়ি দিয়ে টোটোর ছাদে বাঁধা হল৷ ভয় হচ্ছিল বাউল ফকির হওয়ার আগে টোটো উল্টে টো-টো করে ঘোরার স্বপ্ন বিফল হবে। কিন্তু না , রাত ১০ টার দিকে নামলাম গাউস গ্রামে। শীতের কুয়াশা মোহময়ী হয়ে উঠেছিল। কুয়াশার ওড়নার আড়ালে চাঁদের আলোয় তার যেটুকু রূপ দেখেছিলাম এখনো চোখে ভাসে৷ পেট খিদেয় চোঁ চোঁ করছিল। ১০-১৫ মিনিট হেঁটে পৌঁছলাম ক্ষ্যাপার আখড়ায়। গোল হয়ে বসে দশ পনেরো জন আগুনে নিজেকে একটু গরম রাখছিল। তারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে ওঠার প্যান করছিল। আমাদের দেখে আবার বসলো। " চলো, আবার শুরু হোক "। শুরু হল রাউন্ড রাউন্ড অদ্ভুত ধূম্রপান। রাত এগারোটায় ক্ষ্যাপার বাড়িতে এলাম। কিছু হাল্কা মিষ্টি পিঠে জাতীয় খেতে দিয়েছিল। জিনিসটা কি বুঝিনি। কিন্তু শর্করা ভেবে আরামসে খেলাম। খেয়েই ঘুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করে চোখও খুলিনি। দাদা ডেকে নিয়ে এল ছাদে৷ আবার শুরু হল রাউন্ড। ক্ষ্যাপা আমাকে ভালো করে আগাপাশতলা দেখলো৷ দেখে হঠাতই দাদাকে বললো এই তুই এর সাথে আমার কয়েকটা ছবি তোল৷ এই বলে আমাকে অদ্ভুত কিছু পোজ দাড় করিয়ে দিয়ে ছবি তুললো৷ আমি বুঝলাম ক্ষ্যাপা কে দিয়ে ফিজিক্স এর তারকাটার ইউনিট মাপা যেতে পারে। তার একটু পরেই ক্ষ্যাপা বললো - চলো তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ি অজয় নদের তীরের উদ্দেশ্যে। আমার দাদা ক্ষ্যাপা ভক্ত৷ সে একটা অ‍্যাম্বাসাডার ভাড়া করলো। ক্ষ্যাপা তার বড় একতারা টা আমাকে ধরিয়ে দিলো। গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি ছুটেছে দারুণ রাস্তা দিয়ে। দুপাশে সর্ষে ক্ষেত। ক্ষ্যাপা গান ধরলো। একতারা বাজিয়ে - ও দরদী গো, আবার যেন তোমার দেখা পাই৷
গান শেষ হতে না হতেই আবার এক রাউন্ড। গাড়ির ড্রাইভার রাউন্ডে অংশগ্রহণ করছে আর এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে৷ হঠাতই এক জায়গায় জোরে ব্রেক কষলো। কেন জানিনা৷ তবে বুঝলাম - হ্যাঁ মরতে পারতাম। কি আছে। চলো। একদিন তো সবাই মরে যাবো।
ক্ষ্যাপার উত্সাহে আমিও গান ধরলাম। ক্ষ্যাপা মজা পেয়ে গেল। আবার এক রাউন্ড। জানিনা এরকম কতক্ষণ চলেছি। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমরা স্থির। আর রাস্তা পিছিয়ে চলেছে সময়ের মতো। একের পর এক গাড়ি কে আমরা ওভারটেক করে চলেছি৷ একটা গাড়িতে একজন মেয়ে কাঁদছিল। জানিনা কেন? প্রশ্নটা শুধু ওই কিছু সময়ের জন্যই ছিল মনে। তারপর ছিলনা। পেছনে ফেলে এসেছি যে।
সময় হারায় না, চারিদিকের দৃশ্য হারায়। বৃষ্টির রঙ পালটে যায়, রং পালটায় স্বপ্নের।
যে শৈশব সান্তাক্লজের ধারণায় বোকা হত, সে এখন সমাজ এর রীতিনীতিতে বোকা হয়। মাধ্যমিক এ ভালো রেজাল্ট করো, দারুণ জীবন হবে। তারপর উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট, গ্রাজুয়েশন, পোস্ট, পোস্ট পোস্ট চলতেই থাকে। কিন্তু সেই বোকা লোক দারুণ সুন্দর জীবন খুঁজে পায়না। বোকা বনে সে পেরিয়ে আসা সময়ের ছবি দেখে আর ভাবে হ্যাঁ আমি আগে তো খুব ভালো ছিলাম, অনেক বিশ্বাস ছিল। এখন শুধু অবিশ্বাস। আগে ভালো ছিলাম। আসলে গাড়ি চালানো খুব সোজা হত , যদি না রিয়র মিররে কোন গাড়ির ছবি তাড়া করতো। এক একটা গাড়ি ওভারটেক করলাম, গাড়ি ভ্যানিশ। না সেটা হয়না। কাউকে ওভারটেক করা যায়না জীবনে। সবাইকে রিয়র মিররে বয়ে বেড়াতে হয়।
বিকেলের দিকে পৌঁছলাম অজয় নদের তীরে। জয়দেবের মেলার আয়োজন বিশাল। আমি এর আগে বইমেলা গিয়েছি, খাদ্য মেলা তেও গিয়েছি। কিন্তু কোথাও ঢোকার মুখেই এরকম অস্বস্তি হয়নি। এখানকার বেশিরভাগ লোকজন বুড়ো, বুড়ি। সাধু, সন্ন্যাসী। বাউল। গেরুয়া পোশাকের ছড়াছড়ি। বিজেপির জনসভা বলে ভুলও হতে পারে। ক্ষ্যাপা তার পাগড়ি পড়ে বাউলের পোশাক পড়ে নিল। সকাল থেকে পেট খিদে খিদে বলে চেঁচিয়ে মরে গেল। রাস্তার দুপাশে জিলিপি, কাঠিগজা এইসব বিক্রি হচ্ছিল। আমি ভাবলাম ক্ষ্যাপা কে বলি ওইগুলো খাবো। কিন্তু ভয়ে চেপে গেলাম। এই জায়গায় ক্ষ্যাপা ক্ষেপে গেলে চাপ হয়ে যাবে। চারজন মিলে একটা সবজি বাজারে ঢুকলাম ক্ষ্যাপার নির্দেশে। আমি ভাবছিলাম সংগে তো রান্না করার কড়া ও নেই। সবজি বাজারে কেন ঢুকলাম৷ আমি ড্রাইভার দাদার সাথে এমনি কথা বলছি। এমন সময় ক্ষ্যাপা দেখি হাসিমুখে দাদা র সাথে চারটে বড় পলিথিন ভরে কি একটা কিনে এনেছে। চলো খাওয়া যাক। এই বলে চারজন ওই প্যাকেট ভর্তি মটরশুঁটি খেতে লাগলাম। এত খিদে পেয়েছিল, ছাড়িয়ে খেতেও বিরক্ত লাগছিল৷ খাওয়া যখন শেষ হল মনে হল কিছুই খাইনি। তবু মনকে সান্ত্বনা দিলাম - এতেই কাজ চালিয়ে নে আজ।
অজয় নদের তীরে গেরুয়া অরণ্যে আমরা মিশে গেছি। সন্ধ্যে নামছে দু তিন কিমি হেঁটে আমরা একটা একটু ফাঁকা দেখে পলিথিন পেতে বসলাম৷ অজয় নদের দিক থেকে চরম কনকনে ঠান্ডা বাতাস আসছে। আমি দুটো জামা, একটা শোয়েটার, তার উপর একটা জ্যাকেট পড়ে। তবুও ঠান্ডা লাগছে। মাথায় মাফলার টা আরেকটু টাইট করে বাঁধলাম। একটু পরে ওখান থেকে উঠে একজন বাউলের আখড়ায় ঘাঁটি গাড়লাম। এরকম জন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা মাথায় ছিল, তাই সবসময় দাদাকে দেখে রাখছিলাম। রাতের মায়াবী আলো, কনকনে ঠান্ডা হাওয়া, আর তার মাঝে ক্ষ্যাপা গান শুরু করলো - "মন বিবাগী বাগ মানেনা রে"। ক্ষ্যাপার গলায় বাস আর পাওয়ার অনেক বেশি৷ একতারা টাও বেশ বড়। একদিকে রাউন্ড চলছে, অন্যদিকে গানের সুর, কথার গাম্ভীর্য্য এ হারিয়ে গেলাম। জ্ঞান ছিল, হুঁশ ছিলনা।
যখন হুঁশ ফিরলো তখন বুঝলাম, আমার দাদা কোথায় হারিয়ে গেছে। চিন্তা ভাবলো আমার মনে আসবে। কিন্তু আমার চিন্তার রিসেপটর ব্লকড্ হয়ে আছে। তাই ভাবলাম - আসলে কে কার থেকে হারিয়েছি৷ ও না আমি। আমরা সবাই এই পৃথিবীতে লস্ট। কেউ কি জানি নিজেকে, নিজেকেই খুঁজে পাইনি, অন্যকে কি খুঁজবো।
আবার গানের সুরে হারালাম।একটু পরে আবার হুঁশ ফিরলো।
দেখলাম দাদা পাশে বসে উঁহুহু করে মাথা দোলাচ্ছে একতারা আর গুবগুবির তালে। আবার অনুভব করলাম পেটে খিদে পেয়েছে। ক্ষ্যাপা কে এবার বলেই ফেললাম৷ ক্ষ্যাপা খোশমেজাজে বললো - চল্ তাহলে। ক্ষ্যাপা একটা চপের দোকানে আমাদের নিয়ে এসে বললো - চপ।
আমি বললাম - ক্ষ্যাপা সারাদিন পেটে সেরকম কিছুই পড়েনি সেরকম। এখন চপ খেলে মারা যাবো। তুমি খেলে খাও, আমি খাবোনা।
ক্ষ্যাপা বললো - না, খেলে সবাই একসাথে একই জিনিস খাবো।
বলে হাঁটতে শুরু করলো। এরপর আর আমার মতামত দেওয়া উচিত নয় মনে হল। তাহলে পেটে হয়তো চপটাও পড়বেনা।
একটা চার দোকানো গিয়ে বললো - পাঁউরুটি৷
কয়েকটা অনেকদিনের বাসি পাঁউরুটি খেলাম সবাই মিলে।
রাতে শুলাম খোলা আকাশের নীচে৷ দু তিন রাউন্ড চলার পর। একটা মোবাইল যে আমার পকেটে আছে ভুলেই গেছিলাম শুতে গিয়ে খেয়াল হল৷ খুলে দেখলাম অসংখ্য মিসড্ কল আর মেসেজ। মেসেজ গুলো পড়ছিলাম এক এক করে। এমন সময় আবার ফোন এলো৷ চেনা নাম্বার। চেনা গলা। এক মহিলা কন্ঠ। কিন্তু অচেনা প্রশ্ন - আজ আপনাদের রেজাল্ট বেরিয়েছে। দেখবেন না ??
আমি উত্তর দিলাম
- আমি এখন বাউল ফকির হয়ে গেছি, এসব রেজাল্ট আমার জীবনে খুবই তুচ্ছ ব্যাপার৷
ফোনের ওপাশ থেকে গালাগালির মত কিছু শুনলাম। ফোনটা কেটে সুইচ অফ করে দিলাম।
তারপর সকাল বেলা ঘুম ভাংতেই দাদাকে বললাম - আমার এখানে নেট ধরছেনা। আমার রেজাল্ট দেখতে হবে। তাড়াতাড়ি ফিরি চল্ ৷ সেদিন বিকেলে কোলকাতা ফিরলাম৷ ওই তিনবেলা আমার জীবনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। জীবনে যখন খুব খারাপ মূহুর্তে আমি আসি, জটিল এই পৃথিবীতে ভয় লাগে বেঁচে থাকতে,
যখন ভেংগে পড়ি, চারিদিকে অন্ধকার দেখি, চারিদিকে কাজের অসহ্য চাপে নিজেকে বিপর্যস্ত মনে হয়, রাতে depression, স্ট্রেসে ঘুম আসেনা, প্রচুর কষ্ট হয়, তখন আমি ওই তিনবেলার কথা চোখ বুজে মনে করি। কান্না আসেনা, রাগ চলে যায়, ভুলে যাই খারাপ, অন্ধকার, আনন্দ - দুঃখ, যুক্তি, ভক্তি। একটা অনুভূতিশূন্য, চিন্তাশূন্য ভাব আসে৷ ঘুমিয়ে পড়ি শান্তিতে৷ বাউল হতে পারিনি। পারবোও না। ওই তিনবেলা কাটিয়ে বুঝেছিলাম। ওই লাইফস্টাইল আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওটা ক্ষ্যাপার পক্ষেই সম্ভব৷ কিন্তু বাউল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি। স্বপ্নে কোন শারীরিক কষ্ট নেই। ঠান্ডা লাগার ভয় নেই। মৃত্যুর ভয় নেই। খিদে নেই। অপহরণ, খুন , হারানোর ভয় নেই। আছে শুধু শান্তি। একটা স্বচ্ছ সরোবর। যার জল একদম স্থির। পজিটিভ নেই, নেগেটিভ নেই, মন তখন একটা Null Set ।।

ফাঁসি

একজন নারী কলসী কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে আঁকতে বলা হল।
প্রথমজন আঁকলো একদম নিঁখুত। হাত, কোমর, কাঁধ, পা র অনুপাত একদম
যেনো মনে হচ্ছে অরিজিনাল - এখুনি ছবি থেকে বেরিয়ে চলে আসবে।
দ্বিতীয়জন আঁকলো ত্রিডাইমেনশনাল ছবি। যেন সামনেই কেউ একজন হেঁটে যাচ্ছে এরকম।
তৃতীয়জন আঁকলো একজন নারী যেটা পারফেক্ট নয়, সেই কলসীটা যেন কোন শিশু, অন্য কোণ থেকে দেখলে মনে হচ্ছে সেটা হৃত্পিন্ড, আবার গোটা ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে যেন ভারতবর্ষের ম্যাপ৷
চতুর্থ জন একজন আর্টিস্টকে কিছু টাকা দিয়ে তাকে দিয়ে আঁকিয়ে নিলো।
এই চারজন ই মেধাবী। কিন্তু তাদের মেধার ধরণ আলাদা। প্রথম জনের জন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, প্রফেসর লাইন পারফেক্ট।
দ্বিতীয়জনের জন্য গণিত, স্ট্যাটিস্টিক্স।
তৃতীয়জনের জন্য পারফেক্ট হল রিসার্চ নাহলে আর্টিস্ট দের ক্রিয়েটিভ লাইন।
চতুর্থ জনের জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ম্যানেজমেন্ট ।
দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে আমরা এভাবে ভাবিনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা কেরিয়ার চুজ করি কোথায় গ্ল্যামার বেশি, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । এমন নয় যে কোন একজন সবকিছুতেই পারদর্শী হতে পারেনা। কিন্তু তাকে দেখতে হবে যে কোনটাতে সে বেশি আনন্দ পাচ্ছে৷ ভারতে ৯২% ছাত্র স্কুল লেভেল এ প্রপার কেরিয়ার কাউন্সেলিং পায়না। যে ক্রিয়েটিভ চিন্তা করে তাকে গিয়ে পড়তে হয় প্রথম জনের লাইনে। যার মাথায় একটা জিনিসকে হাজার ভাবে প্রেজেন্ট করার ক্ষমতা আছে সে প্রোটোকল বেসড্ পেশায় ঢুকে পড়ে।
যে গণিতমনস্ক সে যায় চতুর্থ লাইনে। কোথাও লোকাল লোকজনের ঘেরাও তে বসে সে ভাবতে থাকে এই ঘেরাও আরো ৪ ঘন্টা চলার সম্ভাবনা কত হতে পারে?
এই ৯২% মানুষের জীবন মানিয়ে নিতে নিতে গলায় ফাঁসের মত আটকে যায়।
আমাদের দেশে এমনিতেই স্কুলছুটের সংখ্যা অনেক। কিন্তু যারা স্কুল পেরোয় তাদের মধ্যেও একটা সিংহভাগ উপযুক্ত পেশার দিকে যায়না। তার মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়না।
ভবিষ্যতে আমার কেরিয়ার কাউন্সেলিং নিয়ে স্কুলগুলোতে স্বেচ্ছায় কাজ করার ইচ্ছে আছে ৷।

যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক

সচ্ছল পেশা, ফেসবুক- হোয়াটস্যাপে র অনেক ভারচুয়াল বন্ধু, স্টেবল রিলেশন এর পরেও একা লাগছে৷ মাঝে মাঝে মাথায় রাগ উঠে যাচ্ছে। দুম দাম রাগ আসছে। তাহলে বলি, ২০১৫-১৬ সালে করা একটা সমীক্ষা অনুযায়ী, আপনি ভারতের ইয়ং জেন এর ১০% জনসংখ্যার অংশ৷ ২০১৭-১৮ র সমীক্ষা তে ১২%। দিন দিন এটা বাড়ছে। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে৷ সম্প্রতি বাজারে যেগুলো এখন খুব জনপ্রিয় গান সেগুলোর লিরিক্স খুঁজুন -
"সে যে বসে আছে একা একা", "একলা ঘর",
" আমার একলা আকাশ", " লোনলি ", "এম্পটিনেস ", "আমাকে আমার মত", "আজ শেষমেশ নেই তোর কেউ নেই " ইত্যাদি ইত্যাদি৷
প্রমাণ করে কেন গানগুলো জনপ্রিয়। প্রমাণ করে এই মহামারীর অস্তিত্ব কে। এর কারণ খুঁজতে গেলে যেটা প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসবে সেটা হল সাকসেস রেস৷
"সাকসেস-fool" কথাটার মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যংগ রয়েছে৷ যে মানুষটা ভাবে সাকসেস পেয়েছে সে আসলে বোকা৷ কারণ সাকসেস কখনো কমপ্লিট হতে পারেনা৷ সব সাকসেস পেতে কোন না কোন ব্যর্থতা কে মেনে নিতে হয় কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবে মাথা পেতে৷ স্যাক্রিফাইস করতে হয় অনেক কিছু কে৷ যে প্রফেশনাল লাইফে বীভৎস সাকসেসফুল, গুগলে সার্চ করলে যার নামে উইকিপিডিয়া র লিংক আসে সেই মানুষটিও হয় পারিবারিক জীবনে, না হয় বন্ধু বান্ধবের জীবনে কোথাও না কোথাও ব্যর্থ৷ তার আগের বা বর্তমান কোন সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে৷ তার পুরানো কোন বন্ধুর সাথে কথা হয়না যেকোন কারণেই হোক৷
আইনস্টাইনের কথায় - 'সুখী জীবন কাটাতে গেলে কোন লক্ষ্য এর সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখো৷ বস্তু বা মানুষের সাথে নয়৷ '
যেখানে যাকে দরকার, যে যেখানে প্রাসংগিক তার সাথে সেখানে গভীরতা৷
যে তার লাইফে যত ডায়নামিক সে তত সাকসেসফুল৷ অ্যাটাচমেন্ট লিডস্ টু ফেলিউর।
নিজের জীবনেও আমি যে ফেজে ডায়নামিক থেকেছি তখন বেশি সাফল্য পেয়েছি৷ এটা সত্যি৷ কিন্তু তার বদলে হারাতে হয়েছে অনেক কিছু।
যার ফেসবুক পেজে লক্ষ বা হাজার অনুগামী, সেই মানুষটি দিনের শেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেসবুকের সার্চ অপশনে গিয়ে পুরানো বন্ধু র নাম সার্চ দেয়। বাইরে বৃষ্টি পড়তে থাকে আর মানুষটা স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। যদি একদিন বাঁধা পড়ে কাজে, তবু মনে রেখো। সাকসেসফুল কে তাহলে ? এই মানুষটা নাকি যে তার ৫০ বছরেও অনেক পুরানো বন্ধুর সাথে গোয়া ট্রিপে যেতে পারে সেই মানুষটা ?? সাকসেস এর ডেফিনিশন আলাদা তাই সবার কাছে৷ যে কোন সম্পর্ক প্রায়োরিটি হারায় এটা ছাড়াও অন্য একটা প্রশ্নে৷ সেটা হল মতের অমিল। দুটো মানুষের জীবনদর্শন কখনো এক হতে পারেনা৷ অনেক বছরের বন্ধুর সাথে হঠাত্ ই মতের অমিল হয়ে প্রায়োরিটি হারানোর শুরু হয়। আগে আমি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারতাম না৷ এখন সমস্যাটা হয়না৷ বরং যে আমার মতের বিরোধী তার সাথে কথা বলে, তার যুক্তি শুনলে নিজের মতকে আরো কনফিডেন্ট করে তোলা যায়, মত ভুল হলে পালটে ফেলা যায়৷ কিন্তু দূরত্ব বাড়ানো ঠিক নয়৷ সব শাসক যদি বিরোধীদের এই দৃষ্টিতে দেখতো !!

খেলা খেলা দিয়ে শুরু, খেলতে খেলতে শেষ

খেলা শেষ। এবার সবার বাড়ি ফেরার পালা। পলিটিক্সের খেলার কথা বলছি। আশা করি এমন কোন দল ক্ষমতায় আসবে দেশে, আমার - আপনার ভোটে, যারা আমার দেশ ভারতবর্ষের সব সমস্যার সমাধান করে দেবে। ও এক্ মিনিট। ভেবে দেখলাম, এরকম কোন দল নেই যে এটা পারবে। আর এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান হলে আরো দশটা সমস্যা তৈরি হয়না। তাহলে কতটুকু আশা করা যায় - বেসিক সমস্যাগুলো ভেবেচিন্তে সমাধান করার কথা অন্তত চেষ্টা করবেন। নাও, এবার বেসিক সমস্যাগুলো কি সেটা নিয়েও মতভেদ। আমরা নিজেরাই জানিনা আমাদের বেসিক সমস্যা আসলে কি? আমাদের রাজনীতিবিদরা এটার সুযোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঘৃণা ছড়ান বিপক্ষকে নিয়ে৷ এভাবেই চলে এসেছে যুগের পর যুগ। চলছে। চলবে। দিনের শেষে চায়ের কাপে চুমুক আর সিগারেটে টানে মশগুল জনতার খিস্তি খান রাজনীতিবিদরা। আর রাজনীতিবিদরা তাতে এক বিন্দুও কেয়ার না করে পাকা বাড়ি আর বেনামে গাড়ি কিনে যান (সবার কথা বলছিনা)। অথচ তারা আমাদের মতই মানুষ। আমাদের সমাজ থেকেই তারা উঠে এসেছেন। আসলে দোষী কে - আমরা। ভোটার রা। আমরা বড্ড বেশি ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নিয়ে ভাবি। তাতে ভবিষ্যতের ক্ষতি হয় হোক, অত ভাবার দরকার নেই। আচ্ছা, পরিবেশ রক্ষা নিয়ে একটাও পার্টি ক্যাম্পেন করেছে ? ইস্তাহারে হয়তো উল্লেখ আছে কোন কয়েক লাইনের দিশাহীন কলামে। আর ইস্তাহারগুলো পড়লে মনে হয় শ্বাশ-বহু সিরিয়ালের ডায়ালেক্ট। শ্বাশুড়ি আর বউমা যেন একে অপরকে নিয়ে অভিযোগ করছে। আসলে সবাই সব জানে কোন্ পার্টি কি? ঘৃণা তৈরি না করে নিজের পার্টি কি কি সমস্যা সমাধানে বেশি জোর দেবে সেইগুলো নিয়েই তো ইস্তেহার হওয়া উচিত। কিন্তু সেরকম হলে ম্যাড়মেড়ে হয়ে যাবে। জনতা খাবেনা। একটা বেশ গৃহযুদ্ধ গৃহযুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করা চাই। আমজনতা সকাল সন্ধ্যে ভোট না থাকলে বসে টিভিতে যে সিরিয়াল গেলে , ভোট এলে তখন এইসব কথা গিলবে।ফরাসী দার্শনিক জোসেফ মেরী সেই কবে বলে গেছিলেন - "আমরা সেই সরকার কেই নিয়ে আসি, যাদের আমরা যোগ্য।"
আমরা অদ্ভুত। রাজনীতিবিদদের অশিক্ষিত বলে গালাগালি দেবো, অথচ প্রকৃত শিক্ষিত যে দেশের কথা আরো ভালোভাবে বিচক্ষণ ভাবে ভাবতে পারে সে ভোটে দাঁড়ালে তাকে সুবিধেবাদী বলবো এবং ভোট দেবো নিজের প্রতীক দেখে। সেই প্রতীকে হাঁদা ভোঁদা যে কেউ জিততে পারে।
আমার এই লেখা এতদূর অব্দি যারা কষ্ট করে পড়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ করবো একটু ভেবে পাঁচটা দেশের বেসিক সমস্যার কথা কমেন্টে লিখতে যেটা সরকারের সমাধান করার ক্ষেত্রে প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। আপনার সেটাও ল্যাদ লাগলে আপনি নিজের মনে ভাবুন। গিয়ে পাশের কাউকে জিজ্ঞেস করুন এই একই প্রশ্ন। দেখুন কারোর সাথে কারো প্রায়োরিটি মিলবেনা। পাশের জনের সাথে যদি প্রায়োরিটি না মেলে তাহলে এত কোটি মানুষের দেশে প্রথম পাঁচের কতরকম পারমুটেশন হতে পারে ভেবে দেখুন। ভাবতে আমাদের খুব কষ্ট হয়৷ তাই ভোট দিই নিজেদের দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্য নিজের পছন্দের প্রার্থী বা পার্টির অতীতের কীর্তি বেমালুম ভুলে গিয়ে, তার কাছ থেকে কি ব্যক্তিগত স্তরে পেয়েছি আর কোন পার্টিকে ঘৃণা করি - সেই ইম্পালসিভ ফ্লো তে। আমরা সত্যি কত সস্তা! গড্ডলিকা প্রবাহের সমার্থক শব্দ ভারতের ভোটদান হতে পারে। আর সেটা বুঝেই শুরু হয় খেলা। মানুষে মানুষে ঘৃণা-ঘৃণা খেলা। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মীয় বিভাজন। একটা মানুষ অরাজনৈতিক হতে পারে? সে অবিশ্বাসী (আমি মনে করি নাস্তিক এথেইস্ট এর প্রকৃত বাংলা নয়) হতে পারে? বাম-ডান-হিন্দু-মুসলিম সবাই বলে থাকে এটা হতে পারেনা। তবে আমি মনে করি হতে পারে। আমার চার পাশে বেশ কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের কাজ নিয়ে প্রচন্ড রকম ডুবে থাকতে পছন্দ করে। যারা শিক্ষিত, পড়াশোনা, চিন্তাভাবনা করা লোকজন এবং এতটাও দুর্বল নয় যে তাদের বেঁচে থাকতে ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাস রাখতে হয়। আপনারা মনে করতেই পারেন যে এটা মিথ, মিসনমার। কিন্তু আসলে এটা হয়। আপনাদেরটা ঘৃণা - হিংসা ছড়ায়৷ অবিশ্বাসীরা কিন্তু আপনাদের ঘৃণা করেনা । চোখের ছানি বিশ্বে তৃতীয় অন্ধত্বের কারণ। রাজনীতি ও ধর্ম হল প্রথম দুই। অবিশ্বাসীরা অন্ধ নয়। তারা কিন্তু অনেকে ভোট দেয় বিভিন্ন সময় যাকে উপযুক্ত মনে করে বুঝে। সরস্বতী পূজাতে অঞ্জলি না দিলেও , ইফতার পার্টি তে আল্লাহকে না ডাকলেও খেতে যায়৷
সুনীল গাঙ্গুলির ওই লাইনটি বড়ই প্রিয় - " সবাই বিশ্বাসী, বিশ্বাসী, বিশ্বাসী / এক-একবার ভাঙা গলায়/ বলতে ইচ্ছে করে /অবিশ্বাসীর দল জাগো।"
যাই হোক আবার প্রসঙ্গে ফিরি, আজ খেলা শেষ। এবার শুরু হবে এর আফটার এফেক্ট। সেই ভাঙা রেকর্ড - মোটের ওপর ভোট শান্তিপূর্ণ। নির্বাচন পরবর্তী ঘৃণা ছড়ানোর আফটার এফেক্ট এ পড়বে অনেক লাশ। পার্টিগুলি লাশে তাদের ট্যাগ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে৷ এরকমই হয়ে আসছে। আমেরিকান রাজনীতিবিদ রবার্ট কেনেডির একটা কথা আছে - Every dictatorship has ultimately strangled in the web of repression it wove for its people, making mistakes that could not be corrected because criticism was prohibited.
হ্যাঁ সব রাজনীতিবিদ ও তাদের রাজনীতির রং তো পাল্টাবেই সময়ের সাথে। কিন্তু আমরা পাল্টাবো কি?? আমরা যদি না বদলাই নিজেদের চিন্তাকে, ভাবতে না শিখি - তাহলে রং বদলাতে পারে, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন কোনদিন হবেনা। গণতন্ত্রকে মডিফায়েড রাজতন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা চলতেই থাকবে । ভোট ও প্রচারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। পরিস্থিতি সময়ের সাথে খারাপ থেকে আরো খারাপ হবে । আর সবার শেষে বলি, আমার কেউ মতবিরোধ করলে আমি খুশি হব এবং আমাকে প্লিজ কেউ মারবেন না ।।

মাকড়সার জাল

মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোলো। প্রথম, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী থেকে প্রথম দশের সিংহভাগ চায় ডাক্তার হয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে। বাহ্ হাততালি। তাহলে হিসেবটা কি হল ?? প্রতি বছর যদি প্রথম দশের মধ্যে কুড়ি জনের দশ জনও চায় বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে। দশ বছরে সেটা দাঁড়ায় কমপক্ষে একশ। রোজ যদি তারা একশ জনকে বিনামূল্যে দেখে। তাহলে শেষ দশ বছরের কৃতীদের রোজ রাজ্যের দশ হাজার রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করে দেওয়ার কথা। ধরা যাক সত্যিই করলো। এরা সারাজীবন একা থেকে শাক ভাত খেয়ে সত্যিই করলো কাজটা ।
তবে বিনামূল্যে চিকিৎসা মানে তো শুধু ট্রিটমেন্ট লিখে দেওয়া নয়৷ বিনামূল্যে ওষুধ, অপারেশন লাগলে সেইসব বিনামূল্যে ওটি সেট আপ, ইন্সট্রুমেন্ট, বিনামূল্যে ভেন্টিলেটর, মনিটর, বিনামূল্যে টেনেকটাপ্লেজ, ইমউনোগ্লবিউলিন ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ এখন যদিও হচ্ছে সরকারী হাসপাতালে কিছুটা। কিন্তু নিজের সেট আপে!?
স্বপ্ন আর বাস্তবের কতটা ফারাক হতে পারে? পাঁচ বছরের মধ্যে এরা সবাই টের পায়৷
এদের সবাই ডাক্তারী পায়না। যারা পায়, তারা বোঝে
নিজেকে কিনে জামা-প্যান্ট পরতে হয়, গাড়ি না কিনলে কেউ ডাক্তার মানেনা, ভালো জামা-প্যান্ট হয়ে ফিটফাট হয়ে না ঘুরলে কেউ ডাক্তার মানতে চায়না। তো ফ্রি শপিং মল কোথাও নেই। হাফ গার্ল্ফ্রেন্ড হয়৷ ফ্রি হয় কি? নাথিং ইজ ফ্রি ইন দিস ওয়ার্ল্ড।
গার্ল্ফ্রেন্ডের দাবী অনেক, বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যেতেও পয়সা লাগে। টাকা ছাড়া নিজের ছেঁড়া জুতোও সেলাই করা যায়না৷ বাস্তব চোখে দেখে স্বপ্ন ভুলে যায়।
এদের মধ্যে নেহাত বাড়িতে যাদের টাকা দরকার তারা সরকারি হাসপাতালে জয়েন করে। বাকিরা পড়তেই থাকে। আরো ডিগ্রী, আরো ডিগ্রী। সরকারি হাসপাতালেও তো সরকার ট্যাক্সের টাকা থেকে মাইনে দেয়। বিনাপয়সায় হল কি? বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে চাইলে রাজনীতি জয়েন করা উচিৎ জয়েন্ট না দিয়ে। সরকার এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি বাড়াক। বিনামূল্যে চিকিৎসা এমনিই হবে। আমাদের রিকমেন্ডেশন এর অর্ধেক এর অর্ধেক এর অর্ধেক ও স্বাস্থ্যখাতে যায়না। কিন্তু রাজনীতি তো ছোটলোকেরা করে। আমরা ভেতো মধ্যবিত্ত বই এর চা তে বাতেল এর বিস্কুট চুবিয়ে খাওয়া বাঙালি৷ আমরা রাজনীতি র মাঠে নামবো কেন? বাবা-মা র বারণ আছে৷
মিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিক প্রতি বছর বাচ্চাগুলোর এই স্বপ্ন দেখে, এদের কথা শোনে। কিন্তু আচ্ছে দিন আসেনা। আশা পূরণ হয়না। গাল খায় তামাম ডাক্তার সমাজ। আমাদের কলেজে ভর্তির দিন আমার সামনের জনকে ইন্ট্রো নিতে গিয়ে একজন সিনিয়র দাদা জিজ্ঞেস করেছিল - তুই ডাক্তারী পড়তে এলি কেন?
সে বলেছিল - বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবো বলে।
সে এখন কি করে শুনিয়ে লাভ নেই, না বলাই ভালো । তবে দাদা তাকে চার অক্ষর এর শব্দ শুনিয়ে সেদিন ভাগিয়েছিল৷ আমি ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম - রোগ ভালো করবো বলে শিখতে এসেছি৷
আমাকে কিছু বলেনি। ভাগ্যবান আমি।
দাদার উপর সেদিন রাগ হয়েছিল। আজ হয়না৷ এই যে দশটা টিউশন দিয়ে ছেলে মেয়ে কে বাস্তবের দেশের প্রবাসী দুধেভাতে বাঙালী করে জনগণের মনে আশা জোগানো হাততালি পেলেন, দেখলে এখন হাসি পায়। এরাই কিছুদিন পরে ছায়া প্রকাশনীর বিজ্ঞাপন দেবে টাকার বিনিময়ে । কোচিং ইন্সটিটিউটের হোর্ডিং এ এদের ছবি ছাপানো হবে। ভাই, বোন দের কাছে অনুরোধ - কখনো এমন কোন স্বপ্ন দেখাতে নেই, যা পূরণ করতে পারবেনা।
অস্কার ওয়াইল্ড এর ভাষায় - Society often forgives the criminal, but it never forgives the dreamer .
জনতার ভোট পেয়ে কাজ করতে আসা জননেতারা তাই যেরকম খিস্তি খান, ডাক্তাররাও খায়। শুধু পার্থক্য একটাই জননেতারা বাস্তব বুঝেও মিথ্যে স্বপ্ন দেখায় আর কাজ গুছিয়ে পালায়। আর এই বাচ্চাগুলো বাস্তব না বুঝে স্বপ্ন দেখায় আর মাকড়সার জালে আটকে থাকে অসহায় পতঙ্গের মতো, কাজ করে তবুও সমাজের অন্ধকার স্বপ্নে মজে থাকা জনতা র ঘৃণা জোটে শুধু । কারণ ডাক্তারি তা প্রফেসন নয়, বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার জিনিস, আমাদেরই কেউ কেউ সেই মাকড়সার জালের সূত্রপাত করেছি ।।

যেতে দিও

সকালটা রোজ একইভাবে শুরু হয় প্রসূনের। মাঝরাত অব্দি পড়ে, ঘুম এমনিতে দশটার আগে ভাঙেনা তার। তারপর খেতে বসে বাবা-মা র কথা শোনা - "এই বিসিএস-টিসিএস এর জন্য না পড়ে তো সনাতন দা র কোচিং সেন্টার টা সামলাতে পারিস তো নাকি? আর কতদিন এভাবে... "
যেকোন কনজার্ভেটিভ মধ্যবিত্ত ফেমিলিতে এগুলো রোজকার কথা। গায়ে লাগেনা এখন আর। নিরুত্তর থাকে। শুরুতে গায়ে লাগতো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বোঝানো চাপ যে ধর্মতলা থেকে যে বাসগুলো ছাড়ে সবাই একই দূর, একই গতিতে, একই গন্তব্যে যায়না। কোচিং এর ডোবা র স্থির জলের থেকে অস্থির সমুদ্রের বিশালতায় ধাক্কা খাওয়া ভালো। কোথাও জোরে ধাক্কা না খেলে ঢেউ তৈরি হবে কি করে!?
নিজেকে নিয়ে খুব অহংকার ছিল তার। প্রসূন কোথাও হারতে মাঠে নামেনা ৷ স্কুল কলেজ এর পরীক্ষা থেকে খেলার মাঠ। আর আজ।
খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে পড়তে বসার আগে অভ্যেস মত কাজ হল তার প্রেমিকার মেসেজ চেক করা হোয়াটসঅ্যাপে। প্রেমিকার নাম দোলন৷ জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছে। অলরেডি ওদের ব্রেক আপ হয়ে গেছিলো যদিও। প্রসূনই করেছিল । একজন বেকার ছেলের মডার্ণ সাকার প্রেমিকা। খুব আনস্টেবল ভবিষ্যত । দোলনের বাড়িতেও মাঝে মাঝেই সম্বন্ধ আসছিল। দোলনের কথা শুনে আশ্বস্ত হতে পারছিলনা প্রসূন। ভেবেছিল এই মানসিক চাপ নেওয়ার থেকে একা চলাই ভালো। ও অপেক্ষা করে থাকতে চায়, থাকবে। এই ভেবেই অনেক বুঝিয়ে সরে আসতে চাওয়া ৷ কিন্তু পারলো কই। অনেক কান্নাকাটি, ইমোশনাল অত্যাচার। প্রসূন দোলনকে ওর বুকের আঁচিলের মত ভেবে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। বুঝেছিল দোলন যতদিন না অন্য কাউকে পাবে ওকে ছেড়ে যাবেনা। দোলন ওর প্রথম প্রেমিকা নয়। এর আগে যারা ছিল তাদের মধ্যে প্রথম জনের সাথে প্রেমের থেকে বেশি বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু যাহয়, ভেঙে যাওয়ার সময় এত তিক্ততা তৈরি হয় আর কথা বলা সম্ভব হয়না। যখন দোলন এর সাথে ওর সম্পর্ক দোদুল্যমান তখন প্রসূন হঠাত্ মেসেজ করে বসলো প্রথমজনকে, যে সে তার কেরিয়ার এর ভালো জায়গায় নেই, তার কি উচিত্ হবে দোলন এর সাথে ফিরে যাওয়া !??
প্রসূন ভেবেছিল কিছু উত্তর না দিয়েই ব্লক করে দেবে প্রথম জন। আগেও করেছে, তারপর আবার আনব্লকও করে দিয়েছে। তার উপর তারও বিয়ে ঠিক একদম বলতে গেলে। কোন রিস্ক সে নেবেনা। কিন্তু সে রিপ্লাই দিয়েছিল - "যদি ভালোবাসিস, ঠিক করে নিস। আমাকে আর মেসেজ করবিনা। ভালো থাকিস। "
আর তারপর যথারীতি ব্লক করে দিয়েছিল প্রসূনকে। বৃষ্টি নামল।
আজ দোলন একজনের সাথে ডেটে গেছে। প্রসূন কে ফোন করেছিল ডেটে গিয়ে। প্রসূন ফোন টা ছেলেটাকে দিতে বলে বলেছিল - বেস্ট উইশেস।
দোলন ফিরে এসে প্রসূনকে বলছে, ওসব কিছু ভেবোনা। ও আমার ভাইএর মত।
প্রসূন নির্বিকার৷ সেই নির্বিকার ভাবটা দুটো স্মাইলি রিপ্লাই তে ঢাকলো। দুজনেই বুঝতে পারছে কি হচ্ছে।
সত্যি কি বৃষ্টি কখনো হয়েছিল !!??
প্রসূন নির্বিকার। সে শেষ করবেনা তিক্ত ভাবে। আর দোলন আজ একজন, পরশু আর একজন এর সাথে বেরোচ্ছে ঘুরতে। প্রসূন ভাবলো এবারে যদি বিসিএস মেইন না ক্লিয়ার হয়, তাহলে কিন্তু কোচিং সেন্টারেই বসতে হবে কাজে। ভাবলো তাহলে কি শেষ করে দেবে একেবারে? হয়তো দোলন কে কোনদিন ভালোবাসেনি। দোলন ও অন্যদিকে ঝুঁকতে চাইছে। প্রসূন দোলনকে অনেকদিন নিজে থেকে ফোন করেনি। আজ কি ভেবে করলো৷ দেখলো ব্যস্ত। কয়েকবার এরকম ব্যস্ত পেলো। কিছুক্ষণ পর দোলন নিজেই কল ব্যাক করে বললো-" মা ফোন করেছিল৷ "
প্রসূন বললো - আমি তো জিজ্ঞেস করিনি।
তারপর এক মিনিটের নিস্তব্ধতা।
দোলন বললো - কিছু বলবে? অনেক কাজ আছে।
প্রসূন বললো - নাহ্।
বলে ফোন রেখে দিল।
কি বলবে প্রসূন৷ শেষ কটা দিন দোলনকে পাশে থাকতে বলবে? সেটাই বা বলবে কোন অধিকারে? নিজে তো স্বার্থপর এর মত কাজ করেছে এতদিন৷ অনেক কথা মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগলো৷ ফোন কাটার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার কল ব্যাক করলো প্রসূন৷ আবার ব্যস্ত পেলো। পরপর ফোন করেই যেতে থাকলো অধীর হয়ে। কিছুক্ষণ পর বুঝলো তাকে ব্লক করে দিয়েছে দোলন।
প্রসূন ধপ্ করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। চোখ শিলিং এ স্থির। তার মাথায় ইতিহাস এর কত সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হচ্ছে৷ কত জিকের এম.সি.কিউ আসছে। তার উদ্দেশ্য আজ সফল। দোলন অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। এবার তার নিঃশব্দে সরে যাওয়ার পালা। এতদিন মাঝে মাঝেই কাঁদতো একা লাগলে। আজও কান্না পাচ্ছিল। হঠাত্ একটা নোটিফিকেশন এলো। মেসেজের৷ দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে একটি মেয়ে মেসেজ করেছে। কথা বলে বুঝলো দোলনের বান্ধবী। বান্ধবীর দাবি হল- দোলন বলেনি, কিন্তু ও নিজেই কন্ট্যাক্ট করেছে। বেশ কয়েক মাস আগে ওকে দোলন সম্পর্কিত কিছু কথা মেসেজ করেছিল প্রসূন, তার রিপ্লাই দিতে। আজ প্রসূনের কাঁদার কথা ছিল। সে কাঁদল না৷
দোলনের বান্ধবী বোঝাতে থাকলো - দেখবে রাস্তায় কত লোক না খেতে পেয়ে শুয়ে আছে, তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করবে কত ভালো আছো৷
প্রসূন এর মজা লাগলো। বললো - সৌরভ গাঙ্গুলির ২০০৬-০৭ খারাপ সময় তো? তখন কি সৌরভ খেতে পেতনা?
এভাবে দিন চলতে লাগলো। প্রসূন বুঝলো এটা দোলনের কীর্তি। সান্ত্বনা পুরস্কার এর মত। যদি ওর বান্ধবীকে দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। দোলন তারপর থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতো। প্রসূন ধরতো। দোলন অনেকভাবে বলতো, ওই ছেলেটা তার ভাই। আরেকজন হল দাদা। অন্যভাবে যেন না ভাবে৷ ভালোভাবে যেন পরীক্ষা দেয়।
প্রসূন থাকতো নির্বিকার৷ প্রসূন এর নির্বিকার থাকাতে দোলন এর আরো সমস্যা হত।
"কি সমস্যা তোমার বলো। তোমার সাথে কি আমার বান্ধবী কথা বলছেনা!? "
প্রসূন নির্বিকার।
আগে ফোন কেটে কাঁদতো৷ এখন ফোন কেটে নিজেকে হেরে যাওয়া করুণার পাত্র ভেবে নিজের উপর হাসি পায়। কিন্তু তবু শেষ করলোনা প্রসূন। সব দরজা খোলা রেখে পড়তে চেষ্টা করে গেলো। প্রসূনের মাথায় অনেক প্রতিশ্রুতি, অনেক আদর্শের বুলি, অনেক স্বপ্নের কবর, অনেক সাহিত্য, কবিতা র কঙ্কাল একে একে ঘুরপাক খেতে লাগলো। পরীক্ষা হল৷ প্রসূন আর বাড়িতে থাকতে পারলোনা। ঘুরে বেড়াতে লাগলো চারিদিকে। প্রসূনের বন্ধুর অভাব নেই। এদিক ওদিক। বাড়ি আর ফিরলোনা। মাঝে মাঝে দোলন নিজে থেকেই ফোন করে। প্রসূন ফোন ধরে নির্বিকার থাকে। অপেক্ষা করে কবে আসবে সেই শুভ সংবাদ- দোলনের এনগেজমেন্ট এর। অবশেষে প্রসূনের রেজাল্ট বেরোলো। প্রসূন পাস করতে পারলোনা। কতদিন আর পকেট ফাঁকা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। যে বন্ধুর বাড়িগুলোতে এতবছর ধরে তাদের বাড়িতে ডাকতো- প্রসূনের যাওয়ার সময় হতনা, সেই কয়েকজন বন্ধুর বাড়িতে কাকু-কাকিমা রা স্পষ্ট বুঝিয়েই দিলেন - এভাবে বসে থাকার কোন মানেই হয়না। এর আগে অবশ্য ওনারা নিজের ছেলেদের বলতেন - প্রসূনকে দেখে শেখ্।
আত্মীয়রা অবশ্য অত স্পষ্টবাদী হয়না। যা বলার পেছনে বলে থাকে৷ পকেটফাঁকা হয়ে একদিন শিয়ালদহ স্টেশনে মাটিতে কাগজ পেতে রাত কাটালো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন৷ প্রসূনের চেহারা শুকিয়ে কাঠ। প্রসূন বাড়ি ফিরে এলো। তার কয়েকদিন পরেই দোলন জানালো - "আমি ভালোবাসা পেয়ে গেছি!! "
প্রসূন এতমাস এই মুহূর্ত টার জন্য অপেক্ষা করছিল। একটা স্মাইলি দিয়ে লিখে পাঠালো - "কনগ্রাচুলেশন।"
তারপর দোলন আর তার বান্ধবী, পরিচিত সবাইকে সব সোশ্যাল মিডিয়াতে ধরে ধরে ব্লক করে দিল৷ নিজের ঘরের দেওয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলো - "আমি নিজের ইচ্ছেতে সব জেনেবুঝে যা করার করেছি, আমার সব পরিণতির জন্য অন্য কেউ নয়, শুধুমাত্র আমি দায়ী। জীবনের শেষে শুধু তিনটে জিনিসএর মানে থাকে। কতটা সুন্দর ভাবে আমি বাঁচতে চেয়েছি, কতটা গভীরভাবে ভালোবেসেছি আর কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের যেতে দিয়েছি যারা আমার জন্য নয়।। "
তিনদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকলো প্রসূন। তার মা আর থাকতে না পেরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। কোন সাড়া নেই। মা র কপালে ভাঁজ পড়লো। শেষবারের মত দরজায় ধাক্কা দিতে যাবে, এমন সময় প্রসূন বেরিয়ে এল। তিনদিনে এই প্রথম, দিনের বেলাতে। দুটো চোখ ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু দুঃখ এর চিন্হমাত্র নেই। উজ্জ্বল দীপ্তি। জীর্ণ শরীর। শুকনো ঠোঁট নেড়ে প্রথম বার প্রসূন বললো
- " সনাতন দা র মোবাইল নাম্বারটা দাও তো!! "

বিপ্লব আসুক চৌকাঠ থেকে

নেতাজী কে নিয়ে লেখা পড়লে বা সিনেমা দেখলে কি আপনার রক্তনালী হোসপাইপ হয়ে যায়? রক্ত গরম হয়? গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে? বেশ ভালো | ওটা গ্লোবাস হিস্টেরিকাস। মূলত কম বয়সী মেয়েদের হয়। আপনার ও যখন দেশপ্রেম পায় তখনও নিশচয়ই সেটা হয়৷ না না আপনাকে ছোট করছিনা। আসলে বলতে চাইছি আবেগ কে প্রকৃত উপায়ে স্থির মস্তিষ্কে পরিচালিত করাটাই প্রকৃত শিক্ষা। ছোটবেলা কখনো ভেবেছেন নিজেকে দেশের কাজে উত্সর্গ করতে? খুব ভালো। সবাই ভাবেনা। বিপ্লব একটা পেয়ারা নয় যেটা নিজে থেকেই গাছে হবে আর নিজে থেকেই খসে আপনার মুখে পড়বে। বিপ্লবের জন্য স্বার্থত্যাগ করতে হয় মশাই। না আপনাকে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে নামতে বলছিনা৷ এন.জি.ও. খুলে নানা ইস্যুতে আন্দোলনে নামতে বলছিনা। না বলছি রাজনীতি তে নামতে৷ স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি৷ তুমি বিপ্লবী হয় চেতনায়, নয় স্বপ্নে৷ সবাই আমরা বিপ্লব আনতে পারি। কোন দান খয়রাতি না করেও, কোনও রক্তক্ষয় না করে নিঃশব্দে। এখানে আপনার রক্ত লাগবে না৷ শুধু নিজের কাজের জায়গায় যতটা সম্ভব সিরিয়াসলি কাজ করুন নিজের কাজটা৷ নিজের বাড়িতে সময় দিন। নিজের ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করুন৷ সময়ে ট্যাক্স দিন৷ সঠিক ট্যাক্স দিন। আপনার ট্যাক্স এর টাকা কোন বেঘরের মাথায় ছাদ দিতে পারে, কোন বুভুক্ষু মানুষকে দু টাকা কিলো চাল দিতে পারে। আপনার সিনসিয়ারিটির জন্য ব্যাংকের কাজে পাঁচ মিনিট সময় একজনের কম খরচ হতে পারে। সেই সময়ে ওই লাইনে দাঁড়ানো কেউ এমন একটা গান লিখতে পারে যেটা পাঁচশ জন মানুষকে অন্ধকার সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি দেবে৷ ওভারটাইম করতে বলছিনা। জাস্ট নিজের কাজটুকু করে বাড়ি গিয়ে সময় দিতে বলছি৷ আপনার সময় দেওয়াতে আপনার বাড়িতে থাকা লোকজন সোশ্যাল প্রেসার মুক্ত হবে। তাদের প্রোডাক্টিভিটি আরো বাড়বে। তবে এর একটাই সাইড এফেক্ট, দান খয়রাতি, রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে যে হাততালি টা পাওয়া যায় সেনাপতির মত, আপনি এখানে একজন শুধু সাধারণ সৈনিক হবেন। আপনাকে গু-গুলে খুঁজলে পাওয়া যাবেনা। কারণ নিজের কাজ করার জন্য কেউ বাহবা পায়না৷ চলুন এক নিঃশব্দ গণ আন্দোলন গড়ে তুলি। যেখানে কেউ কাউকে আর ফ্রি সার্ভিস দিতে বলবেনা, বলবে নিজের সঠিক ইনকামের ট্যাক্স টুকু শুধু দিতে, আর নিজের ঘরে বাইরের ডিউটিটা ঠিক করে পালন করতে। সেই দেশ খুব দুর্ভাগা যেখানে মহাপুরুষ এর জন্ম দিতে লাগে, সেই দেশ খুব দুর্ভাগা যেখানে চ্যারিটি করতে লাগে ।।

রাম ও হিন্দু ধর্ম

অনেক কাল আগে এক জমিদার ছিলেন। জমিদার এর নাম ছিল দুর্লভ নারায়ণ। তিনি নামেই জমিদার ছিলেন, আসলে তিনি ছিলেন একটা বিরাট প্রদেশের রাজা, তার সাথে ম্যাজিক জানতেন। প্রদেশের প্রায় সকলেই তাঁকে ভয় ভক্তি করতেন৷ জমিদার এর একটি ম্যাজিক এর স্কুল ছিল। সেখানে তিনি ও তাঁর অনেক প্রাক্তন ছাত্রদেরকে নিয়ে ম্যাজিক শেখাতেন। তাদের মধ্যে একজন এর নাম ছিল ঐন্দ্রিল। ঐন্দ্রিল কে খুব ভালোবাসতেন জমিদার দুর্লভ নারায়ণ। তাই ঐন্দ্রিল কে নিজের ঘরের চৌকিদার বানিয়ে দিলেন তিনি। যাতে যে কেউ, যখন তখন ঘরে ঢুকতে না পারে৷ একদিন এক মহাপ্রতাপশালী বদমেজাজি ম্যাজিসিয়ান দেবজিত্, দুর্লভ নারায়ণ এর ঘরে এসে ঢুকতে চাইলো। বলা বাহুল্য যেহেতু আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছিলনা তাই ঐন্দ্রিল ঢুকতে দিলনা।
দেবজিত্ রেগে তখন ঐন্দ্রিলকে বললো, "তোর এত বড় সাহস তুই আমার পথ আটকাস্। তোকে এখান থেকে বের করে দিতে হবে। "
দুর্লভ নারায়ণ হই হট্টগোল শুনে বেরিয়ে এলেন। বললেন - "হ্যাঁ, ঠিকই তো। শাস্তি তো পেতেই হবে। আপনার মত মহান মানুষের পথ আটকেছে!! "
কিন্তু যেহেতু দুর্লভ নারায়ণ এর ঐন্দ্রিল এর উপর দুর্বল জায়গা ছিল ৷ বললেন -
"ঐন্দ্রিল এর কাছে দুটো পথ আছে। কোনটা বাছবে সেটা ওর ব্যাপার৷ পথ দুটো হল ঐন্দ্রিল কে ম্যাজিক করে, ওকে আবার বাচ্চা করে পাঠানো হবে -
১) আমারই প্রদেশের এক খুব সাধারণ প্রজার বাড়িতে৷ তবে এরকম সাতবার জীবন চক্র শেষ হলে তবেই আবার আমার এখানে ফিরতে পারবে৷ অথবা
২) আমারই এক সমকক্ষ বন্ধু জমিদার প্রজাপতি র পরিবারে বংশধর হিসেবে। সেখানে ঐন্দ্রিল একজন পরম প্রতাপশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। পড়াশোনা করবে। এরকম তিনবার জীবন চক্র সম্পন্ন হলে তবেই আমার কাছে ফিরতে পারবে৷ তবে একটাই মুশকিল, সেটা হল- ওই তিনবার জীবনেই সে আমার শত্রু হবে। "
দুর্লভ নারায়ণ এর সেই ক্ষমতা ছিল ম্যাজিকে কিনা জানিনা। তবে প্যারালাল ইউনিভার্সে রামায়ণ এভাবে লেখা হতেই পারে৷ রামায়ণ মহাকাব্যে জয়-বিজয় ওরফে ঐন্দ্রিল, দুর্লভ নারায়ণ এর সেবা তে যাতে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারে, তাই দ্বিতীয় পথ বেছে নেওয়ায় খানিকটা এভাবেই মহাকাব্য এর যে ঋণাত্মক চরিত্র রাবণ, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রসংগত বলি, আগের সব নাম আমার দেওয়া। যেমন দুর্লভ নারায়ণ হল বিষ্ণু। বিষ্ণুর অবতার সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে যথাক্রমে নরসিংহ, রাম ও কৃষ্ণ রূপে এসে হিরণ্যকশিপু, রাবণ ও শিশুপাল দের একটা গট-আপ যুদ্ধে মেরে তাদের মুক্তি দিয়েছে৷ যাতে তারা মুক্ত হয়ে গিয়ে আবার বৈকুন্ঠে ফিরে চৌকিদারি করতে পারে! এত সাত কান্ড রামায়ণ লেখা হল তাহলে শুধু চৌকিদার তার কাজটা কোনরকম পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে ঠিক ঠাক করেছিল বলে। এসব পড়ার পর আর কোন চৌকিদার ঠিক করে তার কাজ করবে ??
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বক্র ইংগিত না খুঁজে আসল প্রসংগ তে আসা যাক্। হিন্দু ধর্ম কে পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীনতম ধর্ম হিসেবে মানা হয়, যা এখনও মানবসভ্যতায় টিকে রয়েছে। মহম্মদ, যীশু, বুদ্ধ এর জন্মের অনেক আগে কোন অজ্ঞাত সময়ে, কোন অজ্ঞাত ভাবে, কোন নির্দিষ্ট মুখ ছাড়া এই কনসেপ্টের জন্ম৷ এমন একটা জীবন দর্শন যাকে এত হাজার হাজার বছরে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি৷ কারণ এই নয় যে, এই ধর্মকে কাউকে রক্ষা করতে হয়েছে, আমি ধর্মজ্ঞানী বা ধার্মিক নই, কিন্তু এটুকু বুঝি ধর্মের কাজ রক্ষা করা। ধারণ করা। ধর্মকে রক্ষা করার কথা বোধহয় কলিযুগে এক পায়ে দাঁড়ানো ধর্মের ষাঁড়ের পক্ষেই বলা সম্ভব৷ হিন্দু ধর্ম কখনো ধ্বংস হয়নি তার কারণ সময়ে সময়ে যখন বদ্ধ জলায় ধর্মের জল জমতে শুরু করেছে, কেউ না কেউ এসে সেই বদ্ধ জলাকে নালী কেটে অসীম সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছে৷ হিন্দু দের মধ্যেই এত রকম বৈচিত্র্য আছে গুণে শেষ করা যাবেনা। এই সব কিছু নিয়েই একসাথে হিন্দু ধর্ম৷ কোন একটা নির্দিষ্ট ধর্ম গ্রন্থ নেই হিন্দুদের, কোন নির্দিষ্ট কাউকে আর মানা হয়না যে বলে দেবে তুমি হিন্দু আর তুমি হিন্দু নও। যখন বেদ-বেদান্তের সংস্কৃত শ্লোক, সাধারণ মানুষ দের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে দেওয়ালে দাগ করতো, তাদের ন্যায় নীতির পাঠ সহজে শেখাতে রামায়ণ - মহাভারত লেখা বলে আমার ধারণা ৷ বিভিন্ন জায়গায় এই মহাকাব্য এর বিভিন্ন রকম বক্তব্য আছে৷ এটাই রামায়ণ, বাকিগুলো মিথ্যে কেউ বলতে পারবেনা৷ রামায়ণে র একটা ভার্সানে বলা হয় - রাম যখন রাবণ বধের জন্য যজ্ঞ আয়োজন করেছিলেন তখন শিব কে সন্তুষ্ট করার জন্য এক পুরোহিত এর প্রয়োজন ছিল৷ রাবণ ছিলেন শিবের বড় উপাসক৷ এরকমও শোনা যায় রাবণ শিব কে কৈলাস থেকে লংকা তে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করার পর শিব রাজী না হওয়ায় গোটা পাহাড় তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিব তা হতে দেয়না। শিবের আঙুলের চাপে রাবণ একদিকে যন্ত্রণায় চিত্কার করে ওঠেন৷ আর একদিকে তিনি শিব এর উদ্দেশ্যে বন্দনা করে শিব তান্ডব স্তোত্রম্ গান যার মিউজিক দিতে তিনি তার শরীরের স্নায়ুগুলোকে মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট এর তার হিসেবে ব্যবহার করেন। শিব রাবণ কে "রাবণ" নাম দেন৷ তো যাই হোক, রামের যজ্ঞ করতে রাবণ কিন্তু এসেছিলেন৷ এসে তিনি নিজের বধের মন্ত্র নিজেই পড়ে গেছেন৷ এই রাবণ কে শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না৷ বিষ্ণুর অবতার হলেন রাম ৷ তো এই ধণাত্মক চরিত্র রামায়ণে প্রজার কথায় নিজের স্ত্রী সীতাকে আগুনে হাঁটিয়েছেন, রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দিয়েছেন, সব পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসার পর আবার তাঁকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেছেন৷ আর অন্যদিকে ছয়বিদ্যা ও চার বেদে পন্ডিত রাবণ যখন যুদ্ধে এক এক করে হেরে যাচ্ছিলেন, তখন এক যজ্ঞের আয়োজন করেন - যে যজ্ঞ সম্পূর্ণ করলে রাবণ জিতে যেতেন। কিন্তু বানরসেনা তাঁর স্ত্রীকে যখন আটক করে, তখন তিনি যজ্ঞ ছেড়ে উঠে আসেন স্ত্রীকে বাঁচাতে, তার রাজ্যপাট ধ্বংস হয়ে যাবে জেনেও। রাবণ কে বেশ কিছু জায়গায় এখনো দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়৷ হিন্দু ধর্ম এই কারণেই স্বতন্ত্র যে তার পুরাণে ধণাত্মক ও ঋণাত্নক দুই চরিত্রকে বিভিন্ন আংগিকে দেখানো হয়৷ দুই পক্ষকেই সম্মান করতে শেখানো হয়৷ যেখানে রাম ও পূজ্য, রাবণ ও। রাবণ মারা যাওয়ার সময় রাম তাঁর ভাই লক্ষ্মণ কে সেই মৃত্যুর মুখে থাকা রাবণের কাছ থেকে শাস্ত্র উপদেশ শিখে নিতে নির্দেশ দেন। রামায়ণ হল যেন আমাদের ভেতরের চেতনার মধ্যে চলা সংঘাত। যেখানে রাম ও আছে, রাবণ ও আছে৷ ভোটের ফল বেরোনোর পর যারা হঠাত্ করে হিন্দুত্ববাদের প্রচারে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেমে পড়েছেন, যাদের আগে কখনো কোন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে দেখিনি, তারা যেন এই পুরো ব্যাপার টা ভুলে না যান যে ভারতের সংবিধানের কনসেপ্ট লুকিয়ে আছে হিন্দু দর্শনের বহু গভীরে। তাঁরা সেটা মনে রাখলেই দেশের ভালো। সর্বশেষে আমার নিজের একটি স্বীকারোক্তি - আমি ভগবান মানিনা, আমি বিশ্বাস করিনা ভগবান এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও পরিচালক। আমি মানি পদার্থবিদ্যা। বিজ্ঞানের নিয়মে এই মহাবিশ্ব তৈরি এবং চলছে৷ যতক্ষণ না ওইরকম সুদর্শন চক্র আর ধুতি টুতি পড়ে মাথায় সূর্য নিয়ে কেউ আমার সামনে আসছে আমি বিজ্ঞান মানি । ম্যাজিক ও দেখাতে হবে যেমন - ইচ্ছে আমার বহুদিনের, চাঁদ থেকে ঘুরে আসার । ভগবান পারেন কিনা জানিনা। তবে বিজ্ঞান পারে৷ তবে মানিনা বলে গল্প টল্প পড়তে, যেকোন দর্শন জানতে তো অসুবিধে নেই। তাই পড়েছি ৷ আমাকে আমার কথা বলাতে মারবেন না । কারোর ভাবাবেগে আমার কোন কথায় আঘাত লাগলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । আপনার মতামত ভিন্ন হলেও তাকে সম্মান জানানোর ক্ষমতা আমাকে হিন্দু দর্শন শিখিয়েছে ।।

নায়ক ও অভিনেতা

একটা পরিণত বৃক্ষ কখনো কি তার নিজের সুকোমল সদ্য প্রস্ফুটিত অংকুর অবস্থা কে মনে রাখতে পারে ? জানিনা। তবে এটুকু বলতে পারি, গাছেদের যদি প্রাণ থাকে, তবে চেতনা হয়তো থাকবে। সেই চেতনা দিয়ে যদি একদিন ভাবতে বসে আমার মত, যে তার জীবনে এরকম কত গুলো পর্যায় রয়েছে সে তাহলে কিরকম ভাবতে পারে? যেমন আমি। একসময় ছিল, বাড়ির দাদা দের দেখেছি শাহুরুখ, আমির, বচ্চন এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঝামেলা করতে। কেউ কেউ আবার উত্তম, সৌমিত্র কে এদের আগে রাখতেন ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে। তখন শুনতাম। ছোট ছিলাম৷ তারপর বড় হয়ে হস্টেলে সিরিয়াস ডিবেট৷ কে সেরা? তিন খানের জমানায়। কোন খানের নামে সবাই আহ্লাদে আটখান্ ? সেইসব ধোঁয়া ধোঁয়া ডিবেটে কোন এক পক্ষে ভক্ত্ হয়ে অংশগ্রহণ করেছি এককালে। বন্ধুদের সাথে মারামারিটাই শুধু বাকি ছিল। ডিবেট চলে যেত ঝগড়া তে। তারপর একটা গোটা দিন হয়তো ঠিক করে কথা বলা বন্ধ থাকতো। আর এখন।
শেষ কবে কোন খান্ এর সিনেমা দেখেছি মনে পড়েনা। সোমবার আমার এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল৷ সে শাহরুখের সিনেমা ডেকে ডেকে দেখাতো। মাঝে মাঝে সিনেমা থামিয়ে বুঝিয়ে দিত। নিজের বক্তব্য কোন সিন নিয়ে৷ আমি ছিলাম আমীর ভক্ত্। সত্যি কতটা ভক্ত্ ছিলাম দুজনে। দুজনে দুজনকে দুজনের প্রিয় এত সিনেমা দেখিয়েছি৷ শেষ দিকে দুজনেই দুজনের নায়ককে এপ্রিসিয়েট করতাম। আর একজন ছিল সলমন এর ফ্যান। তার কথা জানিনা। কিন্তু দুজনেই সোমবার মনে করে দেখলাম, শেষ কবে আমরা কোন খান এর সিনেমা দেখেছি মনে নেই, শুধু তাই নয়। দেখতেও ইচ্ছে করেনা। বোধহয় চার বছর আগে। জীবন এখন সাদামাটা, রঙীন নেই। তাই মন নায়ক নয়, অভিনেতা খোঁজে৷ ভারতীয় অভিনেতা কজন আছে, যাদের অভিনয় দেখলে গায়ে কাঁটা দেয় ৷ কে কে মেনন, নওয়াজউদ্দিন, ইরফান, নানা পটেকার, নাসীরুদ্দিন শাহ্ এর মত এই তো হাতে গোনা কয়েকটা নাম। আমার ব্যক্তিগত মতে বাদবাকি সবাই হয় অভিনয় আমার চোখে লাগেনা, কিংবা এত বেশি অভিনয় করে যে চোখে লাগে। অথচ এই কজন এর মধ্যে কেউ সেভাবে দাম পায়নি৷ একা ৩০০ পার করার ক্ষমতা এদের কারো নেই। করলেও সেটা ব্যতিক্রম। কিন্তু এখন মন অস্থির থাকলে এইসব অভিনয় দেখে মন শান্ত হয়৷ গোটা পৃথিবীর অভিনেতা ধরলে আমার লিস্টে খান ত্রয়ী প্রথম পঞ্চাশেও থাকবেনা। যার জন্য বন্ধুদের সাথে ধুন্ধুমার লেগে যেত, তারা এখন ৫০ এ ও নেই৷ বুড়ো বচ্চন থাকবেন যদিও। এভাবেই শিল্প হয়৷ আজ কে কে মেনন এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ খুলুন। কয়েক হাজার লাইক। সিরিয়াল অভিনেতা দের এর থেকে বেশি লাইক থাকে। কিন্তু আমার চোখে কে কে মেনন অনেক উঁচুতে থেকে যাবেন । মনে হয় যেন সিনেমা নয়, জ্যান্ত মানুষের থিয়েটার দেখছি। এত নিঁখুত কাজ অনেক মানুষ হয়ত নিতে পারেনা। তবে এসব শিল্পীরা এসব ভেবে কাজ করেন না। নিজের আনন্দে কাজ করে যায়, বুক চিতিয়ে। ফিজিক্সে গ্র‍্যাজুয়েশন করে, এম.বি.এ পড়ে থিয়েটার, টিভি, সিনেমায় অভিনয় করে যাচ্ছেন মানুষটা। লিড রোল পাননা৷ সিনেমার কাট আউটে জায়গা হয় হয়তো কোন এক কোণে। কিন্তু যখন ফ্রেমে থাকেন অভিনেতা হিসেবে যেকোন নায়ককে ম্লান করে দেন ৷।

সংগীত- ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

"বলছে চুড়ি, বলছে কংকণ/
হায়রে হয়ে গেলাম তোর সাজন.. "
এইটা হল খুব হিট একটা হিন্দী গান "বোলে চুড়িয়া" র ভাষা। শুধু এটা নয়, আরো অনেক উদাহরণ আছে৷ এটা থেকে কয়েকটা সিদ্ধান্ত টানা যেতে পারে -
১) সংগীত এ লিরিক্স এর গুরুত্ব নেই। এমন নয় যে ভালো লিরিক্স থাকলে গান হিট করতে পারেনা। ভালো লিরিক্স হল মাধ্যমিকের এডিশনাল সাবজেক্ট এর মত৷ যদি তা না হত, টুনির মা থেকে বিঠোফেন, মোত্জার্ট কারোর সৃষ্টি হিট হতনা। এরকম ও অনেক গান আছে যেগুলো হিট বিশেষত তার তালের জন্য। যেমন গ্যাংনাম স্টাইল, কোলাভেরি ডি৷ তাই হিট হতে গেলে সুর বা তাল অথবা দুটো অবশ্যই আকর্ষক হতে হবে৷
২) জনতা কিছু বোঝেনা। এই পয়েন্ট টা আমি পুরোপুরি সহমত নই। পুরোপুরি কথাটা বললাম কারণ 'এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়' আর 'উঠোগো ভারত লক্ষ্মী' এই দুটোরই শুরু একইরকম সুরে। যদিও দুটো গানের এম্বিয়েন্স আলাদা। আবার "কিচ্ছু চাইনি আমি" আর "তোমাকে বুঝিনা প্রিয়" দুটো গানেরই শুরুর সুর একইরকম। অথচ দুটোই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হিট। সহমত নই কথাটা বললাম কারণ জনতা কিছু না বুঝলে আমি কোনরকম ট্যাগ ছাড়া আমার গানের এক লাখ শ্রোতা পেতাম না। 'অপরাধী', 'চলে গেছো তাতে কি ' গানগুলো কোনরকম ট্যাগ ছাড়া হিট করতো না।
সে যাই হোক, আজ আমি কয়েকটা পিলার ছুঁয়ে অতি সংক্ষেপে আগামী দিনের সংগীত কিরকম দিকে যেতে চলেছে সেটা নিয়ে আমার বিশ্লেষণ লিখবো। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই গলার কন্ঠ, গলা খাঁকারি, হাঁচি ইত্যাদি দিয়ে মিউজিক তৈরির প্রবণতা দেখা যায়। নিজের সাথীদের বিপদ সংকেত দেওয়ার জন্য এক ধরনের মিউজিক ব্যবহার করতো আদিম মানুষেরা। সংগীত কে কমিউনিকেশনের মাধ্যম হিসেবে ধরলে মানুষ কথা বলতে শেখার আগেই মিউজিকের ব্যবহার শিখেছে বলে আমার ধারণা। কারণ শব্দ সাজিয়ে কথা বলতে গেলে একটা ভাষার মোটামুটি একটা ব্যকরণ তৈরি করতে হবে। আমি একটা লেখার জন্য নতুন এক ভাষা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিলাম, সেটা করতে গিয়ে বুঝেছি এই কাজটি কতটা কঠিন৷ যাই হোক, পৃথিবীর প্রাচীনতম মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে ধরা হয়, নিয়েন্ডারথাল দের দ্বারা প্রস্তুত গুহাভাল্লুক এর উরুর হাড় ( খুব সম্ভবত ফিমার) দিয়ে তৈরি এক বাঁশি। তারপর একসময় মানুষ একটু একটু লিখতে শিখল। ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীত এর ভিত্তি ধরা হয় সামবেদ এর মধ্যে। বিভিন্ন মন্ত্র বিশেষ সুরে পড়া হত৷ এই সময়কালের বিভিন্ন স্ট্রিং ইন্সট্রুমেন্ট ও বাঁশি প্রজাতির যন্ত্র ও পাওয়া যায়। "রাবণ হাথা" নামের একধরণের বেহালা কে ধরা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম স্বীকৃত স্ট্রিং ইন্সট্রুমেন্ট গুলোর মধ্যে একটা৷ তারপর মানুষ লিখতে শেখার পর সংগীত এ আরো পারদর্শী হয়ে ওঠে। ভারত, ইরান, গ্রীস, মিশর ছাড়িয়ে মিউজিক কে আপন করে রোমান ক্যাথলিক চার্চগুলি। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর সূত্রপাত ঘটে চার্চ এর হাত ধরে৷ এর সাথে ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীত এর একটা মিল পাওয়া যায়৷ কারণ ভারতেও সামবেদ থেকে শুরু করে ক্লাসিক্যাল সংগীত (বিশেষত দক্ষিণ ভারতের রাগ) মূলত ভগবান কে নিবেদন করে ভক্তিভাবে ৷ ভারতের প্রাচীন ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে যা কিছু লেখালেখি বেশিরভাগ হয়েছে একাদশ থেকে ষোড়শ শতকের ( খ্রীস্টাব্দে) মধ্যে। এইসময় তানসেন, বৈজু বাওরা ছিলেন। তারপরেই লোকসংগীত এর সূত্রপাত হল। এই লোকসংগীত এর মধ্যে জনপ্রিয় বাউল, ভাটিয়ালি, ভজন, কীর্তন বেশিরভাগই ভক্তিমূলক। ইউরোপে এলেন মোজার্ট, বিঠোফেন, স্কুবার্ট৷ সংগীত এর যে পৃথিবী জুড়ে ধীর স্থির ভাব সেটা মানুষের মনস্তত্ত্ব এর সাথে বদলাতে লাগলো ধীরে ধীরে৷ বেতার প্রযুক্তি আসার পর সংগীত এ শ্রোতা বাড়ল। সংগীত এর ধারা ভগবান থেকে ধীরে ধীরে প্রকৃতি, প্রেম ইত্যাদির দিকে বেশি করে ফ্লাশলাইট ফেললো। বিশ শতকের মধ্যভাগ শেষ হতেই ফ্লাশলাইট গিয়ে পড়ল রক ও পপ সংগীতের উপর৷ ভারতে এর প্রভাব আসতে দেরী হয়েছে কিছুটা৷ পাশ্চাত্যের তত্কালীন মনস্তত্ত্বকে প্রতিফলিত করে এই রক মিউজিক। ভারতে তখন শচীন দেব বর্মণ, শংকর-জয়কিষণ , সলিল, সুধীন ইত্যাদি চলছে। মেলোডি গানে থাবা বসালো রক একেবারে বিশ শতকের শেষে গিয়ে । কারণ ভারতীয়দের মন ও চাইছিল এরকম কিছু যা সব দুশ্চিন্তা গুলোকে এলোমেলো করে দেবে। একুশ শতকে সামগান এর জন্ম যে ভূখন্ডে সেই দেশে রক ও পপ উপনিবেশ স্থাপন করলো। শুধু যদি ভারতে ধরি এখন মূলত পপ, রক, ইলেকট্রনিক মিউজিক, লোকগীতি ও কিছুটা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক লোকে শোনে৷ ইলেকট্রিক গিটারে যে অদ্ভুত শক্তিশালী শব্দ আসে, সেটা আনপ্লাগড্ এ আসে একটা ছোট টুং শব্দ হয়ে৷ গিটারিস্ট সেই প্রচন্ড শব্দ টাকে অভিনয় করে দেখায়, যেন খুব জোরে গিটার স্ট্রাম করছেন৷ অনেক ব্যান্ড ই লাইভ যখন করে অরিজিনালি গায়না বা বাজায়না, রেকর্ড থেকে বাজে বা পেছনে কেউ বাজায়৷ তারা স্টেজে ওঠে শুধু অভিনয় করতে৷ অর্থাৎ সংগীতে এখন অভিনয় ভীষণ ভাবে এসে পড়েছে৷ একুশ শতকে অডিও-ভিসুয়্যাল যুগে এখন ভিডিও বা সিনেমা র গান ছাড়া শুধু গান হিসেবে রিলিজ করে কটা হিট ( হিট মানে ভিউ বা শ্রোতার সংখ্যা দিয়ে নয়, লোকের মুখে মুখে ফেরে এরকম) করেছে গুণে বলা যাবে। একটা কথাই আছে- মিউজিক এখন আর লোকে শোনেনা, দেখে। এবার যারা লোকগীতি করে, ফ্রি ল্যান্সিং করে তারা ভিডিও বানানোর টাকা পাবে কোথায়? আপনি বলবেন, কি দরকার বানানোর তাদের? এটা তো কোন কথা নয়৷ সেরকম ভাবলে তো মহাভারতের পর আর কারো কিছু লেখা উচিত নয়। রবীন্দ্রনাথের পর কারো প্রেম নিয়ে কিছু লেখা উচিত নয়৷ আর্ট এভাবে থেমে থাকে নাকি? এখন, বেডসিন থাকলে গানের মিলিয়ন ভিউ বাঁধা। এই জায়গা থেকেই রাগে একটা গান লিখেছিলাম। কিন্তু বাস্তব কে আমাদের, মিউজিশিয়ানদের মেনে নিতেই হবে।
আর এসেছে এডিটিং৷ কজন সেলেব খালি গলায় লাইভ গান গাইতে রাজি হবেন খুব সন্দেহ আছে । যাই হোক, সব আধুনিকতা কেই স্বাগত জানাই৷ কিন্তু আধুনিক হতে গিয়ে আমরা যেন ইতিহাসকে ভুলে না যাই৷ আমার ধারণা ভবিষ্যতে ভারতীয় সংগীতে পুরোপুরি ভাবে থাবা বসাবে অডিও ভিসুয়্যাল ইলেকট্রনিক মিউজিক। র‍্যাপ প্রাধান্য পাবে লিরিক্সে। মানুষের শোনার ধৈর্য কমে গেছে, বোঝার সময় নেই। ব্যস্ত এই মানুষের মনস্তত্ত্বকে পরিচালিত করছে তার মাথায় চলতে থাকা ক্যাওস। তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে নার্সিসিজম্ এর রমরমা বাজারে অতি অল্প এ খ্যাতি পাওয়ার লোভ থেকে মিউজিশিয়ানরাও এই দিকেই ঝুঁকবে। ইলেকট্রনিক মিউজিক সুর ও তাল এর একদম বেসিক কনসেপ্ট থাকলে আর সফ্টওয়ার হ্যান্ডেল করতে পারলে, কিছু টাকা খরচ করলেই হাতের মুঠোয়। প্র‍্যাকটিস লাগেনা। তাই ইলেকট্রনিক রক যে প্রাধান্য পাবে আগামী দিনে, সেটা আমার ধারণা। সোজা কথায়, মিউজিকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার রা রাজত্ব করবেন।
তবে এটাও বিশ্বাস লোকগীতি, ক্লাসিক্যাল মিউজিক হারিয়ে যাবেনা পুরোপুরি। শ্যামল মিত্র, সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্ত, হেমন্ত দের সুর মনের ভিতরে থেকে যাবে।
সবার শেষে বলি, একজন সামান্য মিউজিশিয়ান হিসেবে যেটুকু জ্ঞান, তাই নিয়ে আমার এই বিশ্লেষণ। এই স্বল্প জ্ঞান নিয়ে লেখাতে কারো ভাবাবেগে আঘাত লাগলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী বা কোন ভুল চোখে পড়লে আমাকে মারবেন না৷ আমি ইতিহাসবিদ নই। শেষ করবো উত্তর পূর্ব ভারতের কংথং গ্রাম এর কথা বলে৷ এই গ্রামের কোন মানুষের নাম ধরে ডাকা হয়না। কারণ নাম দেওয়ার সময় সবাইকে একটা করে মৌলিক সুর দেওয়া হয়, সেটাই তাদের নাম৷ সেই সুরেই তাদের ডাকা হয়। মিউজিক হল পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্পগুলোর মধ্যে একটা। একটি সদ্যজাত শিশুর প্রথম কান্নার মধ্যেও মিউজিক রয়েছে। অর্থাৎ আমরা অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে সবাই মিউজিশিয়ান। এটাও বলা যেতে পারে মিউজিক হল একাধারে সব থেকে সহজ ও সব থেকে কঠিন আর্ট ।।

Sir-কা-যম্

বাসে যাচ্ছিলাম। পাশের সিটে বসে এক ছেলে দুকানে হেডফোন গুঁজে মাথা নাড়ছিল। দেখলাম গান শুনছে। "তেরি প্যায়ার, প্যায়ার, প্যায়ার -হুক্কা বার"
আপনারা জানেন আমি একজন ভালো গায়ক। আর এটাও নিশ্চয়ই সবাই জানেন, সোনু নিগম ও সেই স্টেজ শেয়ার করতে চান যেখানে আমি একসময় গেয়েছি। তাই তিনি নীলরতনে আসছেন। তা আসুন। যদিও আমার গান সবাই শুনেছেন তবুও সেটা রণে বনে জলে জঙ্গলে সুযোগ পেলেই টেস্ট করা থেকে আমি বিরত থাকিনা।
তো পাশের ছেলেটিকে বললাম - ভাই, তুমি "দেওয়াল ভাঙো" শুনেছো?
সে বললো - দূর ঘাটের মড়া, ডিস্টার্ব করিসনা।
বুঝলাম সে সুর সাগরে নিমজ্জিত।
কি আর করা যাবে বাস থেকে নেমে ময়দানের পাশের ট্রাম রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে পোস্টার চোখে পড়লো - "বাংলা বাঁচাও। বাংলা ভাষা বাঁচাও। বাংলা সংস্কৃতি বাঁচাও৷ "
উত্সাহিত হয়ে দেখলাম সেই পোস্টারের তলায় ফোন নাম্বার দেওয়া। কোথাও যদি বাংলা ভাষাকে অপমান করা হয়, তাহলে ফোন করতে বলা আছে। তারা উচিত শিক্ষা দেবে। বুদ্ধি করে ফোনটা লাগালাম। দেখলাম কলার টিউন বাজছে - "বেখ্যায়ালি মে ভি তেরা.. "
ফোন ধরতে বললাম - "দাদা, তোমরা আমার বিখ্যাত গান দেওয়াল ভাঙো শুনেছো ?"
উত্তর এলো - রং নাম্বার৷
ময়দানে একটা গরু সুশীতল গাছের ছায়াতে সবুজ কচি ঘাস নিশ্চিন্তে খাচ্ছিল। ভাবলাম একেই শোনাই "দেওয়াল ভাঙো"। মোবাইলে গানটা শুরু হতে না হতেই হাম্বা হাম্বা করে তেড়ে এলো। একি অসভ্যতা! গানটা পুরোটা শোন। এইজন্য তুই গরু আর আমি মানুষ। গরু কি সাধে বলে? একে নিয়ে নাকি আবার যুদ্ধ চলে!
অগত্যা নীলরতনে ফিরে এলাম৷ ভাবলাম এক্যাডেমি বিল্ডিং এর দিকে গিয়ে একটু স্মৃতিচারণ করি৷ নিজের কলেজ অন্তত আমায় মনে রেখেছে। রাস্তায় অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিলাম৷ হঠাৎ একজন পাকড়াও করে বললো - দাদা, এই ফর্ম আর রক্তটা নিয়ে কোথায় জমা দিতে হবে?
ভাবলাম এত লোক থাকতে আমাকেই ধরলো! একে দিয়েই পরীক্ষা করা যাক্। জিজ্ঞেস করলাম - "সে তো জানিনে। কিন্তু তুমি কি আমার বিখ্যাত গান দেওয়াল ভাঙো শুনেছো? "
মুখ বেঁকিয়ে বললো - পাগল নাকি!!
কি করা যায়! অগত্যা বিকেল বেলায় লেডিজ হস্টেলের সামনে একটা পোস্টার লিখে দাঁড়িয়ে গেলাম। পোস্টারে লেখা "দেওয়াল ভাঙো"।
মেয়েরা আসে দেখে, হাসে নিজেদের মধ্যে, চলেও যায়৷ আমার মনে আশা জাগে কেউ যদি এই শব্দটা নেহাৎ কৌতূহল বশত ইউটিউব বা গু-গুলে সার্চ করে গানটা শোনে। নাহ্ দুঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও একটাও ভিউ বাড়লোনা। জেসিবি র খুদাই দেখবে, বাচ্চার লেবু খাওয়া দেখবে, দুই বেড়ালের মারামারি দেখবে তবু আমার গান শুনবেনা। হতাশার জমজমাট অন্ধকার আমার চারপাশে নামছিল৷ হঠাৎ দেখি কয়েকটা ছেলে বাওয়ালি করতে করতে ফিরছে। আমার পোস্টারে "দেওয়াল ভাঙো" লেখা দেখে ওরা কি বুঝলো জানিনা, ছেলেগুলো মিলে লেডি হস্টেলের দেওয়াল ভাঙতে শুরু করলো৷ উল্টা সমঝিলি রাম। আমি দেখলাম - হাওয়া খারাপ। কেটে পড়ি।
বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়লাম৷ কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। স্বপ্ন এ দেখি "কফি উইথ কারণ " এ আমাকে ডাকা হয়েছে।
আমি বললাম কারণ জেহর কে - "Sir কা যম্, শেষে আমায় নিয়ে কেন? "
কারণ বললেন - "আসলে আপনি একটা অনন্য রেকর্ড করেছেন, আপনার গান 'Renovatio' একটা লোকও শোনেনি। এটা একটা গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। ইউটিউবে এমন কোন ভিডিও নেই যেটার শূন্য ভিউ। তাই সারকাজম্ হচ্ছে আপনাকে নিয়ে। আপনি বলুন এই অনন্য রেকর্ডএর অধিকারী হয়ে কেমন লাগছে? "
আমি বললাম - বলবো তবে তার আগে একটু কফি হয়ে যাক্।
কারণ জেহর - এই শো তে তাদেরকেই কফি দেওয়া হয় যাদের অন্তত একজন টিভি তে দেখবে৷ আপনাকে কেউ দেখবেনা৷ আপনি বলুন।
আমি - আসলে কেমন একটা লজ্জা লজ্জা লাখছে। আবার নিজেকে নিয়ে গর্বিত হচ্ছি। এই মিলিয়ন, বিলিয়ন ভিউ র যুগে আমার গান একজনও শোনেনি৷ এই রেকর্ড করা টা খুব চাপের৷ আর আমি কাল একটা গরুর কাছে যা রেসপন্স পেয়েছি তাতে আমি সিউর, এই ইন্টারভিউ যদি কেউ ভুল করে দেখেন সেও এই রেকর্ড ভাঙার জন্য ও অন্তত শুনবেনা আমার গান। সুতরাং আদি অনন্ত কাল ধরে এই রেকর্ড আমি ধরে রাখতে পারবো বলেই আমার বিশ্বাস। ছোটবেলা থেকে আমার খুব স্বপ্ন ছিল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার। কিন্তু ফ্লপ আর্ট এ যে আমি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবো তা আমি কখনো ভাবিনি৷ এই রেকর্ড আমি নিজের যোগ্যতায় করেছি৷ কোন প্রোডাকশন হাউস, মিডিয়ার হেল্প লাগেনি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমার এই জিরো ভিউ পেতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও কেউ এটা দেখবেন না, তবুও তাদেরকে ধন্যবাদ।
তারপর আমার ঘুম ভেঙে গেলো৷ আমি আমার এই অনন্য অভিজ্ঞতার কথা লিখে ফেললাম আর পোস্টালাম্ ।।
বিঃদ্রঃ - বুদ্ধ আসছে৷ আবার সংখ্যার ডানদিকে জিরো ভিউ পেতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন্।।

Football Analysis

6 November at 01:44

ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা কি অস্তমিত সূর্য ?? উত্তর সময় দেবে। তবে এই সিজনের শুরু থেকে যেভাবে খেলছে আমি আশাবাদী হতে পারছিনা৷ একটা - দুটো ম্যাচ বাদ দিলে ভালভার্দের একটা প্ল্যান চোখে পড়েছে সেটা হল মেসিকে দিয়ে গোল করাতে হবে। টিমের বাকি দশজন যেন এই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে নামে। যেদিন মেসির ভাগ্য ক্লিক করবেনা সেদিন বার্সেলোনা ফিনিশ। বাকিদের যেন কেউ বারণ করেছে গোলে তারাও শট নিতে পারে।
আর ডিফেন্স, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড নিয়ে কথা না বলাই ভালো। পিকে আর বুসকেট্স একেবারেই ফিট নয়। প্রত্যেকটা ম্যাচে এমন ব্লান্ডার করছে ওদের কাছ থেকে মেনে নেওয়া যায়না। গ্রিজম্যান এখনো মানিয়ে উঠতে পারেনি। একটা ম্যাচ ছাড়া বাকি গুলোতে নিজের ফর্মে খেলতেই পারলোনা। টিমগেম খেলার জন্য যে ক্লাব বিখ্যাত সেই বিশ্বসেরা প্লেয়ারদের টিম টিমগেম টাই খেলতে পারছেনা। প্রত্যেকটা ম্যাচে প্রতিপক্ষর থেকে নয় থেকে দশ কিমি কম দৌড়াচ্ছে। ফুটবল শুধু ব্রেন দিয়ে খেলতে হল জাভি-ইনিয়েস্তা কে লাগে। প্যাশন হারিয়ে গেছে, তাতানোর লোক নেই। এইরকম খেললে লিগের বাঘ হয়েই থাকতে হবে। কোয়ার্টার এর ফাঁড়া কাটিয়ে আগের বার সেমি খেলেছে। এবার সেটা পারলে খুব অবাক হবো। এরকম খেলে নকআউট জেতা চাপ। তাও যদি লিগেও ভালো খেলতো। প্রত্যেকটা এওয়ে ম্যাচ ছড়িয়ে আসছে। এত ভালো টিম নিয়েও যদি এরকম ফল আর এই খেলা বেরোয় সেটা সাপোর্টার দের জন্য হতাশাজনক। তবুও আশা করি, এই সময় কাটিয়ে উঠবে একদিন, কোন এক বছর যখন রাত জেগে খেলা দেখে একটা তৃপ্তির সাথে ঘুমাতে পারবো।






8 May
#FC_Barcelona
We all want to see our team to win . That's how we can forget depression, failure of our own personal life. We had a good team , great players , good consistency .. But again like the previous year they failed to show in one knockout match .. It happens in life ,despite good preparation , sometimes we fail .. But this is not failure actually .. Failure is when we can't rise again .. Failure is blaming our own players , thus ourselves .. This is an attitude of losers ..I personally need one week to recover .. But we are not loser . We certainly will rise again , more strongly . What doesn't kill you makes you stronger . After all tomorrow is another day . Thank you for everything, team . We enjoyed your game whole season . Forget this defeat and move on .. that's life .. Congratulations Liverpool and their supporters


7 March
What a match back to back .. Yesterday was RMA vs Ajax .. Today PSG vs Man Utd .. defeated in their home ground despite of away lead ... UCL or thriller movie !! Lukaku = ভরবেগ ... Congratulations Man Utd .. and Ashok Mahalanabish
BTW Buffon choosed the right side to jump , but the historical penalty was scored through a 20 years generation gap ..

6 March

Dusan Tadic destroyed Casimeiro today , and also Real Madrid .. Tadic , remember the name .. Remember the day 5/3 according to European time .. it's also the aggregate vs Ajax .. a significant day in the history of football .. Real Madrid lost consecutive 4 home matches ( Girona, Barca , Barca , Ajax) .. consecutive 2 UCL home matches ( CSKA Moscow, Ajax) .. And three times consecutive winner of UCL ( their fan claims UCL theme song is their official theme song !!) is kicked
out of UCL today in Round of 16 even after away lead (2-1) .. Real Madrid should kick out Ramos first .. then Papa Perez .. they both are pollution to football .. They didn't even respect CR7, Casillas , Raul etc etc .. "Who needs Ronaldo !!" My foot .. One word to trophyless RMA today - please overcome this trauma .. I don't want a good club to become next AC Milan ... Lastly, De Jong amader asche 
#UCL #RMAvsAjax


ফুটবল যারা ভালোবাসে, যারা মেসি-রোনাল্ডো র খেলা দেখতে শুধু ফুটবল দেখেনা, তাদের জন্য এই এল-ক্লাসিকো একইরকম ছিল। বার্সার খেলা যেন সাজানো দাবা র বোর্ড। মাপা খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট। রিয়েলমাদ্রিদ যেন ছন্নছাড়া সৈন্য৷ আজ বার্সা তার মন্ত্রী মেসি কে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল। মেসিকে ছাড়া ইন্টার মিলান এর বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখার পর আর রিয়েল এর শেষ চারটে ম্যাচ দেখার পর যদিও নিশ্চিত ছিলাম বার্সা জিতবে। বার্সার জর্ডি এলবা আর সার্জিও রবার্তো যেন দুধারের দুই নৌকো। বুসকেটস্ আর আর্থার মেলো যেনো আড়াই ঘরের বেশি নড়েনা। কিন্তু যখন নড়ে, যেকোন দিকে নড়ে আর কেউ আটকাতে পারেনা। তাই ওই দুজন হল ঘোড়া। কুটিনহো আর রাফিনহা হল দুই হাতি। কোণাকুণি ড্রিবল করে শট নেয়। রাফিনহা আজ মেসির পজিশনে খেলে অনেকটাই অভাব ঢেকে দিয়েছে। পিকে, লেংগলেট, র‍্যাকিটিচ্, সেমেডো, ডেম্বেলে, ভিদাল টিমের বিশ্বস্ত সৈন্য৷ আর সুয়ারেজ হল রাজা। নামেই স্ট্রাইকার। বার্সা টিমে আজকাল ওকে দেখলে মাথা গরম হয়। যদিও আজ হ্যাট্রিক করেছে, কিন্তু পরিষ্কার গোলগুলো ওর জন্য নষ্ট হয়। এই দাবার বোর্ডে ও একমাত্র বেমানান। তবু সুয়ারেজ কে খুব ভালো খেলতে দেখেছি, শেষ দিকেও ওর কিছু ঝলক দেখালো, তাই আশা রাখি এই দাবার বোর্ড এ মেসি এলে রাজা-মন্ত্রীর কম্বিনেশন জমে যাবে। ভার এসে রিয়েল মাদ্রিদের খুব অসুবিধে করে দিয়েছে। আশা করি রিয়েল রেফারি ছেড়ে খেলায় মন দেবে। ভালো খেলতে শুরু করবে। আজ সেকেন্ড হাফের প্রথম কুড়ি মিনিট ছাড়া রিয়েল খেললো কই। দুর্বল রিয়েল মাদ্রিদ কে হারিয়ে কোন মজা নেই। মেসি থাকলে, আর কুর্তোয়া আজ অসাধারণ কিছু সেভ না করলে কত গোলে যে হারতো ।।

আগের গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে অন্য একজনের সাথে চলে গেছে বেশ কিছুদিন হল। ওকে ছাড়া নতুন জীবনের শুরু করেছি। কিন্তু সেই জীবনেও একের পর এক হার৷ লুকিয়ে লুকিয়ে আগের গার্ল ফ্রেন্ডের প্রোফাইলে উঁকি দিই। হা-হুতাশ করি। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি। বুঝতে পারিনা নিজের নতুন জীবন কে সময় দেবো নাকি ওর জীবনের খোঁজ খবর নেবো। আগের গার্ল ফ্রেন্ডের কিছু বদ অভ্যেস ছিল বটে। পাশের বাড়ির পুঁচকি তার বয়ফ্রেন্ডের জন্য চোখে কাজল দিয়েছে তো তাকেও দিতে লাগবে। পুঁচকি কে তার বয়ফ্রেন্ড মাথায় তুলে রাখে তো তাকেও তুলে রাখতে হবে। আরে বুঝতে হবে যে পুঁচকি ইজ পুঁচকি। ওই পাড়ায় আমার বাড়ি হলে পুঁচকি কে আমিই প্রথম প্রোপোজ করতাম৷ হাইট কম হলে কি হবে! বল কন্ট্রোল যে অসাধারণ৷ অবশ্য এতে আমার ও দোষ ছিল। আমার এক্স তার আগের বয়ফ্রেন্ড এর সাথে রিলেশন শেষ করে যখন আমার সাথে আসে তখন একজন পরিশ্রমী সেবাধর্মী পড়াকু গার্লফ্রেন্ড ছিল। আমিই ওকে সাকসেস এর চক্করে নষ্ট করেছি। চোখে কাজল, ভ্রূ প্লাকিং, দাঁত এ ক্লিপ লাগিয়ে সোজা করা করিয়েছি৷ কথায় কথায় - পুঁচকি কে দেখো শুধু ভালো রান্না করলেই হবেনা, ওর বল কন্ট্রোল দেখো, ওর এই দেখো, ওর ওই দেখো। দিয়েছে ভালো করে দেখিয়ে।
নিজের দেওয়ালে মেরে রেখেছি কাগজে "তোকে আমার দরকার নেই।" But everyone knows what is the truth.
মনে পড়ে নিজের যৌবনের পাপের কথা৷ তারই ফল। তখন কাকা-ওজিল খেলতো। কত বড় মাপের খেলোয়াড় কে নষ্ট করেছি। একে একে বের করে দিয়েছি ক্লাব থেকে। এত দিনের গোলকিপার ক্যাসিলাস কে সম্মান দিইনি। তবু সাকসেস-ফুল কিনা তাই কেউ কিছু মাথা ঘামায়নি। তাই ফলস্-মাদ্রিদ না জুভেনাইল-তাস এর মধ্যে যারা কনফিউজড্ হয়ে ঝুলে আছেন, পুঁচকির পাড়ায় আসুন। সাকসেস প্রতি বছরই থাকে। সংগে পাবেন সম্মান। আর ফুটবলের ভগবান এর ক্লাব কে শেষ কয়েক বছর সাপোর্ট করে যাওয়ার সুযোগ৷ নিজের পরবর্তী প্রজন্ম কে বলতে পারবেন আমি সেই ক্লাবের সাপোর্টার ছিলাম যেখানে ভগবান খেলতো ৷।


শেষ কবে বার্সিলোনা র খেলা দেখে এত ডোপামিন ব্রেনে এসেছে জানিনা৷ কাল টোটেনহ্যাম এর বিরুদ্ধে বার্সা ছিল অসাধারণ। টোটেনহ্যামের মত ইপিএল এর প্রথম সারির টিম কে নিয়ে কার্যত ছেলে খেলা করেছে বার্সা। তাও দ্বিতীয় হাফে টোটেনহ্যাম কিছুটা হলেও খেলেছে। বার্সা টিমে একজন ভবিষ্যতের প্লেয়ার খুঁজে পাওয়া গেছে। জাভি র মত থ্রু পাস সেভাবে না দিতে পারলেও আর্থার মেলো র কাল বল হোল্ডিং প্লে অসাধারণ ছিল৷ বিপক্ষ একটাও বল কাড়তে পারেনি ওর পা থেকে। তার উপর ওর পিভট মিডফিল্ডে সাইলেন্ট রোল টোটেনহ্যাম মিডফিল্ড কে তাদের ঘরের মাঠে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দেয়। বুসকেটস্ কেও শেষ কবে এত ভালো খেলতে দেখেছি মনে পড়েনা। মেসি একাই এখন ইনিয়েস্তা র অভাব মেটাচ্ছে, আবার গোল করছে৷ মেসি কাল ৪ গোল পেতেই পারতো দুটো বার এ না লাগলে। মেসি কে শেষ লা লিগা র ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ লেগেছিল। আজ যেন পুরো সেই দুটো ম্যাচের খেলা একসাথে খেলে গেল। কুটিনহো দিন দিন আরো ভালো হচ্ছে। বুসকেটস্ -মেলো- মেসি - অ্যালবা - কুটিনহো - সুয়ারেজ লিংক কে কাল অপ্রতিরোধ্য লাগলো। এই বার্সা কে হারাতে গেলে ভালো টিম হিসেবে হারানো যাবেনা। আন্ডারডগ হিসেবে খেলে কাউন্টার এট্যাকিং খেলা খেলে হারাতে হবে। অবশ্য সেমেডোর জায়গায় সার্জিও রবার্তো আর লেংগলেট এর জায়গায় উমিতিতি এলে সেই কাজটাও কতটা সফল হবে বলা মুশকিল। বার্সা এই খেলার ৮০% ও খেলে গেলে এবছর চ্যাম্পিয়নস লিগ আমাদের ৷।



||লুকা মডরিচ্ ও সংগ্রাম ||

2012-13 সিজনে চ্যাম্পিয়নস্ লীগের Round of 16 এর ম্যাচ রিয়েল মাদ্রিদ বনাম ম্যান ইউ। তখনকার ম্যান ইউ এখনকার ম্যান ইউর মত শুধু কাগুজে বাঘ নয়। ম্যানেজার স্যার আলেক্স ফার্গুসন- যাকে ইপিএল হেটার হয়েও চরম সম্মান করি। আর টিমে আমার প্রিয় গিগস, ভয়ংকর ভ্যান পার্সি খেলে। তখন আমি রিয়েল মাদ্রিদ ফ্যান। আমার ক্লাবে তখন আমার খুব প্রিয় প্লেয়ার রা খেলে। কাকা, মেসুট ওজিল, রোনাল্ডো। ম্যাচটা রিয়েল কে চেপে ধরেছিল ম্যান ইউ। চাপ আরো বাড়লো র‍্যামোস নিজেদের জালে বল ঢোকানোতে। তার একটু পরেই নানি লাল কার্ড খেলো। তারপরেই মডরিচ্ আর হিগুয়েন, আবার মডরিচ্, তারপর ম্যান ইউ ডিফেন্ডার দের অবাক করে চকিতে একটা দূরপাল্লার শট। বল জড়ালো জালে। তার একটু পরেই মডরিচ্ এর পাস পেনাল্টি বক্সে হিগুয়েনকে। সেখান থেকে ওজিল। ওজিল এর অসাধারণ ব্যাকহিল আবার হিগুয়েন কে। তিনজন ডিফেন্ডার বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হিগুয়েন এর পাস থেকে গোল রোনাল্ডোর। ম্যাচটা চোখ বুজলেই দেখতে পাই। কাকা ও গোল পেতে পারতো তারপর। যাই হোক, সে বছর না পারলেও তারপরের বছর রিয়েল চ্যাম্পিয়নস্ লীগ জিতেছিল। কিন্তু কাকা, ওজিল কে বের করে দেওয়ার পর আর রিয়েল এর খেলায় মন ভরছিল না। অন্য টিমের সাপোর্টার হব কিনা ভাবছি, খিঁচ ছিল একজনই লুকা মডরিচ্। লুকা মাঠে যেরকম সংগ্রাম করে তার শুরু আসলে ওর ছোটবেলা থেকে।
মডরিচ্ এর যখন ছ বছর বয়স তখন ক্রোয়েশিয়া স্বাধীন হয় আর শুরু হয় দেশে যুদ্ধ। সার্বিয়া ও য়ুগোস্লাভিয়া ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। মডরিচ্ এর বাবা ক্রোয়েশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নামেন। ঠাকুরদা লুকা কে মেরে ফেলা হয়। আর ওদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় সার্বিয়ার যুদ্ধগোষ্ঠী। শুরু হয় মডরিচ্ এর কষ্টের জীবন। চারিদিকের যুদ্ধ, গোলা গুলির মাঝে একমাত্র ফুটবল ই পারত সব কিছু ভুলিয়ে রাখতে লুকা জুনিয়র কে। রোগা হওয়ার জন্য ভালো টিমে চান্স পেতেন না। বসনিয়ার একটা ক্লাবে খেলে উঠে আসেন তিনি। বসনিয়া র লীগে ফিজিক্যাল ফুটবল খেলা হয়। তা সত্ত্বেও মডরিচ্ কে আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১২ থেকে রিয়েল মাদ্রিদে খেলতে আসেন। আমি রিয়েল কে সাপোর্ট করা ছেড়েছি ২০১৩-১৪ র পর থেকে। তবু রিয়েল এর খেলা দেখা ছাড়িনি। কারণ ওই ক্লাবে এখন দু-তিন জনের মধ্যে একজন মডরিচ্ এর খেলা দেখার মত। গোটা মাঠে খেলা কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে এই নি:শব্দ সংগ্রামী যোদ্ধা। উনি কি পারবেন আজ ইংল্যান্ডের দৌড় থামাতে?? ইংল্যান্ড লাস্ট যবে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তার অনেক পরে এই ক্রোয়েশিয়া দেশের জন্ম। মডরিচ্ কে আজ প্রধান ভূমিকা নিতেই হবে ক্রোয়েশিয়াকে প্রথম বারের জন্য ফাইনালে তুলতে বিশ্বকাপে। আর কখনো নিজের জীবন কে কঠিন মনে হলে মডরিচ্ এর জীবন এর কথা ভেবে উদ্বুদ্ধ হওয়া যেতেই পারে। আজ জিতুন বা হারুন মডরিচ্ এর জন্য একটা আলাদা জায়গা থাকবে মনে।
শেষ করবো আউটসাইড বুট পাসের বসের একটা কথা দিয়ে -
" critics push you forward to show people they are wrong. Maybe I look lightweight but I am a really strong person mentally and physically, and I never had any problems with my size".




7 July 2018
ব্রাজিল আমার দেশ না। তবু ব্রাজিলের ২০ বছরের সাপোর্টার অনেক ছোট থেকে । আবেগটা তাই একটু বেশিই। ব্রাজিল দেশকে নিয়ে নয়। ব্রাজিলের ফুটবল ঘরানাকে নিয়ে। ২০১৪ তে বাজে খেলে হেরেছি সেরকম দু:খ পাইনি। ২০০৬ আর ২০১৮ র কষ্ট টা অন্যরকম। সেদিনের মতই ভাগ্যদেবী সহায় হলনা আমাদের। এতক্ষণ লেখার মত অবস্থায় ছিলাম না। মাতামাতি একটুও করিনি নিজের টিম কে নিয়ে এবার। ব্রাজিল হারলে এত দু:খ পেতাম না। আজ আসলে হেরে গেলো ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ঘরানা। সাময়িক ভাবে ভেংগে পড়লেও এখন ঘুমাতে যাচ্ছি। যারা আমাকে ফোন বা মেসে
জ করেছে আজ বিশেষত আর্জেন্টিনা আর জার্মানি র ফ্যান রা আমি দু:খিত কাউকে রিপ্লাই দিতে পারিনি। ব্রাজিল এর উচিত এখন -
১) একজন ভালো স্ট্রাইকার তৈরি করা যে ইপিএল ছাড়া অন্য যে কোন জায়গায় খেলবে।
২) শেষ বা চলতি মরশুম ইপিএল খেলা যে কোন প্লেয়ার এর ব্রাজিলিয়ান ঘরানার টিমে কোন জায়গা দেওয়া যাবেনা ।
আমার মনে হয়, এদুটো চেঞ্জ করলেই ব্রাজিল নিজস্ব ফুটবল যেটা আজ দ্বিতীয় হাফে খেলেছে সেটা খেলে যেতে পারবে। আর সেটা খেললে ভাগ্য ছাড়াও যে গোল না খেয়ে গোল দেওয়া যায় সেটা প্রমাণিত। বিশ্বকাপ আমার কাছে শেষ নয় এমনিই দেখবো। ফ্রান্স, বেলজিয়াম কে অভিনন্দন। খেলায় হার জিত থাকে। ভালো খেলে হারার জন্য ব্রাজিল প্লেয়ার দের অনেক ভালোবাসা জানাই। তবে জিতলে অনেক ভালো লাগতো । সাময়িক ব্যর্থতার জন্য ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ঘরানা কখনো হারাবেনা বলে আমার বিশ্বাস। কারণ ব্রাজিলিয়ান ফুটবল স্বপ্নের মত ভুলিয়ে রাখে বাস্তবের মরুভূমি কে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল আনন্দে কাঁদায়। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল একজন শিল্পীর মন বোঝে। হেরে যেতে পারি, কিন্তু মদন তাঁতির মতই গামছা বুনে হারিনি ।।



Phillipe Coutinho



একটা ফিরে আসার গল্প বলা যাক। না ফিরে আসা বললে ভুল হবে - পুনর্মিলন একরকম । ধরা যাক, আপনার ছোটবেলার ভালো পড়াশোনা করা প্রিয় বন্ধু হঠাত্ হারিয়ে গেছে অন্য কোথাও। আপনি ভালো রেজাল্ট করে আই.এ.এস অফিসার হলেন। কয়েক বছর পর কোন মন্ত্রী দের সাথে মিটিং এ দেখলেন আপনার সাথে যে আই.এ.এস অফিসার নিযুক্ত হয়েছেন সে সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধু। নেইমার - কুটিনহো র গল্পটাও অনেকটা সেরকম। ব্রাজিলের হয়ে ১০ বছর আগে উপমহাদেশীয় কাপ, যুব বিশ্বকাপ খেলা দুই বন্ধু। তারপর কুটিনহো চলে গেলেন ইন্টার মিলান এ। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত ক্লিক করলো না। ইন্টার থেকে ভাস্কো দা গামা, এস্পানিওল ক্লাবে খেলে সেরকম সাফল্য পেলেন না তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে কোনভাবেই জায়গা হলনা তার। এদিকে নেইমার ঠিক করলেন ঘরের মাঠে খেলে নিজেকে তৈরি করবেন। তাই করলেন। সাফল্য পাওয়ার পর বার্সেলোনায় সাফল্যের সিঁড়ি চড়া শুরু। যে টিমে নেইমার কুটিনহো সমান গুরুত্ব পেতো সিনিয়র বিশ্বকাপ টিমে কুটিনহো গেলেন হারিয়ে। নেইমার হলেন প্রধান মুখ ২০১৪ সালে। গল্প এখানেই শেষ নয়। এই হারিয়ে যাওয়ার সময়টা তে তাদের যোগাযোগ ছিল। তারপর শুরু হল ফিরে আসার অধ্যায়। লিভারপুল ক্লাবে কুটিনহো ফুলের সুগন্ধ ছড়াতে লাগলো ক্লপের তত্ত্বাবধাহানে। নেইমার সেই সময় বার্সিলোনা ছেড়ে পিএসজি তে গেলেন। কুটিনহো এলেন বার্সিলোনায়। নিয়মিত ভালো খেলে ব্রাজিল দলের নিয়মিত প্লেয়ার হিসেবে ঢুকে পড়লেন কুটিনহো। ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে কুটিনহোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা ব্রাজিলেরই এক কিংবদন্তী র কথাতে শুনে নেওয়া যাক।
"Everyone focuses and speaks about Neymar, but the truth is, Coutinho is proving he's a leader for Brazil. Defenders are focused on Neymar, but Coutinho is the one deciding the matches. Coutinho is at Neymar's level."
- Roberto Carlos



3 July 2018
শুধু শৃঙ্খলা, Hard work আর মনের জোর দিয়ে কি ফুটবল ম্যাচ জেতা যায় ? যে টিমের এগারো জনই বেঁটে, আর বিপক্ষের সবাই বিশাল চেহারা আর লম্বা সেই টিম নিয়েও সমানে সমানে লড়ে যাওয়া যায় ফুটবলে?? যারা মোটামুটি ক্লাব ফুটবল দেখে তাদের কাছে জাপানের কয়েকটা নামই পরিচিত। কাগাওয়া, হন্ডা, গাকু সিবাসাকি, ইনুউই, ওকাজাকি। যদিও সিবাসাকি নিয়ে লিখেছিলাম বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক মাস আগে যে নজর কাড়তে পারে। কাগাওয়া মাঝে কিছুদিন খুব ভালো খেলেছিল। তবুও এরা কেউই সে অর্থে তারকা নয়। অন্য দিকে হ্যাজার্ড, লুকাকু, কেভি
ন, কম্পানি, ফেলাইনি র মত তারকারা। তার উপর ইংলিশ মিডিয়ার দৌলতে বার খেয়ে এই ইপিএল খেলা লোকজন নিজেদের মহাতারকা ভাবলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। জাপানের এগারো জন একটাই হৃত্পিন্ড নিয়ে খেলতে নেমেছিল। ফুটবল যে তারকাদের খেলা নয়। টিম গেম আবার প্রমাণ হল। জাপান হারবে জানতাম কিন্তু একজন এশিয়ান হিসেবে জাপান কে সাপোর্ট করে কাল খেলা দেখা সার্থক । জাপানের টিম স্পিরিট থেকে সবার শেখা উচিত। শুধু ফুটবল নয়, জীবনের প্রতিটা যুদ্ধে এই মানসিকতা দরকার। 2 গোলে এগিয়ে থেকেও রক্ষণাত্মক খেলা খেলেনি জাপান। অবশ্য ইতিহাসে কবে আর জাপান রক্ষণাত্মক নীতি নিয়ে যুদ্ধ করেছে !!??



30 June 2018

৮৭.৪৯ মিনিটে ফ্রান্সের কোচ তুলে নিলেন ১৯ বছরের ছেলেটিকে। বুঝলেন তার কাজ শেষ। গোটা বিশ্বকাপ বাকি। আর্জেন্টিনা যেভাবে রাগবি খেলছে ও চোট পেয়ে গেলে খুব মুশকিল। বিশ্বকাপে পুরো দরকার ওকে। বাকি সময়টা বাকি প্লেয়ার রা আরামসে কাটিয়ে দিতে পারবে। আর আমিও এটা বুঝে লিখতে বসলাম। ছেলেটির নাম Mbappe। আজ নিজের ভুলেই হ্যাট্ট্রিক হলনা। বলতে বলতে মেসির সেটপিস থেকে গোল করলো আগুয়েরো। তাতে কিছু যায় আসেনা। আর বেশি সময় নেই। যাই হোক, লেখায় ফিরি। আমার ম্যাচের প্রেডিকশন ছিল ৩-১ এ ফ্রান্স জিতবে। ভাগ্যের জোরে 
আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোল পেয়ে যাওয়ায় ভাবলাম হল টা কি ফ্রান্সের। ফ্রান্সের খেলায় ওভারকনফিডেন্স ছাড়া আর কোন ভুল ছিলনা আসলে। Mbappe কে নিয়ে দুবছর আগে থেকে লাফাচ্ছি। আজ এরকম খেলে দেবে ভাবিনি। একাই আর্জেন্টিনা কে উড়িয়ে দিল। মেসিকে কার্যত বোতলবন্দী করে দিয়েছিল ফ্রান্সের ডিফেন্স। আর আর্জেন্টিনা র ডিফেন্স কে নিয়ে আর কি বলবো। এই ছেঁড়া জাল নিয়ে প্রি-কোয়ার্টার অবদি মাছ ধরে যাওয়াটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।
মেসির বিদায়ের দিনে উজ্জ্বল আর এক তারকা। Mbappe। ও এই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পেলে অবাক হবনা। নামটা মনে রাখুন ।মাত্র 19 বছর বয়সী।



27 June 2018
একটা অনেক উঁচু থেকে উড়ে আসা পাস, বাম থাই দিয়ে রিসিভ, ষষ্ঠেন্দ্রিয় জানালো বাম দিক থেকে বাম দিকের ডিফেন্ডার আসছে ঈশ্বরের বাম পা কে ব্লক করতে। বাম পা দিয়ে তাই একটা আলতো টাচ, বল চলে গেল ডিফেন্ডার এর ট্যাকেল করার সীমার বাইরে, মেসির ডান দিকে। কিন্তু মেসি ডান পা এ তো দুর্বল। বিপক্ষের গোলকিপার এগিয়ে আসছে। মেসির ডান পা দুর্বল, মুহূর্ত কালে তিনি ভাবলেন আমি তো ঈশ্বর, আমার কিসের ভয়। আমার পায়ের উপর আর্জেন্টিনা নির্ভর করে। নির্ভয়ে ডান পায়ে শট। বল জড়ালো গোলে। এগুলো সব ইতিহাস আজ। সব সমালোচকরা আজ মুখ লোকানোর জায়গা খুঁজুক। ঈশ্বর নিজের মঞ্চ বেছে নিলেন। খেলাটা যদিও আর্জেন্টিনা ভালো খেলেনি। প্লেয়ারগুলোর মেসির পাশে খেলার কোন যোগ্যতা নেই। প্রত্যেকের উচিত নতুন করে ফুটবল শেখা। বাকিদের দেখে মনে হল, পাড়ায় ফুটবল খেলছিল বা রাগবি খেলছিল, প্লেয়ার পাওয়া যাচ্ছিলনা সাম্পাওলির মনের মত। তাই ধরে এনেছে। দ্বিতীয় গোলটা যদিও বাকিদের একজন করেছে। লেট গোল এই বিশ্বকাপে প্রায়ই হচ্ছে, তাই আশা করে বসেছিলাম। আর্জেন্টিনার দিন এত খারাপ, একজন হার্ডকোর ব্রাজিল সমর্থককেও আশায় বসে থাকতে হয় আর্জেন্টিনা যেন গ্রুপ স্টেজে বাদ না যায়। আর্জেন্টিনা কে নক আউটে হিমিলিয়েটেড হতে একমাত্র ভগবানই বাঁচাতে পারেন। ও হ্যাঁ, উনি আছেন মাঠে। লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার নীল সাদা জার্সি গায়ে।



27 June 2018
শিয়ালের ডাক শেষ,
রাত এখন নিস্তব্ধ।
জেগে থাকা ঝিঁঝিঁ পোকাও চুপ,
উনি এগিয়ে আসছেন এক পা এক পা করে,
পাহাড়ের কিনারে এসে গর্জন।
লিও তুমি আলো,
অন্ধকার কে শিল্পীর মত গোল দাও বারবার,
অন্ধকার অসহায়,
তাকে তোমার সাথে লড়ে যেতে হয়।।


26 June 2018
রাত নামছে, দিনের কোলাহল শান্ত, শিয়াল-কুকুর রা সব ঘুমোতে যাবে। ঈশ্বর তুমি আজ জেগে ওঠো। এটাই সেই সময়।।


22 June 2018
আজকের নাইজেরিয়া র দ্বিতীয় হাফে যা খেলা দেখলাম, আর্জেন্টিনার ছন্নছাড়া ডিফেন্স এর পক্ষে আটকে রাখা কঠিন হবে। তবে একটা ভালো দিক হল, যেহেতু আইসল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচটা পরের নাইজেরিয়া ম্যাচটার সাথে একই সময়ে তাই, ক্যালকুলেশন করে খেলার রিস্ক কেউ নেবেনা। আইসল্যান্ড বা নাইজেরিয়া দুজনেই অ‍্যাটাকিং খেলা খেললে, ক্রোয়েশিয়া বা আর্জেন্টিনার জন্য আক্রমণে অনেক স্পেস তৈরি হবে। তাই মেসির মুসা র সৌজন্যে আজ বিশ্বকাপে এখনো ক্ষীণ আশা রয়েছে। আমি যদিও মনে প্রাণে চেয়েছিলাম আর্জেন্টিনা র আর আশা না থাক, কোনভাবে আর্জেন্টিনা নক আউটে চলে গেলে জানিনা কত গোল খাবে। এই আর্জেন্টিনার হয়ে কাপ জেতা আর ছেঁড়া জাল নিয়ে মাছ ধরা একই ব্যাপার।

*****


ম্যাচ || আর্জেন্টিনা বনাম আইসল্যান্ড||
আর্জেন্টিনা টিমের বরাবর এর সমস্যা হল একজন ভালো ম্যানেজার এর অভাব। একজন ভালো ম্যানেজার পেলে টিম এর চেহারা হয়তো অন্য রকম হত। এমন একজন ম্যানেজার যে মেসিকে সম্মান করেই বলবে তুমি ফুটবলের ভগবান হতে পারো, কিন্তু এই টিমে তুমি এগারোর একজন। সে নাহলে বুঝলাম কেন ইকার্ডি নেই। ডিবালা প্রথম এগারো তে নেই। সব মানলাম, কিন্তু হিগুয়েন কেন প্রথম থেকে খেললো না কেউ বলুক। আর্জেন্টিনা র আরো বড় সমস্যা হল ডিফেন্স। এই ডিফেন্স নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন না দেখাই ভালো আর্জেন্টিনা র। দুদিন একদিন মহম্মদ সালাহ্, তারপর মেসি কে খালি হাতে ফিরতে হল। বিশ্বকাপের শুরুটা ক্রিশ্চিয়ানো ফ্যান দের মুখেই শুধু হাসি আনলো। বাকিরা দেখলো যে ঈশ্বরের পায়ে বল থাকলে ৫-৬ জন ও গোলপোস্টের সামনে অদৃশ্য লাগে সেই ঈশ্বর একজন সাধারণ মানুষের মত পেনাল্টি মিস করলো। আর দেখলো অস্ট্রেলিয়া, ইজিপ্ট, আইসল্যান্ডের মত দেশের অসাধারণ হার না মানা লড়াই। আইসল্যান্ড পরবর্তী স্টেজে না গেলে খুব খারাপ লাগবে। বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয় এই দেশ টার জনসংখ্যা কোলকাতার প্রায় ১৩ ভাগের এক ভাগ। আর প্লিজ মেসি বিশ্বকাপে ফিরে এসো। মেসি র দল আর্জেন্টিনার আমি চরম আ‍্যন্টি। সহ্য হয়না। তবু এই গ্রুপ অফ ডেথে যদি এই দেশের সাথে অঘটন ঘটে খুব খারাপ লাগবে। ঈশ্বরের জন্য। বিশ্বকাপ এর মত মঞ্চ ঈশ্বরকে ডিজার্ভ করে।।


******

সব ম্যাচ পুরো দেখা সম্ভব নয়, সব দেশের ফুটবল নিয়ে জানি অতি সামান্য, তাই সব ম্যাচ নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। তবে এই বিশ্বকাপের ভালো ম্যাচগুলো নিয়ে লিখবো।
ভালোবেসে লিখবো। ফুটবল বিশেষজ্ঞ নই। তাই সবাই খুলে সমালোচনা করতে পারে লেখার।
এটা প্রথম ম্যাচ যেটা নিয়ে রাত জেগে লেখা যায়। ম্যাচের রেজাল্ট হবে ভেবেছিলাম ৫-০ স্পেন এর পক্ষে। তারপর দুম করে বিশ্বকাপ শুরুর একদিন আগে টিমের নতুন কোচ। ফুটবলে কোচের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রেডিকশন পালটে করেছিলাম ২-০ পর্তুগাল এর পক্ষে। স্পেন এই বিশ্বকাপ জিততে পারে বলে অনেকে ভেবেছেন। স্পেন এর ডিফেন্সে বয়সের ছাপ পড়েছে, তার উপর স্পেন এর মাঝমাঠ যতই ছবির মত সাজানো হোক মাঝমাঠের সাথে সামনে লিংক এর অভাব হবেই। রিয়াল, বার্সার বাছা প্লেয়ার দের মাঝমাঠ এর গতিবিধি বুঝতে লিও বা রোনাল্ডো র মত লোক চাই সামনে। তাই স্পেনের পক্ষে যে এই বিশ্বকাপ জেতা সহজ হবেনা বলেছিলাম। সেটা আজ প্রমাণ হল। ফুটবলে আসল কথা বলে গোল। গোল আর বল পসেসান শতাংশ দেখলে মনে হবে রোনাল্ডো বনাম স্পেন খেলা হয়েছে। কিন্তু গোটা খেলাতে পর্তুগীজ ডিফেন্স আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড এর প্রশংসা করতেই হয়। খেলা টা হয়েছে আক্রমণ বনাম প্রতিআক্রমণ এর। মাঝমাঠের পর স্পেন কে কেমন হঠাত ছন্নছাড়া লেগেছে। মাঝমাঠ আর আক্রমণের লিংকে প্রবলেম হচ্ছে। এরকম মাঝমাঠ নিয়েও স্পেন এর দ্বিতীয় গোল ছাড়া বাকি দুটো নিজস্ব ক্রেডিটে। স্পেনের মাঝমাঠ অনেক্ষণ বল নিয়ে নিজেদের মধ্যে রাখছিল। ডিয়েগো কোস্টা র হঠাত মনে হল দরকার নেই তোদের, একাই পর্তুগীজ দুর্গ ভেংগে প্রথম গোল করলো। ন্যাচোর গোলটাও ওইরকম ভেবেই হয়তো।
পর্তুগাল এ অবশ্য আজ একটাই নাম আকাশে বাতাসে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ডস স্যান্টোস। দ্বিতীয় গোল টা খাওয়ার পর স্পেন এর গোলকিপার আজ গিয়ে লিভারপুল এর গোলকিপারের সাথে আরামসে মদ খেতে পারে। ওদের দুজনের মত একে অপরের ব্যথা কেউ বুঝবেনা। শোয়ার আগেই এটা লিখলাম তাড়াহুড়ো করে। স্বপ্নে হয়তো আসবে। একটা বল স্লো মোশানে মানবপ্রাচীরের ওপর দিয়ে উঠছে, বাঁকছে, নামছে। জালে বল জড়ালো। রোনাল্ডো বলছে আমি এখনো মাঠে রয়েছি। বহুদিন পর বস কে ফিরে পেলাম।।


*****

4 June 2018

সুনীল ছেত্রী ভারতীয় ফুটবল ফ্যান দের মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে অনুরোধ করেছেন। প্রসংগত বলে রাখি আজ সুনীল ছেত্রীর ১০০ তম ম্যাচ দেশের হয়ে। দেশের জার্সিতে গোল সংখ্যা তে কারেন্ট প্লেয়ার দের মধ্যে সুনীল ছেত্রীর স্থান ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসির পরেই তিন নম্বরে । আজ গোল করলে সর্বকালের দেশের হয়ে করা গোল সংখ্যায় টপকে যাবেন ডেভিড ভিলা কে। কি বলেছেন সুনীল সারমর্ম করলে যা দাঁড়ায় -
আমরা তাদেরকে বলছি যারা বড় ইউরোপিয়ান ক্লাবদের সাপোর্ট করে, তারা যে প্যাসন নিয়ে সাপোর্ট করেন সেই প্যাশন নিয়েই ঘরে বসে না থেকে মাঠে আসুন। তারা হতাশ আমাদের দেশের ফুটবল সেই লেভেল এর নয়। আমরা সত্যিই সেই লেভেলের নয়, কিন্তু আপনারা মাঠে এসে খেলা দেখুন, সমালোচনা করুন,গালি দিন। কিন্তু খেলা দেখতে আসুন। আপনারা মাঠে আসতে থাকলে কে বলতে পারে একদিন ভারত সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে।
#MeriDoosriCountry মাই ফুট। আমার একটাই দেশ। ইন্ডিয়া। আজও সময় পেলে খেলা দেখি। আগের ম্যাচ টা ও দেখেছি। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেখি, দ্বিতীয় দেশ বানাতে নয়। ইন্ডিয়ার ফুটবল দেখুন তারপর সমালোচনা করবেন। মেন হিরো কে না দেখে সিনেনা দেখুন।
নতুন আর্টিস্ট দের নিজের কম্পোজ করা মিউজিক শুনুন। তবে সেই লেভেল আসবে। একদিনে আসবেনা।


1st April, 2018

।।মেসি এবং কয়েকজন।।

হিসু পায়, পায়খানা পায়, খিদে পায় কিন্তু লেখা পেলে মানুষ কি করে।
একদিন কি লিখবো ভাবছিলাম হঠাত শুনলাম একটা ডাক - "মেসি দা, ও মেসি দা!"
দেখলাম নেইমার ডাকছে মেসি কে।
মেসি বললো, "বলো ভাই কি খবর "
নেইমার বললো - " মেসি দা দারুণ একটা অফার পেয়েছি। আমি চুল সাদা করবো ভাবছিলাম, তো সেলুনওয়ালা বললো দুজন করলে কম টাকায় হয়ে যাবে, তুমি কি করবে?? "
তারপর সবাই জানে সাদা রং এর চুলের মেসি নেইমার এর খেলা। ভাবলাম হারিয়ে গেল নাকি মেসি! না হারায়নি। মহান রা হারায়না।
ফিরে এল এক নতুন অবতারে। আমি আজ অবদি কাউকে ভগবান ভাবিনি। কিন্তু আজকাল মেসিকে ঈশ্বররূপী মানুষ মনে হয়। 
ধারাবাহিক ভাবে প্রতিটা ম্যাচে ডিফেন্সে নেমে বল কাড়ছে, মিড ফিল্ড কন্ট্রোল করছে, আসিস্ট করছে। কাউন্টার আটাকে মার্কার কে কোন যাদুবশে আচ্ছন্ন করে স্পেস ক্রিয়েট করছে। আর টু পারফেক্ট ফিনিশিং। ক্লিন খেলা। নিজের পা তে পা লাগিয়ে পেনাল্টি বক্সে পড়ে যেতে হয় না মেসি কে গোলের জন্য। লিও নামলে খেলাটা লিও কেন্দ্রিক হয়ে যায়। কখনো আটাকিং মিডফিল্ড, কখনো উইং, কখনো ফলস্ নাইন। আর্জেন্টিনা র জন্য দু:খ হয়। এরকম একজন কে বিশ্বকাপ দেওয়ার ক্ষমতা নেই টিমটার। তবু লিও একা টিমকে বিশ্বকাপে জেতানোর ক্ষমতা রাখে। ও নামলেই বিপক্ষে ত্রাস সৃষ্টি হয়। পক্ষে সাহস। সেভিলা এখন খুব ভালো খেলছে। ওল্ড ট্রাফোর্ড এ ম্যান ইউ কে হারিয়ে এসেছে। বার্সেলোনা কাল যখন হারতে বসেছিল তখন ভাবছিলাম ম্যান ইউ র থেকে কোন দিক থেকে ভালো বলে নিজের মন কে বোঝাবো। ম্যান ইউ নিজের মাঠে হেরেছে। আর কোন পার্থক্য নেই। না আছে। লিও ফিজিক্যালি ফিট নয়। লিও যখন কাল অনেক পরে বাধ্য হয়ে নামলো। মিসপাস করছিল। ডিস ব্যালান্সড হচ্ছিল বারবার। মনে হয়েছিল আজ লিও র দিন নয়, বার্সেলোনা অনেক দিন পর হারছে। তাও আবার সেভিলা র কাছে। ম্যাচের বয়স তখন ৮৮ মিনিট। সুয়ারেজ ট্যাপ ইন এক গোল করার পর মূহুর্তেই মেসি র অসাধারণ গোল। দলের নিশ্চিত হার থেকে রক্ষা করলো লিও।  
দলের বাকি দশজন তো মানুষ তারা এসে শুধু বাহবা দিল। একটাই আফশোস হয় দলটায় যদি নেইমার থাকতো !! বার্সেলোনা আর্জেন্টিনা র মত মেসি দা নির্ভর হয়ে পড়তো না ।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...