Monday, April 28, 2025

ধ্বংসের পর - পর্ব ১

 "There's a special providence in the fall of a sparrow"

- William Shakespeare ( Hamlet to Horatio, Act V scene 2)

ঘুম থেকে উঠতেই কেমন যেন আজ অন্যরকম লাগলো। আজ রবিবার। তাই বিছানা ছেড়ে এখনো ওঠেনি বছর ত্রিশের চাকুরিজীবী তপন। ব্রাশে টুথপেষ্ট নিয়ে বারান্দায় আসতেই ধীরে ধীরে বুঝলো কাল রাতে কিছু একটা তান্ডব হয়েছে চারিদিকে। আগেরদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়েছিলো সে - তাই রাতে কি হয়েছে জানার কথা নয় তার। সামনের রাস্তায় যেদিকে তাকায় গাছের বড় বড় ডাল পালা লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে। বুঝলো বিশাল ঝড় হয়ে থাকবে হয়তো। আর বেশি দেরী না করে ইলেক্ট্রিক সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তপন। কিন্তু একটু এগিয়েই বুঝলো আশেপাশে অন্যদিন এর তুলনায় জনমানবহীন। অথচ সকাল যথেষ্টই হয়েছে। কোন গাড়ি নেই, সেরকম মানুষ নেই। কিছুটা এগোতে সে বুঝলো যত বড় বিপর্যয় সে আন্দাজ করেছিল তার থেকে এটা অনেক বড়। কারণ পাটুলির পর থেকে আর বাইপাস নেই। পুরোটাই জলে ডুবে গেছে। জল এতটাই যে বাইপাসে ডিঙি নিয়ে লোকজন পারাপার করছে কিছু মানুষ। এর মধ্যে স্পিড বোট সার্ভিস ও কোথা থেকে চালু হয়ে গেছে। তপনের হঠাৎ কি মনে হল একবার ধর্মতলা থেকে ঘুরে আসা যাক। স্পিড বোটকে কত ভাড়া নেবে জিজ্ঞেস করাতে বোটচালক সোজা বলে দিল পাঁচ হাজার। 

"আরে এই টাকাতে তো দিল্লীর ফ্লাইট পাওয়া যাবে", তপন বললো। 

বোটচালক বললো - দেখুন বাড়িঘর আমাদের সবই কাল গেছে, চারিদিকে যা অবস্থা জলদি কিছু টাকা তুলে আমরা যে কজন বেঁচে, যেটুকু বেঁচে নিয়ে একটু পাহাড়ের দিকে চলে যাবো। এলে আসেন, নাহলে লোকের অভাব নেই। 

তপনের কাছে নগদ বেশ কিছু টাকা মানিব্যাগে ছিলো - তো বেশি কথোপকথন না করে সাইকেল টা একটা ল্যাম্পপোস্টের সাথে লক করে স্পিডবোটে উঠলো। যেতে যেতে চালকের কাছে জানলো, হঠাৎ করেই নাকি কালকের ভরা কোটাল আর ভূমিকম্পের যুগ্ম আবির্ভাবের ফলে গোটা গ্রেটার কোলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ, মেদিনীপুরের সিংহভাগ জলের তলায় চলে গিয়েছে। জল এখন একটু হলেও নেমেছে। কিন্তু প্রশাসন সতর্ক করেছে যে আফটার শকের জন্য যে কোন মুহূর্তে আবার জলস্তর বাড়তে পারে। এদিকে ক্ষয়ক্ষতি এত পরিমাণে হয়েছে প্রশাসনের তরফে যে যার ব্যক্তিগত উদ্যোগে উঁচু জেলাগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ ছাড়া আপাতত আর কিছুই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এইসব গল্প করতে করতে ধর্মতলায় পৌঁছে গেল তপন। এক কোমর জল ঠেলে তপন আশেপাশের অবস্থা দেখবে বলে ফ্লাইওভারের ওপর কোনভাবে উঠলো। ফ্লাইওভার থেকে দেখলো চারিদিকের উঁচু উঁচু সব বাড়ি  ভেঙে পড়েছে। সব থেকে বড় কথা - একটা জায়গার পর আর এগোতে পারলোনা তপন। কারণ সেখানে ধস নেমেছে। একটা বিশাল অংশ যেন প্রায় ১০০ মিটার নীচে বসে জলের তলায় চলে গিয়েছে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে  দূর থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চূড়া আর পরী ছাড়া জলের উপরে আর কিছুই নেই। হঠাৎ একটা সাইরেন বেজে উঠলো বড় বড় মাইকে ঘোষণা হতে লাগলো চারিদিকে - সমস্ত নাগরিককে অত্যন্ত দু:খের সাথে জানানো হচ্ছে যে আগামী ১ ঘন্টার মধ্যে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ এর উপর একটি ভয়ানক সুনামি আছড়ে পড়তে চলেছে। ভারতের বাকি জায়গার নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা। নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তারা যেকোনভাবে যেন উত্তরের দিকে যাওয়া শুরু করে। যদিও উত্তরের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত নয়। 

এটা শোনার পর তপন পাঁচ মিনিট 'থ' হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আর পরমুহূর্তে কিছু না ভেবে পাশে বাঁধা রাখা একটা স্পিডবোট ধর্মতলার রাস্তার উপরে দিয়ে ফুল স্পিডে চালাতে শুরু করলো। গিয়ে থামলো একদম নবান্নের সামনে। যেকোন কারণেই হোক, ওখানে ধস নামেনি। আর জল যেটুকু জমেছে গাড়ি চালিয়ে দিব্যি যাওয়া যাবে। এবার তপনের একটা গাড়ি লাগবে। হাতে আর পনেরো মিনিট সময়। এর মধ্যে যতটা সম্ভব উত্তরের দিকে তাকে যেতে হবে। গাড়ি কোথায় পাবে এখন সে? একটু এদিক ওদিক তাকাতেই একটা পুলিশের জিপ দেখতে পেলো সে। আশে-পাশে কোন পুলিশ দেখতে পেলোনা। অতএব এটাই তার গাড়ি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। গাড়ির এক্সিলেটরে পা দিতেই গাড়ি দৌড়াতে শুরু করলো। এক ঘন্টা কোন দিকে না তাকিয়ে গাড়ি চালালো সে সোজা উত্তরের দিকে। আশে পাশে লোকজন এত কম ছিলো তপন বুঝেই গেছিলো এটা কোন বড় মাপের প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে আর এটাও বুঝেছিল কাল রাতে তার শহরে অনেক মানুষের জল আর ঝড়ে প্রাণ গেছে। তবে এটাও ভাবতে হবে এতক্ষণে ভয়াল সুনামি তাকে গ্রাস করেনি মানে আপাতত এইবারের মতো রক্ষে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে অনেক চাপ গেছে জীবনে, একটু আশার আলো দেখে তপন আপন মনে বলে উঠলো -

"যাক্‌ বাবা!! "

হঠাত্‌ জিপের পেছনে গ্লাসের বোতলের ঠনঠন করা আওয়াজ এলো। আওয়াজ শুনে তপন একবার পেছনে ঘুরে তাকাতে যেটা দেখলো তাতে দুম্‌ করে ব্রেক মারা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা। ব্রেক দিয়ে জিপ দাঁড় করালো তপন। দেখলো পেছনের সিটে একজন যুবতী চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে। চাদরের তলা থেকে তার সুন্দর মুখখানি দিয়ে একবার উঁকি মেরে যেন কিছুই হয়নি ভাব দেখিয়ে এক হাতে একটা মদের বোতল বের করে তপনকে বললো - 

" Want some !!!?? "

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...