কলেজ গেটে যখন পা রাখা হয়, তখন স্বপ্নেও কেউ ভাবেনা জীবন ঠিক কতটা কঠিন। ঠিক ওই মূহুর্তে কে কি ভাবে এই নিয়ে বন্ধু মহলে একটা হালকা চালে সমীক্ষা করেছিলাম। বেশির ভাগ ১৮-১৯ বয়সীদের মাথায় থাকে চুটিয়ে প্রেম, বন্ধু বান্ধবীদের সাথে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানোর ইচ্ছে, নেশা ও যৌনতার স্বাদ এবং সবার শেষে থাকে কেরিয়ার। তারপর ১০ টা বছর কেটে যায়। জীবনের গরম তেলে সব্বাই হাতেগরম তেলেভাজা হয়ে সুসজ্জিত হয়ে গাড়ি চড়ে। কেউ বা তখনো ফাইল নিয়ে এই অফিস, সেই অফিসের দরজায় একটা চাকরির খোঁজ করে চলে - নাহলে প্রেমিকার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাবে। যার প্রেমিকা নেই, সেই বেকার যুবকের দিকে তো কেউ ফিরেও তাকাবেনা। আর যার বিয়ে হয়ে যাবে, শুরুর মধুচন্দ্রিমা ক্ষণিকের অতিথি হয়ে বেরিয়ে গেলেই, বাস্তবের নোনাজল রোজ রাতে মাথার বালিশ ভেজাবে। একদিন সকালে উঠে হঠাৎ ই অনুভূতি হবে - না কই, আজ মাথার বালিশ তো শুকনোই আছে। তবে কি হল? আজ থেকে আমরা সবাই কাঁদতে ভুলে গেলাম। সেদিনেই তেলেভাজা থেকে পরিণত বয়সের শুরু। কিশোর, যুবা থেকে পুরুষের আবির্ভাব। মেয়েরা অনেক ছোট বয়স থেকেই পরিণত হয়। তবে মেয়েরা কাঁদতে ভোলেনা। ওটাকেই অস্ত্র বানিয়ে নেয়। ছেলেদের কাঁধে সংসারের জোয়াল না পড়লে ঠিক ফ্যাচ ফ্যাচানি কান্না চলেই আসে। আমি কত অসহায়। আমার সাথেই কেন এরকম হয়। পুরুষের হওয়া উচিত ইস্পাতের মত। সাদা নয়, কালো নয়। ধূসর। আগুনে যত পোড়ানো হয় তত শক্ত হয়। মজবুত হয়। আর আবেগ। না, পুরুষদের আবেগ দেখাতে নেই। লুকিয়ে রাখতে হয়। কারো কাছে যে মুহূর্তে কোন পুরুষ তার আবেগ দেখায়, সেখানেই সে হেরে যায়। পৃথিবী এইভাবেই তৈরী করেছে সবাইকে। এর বাইরে কেউ নয়। হয় তুমি শেয়াল হবে, নাহলে তুমি ভেড়া। এর বাইরে কেউ নয়। বাইরে থাকতে চাইলেও বাইরে থাকতে দেবে না। হঠাৎ কখন জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে থাকতে নিজেকে আর চিনতে পারা যাবেনা , কে বলতে পারে। আবেগ একজন পুরুষের সব থেকে বড় শত্রু। আর আবেগ ছাড়া গোটা জীবনের কোন মানে থাকে না। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা র মানে থাকেনা। তবুও বেঁচে থাকতে হয় পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে। ভালো থাকার অভিনয় করে বেঁচে থাকতে হয়। মন খারাপের স্মৃতিকে নিয়ে কমেডি করতে জানতে হয়, অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে না পারা কাছের মানুষের অপমান গুলোকে পায়খানা করে প্যানে ফ্ল্াশ করে দিতে হয়। সেই কোন কালের ডারউইন তত্ত্বের যোগ্যতমের উদ্বর্তন এর প্রকৃত মানে বোঝা যায়। বেঁচে থাকতে হবে। থাকতেই হবে। ফাইট, কোনি ফাইট। মিথ্যেকথার এই শহরে সুতোকাটা ঘুড়ি হতে নয়, আরো বেশি মিথ্যে দিয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে আবার সেই কাটা ঘুড়ি কে আকাশে ওড়াতে হয়। না কেউ থাকেনা পাশে। এ লড়াই এ তুমি একা। যেটা অতীত, সেটা ভালো হোক বা মন্দ, সেটা অতীত। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র বাকি আছে বর্তমান। যে সমাজ তোমাকে একা করে দিয়েছে, যে সমাজ তোমাকে বিনা দোষে বারবার আসামীর কাঠগড়ায় তুলে কোন বিচার পেতে দেয়নি, সেই সমাজে নিজের আত্মাকে দরকার হলে খুন করে জীবন্ত লাশ হয়েও বেঁচে থাকতে হবে। তবেই না তুমি যোগ্যতম। তবেই না তুমি ইস্পাতের মত ধূসর একজন পুরুষ।
Original Name - Suprabhat Das (General Physician, Intensivist, Musician, Lyricist, Composer, Vocalist, কবি, Author, Nature Lover)
Tuesday, October 5, 2021
Subscribe to:
Posts (Atom)
পাঁচ মিনিট
"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...
-
অপর্ণার বাড়িতে কাঁপতে কাঁপতে আমি ঢুকলাম। বিশু কিন্তু অনেকটাই স্বাভাবিক ভাবে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অপর্ণাও তাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে...
-
"If you think adventures are dangerous, try routine: It's lethal" - Paulo Coelho Are you lost and bored in your daily routi...
-
As you all know South India is a vast place with a long travel-bucket list, so I will guide my beloved readers to explore South India in pa...