Wednesday, April 19, 2017

লুজার

'লুজার, লুজার, লুজার '
কানের মধ্যে এখনো বাজছিল জয়ন্তর। এসি চলছে। কিন্তু দরদর করে ঘামছিল সে। এইমাত্র একটা স্বপ্ন দেখে ধড়পড় করে ঘুম থেকে উঠে বুকে হাত দিয়ে দেখল, হ্রত্স্পন্দন টা মেট্রোনোমের বিটের মত খুব দ্রুত টেম্পোতে চলছে। স্বপ্নটা কি ছিল যেন? মনে করতে পারছেনা। ও হ্যাঁ, হাল্কা মনে পড়ছে। ওর প্রাক্তন প্রেমিকা তার হাজব্যান্ডের হাত ধরে ঘুরছে। ওর সাথে হঠাত্ দেখা, ইকো পার্কে। ওকে দেখে দুজনেই হাসতে লাগলো। তার প্রাক্তন প্রেমিকা ব্যংগ করে বললে,
'তারপর স্যার আর কত জায়গায় হারলেন। পকেটে টাকা আছে কিছু নাকি এই তুমি ওকে কিছু দাও টাকা, বহুদিন খেতে পায়নি দেখেই মনে হচ্ছে। '
বলে দুজন লুজার, লুজার বলছিল। ঘুম ভেংগে গেল। মিডি কিবোর্ডের সামনে বসলো। কিছু একটা ভেতরে জমছে। কি দু:খ, চাপা কান্না, নাকি, নাকি রাগ ?
রাগ, প্রচন্ড রাগ।
একদিন নার্সারিতে ওকে সৃজনশীলতায় সব থেকে কম নাম্বার পেতে হত।
একদিন ওকে স্কুলের ম্যাগাজিনে ওর লেখা নেওয়া হয়নি ক্রিয়েটিভিটির অভাবে। একদিন ওদেরকে নিজের কলেজের ব্যাকস্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছিল ঘন্টার পর ঘন্টা স্টেজ ওদের উপযুক্ত মনে করেনি । কোন এক ফেস্টের সোলো সিংগিং কম্পিটিশনে গিয়ে ওদেরকে পুরো গানটা শেষ করতে দেওয়া হয়নি, নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ বাকিদের মত গলা নকল করে হিট গান গেয়ে দর্শকদের কাছে হিট হতে চায়নি। নিজেদের গান গাইছিল। স্টুডিও থেকে কথা না শুনেই বের করে দিয়েছিল ওদেরকে। রাগ, প্রচুর রাগ। আসছে না কোন মেলোডি লাইন। আসছেনা। লুজার , লুজার। কানে বাজতে লাগলো। একটা কিছু লেখার চেষ্টা করলো। বেরোলো দুটো লাইন,
'সামনে যে খিলখিল হাসি, /
আড়ালে সে ঠকে যাওয়া কান্না বাসি। '
না আসছেনা। আরো ভালো চাই। কানে বাজতে লাগলো লুজার, লুজার। টিভি অন করলো বহুদিন পর। একটা ফুটবল ম্যাচ চলছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের । দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে সে আবিষ্কার করলো তার চোখ টিভির স্ক্রিনে থাকলেও, সে আদৌ ম্যাচটা ফেখছেনা। কিছু একটা বেরোতে চাইছে ফেটে। দু:খ, চাপা কান্না, নাকি রাগ। রাগ, প্রচন্ড রাগ। টিভিটা বন্ধ করে। দুকান চাপা দিয়ে সে অনুভব করলো তার চারিদিকে যেন গুলি ছুটছে। প্রচুর শব্দ। আর পারছেনা নিতে। সামনে একটা ব্লেড দেখলো হাতে নিতেই তার শ্বাস আরো গভীর আর দীর্ঘ হল। না আর নয়। সত্যি সে লুজার। দয়া চাইনা। ব্লেডটা নিয়ে ডান হাতে ধরে বাম হাতের কব্জির কাছে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। হাল্কা চাপ দিলো। হচ্ছেনা। লাগছে। ছুঁড়ে ফেলে দিল ব্লেডটা । চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। ফ্ল্যাটে কেউ নেই। একা। কিন্তু সে
চিত্কার টাও আসছেনা। ভোকাল কর্ডকে কেউ লোকাল দিয়ে প্যারালিসস্ করে দিয়েছে। ঘাড়টা নাড়তে নাড়তে গিটার টা নিল হাতে ।
সকাল হয়েছে কিছুক্ষণ। সূর্য উঠেছে নতুন আশায়, নতুন বিশ্বাসে। নতুন গান লিখে ফোন করলো সে তার সংগীকে।
সংগী খবর দিলো,
' তিনটে পার্ফমেন্স আছে এই সপ্তাহে। দৌড়াতে হবে এবার। আমাদের ওরা ডাকছে এখন। সময় বেঁধে দিয়েছি। এক ঘন্টা স্টেজে থাকবো। তার মধ্যে পনেরো মিনিট বাতেল থাকবে। এক ঘন্টার একটা সেকেন্ড ও বেশি নয়। দৌড়াতে প্রস্তুত লুজার ? '

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...