Friday, July 25, 2025

মনের কথা - পর্ব ১

 সকালে ঘুম ভাঙলো। কনকনে ঠান্ডা। আমি গরমের দেশের মানুষ - এত ঠান্ডা নিতে পারিনা তো। ঠান্ডায় ঘুম ভেঙে গেছে। এদিকে বাথরুম ও যেতে হতো। অনেক কষ্টে দু-তিনটে লেপ সরিয়ে নামলাম নীচে। পায়ে মোজা পরাই ছিলো, তবুও পা মেঝেতে রাখতেই ঠান্ডা লাগলো। গায়েও সোয়েটার পরা। কিন্তু বাইরে বেরোতে হবে তাই জ্যাকেটটা চাপিয়ে নিলাম। কাঁপতে কাঁপতে বাথরুমে গিয়ে দেখলাম জল বরফ হয়ে গিয়েছে। জলের কল থেকে বরফ ঝুলছে - এত ঠান্ডা!! বাথরুমের আশা ছেড়ে বাইরে এলাম। আকাশের দিকে তাকাতেই হঠাৎ ঠান্ডা, কাঁপুনি ভুলে গেলাম সব। একটা নক্ষত্র, ছায়াপথ খচিত রাতের আকাশ। কি স্পষ্ট। কারণ এখানে দূষণ এসে পৌঁছায়নি। দূরে পাহাড়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম পূবের আকাশ একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছে। তার একটু পরেই সেই "আহা কি দেখিলাম" টাইপের দৃশ্য। অনেক অনেক সোনা যেন কেউ পাহাড়ের সাদা বরফের উপর সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে। কে বলেছে প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই?

মানুষের ছলনায় ভুলে মানুষ ভাবে প্রেম নেই। সব মিথ্যে। তারপর কাজের চাপে, জীবনের চাপে এসবকে রূপকথা মনে হয়। ধরা যাক্‌ এক ভাঁড় ধোঁয়া ওঠা গরম চা। কিছুক্ষণ পরে সেটা ঠান্ডা সরবত হয়ে যায়। তার মানে কি চা টা খারাপ মানের ছিলো? মিথ্যে ছিলো ?
হ্যাঁ, হয়ে যায় জীবনে এমন কিছু ঘটনার পর ঘটনা। যখন সত্যি মনে হতেই পারে প্রেম বলে কিছু নেই। জীবনটা একটা ব্যবসা। আজ যে তোমাকে মশা তে খেলেও চিন্তায় পড়ে যায়, একদিন তোমার অসুুুখ হয়ে শয্যাশায়ী থাকবে - সে হয়তো জানবেও না। জানলেও তার যায় আসবেনা। এটাই নিয়ম। আজ কোন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেউ- তার সামনের রাস্তা দিয়ে অন্য একজন যাবে বলে। তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ - সে সামনে দিয়ে গেলো - আরেকটু ভালো যদি একগাল হেসে যায়। আর গাল দুটো আপেলের মতো লাল হয়ে যায়। এই নন-VIR(virtual)-বাল কমিউনিকেশনের পর পৃথিবীর কে ভাববে এটা প্রেম ছাড়া অন্য কিছু? তারপর কিছু সময় পেরিয়ে যায়। কয়েক বছরের ব্যবধানে একই স্থান, একই পাত্র-পাত্রী - শুধু চোখ তুলে দেখে কেউ কাউকে চেনেনা। বাস্‌, প্রেম তখন মিথ্যে। কবিতা তখন কিছু কাজ না থাকা লোকের ভ্যারান্ডা ভাজা ছাড়া কিছুই মনে হয়না। এটাই জীবনের নিয়ম। প্রতি মুহূর্তে জীবন আমাদের ট্রেনিং দেয় - আমাদের চারিদিকে যা কিছু - সব অনিত্য। Temporary.. আজ না হোক কাল সেটা থাকবেনা। নিশ্চিতভাবে থাকবেনা। কিন্তু ওই যে ক্ষণিকের অব্যক্ত কথোপকথন সেটা থেকে যাবে। কারণ ওটাও ওই "আহা কি দেখিলাম" গোত্রের।

গীতার সারমর্ম তো অনেক ট্রাকের পেছনে, অনেক ক্যালেন্ডারে লেখা সবাই পডে থাকবে - আজ যা তোমার কাল তা অন্য কারো ছিলো, আগামী দিনে তা অন্য কারো হবে। তুমি কি নিয়ে এসেছো যে তুমি কাঁদছো? তোমার যা পাওয়ার এখান থেকেই পেয়েছো, যা দেওয়ার এখানেই দিয়েছো।
অনেকটা শক্তির নিত্যতা সূত্র গোছের। প্রথমে যে সূর্যোদয়ের প্রসঙ্গ টানলাম, সেই একই সূর্য গ্রীষ্মের দুপুরে কত মানুষের প্রাণ নেয়। যে রোমান্টিক আকাশ জোনাকির মতো নক্ষত্রে ভরা- সেই নক্ষত্রে সব সময় আণবিক বিস্ফোরণ হচ্ছে। জীবনটা পুরোটাই নির্ভর করছে কেউ কিভাবে দেখছে। যে ভালোবাসা না পেয়ে আজ কেউ কাঁদছে, কেউ সেই ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে হয়তো ভালো নেই। মোদ্দা কথা - Everything is temporary. তাই একটা সুন্দর মুহূর্ত থাকতে থাকতে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা উচিত - কারণ সেটা বেশিক্ষণ না ও থাকতে পারে !! আর এমনিতেই মানুষ স্বভাবগতভাবে খুব স্বার্থপর, বিবেকহীন, বর্বর জানোয়ার। কয়েকটা কবিতা পড়ে সে যদি মানব প্রবৃত্তি ফিরে পায় - সেখানেই একজন কবির সার্থকতা। কোন আর্টিস্ট সেখানেই পূর্ণতা পায়। তাই লেখা না ভালো বেরোলেও লিখে যাচ্ছি। একদিন আবার জীবনে প্রচুর প্রেম আসবে। আবার ভালো ভালো লেখা, কবিতা, গান লিখবো। তারপর আবার সব অন্ধকার করে চলে যাবে সে। ধীরে ধীরে আমিও একদিন ফুরিয়ে যাবো।।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...