Friday, December 16, 2016

E-go

এক যুগল বসেছিল ঢাকুরিয়া লেকের ধারে একটি বেঞ্চে। কয়েক মাস পরের দেখা। আমি সাদামাটা মানুষ হাল্কা চাদরটা মুড়ে সামান্য একটু
দূরে রোদ পোহাচ্ছিলাম।
দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যালাপ শুনে লোভ সামলাতে পারলাম না। কান পাতলাম।
মেয়েটি বলছিল - তুমি কে আমাকে বলার আমি কার সাথে ঘুরতে যাব না যাব। আমি কার সাথে ফ্লার্ট করবো না করবো। আমার দমবন্ধ লাগছে। সত্যিকারের ভালোবাসায় এটা থাকেনা। ফেসবুকে দেখবে একটা পোস্ট করেছি। সত্যিকারের ভালোবাসার ক্রাইটেরিয়া কি ? দে ক্যান ফার্ট ইন ফ্রন্ট অফ ইচ আদার। এতটাই বন্ধুত্ব থাকবে।
ছেলেদের ইগো জিনিসটা অদ্ভুত একটা জিনিস। একটা ৬-৭ ইঞ্চির বেলনাকার যন্ত্রে রাখা থাকে। যন্ত্রের সংকেতে লাফিয়ে উঠলো ছেলেটি।
মানেটা কি ? তোমার ওই বন্ধুগুলো তোমায় জড়িয়ে দাঁড়ায়। কোথায় কোথায় টাচ করে ? এখানে, এখানে ? তোমাদের কাছে তো তাহলে যার তার সাথে সেক্স করাটাও তো কোন ব্যাপার নয়। আমি যদি না থাকি বাড়িতে.. কিছুই কোন ব্যাপার নয়। রোজ রাতে একবার ফার্ট মানে ট্রু লাভ।
মেয়েদের ইগো হল আরো বিপজ্জনক। দাঁত চেপে বললো
- মুখ সামলে কথা বলবে। তোমার মত একজন ছোটলোক কে.. তুমি শিক্ষিত ?
- তোমার থেকে বেশি। অন্তত প্রত্যেকটা সম্পর্ক কার গুরুত্ব কতটা সেটা বুঝি। তোমার কাছে আমি কি আমি জানিনা, আমার..
- আমার কাছে তুমি জাস্ট একটা ভুল।
- তোমার যোগ্যতা নেই আমার জন্য। কোনদিক থেকেই। কত মেয়ে তো ছিল। আমি তো কারো সাথে করে নিতেই পারতাম। আমার জন্য যোগ্য নয় তুমি। তুমি নতুন কাউকে পেয়ে এসব বলছো। আমি তো কই করিনি এরকম। আশা করিনি আমি এগুলো তোমার কাছ থেকে।
- ওকে, ভুল হয়ে গেছে। এত আমি আমি। সো অফ। আর নিতে পারছিনা। ইটস বেটার টু এন্ড হেয়ার।জাস্ট গো টু হেল।
- আই আম ইন হেল। বাই।
দুজনে বেঞ্চ থেকে উঠে দুদিকে চলে যাচ্ছিল। ভাবলাম একটু মজা করি। ডাকলাম দুজনকে। এই যে বাবু মশায় আর মেমসাহেব এদিকে একটু শুনবেন। আপনারা কিছু একটা ফেলে যাচ্ছেন।
দুজনেই তাকিয়ে আমার কাছে এল।
'কোথায়? কি বলুন তো '
মেয়েটি বললো।
ছেলেটি বললো - আমার মেমোরি খুব সার্প । আমি ভুলিনা এরকম।
মেয়েটি বললো - কি ভুলেছি বলবেন তো ?
আমি হেসে বললাম - এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। ই-মল, ই-সপিং, ই-মেল, ই-বুক। সবকিছুই। ই করে করে ই-গো এত বেড়ে গেছে মানুষের, আপনারা আশেপাশের ছোটখাটো মানুষের অনুভূতি, স্মৃতি গুলো ই-গনোর করে যান। এত আমি আমি না করে যদি তুমি তুমি করতেন আর কয়েকটা মিনিট আগে আপনাদের দুজনকে দুদিকে চলে যেতে হত না। এত মেমোরি আপনাদের দুজনের সব থেকে জরুরি জিনিস বেঞ্চের তলায় ফেলে এসেছেন। নেট অফ করে খুঁজে দেখুন। ওই বেঞ্চের তলায় দেখুন।
আমি দেখালাম আংগুল তুলে।
সন্ধ্যেটা নেমে এসেছে। হালকা হাল্কা ঠান্ডা পড়ছে। লেকের ওপারটা কুয়াশায় দেখা যাচ্ছে না। দুজন বেঞ্চের তলায় মোবাইলের আলো জ্বেলে খুঁজতে লাগলো একটা জরুরি জিনিস।মেয়েটার হাতে পেল একটা ক্যাডবেরি। ছেলেটা পেল একটা গোলাপ ফুল।
দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে একটা দীর্ঘনি:শ্বাস ফেললো।
ছেলেটা বললো- তোমার আসলে ক্যাডবেরি ভালো লাগে, কোনদিন কিনে দিইনি। তাই..
মেয়েটা বললো - তোমায় কোনদিন গোলাপ দিয়ে প্রোপোজ করিনি। তাই.. হাতে লোকানো ছিল। এমন সব কথা বললে ফেলে দিলাম।
দুজনে আবার একসাথে দীর্ঘনি:শ্বাস ফেললো। ফিরে তাকালো আমার দিকে।
'একি উনি কোথায় ? এখুনি তো এখানেই ছিলেন। '
দুজনে এদিক ওদিক তাকালো।
চারিদিকে তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো মাথায় সাইরেন বাজাচ্ছে দুজনের।
মেয়েটি বললো - আমি জানি উনি কে ?
ছেলেটি কপাল কুঁচকে বললো - কে ? চেনো ওনাকে? হা হা, তাই তো বলি কে, এত ডেকে কথা বলছে, চেনা কেউ ছাড়া এত ভালো কথা কেউ বলেনা। কে বলোনা?
- আমাদের ভালোবাসা ।।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...