Monday, September 14, 2020

হক কথায় হকিং আর স্টক শেষ হলে স্টকিং

 আমার মত বৈচিত্র্যময় দৈনন্দিন জীবনযাপন খুব কম মানুষ করেন। এখন গিটার নিয়ে তো পরের মুহূর্তে কিছু তত্ত্বকথা ভাবছি, পরেরদিন ঢুকবো হাসপাতাল, তার পরেরদিন হয়তো বাড়ি গিয়ে হঠাৎ কোন নতুন ভাষা শিখতে শুরু করবো। কিন্তু যখন যেটা করি সিরিয়াসলি করি। পরে নিজের কর্মকান্ড নিয়ে ভাবলে বেশ মজার লাগে। লোকেও আমাকে পাগল বলে, আমারও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়না এরকম নয়। এই গতিময় জীবনেও আমার মাঝে মাঝে খুব একঘেয়ে লাগে। তখন আমি কিছু অদ্ভুত ধরনের কাজ করি। যেমন একদিন ভাবলাম আলু আর পটল এর একটা হাইব্রিড গাছ বানাবো। এই ভেবে পড়লাম একটু এসব নিয়ে। তারপর মোবাইল থেকে ফার্ম এর গেম নামিয়ে চাষবাস করলাম সারা রাত ধরে। পরেরদিন আবার নিজেই আন-ইনস্টল করে দিলাম। একদিন মনে হল শ্মশান যাই। ভোররাতে শ্মশানে অদ্ভুত অদ্ভুত লোকজন ঘোরাফেরা করে। তাদের ভালো করে বিশ্লেষণ করি। এবার আমার হয়তো খুব ল্যাদ লাগছে। কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা, কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। কিন্তু নির্ভেজাল আনন্দ চাই। তখন আমি কি করি? তখন, আমি আমার প্রোফাইলে যতজন রমণী আছেন, তাদের যাকে সামনে পাই তার প্রোফাইল খুলি এক এক করে। যাকে সোজা বাংলায় (!) স্টক করা বলে!! অন্য অনেকের মত আমিও একজন স্টকার। অকপটে আবার সেটা স্বীকার ও করি ৷ তবে আমার উদ্দেশ্য থাকে একটু অন্য। কিরকম? 

ধরা যাক, একজন রমণী স্ট্যাটাস দিয়েছেন, "উফ্ পারিনা এত মেসেজের চাপ!! "

নীচে একজন ছেলের বক্তব্য - " কিছু ছেলেরা খুব হ্যাংলা হয়। " ভাই,তুই নিজের কথা বলছিস না তো? তোকে ভেবেই হয়তো মেয়েটা এটা লিখেছে এটা ভেবেই সেটা ঢাকতে তোর এই কমেন্ট নয় তো? যে সবাই হ্যাংলা হতে পারে, তোর কাজ হ্যাংলাপনা নয়। 

তার নীচে আর একজনের বক্তব্য - " তোমাকে এত সুন্দর দেখতে যে মেসেজ তো লোকে করবেই? "

আরে ভাই, মানেটা কি? মানে ভাবার চেষ্টা করি, কবি এখানে কি বোঝাতে চেয়েছেন, কবি এটা বোঝালেন যে তিনি লিবারেল, আবার এটাও বোঝালেন যে রমণী খুব সুন্দরী। 

ধরা যাক, অন্য একজন রমণী স্ট্যাটাস দিয়েছেন - "মন ব্যাকুল যখন তখন"..সেখানে কমেন্টের এমন বন্যা আসবে যে ফারাক্কা বাঁধ দিয়েও রোখা যাবেনা। 

এখানে "কল দিব?" বা "মেসেজের রিপ্লাই দাও না" এই ধরনের কাকুতি মিনতি থাকবেই। 

কিছু বিদ্বান রমণী দের স্টক করতে আরো ভালো লাগে। তাঁরা জ্ঞানের কথা লেখেন, কবিতা, শিল্পকলা বিশ্লেষণ করেন। মন দিয়ে পড়ি। তারপর পড়ি কমেন্টস্। বিক্রমাদিত্য এর সভাতেও এত প্রতিভা খুঁজে পাবেন না, যা এখানে পাবেন। এত প্রতিভা, ডিগ্রী, পড়াশোনা ; তবুও দেশের এই হাল! আমি অবাক হই। কত্ত জানে লোকজন। এত জ্ঞান নিয়ে কি করে পারিস রে? শ্বাস নিতে কষ্ট হয়না ? 

যাদের মনে হচ্ছে, আমার কি খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই, এইসব রঙ্গ তামাশা নিয়ে লিখছি? না, কাজ আছে অনেক। কিন্তু এসব না দেখলে শিখতেই পারতাম না এত কথা কি বলে? কেন বলে? আবার কখনো কখনো কারো রেসপন্স অবজার্ভ করার জন্য কোন কোন রমণীকে বিরক্ত করি বা বাজে বকি। বাজে অসংলগ্ন বকাতে আমি ও আমার কাছের বন্ধুদের পিএইচডি করা।  যেমন - আপনি কি জল চিবিয়ে চিবিয়ে খান?  অথবা আপনার কি মাথায় ব্যামো রয়েছে?  কিংবা ভাগবতপুরে একটা কুমীর দেখেছিলাম শুয়ে শুয়ে দাঁত বের করে। ওর কাছে ক্যামেরা থাকলে, সেই সেল্ফিটাও তোমার মতই লাগতো। 

বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে রিপ্লাই দেন। তবে রমণীরা খুব একটা স্পোর্টিং হন না এসব ব্যাপারে। উইট এর উইকেট বড্ড তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। আমি তাই আজকাল কাউকে আর এরকম মেসেজ খুব একটা করিনা। চারিদিকের এই ব্যাপারটা অবজার্ভ করি। যাকে বলে মজাচ্ছলে মোজা না পরে স্টকিং।

আর একজন এলিয়েন হিসেবে এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে বেশ মজাই লাগে। যেসব রমণী এটা পড়ছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ নিজেদের অজান্তে এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যবস্থা করার জন্য।।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...