Friday, April 22, 2016

আকাশের ঠিকানায় লেখা চিঠি

-দাদা, আজ আর কেস হিস্ট্রি নয়, তোমাকে বলতেই হবে, তুমি এত রোমান্টিক, প্রেম করেছ কিনা বলতেই হবে। ওই তোরাও বল।
একসাথে প্রমীলা বাহিনী চেঁচিয়ে উঠলো। বলো, আজ আর ছাড়ছিনা।
-উফ্ তোরা ছাড়বিনা দেখছি, আজকে যেটা পড়বি বলে এসেছিস, সেটা শোন। প্রেম, ভালোবাসা ছাড়াও জীবনে অনেক কিছু আছে করার।
-না আজ আর ছাড়ছিনা।
সবাই তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
কপাল কুঁচকে অবিনাশ খানিক্ষণ তাকালো তার জুনিয়র ছাত্রীগুলোর দিকে।
তারপর বললো -
আমাদের খুব গভীর সম্পর্ক ছিল, সে আমায় ছেড়ে অন্য একজন ছেলের সাথে চলে গেল।...
এরকমই শুনতে চাস তো ???
- দাদা, ঠিক হচ্ছেনা। বলবে নাকি আর কোনদিন পড়তে আসবোনা। কথাও বলবোনা।
- এই সেরেছে তোরা গোপন কথা আর গোপন থাকতে দিবিনা?
- না-আ....
-বুঝলাম। তাহলে বলি আমার সাথে একটা মেয়ের প্রেম ছিল।সে লেসবি ছিল। অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। তার সাথেই চলে গেল।আমায় ছেড়ে।
-ওই চল, এরকম ফালতু একজনের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
- আরে ওয়েট, উফ্।ওকে। বলতে পারি, তবে কিছু কথা দিতে হবে। যেমন যাই হয়ে যাক জীবনে কখনো হেরে যাবিনা.. যাই হয়ে যাক কখনো নিজের সত্ত্বাকে বিসর্জন দিবিনা.. আর যাই হয়ে যাক মদ, গাঁজা, সিগারেট খাবিনা।
- দিলাম।
- ঠিক তো ?
- একদম।
-যদি খাস ?
- খাবোনা।
- হুম।...... খুব ভালো ছিলাম বুঝলি ওই সময়টা। খারাপ ও ছিলাম। অনেক স্বপ্ন, অনেক হারানোর ভয়, অনেক পরিকল্পনা, অনেক ভালোবাসা, ঝগড়া। সবই ছিল। ছিলনা শুধু ইচ্ছের মিল। আমি ছিলাম গাঁয়ের সবুজে গড়া নিরালা মহাকাশ।ও ছিল শহুরে কাঠামোয় গড়া বিস্তীর্ণ জনপদ। আর এ জগতে সকল ঝামেলার সূত্রপাত একে অন্যকে নিজের মত বানাতে গিয়ে। আমি ওর মত হতে চেষ্টা করলে হতে পারতাম ওর থেকেও বিস্তীর্ণ , কিন্তু মন থেকে হতে পারতাম না। এটা ও জানতো। আমি ওকে শুরুতে সব বলেছিলাম।
ও সত্যি চেষ্টা করেছিল। এরকম হওয়ার। কিন্তু মন থেকে পারেনি। আর ভারতীয় পরিবারে তো x + y হয়না, ইন্টিগ্রেশন xdx + ইন্টিগ্রেশন ydy হয়। তো আনুষঙ্গিক কিছু ব্যাপার তো থাকেই।
- তোমরা কে কাকে প্রথম ভালোবেসেছিলে ?
- অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছি। পারিনি।
- কে কাকে প্রথম ছেড়ে গেছিলে ?
- হয়তো কেউ না। হয়তো দুজনেই। ভালোবাসা আমাদের আলাদা করে দিল। ভেতরে ভেতরে আমরা কেউ চাইনি এভাবে আমরা একে অপরের মত হতে গিয়ে একটুও খারাপ থাকি। তাই দুজনে দুটো ইচ্ছে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলাম।
- বন্ধু থেকে যেতে পারতে।
- না কি শিখলি মেডিসিন। এই যে ডেকাড্রন ইঞ্জেকশান মরার পর দিস কাজ করে? ওটা তো শুধু নাটক ডাক্তারদের যাতে রোগীর আত্মীয়রা ভাবে, হ্যাঁ সত্যি ডাক্তারবাবু চেষ্টা করছেন। তার থেকে সত্যিটা মেনে নেওয়াই ভালো তাইনা?
-দাদা, হয়তো বন্ধু থেকে গেলে পালটে যেত..
-এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে পাল্টাতে পারেনা। সাময়িক পরিবর্তন আসে। কিন্তু জনতা সজাগ না হলে সেটা রংগের বদল ছাড়া কিছু হয়না। জীবনটাকে সিনেমার মত এনজয় করা উচিত। কিন্তু জীবনটা আসলে সিনেমা নয় সেটাও বোঝা উচিত। আমি চাইনি ওর ভবিষ্যতে কোনভাবে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে। আমি যেরকম কাছে থাকলে কখনোই এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ। মাইলস্ টু গো বিফোর আই স্লিপ। মেয়েবাজ তো নই।তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।দুজনেই ভেবেছিলাম পায়খানাটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু শেষমেশ জীবনটাকে আমাশার মত বানিয়ে নিলাম, 'অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হয়ে হইলনা শেষ।' হে হে।
- এইসব কথা বলতে গিয়েও ইয়ার্কি মাথায় আসে !!
- বি লার্জার দ্যান লাইফ।তবেই না সত্ত্বায় ডাক্তার হতে পারবি। ডাক্তারিও তো অভিনয় একরকম। কেউ মারা গেল, পর্দার আড়ালে সে একা, নিভৃতে কেঁদে যখন স্টেজে নামবে। চোখে মুখে কোন নরম আবেগ থাকবেনা। শুধু বাস্তবের কঠোরতায় তাকে স্টেজ পারফর্মেন্স করতে হবে। কেউ বুঝতেও পারবেনা তার ভেতরে আসলে কি চলছে।
- দাদা সব ঠিক করে নেওয়া যায়না, আবার।
- এই জীবনে তো বোধহয় সম্ভব নয়। অনেক সময় দুজন ভালো মানুষ একসাথে থাকতে পারেনা । ওরা ভালো থাক।।
এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে ।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...