১
ঠিক সেইভাবে তুমি একদিন এসো,
যেভাবে গোধূলি-ঝিলে ধীরে ধীরে চাঁদ নেমে আসে,
যেভাবে এক মুঠো রঙ-তুলি মিশেছে আকাশে।
নানা সুরে, নানা রূপে,
দিবানিশি হাসছো সমুখে।
ভোরের পাখির ডাকে, ফাগুনের মঞ্জরিত শাখে -
শিশিরের টুপটাপ হয়ে এসো।
এইভাবে একদিন তুমি ভালোবেসো..
২
আমি এক দমকা হাওয়া,
হয়তো সেভাবে বাকিদের ভিড়ে আমায় দেখা যাবেনা-
কিন্তু তোমায় ছুঁয়ে যাবোই।
খোলা জানালার পথ চেয়ে,
যখন এগিয়ে যাবে সময়ের পথ দিয়ে ,
আঁখিকোণ যখন জলের ভারে উপচে পড়বে,
তোমার মনে তখন আমি -
এক গোপন ফাল্গুনী ।।
৩
চল্ পালিয়ে যাই এক দেশে,
দিনের শেষে -
যেখানে শুধু পাতাঝরার শব্দ শোনা যায়।
আর অনেক দূরে কোথাও পাহাড়ি নদীর বুকে -
জ্যোত্স্নারাতের প্রতিধ্বনি শুনবো।
৪
আমার পৃথিবী ধ্বংস হলে,
অন্ধকার আকাশে জ্যোত্স্নার আলপনা আঁকবো ,
এই যে হৃদয়ের মারকানা মার্বেলে
রেলগাড়ি এখনো ছুটছে -
মানে এখনো জ্বালানি আছে বাকি।
মনে এখনো ওঠে কালবৈশাখী।।
৫
আমার উদাসী পথের বাঁকে,
তোমার আসার তো কোন কথা ছিলোনা।
তবুও তুমি এসেছিলে,
গুমোট দিনের শেষে বৃষ্টির মতো,
পথের ধারে এই কচুপাতার উপর -
তোমার রিমঝিম সেতার বাজিয়েছিলো।
এ টানেলের সন্ধ্যেতে রাত্রি আসে,
সে রাত্রির কোন শুরু নেই, শেষ নেই।
স্তব্ধ খালের জলে লাশ ভেসে আসে -
ঝাউবন দোলে হাল্কা বাতাসে।
আর সেখানে তুমি এসেছিলে,
ভালোবেসেছিলে।
৬
বৃষ্টির পাহাড়ে মন খারাপের হাওয়া
মেঘ আমার সংগী হবে কি?
মেঘদলে হাত মেলালাম তবে,
মেঘের দলে আমায় খেলতে নিয়ো প্লিজ!
মেঘ আমায় ঢেকে রাখো -
একটু মন খারাপ করি।
বৃষ্টিস্নাত পাহাড় যেন সদ্য স্নান করে ভেজা চুলে তুমি,
তবু কেন এই বিজয়া দশমী?
এত স্মৃতি নিয়ে আমি কোথা যাই?
আমার এ পৃথিবীতে গানের ভাষা নেই,
শব্দ হারায় কবিতা।
রং তুলি জল কান্না ভেজাই -
স্বপ্ন বৃথা সবই - তা।
গল্প সবার যদিও একই,
কবিতার সময় কোথায় এখন??
৭
যে রাজপথে মিছিল নিয়ে নেমেছিলাম,
সেই রাজপথের আমি আর কেউ নই।
আমি শুধুমাত্র একজন অতি সাধারণ ছাপোষা।
কিছুটা মধ্যবিত্ত ঘেঁষা -
এ শহরের বুকে আমি -
আর রাস্তার পাঁচজনের থেকে আলাদা কেউ নই।।
৮
ধীরে ধীরে রোদ পড়ে আসে,
জীর্ণ কাচের গুঁড়ো ভাসছে বাতাসে।
আলো ঠিক যত কমে -
ততটা সন্ধ্যে নামে ধীরে ধীরে।
এই কালচক্র-মাঝে আমি তুমি প্রদীপের শিখা,
কপালের লেখনীতে পালটানো জীবিকা।
খোঁজ করে মৃত প্রাণ,
হাঁক পাড়ে -
শুন্য কুয়ার ভেতরে কম্পিত প্রতিধ্বনি,
বাড়ি আছো?
কেউ কি বেঁচে আছো -
ওই সীমিত হাসির আড়ালে, আবডালে???
বোবা স্বর আরও অনেক অনেক কথা বলতে চায় -
যত বলতে চায় ততটাই বোবা হয়ে যায়।
চাপা কান্না একটা চোখে আসে।
অকূল পাথারে যারে করেছো সম্বল,
কম্পিত কন্ঠস্বরে একদিন বিদায় জানিও তবে।
তার মাঝে কথা দিও মৃণালিনী -
অন্য কোন সময়লেখায় তুমি শুধু আমার হবে।।
৯
আমি হারিয়ে যাওয়ার মুখে,
একটা খাদের কিনারায় -
আঁধারে অতল গভীরে তলিয়ে যাবো কি জানিনা।
কেউ কারো জন্য শেষ হয়না,
আমি তলিয়ে গেলে এই গানের প্রসব হবে কি?
১০
তুমি একটা নদীর মতো,
নদী যেমন সাগরে মেশার আগে ভয় পায়।
অথচ সাগরের জন্যই তার এত এত পথ পেরিয়ে আসা।
কত বরফগলা উপত্যকা,
রূক্ষ পাহাড় জমি,
সবুজ জনপদ পেরিয়ে ঠিক সাগরে মেশার আগে,
নদীর মনে দারুণ দারুণ ভয়।
ভয় পাওয়াটা যদিও অস্বাভাবিক কিছু নয়!
সামনে সমুদ্র যে অসীম,
যদি হারিয়ে যায়?
তুমি হয়তো ভাবোনি,
আর কোন উপায় নেই নদীর,
নদী আর ফিরে যেতে পারেনা।
নদীকে ঝুঁকি নিতে হবে,
নিতেই হবে সাগরে হারানোর।
কারণ সাগরে মেশার পর নদী বুঝবে-
এটা ঠিক হারানো নয়-
নিজে সাগর হয়ে যাওয়া।
১১
হেঁটে যাই আমি সময়ের পথ ধরে,
আমার দুচোখ যেদিকে চলে যায় -
কত মানুষ চারিদিকে
অথচ কেউই যেন নেই আর।
কেউ নেই আর, কেউ নেই আর।।
১২
যেভাবে শিশির নামে গোলাপের গায়ে,
সেভাবে হিমের মতো ঘাম তোমার চোখে মুখে -
ঘামের বিন্দু তোমার গায়ে টলমল করে,
যেন পদ্মপাতায় বৃষ্টির জল -
আমি চাতক পাখির মত চেয়ে চেয়ে সেই নাচ দেখি।।
১৩
হঠাৎ ফোন এলো - ফাঁকা আছো?
না তোমায় কিছু ব্যস্ত হতে হবেনা-
শুধু শুনো।
তো বেশ।
কবি এলেন।
সুনীল, শক্তির পরে কবি জয় গোস্বামীতে পড়লেন,
আমি অপেক্ষা করছি এই কবিতার শেষ কোথায়।
এত ইনিয়ে বিনিয়ে কথা কে বলে?
কবি কাঁদলেন।
এত প্রেম, জায়গা নেই রাখার।
সব পাত্র উপচে পড়ে, ভেঙে যায়।
সবার শেষে যখন সে চলে গেলো,
নিজেকে শুধালেম -
এই ড্রেনের জলে কবিদের দাম ঠিক কতখানি??
১৪
এরকমই সময়ে আগের বছর -
আমার হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল,
একটা ব্যাগ, পেন ড্রাইভ আর কিছু নগদ টাকা।
আর কি বা লাগে বেঁচে থাকতে!
অজয় বললো - লড়াই করে যা।
করলাম, অনেক লড়াই করলাম।
নিজের সাথে, সময়ের সাথে -
রাষ্ট্রের সাথে।
শুধুমাত্র এক জেল থেকে আরেক জেলে-
বিপ্লবীর স্থানান্তর হল।
বাঁধা পড়ে রইলাম -
ছটপট করা পাখির মতো।।
১৫
না তোমাকে এমনভাবে কখনো ভালোবাসিনি,
যেন তুমি কোন রত্ন মণিহার, বা নীল গোলাপ -
বরং এমনভাবে ভালোবাসি-
যেভাবে কেউ অন্ধকারকে ভালোবাসে,
গোপনে, আলো-ছায়ার মাঝে।
যে গাছটি কখনো প্রাণ পাবেনা,
কিন্তু তার মধ্যে রাখা থাকবে শিউলির আঘ্রাণ -
সেভাবে ভালোবাসতে দিলেই খুশি আমি।
পৃথিবীর বুকে সেই গাছ আমার আঁধারে বাঁচুক।
কিভাবে, কোথায়, কবে থেকে এসব জানা নেই,
সোজাসুজি বলি ভালোবাসি,
জটিলতা নেই,
এ প্রেমের কোন অহংকার নেই।
শুধু জানি ভালোবাসি।
যেখানে আমি নেই, তুমি নেই-
কিন্তু এতো কাছে আমার বুকের উপর হাত,
তোমার হাত হয়ে যায়।
এতো কাছে আমি ঘুমালে তোমার চোখ বুজে আসে,
এভাবে ভালোবাসি,
কারণ আর কিছু আমি জানি না।।
১৬
It is known that love makes you insane.
It is known that love makes one suffer.
Everyone has an opinion to offer.
Love is not something to opine,
Love is a feeling to be close to the divine.
Love is not whom, what or why -
Love is to find you into my sky.
Love is to feel good, to prosper.
Love is all about how you deliver...
১৭
একদিন হঠাৎ দেখা হলো আঠারো বছরের আমার সাথে। দেখলাম এলোমেলো চুল, চঞ্চল চাহুনি, মাথা নীচু করে কি লিখছে।
কি লিখছিস? জানতে চাইলাম।
কবিতা লিখছি, বললো।
- কিসের কবিতা, প্রেমিকা ছেড়ে গেছে?
- বিপ্লবের কবিতা, দাদা। বিপ্লব।
- আরে এসব লিখে কি করবি?
- ফেসবুকে দেবো।
- দিয়ে?
- দুজন পড়েও যদি ভাবে।
- কেউ পড়বেনা, পড়লেও কেউ ভাববেনা।
- তুমি ভাবছো।
- আরে, আমি ভাবছি না। এত ভাবার সময় নেই।
- ভাবছো, রোজ ভাবছো। ঘুম হয় তোমার?
- কিসব! আচ্ছা পাগল।
- তুমি কবিতা লেখো কি করে?
- কই লিখি, পেছনে লাথি মারলেও এক লাইন বেরোবেনা।
- তুমি গান লেখো কি করে?
- কই লিখি, গান গাইনা আর। টাকা, চাই টাকা।
- যখন ভবিষ্যৎ রাতের অন্ধকারে মার খায়, তুমি খেতে পারো? কান্না পায়না তোমার?
- আমার শুধু খিদে পায়, আর হাসি পায়। তোকে দেখে হাসছি। আয় আমার বয়সে, এখন রক্ত গরম।
- আমিও হাসছি তোমাকে দেখে, সময় যদি পিছনে চলতে শুরু করে, তুমিও আমার বয়সে আসবে, তখন তুমি বুঝবে আজকের তুমি মৃত,
ঠান্ডা শোণিত।।
১৮
একদিন এরকম হবে,
ফোনে অনেক জনের লিস্ট,
কিন্তু নেই কেউ কথা বলার।
অথচ একদিন ফোন ছিলনা,
কিন্তু কথা বলার অনেকে ছিল।
একদিন এরকম হবে,
১৯
নাই বা এলে, কি ই বা ক্ষতি!
সব প্রেমের কি হতেই হবে বাঁধনে পরিণতি?
২০
রাত সে হোক যত না আঁধার,
একদিন ভোর আসবেই;
চোখ সে যত না বুজুক,
একদিন ঘুম আসবেই।
হার কেউ যত না মানুক,
একদিন তো হারবেই।
বিরহিত সুর যত না বাজুক,
একদিন তো আসবেই।
অনিমিখ আঁখি যত না শুকাক,
একদিন তো ভিজবেই।
পরাজয় যদি বরেণ্য হয়,
শিক্ষার আলো আসবেই।
স্নিগ্ধ তোমার মধুর মূরতি,
হৃদয়ে আমায় দিয়েছ ঠাঁই।
স্তব্ধ নিশার অকুল আঁধারে,
রাগে সুরভিত সুরে -
আমারই স্বরূপ খুঁজতে খুঁজতে
আমাকেই আমি তোমাতে পাই।
স্নিগ্ধ তোমার মধুর মূরতি,
হৃদয়ে আমায় দিয়েছ ঠাঁই।।
No comments:
Post a Comment