সন্ধ্যেটা ঢলে পড়েছে এলোগায়ে বাড়িটার চারিদিকে। গেটের কলিংবেলটা বেজে উঠতেই বাড়ির কুকুরটা ডেকে উঠলো। গেট খুলে দিলেন একজন ভদ্রমহিলা।
গেটটা পেরিয়ে কুকুরটাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলেন আগন্তুক। ভদ্রমহিলা গেট লাগিয়ে চলে গেলেন। এরপর ঋজু দেহে হেঁটে নিজের ঘরে ঢুকলেন
ডা: অবচেতন চ্যাটার্জী। ঘরের এক কোণে এসে পড়ছে জানালা দিয়ে পড়া নিভতে বসা আলো। ঘরটায় চারিদিকের দেওয়াল বইএর আলমারি দিয়ে সাজানো। একদিকে রাখা একটা পিয়ানো, গোটা ছয়েক গিটার, একটা বেহালা আরো নানারকম বাদ্যযন্ত্র। তার পাশে রয়েছে একটা ক্যানভাস। টেবিলে ক্লান্ত শরীরে বসে সামনের দেওয়ালে নিজের হাতে লেখাটার দিকে তাকালেন। লেখা 'ওয়ার্ক ইজ ওয়ারসিপ' । দেখে হাসিমুখে তার থিসিস লেখা শুরু করলেন । হঠাত ঘরটার দরজার কাছে একটা আওয়াজ হল। ওদিকে না ফিরেই একটু ভারী গলায় বললেন - 'কে বউমা? আমায় কিছু খেতে দিতে হবেনা। আমি নিজে করে খেয়ে নেবো।'
- জ্যেঠু, আমি।
চমকে ফিরে তাকালেন তিনি। তার ভাইপো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে।
সস্নেহে বললেন- আয়, ভেতরে আয়।
ভাইপো টলতে টলতে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
- হুম্ ক পেগ ??
ভাইপো উত্তরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
- কেন শুধু বোকা বা শুধু চালাক হলাম না জ্যেঠু, এ দুনিয়াটা খুব খারাপ, খুব।
- ভালো, খারাপ তো আপেক্ষিক, তাতে তোর কি?
- সব তো তোমার কাছে শিখেছি। তুমি শিখিয়েছ নীতি, আদর্শ নিয়ে চললে নাকি অনেক কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এ তো দেখছি উলটো। যারা এসব বিসর্জন দেয় তারাই বেশি বেশি সুখ ভোগ করে। কি লাভ ?
- লাভ এখন নয়, পরে বুঝবি। প্লেজার প্রিন্সিপ্যালে চলে সাময়িক সুখ আসে, শান্তি আসেনা। তাছাড়া দোষ তো তোরও আছে।
- কিসের দোষ?
- চুরি করা অপরাধ, কিন্তু চোরের সামনে দামী জিনিস ফেলে রেখে প্রলুব্দ করাও তো অপরাধ। আর সবসময় নিজেকে বোকা বানিয়ে রাখবি। নিজে কতটা চালাক কাউকে ধরতে দিবিনা। কাউকে বোকা বানাবিনা। নিজেও বোকা হবিনা।
- এসব নীতি আঁকড়ে তুমি কি পেয়েছ সারা জীবনে?
- হাসি। এই হাসিটা নিয়ে একদিন চোখ বুজবো যেদিন উনি চাইবেন।
- আমার আর বেঁচে থেকে কি লাভ ?
- নিজের ইচ্ছেয় যখন জন্মাসনি, নিজের ইচ্ছেতে মরবি কেন শুধু শুধু। মরতে তো সবাই পারে। বেঁচে দেখা।
গেটটা পেরিয়ে কুকুরটাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলেন আগন্তুক। ভদ্রমহিলা গেট লাগিয়ে চলে গেলেন। এরপর ঋজু দেহে হেঁটে নিজের ঘরে ঢুকলেন
ডা: অবচেতন চ্যাটার্জী। ঘরের এক কোণে এসে পড়ছে জানালা দিয়ে পড়া নিভতে বসা আলো। ঘরটায় চারিদিকের দেওয়াল বইএর আলমারি দিয়ে সাজানো। একদিকে রাখা একটা পিয়ানো, গোটা ছয়েক গিটার, একটা বেহালা আরো নানারকম বাদ্যযন্ত্র। তার পাশে রয়েছে একটা ক্যানভাস। টেবিলে ক্লান্ত শরীরে বসে সামনের দেওয়ালে নিজের হাতে লেখাটার দিকে তাকালেন। লেখা 'ওয়ার্ক ইজ ওয়ারসিপ' । দেখে হাসিমুখে তার থিসিস লেখা শুরু করলেন । হঠাত ঘরটার দরজার কাছে একটা আওয়াজ হল। ওদিকে না ফিরেই একটু ভারী গলায় বললেন - 'কে বউমা? আমায় কিছু খেতে দিতে হবেনা। আমি নিজে করে খেয়ে নেবো।'
- জ্যেঠু, আমি।
চমকে ফিরে তাকালেন তিনি। তার ভাইপো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে।
সস্নেহে বললেন- আয়, ভেতরে আয়।
ভাইপো টলতে টলতে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
- হুম্ ক পেগ ??
ভাইপো উত্তরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
- কেন শুধু বোকা বা শুধু চালাক হলাম না জ্যেঠু, এ দুনিয়াটা খুব খারাপ, খুব।
- ভালো, খারাপ তো আপেক্ষিক, তাতে তোর কি?
- সব তো তোমার কাছে শিখেছি। তুমি শিখিয়েছ নীতি, আদর্শ নিয়ে চললে নাকি অনেক কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এ তো দেখছি উলটো। যারা এসব বিসর্জন দেয় তারাই বেশি বেশি সুখ ভোগ করে। কি লাভ ?
- লাভ এখন নয়, পরে বুঝবি। প্লেজার প্রিন্সিপ্যালে চলে সাময়িক সুখ আসে, শান্তি আসেনা। তাছাড়া দোষ তো তোরও আছে।
- কিসের দোষ?
- চুরি করা অপরাধ, কিন্তু চোরের সামনে দামী জিনিস ফেলে রেখে প্রলুব্দ করাও তো অপরাধ। আর সবসময় নিজেকে বোকা বানিয়ে রাখবি। নিজে কতটা চালাক কাউকে ধরতে দিবিনা। কাউকে বোকা বানাবিনা। নিজেও বোকা হবিনা।
- এসব নীতি আঁকড়ে তুমি কি পেয়েছ সারা জীবনে?
- হাসি। এই হাসিটা নিয়ে একদিন চোখ বুজবো যেদিন উনি চাইবেন।
- আমার আর বেঁচে থেকে কি লাভ ?
- নিজের ইচ্ছেয় যখন জন্মাসনি, নিজের ইচ্ছেতে মরবি কেন শুধু শুধু। মরতে তো সবাই পারে। বেঁচে দেখা।
- Dont you feel alone in your life ??
- কোথায় একা ? এত কাজ, এই পিয়ানোটায় হাত পড়লেই তো কিছু মনেই থাকেনা। যখন মনে ফূর্তি জাগে ওদের সাথে কথা বলি, যখন মনে বিষাদ জাগে ওদের সাথে কথা বলি। মনে হয় এখনো যুবক। আর বুড়ো বয়সে কি হবে ভাবিনা। এই পিয়ানোটাই অন্ধভাবে সুর বাজাতে শেখায়, আবার মাঝে মাঝে বেসুরো লাগলে চোখটা খুলতে হয়। নাহলে ভুল সুর চলতেই থাকবে। ঠিক করে নিই।
- আমিও একা থাকবো।
- একা থাকা খুব কঠিন সাধনার ফসল। চেষ্টা করতে পারিস। তবে জীবন-দর্শন যদি মজবুত হয় আর একটু সুর সচেতন হোস একা থাকার মত শান্তিপূর্ণ আর কিছু নয়।
- তুমি নিশ্চয়ই কাউকে ভালোবেসেছিলে, শুনেছি বাবার কাছে যে তোমার সাথে কথা না বলতে... বললে তোকেও পাগলভোলা বিবাগী বানিয়ে দেবে। এখনো ভোলোনি?
- হ্যাঁ বেসেছি তো। নিজেকে, নিজের নীতিকে। এখনো ভুলিনি। আমায় তুই কি ভাবিস, পাগলভোলা ?
- পৃথিবীতে একমাত্র তোমার সাথে কথা বলে শান্তি পাই। মনে কোন দু:খ থাকেনা।
- কবি বলেছেন-
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বহুকাল হল,
সে কালের কাছে তোমার আমার চেতনা কত ক্ষুদ্র জোনাকির মত,
তবু তুমি সেই আণবিক দু:খের গান গাও।
- কোথায় একা ? এত কাজ, এই পিয়ানোটায় হাত পড়লেই তো কিছু মনেই থাকেনা। যখন মনে ফূর্তি জাগে ওদের সাথে কথা বলি, যখন মনে বিষাদ জাগে ওদের সাথে কথা বলি। মনে হয় এখনো যুবক। আর বুড়ো বয়সে কি হবে ভাবিনা। এই পিয়ানোটাই অন্ধভাবে সুর বাজাতে শেখায়, আবার মাঝে মাঝে বেসুরো লাগলে চোখটা খুলতে হয়। নাহলে ভুল সুর চলতেই থাকবে। ঠিক করে নিই।
- আমিও একা থাকবো।
- একা থাকা খুব কঠিন সাধনার ফসল। চেষ্টা করতে পারিস। তবে জীবন-দর্শন যদি মজবুত হয় আর একটু সুর সচেতন হোস একা থাকার মত শান্তিপূর্ণ আর কিছু নয়।
- তুমি নিশ্চয়ই কাউকে ভালোবেসেছিলে, শুনেছি বাবার কাছে যে তোমার সাথে কথা না বলতে... বললে তোকেও পাগলভোলা বিবাগী বানিয়ে দেবে। এখনো ভোলোনি?
- হ্যাঁ বেসেছি তো। নিজেকে, নিজের নীতিকে। এখনো ভুলিনি। আমায় তুই কি ভাবিস, পাগলভোলা ?
- পৃথিবীতে একমাত্র তোমার সাথে কথা বলে শান্তি পাই। মনে কোন দু:খ থাকেনা।
- কবি বলেছেন-
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বহুকাল হল,
সে কালের কাছে তোমার আমার চেতনা কত ক্ষুদ্র জোনাকির মত,
তবু তুমি সেই আণবিক দু:খের গান গাও।
মুখে হাসি ফুটে উঠলো দুজনের মুখে। তারপর জ্যেঠু উঠে গেলেন পিয়ানোর সামনে। পাশে বসলো ভাইপো। নক্ষত্ররা মহাকাশে অনেক রকম সুর তৈরি করে। শিল্পীরা সেই নক্ষত্রের সুর গুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। সেদিন পিয়ানোতে কিছু নীহারিকার জন্ম হয়েছিল।
No comments:
Post a Comment