Tuesday, December 31, 2019

বিকল্পের সন্ধানে

একটা ডিগ্রীকে কিভাবে দামী বানানো যায়? ডিগ্রীধারীরা সেই ডিগ্রী নিয়ে কি করছে দেখে নাকি কজন সেই ডিগ্রীর এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ব্যর্থ হল সেই হিসেব দেখে?
এম.বি.বি.এস বিশাল ডিগ্রী, কারণ জয়েন্ট বা হালের নিট দিয়ে অনেকে ব্যর্থ হয় এই ডিগ্রী তে ভর্তি হতে।  কি অদ্ভুত যুক্তি!!! কেউ প্রশ্ন করেনা মেডিক্যাল জয়েন্টে পদার্থবিদ্যার প্রশ্ন কেন আসে? সাপের কামড়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে কোথায় স্রোডিঞ্জারের ফরমূলা কাজে লাগে? বা হার্ট ফেলিউর চিকিৎসা করতে গিয়ে বাইনারি র অংক বা সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে কি জ্ঞান কাজে লাগে? এন্টান্স পরীক্ষায় তার ভিত্তিতে সিলেকশন কেন করা হয় ? যেটুকু বেসিক অংক বা পদার্থবিদ্যা লাগে সেটা ক্লাস এইটের বিদ্যে। কেউ রিসার্চ করতে চাইলে সে পড়ুক। কিন্তু যে এম.বি.বি.এস পড়তে এসেছে মানে সে সাপের কামড়ের চিকিৎসা শিখতে এসেছে। রিসার্চ করতে গেলে নতুন ভাবে করুক। কতজন ডাক্তারবাবু ইউপ্যাক সিস্টেম এ জৈব যৌগের নামকরণ ডাক্তারি পড়তে কাজে লাগে? আমরা এটা প্রশ্ন করিনা এন্ট্রান্স পরীক্ষাগুলোতে কোন ডিগ্রীর যোগ্যতা নির্ধারণ হয় না এলিমিনেশন প্রসেশ হয়?
কেউ দেখে একজন এমডি বা এমএস কত চিকিৎসার দিক খুলে দিল? কেউ দেখেনা একজন এম.বি.বি.এস কতজন কে কনফিডেন্টলি সিপিআর দিয়ে বাঁচালো। কত রোগীকে কত অন্যভাবে ট্যাকেল করলো। সবাই দেখে কিছু জেরক্স করা কাগজে লেখা প্রোটোকল আর ফ্লোচার্ট মুখস্ত করে কে কত টাকা আয় করলো। কেউ দেখেনা একজন আই.আই.টি পাশ কটা যুগান্তকারী মডেল বানালো, সবাই দেখে সে একটা কম্পানিতে কত টাকার প্যাকেজ পেলো চাকর বা মেশিন হিসেবে। একটা উদাহরণ দিই। আই.আই.টি. খড়গপুর থেকে বিটেক খুব দামী। কারণ ভালো প্যাকেজ পাওয়া যায়। আর প্রচুর এপ্লিক্যান্টের সিংহভাগ যায় বাতিলের খাতায়। কিন্তু এই একই জায়গা থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী এম.এম.এস.টি. ডিগ্রীর সেরকম কোন দাম নেই, অনেকে জানেইনা৷ কারণ? বলে দিতে হবে?
তাহলে কি দাঁড়ালো আমাদের সমাজ বা শিক্ষাব্যবস্থাতে, সেই ডিগ্রীর ই দাম আছে যেই ডিগ্রী পেতে বেশী সংখ্যক লোক তথাকথিত যোগ্যতা না থাকায় বাতিল হয়। সমাজ, কোম্পানি সবাই এই সব ডিগ্রীর পেছনে বেশি লাইন দেয়। সেদিক থেকে দেখলে সরকারি চাকরি ও একটা ডিগ্রী। আপনি একটি বেকার এমবিবিএস হয়ে এক বছর বসে দেখুন, যেকোন সরকারী চাকুরিজীবি আপনার থেকে বেশি দাম পাবে। এটা কে শিক্ষা বলা হয়। আমার কিছু টাকা জমলে, আমি একটা অনলাইন-অফলাইন ওপেন কলেজ খুলবো, যেখানে শিক্ষা হবে মুক্ত। যে কেউ যা খুশি শিখতে পারে চাইলে। সিলেবাস কলেজ অথরিটি নয়, ছাত্র রা তৈরি করবে। তারা কি শিখতে চায়, জানতে চায় তার উপর কলেজের ডিগ্রী, কারিকুলাম তৈরি হবে। কোন গ্রেডিং সিস্টেম থাকবেনা। কারিকুলাম এ অনলাইন, অফলাইন দুরকমের জায়গা থাকবে। ছোট থেকে এক্সপেরিমেন্ট করে গেছি৷ আজও করছি ছোট স্কেলে৷ আমৃত্যু করবো৷ হয়তো বড় স্কেলে সফল হবো। আজ যার রাগ করার, ব্লক করার, হাসাহাসি করার করে নিন। যে রোবট শিক্ষাব্যবস্থার দাসত্ব করে খুশি থাকার থাকুন। আমার ওই সিস্টেমকে বন্ধ করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু চাই একটা অলটারনেটিভ সিস্টেম। এই দাসত্ব, বদ্ধ শিক্ষা পেতে পেতে, পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত মানুষেরা সবাই একদিন আমার সিস্টেম কে মান্যতা দেবে। যারা এই সিস্টেমে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে চায় আমাকে নির্দ্বিধায় মেসেজ করুন। আজ, কাল, দশ বছর পর যখন আপনি প্রয়োজন বুঝবেন একটা নতুন সিস্টেমের।। 

Monday, December 23, 2019

নাহলে খেতে পাবোনা

চোখ খুলেই সে কি কান্ড। মুখে কিসব লেগে আছে, রক্ত নাকি? এবাবা উল্টে ঝুলিয়ে রেখেছে কে আমাকে? আমি কি করলাম। এতক্ষণ ছিলাম কোথায়? কিছুই মনে পড়ছেনা। একি আমার পাছায় চপাট চপাট চাপড় মারে কেন? কিছু লোকজন দৌড়াদৌড়ি, চেঁচামেচি করছে দেখছি।
"কে রে? " বলতে যাবো দেখি ভোকাল কর্ড থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছেনা। অগত্যা ওম্ বলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। মুখ থেকে আওয়াজ বেরিয়ে এলো "ওঁয়াও "। খিদে পেয়েছে বলবো দেখি আওয়াজ বেরোয় " ওঁয়াও"। হঠাৎ কেউ কটাস্ করে কাঁচি দিয়ে নাড়ী কেটে দিল। উফ্ লাগেনা নাকি?
তারপর বুঝলাম আমি একটা সদ্যোজাত বাচ্চা। আমাকে নিয়ে সে কি কান্ড তারপর থেকে। দুবছর অব্দি সে কি আব্দার। বাবা বলো, মা বলো, ছড়া বলো। দাবীর শেষ নেই। শান্তিতে থাকতে দিল কি?  আমিও বুঝলাম আমি এদের দাবী না মানলে খেতে পাবোনা৷ অতএব চুপচাপ মেনে নাও যা বলছে। গাল-টাল যা টিপতে চাইছে টিপতে দাও৷ এরপর হঠাৎ করে আমার পৃষ্ঠপোষকের মাথায় কেউ ঢোকায় আমায় বড় করতে হবে। বড় তো আমি এমনিও হতাম। কিন্তু পৃথিবীর নিয়ম, পৃথিবীর শিক্ষা, পৃথিবীতে চাকর হিসেবে কাজ করার উপযুক্ত হতে হবে। শুরুতে বিরক্ত লাগলেও মেনে নিলাম। বড়দের জীবনে অপূর্ণতার শেষ নেই৷ আর বড়দের সমস্যা হল তারা কেউ অপূর্ণতা নিয়ে মরতে চায়না, নিজের অপূর্ণতার বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে তাকে মেরে তবে শান্তিতে মরতে পারে। তাইতো এই আমার মত কত হাজার শিশুর জন্ম প্ল্যানিং করে৷ তো আমার শিক্ষা শুরু হল৷ আমি একদিন চাকর ও হলাম। ইচ্ছে করে আমিও একদিন আবার ছবি আঁকবো। চোখ খুলে এই বিশাল আকাশ দেখবো আর খোলা পবিত্র বাতাসে শ্বাস নেবো। না এ জন্য আমাকে আনা হয়নি।
এই মহাবিশ্বে আমি খুব ক্ষুদ্র নগণ্য একজন। কিন্তু আমার কাছে আমার খিদেই আমার মহাবিশ্ব। কারণ এসব করলে আমি খেতে পাবোনা।। 

Monday, December 16, 2019

একদিন ঝড় থেমে যাবে

২০২৯ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দল তার পছন্দমত প্রার্থী রিসার্চ করে ঘোষণা করে দিয়েছে। কংগ্রেস রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে বাজারে খবর এলো, দেশে এক নতুন রাজনৈতিক দল খোলা হয়েছে। পার্টির নাম "প্রকৃতি"। প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন গাছকে টিকিট দেওয়া হবে। পার্টিটির সৃষ্টি কিভাবে হল কেউ জানেনা। কোন বিজ্ঞানী বলছেন, বাইরে থেকে উল্কার সাথে এর আগমন, কেউ বলছেন অশান্ত ঘোলা জলে বজ্র বিদ্যুৎ ও খারাপ আবহাওয়া "প্রকৃতি"র জন্ম দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা অরিজিন অফ স্পেসিস না খুঁজে মানুষ এই পার্টি কে নিয়ে কি ভাবছে জানতে জনমত সমীক্ষায় বেরোলাম। প্রথমে আমতলা তে গেলাম। সেখানে প্রার্থী আম গাছ। একটি দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম -" এবারের ভোটে আপনাদের কেন্দ্রের প্রার্থী আমগাছকে নিয়ে কি ভাবছেন? "
তিনি বললেন - "আমগাছ হিন্দু না মুসলিম দের পক্ষে সেটা আগে পরিষ্কার করে দিক। তারপর ভাববো। তবে সাধারণ ভোটার হিসেবে আমগাছকে নিয়ে সবাই ভাববে। কারণ আমগাছ ভাষণ দিতে পারেনা। মাইকের শব্দ দূষণ বন্ধ হবে। শুধু অমায়িকভাবে আম দিতে জানে। আমগাছ এর জন্য আমরা নতুন আশা পাচ্ছি।"
আমি মনে মনে স্বগতোক্তি করলাম - আম-আশায় মরে চাষা।
যাই হোক, এবার একজন বামপন্থী দলের সদস্যকে খুঁজে পেলাম। তিনি রণশক্তি পত্রিকা রাস্তার ধারে নোটিসবোর্ডে টাঙানো ছিল, একা একা সেটা পড়ছিলেন। সেই দেখে তাকে শনাক্ত করলাম। হোমো লেফ্ট সেপিএন্স। ওনাকে প্রশ্ন করলাম বিপক্ষের প্রার্থী আমগাছ কে নিয়ে কি ভাবছেন?
তিনি হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করলেন - "যে কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন এ অংশ নিতেই পারে। কিন্তু এবার প্রকৃতি পার্টির প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বাম ভোট কাটার জন্য। "
আমি বললাম - "আপনাদের যা ভোটার শতাংশ তাতে এই কথার যুক্তি কি? "
তিনি বললেন - "প্রকৃতি মানে কি? তারা তো কমিউনিজম্ নীতি মেনেই চলে। যদিও ফল জিনিসটা  পুঁজিবাদী মানসিকতা। সেই জন্যই বানর, পাখিও আছে যারা সেগুলো লুট করে নেয়। মানুষ আছে যারা কেটে ফেলে। এই প্রকৃতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বেঁচে থাকতে কমিউনিজম্ কত দরকার? তাই যারা কমিউনিজম মানে তাদের অনেক ভোট কাটার জন্য এই দল।"
কাটাকুটি খেলার গল্প শুনে সম্পৃক্ত আমি এবার এক ডানপন্থী দলের নেতার কাছে গেলাম। তিনি বাংলা ভাষা বাঁচানোর জন্য হিন্দীতে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি এই নতুন দল নিয়ে কি চিন্তা করেন?
তিনি বললেন - "ভাইরা এই পার্টি চলবেনা। এই পার্টি ষড়যন্ত্র করে ঝামেলা বাঁধাতে আসছে। এদের কথায় ভুলোনা। এরা এলে গৃহযুদ্ধ আরো বাড়বে। "

সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে পা যখন ক্লান্ত। রাস্তায় একটা অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় বসলাম আমরা সবাই। পাখি ডাকছিলো৷ পাশে ছিল বিশাল হ্রদ। এই গাছের ছায়ায় বসে আমার সাথী হঠাৎ বলে উঠলো - অজাত ভুবন ভ্রূণ মাঝে যখন বিলীন হয়েছিনু ওই বিরাট জঠরে, ওই তব অবিশ্রাম কলতান অন্তরে মুদ্রিত হয়ে গেছে।

 গাছের কি কোন ধর্ম আছে? গাছের প্রাণ আছে। তারপরেও তারা বেঁচে আছে সেই আদিম যুগ থেকে। সভ্যতার পর সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু এই আদিম সবুজ প্রাণ টিকে রয়েছে সভ্যতার বুকে চুপচাপ। কত অত্যাচার, কত ধ্বংস লীলা -তবু আজো মানুষের ক্ষমতা নেই তাকে ছাড়া বেঁচে থাকার। কারণ গাছ শুধু দিতে জানে। তাদের শরীর ক্ষয় হয়। কিন্তু সেই সবুজ আত্মা কোন এক বীজে অংকুরিত হয় কিশলয় রূপে।
"অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়োং পুরাণো। ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।। "
এই আত্মা নিত্য, শাশ্বত ও পুরাতন। শরীর ধ্বংস হলেও একে ধ্বংস করা যায়না।
গাছের ভগবান কে? আল্লাহ্, যীশু না একশো কোটি দেব দেবীর কোন একজন? গাছ মারা গেলে বেহেস্তে যায় নাকি স্বর্গে না হেভেনে যায়? নরকে গরম তেলের কড়াই তে আগুন জ্বালানোর জন্যও তো জ্বালানী হিসেবে গাছকে লাগবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর বেশি দূরে নেই।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর "প্রকৃতি" আসছে এ পৃথিবীর ক্ষমতায়৷ 

Sunday, December 8, 2019

বাইনারি গারদ

বলতে হবে আমায় আজকে, পক্ষে না বিপক্ষে,
এনকাউন্টার এ হল কি বিচার, না ধর্ষক পেল রক্ষে?
ভাবতে বসেছি এসি ঘরে আমি দুই পা তুলে সোফাতে,
এই দেশেতেই অসহায় নাকি কুড়ি কোটি লোক হাভাতে ;
আজকে হঠাৎ ন্যায়ের প্রশ্ন সবার মুখেতে ফিরছে,
ফেসবুকে বলি প্যান্টি ছেড়ে সব নীতির প্রশ্ন তুলছে।
একদিকে দেখি পিঁপড়ের মত জন্মের হার বাড়ছে,
ভায়োলেন্স আর ন্যাকা সেক্স দিয়ে মিডিয়া বাতেল ঝাড়ছে।
নেটিজেন ইস্যু পাচ্ছেনা খুঁজে, কি নিয়ে সে আজ লিখবে,
অতএব জনতা ফেবু ট্রায়ালে ওকালতি আজ শিখবে।
সব নেটিজেন যেন মিডিয়া চ্যানেল ২৪ নিরানন্দ।
এই কলরবে গাইতে বসলে হারাই সুর আর ছন্দ।
অনলাইনবাসী আসছে ধ্বংস, হয়ে থেকো তুমি সেট-
প্রাণ বাঁচানোর তাড়ায় তুমি ভুলবে আপডেট।
তখন তোমায় প্রশ্ন করবো পক্ষে না বিপক্ষে,
উত্তর দিও বাইনারি থেকে দাও হে আমায় রক্ষে।
©সুপ্রভাত

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...