Tuesday, May 24, 2016

সবাই ভালো সবার মত, আমিও ভালো আমার মতো

তখন ক্লাস এইটে পড়ি। একজন স্যার ক্লাসে নোট লেখাচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন - 'কেন সবার ভালো করে পড়াশোনা করা উচিত ? '
অনেকে অনেক কিছু ভাবলো। তারপর স্যার নিজেই বললেন - ' টাকা, আর যাতে একজন হেভি বউ পাওয়া যায়। ' তখন 'সেভেন আপ' মার্কেটে আসেনি। এলে এই কথাটা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হত। হনেস্ট উত্তর। ওই ক্লাসের সব থেকে গাধা স্টুডেন্ট বোধহয় আমি ছিলাম।
একজন মেয়ে আমায় একসময় বলেছিলো ছেলেরা যখন নিজের গার্লফ্রেন্ড কে ইন্ট্রো দেয় বন্ধুমহলে এইভাবে মনে মনে বলে - 'দেখো দেখো , কেয়া মাল পটায়া হ্যায় !! '
হনেস্টলি এখন ভালোবাসা, রিলেশনের মানে তো এটাই। নয় কি ? ভুল কিছু বলেনি। একদিকে একটা ফিক্স যারা ইকোনমিকালি ইউজফুল অন্যদিকে আরো দশটা দিকে চেখে বেড়ানো। প্রশ্ন করলে নীচের পরিণতি গুলো হয়।
- নেসেসিটি র জন্য সব কিছু চলে।
- কিছু সময় কথা বলি না।
- আমি লিবেরাল, প্রশ্নকর্তা ন্যারো মাইন্ডেড।
শুধু ব্যক্তিগত না, পেশা তেও, যে কোন জায়গায় যে প্রশ্ন করে সিস্টেম তাকে খিস্তি মেরে একাকীত্বর অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলে।
এর পর আসি কলেজের একজন দাদার কথায়। কথায় কথায় জানতে চাইলাম 'বিয়ে করছো কবে ? '
বললো - 'করেছি তো। জ্ঞানকে।'
ভেবেছিলাম প্রেমের ব্রেক আপে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে হয়তো বাতেলা বলছে। পরে বুঝেছি। এই দুজন বিপরীত মেরু ছিল।
এর পর আসি এর পরের ঘটনা গুলোয়। একজন সিংগেল হলে যে কথাগুলি শুনতে হয় ও তার কিছু উত্তর ( এর মধ্যে যেটা আসলে উত্তর দেওয়া উচিত) -
১) সিংগেল ইজ নট আ ডিগনিটি ইটস্ ল্যাক অফ অপরচুনিটি..
উত্তর - আর ভাই তোর প্রচুর ডিমান্ড, আমি তো তুচ্ছ চুনোপুঁটি (কমিটেড ইজ নট আ কোয়ালিফিকেশন, ইটস ইউর ফ্রাসট্রেশন আন্ড ল্যাক অফ আইডেন্টিটি )
২) তোর হরমোনের অভাব আছে বা হোমোসেক্সুয়াল।
উত্তর - হাসি ( হাসি বেশ তো তবে তাই )
৩) ভাই, আমার বউ এর বান্ধবী তোর খোঁজ নিচ্ছিলো তুই সিংগেল নাকি ? বল কি বলবো।
- আমার পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড আছে।দশ জনের সাথে ফ্লার্ট করি ( ভাই আর কি কোন কাজ নাই )
এবার কিছু লিস্ট দিই।যারা আমার খুব প্রিয় মানুষ, বিশ্বে সুপরিচিত।
লিওনার্দো-দ্যা-ভিঞ্চি, এপিজে আব্দুল কালাম, বিবেকানন্দ, লতা মঙ্গেশকর, বিঠোভেন, রতন টাটা, হোমি ভাবা, ভগিনী নিবেদিতা, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, আইজ্যাক নিউটন, ভলতেয়ার, নিকোলা টেসলা, ক্লাউস ফুক্স, সুস্মিতা সেন।
টেসলা র একটা কথা আমার খুব প্রাণের - "I do not think there is any thrill that can go through the human heart like that felt by the inventor... such emotions make a man forget food, sleep, friends, love, everything "
সুস্মিতা সেনকে এই প্রিয় মানুষদের লিস্টে রাখার কারণ - উনি চাইলে অনেক ছেলেই ওনাকে বিয়ে করতে রাজি হত। কিন্তু উনি ওই পথে না গিয়ে একজন মেয়েকে দত্তক নেন। তখন ভারতীয় আইনে শুধু একজন নারী একজন মেয়েকে দত্তক নিয়ে তার অভিভাবিকা হতে পারতেন না। উনি আইনি পথে এই আইনের অচলায়তন ভাংগেন। হতে পারে এই লিস্টে কোন তথ্য ভুল। সমালোচনা করলে খুশিই হব। এবার আসি আসল কথায়, এদের ছাড়াও আরো অনেক মানুষ খুঁজলেই পাওয়া যাবে যারা সিংগেল, কিন্তু আমার প্রিয় নন। কিংবা আমার প্রিয়, কিন্তু বিশ্বে সুপরিচিত নন।
কেউ যদি 'সিংগেল বাই চয়েস' হয় এতে বাকিদের প্রবলেম কোথায়?
১) এটা হয়না, বুড়ো বয়সে যখন একা থাকতে কষ্ট হবে দেখবি।
২) তোরা আজকাল কার যুগের ছেলে-মেয়ে লারে লাপ্পা করে বেড়াবি তাই কমিটমেন্টে যেতে চাস না।
৩) তুই নিজেকে কি ওনাদের মত ভাবিস ?
৪) যারা কমিটেড তাদের কেউ কি বড় হয়না ?
উত্তর গুলো সোজা -
১) যেটা তোমরা ভাবছো হয়না, সেটা কারোর কাছে হয়। যেটা তোমরা ভাবছো হয়, সেটা কারোর দ্বারা হবেনা। যা কষ্ট এখন হয়। বুড়ো বয়সে এর সুফল ভোগ করবো। আইনস্টাইনও একি কথা বলেছেন। একা থাকা যৌবনে খুব যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু পরিণত বয়সে এর আশীর্বাদ ভোগ করা যায়।
২) নট আপ্লিকেবল প্রশ্ন। তবে যদি কেউ বাই চয়েস আনার্কি পছন্দ করে করতেই পারে। তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেউ যদি হিপোক্রিসি করে শান্তি পায় পাক, কেউ যদি ডাকাতি করে শান্তি পায়, রেপ করে, ফ্রড করে পাক, নিজের চারিদিকে দেয়াল গড়ে নিতে হয়। পৃথিবীর রঙ্গ , নীতিকথা চুপচাপ শুনে যেতে হয়। নিজেকে কারো কাছে কিছু প্রমাণ করার না থাকলে পকেটে যোগ্য জবাব থাকলেও দিয়ে কি লাভ। একজন ডাকাত, টেরোরিস্ট ও নিজের কাছে হনেস্ট। কাউকে ভুল প্রমাণ করে কারো দোষ দেখিয়ে কোন শান্তি পাওয়া যায়না এটা বয়স বাড়ার সংগে সংগে উপলব্ধি করা যায়। নিজের কোন ভুল নিজে থেকে স্বীকার করে এরকম ভালোমানুষ পৃথিবীতে আজ পাওয়া যায়না।
৩) ওনারা ওনাদের মত। আমি আমার মত। আমি আমার মত হবো, কে কি ভাবলো পুরোটাই তাদের ব্যাপার। আই কেয়ার আ ফিগ। সেই পথে হাঁটতে ভয় পাই না যেটা কম লোকে হাঁটে অথচ আমার ঠিক মনে হয়। ছোট থেকেই এরকম।
৪) সবই হয়। তবে কেউ যদি জানু, সোনা - মনা র টাইমে মোশারফ করিমের নাটক দেখে, কেউ যদি গল্প গুচ্ছের 'মাল্যদান' পড়ে মনে শান্তি পায়, কেউ যদি ঘরে বসেই আন্টার্টিকা ঘুরে আসার ক্ষমতা রাখে, কেউ যদি আবোল তাবোল লেখে, উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন আর্টিকেল ঘেঁটে বেড়ায়, কেউ যদি নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে শান্তি পায় এতে বাকিদের অসুবিধে কি আছে ?
বউ এর আঁচলের তলায় ঢুকে সুরুত সুরুত করে চা খাওয়ার থেকে, এদিক ওদিক ফ্লার্ট করে বেড়ানোর থেকে কার্টুন দেখবো, ইউটিউবে জ্ঞানের ভান্ডার খোলা যেটা আমার পছন্দ সেটা দেখবো- এতে হয়তো কেউ শান্তি পায় । কেউ উইথাউট অবসেসন কথা বললে কথা বললাম, কোনরকম ঝুল পেলে আভয়েড করলাম... কেউ যদি অন্য কোন ভাবে শান্তি পায় পাক, তাদের ব্যাপার - আমার ক্ষতি কি ??
বি.দ্র. মানুষটা একি আছি। তুই বলেছিলি -জাজমেন্টাল হতে না। পরের উপকার করতে না। আমি সেদিন রেগে ছিলাম। আজ উপলব্ধি করেছি। কিন্তু একটু আলাদা ভাবে। জাজ তো করবোই নাহলে তো পদে পদে বিপদ , কিন্তু মেন্টাল হবোনা। আমার দুনিয়ায় আমি একা। আর কেউ না, কেউ না। 'Yesterday I was clever , I wanted to change the world . Today I am wise , I am changing myself.'

Wednesday, May 18, 2016

পয়লা বৈশাখ

হোস্টেলের ছাদে বসে কাঁদছিল একটা ছেলে। দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো অনিকেত। অনিকেত হোস্টেলের বোর্ডার- ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র । হোস্টেলের সবাই তাকে তার অন্যরকম স্বভাবের জন্য এক ডাকে চেনে।একটু কাছে গিয়ে দেখলো তাদেরই ফ্লোরের একজন জুনিয়র। জিজ্ঞেস করলো
- কি হল রে ?
- কে ও অনি দা। বসো।
- সে নাহয় বসলাম। কি হয়েছে কি ?
- কিছুনা।
- হার্ট কেস ?
- হুম্।
- কি ল্যাংগ খেলি ?
- না। তবে বেরিয়ে আসতে চাই।
- না পোষালে বেরিয়ে আয়। অসুবিধে কি আছে ?
জুনিয়রটি চুপ। অনিকেত এবার নরম হয়ে বললো -
'ওকে ভালোবাসতিস খুব। তাইতো ?'
জুনিয়র চুপ।
আরো নরম হয়ে বললো -
'ওকে ফিরে পেতে চাস আগের মত ?'
- না, আমি আর এসবে নেই। বড় ডাক্তার হব।
- আচ্ছা কি হয়েছে বল ?
- কি দরকার ছিল এইসব ডুয়াল গেম খেলার ? আমায় বলতো ডিরেক্টলি আমায় আর পোষাচ্ছেনা। আমি সরে আসতাম।
- ও প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া। হয়, হয়।
- যেটুকু রেস্পেক্ট ছিল থাকতো। এদিকে সরে এলে আমাকেও ছাড়বেনা। ওদিকে রিজার্ভ বেঞ্চ ধরে রেখে আমায় ব্ল্যাকমেল করে যাবে।
- ঠিক আছে বেরিয়ে আয়। চুপচাপ।
- সেটা তো দিচ্ছেনা।ভাবছি ওপেন চার্জ করবো।
- কি দরকার। তুমি অধম তা বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন।
- ওসব নীতিকথা রাখো। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
কোনটা মানবো ?
- দেখ মোরালিটি তে যখন কনফ্লিক্ট হয়, তখন রিয়েলিটি কি বলে দেখ। ও কি জানে তুই সব ধরতে পেরেছিস ??
- না। তবে বুঝতে পারছি ও আমায় একদিকে প্যাম্পার করছে। দেখাচ্ছে ওর বাড়িই চায়না আমার সাথে রিলেশন থাক।আর আমায় ভুলভাল বলে অন্যদিকে টোপ ফেলছে। যুক্তি, প্রমাণ সব তাই বলে। রেস্ট্রিকশনেই সব সত্যি গুলো জলের মত পরিষ্কার হল।
- বেশ তো। এবার রিয়েলিটি দেখ। তোর কি কোন লাভ আছে ওকে চার্জ করে ? এনি মোরাল গেন ?
- না। তাহলে ও যদি চুপ করে যায় সরে আয়। যদি না করে চুপ করা।
- ও হয়তো ভালো জানো তো। কিন্তু ওর পরিস্থিতি...
- হতেই তো পারে দুজন ভালোমানুষ একসাথে থাকতে পারেনা। মেয়েদের তো কিছু করার নেই। ও ওর দিক থেকে ভাববে। কারণ তুই যদি দুম করে ছেড়ে যাস। মেয়েরা তো ওভাবে থাকতে পারেনা। সাপোর্ট দরকার। তোকে বেরোতে দিচ্ছেনা মানে তোর উপর ফিলিং আছে। কোথাও। বা যতক্ষণ না রিজার্ভ বেঞ্চ আসল টিমে জায়গা না পাচ্ছে তোকে খেলিয়ে যাবে। তোর পারফর্মেন্স ওদের বাড়ির, সময়ের জন্য উপযুক্ত নয়। এবার তুই ঠিক কর তোর কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। কারো ভালোবাসা নাকি সত্যি ?
মুখে হাসি এল এবার জুনিয়রটির।
'সত্যি। ভালোবাসা তো অনেকেই দিতে চেয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের মানুষের ভালোবাসা ভেবে এগিয়েছিলাম।তো সেখানে সেই জায়গাতেই যখন গলদ। তার ভালোবাসা সত্যি হোক বা মিথ্যে কোন প্রয়োজন নেই।'
- রাগ থেকে বলছিস না তো?
- না ওরা ভালো থাক।
- দ্যাটস্ মাই বয়। চলো আজ পার্টি হোক। গান - খাওয়া দাওয়া। নো মদ - গাঁজা।
- একদম, আজ আমি গান গাইবো।
- সে গাস। তবে 'প্রাক্তন' কে অন্যের হাত ধরে দেখলে কিছু হবেনা তো ?
- না। যেভাবে ভালোবাসতে জানি উজাড় করে, সেরকম দূরে সরাতেও জানি। মুছে ফেলতেও জানি। ওরা ভালো থাক।
- তোকে অপমান করবে কিন্তু দূরে সরাতে গেলে..
- যা অপমানিত হওয়ার হয়ে গিয়েছি অনি দা। নতুন করে আর কি ?
- আজ কি গান গাইবি -'সেই তো আবার কাছে এলে ?'
- না। 'হে নূতন।'
- কবি বলেছেন -
যদি বহুদিন পর
তোমার সংগে আবার দেখা হয়
নীল সমুদ্রের ধারে,
যদি সেদিনও জ্যোতস্না থাকে।
তুমি থাকো অনুরাগ নিয়ে নীল স্বপ্নের ঘোরে,
তোমায় আবার চাইবো আমি উষ্ণ নি:শ্বাসে।
চাইবিনা তো ?
- না, এবার শুধু যুদ্ধ। আর যুদ্ধ। তোমারি লেখা আরেকটা কবিতা বলি তবে -
তুমি সুন্দর, আমি সজীব ...তুমি বদ্ধ , আমি মুক্ত ..
তোমার ব্যারিকেড এ আমি চুম্বন এঁকে যাই।
তুমি সফল, আমি শিল্পী ... তুমি নিয়ম, আমি দর্শন ...
তোমার বাস্তব কে আমি সেলাম জানাই।

A- দর্শ- নো

'আদর্শ কোষ বলে সংসারে কিছু হয়না '
কেন হয়না ?
যুধিষ্ঠিরকেও 'অশত্থামা হত ইতি গজ' র নাটক করতে হয়েছিল।
কেন হয়েছিল ?
আইডিয়ালিস্টদের ঠকতে ঠকতে হারতে হারতে হারাতে হারাতে অন্ধকার কোণে ঠাঁই পেতে হয়। কেন পেতে হয় ?
' প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরটাও জানা '
সংসারের জন্ম-মৃত্যু আছে। আইডিয়ার নেই।
'ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।'
তাই আইডিয়ালিস্টরা অমর, সজীব সবুজ হন। খুব আকর্ষণীয় প্রদর্শনীর মেলায় বসালে। অনেকেই আইডিয়ার পালক গায়ে লাগাতে চান। কিন্তু অচিরেই সেগুলো খসে পড়ে। তখন তাদের ডিফেন্স মেকানিজম বাধ্য করে রেশনালাইজ করতে শালা পালকগুলো বাল-ছাল ছিল। আইডিয়ালিস্টরা কেন সংসারের বাইরে বাইরে থাকে, বা কেন ভেতরে থাকলেও বাইরে থাকে ?
কেন তাদের নানা দিক থেকে শুধু ঘৃণা পেতে হয় ?
কারণ তারা ব্যক্তিগত লাইফে সত্যি কথা মুখের উপর বলে দেয়। এবার যদি কোন আইডিয়ালিস্ট ভুল করে প্রেম করে। সেই সম্পর্ক গুলো শুধু হয়ে যায় এক একটা বড় ভুল। ধরুন একজন আইডিয়ালিস্ট পুরুষ অনেক খুঁজে সম্পর্ক করলেন একজন আইডিয়ালিস্ট নারীর সাথে। দুজনেই আইডিয়ালি অনেক কিছু করলেন। তারপর শুরু হল দুদিকের দ্বন্দ্ব। ধরা যাক, নারীটি তার বাবা-মা কে নিয়ে কাজের জায়গায় থাকে, পুরুষটি থাকেন তার বাবা-মা কে নিয়ে অন্য জায়গায়। আইডিয়ালি তাই হওয়া উচিত।কিন্তু তাহলে সম্পর্কের কি দাম ? সম্পর্কের থেকেও আইডিয়ার দাম যার কাছে বেশি সে ভাবতে থাকবে। আইডিয়ালি একজন তার কেন প্রয়োজন ?
- মনের কথা বলতে একজন বিপরীত সেক্সের মানুষকে তার ভালোই লাগে
- ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্মের জন্য
আর কোন কারণ আইডিয়ালি থাকা উচিত নয়। এক্ষেত্রে দুজনেই এত দূরে বসে অন্য কোন বিপরীত সেক্সের সাথে কথা বলতে পারেনা। সেটা আইডিয়ালি ঠিক না। কারণটা খুব সত্যি একটা ছেলে একটা মেয়ে শুধু আইডিয়াল ভালো ফ্রেন্ড যাকে সব বলা যায় হতে পারেনা । কোন না কোন দিক থেকে ঝুল থাকেই। হয় ভেতরে নাহয় বাইরে। যার ঝুল থাকে সে রিলেশনে থাকলেও, না থাকলেও।
এবার দুজনের মনেই তৈরি হয় হতাশা, ঝগড়া। এর পর যার মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার তাগিদ বেশি সে শুরু করে আড়ালে অন্য কারো সাথে সময় কাটাতে। যে মুহূর্তে এটা হয় সেই মুহূর্তে সেই সম্পর্কের আইডিয়াল মৃত্যু হয়।যেটা পড়ে থাকে ডিপেন্ডেন্স, কম্প্রোমাইজ। এটা যদি হয় দুজনেই আড়ালে বা বলে কয়ে এদিক ওদিক 'চেখে দেখা' চালিয়ে যায়, সেটা একটা আইডিয়াল 'ছেলে-মেয়ের ' রিলেশন। তাদের মত আইডিয়াল। কিন্তু যদি এরকম হয় দুপক্ষের আইডিয়া ভিন্ন। তখনই সেই সম্পর্কের জন্য দিন গোনা শুরু হয়।
এর পর ধরা যাক ওই 'তাদের মত আইডিয়াল ' সম্পর্কের বিয়ে হল। এর পরের পরিণতি। বেঁচে থাকার তিনটে স্তম্ভ। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান।
1) খাদ্য - তাঁরা খাবার রান্না করতে জানেন না। ছেলে প্রথমে বললেন - না আমরা দুজনেই সহযোগিতা করে রান্না করবো। কিন্তু এরকম কিছুদিন যাওয়ার পর দুজনেরই ফেসবুক,হোয়াটসআপ, কাজের জগতের প্রেসার আর প্রেসার কুকারে ঠাঁই পেলোনা। তখন পরিণতি..
ছেলেটি বলেন - আমি ছেলে, তুমি মেয়ে। তোমারই রাঁধা উচিত। আমি উপার্জন করবো। তুমি রাঁধো। মেয়েরা অবলা, দুর্বল, লেডিজ সিট, লেডিজ কামরা, লেডিজ স্পেসাল ট্রেনের সুবিধে নেয় এরকম অনেক কিছু।
মেয়েটি শিক্ষিতা ছিলেন তিনি মল্লিকা সেনগুপ্তর লাইন শোনালেন -
গৃহশ্রমে মজুরী হয়না বলে মেয়েগুলি শুধু
ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে
আর কমরেড শুধু যার হাতে কাস্তে হাতুড়ি !
আপনাকে মানায় না এই অবিচার
কখনো বিপ্লব হলে
পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
শ্রেণীহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে
আপনি বলুন মার্কস, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী
হবে ?
অতএব তারা বেছে নিল আরো নিষ্ঠুর পথ। তাদের মা কে বললেন তুমিও সাহায্য করো। মা তো সেই পুরুষ শোষণ যন্ত্রে (ভালোবেসে) খেটে চলা বিনে মজুরির বাচ্চা উতপাদনের যন্ত্র। ভালোবেসে সাহায্য করতে করতে দেখা গেলো কখন তার মা ই মেন সার্জেন। বাকিরা ভিজিটিং। এটাও সহ্য হলনা। আইডিয়া বিরুদ্ধ।
অতএব ডেকে আনলেন একজন কাজের মাসিকে।যাকে মাসি বলে ডাকলে, মাস গেলে হাজার মাইনে, আর পুজোতে বকশিস দিলেই রেঁধে দিয়ে যায়। হাহাকার পড়ে যায় একদিন না এলে। মুখ থেকে কাজ থেকে ছাড়ানোর হুমকির কথাও আসে। এনারাও হলেন পয়সা দিয়ে খাটানো মজুর। এদের দোষ এরা so called spoon fed শিক্ষিতা নন। তাই লোকের বাড়িতে রান্না করে, ঘর ঝাঁট দিয়ে খেতে হয়। শিক্ষিতারা এসি ঘরের মজুর। আর এনারা ঘরে ঘরে। এনাদের মাসি বলেন। শিক্ষিতাদের কেউ বলার সাহস করেন না। লেখক একবার লেবার রুমের একজন মাসিকে মা বলে ডেকেছিলেন। তিনি ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন। দুজন ছেলে মাসি লেখকের বন্ধু ছিলেন। একজন হসপিটালের গ্রুপ ডি কর্মচারী। অন্যজন হোস্টেলের। দ্বিতীয় জন মাধ্যমিকে তিনটে লেটার পেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে মাসি হতে হয়েছিল লেদ কারখানায় অভাবে ।আপনি মাসি নন কারণ আপনি প্রিভিলেজড্। এবার আপনার আইডিয়ার টানাটানি, আপনি তাঁদের মর্যাদা দেবেন মানুষের। তারা লুটে নিয়ে চলে যাবে। এভাবেই আইডিয়ার সংগে কম্প্রোমাইজ করতে করতে কিছু আদর্শ কোষের মৃত্যু হয়।
২) বস্ত্র - ছেলে যদি খালি গায়ে, হাফ প্যান্ট পরে ঘুরতে পারে, মেয়েরা কেন পারবেনা ? আচ্ছা, ছেলে গেঞ্জি পরে, আর পাজামা পরে ঘরে বসে আড্ডা মারলো।
বেরোনর সময় গেঞ্জির বোতাম লাগালো, নাহলে আইডিয়ালি মেয়েও পারে ক্লিভেজ সো করতে। আইডিয়ালি এটা খারাপ কিছু কি ? অতএব ছেলেকেও গেঞ্জির বোতাম লাগিয়ে, কলার নামিয়ে চলতে হল। মেয়েটিও ভদ্র (তথাকথিত) ড্রেস পরতে লাগলো বাড়িতে, আর বাইরে। কিন্তু এভাবে আইডিয়ালি কতদিন। শুরু হল দ্বন্দ্ব। ছেলেটি আর চুপ থাকতে না পেরে বললো - লজ্জা নারীর ভূষণ। বাড়িতে তুমি হাফপ্যান্ট পরতে পারোনা।
মেয়েটি শিক্ষিতা ছিলো -
পুরুষ তোমার গরম লাগে,
আমাদের লাগে পর্দা।
তোমার মোবাইলে কেন,
সানি লিওনের জর্দা ?
ভ্যালিড প্রশ্ন। মেয়ে সারা সপ্তাহ ব্যস্ত। শুরুর মধুচন্দ্রিমা কেটে যাওয়ার পর বাচ্চা এলে সম্পর্ক টা নারীর বাচ্চা পালন, আর ছেলের সানি লিওনে পরিণত হয়। কিন্তু সে ছেলে এটাও বুঝতে হবে, তার সেক্সুয়াল নিডের জন্য সে যা খুশি করতে পারে। তার কাছে সেক্স লাক্সারি নয়, নেসেসিটি। অতএব, ম্যারিটাল রেপের সূত্রপাত।
বস্ত্রএর কলামে আনা যেতেই পারে কন্ডোম কে ! এখন সেক্সের সময় কন্ডোম পরে করলে ঠিক সুখ হয়না। ছেলে তাই মেয়েকে বলে পিল খেতে, কপার টি, টিউবেকটমি করতে। পিল খেয়ে মেয়েটির শরীরে সমস্যা শুরু হয়। মোটা হতে থাকে। তার পিছনে ছেলের মিছিল কমতে থাকে। ছেলেরা আমোদ অনুভব করে - উফ্ কি গান্ডু বানালাম। কিন্তু মেয়েটি অতি শিক্ষিতা ছিল। বললো-
সব ব্যথা কেন আমিই নেবো,
তুমিও কিছু নাও,
সত্যি যদি ভালোবাসো,
সুখটা পরে সও।
এসবের পর আসে কাপড় কাচার প্রসংগ।
মেয়েটি শিক্ষিতা ছিল। বললো-
আমার অন্তর্বাসে ঘৃণা করো,
মেয়ে বলে তোমার অন্তর্বাস কেচে মরি।
এবার বাড়িতে এলো ওয়াশিং মেসিন। কেন রোজ মেয়েটাই জামা কাপড় মিলবে। অতএব সেই খাদ্য সমস্যা তেই প্রত্যাবর্তন।এই পরিস্থিতিতে যদি আইডিয়ালিস্ট ছেলে আসে হয়ে যায় ডাইভোর্স নাহলে সেপারেশন। ছেলেরা রূপ পালটায়, মেয়েরাও। পুরুষ যদি রূপ না পালটায় তখন সেটা বিবাহ অবদি গড়ায় না। সেই আইডিয়ালিস্টকে আইডিয়াল ব্রম্ভচর্যে যেতে হয়।
৩) বাসস্থান - এত কিছু মেলা একজন আইডিয়াল পুরুষ- নারীর মিলতে পারেনা। ছেলে-মেয়ের মিলতে পারে। অতএব, দুটি ছেলে মেয়ে বিয়ে করবে। কোথায় থাকবে। ছেলেটি বলে - তুমি মেয়ে তোমায় আমার বাড়ি থাকতে হবে।
মেয়েটি শিক্ষিতা সে বললো -
তোমার শুধু বাবা-মা।
আমার নিজের পর হবে !!
তুমি নাহয় বন্ধু থেকো,
পরে আমার বর হবে।
এদিকে খুব মুশকিল। কে হারবে ? আইডিয়া না ভালোবাসা ? আগে না হয় পরে যেই কম্প্রোমাইজ করুক কাউকে একটা হারতেই হয়। শুরু হয় কিছু সামাজিক পরিবর্তন। মেয়েরা প্রথমে ছেলেরে বাড়ি আসে, শখ মিটে গেলে ফিরে যায় বাপের বাড়ি। ছেলেরা মাঝে মাঝে গিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে থাকে। এটাই পরে বাড়তে বাড়তে হয়ে যায় ছেলের নিজের বাড়ি বাপের বাড়ি। চলতে থাকে দড়ি টানাটানির লড়াই। মাঝখান থেকে ভরতে থাকে বৃদ্ধাশ্রম গুলি। আর যৌনক্ষুধা মেটাতে মানুষরা লিভ ইন রিলেশনে যায়। কম্প্রোমাইজড আইড়িয়াল রিলেশন। এর আগেই যদি সম্পর্ক ভাংগে যার অন্যের ভালোবাসা, সেক্স নেসেসিটি সে আইডিয়া কে বিসর্জন দিয়ে একের পর এক সম্পর্কের ভাংগা গড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। শেষে ফ্রাস্টট্রেটেড হয়ে বেছে নেয় বোহেমিয়ান লাইফ। আদিম আনার্কি তাকে গ্রাস করে।
নিজেকে আইডিয়াল ভেবে ঘুমাতে যাবো, আবার সংসারেও থাকবো অন্যদের মতো সেটা করতে গেলে হতে হবে যাকে বলে ফ্লেক্সিবল। মানে যখন নিজেকে জাস্টিফাই করতে যে আইডিয়া টা দরকার তখন সেটা। কাউকে ছেড়ে আসতে চাও তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ কর। তখন বলবে - আমি এরকম নই। প্রমাণ কর - সে তোমার কেরিয়ার চায় না। বলবে - আমি এরকম নই। প্রমাণ কর - সে তোমার কেরিয়ারে উন্নতি চায়না। বলবে - আমার কিছু আম্বিশন আছে। প্রমাণ কর - সে তোমায় প্রচুর রেস্ট্রিক্ট করে। বলবে - এভাবে দম বন্ধ হয়ে আসে।
এটা পলিটিক্সেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। রামধনু নীতি। তারপর সেই একই আইডিয়ার টোপে পরের জনকে ধরবেন সে চরিত্রবান/ চরিত্রবতী। অতএব নিজেকেও সেরকম হতে হবে শুরুতে। তারপর যখন ছেড়ে আসতে চাইবেন আদর্শ হঠাত পরিবর্তন- আমি আসলে ওরকম। লিবেরাল। আমি আসলে শুধু কেরিয়ার চাইনি, ভালোবাসাও চেয়েছি। আমি আসলে শাসন পছন্দ করি। আমি কিন্তু ডমিনেটিং পার্টনার পছন্দ করি।

এসব হতে হতে পরিণতি একটাই হয় আদিম আনার্কি। love friend game..একটা শিক্ষিত ছেলে একের পর এক মেয়েকে জাতিস্মরের গান শোনাতে শোনাতে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে বিয়ে করে গ্রামের একজন মেয়েকে যে ভালো ঝি- চাকর হতে পারবে।
সে বাইরে লারে- লাপ্পা করে বেড়ালেও যে মেনে নেবে। একটা শিক্ষিতা মেয়ে বেছে নেয় একজন ভালোবাসার জন্য সব কিছু করতে পারা স্পাইনলেস ছেলেকে বা বড়লোক সো কলড লিবারেল ছেলেকে। যার পরিণতি মধুচন্দ্রিমা কাটলেই হয়ে যায় তিল আর আঁচিলের মত বয়ে নিয়ে চলা।
প্রকৃত আইডিয়ালিস্টদের আইডিয়া ফ্লাকচুয়েট করেনা। সেগুলো কনসিস্টেন্ট। কাঠামো রিজিড। বিচ্যুত হলে স্বীকার করে।
তাদের সংসারে কোন ঠাঁই নেই। হয় তারা পলাতক, নাহয় ডিভোটেড ফর সাম বিগ রিজন্স ।
আদর্শ কোষ তাই সিলেবাসে থেকেও থাকেনা।
এ কারণেই, আইডিয়ালিস্টদের প্রথম শিক্ষা হল - সে একজন গান্ডু।

Tuesday, May 17, 2016

শেষের মুখে নতুন শুরু

বিশেষ প্রতিবেদন
১লা সেপ্টেম্বর, ২০৩০ - অনেকের মুখেই শুনেছিলাম জায়গাটার নাম। এসেছিলাম এখানে এক বন্ধুর বাবাকে দেখতে। বন্ধু ব্যাংগালোরে থাকে, তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে। বাবা কে দেখার কেউ নেই। অগত্যা এই নদী-নালা, জংগলের দেশে কোন এক ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রেখে যাওয়া। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম সেটা ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ৭০ বছরের বৃদ্ধ প্রেমে পড়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধার। তাদের পাতানো ছেলে পাশের গ্রামের কৃষকের। সে এসে এনাদের সংগে খেলছে। নেচে বেড়াচ্ছে। এসব কি চলছে জানার জন্য ডাক্তারকে খুঁজতে হল। তিনি তখন মিটিং এ ব্যস্ত।মাঝারি উচ্চতার একজন, মাথার চুল, দাঁড়ি উস্কো খুস্কো কাঁচা-পাকা । চোখে মোটা গ্লাসের চশমা। আমাকে মিটিং এ বসতে অনুরোধ করলেন। ডাক্তারবাবু কে অনেকে অনেক কিছু অভাব অভিযোগ করছিলেন। তিনি সব শুনছিলেন। হঠাত পাশের মাঠে কিছু বাচ্চা খেলছিল তাদের হই-হট্টোগোলের শব্দে মিটিং এ অসুবিধে হতে লাগলো। দেখলাম বৃষ্টি নেমেছে। সবাই কি করবেন বলে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালেন। ডাক্তারবাবু নিজে উঠে গুরু গম্ভীর কন্ঠে বললেন - 'আপনারা কথা বলুন। আমি দেখছি। '
দুমিনিট গেল। ডাক্তারবাবু এলেন না। বরং চিতকারটা একটু বেড়েই গেল। একজন বললেন ডাক্তারবাবু কালকেই বলছিলেন- কি জানি আর কতদিন।
কিছু বিপদ হলনা তো!!!
কিছু লোকজন ভয় পেয়ে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, আমিও গেলাম। গিয়ে দেখলাম - সেই যে ব্যক্তিত্বটি একটু আগে সবাইকে পরিচালনা করছিলেন। তিনি এখন ওই চোস্তা পাঞ্জাবি পড়েই বাচ্চাদের সাথে কাদায় ফুটবল খেলছেন। আমায় দেখে ডাকলেন - 'সাংবাদিক সাহেব চলে আসুন। জ্বর হলে মে হুঁ না।'
আমি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ফিরে এলাম। এর ঘন্টাখানেক পরে ডাক্তারবাবুর ইন্টারভিউ এখানে কথোপকথন রূপে তুলে দিলাম।
ডা - বলুন কেমন খেলেন, চিংড়ি আর দেশি মুরগির ঝোল ?
- ভালো, কিন্তু কাজের প্রশ্ন করি এখন ?
- করুন।
- এখানে যে কর্মযজ্ঞ চলছে এই সমাজসেবার পেছনে আপনার কি লাভ ?
- দেখুন, প্রথম কথা আমার নামে কাগজে এরকম দুর্্নাম রটাবেন না। আমি সমাজ সেবা করছিনা। আমি খুব হিসেবি। কিছু দিই মানে কিছু নিই। সমাজ নিজের সেবা নিজে করছে। আই জাস্ট গেভ দেম আইডিয়াজ্।
- যেমন ?
- এই আশ্রমে আমার ভূমিকা আপনার মতই। জাস্ট টু অবজার্ভ। আমি এটা উইকলি করি এটাই ডিফেরেন্স।
-এতে আপনার লাভ ?
-এখানে প্রত্যেকটি বাবা- মা এক একটি উপন্যাসের খনি। আমি সেই খনি থেকে রত্ন তুলে নিয়ে হার সাজাই।
- কিন্তু এতে দেওয়াটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা ? হিসেবে ব্যালান্স থাকছে কই।
- আছে। দেখুন আমি কিছুই করিনা। সব এখানকার লোকেরাই করেন। এই বৃদ্ধ বাবা- মা রা গ্রামের বাচ্চাদের পড়ান। তার বদলে গ্রামের লোক এনাদের দেখাশোনা করেন। এটা আশ্রম না বলে সামাজিক মিথোজীবিতা বলা যেতে পারে। হ্যাঁ কোন বৃদ্ধর কোন মা কে পছন্দ হলে মদনের ভূমিকা নিই অস্বীকার করবোনা। যেমন আপনার বন্ধুর বাবা কে মাউথরগান শিখিয়েছি।
- আপনার মাথায় ডাক্তারি ছেড়ে এসবের সখ কবে থেকে হল ?
- আমি এখনো একটি কলেজের প্রফেসর। উইথ প্যাশন ছাত্র পড়াই। ওরাও এখানে আসে মাঝে সাজে। আমি খুব হিসেবী। কিভাবে হল না হল সেগুলো উপন্যাস খুঁজলেই পাবেন। কিছু রহস্য থাক। আর আমার মনে হয় সমাজটা শেষ ৫০ বছরে একটা পরিবর্তন ফেস করেছে তাতে এরকম পাকেজের প্রত্যেকটা গ্রামে খুব দরকার।
- কিরকম পরিবর্তন ?
- আগে ছিল জয়েন্ট ফেমিলি। নিউক্লিয়ার ফেমিলি হলেও তিন এর বেশি সন্তান। তাই কেউ বাইরে কাজের সূত্রে বা বিয়ে হয়ে চলে গেলেও তার বাবা- মা কে দেখার জন্য বাকিরা থাকতো কেউ না কেউ। যে পড়াশোনাতে ডিপ্রাইভড। এখন যুগ পাল্টেছে। সবাই অলমোস্ট নিউক্লিয়ার ফেমিলি তে বিলং করে। খুব বেশি হলে দুজন সন্তান। মেয়ে সন্তান হলে ভালো। আগেকার যুগের বাপের বাড়ির কন্সেপ্ট এখন ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এদিকে যদি ছেলেকে মেয়ের সাথে মেয়ের বাবা/মা কে নিয়ে আলাদা থাকতে হয় তাহলে ছেলের বাবা- মা কে দেখার কেউ নেই। যেহেতু নিউক্লিয়ার ফেমিলি।এখন সমাজ হল দু-তিনজনের। তো আমার মনে হয়েছে এই ধরনের বাবা- মা দের জন্য একটি এরকম জায়গা দরকার। আপনার বন্ধুর বাবাকে কেমন দেখলেন ?
- এত চনমনে কি করে সম্ভব।
- উনি একজনের প্রেমে পড়েছেন। এর জন্য আমার উস্কানি কিছুটা দায়ী।
- হা হা হা।
- চলুন একটা জায়গায় নিয়ে যাই।
এই বিশাল এরিয়ার মধ্যেই জায়গাটা ছিল। ডাক্তারবাবুর সাথে এলাম। দেখলাম ওই অজ পাড়াগাঁয়ে তৈরি পার্কের বেঞ্চে বসে একটি বেঞ্চে একজন বৃদ্ধ শেক্সপিয়ার পড়ে শোনাচ্ছেন কাঁধে মাথা দিয়ে থাকা বৃদ্ধাকে। কিছু বৃদ্ধ বৃদ্ধা নিজেরদের চোখে চোখ রেখে বাকি দুনিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমরা আছি, যতদিন আমরা আছি প্রেম আছে, সমাজ আছে।

Sunday, May 15, 2016

শেষ অংক

শনিবারের বিকেল। একটা উচ্চমধ্যবিত্ত সাজানো ঘরে বসে হাহা- হি হি, কখনো ফিস ফিস করে আলোচনা করছিল দুজন মেয়ে। একজনের বয়স সদ্য তিরিশ হবে। আর একজন কলেজ স্টুডেন্ট। দুজনের মধ্যে ঠিক যেন দিদি বোনের সম্পর্ক। হঠাত
- কে বলোতো ? ( রুমের দরজার মুখে মুখটা বাড়িয়েই লাখ টাকার প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলো আগন্তুক)
- আরে কবিবর, আপনি এখানে ? আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে ? পলু, এই সেই অনির্বাণ, যার কথা তোকে প্রায় বলি। ( পলু অর্থাৎ পল্লবী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আগন্তুকের দিকে)
আগন্তুক প্রশ্নর পরোয়া না করে নাচতে নাচতে বিছানায় উঠে গেলো। চশমাটা খুলে একবার মুছে নিলো গেঞ্জিতে। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
' ও'সব হেঁয়ালি রাখো। দাদা আছে তো বলো। নাহলে..'
' নাহলে কি ? আমাদের সাথে কথা বল্ । আমরা কি বাঘ- ভাল্লুক ? ' দিদি বললো।
আগন্তুক উত্তর দিল- আহা, বাঘ-ভাল্লুক তো ভালো।আলপ্রাজোলামে ঘুমায়। তোমরা হলে ফ্রাস্ট্রেটেড শাঁকচুন্নি। না নিজেরা শান্তিতে ঘুমাও। না অন্যকে ঘুমাতে দাও।
'কি!!! ' দুজনে দাঁড়ালো উঠে।
দুজনের রাগ দেখে খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
দিদি বললো - তোকে আজ মারবোনা। আজ একটা কেক করছি সেটা তোকে খেতে হবে।
শিউরে উঠলো - না ছেড়ে দাও। মরে যাবো। এর থেকে একটা লাঠি জোগাড় করে দিচ্ছি যত খুশি পিঠে মারো। পেটে মেরোনা।
দিদির উত্তর - আমি জানিনা। আমি রান্নাঘরে গেলাম। তোরা কথা বল্ ।
অনেক্ষণ চুপচাপ পরিবেশ। ঝড়- বৃষ্টির আগে যেরকম থমথমে হয়। আগন্তুকের মাথায় ছিট আছে। এসে আলমারি খুঁট খুঁট করতে লাগলো। একটা বই বের করে উলটে পালটে দেখলো। ঘরে যে একজন সুন্দরী মেয়ে বসে বোর হচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। অগত্যা মহম্মদ পর্বতের কাছে না গেলে পর্বতকেই মহম্মদের কাছে যেতে হয় !! প্রশ্নটা মেয়েটার দিক থেকে এলো।
- এক্সকিউজ মি, মে আই আস্ক ইউ সামথিং।
- ইয়া।
- আর ইউ ম্যাড ?
(প্রশ্নটা শুনে ঘুরে তাকালো আগন্তুক।)
- হুম্। ওই আর কি।
(উত্তরটা আরো অবাক করা।)
- হেলো, আমি তোমার জুনিয়র।
- ও আচ্ছা, তাহলে আমি তোর সিনিয়র।
- তোমার কি মেয়েদের সাথে কথা বলতে কোন প্রবলেম আছে ? এনি সেক্সুয়াল প্রবলেম ? (অনির্বাণ এবার মেয়েটার দিকে তাকালো, এ দৃষ্টি কোন সাধারণ মানুষের নয় ) না, না এভাবে তাকানোর কিছু নেই। বলতে চাইলে বলতে পারো। আমি আর ডিস্টার্ব করবোনা।
অনির্বাণ হেসে একটা চেয়ার টেনে কেটে কেটে বললো - তুই কি যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ?
(হেসে ফেললো দুজনেই।)
এরপর নিজেই বললো - আসলে আমার মেয়েদের নিয়ে আলার্জি আছে। কথা বলিনা। দুম্ করে প্রেমে পড়ে গেলে খুব মুশকিল হয়।
- নিজেকে কি ভাবো ? কি আছে তোমার মধ্যে ?
- আরে না ইয়ার্কি করছি। আমার নিজের মত থাকতে ভালো লাগে। মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলি ।
- মানে, মেয়েদের কি ভাবো ?
- না তুই ভুলভাবে নিচ্ছিস। যাই হোক, কফি হাউস গেছিস কখনো ?
- হ্যাঁ, ওখানে বন্ধুদের সাথে বসে শেলি, ওস্কার ওয়াইল্ড থেকে শুরু করে সত্যজিৎ কিছুই বাদ যায়না ভাঁট বকিতে বসিলে। মাঝে মাঝে সিগ্রেট ও খাই কাউন্টারে। দিদিকে বোলোনা কিন্তু আর কথা বলবেনা।
- বলবোনা। তোর জীবনের লক্ষ্য কি ?
- হ্যাপিনেস।
- বব মারলের মতো কথা বলছিস তো। আই ওয়ান্ট হ্যাপিনেস।
- হ্যাঁ এতে ভুল কি ? আই ওয়ান্ট টু বি হ্যাপি ইন লাইফ ।
- ভুল কিছু না।বাট্ লেট মি টেল ইউ দিস ইজ নাথিং বাট আ ফ্যান্টাসি।
- যদি তাই হয়তো তো তাই। তোমরা ডাক্তার মানুষ। অনেক জ্ঞান, আমরা মুখ্যু সুখ্যু মানুষ।
- ডোন্ট বি সেন্টিগ্রেড স্কেল।
- আমি সেন্টি দিচ্ছি। আচ্ছা। হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ?
- আই ওয়ান্ট নাথিং।
- আই কান্ট গেট ইউ।
- দেখ তোর লক্ষ্য হ্যাপিনেস। তুই সেই হ্যাপি থাকার জন্য কিছু পেতে চাইবি। সেটা না পেলে তোর হ্যাপিনেসে গন্ডগোল হবে। কিন্তু তুই ভাববি তোর তো লক্ষ্য হ্যাপিনেস । তাই তার বদলে যেটা পাবি তাতেই কম্প্রোমাইজ করে নিবি। কিন্তু তোর সাবকন্সাস তোকে হ্যাপি থাকিতে দিবেনা। সেই তুই পাওয়া- না পাওয়ার দ্বন্দ্বে ভুগবি।
কিন্তু কি হবে যদি তুই কিছুই না চাস ?
- এটা কি আনার্কির দিকে লিড করেনা ?
- খেই হারালে লিড করে। না হারালে নয়। ধর তোর একটা মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, দোকানে গেলি, মিষ্টি কিনলি। সেটা মিষ্টি ভেবে খেলি। কিন্তু টেস্টটা মিষ্টি নয়। থু থু করে ফেলে দিলি। কিন্তু তুই তো কিছুই চাসনি। তো তোর আফশোসের ও কিছু নেই।
তবে খেইটা হারালে চলবেনা। তুই ভাবলি আমি তো কিছুই চাইনা, তো চুপচাপ জংগলে গিয়ে বসে মরে যাই তপস্যা করে। This leads to anarchy. Be contended as u want nothing whatever the situation is. But don't stop. Dream and work for a reason. Work for others ,but নিজেকে ইউজড্ হতে দেওয়া যাবেনা। তারা যেন জানতে না পারে তাদের উপকার করছিস, জানলেই বাঁশ দেবে আড়ালে। শুধু তারা কেন তুই নিজেও যেন না জানিস। মুভ অন। সেটা ফুলফিল হলেও ইউ আর কন্টেন্ডেড। না হলেও।না হলে ফিক্স আ নিউ ড্রিম। ইউ হ্যাভ নাও বিকাম্ আ ওয়াইজার ভারসান্। ইউ নো ইউর লিমিটস্। নাও এক্সিড দেম্। আফটার অল নাথিং ম্যাটারস্ বিকজ ইউ ওয়ান্ট জাস্ট নাথিং।
- ওরে বাবারে। কিছু ঢুকলো, বাকি সব ট্যাঞ্জেন্ট। কিন্তু সব কিছু তো নতুন করে ভাবছি মনে হচ্ছে। তোমায় তো আমাদের কফিহাউসের আড্ডায় সংগে নিয়ে গেলে জমিয়ে দেবে।
- বার খাওয়াচ্ছিস। খাওয়া। মেয়েদের কাছে বার খেতে ভালোই লাগে অস্বীকার করবোনা। তবে ওই আঁতলামি গুলো করতে পারলে ভালোই হত। বাট্ আই হ্যাভ মাই ড্রিমস্। আই হ্যাভ্ টু ওয়ার্ক ফর দোজ। একসময় ওই বয়ে যাওয়া বোহেমিয়ান লাইফ কাটিয়েছি। আনার্কি হল ন্যাচারাল টেন্ডেন্সি। আনার্কিতে এনট্রপি বাড়ে। লাইফ সবাইকে ওই দিকেই নিয়ে যেতে চায়। আমার ও চোখ ধাঁধিয়ে গেছিলো এক সময়। এখন...
'গভীর আলোচনা চলছে মনে হচ্ছে।' দিদি কেক নিয়ে ঢুকলো।
অনির্বাণ- দিদি তোমার মনে হয় আমার চারটে পাকস্থলী আছে ?
দিদি - এই গোটাটা খাবি, নাহলে কোনদিন কথা বলবোনা।
অনির্বাণ চুপচাপ খেতে শুরু করলো। আর দুজনের দুজোড়া চোখ তাকে সতর্ক নজরে দেখতে লাগলো যাতে পালাতে না পারে। তারপর হঠাত একদিকে আংগুল দেখিয়ে চেঁচিয়ে বললো - দিদি মাকড়সা। দুজনে যতক্ষণে ছ্যাবলামিটা ধরেছে ততক্ষণে অনির্বাণ হাওয়া।
তার একঘন্টা পরে অনির্বাণের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এলো -
'এভাবে পালানো কিন্তু ঠিক হয়নি। দিদিকে একবার বলে যেতে পারতে। দিদি খুব রেগে আছে।
- পল্লবী।'
ফোনটাকে নিয়ে হাতে ঘষতে ঘষতে পনের মিনিট পর আর অপেক্ষা করা গেলোনা। ফোন করলো পল্লবী। কিন্তু ফোনটা আর গেলোনা। কল ব্লকড্।
এরকম হবে ভাবেনি। পাশে দিদির দিকে তাকালো। দিদি মাথায় হাত বুলিয়ে বললো -
'দেখলি তো বলেছিলাম।'

Friday, May 13, 2016

একা এবং অন্যরা

আগন্তুক - ভাইলোগ, কি খবর ??
১- আরে কাকা। তুই বেঁচে আছিস ?
- একদম। ওই তোর কি হল? কথা বলছেনা কেন ?
১- ওর *ড় মারা গেছে।
২- হাট বা*, *ট জ্বালাস না।
- হার্ট কেস ?
(হাল্কা মুচকি হেসে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল প্রথম জন।)
- চল্ ছাদে যাই।শুধু আমরা দুজন। কোন ভাইরাস যাবেনা।
২- আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা।
- আরে চল্ না। এতদিন পর দেখা।
২- চল্।
(ছাদে গিয়েই কান্নাকাটি শুরু করে দিল দ্বিতীয়জন।)
২- ওকে খুব ভালোবাসতাম রে।
- হুম্।
২- তুই খিল্লি নিচ্ছিস তো ?
- (হাল্কা হেসে বললো) আরে আমারো এক মাসও হয়নি ব্রেক-আপ হল।
২- সে কি রে। তোরটাতো সব ঠিক ছিল বলে জানতাম।
- বাদ দে। তুই কি চাস আবার ঠিক করতে ?
২- ঠিক হবেনা। আমি জানি হয়তো ও ও কষ্ট পাচ্ছে আমার মত। কোথাও হয়তো ভালোবাসে। কিন্তু তোর কি করে হল ?
- হয়ে গেলো। তো এখন কি ভাবছিস?
২- এই একটা নতুন মেয়ের সাথে ভাঁটাচ্ছি।
- কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইছিস ?
২- হ্যাঁ, অনেকটা সেরকমই।
- আগের জনকে ফোন করিস ?
২- না, ওই করে। কান্নাকাটি করে। সেদিন ফোন করে কাঁদছিল বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
- ভালো তো।
২- হুম্। আসলে মায়ার বাঁধন কেটে বেরোতে পারছিনা। হ্যাঁ এ আছে সময় কেটে যায়, কিন্তু..
- একটা কবিতার লাইন তোকে শোনাই,
তুমি আছো, আমি আছি, খুব ভালো,
তুমি নাই, আমি নাই, ক্ষতি নাই।
২- ওকে ভোলা চাপ হবে রে।
- কুল ম্যান। শ্যামাসংগীত শোন।
'ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয়'
২- তোর কাটলো কি করে বললি না।
- আমার আসলে সাড়ে উনিশটা গার্লফ্রেন্ড। কাকে ছাড়ি, কাকে ধরি এই করতে করতে আসল যে তাকে সময় দিতে পারলাম না। ছাদে গিয়ে এখন তাকে মাঝে মাঝে মনে করি।
২- তুই এরকম **য়া জানতাম না।
- কেন ? কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে **য়া।
২- আরে আমাকেও ধার দে। নাম বল। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। টাইম পাস হবে।
- আনাটমি, ফিজিওলজি....
২- বোকা*দা, **কির ছেলে
- আর কিছু ।
২- তোর পারমানেন্ট এক্স গার্লফ্রেন্ডটা কে শুনি যাকে ছাদে গিয়ে মনে করিস।
- ( নাকে সর্দি টেনে মুখটা কাঁচুমাচু করে) গান।
২- *ওড়া, দাঁড়া !! তোকে আজকে কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখাবো।
- মারিসনা ভাই। এইতো চেহারা। মারলে আর কিছু থাকবেনা। ভাই ইম্পোটেন্ট হয়ে যাবো মাইরি।
২- আচ্ছা মারবো না, এদিকে আয়। তুই হারামি আছিস।
- হ্যাঁ, এটা ঠিক। তোকে একটা কথা বলি- লাইফটাকে টার্গেটে ফিক্স কর। নিজেকে ভালোবাস। নিজের মেরুদন্ডটা শক্ত কর। বি হনেস্ট টু ইউরসেল্ফ।
২- হ্যাঁ কিন্তু যদি ভালোবাসা নাই থাকে, কোথায় শান্তি পাবো, কোথা গিয়ে। কেউ তো আমার রেজাল্ট মনে রাখবেনা। হ্যাপিনেস তখনই বাস্তব যখন সেটা সেয়ার করা যায় নিজের মতো কারোর সাথে।
- হ্যাঁ এসবই ঠিক কথা। ভালো-খারাপ সব দৃষ্টিভংগির ব্যাপার। সবাই পরিস্থিতির স্বীকার।কিন্তু ভেবে বল ধর তোর একটা মনের মত বউ হল, সে তোকে ছাড়া আর কাউকে চেনেনা। তারপর ৫০ বছরে দুম্ করে মরে গেল।
২- হাট্ বা*। তুই কি নিষ্ঠুর ভাবে কথা বলিস।
- না কথাটার উত্তর দে। যদি এরকম হয় বাকি জীবনটা তুই কি করবি ? তোর তো বউএর সাথে ঝুলে থাকা অভ্যেস।
২- নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখবো।
- হে বালক, এই অল্প বয়সে তুমি নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে পারছো না, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছো। বন্ধুদের সাথে মদ খেয়ে কান্না করছো। তখন তো কেউ থাকবেনা। কি করবেন আপনি রাজা ?
২- ভেবে দেখিনি।
- অতএব একজন মহাপুরুষ বলিয়াছেন - নিজে বাঁচতে শেখো। নিজেকে ভালোবাসো। নিজে হাসতে শেখো। এতে কিক আছে।
২- তোকে আমি বুঝতে পারিনা। কখনো মনে হয় তোর মত ইমোশনাল ফুল আর কেউ নেই, কখনো শালা তোর মত কাঠখোট্টা ড্রামাবাজ আর কেউ নেই। তুই এত কম্পলেক্স। বাই দা ওয়ে, মহাপুরুষটা কে ?
- আপনার সামনে হাজির।
২- তুই হারামি আছিস, হনেস্ট হারামি।
(দুজন হাসতে লাগলো হা-হা করে।)
২- তুই কখনো বোকা হসনি ?
- হ্যাঁ, বহুবার, যতবার বায়াসড্ হয়েছি বোকা হয়েছি। যারা কবি, চরিত্র সৃষ্টি করে তাদের নিউট্রাল থাকতে হয়। তবেই সব কিছু চোখে পড়ে। কোন চরিত্রের উপর বায়াসড্ হলেই তারা পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। ঠেকে শেখে।
২- আমরাও তো তাই।
- ইয়া, উই অল আর পোয়েটস্। রিয়েলি। কেউ লেখে , কেউ পারেনা।
২- ওর যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়, অন্য কোন প্রেম করে আমি ছেড়ে দেবোনা।
- ওয়েট, ওয়েট। এটা কেন ? তুই ওকে ফিরে পেতে চাস? না, কিন্তু চাস যে ও তোর জন্য সারা জীবন বসে থাকুক হা-পিত্তিশ করে।
২- না ঠিক তা নয়।
- দেখ ভাউ, মেয়েদের দুনিয়াটা আমাদের থেকে আলাদা। নিউট্রাল থেকে ভাবিস। আমি এই দাবী করবোনা ওদের আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি, কিন্তু ওদের দুনিয়াটা আমাদের মত নয়, এটা বুঝি। তোর না পোষালে একা থাক। ইটস্ সো সিম্পল।
২- একা থাকা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
- তাহলে মেনে নিতে হবে।
২- কি মানতে হবে শুনি, যে আমায় খুঁটি করে ঘাস খেয়ে বেড়াবে চারিদিকে। জাস্ট ফিল লাইক স্পাইনলেস।তারপর বেটার পেলেই টা টা।
- তোর দৃষ্টিভংগি থেকে ঠিক এটা। কিন্তু ওদের দিক থেকে ভাবলে অন্যরকম।
২- কিরকম শুনি।
- দেখ এটা তো মানিস, মেয়েরা আছে বলেই স্বপ্ন আছে, নাহলে পৃথিবীটা শুধু হার-জিত, আর যুদ্ধে ভরে যেতো।
২- ওইসব বাতেল না দিয়ে কাজের কথায় আয়। গুড ফ্রেন্ড, বেস্ট ফ্রেন্ড, স্পেসাল ফ্রেন্ড, ভাইওয়ালা ফ্রেন্ড। এইরকম কত সার্কেল। তারপর একজন গান্ডু বড়লোক দেখে বিয়ে করবে। ছেলেরাও সেরকম গান্ডু হয়।মেয়েদের মতো কমপ্লিকেটেড ছকবাজ মিথ্যেবাদী খুব কম দেখেছি। মিথ্যে বলে ফাঁদে ফেলে। যখন দেখে ছেলে পুরো ফেঁসেছে জাল গোটাতে থাকে। সবাই এক।
- হ্যাঁ তোর দিক থেকে তুই ঠিক। ওরাও ওইভাবে ছেলেদের ভাবে। আসলে মেয়েদের দুনিয়া ভালোবাসাতে ভরা। ওরা ভালোবাসা চায়। যত চায় চাহিদার শেষ নেই। একজন থাকে যাকে সবকিছু দিয়ে ভালোবাসে। বাকিদেরও ভালোবাসে। বিভিন্ন ভাবে। এটাকে ছেলেদের দৃষ্টি থেকে দেখলে ওরকমই লাগবে। মেয়েদের সিক্সথ সেন্স, পলিটিক্যাল সেন্স প্রখর হয়। কিন্তু সেটা ভালোবাসার স্বার্থেই কাজে লাগায়। তোর না পোষালে থাকিসনা। ওদের সাথে খেলিস ও না। স্টে অনেস্ট টু ইউরসেল্ফ। কিন্তু তার জন্য সে বিয়ে করবে, না প্রেম করবে সেটা তোর ভাবার কথা নয়। মেয়েদের সমাজে থাকতে গেলে ভালোবাসা, সিকিউরিটি দরকার।যার কাছে ভালো পাবে তার কাছে যাবে। এতে নিউট্রাল দিক থেকে ভাবলে দোষের কিছু তো নেই। তাকে ছেড়ে তুই আবার একজনের সাথে কথা বলছিস। এ ও কম বেশি একই হবে।
২- সমাধান কি?
- নো সমাধান। হয় চক্রবূয়হ থেকে বেরোতে হবে। নাহলে দিল্লীকা লাড্ডু।
২- আমার সব গুলিয়ে গেলো। এভাবে ভাবলে তো আজকের যুগে হনেস্টলি কাউকে ভালোবাসা চাপ।
- ভালোবাসাই যদি তোর জীবনের লক্ষ্য হয় তাহলে যাওয়া - আসার দরজা খোলা রাখো, কিন্তু মাঝে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দিওনা। তা না হলে সব দরজা বন্ধ করে বিন্দাস থাকো। এখন ফেসবুক হোয়াটসাপের যুগ। মেয়েরা আপারহ্যান্ড তো নেবেই।একটা সময় ছেলেরা মেয়েদের ঝি-চাকর ভাবতো। এখন সব কিছু এত চাইলেই পাওয়া যায়। আগেকার যুগ আর নেই। এটা মেয়েরা করে কম- বেশি। ছেলেরাও করে তাল মিলিয়ে। তার মানে মেয়েরা অন্য কারো সাথে বিছানায় হয়তো শোবেনা। খুব লিবারেল না হলে। সেটাও ভালোবাসার স্বার্থে। এসব মেনে নিতে পারলে সিরিয়াস রিলেশনে যাও।

এর কিছু পর তারা নিজের ঘরে ফিরে এলো। দ্বিতীয়জন অবচেতন মনে ভাবলো - নিজেকে খুব চালাক ভাবে, ভাবছে আমার কথা সব বের করে নিলো। আসলে আমিই ওর কাছে বলে সব হাল্কা হলাম।
প্রথম জন অবচেতন মনে ভাবলো - আগন্তুক, তুমি যতই চেষ্টা করো, প্যাচ আপ আর করাতে পারবেনা। আমি এখানে সিংগেল বসে, আমার রুম-মেট আমায় বাদ দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা করবে, এসব আমার সহ্য হয়না। আগন্তুক দুজনের মনে চলা আরো হাজার রকম স্রোতকে দেখলো। তারপর হেসে বললো - ভাইলোগ এলাম।
১- আচ্ছা ভাই ( আয় বা**দ)
২- হ্যাঁরে ( সত্যি তুই আমার বন্ধু)
দশ বছর পরের কথা। আগন্তুক ওখান থেকে বেরিয়ে এখন তার গ্রামের স্কুলটায় বাচ্চাদের সংগে লুকোচুরি খেলছে। সে চোর। বাকি বাচ্চাগুলো লুকিয়েছে। একটা বাচ্চা দেখলো, বস্তা চাপা দিয়ে হাসছে খিল খিল করে। তাকে চেপে ধরতেই ধরা পড়েও খিল খিল করে হাসতে লাগলো। একটা কথাই মাথায় এলো। চালাকদের বোকা বানানো যায়, বোকাদের বোকা বানাবে কি করে ? এরা বোকামি করেও হাসে। সে ও হাসতে লাগলো। এরপর বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলো খাল পাড়ে। ছিপ ফেলে মাছ ধরা শেখাতে লাগলো। একটা একটা মাছ ধরছে। আর নাম্বার গোনা শেখাচ্ছে।
এর বেশ খানিকটা দূরে একটা বাড়িতে বাড়ির কর্তা গিন্নীকে বললেন -
কিগো বাবু কি এখনো সেই পাগলা-চন্ডী ডাক্তারটার সাথে ঘুরছে ?? তাকে আনবেনা?
গিন্নী কর্তাকে বললেন - থাকনা ওখানে। ওখানে খায়-দায় ভালোই তো থাকে। এইটুকু বয়সে ছেলেটা কত কিছু বলে।
কর্তা বললেন - চলো আমরা ঘরে যাই।... ডাক্তার কি বলছিলো, পরের মাস থেকে দুশো টাকা ফিজ নিয়ে দেখবে। শালা কি হারামি মাইরি। নিজের পপুলারিটির স্বার্থে এসব বাচ্চা পড়ানো।
- হ্যাঁ, সেদিন বললাম, আপনি মানুষ না হারামি ? নির্লজ্জর মত বললো - হারামি।
'কাকে নিয়ে কথা কইছিস, হ্যাঁ ? ডাক্তারকে নিয়ে কিছু বললি মুখ ভেংগে দিব '
পাশের ঘর থেকে ডেকে উঠলো কর্তার মা।
- 'কেউ না মা।'

Wednesday, May 11, 2016

অতীতের কল্পনা, কল্পনার অতীত - সব চরিত্র কাল্পনিক

গল্প ১.
কিছুক্ষণ আগেই বিছানায় নিজের স্বামীর বাহুডোরে বাঁধা ছিলেন সংযুক্তা দেবী। হঠাত দম বন্ধ হয়ে এল। হাতটা সরিয়ে এপাশ ফিরে শুলেন তিনি। আজ সারাদিন কম পরিশ্রম হয়নি। সকাল থেকে রান্নার মাসির উপর তদারকি করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করা । ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করে স্কুলবাসে তুলে দেওয়া। নিজের অফিস। সেখানে হাজার ঝামেলা। তারপর আবার ফিরে..... উফ্, জীবনটা নারী হতে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে গেছে। এভাবে চলতে পারেনা।
- কিগো এদিকে ফিরবেনা ?
স্বামী ডাকলেন।
না সাড়া দেওয়া যাবেনা। ঘুমানোর ভান করলেন। কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষা করলেন জেগে কিনা। না ঘুমোচ্ছে, ঘুমোক। উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমে ফ্রিজ থেকে জল খেলেন। ফেসবুকটা খুললেন। এইতো অনলাইন। মেসেজ পাঠাই।
- হাই, কি করছেন ?
- ভাবছি।
- কি ভাবছেন?
- কি ভাবা যায় তাই ভাবছি।
(এই তো আজকে এর সাথে একটু ভাঁটানো যাক)
- আজ কোন কবিতা লেখেননি। পাঠান না। পড়ি।
- পাঠাতে পারি, যদি সত্যি বলেন।
- জিগান।
- এই মাঝরাতে অন কেন ? আপনি তো একজন বিবাহিত নারী।
- না আমি একজন মেয়ে। একটু ভালোবাসা, ভালোথাকার খোঁজে এসেছি। আপনার না পোষালে না কথা বলতে পারেন।
- আচ্ছা...
- সরি, সরি সরি..প্লিজ.. ভুল হয়ে গেছে। আমায় তো কেউ ভালোবাসেনা।
- এই কথাটা হল টোপ । ছোটবেলা থেকে খেয়ে এসেছি।
- পাঠান না। আমার জন্য একটা গান লিখবেন বলেছিলেন কোথায় শুনি ?
- নিজের বউএর জন্য লিখবো।
- আপনি বিয়ে করলে আমায় জানাবেন। পরের দিন পেপারে হয়তো আমার ছবি দেখবেন।
- সেকি বিয়ে করতে পারবোনা তা'বলে।
- কেন, বিয়ে করবেন? মেয়েরা খুব বাজে হয়।
- আমি একজন নারীকে খুঁজেছিলাম। মেয়েকে তো খুঁজিনি।
- নারীর মধ্যেই মেয়েবেলা লুকিয়ে থাকে। কেউ সেটা বলে, কেউ বলেনা।
- তাহলে উপায় ?
- আমি রোজ মাঝরাতে এসে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। তার বদলে আমার জন্য লিখতে হবে। আমি ভাববো আমায় ভেবে লিখেছেন। ভেবেই ঘুমে চোখ বুজে আসবে।
- খুব মজা না ? আমি কাউকে ভেবে লিখিনা।
- আশ্চর্য একজন সুন্দরী মেয়ে যদি এভাবে ভাবে আপনার কোন অসুবিধে আছে ? আপনার তো ভাও খাওয়ার কথা।.... আপনি কিন্তু আমার থেকে খুব বেশি লম্বা হবেন না।
- হুম কেন ?
- বাহ্ তাহলে ঘাড় ব্যথা হবেনা। কি মজা।... কি হল, চুপ। আমায় দুশ্চরিত্রা ভাবছেন তো?
-না আপনি একজন মা।সেরকম ভাবার সাহস নেই। আমায় ক্ষমা করবেন। আমার কথা বলা ভুল হয়ে গেছে আপনার সাথে।আপনার সংগে আর কথা বলা যাবেনা।
- বলবেন না,আমিই আপনাকে পাঠাবো মেসেজ। একদিন না একদিন একা লাগলে ঠিক উত্তর দেবেন।
- কি ব্যাপার বলুন তো? প্রেমে পড়লেন নাকি?
- প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,
কে কখন ধরা পড়ে কে জানে।
- দেখুন আমি কারো বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে চাইনা।
- না আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু .... কিছু বোঝেন না ??
- আমায় ভালোবাসলে সেটা ভুল করেই ভালোবাসা হয়। গোলকধাঁধায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। আর কারো জীবনে কষ্টের কারণ হতে চাইনা। এলাম। আপনি যাতে আর মেসজ করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করলাম।
- আপনি ছেলে নন।সেলফিস।গোঁয়াড়।
- হ্যাঁ এটা ঠিক।
এর পরের রিপ্লাইটা পাঠাতে গিয়ে দেখলেন মেসেজ ব্লকড।
বিছানায় ফিরে এসে এপাশ ফিরে কাঁদতে লাগলেন। পাশ থেকে কে যেন বললো - একি কাঁদছো কেন ?
- তোমায় খুব ভালোবাসি।
বলে একজনের খাঁচায় বন্দী হল একটা পাখি। খাঁচা আর পাখি দুজনেই কাঁদতে লাগলো। শুধু কারণটা আলাদা।

গল্প ২
নদীর বাঁধে লুংগি পরে বসে বিড়ি খাচ্ছিলো তমোঘ্ন। এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের এই দিকটায় কেউ আসেনা। কি রূপসী আজকের আকাশটা। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এর রূপকে বর্ণনা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলোনা সে। চোখটা বুজে লালনের গান ধরলো - ডুবে দেখ দেখি মন কিরূপ লীলাময়, আকাশ- পাতাল খুঁজিস যারে এই দেহে সেই রয়।
হঠাত দেখলো দুজন মেয়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে।
১- গাও দাদা কি হল, গাও। থামলে যে ?
থতমত হয়ে দুজনের দিকে তাকালো তমোঘ্ন।
আরেকজন বললো - তুমি কাদের বাড়িতে এসেছো ?
- এই তো প্রধানদের বাড়ি।বুঝলি কি করে ? আমি বাইরের লোক ?
২- এখানে তো কেউ মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে বাউল গান গায়না। আর শুদ্ধ বাংলায় কথাও বলেনা।
- বিশাল ব্যাপার। তো তোরাও তো শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছিস।
১- তুমি কি গাঁইয়া ভেবেছো নাকি ? এই যে একে দেখছো কোলকাতায় পড়ে। এবার এম.এস.সি করবে।
- আর তুই ?
১- আমি বিএসসি ফার্স্ট ইয়ার।
এরপর দুজন মন্ত্রমুগ্ধর মতো তমোঘ্নর কথা, গান শুনছিল। কখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে।
১- উঠলে যে।
- সমস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যে নামলে সব লেন-দেন ফুরিয়ে সব পাখিকে ঘরে ফিরতে হয়।
২- বনলতা সেনের সাথে কথা বলবে ?
- না নিজের সাথে। এলাম রে।
তমোঘ্ন নাচতে নাচতে হাঁটছিল, পেছন থেকে চোখগুলো বড় বড় করে দেখছিল দুজন।

গল্প ৩
প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই বৃষ্টিতে বাড়ির পাশের পুকুরটায় সাঁতার কাটছে একটা ছেলে। দোতালার জানালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখছিলো শর্বরী। কখনো শুধু ছেলেটাকে, কখনো শুধু পুকুরটাকে, কখনো ছেলেটার শরীরের বিভিন্ন অংশকে... বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। পেটের ভিতরে কেমন যেন গুড় গুড় করছে। তারই দাদার বন্ধু। এসে চুপচাপই ছিল। হঠাত বৃষ্টি নামতেই নেমে গেল ঝাঁপিয়ে সামনের পুকুরটায়। মাথায় ছিট আছে। কি যে করবে এখন। মাথাটা এবার কেমন এলোমেলো লাগছে। না বুঝতে দেওয়া যাবেনা। খেতে বসলো সবাই।
চাঁটাইটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে বসলো শর্বরী - আমি আজ দাদার পাশে বসবো।
দাদা কপাল কুঁচকে তাকালো।
বুঝে গেলো নাকি ? না আবার খাচ্ছে।ওরে গাধা, একবার তাকা এদিকে। ধূস। কি বলা যায়।
- দাদা, বলছি এখান থেকে চলে গেলে আমাদের মনে রাখবে ?
- না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ভুলি।
রাগে গোটা গা-থেকে তাপ বেরোতে লাগলো। আর মুখ থেকে একটাই কথা বেরোল -
হার্টলেস।

Monday, May 9, 2016

তৃতীয়

বিয়েবাড়ি। চারিদিকে হই-হুল্লোড়। আলো, নাচ-গান, হাসি-ঠাট্টা, সানাই...
খুব কাঁচা ভাষায় - যেখানে সবাই মূলত: খাওয়া-দাওয়া, নিয়ম কানুন নিয়ে চিন্তা করে আর দুজন প্রথম রাতের রোমান্স নিয়ে।
এর উল্টোদিকে অন্য আরো কিছু গল্প থাকে।
একটা ঘর যেখানে একটা মেয়ে সবার আড়ালে কাঁদতে থাকে।
অন্য আর একটা ঘরে কোন ছেলে পড়তে পড়তে টেবিল-ল্যাম্পটা হঠাত নিভিয়ে দেয়। অন্ধকারে বসে দুই প্রান্তে দীর্ঘনি:শ্বাস পড়ে।
দুজনের মনেই তখন বেশ কিছু ডিফেন্স মেকানিজম কাজ করছে। যেটার শেষ হবে rationalisation দিয়ে। 'যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে।' ইত্যাদি ইত্যাদি। যারা নিজেকে বোঝাতে পারবেনা কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে পালাতে চাইবে। কেউ প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে তৈরি হবে ওই বিয়েটা ভাংগার জন্য ছক কষার।
মুদ্রার এরকম দুটো পিঠ হয়। কিন্তু পৃথিবীতে এর বাইরেও এক প্রকার প্রাণী থাকে। এরা ইস্পাত দিয়ে গড়া, ধূসর চোখএর তারা। যত বেশি এদের পোড়ানো হয় তত মজবুত হয়। আরো বেশি, বড় কিছুর জন্য তৈরি হয়। বাকিরা এদের পাথর বলে থাকে। যারা উঁচুতে ওড়ার জন্য তৈরি হয় তাদের ভূমিকম্প হল কিনা ভাবলে চলেনা। এক একটা আঘাত আসে। আর এদের মুকুটে এক একটা পালক যোগ হয়। সেই পালক গুলো প্রচন্ড উজ্জ্বল হয়। এতটাই যে কোন খাঁচা তাদের ধরে রাখতে পারেনা।

Friday, May 6, 2016

নীহারিকার জন্ম

সন্ধ্যেটা ঢলে পড়েছে এলোগায়ে বাড়িটার চারিদিকে। গেটের কলিংবেলটা বেজে উঠতেই বাড়ির কুকুরটা ডেকে উঠলো। গেট খুলে দিলেন একজন ভদ্রমহিলা।
গেটটা পেরিয়ে কুকুরটাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলেন আগন্তুক। ভদ্রমহিলা গেট লাগিয়ে চলে গেলেন। এরপর ঋজু দেহে হেঁটে নিজের ঘরে ঢুকলেন
ডা: অবচেতন চ্যাটার্জী। ঘরের এক কোণে এসে পড়ছে জানালা দিয়ে পড়া নিভতে বসা আলো। ঘরটায় চারিদিকের দেওয়াল বইএর আলমারি দিয়ে সাজানো। একদিকে রাখা একটা পিয়ানো, গোটা ছয়েক গিটার, একটা বেহালা আরো নানারকম বাদ্যযন্ত্র। তার পাশে রয়েছে একটা ক্যানভাস। টেবিলে ক্লান্ত শরীরে বসে সামনের দেওয়ালে নিজের হাতে লেখাটার দিকে তাকালেন। লেখা 'ওয়ার্ক ইজ ওয়ারসিপ' । দেখে হাসিমুখে তার থিসিস লেখা শুরু করলেন । হঠাত ঘরটার দরজার কাছে একটা আওয়াজ হল। ওদিকে না ফিরেই একটু ভারী গলায় বললেন - 'কে বউমা? আমায় কিছু খেতে দিতে হবেনা। আমি নিজে করে খেয়ে নেবো।'
- জ্যেঠু, আমি।
চমকে ফিরে তাকালেন তিনি। তার ভাইপো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে।
সস্নেহে বললেন- আয়, ভেতরে আয়।
ভাইপো টলতে টলতে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
- হুম্ ক পেগ ??
ভাইপো উত্তরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
- কেন শুধু বোকা বা শুধু চালাক হলাম না জ্যেঠু, এ দুনিয়াটা খুব খারাপ, খুব।
- ভালো, খারাপ তো আপেক্ষিক, তাতে তোর কি?
- সব তো তোমার কাছে শিখেছি। তুমি শিখিয়েছ নীতি, আদর্শ নিয়ে চললে নাকি অনেক কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এ তো দেখছি উলটো। যারা এসব বিসর্জন দেয় তারাই বেশি বেশি সুখ ভোগ করে। কি লাভ ?
- লাভ এখন নয়, পরে বুঝবি। প্লেজার প্রিন্সিপ্যালে চলে সাময়িক সুখ আসে, শান্তি আসেনা। তাছাড়া দোষ তো তোরও আছে।
- কিসের দোষ?
- চুরি করা অপরাধ, কিন্তু চোরের সামনে দামী জিনিস ফেলে রেখে প্রলুব্দ করাও তো অপরাধ। আর সবসময় নিজেকে বোকা বানিয়ে রাখবি। নিজে কতটা চালাক কাউকে ধরতে দিবিনা। কাউকে বোকা বানাবিনা। নিজেও বোকা হবিনা।
- এসব নীতি আঁকড়ে তুমি কি পেয়েছ সারা জীবনে?
- হাসি। এই হাসিটা নিয়ে একদিন চোখ বুজবো যেদিন উনি চাইবেন।
- আমার আর বেঁচে থেকে কি লাভ ?
- নিজের ইচ্ছেয় যখন জন্মাসনি, নিজের ইচ্ছেতে মরবি কেন শুধু শুধু। মরতে তো সবাই পারে। বেঁচে দেখা।
- Dont you feel alone in your life ??
- কোথায় একা ? এত কাজ, এই পিয়ানোটায় হাত পড়লেই তো কিছু মনেই থাকেনা। যখন মনে ফূর্তি জাগে ওদের সাথে কথা বলি, যখন মনে বিষাদ জাগে ওদের সাথে কথা বলি। মনে হয় এখনো যুবক। আর বুড়ো বয়সে কি হবে ভাবিনা। এই পিয়ানোটাই অন্ধভাবে সুর বাজাতে শেখায়, আবার মাঝে মাঝে বেসুরো লাগলে চোখটা খুলতে হয়। নাহলে ভুল সুর চলতেই থাকবে। ঠিক করে নিই।
- আমিও একা থাকবো।
- একা থাকা খুব কঠিন সাধনার ফসল। চেষ্টা করতে পারিস। তবে জীবন-দর্শন যদি মজবুত হয় আর একটু সুর সচেতন হোস একা থাকার মত শান্তিপূর্ণ আর কিছু নয়।
- তুমি নিশ্চয়ই কাউকে ভালোবেসেছিলে, শুনেছি বাবার কাছে যে তোমার সাথে কথা না বলতে... বললে তোকেও পাগলভোলা বিবাগী বানিয়ে দেবে। এখনো ভোলোনি?
- হ্যাঁ বেসেছি তো। নিজেকে, নিজের নীতিকে। এখনো ভুলিনি। আমায় তুই কি ভাবিস, পাগলভোলা ?
- পৃথিবীতে একমাত্র তোমার সাথে কথা বলে শান্তি পাই। মনে কোন দু:খ থাকেনা।
- কবি বলেছেন-
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বহুকাল হল,
সে কালের কাছে তোমার আমার চেতনা কত ক্ষুদ্র জোনাকির মত,
তবু তুমি সেই আণবিক দু:খের গান গাও।
মুখে হাসি ফুটে উঠলো দুজনের মুখে। তারপর জ্যেঠু উঠে গেলেন পিয়ানোর সামনে। পাশে বসলো ভাইপো। নক্ষত্ররা মহাকাশে অনেক রকম সুর তৈরি করে। শিল্পীরা সেই নক্ষত্রের সুর গুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। সেদিন পিয়ানোতে কিছু নীহারিকার জন্ম হয়েছিল।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...