Sunday, July 29, 2018

ত্রিভুজ

কুয়াশা এত সকালে কাটার কথা নয়। বুড়ির দোকানের স্পেশ্যাল চা এক চুমুক মিষ্টি শব্দে গ্রহণ করলো ভূমিকা । প্রেসিডেন্সী থেকে ফিজিক্স অনার্স পাস করেছে সে । কথায় চোখে মুখে সবসময় বুদ্ধিমত্তার ছাপ। চা খেতে খেতে সিগ্রেট খাচ্ছিল ভূমিকা। পাশের লোকগুলো হাঁ করে দেখছিল । ভূমিকার তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। সে লিবারেল। তার হাতে সিগ্রেটটা যেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি একটা অঘোষিত তাচ্ছিল্যের জিহাদ। তার পরণে একটা টিশার্ট আর জিন্স। চুল বয়েজ কাট্। পেপার পড়ছিল। আমায় পেপার থেকে মুখটা তুলে জিজ্ঞেস করল, 'তা সুত্রধার বাবু আজ আপনি যাবেন কোথায় ?' আমি বললাম - 'আপনার সাথে সাথেই যাবো । নামবো একেবারে শেষে। যেখানে সবাই নেমে যাবে। '

- আচ্ছা আপনার আরেকটা নাম যেন কি ?

 - নেপথ্য।

- ও হ্যাঁ।

বলতে বলতে বাস চলে এল। আমরা দুজন উঠে পড়লাম। ফাঁকা বাস। ভূমিকার জন্য তবু সিট রেখেছিলেন তার সহযাত্রী বন্ধু - বান্ধবীরা। একসাথে গল্প করতে করতে যাবে বলে। আমিও গিয়ে ওইদিকেই বসলাম। বন্ধু-বান্ধবীর নামগুলো যেদিন প্রথম জেনেছিলাম খুব মজা লেগেছিল। কেন সেটা আর নাই বা বললাম। কিসব নাম। মাখন, প্রিয়া আর কোকিল। একদিন আমি বাসের শুরু থেকে উঠেছিলাম, যেখান থেকে মাখন আর প্রিয়া উঠেছিল। সেদিন বুঝেছিলাম মাখন প্রিয়াকে অন্য চোখে দেখে। কিন্তু প্রিয়া অলরেডি কমিটেড তাই মাখন প্রিয়ার জাস্ট গুড ফ্রেন্ড ঠিক যেমন সকালবেলার বাটার টোস্ট, উপরে একটু চিনি ছড়ানো। মাখন তার আর প্রিয়ার বাসযাত্রাটার একান্ত সময়টাকে যে কোকিল আর ভূমিকা এসে ঘেঁটে দেয় সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে বিরক্তি প্রকাশ করেই ফেলে। যাই হোক, আজ এসেই ভূমিকা বকতে শুরু করলো।



****
প্রথম ভুজ - 'লি-বালের'



'আজ পুরো ঝেড়ে দিয়েছি ওকে।' মাথা নেড়ে জানালো ভূমি।

প্রিয়া জানালো - দেখ তুই আবার শুরু করবিনা ওর কথা।

মাখন বললো - আ: বলতে চাইছে বলতে দে না। কোকিল সম্মতি জানালো - কি বলেছিস বল তো। ভূমিকা বললো - আর বলিস না আমি কাল একটা ডিপি দিলাম আমার কতদিনের একটা বন্ধুর সাথে একসাথে। আমরা অলি পাবে মদ খেতে গিয়েছিলাম। ও দেখে সেই পজেসিভ কমেন্ট শুরু করলো। আমি কিছু বললাম না। বিকজ ইউ নো সবাই উত্তর ডিজার্ভ করেনা। ডিপি চেঞ্জ করে দিলাম, ও তখন কি বলল জানিস এটা সুস্থ পোশাকের পরিচয় নয়। ও যে আমার সাথে একটা রিলেশানে আছে ভাবতে কেমন লাগছে। আমি আর থাকতে না পেরে ওকে বলে দিলাম অসুস্থ ছোটলোক। নিজেকে সাইকিয়াট্রিতে দেখাতে। বলে ব্লক করে দিয়েছি। আর নিতে পারছি না জাস্ট। একটা বাল।

প্রিয়া বললো - ভালো করেছিস বাবু। সারাজীবনের ব্যাপার। আর তুই যেরকম। আসলে সব ছেলেরাই এক।

ভূমিকা এবার রেগে বললো- 'আমি যেরকম মানে কি, তোদের মত বউ সেজে থাকতে পারবো না। ইফ ইউ কান্ট চেঞ্জ দা বয়, চেঞ্জ দা বয়। আমার সিম্পল ফান্ডা। সারমেয়, শারুখেয় এরকম কত ছেলেরা আমার সাথে ডেটে যেতে চায়। ভাবছি এবার অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া ভালো। '

সবাই হা হা করে হেসে উঠলো। এমন সময় প্রিয়ার বয়ফ্রেন্ডের ফোন এল। 'হ্যাঁ বাবু, না বাবু। তুমি বিশ্বাস করো।' একটু আড়ালে এরকম চলছিল । সেই সময় ওই বাসটায় একজন ভদ্রমহিলা উঠলেন নর্থ-ইস্টার্ণ।

তাঁকে দেখে ভূমিকা 'চিংকি' বলে উঠলো। সবাই হা হা হি হি করে নিল। প্রিয়া ফোন রাখতে মাখন বললো - 'দেখছিস আমাদের মধ্যে একজন বলছিল ছেলেরা এই,ছেলেরা ওই সে কিন্তু সবার আড়ালে ঠিক সহ্য করে নিচ্ছে।' প্রিয়া কিছু বললো না। ভূমিকা বললো - হ্যাঁ করবেনাই বা কেন, ওদের তো বাড়িতে সব ঠিক।

কোকিল এবার মুখ খুললো - হ্যাঁ তো ? তোরও তো বাড়িতে ঠিক ছিল। তুই লিবারেল বলেই তো বেরিয়ে আসতে পেরেছিস।

মাখন বললো - তোরা এত লিবারেল লিবারেল করিস। লিবারেল মানে কি জানিস ? কোন ভিন্ন মতকে সম্মান জানানো। এই যে তোরা একজনকে চিংকি চিংকি করছিলি আমি কিন্তু সাপোর্ট করিনা। তবুও আমি কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে হেসেছি।


বলে একবার প্রিয়ার দিকে তাকালো সে শুনছে কিনা দেখে নিল। আবার বলতে শুরু করলো - আমি ভূমি যেগুলো করে সেগুলো মন থেকে সাপোর্ট করিনা। ও আবার তিনদিন পর কথা বলবে। এদিকে অন্যদের সাথেও ফ্লার্ট করবে।

ভূমি বললো - বেশ করেছি আমার ছাগল আমি কাটব না চরাবো আমার ব্যাপার।

 আমি এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলাম, এবার বললাম- বলছি ঝগড়া তো আপনাদের খুব জমে উঠেছে। আমি এতক্ষণ আপনাদের কথা শুনছিলাম। আপনাদের সাথে রোজ একসাথেই যাই। ভূমিকা আমায় চেনে। যখন আপনারা যেতেন না আমিই ওর সহযাত্রী ছিলাম। আমার মনে হয় ঝগড়া থামানোর একটা ভালো উপায় আছে। ভূমিকা বললো- কি?

আমি বললাম - আমার যা কাজ। একটা গল্প লিখেছি। গল্পটা আপনাদের মতই একজন ভদ্রমহিলাকে নিয়ে। রোজ বাসে আমাদের সাথেই যান। আমার সাথে আলাপ আছে নাম অন্তরা দেবী। গল্পটা লিখে ঠিক সুখ হচ্ছেনা। তাই আপনাদের পড়ে শোনাচ্ছি। আপনারা যদি কোন সুন্দর ফিনিশিং টাচ দিয়ে দেন বেশ হয়। আজকের যুগে আসলে গল্পে চমক না থাকলে মানুষের ইমোশনে ঠিক ঘা দেওয়া যায়না, তাই ভালো ফিডব্যাক পাইনা । আমার গল্পটা দার্শনিক হয়ে গেছে। রবিঠাকুরের যুগের অনুভূতির কচ কচানি এই যুগে কে পড়বে ? তাই মশলা চাই। মাংসের কষা টা যাতে আহামরি লাগে। যতবার পড়বে আলাদা মানে বেরোবে। মাখন বললে - 'বেশ, বেশ পড়ে শোনান। শুনতে শুনতে আমাদের গন্তব্য চলে আসবে। একঘেয়েমি কাটাতে আমাদের কিছু টুইস্ট সাজেস্ট করার থাকলে বলে দেবো। আপনার পাঠকরা পড়ে উদ্ধার করুক। '


আমি শুরু করলাম।



*****
দ্বিতীয় ভুজ-

'লাভের Love, Love-এর লাভ'


'সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময়, তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ভালোবাসা, ভালোবাসা '

হেডফোনে কানে পরিচিত গলায় গিটারের সাথে রেকর্ডিংটা শুনছিলেন অন্তরা দেবী। তাঁর ডাক নাম রেণুকা। ছোট করে সবাই রেণু বলে ডাকে। এমন একটা গলা যেটা শুনলে পাগলের মত ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। তাকে অনেকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে বেরোনোর উপায়, বা এটা ভালোবাসা নয় ইত্যাদি। এখান থেকে বেরোনোর উপায়, লোকজনের সাথে ভাঁটাও বন্ধু হিসেবে। কাউকে না কাউকে ভালো লেগে যাবে। সব বন্ধু, দাদা, দিদি কে বলেই দিয়েছে ওকে আর পাত্তা দেয়না। ওকেও বুঝিয়ে দিয়েছে, কিন্তু যে গানই শোনে মনে হয় ওর গলায় কি না ভালো লাগতো। ও তো ভেবেই নিয়েছে রেণু অন্য কারো সাথে রিলেশানে। ও ও হয়তো প্রেম করে নেবে । করুক। যা খুশি পাগলামি করুক। ওকে আর পাত্তা দেওয়া যাবেনা। অবহেলা করলে একদিন ও অন্য কারো সাথে চলে যাবে। রেণুও বসে থাকবেনা। অপশন খোলা রাখবে। আজ দেখলো ফেসবুকে একজনের স্ট্যাটাস 'অভ্যেসগুলো এখনো অবহেলার মানে ধরতে শেখেনি।' গানটা তাই হঠাত শুনতে শুনতে ভাবছিল, সত্যি ভালোবাসা মানে কি অভ্যেস ? রেণু কি সত্যিই ভালোবাসে ওকে ? ও বলে নানারকম দর্শন ভালোবাসার কিরকম ব্যাখ্যা দেয়। বাউলের নিষ্কাম প্রেমের সাধনা। রাধা-কৃষ্ণর প্রেমের ব্যাখ্যা। বিভিন্ন এদেশী, স্বদেশী কবিদের চোখে প্রেম। প্রকৃতি, প্রেমিকা, ঈশ্বর সব যেখানে মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে মন ভালো থাকলে শুনতে ভালো লাগে বেশ। কিন্তু এত ফিলোজফিতে তার মাথা গুলিয়ে যায়। ও কি সত্যি যা বলে অনুভব করে। অনুভব করলে মাঝে মাঝে এরকম ইনডিফারেন্ট হতে পারত ? অনেক পরীক্ষা করেও দেখেছে ও ওই ব্যবহারগুলো একা থাকার জন্যই করে, অন্য কোন মেয়েকে সময় দিতে নয়। রেণু কি করবে, ওর কথা ভাবলে ডুবে যায়, চেষ্টা করে তাই যতটা সম্ভব নিজেকে ডাইভার্টেড রাখার ওর থেকে। নানা ভাবে। ভুলে গেছে। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে দুটো সত্তা থাকে। স্বপ্নবিলাসী আর বাস্তববাদী। ভালোবাসা এক, সম্পর্ক আর এক। সম্পর্কের মাধুর্য যখন কেটে যায় অভ্যসেটাই কোন সম্পর্ককে ধরে রাখে। তাতে ভালোবাসা থাকলো বা না থাকলো। আর ও বলে ভালোবাসা না থাকলে সম্পর্কের মরা অভ্যেসের কোন দাম নেই। ওর সাথে রেণুর আলাপ একটা মেন্টাল আসাইলামে। রেণু পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। ওর সেলের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিল শুনছিল ওর গলায় -' তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা।' গান অনেকেই ভালো গায়। কিন্তু কিছু গলায় এমন ব্যথা থাকে ভেতরে স্বাদ লেগে থাকে। সেলের ভেতর অনুরণনটা ভেতরে অনুভব করছিল। বুকটা ধড়পড় করে উঠেছিল। কি অসাধারণ। তারপর ওর উপর একটা মায়া পড়ে যায়। এখন ওর আরোগেন্স অনেক কমে গেছে। ওর একটাই কথা -'মানুষ হল শিক্ষিত জানোয়ার। ' রেণু জানে ও মেন্টালি ডিসব্যালান্সড। কিন্তু এটাও জানে রেণু নিজে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছে। এটাকেই হয়তো কাউন্টার-ট্রান্সফারেন্স বলে। আচ্ছা যদি ভালোবাসা অভ্যেসই হবে রেণুর ছয়জন বন্ধু সবাইকেই ওর ভালো লাগে আর অনেকদিনের বন্ধু। প্রায় নিয়মিত কন্টাক্ট। তাহলে এদের কাকে ভালোবাসে সে ? নাকি ওই পাগলটার প্রতি যে ভালোলাগার পাগলামি তৈরি হয়েছে সেটাই ভালোবাসা ? ওর খাতায় সেদিন রেণুকে নিয়ে কথায় কথায় ওর সামনে ও পেন নিয়ে লিখল । পড়ে দেখল - 'আমার মুক্ত সরলরেখা কবে এক জোড়ায় বৃত্তের সমীকরণ হল তোমার ছায়া ধরে। সেই পেয়ার অফ স্ট্রেট লাইন কখনো সসীম বৃত্ত, কখনো অসীমে বিলীন। আর একটু সময় ভালোবেসো, হয়তো যে স্বপ্নেরা গোলাপ ফোটায়, সে স্বপ্নেরা তোমার আমার ঠোঁটে বাসা বাঁধবে।'


শুধু অভ্যেসে এত অবলীলায় এই লেখা সম্ভব ? ও বলে - 'ভালোবাসা একটা কোয়ান্টাম পসিবিলিটি ওয়েভের মতো। একটা একটা ফেজে আসে। একটা একটা পকেটে। যেরকম সমুদ্রের তীরে একটার পর একটা ঢেউ আছড়ে পরে। ফেজে। একটা ঢেউ জানেনা পরের ঢেউএর টাইম টেবিল। কিন্তু বালুতট জানে সমুদ্রের পরের চুম্বনটা তার জন্যই রাখা। সমুদ্রও জানে বালুতট এর মনের কথা। এক্ষেত্রে অবশ্যই কথা টা হচ্ছে বঙ্গোপসাগর যদি আরব সাগরের তীরের মনের কথা জানে ভেবে ভাবে যে তাকে ভালোবাসে তবে হাস্যকর। যেমন একটা জাহাজের জন্য প্লাটফর্মে ওয়েট করা যায়না। এসব মহান অনুভূতি তাই যোগ্য পাত্রে দান করা উচিত। তুমি সেই আধার।'


ওকে মাঝে মাঝে বলে তোমার এসব লেখা আমি যদি লিক করে দিই নিজের নামে, বা অন্য কেউ মেয়ে পটানোর কাজে ব্যবহার করে ? তোমার চিন্তা হয়না? ও বলে-' হ্যাঁ , আমি অনেকের প্রেমপত্র লিখে দিয়েছি। কিন্তু চিন্তা হয়না। লেখাগুলো তো আমার নয়।'

রেণু মুখ বেঁকিয়ে বলে - ও আপনিও তাহলে অন্যের টুকে মেয়েদের মনে প্রভাব বিস্তার করেন।

ও বলে - কি জানি টুকে কিনা, তবে আমাকে নিয়ে কেউ যেন লেখায়। আর আমি তখন এই জগতে থাকিনা।


রেণু অবাক হয়ে তার কথা শোনে। সত্যি না অনুভব করলে এভাবে ভাবা যায়, বলা যায় ? ভুলে যায় এটা ২০১৬ সাল। নাকি সৃষ্টির শুরুতে সে আদমের সামনে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর একমাত্র নারী হিসেবে একমাত্র পুরুষের কথা শুনছে। এই যুগে কে এত গভীরতা নিয়ে ভাবে ? মাঝে মাঝে তার এত স্বপ্ন, দর্শন পোষায়না। পাতি বাস্তব ধরে ভাবলে সে কোন কুল কিনারা পায়না। ওর সামনে এসে সময় থেমে যায়। সব দুশ্চিন্তা ভুলে যায়। মনে হয়, অনেক কিছু মনে হয়। মাঝে মাঝে সত্যি কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। হ্যাঁ কিছুদিন প্রেম করার জন্য ঠিক আছে, কিন্তু সারা জীবন। না না। একটা পাগলের সাথে সারা জীবন কাটানো যায় না। সে তো অনেকের গলাই ভালো লাগে, তার মানে কি তাদের সাথে প্রেম করবে ? তার নতুন কয়েকটা বন্ধু হয়েছে। ও নতুন প্রেমে পড়লেই রেণু তাদের একজনকে ধরে বিয়ে করে নেবে। কাকে যে আসলে ভালোবাসে, সেটাই বুঝতে পারেনা রেণু। ওর মত স্বপ্নের দুনিয়াতে ভেসে গেলে মনে হয় ওকেই। কিন্তু বাস্তবে এলে এমসিকিউ চলতেই থাকে শেষ হয়না। শান্তি পাবে কি করে ? সোজা কথায় এত না ভেবে বেঁচে থাকতে গেলে কারো কন্সট্যান্ট কেয়ারে থাকতে হবে। তাই এত স্বপ্ন না ভেবে বাস্তব ভাবলে কারো সাথে রোজ শান্তিতে বেঁচে থাকাটাই ভালোবাসা। Love নয় লাভ চাই সবার। রেণুর বান্ধবী খুব পরিণত বাস্তববাদী।বলে-' বয়স হয়েছে এবার সেটলমেন্টে আসতে হবে। না ভেবেচিন্তে কাউকে আই লাভ ইউ বল। ডেট কর। কিস্ কর। দেখ এসব করার পর সে তোর আঁচলে বাঁধা থাকছে কিনা। না থাকলে ওকে স্ট্যান্ডবাই রেখে নতুন খোঁজ। একইভাবে। যেখানে লাভের গুড় মিলবে সব থেকে বেশি সেখানে বাসা বাঁধো। বাকি সবাইকে বন্ধু বানিয়ে নাও। '

রেণু বলে, 'ভালো না বেসে কিস্ করবো ? '

তার বান্ধবী বলে -' হ্যাঁ করবি। ছেলেরা এই যে বাতেলা করে প্রেমের, কেন করে মেয়েদের কাছে এসব পাওয়ার জন্যই তো। মেয়েরা কাছে কেন যায়, ছেলেদের পারমানেন্ট খুঁটি বানিয়ে রাখার জন্য। এটাই মোদ্দা কথা। যে খুঁটির শিকড় যত গভীরে সেই খুঁটি বেশি লাভবান। কাছে গেলেই ছেলেরা খুশি। আর যদি ছেড়ে দিতে হয় এভাবেই দেখাবি দোষটা ওরই ছিল। সোজা কথা যে শান্তিতে রোজ ঘুমাতে দেবে তার রোজ খোঁজ নেওয়াটাই ভালোবাসা।'


এভাবে লাভ দেখে Love হয় ? কিছুটা নরমাল জীবনে ফেরার পর ওকে অনেক ভাবে আবার খোলাখুলি প্রোপোজ করাতে চেষ্টা করে রেণু। কিন্তু পারেনা আর। এর থেকে ওরাই কেউ ভালো ছিল। সত্যি কথা বলতে মনে অশান্তি হলেও ও এমন কথা বলে শান্তি আসে। ওকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল - কাকে ভালোবাসেন আপনি ?

বলেছিল - 'পরে বলবো। '

তারপর দু'রাত পরে এসে বলেছিল, 'দু'রাত না ঘুমিয়ে ভেবে দেখলাম আমি কোন মানবীকে ভালোবাসার যোগ্য নয়।' রেণু জিজ্ঞেস করেছিল - 'তবে ?' ও রেণুর হাত ধরে হিড় হিড় করে ছাদে নিয়ে গিয়ে খোলা মাঠ দেখিয়ে বলেছিল - 'ওই যে বিরাট পৃথিবীটা চুপ করে পড়ে রয়েছে, ওই যে দূরের ঝিলে ঝুপ করে সন্ধ্যে নামছে, ওই যে সূর্যটা মা'র টিপের মত দিগন্তে মিশে যাচ্ছে ওদের সবাইকে ভালোবাসি।' তারপর একটা গাছকে দেখিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল - 'ভালোবাসি।' এ কি সত্যি এরকম। অনেকটা নরমাল হওয়ার পর ওকে সিডিউস করার বহু চেষ্টা করেও পারেনি। ও পাগল। এটা বুঝেছে। আগে প্রচন্ড আরোগ্যান্ট ছিল। এখন আর নেই। রেণু একদিন জিজ্ঞেস করেছিল - 'আমি অন্যকাউকে বিয়ে করে নেব ভাবছি।' ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আবার রেণু বলল -' আপনি কি করবেন আমি বিয়ে করে নিলে ?' ও কোন উত্তর দিলনা। পাশ দিয়ে একটা বাচ্চা মার কোলে হাসছিল তাকে দেখিয়ে বললো হঠাত - 'দেখো দেখো। ' বলে নিজে খিল খিল করে হাসতে লাগলো। এতক্ষণ সূর্যের আলোটা একটা বট গাছের মগডালের ওপারে ঢাকা পড়ছিল। হঠাত সেই সূর্যের আলো ওই বটগাছের শেষ পাতাকে চুম্বন করে ওর মুখে এসে পড়ল। মুখ তুলে তাকিয়ে বললো- 'ছবি আঁকবো আপনার। নতুন গান লিখবো। কবিতা লিখবো। '

 'কি লাভ এসব করে ? কি পান ? ' চেঁচিয়ে জানতে চেয়েছিল রেণু।

 'মাঝে মাঝে পাই,সব সময় পাইনা। পেলে ভালো হত। ' বলে রবি ঠাকুরের মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাইনা গাইতে গাইতে চলে গেল। দূরে গিয়ে আপন মনে মাউথর্গান বাজাতে লাগল। ' এটা তো ব্রম্ভসংগীত !! এইসব আঁতলামি সময়ের সাথে সাথে হাস্যকর মনে হচ্ছে তার। টিনেজ চিন্তাভাবনা। কথাটা বলতে ও একদিন হেসে বলেছিল- 'হ্যাঁ এটা ঠিক। ভাবুন রবি ঠাকুর শেষ বয়সেও টিনেজ কবিতা লিখে গেছেন। ' ওর সাথে কথায় পারা যায়না। কখন আপনি বলে, কখনো তুমি। মাঝে মাঝে দুকানে দুহাত চাপা দিয়ে ও বলে- ' আমি আর ভাবতে পারছি না। পাগল হয়ে যাব।' পুরো পাগল। নেহাত পাগল তাই কিছু বলতে পারেনা। সে বছরের বসন্ত মাস। গাছের পাতারা বাতাস আর অভিকর্ষের মধ্যে মারামারি চালাচ্ছে। রেণুর চোখে স্বপ্নের মোহ কেটে গেছে। রেণুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। লাভ ম্যারেজ।





******
তৃতীয় ভুজ- 'ক্রসিং ওভার'



নিজের লেখা এতটা গল্প পড়ে একটা বড় শ্বাস নিলাম। সবাই চুপ করে ছিল। প্রিয়া হঠাত বলে উঠলো - এখানেই শেষ ? আর নেই ?

আমি বললাম - না। এরপর কি লেখা যায় বুঝতে পারছিনা।

মাখন বললো - সেই একই বিষয়, বড় একঘেয়ে। এত শোকের ছায়া গল্পে। সারকাজম হলে ভালো হত মাঝে মাঝে। ভূমিকা এতক্ষণ থমথমে মুখ নিয়ে বসেছিল। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন একটা অন্য পৃথিবীতে ছিল।

হঠাত ভূমিকা বলে উঠলো - আপনার যেটা আসবে সেটাই তো লিখবেন। বিনোদন অনেকে করে। অভিনয় করেন সৌমিত্র। আপনি কোনটা হবেন আপনার ব্যাপার। আর তাছাড়া শোক ছাড়া তো শ্লোক হয়না। আমি উতসাহ পেলাম শুনে।

কোকিল বললো - ভূমি এসব কথা কার মুখে শুনছি ?

ভূমিকা বললো - কেন আমাকে কি ভাবিস?

মাখন বললো - তুই বাতেল না দিয়ে বরং শেষটা কিরকম হবে সাজেস্ট কর।

 আমি তাড়া দিলাম - হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন বলুন। ভূমিকা শুরু করলে - অন্তরা দিয়ে জিনিসটা বেশ হল। সমাপ্তিটা আমিও দিতে পারবো না। ওটা আপনার কাজ। তবে একটা লেভেল ক্রসিং এর গল্প বলতে পারি। ওকে নিয়ে কিছু ফাঁক ফোকর বুজে দিতে পারি। ও পাগল। ওর মাথায় সব সময় কিছু না কিছু ঘুরছে। প্রচন্ড রকম মুডি। ও মানুষ খুব ভালোবাসতো। ওর পেশাটা ডাক্তারিই ধরা যাক। ওর পাশে শুলে একটাই প্রবলেম। ও যদি ডিউটি থেকে বাড়ি ফেরে মাঝরাতে কিরকম হয় জানেন তো। ধরুন আপনি ঘুমাচ্ছেন। হঠাত মাঝরাতে শুনলেন ও ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। বিড় বিড় করছে - 'হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে চলে আসুন। না না কোন চিন্তা নেই। চাদরে মুড়ে নিয়ে চলে আসুন। ' আপনি ভাববেন কে এত রাতে ফোন করেছে রুগী দেখাতে। দেখবেন ও আসলে আপন মনে বকছে। একবার ও একটা গানের কাজ করছিল। ওর মাথাতেও ওটাই ঘুরছিল।গানের লিরিক্স, সুর। এতটাই যে শিয়ালদহ তে টিকিট কাটতে ভুলে গেল। ও টিকিট কাটবে না এটা হতে পারেনা। কিন্তু ওর খেয়ালই নেই। বিনা টিকিটে প্লাটফর্মে ঢুকছিল এমন সময় এক টিটি র সাথে ধাক্কা লাগলো। টিটি কে দেখে ওর টিকিট কাটার কথা মনে পড়ল। এতটাই অন্যমনস্ক ছিল টিটি র মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো -' এই রে আমার তো টিকিট কাটা হয়নি। যাই টিকিট কেটে আসি।' টিটি ওকে খপ করে ধরলো। ও এতটা বোকা নয়। কিন্তু যখন যে চিন্তায় ডুবে থাকে এরকমভাবে। ওকে তখন ঘাঁটালে ক্ষেপে যায়। ওটাই অন্তরা আর ওর শেষ দেখা ছিল। অন্তরার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল ও। একটা প্লাটফর্মে অন্তরা আসত দেখা করতে। অন্তরার মুখে শুনল ওর বিয়ের কথা। তারপর প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে অন্তরা একদিকে চলে গেল। ও রেলগেটের অন্য দিকে। রেলগেট পড়ে গেল। ও বিদায়সূচক হাত নাড়ল। তারপর মাঝখানে ট্রেন পেরোচ্ছিল। অন্তরা উঁকি ঝুঁকি মারছিল ওকে দেখার জন্য। খুঁজে পাচ্ছিল না। কখন ট্রেনটা শেষ হবে। ট্রেনটা শেষ হল। লেভেল ক্রসিং এর এপারে দাঁড়িয়ে অন্তরা আর ওকে খুঁজে পেলনা।

এতটা বলে ভূমিকা থেমে গেলেন। সবাই চুপ। শুধু উল্লাসটা আমার মধ্যে ছিল।

প্রায় লাফিয়ে উঠলাম- পেয়েছি। দারুণ। আমায় এখুনি লিখতে হবে। আমি নামি।

মাখন বললো -' আরে চললেন কোথায় ? মাঝরাস্তায় ? '

আমি বললাম - আমার কাজ শেষ। সামনে আমার এক বন্ধুর অফিস। ওখানেই গল্পটা লিখে ফেলতে হবে। নাহলে ভুলে যাবো। চলি আবার দেখা হবে। ভূমিকা বললে - 'সূত্রধার বাবু, শুনুন একটা অনুরোধ। গল্পে মেয়েটির নাম অন্তরা না দিয়ে সমাপ্তি দেবেন। আর জানবেন ছেলেরা যেরকম গল্প, সাহিত্য, সিনেমার নায়কদের সাথে নিজেদের মিলিয়ে স্বপ্নে ভাসে কেউ সামনে, কেউ মনে। মেয়েরা কিন্তু নিজেদের স্বপ্নে ভাসে। একান্তই নিজেদের। সেই স্বপ্নগুলোই ওদের সব হয়। তাই এসব গল্প পড়ে দেখলে মেয়েদের বড্ড বেশি বাস্তববাদী চরিত্রহীনা লাগে। অন্তরা কিন্তু সেদিনেই সমাপ্তি হয়েছিল। ' বলে ভূমিকা ছল ছল চোখে বাইরে জানালা দিয়ে তাকালো। আমি নেমে পড়লাম। বাসটা চলে গেল আমাকে নামিয়ে। সামনের ফ্ল্যাটের রেলিং এ হাত দিয়ে থেকে দাঁড়িয়ে বাসটাকে দেখছিলেন সমাপ্তিদেবী। তাঁর মাথায় সিঁদুর। বাসটা যেন এতক্ষণ তার মনের তিনটে স্তরের রাস্তায় চলছিল ।।

ইনকা সভ্যতা, মমি ও বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮


সাল আনুমানিক ১৫০০। সন্তর্পণে সবার আড়ালে চোখের জল মুছলেন প্রৌঢ় ব্যক্তিটি। একটু আগেই তার বছর ৬ এর ছেলেকে আন্দীজ পর্বতমালার লুল্লাইল্লাকো আগ্নেয়গিরি র অনেক উপরে মাটি র ৫ ফুট গভীরে রেখে এসেছেন তিনি। লুল্লাইল্লাকো কথাটার আক্ষরিক অর্থ হল - মিথ্যে ছলনাময়ী জল। এরকম নাম হওয়ার কারণ - ওই আগ্নেয়গিরি  হল পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। উচ্চতা অনেক হওয়ার কারণে উপরে বরফ থেকে গলে জল হয় , কিন্তু নীচে নামতে না নামতেই পাহাড়ের গায়ে শোষিত হয়ে যায়। তো যাই হোক, বর্তমান ম্যাপ অনুযায়ী, আর্জেন্টিনা আর চিলির বর্ডারে এই আগ্নেয়গিরি। যার খুব কাছেই আবার আটকামা মরূভূমি। আসলে আমরা আজ একটুক্ষণের জন্য চলে যাবো আমেরিকার ইনকা সভ্যতার সময়কালে। হ্যাঁ, ইনকা সভ্যতার বিস্তার বর্তমান পেরুর কুসকো কে কেন্দ্র করে হলেও তার বিস্তার আর্জেন্টিনা,  চিলি অবদিও ছিল । প্রৌঢ় ব্যক্তিটির ছেলে কিছুতেই ওখানে যেতে চাইছিল না। প্রচুর ছটপট করায় ওকে নিজের হাতে শক্ত করে বেঁধে ওই আগ্নেয়গিরি র যেখানে উষ্ণতা জিরো ডিগ্রী সেলসিয়াস এর অনেক নিচে সেখানে মাটির পাঁচ ফুট গভীরে আরো দুজন মেয়ের সাথে ওকে নামিয়ে আসা হয়। ওরা খুব ভালো জানে, ওই ঠান্ডায় আর আটকামা মরূভূমির শুকনো ওয়েদার ওদের এখনো অনেক বছর একইরকম ভাবে রেখে দেবে। শুধু থাকবেনা ওদের প্রাণবায়ু। মমি হয়ে থেকে যাবে। বাকি দুজন ও ওদের মত একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মেয়ে। একজনের বয়স বছর পনেরো। আর একজন ওর ছেলের থেকে একটু ছোট। ওদের সবাইকেই কোকো গাছের নির্যাস খাওয়ানো হয়েছে যাতে ওরা ঘুমিয়ে পড়ে ওই বরফশীতল আবহাওয়া তে । শান্তিতে নিথর মোমের মূর্তির মত। ওদের প্রাণবায়ু বেরোলেই ইনকা সভ্যতার উপর যে দুর্ভিক্ষের অভিশাপ চলছে সেটা থেকে মুক্ত হবে এলাকা বাসীরা। এরকম বিশ্বাস তাদের। এই প্রথাকে "ক্যাপাকোচা" বলে।  কে জানতো তার ১০০ বছরের মধ্যে ইনকা সভ্যতা কে গ্রাস করে নেবে কলম্বাসের পথ ধরে আসা স্প্যানিশরা। ওদের ভাষা বাংলা নয়। রবীন্দ্রনাথ তখনো জন্ম নেন নি। কিন্তু মানুষের অনুভূতি তো পালটায় না।  কে জানত হয়তো ওই কাল্পনিক প্রৌঢ় পিতার মনে "দেবতার গ্রাস " কবিতার লাইনগুলোই এসেছিল। ওদের ওই বলিদান তখন কাজে এসেছিল কিনা আমরা নিশ্চিত নই। তবে কে জানত ৫০০ বছর পর ২০১৮ সালে সেটা কারো কাজে আসবে? কিভাবে?
তাহলে চলে আসুন , ২০১৮ বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী ২০১৭ র কোয়ালিফায়ার ম্যাচগুলোতে চলে যাই। চলে আসা যাক টিম পেরুর অন্দরমহলে। নিজেদের টিমে গোল করার ভরসা একজন সে ব্রাজিলের ফ্ল্যামেংগো ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে। পেরুর ক্যাপ্টেন পাওলো গুরেরো। ১৭ টা কোয়ালিফাইং  ম্যাচ খেলে পেরুর বিশ্বকাপ খেলা তখনো নিশ্চিত হয়নি। এই অবস্থায় আর্জেন্টিনা র বিপক্ষে ম্যাচ খেলার পর ২০১৭ র ৩রা নভেম্বর পেরু টিমে খবর এল পেরুর ক্যাপ্টেন গুরেরো ডোপ কন্ট্রোল টেস্টে ফেল করেছেন। গুরেরো কে আপাতত ৩০ দিনের জন্য ব্যান করা হল। বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাব এ একসময় খেলে আসা এই সিনিয়র প্লেয়ার কে ছাড়াই পেরু নিউজিল্যান্ড কে হারালো আর বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পেলো। কিন্তু বিশ্বকাপে যে ক্যাপ্টেনকে দরকার। এদিকে ৮ই ডিসেম্বর ২০১৭ তে প্রমাণিত হল গুরেরোর প্রস্রাবে পাওয়া গেছে কোকেন এর একটা মেটাবোলাইট - বেঞ্জোইলক্গ্নিন। তাই উনি এক বছর খেলতে পারবেন না। পেরু টিম ম্যানেজমেন্ট এর মাথায় হাত। খুব ভালো উকিল নিযুক্ত করা হল। কোনভাবে যদি প্রমাণ করা যেত যে পেরুতে যে কোকো পাতা থেকে তৈরি চা খাওয়া হয় সেখান থেকেও ওই বেঞ্জোইলক্গ্নিন তৈরি হয় তাহলেই এই নির্বাসন তোলা সম্ভব। গুরেরো র হয়ে তার উকিল সওয়াল করতে গিয়ে ফিরে যান ইনকা সভ্যতার ওই তিন মমির প্রসঙ্গ এ। ১৯৯৯ সালে আবিষ্কার হওয়া ওই মমি তিনজন এর শরীরে ওই মেটাবোলাইটটি পাওয়া যায়। এদিকে কোকেন কে কোকো পাতার অ‍্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে আইসোলেট করা হয় ১৮৬০ সাল নাগাদ। মমি গুলো তো তারও পুরানো। তার মানে ওদের শরীরে ওই মেটাবোলাইট এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, কোকো পাতার নির্যাস খেলেও ওই মেটাবোলাইট পাওয়া যেতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক রা এই মতবাদের বিরোধিতা করতে পারেন না। কারণ তারাই ১৯৯৯ সালে ওই মমিকে গবেষণা করে বলেছিলেন, যেহেতু কোকেন তখনো আবিষ্কার হয়নি, কোকো পাতার নির্যাস খাইয়ে তাদের এইখানে ঠান্ডায় জমে যেতে ফেলে যায় ইনকা সভ্যতার লোকজন রা। এই সওয়াল শুনে ব্যান উঠে যায় গুরেরো র উপর থেকে। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরোতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়া কে হারানোর পেছনে গুরেরো র অবদান বিশাল। একটা ভালো গোল নিজে করেছেন, একটা গোলের পেছনে গুরেরো র ক্রস। ফ্রান্স ও ডেনমার্ক কে গ্রুপ লিগে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে পেরু।
আমরা কেউ জানিনা, গুরেরো সত্যি কোকেন নিয়েছিলেন কিনা।
তবে এটুকু জানি, চিলি, প‍্যারাগুয়েকে হঠিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলা পেরুর সম্মান রাখার পেছনে অবদান রয়ে গেলো সেদিনের ইনকা সভ্যতার তিন মমির।।

তথ্যসূত্র : Dr Angshuman Roy, Google news articles and Wikipedia

জিহাদ

" বন্ধুরা, সময় এসেছে আমাদের উপর যা অন্যায়, অবিচার হয়েছে তার জবাব দেওয়ার। আমাদের মধ্যে দুজন জিহাদি এখুনি রওনা দেবেন যকৃতের উদ্দেশে...."

সভায় চলছিল কিছু টিউমার সেলের মহান নেতার ভাষণ। আমরা এখন দুজন শ্রোতার কাছে যাব।।দুজনেই সচেতন স্যাম্পলিং এর শিকার।
একজন বললো
 - উফ্, এরকম গায়ের উপর চাপাচাপি করার স্বভাব গেলনা, না??
 - দোস্ত, এটা কি কথা, জন্মেছি ক্যান্সার সেল হয়ে, আমাদের এই বস্তিতে ভালোভাবে বেড়ে ওঠার তো নিয়ম নাই। উদ্বাস্তু হয়ে গায়ের উপর চাপাচাপি করেই তো বাঁচতে হবে।
 - চুপ কর্, আমাদের মহান নেতা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন।
 - হ্যাঁ, জানি বলির পাঁঠা আমাদেরকেই বানাবে।কুফার সেলের নাম শুনেছিস?? আমাদেরকে গিলবে বলে বসে আছে।
 - এই চুপ, আমাদেরকে মহান নেতা উৎসেচকের টিকা পড়াতে আসছেন।

মহান নেতা এসে বললেন দুজনকে,
 "বন্ধুরা , এটা ধর্ম রক্ষার যুদ্ধ। এতদিন ওদের টি-সেল আমাদের মারতো। এবার আমরা এর জবাব দেব। পথে যেতে যেতে কোন টি-সেলের হাতে যদি আপনাদের মৃত্যু হয়, তাহলে মনে রাখবেন আমরা যখন গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাব, সেই সোনার দিনে আপনাদের এই বলিদান সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। আপনারা ওখানে দেখে সিগন্যাল পাঠালেই আমাদের অস্ত্র মিছিল যকৃত কলোনি তে পৌঁছে যাবে। জয় টিউমার"

- জয় টিউমার। জয় টিউমার।

 টিউমার সেল ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুই দোস্ত এগিয়ে গেল কোলাজেন সীমান্তের দিকে। একজন আরেকজন কে জিজ্ঞেস করলো।

 - দোস্ত এই জিহাদে কার লাভ??
 - মানে?
 - মানে জানিসনা??  ধর যদি পথে আমার মৃত্যু হয়, তখন আমার কাছে তো এই দুনিয়া শেষ।
 - হ্যাঁ, কিন্তু তার সুফল পাবে আমাদের পরের প্রজন্ম।
 - কিন্তু দোস্ত আমরা যদি চারিদিকে ছড়িয়ে যাই, তখন আমরা সেই মরা দেশের রাজা হয়ে কি করব ??

 দুজনের মধ্যে নীরব কুয়াশা নেমে এল।তাকে ভেদ করার ক্ষমতা দুজনের কারোরই ছিলনা। সামনেই দেখা যাচ্ছে রক্তবাহের লাল আভা।এপিথেলিয়াল লেয়ার পেরোলেই দুই বন্ধু ঢুকে পড়বে রক্তস্রোতে।।

পরমাণু-র গল্প

পাড়ার পান সিগারেটের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলো কিছু ইলেকট্রন। আমি একটি বিশেষ সংবাদপত্র পড়ে হাম্পটি-ডাম্পটি কণা খুঁজতে বেরিয়েছিলাম।

ইলেকট্রনগুলো সারাদিন ডিপ্রেশনের কথা বলে, বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে মেঘের মত ঘুরে বেড়ায় ক্লাবে ক্লাবে। হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা আজও তাদের ভবিষ্যৎ ঘিরে বর্তমান। শুধু টিউশন থেকে পাড়ার যুবতী মেয়েগুলো যখন সন্ধ্যেবেলা ফেরে ওদের দেখে, টোন কাটে, চারিদিকে ঘুরঘুর করে। মেয়েরা পড়শি প্রো-টোনের দল, পজিটিভ এনার্জি দিয়ে যায় ওদের মনে। চারিদিকে ওদের দাদা, অভিভাবক নিউট্রন এর মত ঘিরে থাকায় আজ অবদি ইলেকট্রনদের প্রেমপত্র বিতরণ হল না। নাহলে কত প্রেমের চিঠি কত ভাবে লেখা হয়ে পড়ে আছে। ওদের দেখে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে কিছু ইলেকট্রন, কিন্তু ওরা চলে গেলে আবার নেতিয়ে যায়। ওদের নাম ফোটন মস্তান ইলেকট্রন।

তো ওদের জিজ্ঞেস করলাম
- ভাই তোমরা হাম্পটি ডাম্পটি কে দেখেছো?

- দাদা আমরা তো "হাম্পটি শর্মা কি দুলহনিয়া" দেখেছি। তাও অনেক আগে। আপনি টরেন্টে পেয়ে যাবেন।

- আরে না সেটা নয়। এটা একটা অন্য জিনিস।

- কি জিনিস দাদা?

- যেটা ছাড়া সমাজ চলেনা, যেটা মানুষের উপর মানুষের উপর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনে।
একটা মোটা ভারী নাম "আদর্শ "। খুবই ক্ষণস্থায়ী আর ভারী। হাম্পটি ডাম্পটির মত।

( সবাই সমস্বরে হাসলো)

আমি আবার বিনীত ভাবে বললাম -
আরে রাস্তা ঘাটে খুঁজতে বেরিয়েছি পেপার পড়ে, তাকে নাকি খুঁজে পাওয়া গেছে। তারপর দেখলাম পূজার নাম করে বক্স বাজিয়ে মদ খেয়ে উত্তাল নাচ চলছে। বাম হাত আর বাঁকা পথ এ এত সক্রিয় মানুষ। তারপর দেখলাম সব কিছুই শর্ট আজকাল। সম্পর্ক। বন্ধুত্ব। ঘরে এক, ফোনে দশ ; এক রাতের মজা। শুধু প্রেমের সম্পর্ক নয়। খুব সেনসিটিভ সম্পর্ক যেগুলো যেমন শিক্ষক-ছাত্র, ডাক্তার-রুগী, বাবা-মা-ছেলে সব জায়গায় খুঁজলাম। মানুষের মূল্যবোধ, জীবনের দাম ছাড়া পেট্রোল - ডিজেল সহ সব কিছুরই দাম শুধু বাড়ছে। বন্ধু বন্ধুকে ঠকাচ্ছে। শর্ট যুগে কোথাও হাম্পটি ডাম্পটি কে পেলাম না।

একজন ইলেকট্রন আমার দু:খ বুঝে বললো-
আরে দাদা, হোয়াটস্যাপ, ফেসবুকের যুগে মানুষের আটেনশন স্প্যান এত কমে গেছে
আজকাল সব কিছু শর্ট। আগে লোকে গোটা কবিতা পড়তো আর গোটা গান শুনতো। এখন একটা লাইন শোনে। আর কয়েক বছরে দেখবেন কয়েকটা শব্দ শুনবে। পরের শব্দের, পরের লাইনের প্রাসঙ্গিকতা কি ভেবেনা দেখলেও চলবে। লিরিসিস্ট দের ও সুবিধে, এক ছিলিম গাঁজা খাও যা মাথায় আসছে লিখে যাও।

- যেমন কিরকম?

- যেমন ধরুন, একটি মেয়ে তার ডিপি র নীচে আজকাল ক্যাপশন দেয় ধরুন "প্রতি চুম্বনে স্থির"। সে নিজে সেই গানটা পুরোটা শুনেছে কিনা সন্দেহ। তার শর্ট আটেনশন স্প্যান ওই তিনটি শব্দ শুধু ক্যাচ করেছে।

- কিন্তু মানুষ তো উপন্যাস পড়ছে।

- ছাই পড়ছে। কতজন আজকের যুগের লোক উপন্যাস পড়ে হাতে গুনে বলা যাবে। এখন মানুষের ছোট গল্প পড়ারও সময় নেই। অণু গল্প, পরমাণু গল্প এর যুগ বুঝলেন দাদা। এখন তো সরকার ডাক্তার হওয়ার ও শর্টকাট ব্যবস্থা করছে কয়েক মাসের ব্রিজ কোর্স করে।

- তাহলে কি হাম্পটি-ডাম্পটি কণাকে কোথাও খুঁজে পাবোনা ?? পেপারে যে লিখেছে সে নাকি সার্ণের সুড়ঙ্গ এ সুড়সুড়ি দিচ্ছিল।

- আরে ওরা এপ্রিল ফুল বানিয়েছে দাদা। সাংবাদিকেরও তো খবর দরকার। তাই ছেপে দিয়েছে। বাড়ি ফিরে যান। হাম্পটি ডাম্পটি কে শুধু বাচ্চাদের পড়ার বইতেই খুঁজে পাবেন ।।

Vaccine

স্থান - National Institute of health , Bethesda, Maryland, জুলাই, ২০১৪ ...

অন্ধকারে কিছু ছায়া ঘোরাফেরা করছে। হঠাত একজন আওয়াজ করে উঠলো। 'ওহ মাই ফিংগার, ফাক্।' হাতের গ্লাভস্টা খুলতেই একটা রক্ত আর ঘামের ফোঁটা আর একজনের হাতে ধরে রাখা বস্তুতে পড়লো। আর একজন বললো 
- হে ডেভিড, একবার দেখে নাও বেবি ঠিক আছে কিনা ? আমারটায় ঠিক আছে।

ডেভিড একবার বস্তুটা খুলে দেখে নিল। রক্ত আর ঘাম থেকে কিছু ব্যাক্টেরিয়া আর ফাজ ভাইরাস ওই বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করলো। হঠাত সেই মুহূর্তে একটা পুলিশের ভ্যানের সাইরেনের আওয়াজ পাওয়া গেল। ওই অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো তে পালাতে গিয়ে ডেভিড হোঁচট খেয়ে পড়লো। তার হাতের বস্তু থেকে একটু কাঁচের মত বস্তু মাটিতে ঠোক্কর খেলো। ব্যাক্টেরিয়া আর ফাজ ভাইরাস প্রবেশ করলো স্মলপক্সের গুহায়। 'আমার মনে হয় পাত্রে চিড় ধরেছে। ' ডেভিড চেঁচিয়ে উঠলো। 
'আমরা পাত্র পালটে ডেলিভারি দেবো। এখন চলো '

********

স্থান - বায়োসেফটি লেভেল-৪ ল্যাব, State Research Center of Virology and Biotechnology VECTOR, Russia, জুলাই, ২০১৪

বিজ্ঞানী ড. ইউগুশি পেপারে একটা খবর দেখে চমকে গেলেন। আমেরিকার ম্যারিল্যান্ডে এফ.ডি.এ ল্যাবে স্মল পক্সের কিছু ভায়াল পাওয়া গেছে। ফোন করলেন কাউকে, হালকা হেসে জানতে চাইলেন - কোড ৯১৪, বেবি কবে আসছে আমাদের এখানে ? আমাদের ভ্যাকসিন তৈরির টিম রেডি। 

******** 
স্থান - ভারতের একটি গ্রাম

'কি করছো ? ' প্রায় এক সপ্তাহ পর ফোনে প্রেমিকার এই প্রশ্নের কি উত্তর দেওয়া উচিত ভেবে পেলোনা সৌমিত্র।
 অনেক অভিমান ভরা গলায় বললো 
- ' এটাই ভাবছিলাম আমি সিংগেল না কমিটেড ?? ' 
- দেখো তুমি আবার একি কথা বলছো, তুমি তো জানো আমি একটা খুব কনফিডেন্সিয়াল রিসার্চে আছি। এই রিসার্চে কিছু করতে পারলে আমার দেশে আমি যেখানে চাইবো সেখানে আমাকে লুফে নেবে। আমরা তখন একসাথে থাকবো। 
- হুহ্, লাস্ট এক বছর ধরে এটাই শুনে আসছি, যে কটা দিন রাশিয়া, তারপরেই ভারতে আসবেন মিস রোশনি, সারা জীবন। এত কিসের কাজ।
 - দেখো তোমাকেও বলেছিলাম বিদেশে আসতে, কিন্তু তোমার সেই দেশী সেন্টিমেন্ট। দেশের জন্য কাজ করবো। গ্রামে ডাক্তারি করবো। আর তুমি যদি সত্যিই জানতে চাও আমি নিজেই কিছু জানিনা, আর যেটুকু জানি ফোনে বলতে পারবোনা। আমাদের সবার ফোন ট্যাপ হয়। 
- ফাইন, হোয়াট আ রিলেশন ! শোন আমি আসছি রাশিয়া। এক মাসের মধ্যে।

ফোনটা কেটে দিল সৌমিত্র। পেপারটা খুলল আজকের। হেডিংটা দেখে চমকে গেল। আমেরিকা আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের হাত মেলানোর ছবি প্রথম পাতায়, আর উপরে লেখা দ্বিতীয় গাল্ফ ওয়ার কি আসছে ? প্রতিবেদন টা পড়ে বুঝলো, গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়না কথাটা। গোপন সূত্রে খবর, আমেরিকা আর রাশিয়া হাত মিলিয়ে একটা নতুন অস্ত্র গোপনে ইরাক, আরবের দেশ র উপর প্রয়োগ করবে। তারপর সব তেলের খনি সব চলে যাবে এই দুই শক্তির দখলে। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আবার চাংগা হয়ে উঠবে দুই দেশ। তারপর গোটা পৃথিবী এদের পায়ের তলায়। নিজের মনেই হাসল সৌমিত্র। রোশনি রাশিয়া তে যবে থেকে আছে, এই বাইরের খবর গুলো ভালো করে খোঁজ রাখে সে। সে জানে আমেরিকা আর রাশিয়া এমন দুটো শক্তি, পৃথিবীতে এদের অসাধ্য কিছু নেই। আর এরা দুজন মিললে পৃথিবী ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। তারপর অবশ্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরবে। এর মধ্যে যদি উ: বা দ: কোরিয়ার মত কিছু পাগল দেশ আণবিক/ পরমাণবিক শক্তি প্রয়োগ করে ফেলে তাহলে এ পৃথিবীর আর কিছু বাকি থাকবেনা। যে কজন মানুষ বাঁচবে আবার সেই আদিম যুগে ফিরে যাবে। এইসব ভাবতে ভাবতে সে জীবনানন্দ আপন মনে আওড়াতে লাগলো - 
"অদ্ভুত আঁধার এক আসিয়াছে পৃথিবীতে আজ, 
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; 
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই
 পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। 
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি, 
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় মহৎ সত্য বা রীতি,
 কিংবা শিল্প অথবা সাধনা 
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।"

******

স্থান - রাশিয়ার একটি রেস্তোরাঁ

একটি টেবিলে একটি যুগল খেতে বসেছে।
 - তারপর বলো এবার তোমার রিসার্চ কি নিয়ে, কি এমন কনফিডেনসিয়াল ? 
- আস্তে। কেউ জানেনা আশে পাশে কোন স্পাই আছে কিনা। 
- দেখো রোশনি এটা কিন্তু ড়িলিউশান অফ পারসিকিউশন। 
- আচ্ছা ডিলিউশান ? ওই দেখো পাশের টেবিলে একজন আমাকে ল্যাব থেকে পিছু করছে। 
- হম্, কিন্তু কিসের এত কনফিডেন্সিয়াল রিসার্চ ? 
রোশনি একটা টিস্যু পেপারে লিখে দিল - স্মল পক্সের একটা মিউটেটেড ভারসান তৈরি হয়েছে, তার উপর কোন একটা কারণে ভ্যাকসিন কাজ করছেনা। তার উপর রিসার্চ, আমেরিকা আর রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে।
 - কিন্তু এটা এত কনফিডেন্সিয়াল কেন ? 
            টিস্যু পেপারে লিখল সৌমিত্র। রোশনি লিখলো জানিনা। অল্প কিছু খেয়ে তারা উঠে পড়লো। টিস্যু পেপার টা পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিলো, মুড়ে। ওরা চলে যেতেই ওই অজানা ব্যক্তি ডাস্টবিন থেকে টিস্যু পেপার খুলে দেখলো। একটা ফোন করলো - স্যার, বেবির খবর বাইরে লিক হয়ে গেছে। 
"ওই দুজনকে জ্যান্ত তুলে নিয়ে এসো "
 ওপাশ থেকে অজানা কন্ঠ উত্তর দিল।

*****

স্থান - রাশিয়ার একটি গোপন আর্মি বেস ক্যাম্প

চোখ খুলতেই মাথাযন্ত্রণা টের পেল সৌমিত্র। চোখ খুলে দেখলো রোশনি একজন মিলিটারি ড্রেসের লোকের কাছে কান্নাকাটি করছে। সৌমিত্র র চোখ খুলেছে দেখে, লোকটি বললো 
- ডা: সৌমিত্র রে। অসাধারণ ট্যালেন্টেড, কিন্তু পড়ে আছে ইন্ডিয়ার কোন নোংরা কোণে। আর তার বউ কে পাঠিয়েছে রাশিয়ার ল্যাবে রিসার্চ করতে।

সৌমিত্র উত্তর দিল 
- আপনি কে? আমাদের কেন এখানে এনেছেন? 
- বলছি বলছি। আজই তোমাদের শেষ দিন। তার আগে সব জেনে যাও। আপনি খুব বুদ্ধিমান ডা: রে। নাহলে এই প্রশ্ন টা আপনার মাথায় স্ট্রাইক করতোনা যে কেন এত কনফিডেন্সিয়াল। আমি কে সেটা না জানলেও চলবে। আপনি নিশচয়ই জানবেন আমাদের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হাত মিলিয়েছেন। 
- হ্যাঁ। 
- এই দুই দেশ সব তেলের খনি নিজের অধিকারে করতে চায় গোপনে যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জ কোন টের না পায়। জানেন অস্ত্র কি? 
- না। নীরব অস্ত্র কোন। বোমা তো হবেনা। নইলে সবাই বুঝে যাবে। 
- এক্জাক্টলি, আমাদের অস্ত্র হল বায়োউইপন। স্মল পক্স ভাইরাস ইরাকের বাতাসে, খাবারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কে ছড়িয়েছে কেউ জানতেও পারবেনা। কিন্তু মুশকিল হল, আমেরিকার ল্যাব থেকে ভাইরাসের স্যাম্পেল চুরি করতে গিয়ে একটা স্যাম্পেল কোনভাবে কন্টামিনেটেড হয়ে মিউটেট করে। এখন সেই ভাইরাসে ভ্যাক্সিন কাজ করেনা। তাই যতদিন না সেই ভ্যাক্সিন আমরা হাতে পাচ্ছি, আমরা দ্বিতীয় সাইলেন্ট গাল্ফ ওয়ার শুরু করতে পারছিনা। আমাদের ল্যাবে অলরেডি দুজন সায়েন্টিস্ট, তিনজন কর্মী স্মল পক্সে মারা গেছে। এই ভাইরাস এখন শুধু ম্যালিগনান্ট আর হিমোরহেজিক স্মল পক্স করে। মাইল্ড ডিজিজ করেনা। জেনে গেলেন, এবার মরতে প্রস্তুত হন।
 - আচ্ছা আমি যদি বলি আমায় বারো দিন সময় দিন আমি এর ভ্যাক্সিন বের করে দেবো।
                              সৌমিত্রর কথায় লোকটির চোখ চিকচিক করে উঠলো। 
"ওকে এটাই যদি আপনাদের শেষ ইচ্ছে হয়, তাহলে তাই হোক। কোইন্সিডেন্টালি, স্মল পক্সের ইনকিউবেশন পিরিওড ও বারো দিন। আজ আপনাদের শরীরে ওই মিউটেটেড ভাইরাসের স্যাম্পেল ইঞ্জেক্ট করছি, বারোদিনের মধ্যে না কিউর বের করতে পারলে আপনারা মারা গেলেন। "

******

১২ নং দিন, রাত দশটা, স্থান- রাশিয়ার একটি ল্যাব,

"আর কয়েক ঘন্টা তারপরেই স্মল পক্স আমাদের শরীর শেষ করে ফেলবে, আমরা মরে যাব, আজ শেষ দিনে তোমাকে তুই করে বলবো সেই শুরুর দিন গুলোর মতো " বলে হা হা করে হাসতে লাগলো রোশনি। 
"হুম্ গাঁজাটা প্রথমবার ভালোই কাজ করেছে বুঝতে পারছি তোর শরীরে" সৌমিত্র বললো। 
- " বাজে না বকে, কিছু উপায় বের কর, ইডিয়ট। তখন তো বেশ বড় মুখ করে বলে এলি বারো দিনের মধ্যে... আমরা বছর ভর উদয় অস্ত পরিশ্রম করে কোন উপায় পেলাম না, আর উনি বারো দিনে... " 
- " ভাব্ , আমরা আমাদের জীবনের শেষ বারোটা দিন একসাথে কাটালাম ঘড়ি দেখে সময় গুনে । আমরা চাইলেও পারবো না পালাতে। চারিদিকে গার্ড। "
 - " সাট আপ জাস্ট থিংক। আমাদের হাতে খুব কম সময় বেঁচে আছে। " 
- "বারোদিন বিভিন্ন প্রাণীতে তো আমরা আন্টিবডি সৃষ্টি করার অনেক চেষ্টা করলাম হানি, লাভ তো হল না। লাইফ আর লাভ দুটোই সারভাইভ করার ঠিক রাস্তা খুঁজে নয়। এই স্মল পক্সের স্যাম্পলটাও সেরকম। " 
- আমি মরতে চাইনা, আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমাদের একটা বাংলো থাকবে। আমাদের ছেলে হবে। সে নাসার সাইন্টিস্ট হবে।
 - নাসা না ইসরো। 
- সেই দেশী সেন্টি। 
- আর ছেলে না মেয়ে।
 - যেই হোক, আমি বাঁচতে চাই, আমাদের কত প্ল্যান ছিল বিয়ের পর।
 - কে তুমি ? 
- মানে?
 - Time kills us everyone .. what is reality ? Who are you ? I just don't exist in some dimensions in this multiverse .. I am a prisoner of this time loop .. Every loop leads to different possibilities , probabilities.. One after another time loops .. repeating the same incident but different ways and results .. What is death ? It's just projection into another dimension leaving our physical body .. along a time loop .. Honey, when I met you i felt deja-vu .. as if it occurred earlier .. so even if we die we will meet again in different form, in different time loop, ডিফারেন্ট ডাইমেনসান with different probabilities and results .. আমাদের তখন ছেলে বা মেয়ে হবে। আমরা যদি এক না হতে পারি, তার মানে আমাদের ভালোবাসা মিথ্যে নয়, হয়তো এটা সেই আমাদের ডাইমেনসান নয় বা টাইম লুপের সেই ব্রাঞ্চ টা নয়। 
- তোর মাথা আর তারকাটা নেই, আর খাস না গাঁজা, পুরো ওয়াই-ফাই হয়ে গেছিস। 
- ওয়াইফের সামনে ওয়াই-ফাই হয়েছি। অসুবিধে কোথায়।
 -আচ্ছা আমি এখুনি ভাবছিলাম, আমাদের তো এতক্ষণে কিছু না কিছু উপসর্গ দেখা যাওয়ার কথা, কিছুই সেরকম হচ্ছেনা কেন? 
- এসব বাদ দে, মৃত্যুর সামনে অনেক কবিতা মাথায় আসছে শোন । 
খোলা চ্যাটবক্সে শব্দের ভীড়, 
লেখা হয় খুব দ্রুত, 
আবেগে মন্ত্রপুত, 
জানি শেষে সব মুছে দেবো,
 তোমার কাছে তো সবই অর্থহীন। 
তবু বারবার লিখি, অদৃশ্য কান্নায় রংগীন।

- ধুস এটা ঠিক রোমান্টিক হলনা। 
- আচ্ছা, এটা শোন। 
বহুদিন কাব্য আসেনা, 
শুষ্ক পাহাড় পাড়ি দিতে দিন ফুরায়, 
বিক্ষিপ্ত মন মুক্তিপণ খোঁজে, 
তবু কাব্য আসেনা। 
তারপর একদিন কালো মেঘে, বৃষ্টিপাত।
 তুমি ঝোড়ো হাওয়া হয়ে এলে। 
জানালায় ছিলো দারুণ আঘাত, 
তবুও শিহরণ প্রতিটা সেলে।
 খিদে পেটে রোদে রোদে সারাটা দিন, 
যখন টাকা নিজের দাম বোঝায়, 
রাতে ঘরে ফিরে আসার ডাক দেয়,
 তোমার লিখিত খোঁজ-খবর। 
নিখোঁজ প্রেম দানা বাঁধে, 
যখন নিজের ভুলে যাওয়া কথা, 
তোমার দেওয়ালে কাঁদে। 
অবিশ্বাসী নাস্তিকও তখন ধূপ জ্বালায়, 
ভালোবাসার ফাঁদে। 
তবুও নীরবে গোপন, 
অস্ফুট স্ফুরিত আশা, 
তোমার মুখে রোজ তবু শুনি, ভালোবাসা, ভালোবাসা। 

রোশনি !!! 

- কি হল ? 

- জাস্ট একটু আগে কি বললি ? 
- আমি মরতে চাইনা ? 
- না তার পরে। 
- আমাদের কিছুই হচ্ছে না কেন এখনো। 
- হ্যাঁ। হোয়াট আ ফুল উই আর। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি আর ঘরের পাশে ধানের উপর শিশির বিন্দু খুঁজে পাইনি।
- মানে? 
- হানি, এই প্রোজেক্টে কজন মারা গেছে ইনফেকশনে আর কজন মারা যায়নি তাদের ডিটেল কেস হিস্ট্রি চাই। এক্ষুনি। দ্যা ফ্যাক্টর উই আর সার্চিং ইজ ইন আওয়ার বডি, হানি। 
- হোয়াট্ !!!?

***** 
পরের দিন
 স্থান -রাশিয়ার আর্মি বেস ক্যাম্প

- আই আম গ্ল্যাড আন্ড সারপ্রাইজড্ টু সি বোথ অফ ইউ আলাইভ। এনি প্রোগ্রেস ড. রে?
 - হ্যাঁ।
 - কি বলছেন? বারো দিনে !! 
- আমি নই, আপনার বিজ্ঞানী রোশনি না থাকলে এটা সম্ভব ছিল না। আর আমি শুধু পথ দেখাবো আর সেই পথের পক্ষে প্রমাণ দেবো। এর পর আপনাদের দায়িত্ব। তবে একটাই শর্তে, যদি বেঁচে থাকি আমাদের মুক্তি চাই। 
- আই মে বি আ ভিলেন টু ইউ। কিন্তু আমি একজন হনেস্ট ভিলেন। বৃহত্তর স্বার্থে আপনাদের সাথে এরকম করতে হয়েছে। প্লিজ টেল মি স্যার, আবাউট দা ওয়ে। 
- দেখুন যারা এই প্রোজেক্টে মারা গেছে স্মল পক্স ইনফেকশনে তাদের প্রত্যেকের কেস হিস্ট্রি আমরা দেখেছি। ওদের মধ্যে অনেক কমন ফ্যাক্টরের মধ্যে একটা কমন ফ্যাক্টর হল, ওরা সবাই এমন দেশে বড় হয়েছে, যেখানে টিউবারকিউলোসিস এনডেমিক নয়। ফলে ওদের শরীর কখনো এক্সপোজড্ হয়নি টিবি তে। ওদের শরীরে কোন প্রাইমারি কম্পলেক্স নেই টিবি ইনফেকশনের। 
- সো হোয়াট?
 - কিন্তু এবার আমরা তাদের কেস হিস্ট্রি দেখেছি যারা স্মল পক্সের ওই স্যাম্পেলে ইনফেকটেড হয়েছে কিন্তু তারা মারা যায়নি। বরং যেখানে স্মল পক্সের কেরিয়ার হয়না। ওরা সেই ক্যারিয়ার স্টেট এ চলে গেছে। ওদের মধ্যে কমন হল ওরা এমন দেশে বড় হয়েছে যেখানে টিবি এন্ডেমিক। ওদের প্রত্যেকের ফুসফুসে ঘন্ ফোকাস রয়েছে। 
- হোয়াট ইজ দিস রাবিশ্। হোয়ার ইজ দ্যা ওয়ে ?? 
- প্লিজ লেট মি ফিনিশ। এখান থেকে একটা হাইপোথসিস ড্র করা যায় যে, স্মল পক্স ওদের শরীরে গিয়ে আন্টিবডি আর ইমিউন সেল থেকে বাঁচতে এমন একটা জায়গা খোঁজে যেখানে সে নিরাপদ। আর ভুল করে তারা ওই ঘন্স ফোকাস কেই ভেবে ফেলে সেই নিরাপদ জায়গা। এই মিউটেটেড স্মল পক্সের একটা ফিচার হল সে নিউরামিনিডেজ, হায়ালিউরুনোডেজ এইসব এন্জাইম বের করে।ঘনস্ ফোকাসের স্পেসিফিক কোন একটা ফ্যাক্টরের পিছু নিয়ে স্মল পক্স ওই এনজাইমের সাহায্যে ফোকাসে ঢোকে, ওখানে বাসা বাঁধতে শুরু করে, কিন্তু ওই ফোকাসে এমন এমন কোন ফ্যাক্টর থাকে যেটা ওদের আর ওখান থেকে বেরোতে দেয়না। তাই ওই ভাইরাস আর ব্লাড স্ট্রিমে না গিয়ে ওখানেই বাসা বাঁধে। মাঝে মাঝে কিছু ভাইরাস কে আর ফোকাস আটকে রাখতে পারেনা। তখন সেই হিউমান বিইং টেম্পোরারি কেরিয়ার হয়ে যায়। তাই উপসর্গ আসে, কিন্তু মরেনা। 
- কিন্তু এটা তেও এই স্মল পক্স কে আটকানোর উপায় পেলাম না। 
- এখনো আমি তো শেষ করিনি। যাদের আগে আক্টিভ ইনফেকশন অফ টিবি হয়েছে, তাদের শরীরে যে প্রচুর আন্টিবডি তৈরি করার মেমোরি সেল তৈরি হয় সেটাই এই মিউটেটেড স্মল পক্স কে টিবি ব্যাসিলিতে থাকা কোন একটা কমন ফ্যাক্টর এর জন্য টিবি ব্যাসিলি চিনে বসে আর মেরে ফেলে। 
- হোয়াট আ বুলশিট স্টোরি। ক্যান ইউ প্রুভ ইট্ ? 
- ইয়া। প্রমাণ আপনার সামনেই দুজন দাঁড়িয়ে। আমাদের দুজনের শরীরে স্মল পক্সের জন্য একটা ফোস্কাও বেরোয়নি। আর আমাদের দুজনেই ইন্ডিয়ান। যে দেশ টিবির খনি। আমাদের দুজনেরই সৌভাগ্যজনক ভাবে টিবি হয়েছে আগে। 
- ওহ মাই গড, ইউ আর আ জিনিয়াস। ইউ বোথ আর ফ্রি টু গো। গো মেক ইউর লাইফ। 

****

দু মাস পর স্থান - ভারতের একটি গ্রাম

ফোনটা রেখে সৌমিত্রর দিকে ফিরে তাকালো রোশনি। 
- "কি হয়েছে? " সৌমিত্র জিজ্ঞেস করলো। 

- আমাদের থিওরি বেস করে এক্সপেরিমেন্ট সফল। They injected in a Guinea pig BCG vaccine followed by that virus sample . Then they extracted that confused non-specific antibody . ইউ সি স্মল পক্স ফাউন্ড ইটস্ ওয়ে। আওয়ার ইমিউন্ সিস্টেম অলসো হ্যাভ ফাউন্ড দা ওয়ে।

- কিন্তু লাভ, আমাদের কি হবে? 
- মানে? 
- উড্ ইউ লাইক টু বি মাই ভ্যাক্সিন, ম্যাডাম্ ? ফরেভার। 
- ইউ আর জাস্ট..... হা হা হা। বদমাশ ভাইরাস কোথাকার। 
- ভাইরাস তাও ভালো ভাই বলিস নি!! 
- হা হা হা।



[ Written On - 28 th July, 2017]
[Special Thanks to - Dr Swaraj Mandal] 

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...