Wednesday, June 20, 2018

বয়সন্ধিকালের লেখার একটি সংকলন


**"তবু বারবার তোকে ডাক দিই, একি উপহার, নাকি শাস্তি??"***

-বাবা কিছু দিয়ে যাবি বাবা??
 অন্যদিন হলে হয়ত পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু আজ যাচ্ছি প্রথম ডেটিং এ। ছোটবেলায় স্কুলে পরীক্ষা দিতে গেলে যেমন পথে কোন খারাপ কিছু ঘটতে দিতামনা, কলেজে প্রথম ডেটিং সেরকম। দিলাম ৫ টাকা। বুড়ি খেয়ে খুশী হোক।আমায় পুণ্য দিক।আজ যার সাথে ডেটিং এই মেয়েটি খুব ভাল।আগের বান্দরীটার মত  না। এখন নতুন একটা ছাগলের সাথে ঘুরছে। আমাকেও দেখ। বসে নেই রে।আমি আজ খুব খুশি। মাঝের কয়েকদিন দেবদাস না হয়ে আরো তাড়াতাড়ি যদি একে পেতাম তাহলে মাঝের কটা দিন শুধু শুধু  ওইভাবে... দাদারা ঠিকই বলত আরেকটা প্রেম করতে।থাক আজকের শুধু শুধু ওর কথা ভাববো না।হ্যাঁ ওইতো দাঁড়িয়ে আছে।
 -কেমন আছো?
      জানতে চাইলাম।
 -একি হাত ধরলে যে
 -ও আসলে উত্তেজনায় সামলাতে পারিনি।চল আমরা হেঁটে কলেজ স্ট্রীট যাই।
 -হেঁটে!!!  ট্যাক্সি কি দোষ করল??
 ট্যাক্সি এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও এলিয়ে পড়ল আমার গায়ে। ওই পেঁচীটা এরকম ছিলনা। ও অন্য। অন্যরকম ছিল।একসাথে হেঁটে যেতে খুব পছন্দ করত।বলত হাঁটলে পায়ের সাথে সাথে মনও চলতে লাগে। প্রথম যেদিন দেখা করতে গেছিলাম আমার হাত ধরে বলেছিল - প্রেম করলে এভাবে হাত ধরতে হয়।নাহলে নাকি হাতের লেখা মেলেনা। হ্যাঁ ঠিক এখানেই তো ফুচকা খেয়েছিলাম। আমার মাথায় গাঁট্টা মেরে জীবনানন্দের কবিতা বুঝিয়েছিল। এইতো এই দোকানটা থেকে ওর প্রজেক্ট এর জিনিস কিনেছিলাম।আর কখনো ও ফিরবেনা। এক মিনিট, আমি কার সাথে হাঁটছি!!????
 -কি হল, দাঁড়িয়ে গেলে যে???
 -সরি, আমি দুকখিত ম্যাডাম, আমি এটা পারবনা। পারবনা।আমি এখনো তাকে ভালোবাসি।




***NO Title ***

সকাল থেকেই শরীরটা ক্যাঁচরা মেরে আছে। সর্দি, মাথাযন্ত্রণা সংগে হ্যাঁচ্চো।দুপুরে বাড়িতে রুগীর পথ্য খেয়ে খিদে আরো বেড়ে গেল।একটু পরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে ঝালমুড়ি আর আলুকাবলি খেয়ে এলাম।তাও খিদে মিটলনা।মা বলল- পেটে কি হাঙ্গর ঢুকেছে নাকী?? রেগে বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলাম ট্রেনে চেপে কাকার বাড়ির দিকে।উদ্দেশ্য আসলে কাকার বাড়ি নয়।ট্রেনে যেতে যেতে প্রচুর সস্তা খাদ্য পাওয়া যায়। মার সঙ্গে রাগারাগি করাটা ঠিক হয়নি।সত্যি যদি আমি একটা হাঙ্গর মাছ গিলতে পারতাম আমার এতদিনে গিনেস এ নাম উঠতনা?? কি সব যুক্তিহীন কথা।আমিও কেমন ছেলে।বাপ, তুই অসুস্থ, বিছানায় শুয়ে থাক।কেউ ডাকলে চোখ আধবোজা করে, মুখে একটা মৃত্যু মৃত্যু ভাব এনে তাকাতে হয়। লোকে অসুস্থ শরীরে ল্যাদ খায়। আর আমি নিমকি, ছোলার যতরকম আইটেম হয়- সিদ্ধ, ভাজা, কাঁচা, চানা, কাঠিগজা, বকুলের খাজা, বরফি, দিলখুশ, শনপাপড়ি, এমনকি ফটাশ জল যা উঠছে খেয়েই চলেছি।এদিকে নেমে ছানার জিলিপি, রাজভোগ, কিটক্যাট, পেয়ারা, কাকার বাড়িতে ঢুকে শেষ হল কোল্ডড্রিংক্স দিয়ে।এখুনি মুখ দিয়ে একটা ঢেকুর উঠল।এরপর কি??
 হুম, মনে হয় এবার একটা রুম ফ্রেশনার লাগবে।



***"মেজাজটাই তো আসল রাজা"**

দৃশ্য ১ - শিবুই নদী। কিন্তু সাত কিমি দূরে। নদীর নামটা শুনেই ধস খেয়ে গেলাম।খেয়েদেয়েই বেরিয়ে গেলাম আমি আর দেবারুণ সাইকেল নিয়ে।পথে পড়ল মহাশ্মশান। সেখানে বিশ্রাম নিতে নিতে ভাবলাম। দূর শালা। এত হাওয়া।জামাটা গায়েই রাখবনা।দুজনেই সহমত হলাম।খালি গায়ে পাড়ি দিলাম।
 দৃশ্য ২- মাথায় কালো মেঘ।চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।বাসে সিটও আছে।তবু বাসের ছাদেই যাব।এই বাসের ছাদটা গড়পড়তা বাসের তুলনায় কিছু উঁচু ছিল। চোখের সামনেই গাছের ডালে কিছু খড় ঝুলে থাকতে দেখছিলাম আর একটু অসাবধানতায় যে আমাদেরও ওই হাল হঁতেই পারে সেটা বেশ বুঝছিলাম। বাসে ধরার রেলিংটা ভরসা দিচ্ছিলনা। এত জোরে হাওয়া দিচ্ছিল যে নিজের কথাই শোনা যাচ্ছিলনা। চোখে আমদানী হচ্ছিল বিদেশী বস্তু (foreign body)। সামনের গাছের ডালগুলো এত আক্রমণাত্মক হয়ে আসছিল যে মোবাইল গেম টেম্পল রাণের কথা মনে পড়ছিল।দেবারুণকে বল্লাম আজ আর বেঁচে ফিরব বলে মনে হচ্ছেনা।ও বলল-আমি আর কোথাও যাবনা।আমায় এখানেই খেতে দে।বিছানা পেতে দে ঘুমাই।এই বলে কলা খেতে লাগল।
 দৃশ্য ৩- আর একটা দৃশ্য বুকে আছে।একটা খালের জল টলটল করছে।সেখানে নগ্ন চাঁদের আলো একটা শব্দব্রহ্মর সৃষ্টি করছে। আর আমি জলে ছিপ ফেলছি।
 কি মনে করছেন আমি ক্ষ্যাপা*দা ???? 
 হ্যাঁ। ঠিক তাই। এমতাবস্থায় নিজেকে হঠাৎ খুব করে জীবিত মনে হচ্ছে।


***A Tribute to Gurudev***

সে ছিল বা নেই - সেটা পরের  কথা, /
আসল কথা আমি ছিলাম, আছি, থাকব।/
সে কোথায় জানতে চাইনা,/
আসল কথা জীবনকে ভালোবাসব।/
স্রোত চলে স্রোতের মত,/
গাছের ডালে ফুল আসে, ঝরে যায়।/
কোন নকল প্রেমে ধরা পড়ে আবার আমি হাসব।/
সন্ধ্যেবেলা কাজের শেষে,/
আঁধার যখন তোমার বেশে,/
করতে চাইবে আমায় আলিঙ্গন। /
আবার আমি কাজের দেশে,/
ছুটে যাব অক্লেশে-/
ব্যস্ততার ছলছুতোয় ধরণীতে ভাসব।/
আবার আমি গান গেয়ে, আবার আমি হাসব।/
তোমার বাণী স্মৃতি হয়ে আসবে যখন ভেসে,/
বিশ্বপ্রেমের জালটি ফেলে দু'কান খোলা রাখব।/
চোখের জলে দেখবে তুমি আবার আমি হাসব ।।



***কবি বচন***
তুমি সুন্দর, আমি সজীব /
তুমি বদ্ধ , আমি মুক্ত /
তোমার ব্যারিকেড এ আমি চুম্বন এঁকে যাই।/
তুমি সফল, আমি শিল্পী /
তুমি নিয়ম, আমি দর্শন /
তোমার বাস্তব কে আমি সেলাম জানাই।
I know I have lost many things, also I am losing many things, And pretty sure I shall lose many more things,  but can never lose my principles.If you have a nice face, make smile on it. It will be good. If you have a nice brain, make hard work on it. It will be better.  If you have nice heart, use it tactfully.  It will be best.You make group by permutations & combinations to criticise those who don't belong to that group. If you call it society, sorry , my dear better I stay away from being social.What an idiot human being is. Searching for a life partner in half of its life & regret in another half for that partner.Two types of happy idiots are there.  1. Would be husband 2. Would be doctorDaktar der future life niye kokhono chinta thakena...Karon Seta exist i korena20 year to 22 year- Well your name is still same, but You are different. 22 year gives reply with a smile - meet with 18 year, he will complain the same thing to you.Shortest Love Story: Oh, how beautiful you are!!! Oh, sorry I didn't notice that red signal on your forehead. Bye.I opened once a female dictionary where I found in the place of 'Love' , it was written- See 'Money','Settlement', 'Option'Ultimate settlement is death....It seems to be ridiculous though, I feel civilization leads to death of humanityThe word LOVE you're saying about is just a dependence. This is not the truth. THE TRUTH is in freedom. Sorry, but I can't find freedom in that love. For me Love is a freedom. It's like, you love rain. But you never gonna bother about who else is drenched in that rain.Where no girls, no words, no thoughts, no loss. No demand, no car, no friends, no war. No debate, no love.  Into that truth let me dream..Wound is good. Didn't you ever see light to take its entry through the wound into a dark room ??? I can feel now wound is better.Isn't it surprising , when we see a beautiful lady, consciousness of all of us compelling to see the same lady ???Theme song for a medico - Ajeeb dastan hai ye, Kaha suru kaha khatam Its good to see hardcore Gangulians are resurrected after the birth of Atletico de Kolkata...Treatment of choice of sleep onset insomnia = internship


**তুমি-ই সে**

তুমি বিপ্লবী /
হয় চেতনায়, নয় স্বপ্নে, /
প্রতিবাদের, প্রতিরোধের নির্ভীকতার লগ্নে।/
তুমি চিনেও চেনোনি/
তুমি-ই সুভাষ,/
বন্ধ দুয়ার গুঁড়িয়ে দিয়ে,/
দেখ বিশাল আকাশ।/
ভয় কিসের? /
ভয় তো নাই তোমার প্রাণে, ডরাও কাকে তবে? /
সুপ্ত সিংহ ঘুমিয়ে আছে,/
জাগাবে তাকে কবে??


***Diamond Harbour**
পাখির ডানার মত দুচোখ মেল্লে তুমি আমার হৃদয়াকাশে, /
কি রূপে তুমি দেখালে তোমায়, /
বিনা পূরবাভাষে। /
আমার সজল  নয়ন থেকে  ঝরে  পড় পৃথিবীর 'পরে,/
বৃষ্টির শব্দে মুখরিত হোক শুকনো মাটি,/
 ভিজে মাটির ঘ্রাণ আমার প্রাণে তুলুক শিহরণ,/
 বাতাসের চুম্বন আমার শীতল প্রাণে কামনা জাগাক, /
দিক-দিগন্তে হোক আদিম প্রাণের সঞ্চারণ। /
তোমার খেতের সবুজ, আকাশের ঘন নীল, এ মৃত প্রাণে সঞ্জীবণী সুধা হোক।/
 আমিও তোমার নদীর ঢেউ হই, /
আছড়ে পড়ি সবুজ নদীর তটে।



***কবির আকুতি***
বেশ হত ভেজা চুলে হেসে,/
তুমি ঠিক আয়নায় বসে।/
বেশ হত ডাক্তারি ছেড়ে/
তুমি হতে লেন্সের মুখে।/
বেশ হত ষষ্ঠীর দিনে,/
তুমি যেন মায়ের বোধনে।/
বেশ হত ঘর বেঁধে কষে,/
সাজাতে নিজের যতনে।/
বেশ হত কলসির গায়ে,/
আলপনা ভরপেট হলে।/
বেশ হত অভিমান ভরে,/
জল দিতে কাঁচের গেলাসে।/
সব কিছু আরো ভালো হত,/
যদি তুমি একসাথে যেতে।/
সব পেয়ে যদিও তখন,/
না বেরোত গিটারেতে গান।/
ক্যানভাসে ধুলো পড়ে যেত,/
ট্রাজিক নভেল হত ম্লান।/
বনলতা হয়েছ যখন,/
এভাবেই তুমি থেকে যাও,/
ফাঁকা গলিতে আর ট্রাফিক এনোনা।

***সব চরিত্র কাল্পনিক***

To
স্নেহাশিস
From
সৃজনী
চিঠির উপরে খামে এই সম্বোধনটুকু দেখেই মাথাটা হাল্কা ঘুরে গেল স্নেহাশিসের। খামটা খুলতে বেরিয়ে এল বিয়ের কার্ড। সৃজনী বিয়ে করছে তাহলে। হাতে একটা সিগার ধরিয়ে অনেকক্ষণ অনেককিছু ভাবল সে। হঠাৎ হাতে তুলে নিল মোবাইল। হাতের রিফ্লেক্সে ডায়াল করে বসল সেই নাম্বারটা।
-হ্যালো, মানা, আমি অপু। খুব খুশি হলাম বিয়ের কার্ডটা পেয়ে। তুমি যে তোমার মত করে কাউকে পেয়েছ খুব ভালো লাগল।আমি যাব, প্রচুর রসগোল্লা খাব।
-তোমার কিছু বলার নেই??
-যা বলার আর কি দরকার আছে মানা? তুমি সুখি হও।
এতটা লিখে কলমটা খাতার পাশে রাখল অনিমেষ। পেশায় একজন লেখক সে। ট্রাজিক কবিতায় প্রাণ আনতে সে তার প্রেমিকা কে ত্যাগ করে।খুব বড় কবি হল সে। তার কবিতায় প্রাণ এল। একটু আগে আসা বিয়ের কার্ডটা থেকে এখনো পিওনের ঘামের গন্ধ যায়নি। কলমটা তুলে নিয়ে পাশের দেওয়ালে সাঁটা পোস্টারে লিখল বড় বড় করে। "সৃজনী ভালো থেকো"


***ঠিক এরকমই এক দিনে***

ঠিক  এরকমই এক দিনে, /
ছিলে তুমি আমার সনে।/
সেদিনও এভাবেই সন্ধে নেমেছিল নদীর ধারে, /
সূর্য ধোওয়া জলে নেমেছিল আকাশকুসুম, /
তোমার আমার চেতনার 'পারে। /
সেদিনও গাছের ডালে পাখি গেয়েছিল গান, /
উতাল হাওয়া তোমার মাথায় এলোমেলো, দিয়েছিল সম্মান।/
আজ তুমি নেই দেখি। /
যা ছিল সেদিন, আজও তাই, /
শুধু নতুন ভাবে দেখে যাই। /
'সবের শেষে সন্ধ্যে নামে। /
এ ধরাধামে, /
এরকমই কত যুগ, সরণ শূন্য কত দিন, /
সুখের সেদিন মিলেছে সুখের আজে কার্যবিহীন ।।


***বন্ধু**

ভেবে দেখিস দূরে সরে যাওয়া বন্ধু,/
কার দোষ ছিল, কে ক্ষমা চেয়েছিল- তাই কি ভাবার কথা?? /
ভেবে দেখিস,/
দোষ দুজনেরই,/
কেউ ভুল করেছিল,/
কেউ সেই ভুলকে দিয়েছিল প্রশ্রয়।/
ভেবে দেখিস/
ক্ষমা দুজনেই চেয়েছি কারণ-অকারণে/
কেউ মুখফুটে, কেউ হয়ত বা মুখবুজে।/
প্রশ্ন হল নীতির বিচার/
সেটা যদি এক হয়/
সময় মিলিয়ে দেবে- কিসের আবার ভয়।/
সেদিন পাশে দাঁড়ালেই তুই বন্ধু/
নাহয় নয়।।



**কে সে ?***

"ওয়েটার, আরেকটা লার্জ "
প্রতি শনিবারের মত এই শনিবারও চেনা বারটিতে এসেছেন সুজিত বাবু। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, পরনে পাজামা-পাঞ্জাবী। পেশায় একজন প্রফেসার তিনি। তিরিশ বছরের অবিবাহিত  জীবন ঠিক এই শনিবার এসেই একা একা অনুভব করে। তাই এই রাতটা মদের সংগে কেটে যায়। আর রবিবারটা হ্যাংওভারে। বাকিদিনগুলো তিনি মন দিয়ে ছাত্র পড়ান। বারটিতে এখন চলছে লাইভ মিউজিক। বড় ভালো গাইছেন ভদ্রলোক। সুজিতবাবুর ইচ্ছে করছে হাত উঠিয়ে তালি দিতে। কিন্তু বারের সেই আলো-আঁধারি পরিবেশে নেশাগ্রস্ত মাথাটা এত পরিশ্রমকে আর সায় দিচ্ছেনা।
হঠাৎ একজন ভদ্রমহিলা এসে তার সামনের চেয়ারে বসলেন।
-একি, আমার এই টেবিলটা আমার একার ভাড়া করা থাকে প্রতি শনিবার, আপনি-আপনি এখানে বসলেন যে??
-জানি।
-জানি!!!??
-আপনি রোজ শনিবার এখানে এসে মদ খান। একা। আমিও খাই।একা। আপনাকে রোজ দেখি। আজ আলাপ করতে ইচ্ছে হল। আপনি যদি বলেন  তো উঠে যেতে পারি।
আরেকবার মহিলাটির দিকে ভালো করে তাকালেন। দেখে তো ভদ্রমহিলা ই মনে হয়। তবে এই বার এ একা শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজে পড়ে যে মদ খেতে আসে তার উপর একটা অন্যরকম সন্দেহ না করতে চাইলেও হয়। আজকাল পেপারে কত কিছু তো রোজ পাওয়া যায়!!
-কি ভাবছেন,  আমি ছেলেধরা মেয়ে কিনা??
চমকে উঠলেন সুজিতবাবু।
-নান্-না।
-অবশ্য ভাবাটাই স্বাভাবিক।
-না না। মানে আপনি কি করেন??
- আমিও আপনার মত প্রফেসর।
-আপনি?
-আপনাকে আমি আগে দেখেছি। আমার ভাইপোকে কলেজে ভর্তি করাতে গিয়ে।
-ওহ্।
-আমার ভাইপোর মুখে শুনেছি আপনি খুব যত্ন দিয়ে পড়ান। সেই আপনি রোজ শনিবার। কেন??
-আসলে খুব একা লাগে। তাই....
অনেক্ষণ চুপ দুজনেই। হঠাৎ মহিলাটি বলে উঠলেন, জানেন আমি বিধবা?
সুজিতবাবু  অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
-বিয়ের এক বছরের মধ্যে আমার স্বামী গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।সেই থেকে আমিও একা।
-না,আপনি চাইলে রোজ শনিবার  আমরা এখানে দেখা করতে পারি যেখানে আমাদের সমস্যাটা এক।
-স্যার,আর কিছু লাগবে স্যার???
- কে??
সুজিতবাবু পাশে চেয়ে দেখলেন ওয়েটার দাঁড়িয়ে। ঘাড়টা আবার ঘোরালেন মহিলাটির দিকে। দেখলেন সামনের কাঁচে তাঁর নিজের প্রতিবিম্বকে।


***বোকা চিঠি***

মাঝরাতে,/
অচেতন হাতে।/
লীলা জাগে।/
আমি কবি, /
বোকা চোখে ধরা পড়ে জগতের ছোটখাটো ছবি।/
ছবি আঁকে তাই দিয়ে গোপন ক্যানভাস।/
হে অনুপমা,/
এ বোকাকে বোকা করা কঠিন কাজ।।
হঠাৎ সকালে,/
ভালোবাসা আসে যদি,/
খুব করে ছুঁয়ে যাব তোমার কপালে।/
তুমি নেই,/
আমি আছি। /
আমি ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসি।/
তাই দিয়ে ঝলমল বেদনার সাজ।/
হে নিরুপমা, /
ভালোবাসাকে ঘৃণা করা কঠিন কাজ।।


***কাল্পনিক আলাপ***


প্রিয়তম,
তুমি দূরে বহুকাল হল ।
কতবার ভেবেছ আমায় ব্যস্ত জীবনে ।

প্রিয়তমা,
পাইনি অবসর।
শুধু, এক মনে বুনে গেছি মোদের দোসর।

প্রিয়তম,
এতদিনে হয়েছ প্রবীণ,
কাটিয়েছি কত মাস, কত বিরহের দিন,
আজ হিসেব চাইতে মন চায়।
কত চিঠি এতদিনে লিখেছ আমায়???

প্রিয়তমা,
রয়েছি নবীন।
মনে আছে প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন-
একসাথে পেরোনো সময়।
হিসেব চেওনা এ ভিখারির কাছে।
সব চিঠি গোপনে লুকানো আছে।

প্রিয়তম,
এ মন,
তোমার সুরে চেয়েছে অনুরণন।
কথা রেখেছ কি তুমি?

প্রিয়তমা,
ভয় পাই চেতনার সংঘাত,
এখনো সময় আছে- পারনাকি?
চেতনার বহুদূরে হারাতে সময়।
যান্ত্রিক জীবনে এক চিলতে হাসি।
যেখানে কেউ নাই।
সেই শুদ্ধ আবেগের আলিংগনে,
ভালোবাসা-বাসি।।



**যখের ধন**
বাড়ির এদিকটা কেউ আসেনা। লোকে বলে এদিকে নাকি যখ থাকে, সে তার সম্পত্তি আগলায়।বহুবছর আগে একজন সাহস করে এসেছিল, সে পাগল হয়ে ফিরেছে। লোকে বলেছিল যখে ভর করেছে। ডাক্তারি ভাষায় একে সিজোফ্রেনিয়া বলে পরে জেনেছে রিজু। এত মানুষের রক্ত দেখার পর, ডেডবডি কাটার পর কাউকে আর যখের ভয় আটকে রাখতে পারেনা।তাই ছোটবেলার অপূর্ণ সখ পূরণ করতে সে বাড়ির পিছনের জংলি ঘাস, মাকড়সার জাল পেরিয়ে চলেছে। আজ এক বছর পর বাড়ি এসেছে, কোথায় তার মাংসের ঝোল খেয়ে বাড়ির আরামের বিছানায় ঘুমানোর কথা, কিন্তু সে গামছায় মুড়ি আর তেঁতুল বেঁধে এগিয়ে চলেছে রহস্য উধ্ঘাটনের নেশায় ।মিনিট দশেক হাঁটার পর ঘন জংগল শুরু হল।বৃদ্ধ শাল, বট, হিজল, অশত্থ্ব গাছেদের একটা বৃদ্ধাশ্রম যেন জংগলটা। বেশ ঘন। তবু যেন কোথা থেকে ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে।বৃক্ষরা যেন রিজুকে বলল - বাবা, তুই এসেছিস ?  আমাদের সবাই ভুলে গেছে। তোর এতদিনে মনে পড়ল। আয় তোকে একটু বাতাস করি। গা টা জিরিয়ে নে।
রিজু এগোতে থাকল। আরো আধ ঘন্টা হাঁটার পর গাছের ঘনত্ব কমে গেল। একটা ছোট খাল দেখল রিজু। তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে খালপাড়ে গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। মৃদুমন্দ হাওয়ায় সে বাঁশি বাজাতে শুরু করল।চারিদিকে সবুজের ফৌজ সেই সুরে মন্ত্রমুগ্ধের মত মাথা দোলাতে লাগল। নদীতে মাছেরা জলের মধ্যে তাদের সাড় জানাচ্ছে। পাখিরা তাদের কলতানে তুলেছে অনুরণন। আর বাঁশি বেজে চলেছে।সেখানে মানুষের আর্তনাদ নেই, হিংসা নেই, টাকার লালসা নেই, ট্রাফিকের ক্যাকোফনি নেই, মুখোশধারী মানুষ নেই। আছে গানের সুর, আর আদিম বিশুদ্ধ  প্রকৃতি।আনন্দের শিহরণে রিজু ঘাসে গড়াগড়ি খেতে লাগল। এই তো তার যখের গুপ্তধন।


**ফিরে আসবই***

হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া হুঁশ ফেরাল সৌগতর। কতক্ষণ এই স্টেশনের এই বেঞ্চে একা বসে আছে সে জানেনা। স্টেশনটার নাম কি সে জানেনা। হারিয়ে যাবে বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে সে। একাই বসে ছিল। হঠাৎ পাশে এক লজেন্স-বিক্রেতা এসে বসল।
" কোথায় যাবে বাবা? "
সৌগত ফিরে তাকাল। হতবাকের মত।তার কাছে এর উত্তর নেই। জীবনের সব যুদ্ধে সে হেরে এখন ছাই এর মত হাওয়া যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকে উড়ে চলেছে। এর উত্তর জানা নেই।
" জানো তো, এটাই আজকের শেষ ট্রেন আসছে। "
" শেষ ট্রেন কেন??  " যেন কয়েক যুগ পর তার মনে কোন প্রশ্ন জাগল।
"লাইনের কাজ চলছে। আমার আর কি?  আজ দশ টাকা কম রোজগার হবে। কাল ভোরে উঠে উসুল করে নেব। "
এরা জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত হয়না। এরা হারতে শেখেনি। এদেরকে পায়ে পিষে মেরে ফেললেও এরা ঘুরে দাঁড়াতে জানে। এদের কাউকে পাশে দরকার হয় না। কে থাকল,  না থাকল এরা খেয়াল রাখেনা। রোজ পাঁচটা-দশটার জীবন এদের। তবুও এক ফোঁটা ক্লান্তি নেই। ওরা পারে !!!! সৌগত পারেনা।।
না, পারে। সৌগত উঠে দাঁড়াল। ট্রেন প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াল। সে পা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিল।।


***প্রবন্ধ -১**


কেউ এই পৃথিবীতে কোন আফসোস রেখে যেতে চায়না। কিন্তু সত্যি কি তাই হয় ? পাশ্চাত্য দর্শন বলে - জীবন একটা কমলালেবুর মত, যতদিন বাঁচো সেই লেবুর রস নিংড়ে নাও। 
তবু কি আফসোস থাকবেনা ? জীবনকে দুভাবে উপভোগ করা যেতে পারে -
১) বহির্মুখী জীবন - সে চাইবে অনেক বেশি সম্পর্ক স্থাপন করতে, অনেক বেশি খ্যাতি, যশ, টাকা-পয়সা।  এর বিনিময়ে সে প্রতিদিন সুখ-দু:খকে উপভোগ করবে। এরা শুধু বর্তমানকে নিয়ে চলে।
২) অন্তর্মুখী জীবন - সে চাইবে তিন কালকে মাথার মধ্যে রেখে সৃষ্টি করতে। সে যখন সৃষ্টি করবে তার কাছে গোটা পৃথিবী তার ঘরের অন্ধকার কোণে এসে স্থান নেবে। তার কাছে তার সৃষ্টিই সব। সে সেই সৃষ্টিকে অমর করে রেখে যেতে চাইবে। এটাই তার সুখ-দুখের মাপকাঠি হবে।

আমরা প্রত্যেকে এই দুই জীবন মিশিয়ে চলি। একজন রিকশাচালককেও আমি আনমনে গুনগুন সুরে গান করতে শুনেছি। একজন বড় মাপের অভিনেতাকেও তার প্রথম প্রেম নিয়ে হা-হুতাশ করতে শুনেছি। কার আফসোস নেই ? অন্তর্মুখী জীবন গবেষক-শিল্পীর জীবন - তাও ভাল, সে পৃথিবীকে নতুন কিছু দিয়ে যায়। বহির্মুখী জীবন ছাড়া আবার মানবসমাজ ধ্বংস হতে বসে। দুটোই একে অপরের পরিপূরক।
আফসোস ছাড়া একমাত্র মুনি-ঋষিরাই দেহ রাখতে পেরেছেন। তারা পিৎজা না খাওয়া, নতুন কোন মুক্তি পাওয়া সিনেমা না দেখা, কোন নারীকে জীবনে নিজের করে না পাওয়া, কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার আফসোস করেন না। ভাবতেও অবাক লাগে, খালি গায়ে ছাই মেখে বছরভর নিজের ভাগ্যকে কোন এক অজানা মহাশক্তির উদ্দেশ্যে সঁপে দিয়ে তারা প্রার্থনা করে চলেছেন একমনে। এদের কাছে কমলালেবুও যা, তার বিচিও তাই। এখানেই প্রাচ্য দর্শনের সার্থকতা। 


***উত্তরণ***
হেডফোনটা কানে গুঁজে নিল অনিকেত। আজ গড়িয়ার একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পি.জি.এন্ট্রান্স পরীক্ষা আছে তার। সারা বছর সে বইতে মুখ গুঁজে ছিল। এখানে গেটের সামনে পাংশুটে মুখগুলো দেখে মুখ শুকিয়ে গেল তার। এখন নিজেকে আয়নায় দেখলে হয়তো ওই মুখগুলোর মতই লাগবে। না আর শ্রেয়া ঘোষালের গানে চলবেনা। কানে তুলে নিল আধুনিক বিট-জর্জরিত গান। এই গানগুলো শুনলে নিজের হার্টবিট মনে থাকেনা, ওটা যেন কানে উঠে আসে। শুরু হল "চার বোতল ভদকা "। হঠাৎ...
সুস্মিতা না??  একসময়ের প্রেমিকের দিকে তাকিয়েই চোখটা নামিয়ে নিল মেয়েটি । ওর ও কি এখানে সিট!!!???  হে ভগবান!!! 
"স্যার,  আপনার ব্যাগটা এখানে রাখবেন। এই নিন আপনার টোকেন। "
কত স্মৃতি, কত কথা, কত একসাথে ঘোরা,  কত আবেগ, হাসি,আদর সব কোন এক মাতাল ব্ল্যাকহোলের অতলে তলিয়ে যাওয়া নীহারিকার কেন্দ্রবিন্দু থেকে তার মাথায় প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
"স্যার, এটা আপনার সিট। "
চেয়ার টেনে বসল সে। তিন বছর পর। সম্পর্কটার সাথে অনিকেতকেও মেরে দিয়ে গেছিল মিতা। উফ্,  আজকেই এটা হতে হল। কেন?
কত গুরুত্বপূর্ণ আজকের পরীক্ষাটা তার কাছে । আজকেই হতে হল?? 
" কেমন আছো অনি??? "
চমকে উঠল অনিকেত।
" এ...একি তুই, আমার পাশে!!  "
" এদিকে তাকিয়ো না। মনিটারে তাকিয়ে কথা বল।"
"আমি কেমন আবার?  তুই নিশ্চয়ই ভালো...  মিতা,  সেদিন আমি... "
"আপনি নিজের মনে মনে কথা বলুন,  এভাবে বিড়বিড় করবেন না,  বাকিদের ডিস্টার্ব হতে পারে।" পরিদর্শক বলে উঠলেন।
" সরি, এক্সট্রিমলি সরি। "
সময়টা এরপর খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেল। ওরা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। দূরের রাস্তাকে অন্ধকারে কুয়াশা চুম্বন করছে।
"আজ পরীক্ষাটা ভালো হলনা। মিতা আমি বোধহয় এবারও..."
"থাক্"
অনিকেতের বাম হাতটা আঁকড়ে ধরল সুস্মিতা আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল " আমি মরে যাইনি "



পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...