Tuesday, May 16, 2017

উহ্য

কালকেই পরিচয় হল বছর উনিশের মেয়েটির সাথে। ওর শেষ মনে পড়ে বিশাল ঝড় উঠেছিল। সুনামি আলার্ট বেজেছিল। ওকে নিয়ে ওর বাবা-মা আরো অনেকের সাথে একটা সাবমেরিন জাহাজে উঠেছিল। তারপর প্রচুর ওলট-পালট। তারপর কিছু মনে নেই সেভাবে। চোখ খুললো যখন ও এই নির্জন দ্বীপে বালির উপর শুয়ে, শরীরে শক্তি ছিলনা। আবার জ্ঞান হারিয়েছিল। আমি এসে ওর জ্ঞান ফেরালাম। আমি যেহেতু একজন ভূতত্ত্ববিদ। পৃথিবীর বুকে মানবসভ্যতার উপর এই বিপর্যয় আসতে পারে আমি জানতাম অনেক আগে থেকে। কিন্তু এই দ্বীপের ভৌগলিক গঠন থেকে জানতাম হয়তো এর কিছু হবেনা। তাই এখানে এক বছর হল আমি আছি। অবশেষে সেই শেষ দিন এল। এই দ্বীপে আমার কাছে এই প্রথম কোন মানুষ এল। এর আগে সবাই জানোয়ার ছিল। অবশ্য মানুষ যে সব থেকে শিক্ষিত জানোয়ার। যাই হোক, আমি ওকে আমার কাছে রাখা কিছু ফল মূল খেতে দিয়ে সুস্থ করে তুললাম। ওকে আমার তৈরি একটা ছোট্ট ঘরে বিশ্রাম নিতে বললাম। ওর এখনো এই শক কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। পরেরদিন যখন ওর ঘুম ভাংলো, আমি আগুন জ্বালিয়ে বই পড়ছিলাম। এসে আমার কাছে ছটপট করতে লাগলো।
'আপনি দেখেছেন ? '
আমি জানতে চাইলাম - কি ?
- ওই যে ওই যে ওই ফুল টা। বেগুনি রংগের উপর হলুদ কাজ করা আর লাল লাল।
- হ্যাঁ, দ্বীপের মাঝের দিকে এরকম অনেক আছে।
- ইস্ যদি ওর সাথে সেলফি তুলে ইন্সটাগ্রামে দিতে পারতাম।
- সে তো বুঝলাম, কিন্তু দেখবে কে ?
- তা ও ঠিক।
বলে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে এল। বললো - আমার খুব মন খারাপ।
আমি জানতে চাইলাম - কেন ?
- কিছু না। ফেসবুকে লিখলে কত লোকে জানতে চাইতো।আমিও বলতাম।
- কি ?
- আমার বয়ফ্রেন্ডকে মিস করছি। এই এত রোমান্টিক জায়গায়।
- কিন্তু সে তো বেঁচেও নেই হয়তো।
- হ্যাঁ ওই জন্যই তো মন খারাপ।
বলে চলে গেল। আবার কিছুক্ষণ পরে এল। বললো
- আমার খিদে পাচ্ছে।
- যাও কিছু শিকার করে আনো।
- কিভাবে করে ?
আমি ওকে শেখালাম কিভাবে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে হয়। সামান্য একটু দূরে একটা জমা জলের জায়গা ছিল মেয়েটি গিয়ে সেখানে ছিপ ফেলে বসে রইল।
হঠাত বলে উঠলো - আমাকে বেশ ভালো লাগছে না ? আমার একটা ছবি তুলুন প্লিজ।
আমি একটা নির্বিকার ভংগিতে তাকালাম। মেয়েটি নিজেই বললো - তুলেও বা কি হত ? কেউ দেখার নেই।
কিছুক্ষণ পরে এসে বললো - আমার খুব মন খারাপ। আপনাকে শুনতে হবে আমার কথা।
আমি বললাম - না। শুনবোনা। আমি যেকোন দিন যে কোন কারণে মারা যেতে পারি। তুমি ও। একা থাকা অভ্যেস করো। যেখানে মানুষ একা সেখানে কোন দু:খের বিলাসিতা নেই।
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকালো। বললো - তাইতো।
এতটা লিখে পেনটা ফেলে রাখলো অবিনাশ। কিছুক্ষণ আগেই সে মেয়েটিকে মাটি খুঁড়ে সমাধি দিয়ে এসেছে। একটা বোনের মত স্নেহ পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাত নিউমোনিয়া। এখানে আন্টিবায়োটিক ও নেই। পৃথিবীতো শেষ। তার এ লেখা পড়ার ও কেউ নেই। তবু লেখে সময় কাটাতে। যা মাথায় আসে।
চেষ্টা করে আবেগ কে বাঁচিয়ে রাখতে একা একাই, আবার যদি কেউ ভেসে আসে, অন্য কেউ অন্যভাবে।

হঠাত আবার পেন নিয়ে লিখল -
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে,/
বহুকাল হল,/
সে কালের কাছে, /
তোমার আমার চেতনা,/
কত ক্ষুদ্র জোনাকির মত,/
তবু তুমি সেই -/
আণবিক দু:খের গান গাও।/
সব কালো ভুলে যাব একদিন,/
অপরিণত জেল এর মত থকথকে মনে,/
যে স্মৃতি বুকে আগুন জ্বালাতো,/
সব ভুলে যাব। /
একবুক আকাশের মাঝে, /
নীহারিকার ঘেরাটোপে, /
আবেগী ক্যানভাসে সাদামাটা - /
আছি সেই একি আমি, /
আলোকপথগামী। /
নব রূপে এসে তুমি, /
দামামা বাজাও।।

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...