বিশেষ প্রতিবেদন
১লা সেপ্টেম্বর, ২০৩০ - অনেকের মুখেই শুনেছিলাম জায়গাটার নাম। এসেছিলাম এখানে এক বন্ধুর বাবাকে দেখতে। বন্ধু ব্যাংগালোরে থাকে, তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে। বাবা কে দেখার কেউ নেই। অগত্যা এই নদী-নালা, জংগলের দেশে কোন এক ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রেখে যাওয়া। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম সেটা ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ৭০ বছরের বৃদ্ধ প্রেমে পড়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধার। তাদের পাতানো ছেলে পাশের গ্রামের কৃষকের। সে এসে এনাদের সংগে খেলছে। নেচে বেড়াচ্ছে। এসব কি চলছে জানার জন্য ডাক্তারকে খুঁজতে হল। তিনি তখন মিটিং এ ব্যস্ত।মাঝারি উচ্চতার একজন, মাথার চুল, দাঁড়ি উস্কো খুস্কো কাঁচা-পাকা । চোখে মোটা গ্লাসের চশমা। আমাকে মিটিং এ বসতে অনুরোধ করলেন। ডাক্তারবাবু কে অনেকে অনেক কিছু অভাব অভিযোগ করছিলেন। তিনি সব শুনছিলেন। হঠাত পাশের মাঠে কিছু বাচ্চা খেলছিল তাদের হই-হট্টোগোলের শব্দে মিটিং এ অসুবিধে হতে লাগলো। দেখলাম বৃষ্টি নেমেছে। সবাই কি করবেন বলে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালেন। ডাক্তারবাবু নিজে উঠে গুরু গম্ভীর কন্ঠে বললেন - 'আপনারা কথা বলুন। আমি দেখছি। '
দুমিনিট গেল। ডাক্তারবাবু এলেন না। বরং চিতকারটা একটু বেড়েই গেল। একজন বললেন ডাক্তারবাবু কালকেই বলছিলেন- কি জানি আর কতদিন।
কিছু বিপদ হলনা তো!!!
কিছু লোকজন ভয় পেয়ে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, আমিও গেলাম। গিয়ে দেখলাম - সেই যে ব্যক্তিত্বটি একটু আগে সবাইকে পরিচালনা করছিলেন। তিনি এখন ওই চোস্তা পাঞ্জাবি পড়েই বাচ্চাদের সাথে কাদায় ফুটবল খেলছেন। আমায় দেখে ডাকলেন - 'সাংবাদিক সাহেব চলে আসুন। জ্বর হলে মে হুঁ না।'
আমি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ফিরে এলাম। এর ঘন্টাখানেক পরে ডাক্তারবাবুর ইন্টারভিউ এখানে কথোপকথন রূপে তুলে দিলাম।
ডা - বলুন কেমন খেলেন, চিংড়ি আর দেশি মুরগির ঝোল ?
- ভালো, কিন্তু কাজের প্রশ্ন করি এখন ?
- করুন।
- এখানে যে কর্মযজ্ঞ চলছে এই সমাজসেবার পেছনে আপনার কি লাভ ?
- দেখুন, প্রথম কথা আমার নামে কাগজে এরকম দুর্্নাম রটাবেন না। আমি সমাজ সেবা করছিনা। আমি খুব হিসেবি। কিছু দিই মানে কিছু নিই। সমাজ নিজের সেবা নিজে করছে। আই জাস্ট গেভ দেম আইডিয়াজ্।
- যেমন ?
- এই আশ্রমে আমার ভূমিকা আপনার মতই। জাস্ট টু অবজার্ভ। আমি এটা উইকলি করি এটাই ডিফেরেন্স।
-এতে আপনার লাভ ?
-এখানে প্রত্যেকটি বাবা- মা এক একটি উপন্যাসের খনি। আমি সেই খনি থেকে রত্ন তুলে নিয়ে হার সাজাই।
- কিন্তু এতে দেওয়াটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা ? হিসেবে ব্যালান্স থাকছে কই।
- আছে। দেখুন আমি কিছুই করিনা। সব এখানকার লোকেরাই করেন। এই বৃদ্ধ বাবা- মা রা গ্রামের বাচ্চাদের পড়ান। তার বদলে গ্রামের লোক এনাদের দেখাশোনা করেন। এটা আশ্রম না বলে সামাজিক মিথোজীবিতা বলা যেতে পারে। হ্যাঁ কোন বৃদ্ধর কোন মা কে পছন্দ হলে মদনের ভূমিকা নিই অস্বীকার করবোনা। যেমন আপনার বন্ধুর বাবা কে মাউথরগান শিখিয়েছি।
- আপনার মাথায় ডাক্তারি ছেড়ে এসবের সখ কবে থেকে হল ?
- আমি এখনো একটি কলেজের প্রফেসর। উইথ প্যাশন ছাত্র পড়াই। ওরাও এখানে আসে মাঝে সাজে। আমি খুব হিসেবী। কিভাবে হল না হল সেগুলো উপন্যাস খুঁজলেই পাবেন। কিছু রহস্য থাক। আর আমার মনে হয় সমাজটা শেষ ৫০ বছরে একটা পরিবর্তন ফেস করেছে তাতে এরকম পাকেজের প্রত্যেকটা গ্রামে খুব দরকার।
- কিরকম পরিবর্তন ?
- আগে ছিল জয়েন্ট ফেমিলি। নিউক্লিয়ার ফেমিলি হলেও তিন এর বেশি সন্তান। তাই কেউ বাইরে কাজের সূত্রে বা বিয়ে হয়ে চলে গেলেও তার বাবা- মা কে দেখার জন্য বাকিরা থাকতো কেউ না কেউ। যে পড়াশোনাতে ডিপ্রাইভড। এখন যুগ পাল্টেছে। সবাই অলমোস্ট নিউক্লিয়ার ফেমিলি তে বিলং করে। খুব বেশি হলে দুজন সন্তান। মেয়ে সন্তান হলে ভালো। আগেকার যুগের বাপের বাড়ির কন্সেপ্ট এখন ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এদিকে যদি ছেলেকে মেয়ের সাথে মেয়ের বাবা/মা কে নিয়ে আলাদা থাকতে হয় তাহলে ছেলের বাবা- মা কে দেখার কেউ নেই। যেহেতু নিউক্লিয়ার ফেমিলি।এখন সমাজ হল দু-তিনজনের। তো আমার মনে হয়েছে এই ধরনের বাবা- মা দের জন্য একটি এরকম জায়গা দরকার। আপনার বন্ধুর বাবাকে কেমন দেখলেন ?
- এত চনমনে কি করে সম্ভব।
- উনি একজনের প্রেমে পড়েছেন। এর জন্য আমার উস্কানি কিছুটা দায়ী।
- হা হা হা।
- চলুন একটা জায়গায় নিয়ে যাই।
১লা সেপ্টেম্বর, ২০৩০ - অনেকের মুখেই শুনেছিলাম জায়গাটার নাম। এসেছিলাম এখানে এক বন্ধুর বাবাকে দেখতে। বন্ধু ব্যাংগালোরে থাকে, তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে। বাবা কে দেখার কেউ নেই। অগত্যা এই নদী-নালা, জংগলের দেশে কোন এক ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রেখে যাওয়া। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম সেটা ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ৭০ বছরের বৃদ্ধ প্রেমে পড়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধার। তাদের পাতানো ছেলে পাশের গ্রামের কৃষকের। সে এসে এনাদের সংগে খেলছে। নেচে বেড়াচ্ছে। এসব কি চলছে জানার জন্য ডাক্তারকে খুঁজতে হল। তিনি তখন মিটিং এ ব্যস্ত।মাঝারি উচ্চতার একজন, মাথার চুল, দাঁড়ি উস্কো খুস্কো কাঁচা-পাকা । চোখে মোটা গ্লাসের চশমা। আমাকে মিটিং এ বসতে অনুরোধ করলেন। ডাক্তারবাবু কে অনেকে অনেক কিছু অভাব অভিযোগ করছিলেন। তিনি সব শুনছিলেন। হঠাত পাশের মাঠে কিছু বাচ্চা খেলছিল তাদের হই-হট্টোগোলের শব্দে মিটিং এ অসুবিধে হতে লাগলো। দেখলাম বৃষ্টি নেমেছে। সবাই কি করবেন বলে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালেন। ডাক্তারবাবু নিজে উঠে গুরু গম্ভীর কন্ঠে বললেন - 'আপনারা কথা বলুন। আমি দেখছি। '
দুমিনিট গেল। ডাক্তারবাবু এলেন না। বরং চিতকারটা একটু বেড়েই গেল। একজন বললেন ডাক্তারবাবু কালকেই বলছিলেন- কি জানি আর কতদিন।
কিছু বিপদ হলনা তো!!!
কিছু লোকজন ভয় পেয়ে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, আমিও গেলাম। গিয়ে দেখলাম - সেই যে ব্যক্তিত্বটি একটু আগে সবাইকে পরিচালনা করছিলেন। তিনি এখন ওই চোস্তা পাঞ্জাবি পড়েই বাচ্চাদের সাথে কাদায় ফুটবল খেলছেন। আমায় দেখে ডাকলেন - 'সাংবাদিক সাহেব চলে আসুন। জ্বর হলে মে হুঁ না।'
আমি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ফিরে এলাম। এর ঘন্টাখানেক পরে ডাক্তারবাবুর ইন্টারভিউ এখানে কথোপকথন রূপে তুলে দিলাম।
ডা - বলুন কেমন খেলেন, চিংড়ি আর দেশি মুরগির ঝোল ?
- ভালো, কিন্তু কাজের প্রশ্ন করি এখন ?
- করুন।
- এখানে যে কর্মযজ্ঞ চলছে এই সমাজসেবার পেছনে আপনার কি লাভ ?
- দেখুন, প্রথম কথা আমার নামে কাগজে এরকম দুর্্নাম রটাবেন না। আমি সমাজ সেবা করছিনা। আমি খুব হিসেবি। কিছু দিই মানে কিছু নিই। সমাজ নিজের সেবা নিজে করছে। আই জাস্ট গেভ দেম আইডিয়াজ্।
- যেমন ?
- এই আশ্রমে আমার ভূমিকা আপনার মতই। জাস্ট টু অবজার্ভ। আমি এটা উইকলি করি এটাই ডিফেরেন্স।
-এতে আপনার লাভ ?
-এখানে প্রত্যেকটি বাবা- মা এক একটি উপন্যাসের খনি। আমি সেই খনি থেকে রত্ন তুলে নিয়ে হার সাজাই।
- কিন্তু এতে দেওয়াটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা ? হিসেবে ব্যালান্স থাকছে কই।
- আছে। দেখুন আমি কিছুই করিনা। সব এখানকার লোকেরাই করেন। এই বৃদ্ধ বাবা- মা রা গ্রামের বাচ্চাদের পড়ান। তার বদলে গ্রামের লোক এনাদের দেখাশোনা করেন। এটা আশ্রম না বলে সামাজিক মিথোজীবিতা বলা যেতে পারে। হ্যাঁ কোন বৃদ্ধর কোন মা কে পছন্দ হলে মদনের ভূমিকা নিই অস্বীকার করবোনা। যেমন আপনার বন্ধুর বাবা কে মাউথরগান শিখিয়েছি।
- আপনার মাথায় ডাক্তারি ছেড়ে এসবের সখ কবে থেকে হল ?
- আমি এখনো একটি কলেজের প্রফেসর। উইথ প্যাশন ছাত্র পড়াই। ওরাও এখানে আসে মাঝে সাজে। আমি খুব হিসেবী। কিভাবে হল না হল সেগুলো উপন্যাস খুঁজলেই পাবেন। কিছু রহস্য থাক। আর আমার মনে হয় সমাজটা শেষ ৫০ বছরে একটা পরিবর্তন ফেস করেছে তাতে এরকম পাকেজের প্রত্যেকটা গ্রামে খুব দরকার।
- কিরকম পরিবর্তন ?
- আগে ছিল জয়েন্ট ফেমিলি। নিউক্লিয়ার ফেমিলি হলেও তিন এর বেশি সন্তান। তাই কেউ বাইরে কাজের সূত্রে বা বিয়ে হয়ে চলে গেলেও তার বাবা- মা কে দেখার জন্য বাকিরা থাকতো কেউ না কেউ। যে পড়াশোনাতে ডিপ্রাইভড। এখন যুগ পাল্টেছে। সবাই অলমোস্ট নিউক্লিয়ার ফেমিলি তে বিলং করে। খুব বেশি হলে দুজন সন্তান। মেয়ে সন্তান হলে ভালো। আগেকার যুগের বাপের বাড়ির কন্সেপ্ট এখন ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এদিকে যদি ছেলেকে মেয়ের সাথে মেয়ের বাবা/মা কে নিয়ে আলাদা থাকতে হয় তাহলে ছেলের বাবা- মা কে দেখার কেউ নেই। যেহেতু নিউক্লিয়ার ফেমিলি।এখন সমাজ হল দু-তিনজনের। তো আমার মনে হয়েছে এই ধরনের বাবা- মা দের জন্য একটি এরকম জায়গা দরকার। আপনার বন্ধুর বাবাকে কেমন দেখলেন ?
- এত চনমনে কি করে সম্ভব।
- উনি একজনের প্রেমে পড়েছেন। এর জন্য আমার উস্কানি কিছুটা দায়ী।
- হা হা হা।
- চলুন একটা জায়গায় নিয়ে যাই।
এই বিশাল এরিয়ার মধ্যেই জায়গাটা ছিল। ডাক্তারবাবুর সাথে এলাম। দেখলাম ওই অজ পাড়াগাঁয়ে তৈরি পার্কের বেঞ্চে বসে একটি বেঞ্চে একজন বৃদ্ধ শেক্সপিয়ার পড়ে শোনাচ্ছেন কাঁধে মাথা দিয়ে থাকা বৃদ্ধাকে। কিছু বৃদ্ধ বৃদ্ধা নিজেরদের চোখে চোখ রেখে বাকি দুনিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমরা আছি, যতদিন আমরা আছি প্রেম আছে, সমাজ আছে।
No comments:
Post a Comment