Sunday, January 30, 2022

প্রয়াত প্রহ্লাদ চন্দ্র প্রধানের ঠিকানায়


 নয়নসম্মুখে তুমি নাই,/ নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই;/আজি তাই/শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
  /আমার নিখিল/তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।



প্রাণাধিকেষু,

তোমাকে দিয়েই ছোটবেলায় আমার চিঠি লেখার শুরু আর তোমাকে দিয়েই আজ শেষ। 

আমার জীবনে অনেক মানুষের অনেক রকম অবদান রয়েছে। কিন্তু যে মানুষটি সাহিত্যে আমায় হাতে ধরে চলতে শিখিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, একটা সময় অবদি অনবরত উৎসাহ জুগিয়ে গেছে তিনি আমার মা র বাবা- তুমি, দাদু৷ ৩০ জানুয়ারি কাল রাতে তুমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে। 

যেহেতু আমি ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট এ প্রায় সাড়ে চার বছর ডাক্তার হিসেবে কাজ করছি, মৃত্যু আমার মনে আর দাগ কাটেনা৷ শেষ দিকে তুমি একেবারেই শুনতে পেতেনা। আমায় চেঁচিয়ে বলতে হত কানের কাছে গিয়ে।

 তোমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম," দাদু তোমার এত রোগ, কষ্ট হয়না? "

তুমি বলেছিলে - আমি সত্যিকে জেনেছি। আমি মুক্তির আলো দেখতে পেয়েছি। আমার আবার কিসের কষ্ট!? 


তুমি আমায় শিখিয়েছ - 

ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগৎ্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্‌।।


তুমি সবাইকে আলাদা ভাবে পড়াতে আর আমায় আলাদা ভাবে। আমার সাথে তুমি আলোচনা করতে। এই কবিতা টা নিয়ে তোর বিশ্লেষণ কি? আমি আমার মত বলতাম। তুমি সেটাকে সমালোচনা করতে যুক্তি দিয়ে। আমিও পালটা দিতাম। 

আমি জানিনা আমি কিসব লিখছি। কারো মৃত্যুতে এতটা বিহ্বল নিজেকে লাগেনি। আমার যে উপন্যাস লেখার প্ল্যান ছিল সেখানে তোমাকে উত্সর্গ করার কথা ছিল। তোমাকে পড়ানোর কথা ছিল। সেটা আর সম্ভব হলনা৷ 

কিসব লিখছি। 

 অথচ আমি মা কে ২১ শে ডিসেম্বর,'২১ রাত 10.31 মিনিটে মেসেজ করেছিলাম -

"দাদু কেমন আছে? আমার দাদুকে খুব মনে পড়ে.. আর কাউকে না.. শুধু দাদুকেই.. He was my best teacher.. আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি দাদু এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাক.. এই অবস্থায় দাদুকে দেখতে যেতে চাইনা.. ওনাকে তোমরা কেউ চেনোনি .. আমি চিনেছি.. এত জ্ঞানী একজন ব্যক্তি দাম পেলেন না.. আমি ওনার হয়ে দাম আদায় করে নেবো পৃথিবীর কাছে"

মেসেজের কারণ ছিল, আমি হঠাৎ ই  মনশ্চক্ষে দেখতে পাই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ আর বলছ - আমি তো বাংলায় এম এ হয়েও দাম পেলাম না, তুই পারবি। 

তার ঠিক একমাস পরে তুমি ঠিক চলে গেলে। এতগুলো ক্রনিক রোগ নিয়ে এত বছর কষ্ট পেয়ে আজ সব কষ্টের সমাপ্তি। আর "সমাপ্তি" নিয়ে কার সাথে আলোচনা করবো? রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এত পড়াশোনা আর কার আছে? অদ্বৈতবাদ, উপনিষদ নিয়ে কে আর আমার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করবে? আজ যে বড় একা হয়ে গেলাম। আমার নামটিও যে তোমার দেওয়া।


তোমার কাছেই আমার ব্রজবুলির পাঠ। "মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান" - তোমার গলায় এখন যেন কানের কাছে শুনতে পাচ্ছি। গীতা নিয়ে তোমার সাথে তোমার ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা বিতর্ক হয়েছে। তোমাকে এই মরদেহে আর দেখে কি হবে? তুমি দাম পাওনি তোমার জ্ঞানের। কারণ আমার দেখা সব থেকে সহজ সরল ভালো মানুষ ছিলে তুমি। এই মরদেহ টা তোমার একটা ছেড়ে যাওয়া পোশাক মাত্র। যার আত্মায়, চেতনায় আমার দর্শনের হাতেখড়ি, তাকে নিয়ে শোক করবো না। তোমার কাছেই শেখা - 


অশোচ্যানন্বশোচস্তুং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে । 

গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পণ্ডিতঃ।। 


বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় 

নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।

তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-

ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥


দাদু, তুমি ইহলোকের এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করে পরমাত্মা কৃষ্ণর সাথে মিলিত হতে চলে গেলে। তোমার সদাহাস্যজ্বল মুখের প্রত্যেকটা কথা আমার মনে থাকবে। দাদুর কাছে আমার আধ্যাত্মিকতার প্রথম পাঠ। দাদু আমায় হাতে ধরে দর্শন এর অন্ধকার পথে সেই ছোট থেকে চলতে শিখিয়েছে। দাদুর আর কোন সন্তান- সন্ততি - পৌত্র বা পৌত্রী দাদুর কাছে এত গুরুত্ব পায়নি, যতটা আমি পেয়েছি। ক্রিয়েটিভ হতে গেলে মনের মধ্যে যে ভয় থাকে, আমার মনের সেই ভয়ের প্রথম অপসারণ করেছে দাদু - সেই বাচ্চা বেলায় যখন আমার বয়স নয়-দশ হয়তো হবে। কান্না কাটি করা আমার সাজেনা দাদু, তাহলে সব শিক্ষা মিথ্যা। আমি খুব ভাগ্যবান আমি অনেক ছোটবেলা থেকে তোমার মত একজন প্রকৃত জ্ঞানী ও দার্শনিক মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। বদলে তোমাকে কিছুই দিয়ে যেতে পারলাম না। তবে আমার মনের ভিতর তুমি সবসমসয় সদাহাস্যময় মুখ হিসেবে থাকবে, পথ দেখাবে। তুমি আমার বন্ধু, দার্শনিক ও পথ প্রদর্শক। তুমি মৃত্যুর চেয়ে বড়। 

তুমি এখন কৃষ্ণর সাথে মিলিত। এই নশ্বর দেহের সমস্ত কষ্ট থেকে তুমি মুক্ত। কি লিখবো আর? ভালো থেকো। 

"তোমারো অসীমে প্রাণমন লয়ে, যতদূরে আমি ধাই।

কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই। "

ইতি 

তোমার সর্বাধিক প্রিয় ছাত্র

****** ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ হরি ওম্ তৎ সৎ ******

কালো গোলাপ

 আমি তো কবেই চুপ করে গেছি,

চুপ করে গেছি একদম চুপ -

কি যে করি, কি যে ভাবি, 

এত অনুরোধ, কাকুতিমিনতি, 

তবুও পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়। 

ক্লান্ত লাগে, 

নোটপ্যাড ভরে ওঠে৷ 

ভেতরে বোবা কান্না ;

আর বাইরে আর কথা বলিনা।

চুপ করে গেছি, একদম চুপ।। 

(৪ঠা জুলাই, ২০২০)

*****



নিষিক্ত নদীর তীরে এভাবেই সন্ধ্যে নেমে আসে,

মুক্ত পাখি বিষাদ-বাসায় ফেরে -

বটের ছায়া রাস্তার আঁধারে মিশে যায়। 

এক না হয়েও তারা এক। 

বৃষ্টি নামে দরজার আড়ালে - 

নীরবে নিশ্চুপে ।।

(২৬ আগস্ট, ২০)


*****



সব নদী সাগরে মেশেনা,
কিছু কিছু নদীপথ তার আগেই শেষ হয়।
বাকিটা পথ শুধু মায়ার বাঁধনে কেঁদে মরে, 
সবাই তাকে সমতল বলে জানে, 
তাছাড়াও সে সজল উপত্যকা। 
সবুজ সমারোহের আড়ালে -
বয়ে যায় বোবা কান্নার ফল্গুধারা।। 

(২৬ আগস্ট, '২০)

*****



এ প্রাণের শেষ নেই কোন,
শুধু এইটুকু জেনো -
যখন ব্রম্ভান্ডের শেষে কোন শরীর রবেনা,
সেইখানে আমি কোন এক গোপন মাত্রার বীজে -
নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ দিয়ে যাবো।
সব ধ্বংসের শেষে একদিন আবার বিগ ব্যাং হবে, 
আবার শুরু হবে সৃষ্টির টিভি সিরিজ ;
ফিউসন এর ফ্যাশনে -
নক্ষত্র এর ভ্রূণ নেবে জরায়ুতে স্থান।
আমি সেদিন ও রয়ে যাবো উজ্জ্বল, অম্লান।।

(২০ ফেব্রুয়ারী, '২১)

*****



মনের কথা বলার অনেক থাকে,
শুধু শোনার লোক নেই,
তাই অন্ধকারে চুপচাপ-
বসে ভাবি,
আসলে সবাই বদলেছে নাকি শুধু আমি? 
এ নিথর মন কাউকে আর ভালোবাসেনা,
তাই দুঃখ পায়না,
আনন্দ পায়না,
ভয় পায়না,
সাহস পায়না।
আমি প্রাণ মৃত। 
জীবিত এক দেহে রক্ত সঞ্চালিত।। 

(৩১ মার্চ, '২১)

*****



সবাই বলে, কেন পালটি খেলে।
যে সমাজে মজা না করলে দুঃখ দাম পায়না,
আবেগ দেনাগ্রস্থ জর্জরিত -
সেমিকোলনের মত ঘুরপাক খায়।
সেখানে পালটানোই ধর্ম।
বেঁচে থাকতে গেলে কখনো নিজেকে মারতে হয়।।

(৩১ মার্চ, '২১)

*****




এত সংগ্রামের মাঝে এ তুচ্ছ প্রাণ-
ভুলে গেছি হাজার অসম্মান, 
সব সুখ শান্তি মিথ্যে নিওনের আলো-
মৃত্যুকেই লাগে আজ সব থেকে ভালো। 
হয়নি সারা অনেক কাজ,
মৃত্যুর অধ্যায় তবু শুরু হোক আজ -
নিজেকে সরিয়ে নিলাম, 
এই বাস্তব পৃথিবীর সকল হিসেব থেকে।
মহাকালের কোলে শেষ নিদ্রা থেকে বিদায় সম্ভাষণ।।

(৩১ মার্চ, '২১)
*****




সেদিন দেখা হয়েছিল কলেজের বন্ধুর সাথে,
জানতে চাইলো - কোথায় থাকিস আজকাল! 
কোন খবর নেই যে তোর। 
আমি হেসে কথা এড়িয়ে গেলাম। 
আমার আজকাল আর কিছু বলতে ভালো লাগেনা। 
হিমালয়ের মত নীরব শীতলতা আমার চেতনাময়,
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর অতল গভীরে হারিয়ে গেছে -
হাজার শব্দ, কষ্ট অব্যয়। 
যখন আমি বলতাম, কেউ শুনতোনা। 
একে একে সবাই ট্রাফিকের আলোর মত পালটে গেছে।
আমি পাল্টালেই শুধু দোষ। 
আমিও মানুষ, 
পালটানো আমার  ধর্ম।।

 (১৭ এপ্রিল, '২১)

*****-



বন্ধু, নারী, স্ত্রী, সহোদর ভ্রাতা -
শিক্ষক, পরিজন পিতা ও মাতা,
মিথ্যাচারে জর্জরিত প্রেমের ভ্রূকুটি,
একলা জীবন একমাত্র সত্যি,
সংসার সম এই যে অন্ধকূপ-
বাকি সব মিথ্যের নানা রূপ।
আসলে যে কেউ নাই, সবাই যে যার, 
কাউকে আর কহিবনা কিছু, 
আপন জগতে আমি একা, 
নিজ অবয়বে শুধু স্রোতে বয়ে যাই৷ 
মিথ্য কথার এই শহরে -
আমি এক সুতোকাটা ঘুড়ি।। 

(২৬ এপ্রিল, '২১)

****



এই আকাশে এত যে তারা,
কোন তারা নিভে যায় একদিন, 
নিরুদ্দেশের মহাকাশে ব্রাত্য। 
কেউ জানেনা, সে তারা
অনেক আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত।। 

(১৭ জুলাই, ২০২১ )
*****

Be a man as still as a mountain, 
No storm can annoy u. 
Open your heart like space,
Though its empty, 
But its vast enough to -
accept trillion stars.
Control your mind like water, 
So it can nourish every soul,
Can take whatever shape , 
Calm and liquid, 
When its necessary , 
It can become a tsunami.
And above all, 
Be innocent like a child, 
So that you love yourself,
That's the only thing that matters.

(5th Sept, 2021)

*****



পাখি যখন ডানা মিলতে ভুলে যায়, তখনই ঘিরে ধরে স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার। কান্নাতে আর চোখ ভেজে না, বলতে চাইলে কথা আসেনা, 
লিখতে চাইলে বেরোয় কিছু -খসখসে চামড়ার মত শীতল শব্দ । আমি কি কখনো ছিলাম? 
আদৌ কি আছি? দিব্যি তো হাসি।
না হেসেই বা কে কি পেলো? তবে যে বলেছিলে পৃথিবী খুব সুন্দর, শীতঘুম ভেঙে শুধু পোকামাকড়ের কান্না শুনি, মনে গেঁথে যায় সাপের ছোবল। লোক দেখানো পালকি তে, 
সহানুভূতি স্বার্থপর ভাবে ফুলশয্যায় মগ্ন। সবাই এক এক করে জানান দেয়, এ পৃথিবীতে কবির কোন স্থান নেই। একসারে দল বাঁধে শেয়াল, শকুন ;
চলে শিল্পীর শবচ্ছেদ।। 

(১৯ ডিসেম্বর, ২০২১)

****


How can I lose you? 
In this world of rubbed glass,
I can still see you
in the mirror image.
In the morning dew, 
U are me and I am you.
You are here for myself,
And for the rest of the world ;
You are Waltz or 
Symphony of Mozart. 
You are fiesta of melodies,
Touching my heart.
You are Shelly ' s verse-
You complete this broken Universe. 
So, how is it possible to lose u ?? 

(২৯ ডিসেম্বর, '২১)


*****


তোমাদের শুধু আমি আমি আমি,
দিনের শুরু থেকে রাতের শেষ অব্দি -
আমি এই, আমি সেই। 
আমি ভালো, সবাই খারাপ।
যে যার চোখে তোমরা এক একজন 
তিলোত্তমা। 
সবাই যদি এত ভালো, 
তাহলে সমাজটা এরকম কালো কেন? 
কেন চারিদিকে তাকালে-
 নর্দমার ড্রেনের গন্ধ বেরোয়? 
মনুষ্যত্ব এর হলোটা কি?
বিবেক, সহমর্মিতা, ভালোবাসা -
স্বার্থের সাথে খাপ না খেলেই কি 
কর্পূরের মতো উবে যায়!? 
মতের মিল না হলে বন্ধুত্বের ইজ্জত থাকেনা।
মানুষ আমার দেখা সব থেকে হিংস্র জানোয়ার।
এই সমাজে কবি হওয়া পাপ ;
ভালোবাসা গর্হিত অপরাধ। 

(2nd Feb, 22)

দ্বিতীয় অধ্যায়

যে ছেলে বা মেয়েটি আজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, তারা এই ভরসাটুকু থেকেই হচ্ছে যে একে অপরের কাছে সুখ, শান্তি, পারস্পরিক সম্মান রেখে জীবন কাটাবে একসাথে । আসলে কি সবসময় তাই হয়?

সুখ ভালোবাসা থেকে আসে। ভালোবাসা আসে ভালো ভাষা থেকে। আসলে কি তা হয়?
শান্তি পেতে দুজনকে একসাথে অশান্ত হতে নেই। আসলে কি তা হয়?
পারস্পরিক সম্মান!? থাক্। আর বললাম্ না।
একটা সময় পরে একটা পক্ষ বুঝেই যায়, তার পক্ষে অন্য পক্ষের মত অসম্মান বা দোষারোপে অংশগ্রহণ করার এত শক্তি নেই। তাই সে চুপ করে যায়। সে চুপ করে গেলে অন্য পক্ষ আরো গলার আওয়াজ বাড়ায়। এতে ভালোবাসা বাড়ে কিনা জানা নেই,তবে দুজনের মানসিক দূরত্ব বাড়ে। একদিন সুতো কেটে যায়।

এক্ষেত্রে এক অদ্ভুত প্যারাডক্স দেখা যায়, এরেঞ্জড ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে ডিভোর্স এর রেট কম হয়৷ আবার ভালোবেসে বিয়ে করাতে স্ট্যাট খুব খারাপ। এরেঞ্জড বনাম লাভ ম্যারেজ নয়, আমার এখানেই আজকের লেখা যে কেন? কেন যে দুজন মানুষ ভালোবেসে জীবন কাটাতে চায় তাদের বিবাহের কয়েক বছর পর একে অপরের নিঃশ্বাসকেও বিষাক্ত মনে হয়। আমি কোন পক্ষকে দোষ না দিয়ে লিবারেল একটি আলোচনামূলক লেখা লিখবো। না বেশি গভীর কথা লেখা আমার সাজেনা, আমি তাই প্র‍্যাকটিকাল পয়েন্ট গুলোই তুলে ধরবো। কাউন্টার করে গালাগাল দিলেও যুক্তি দিয়ে দিলে ভালো লাগে।

এটা খুবই স্বাভাবিক একটা সম্পর্কে একটা সময় পর দৈনন্দিন কথার বাইরে আর কোন কথা থাকেনা। কিন্তু তার পরেও কথা তৈরি করা যায়, দুজনের যদি চারিত্রিক মিল থাকে। যেমন একজন বই পড়তে ভালোবাসে, আর একজন অন্যদের জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করতে । দুটো চাওয়ার কোনটাই অপরাধ নয়। কিন্তু প্রথম কথা, এই দুজনের ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানো খুব অস্বাভাবিক, যদি দুজনে বিয়ের আগে নিজেদেরকে স্পষ্ট ভাবে একে অপরের কাছে উপস্থাপন করে। এখানেই হয়ে যায় গন্ডগোল। বিয়ের আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একে অপরের কাছে স্পষ্টভাবে নিজের আসল রূপ উপস্থাপন করেনা কেউই৷ না ভেতরের, না বাইরের। অনেক ধরনের কমবেশি লুকোচুরি, মিথ্যে দিয়ে চলে দু পক্ষই। এক্ষেত্রে এটা যত কম হয় দুপক্ষ থেকেই পরবর্তীকালে সম্পর্কের সচলীকরণ অনেক ভালো হয়। তাহলে হঠাৎ একদিন একটা একলা বিছানায় ঘুম ভেঙে মাঝরাতে উঠে দেখতে হয়না দুচোখে নিঃশব্দে চোখের জল। উঠতে চাইছে সে বিছানা থেকে। নিকষ কালো অন্ধকার যেন তার সারা শরীরে বেড়ি পড়িয়ে রেখেছে। বলতে চাইছে সে কাউকে। কিন্তু এরকম লিবারেল পরিবার কটা হয়। এরকম দিন কাউকেই দেখতে হয়না যদি পূর্বরাগের সময়ে মানুষটা একা থাকলে কি করতে পছন্দ করে, সে কিভাবে একটা গান বা সাহিত্যের বিচার করে বা আদৌ করে কিনা, সে সমাজকে কতটা গুরুত্ব দেয়, যেটুকু গুরুত্ব দেয় সেটার জন্য সে কিরকম ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার স্বপ্ন কি, ভালো লাগা কি, সে কিভাবে পছন্দ করে নিজের রাগের সময় তাকে কেউ মানাক ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। একে অপরের পছন্দের তালিকার ভিত্তিতে যাদের সাথে সব থেকে বেশি মিল বা মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেই তাদের সাথেই সম্পর্কে এগোনো উচিৎ। একজন হয়তো কবিতা লিখতে পছন্দ করে একা নিঃশব্দে, আর একজন লাউডস্পিকারে গান চালিয়ে কাজ করতে। দুজনে একসাথে কখনোই শান্তিতে থাকতে পারেনা৷ বিজ্ঞানে কারণ ভিত্তিক এফেক্ট হয়। আমরা এফেক্ট নিয়ে মূলতঃ পরিচিত মহলে অপর পক্ষকে দোষ দিয়ে থাকি। মনটা খচখচ করে অপর পক্ষ থেকে শানানো প্রত্যেকটা দোষের তীরের জবাব পকেটে লুকিয়ে রাখা পরমাণু বোমাতে দিতে। কিন্তু এতে শুধু পৃথিবী ধ্বংস হবে। কেন এক পক্ষ করলে একটা কাজ ঠিক, কেন অন্য পক্ষ করলে সেটা ভুল এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে হবে টাই বা কি?
দোষ বিচার করার আমি আপনি কে? কে ঠিক, কে ভুল এসব বিচার কে করবে, কেন করবে, করেই বা কি হবে?
"Why just the sun go on shining
Why just the sea rush to shore
Don't they know it's the end of the world
'Cause you don't love me any more"

এফেক্ট যা হওয়ার হয়ে গেছে। যেটা পূর্বরাগে করা উচিত ছিল বা করিয়ে নেওয়া উচিত ছিল, সেটা দুজনের দুজনেই বা কেউ একজন করেনি। এটাই কারণ। সেটা নিয়েই আলোচনা। আমার পাঠক মহলে অনেকেই অবিবাহিত। তাদের সবার উদ্দেশ্যে একটাই কথা। ভালোবাসা আর বিবাহ এক নয়। লাভ ম্যারেজে ডিভোর্স রেট বেশি, কারণ তাদের একে অপরের উপর যেটুকু সম্মান বেঁচে থাকে তারা বুঝতে পারে তারা একে অপরের জন্য নয়। তাই বেশি। তার সাথে এই তথ্য ও দেওয়া দরকার এরেন্জড ম্যারেজে কত শতাংশ ঘরে ম্যারিটাল রেপ হয়। ডিভোর্স নিয়ে ছুত্ মার্গ থাকার কারণে সেক্ষত্রে কোন এক পক্ষ পিছিয়ে আসে। যেকোন সম্পর্কে একটি ছেলের প্রধান ন্যূনতম চাহিদা শান্তি ও সম্মান। একটি মেয়ের প্রধান চাহিদা বলে কিছু হয়না। তারা একটু ভালো থাকতে চায়। অনেক সময় কোন এক পক্ষ জানেই না তারা কিভাবে ভালো থাকবে? তারা জানেওনা তাদের পছন্দ কি? আজকের এই মেশিন বেসড্ পৃথিবীতে যেখানে ভাবার সময় খুব কম, সেখানে এটা খুব স্বাভাবিক।
একজন যে পড়তে ভালোবাসে, তার সেরকম মানুষের সাথেই বিয়ে করা উচিৎ। তাতে যখন তাদের কথা বলা ফুরোবে, তখন তারা বিভিন্ন নতুন বই পড়ে তার মাধ্যমে একে অপরকে নতুন ভাবে চিনবে। যার সিরিয়াল দেখতে ভালো লাগে, তার সেরকম মানুষের সাথেই জীবন কাটানো উচিৎ। আর আমার ব্যক্তিগত মতামত, একজন প্রতিভাবান শিল্পী বা বিজ্ঞানী বা জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তির বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের দিকে যাওয়াই উচিৎ না। সখের কাজ আলাদা। যে সারাদিন পৃথিবীর সব কিছু ভুলে কাজ নিয়ে মেতে থাকতে ভালোবাসে, তার জন্য বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি নয় বলেই আমি মনে করি। তারা একা থাকার জন্য জন্মায়। কারণ সে এভাবেই এসেছে, এভাবেই চলে যাবে। এই সত্যিটা তারা না বুঝে ঝাঁপ দিলে পুড়তে তো হবেই। এদেরকে মানুষ সহজে ভালোবাসে, কিন্তু কাউকে ভালোবাসলে তো গোটা ব্যাপারটাকে ভালোবাসতে হয়। সেটা হয়না। সম্ভব নয়। তাই এই দহন।
না পুড়লে খাঁটি সোনা কি করে হবে? সূর্যের মত হতে চাইলে তো সূর্যের মত পুড়তে হবে।

উপরে যতরকম ইচ্ছে বা প্রবৃত্তির কথা বললাম একটিও অপরাধ বা খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবুও যদি কারও সূক্ষ্ম অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

কিছু মানুষ বরং পৃথিবীর দ্বিতীয় অধ্যায়টাই লিখুক। বিবাহ, সংসার, ভালোবাসা এইসব প্রথম অধ্যায়টা ছেড়ে রাখা হোক্, পৃথিবীর অন্য মানুষগুলোর জন্য।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুই হোক্ রবীন্দ্রনাথ এর লাইন দিয়ে -
" সখী,    ভাবনা কাহারে বলে।   সখী,    যাতনা কাহারে বলে ।

        তোমরা যে বলো দিবস-রজনী    ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—


        সখী,    ভালোবাসা কারে কয়!  সে কি   কেবলই যাতনাময় ।


        সে কি   কেবলই চোখের জল?   সে কি   কেবলই দুখের শ্বাস ?


        লোকে তবে করে   কী সুখেরই তরে   এমন দুখের আশ ।


                  আমার চোখে তো সকলই শোভন,


        সকলই নবীন, সকলই বিমল,    সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,


        বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।


        তারা  কেবলই হাসে, কেবলই গায়,   হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—


        না জানে বেদন, না জানে রোদন,   না জানে সাধের যাতনা যত । "

দ্বিতীয় অধ্যায়ের এই ভালোবাসায় কান্না নেই, যাতনা নেই। এটা সবার প্রতি। সামগ্রিক চেতনার প্রতি উজাড় করে দেওয়া ভালোবাসায় কোন ঋণাত্মকতা থাকেনা। পাখিকে ছেড়ে দাও মুক্ত আকাশে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ডুব দিলে এ জীবনের সব মোহকেই মিথ্যে মনে হবে। অপরের সব অপরাধকে ক্ষমা করে এগিয়ে চলার সাহস পাওয়া যাবে। একদিন দুচোখের জল শুকাবে। আকাশের মেঘ সারা জীবন অন্ধকার করে থাকতে পারেনা। তখন এটাই বোঝার, দুটো সমান্তরাল বিশ্বের মানুষ একসাথে থাকলে স্পেস- টাইম কন্টিনিউয়ামের বিকৃতি ঘটা খুব স্বাভাবিক। এখানে কাউকে দোষ দিয়ে হবেটাই বা কি? কেই বা বুঝবে? কেনই বা বুঝবে? নিজেকে এতটাই ভালোবাসতে হবে রাধার মতো, যে নিজের অবচেতনে যে রাগে সেতার বাজছে, স্ট্রিং থিওরির সুরে সে সেই কৃষ্ণের বাঁশির সুর শুনতে পাবে। দুটো সুরের হারমনিতে এক অনুরণন হবে। এমন উচ্চতায় থুতু পৌছাবেনা।এ সাধনা একার।।

Saturday, January 22, 2022

নাম নাই

 যখন স্বপ্ন দেখি, 

তখন সেই স্বপ্নে কোন খাদ থাকেনা। 

স্বপ্ন তখন স্বর্গের বুর্জ খলিফার ইমারতে আলোকিত।

ধূসর মরুভূমিতে সে আবার জীবিত।

তারপর চাওয়া- পাওয়া হিসেবের মাঝে-

ছোট ছোট স্বপ্নগুলো বাস্তবের ড্রয়িংরুমে 

মুখ থুবড়ে পড়ে।

যে বলেছিল- স্বপ্নগুলো সাজিয়ে রাখার কথা,

তার এলোপাথারি গুলিতে ঝাঁঝরা হয় অপরাধী।

অপরাধ - সে স্বপ্ন দেখেছিল। 

যে স্বপ্নে কোন স্বার্থ নেই, লোভ নেই,

মোহ নেই, হিংসা নেই, পরশ্রীকাতরতা নেই।

সেই স্বপ্ন পাগলের মত, 

সবাইকে ভালো লাগে। 

যত মিথ্যে অভিযোগ, দুর্নীতি 

সবই তার চোখে -

ভালোবাসা মনে হয়। 

একদিন সে নির্বাক-ধূসর হয়ে যায়।

তবু সে স্বপ্ন দেখতে থাকে। 

রঙীন নেশায় কাছে টেনে নেয় তাকে।

স্বপ্নের দিন শেষ হয় একদিন,

অহং এর প্রসাধনে মুড়ে ভালোবাসা থুতু দেয়,

স্বপ্নের মুখে।

সব কিছু ভেঙে যায়। 

জ্বলে ছারখার হয়ে যায় স্বপ্নের ইমারত। 

পড়ে থাকে স্বপ্ন, স্মৃতি এবং ছাই।

ভয়, দুর্বলতা কেটে যায়,

সাজা তাকে পেতে হবে, 

অপরাধীর সাজা এ দুনিয়াতে মাফ হয়,

স্বপ্ন দেখার কোন মাফ নাই।।


- ১ লা জানুয়ারি, ২০২২

পয়লা জানুয়ারি ২০২২

 কত স্বপ্ন দেখেছিলাম,

তোমার নিস্তব্ধ চোখে। 

সবই কি তবে মিথ্যে ছিলো? 

ফসফরাসের মতো জ্বলে সব আজ ছাই।

আমিও তবে মিথ্যে ছিলাম। 

তুমিও তাই। 

হার-জিতের প্রশ্ন যখন -

উত্তর না দিলে তো সব শেষ। 

তাই না? 

তাই চেয়েছিলে যদি -

তবে এই অন্ধকার নদী, 

কি প্রয়োজন ছিল - মাঝি হওয়ার? 

এই দিনটাই কি দেখার ছিলো? 

সবই মিথ্যে ছিলো তবে।

মরে গেছি অনেক দিনের আগে,

আজ নাহয় আমার মৃতদেহের সৎ কার্য হবে।।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...