Saturday, June 29, 2024

SKY-ভার্স আর ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল ২০২৪


 ঘন রাত। শেয়াল-কুকুরও তখন নিদ্রামগ্ন। কোন কিছুতেই তখন সাউথ আফ্রিকাকে আটকানো যাচ্ছেনা।  যদিও তখন প্রায় সত্তর রান বাকি। ডিকক ও আউট। কিন্তু হেনরিক ক্লাসেন আর মিলারের গন্ধটা ঠিক ভালো ঠেকছিলোনা। ঠিক সেই সময় রোহিত শর্মা উইকেট তুলতে চেয়ে অক্ষর প্যাটেল কে নিয়ে এলো। ১৪ তম ওভার। খেলা ওখানেই শেষ হয়ে গেছিলো। এক সমান্তরাল বিশ্বের তৃতীয়বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা দেশ ভারতবর্ষে হয়তো আজ আমরা আলোচনা করছি ২০০৩, ২০২৩ এর মতো আবার একটা ফাইনালে হারের কথা। কিন্তু প্রতিপক্ষের নাম সাউথ আফ্রিকা। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে যে দল বিচ্ছিরি ভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে জেতা ম্যাচ হারতে পারে সে দলের সাথে আরেকটা নিষ্ঠুর পরিহাস লেখা হলো। তিরিশ বলে তিরিশ রান দরকার ছিল একটা সময়। মিলার আর ক্লাসেন তখন সুঁটিয়ে লাল করে দিচ্ছে ভারতীয় বোলারদের। তারপর কি হল? তিনজনের মাথায় হঠাৎ ভগবান ভর করলো। 

সূর্য কুমার যাদব ( ৩৬০°) = ব্রম্ভা

জসপ্রীত্ বুমরা = বিষ্ণু

হার্দিক পান্ড্য = মহেশ্বর 

যতদিন ভারতে ক্রিকেট থাকবে, ততদিন সূর্য কুমার যাদবের এই ক্যাচের নাম থাকবে। আমার কাছে সেরা ফাইনাল মানে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল। না ওটা ব্যাটিং করে জিতেছি। আজ বোলিং এ জিতলাম। বিরাটের ইনিংসকে সম্মান জানিয়েই বলছি, আজ জাস্ট বোলিং আর সূর্য কুমার যাদব জেতালো৷ ওই মুহূর্তে ওরকম একটা ক্যাচ ধরার লোক ২০০৩ এও ছিলো - মহম্মদ কাইফ। কিন্তু ২০০৩ এ বুমরা ছিলোনা। ১৭ তম ওভারে বুমরা দুই রান দিয়েছে। দুই রান৷ আর ওই ইনসুইংরা টা! রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, বুমরাকে স্মরণ করিবে। রণের থেকে কিছু কি আলাদা ছিলো!?? অন্য যেকোন ক্যাপ্টেন ১৯ তম ওভারে পান্ড্যকে এনে, ২০ তম ওভারে অর্শদীপকে আনতো। কারণ পান্ড্য র উপর কোন ভরসা নেই। ওর ওভারটা আগে শেষ করিয়ে রাখতো। কিন্তু ১৪ তম ওভারের অক্ষর কে আনা যেরকম বুমেরাং হয়েছিলো। হার্দিক পান্ড্যর উপর হঠাৎ ভগবান না চাপলে ওই পারফেক্ট ওয়াইড আফ দ্য অফস্ট্যাম্প লেংথে বল ওই চাপে করা সম্ভব ছিলনা। আর তারপর সেই ক্যাচ। না ২০০৩ এর দলে পান্ড্য ছিলোনা একজন। তাই পাঁচ নম্বর তারাটা এক বংগসন্তানের হাত দিয়ে উঠতে পারতো, কিন্তু উঠলোনা। সাউথ আফ্রিকা আপাতত ফাইনালে উঠুক আরো দু তিনটে। তারপর ভাবা যাবে। আজকের রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক করার সেই বহু সমালোচিত সিদ্ধান্তও কিন্তু সেই বংগসন্তানের। রাহুল দ্রাবিড়ের উচ্ছাস দেখে মনে হচ্ছিলো আজ দ্রাবিড় যার হাত দিয়ে কোচ হলো, সেই মানুষটা এই ছবিতে নেই। 

রাহুল দ্রাবিড় কি ভারতবর্ষের জিনেদিন জিদান? সেই প্রশ্ন থাকলো। কিন্তু আমরা যেন সেই বংগসন্তানকে না ভুলি। আসল কবির খান কিন্তু পর্দার আড়ালেই থেকে গেলো। যাই হোক, আজ রিপ্লে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম। মিলার যদি জানতো ফলাফল এত কাছাকাছি বিপক্ষের দিকে যাবে, সে কি কুলদীপের এই বলটা ডিফেন্স করতো? এরকম টানটান উত্তেজনাপূর্ন বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ একমাত্র নার্ভ ঠান্ডা না রাখলে জেতা যায়না। বারবার ফাইনাল হেরে রোহিত শর্মার দল জানতো, রাহুল জানতো সেটা কিভাবে ঠান্ডা রাখতে হয় চাপের মুখে। বহু যুদ্ধের পরাজিত সৈনিকরা যদি একজোট হয়, তাদের একসাথে স্নায়ুচাপে ফেলা মুশকিল। তাই যে ম্যাচে তিরিশ বলে তিরিশ রান দরকার ছিলো, সেই ম্যাচ সাত রানে হারলো সাউথ আফ্রিকা। এমন এক ফাইনাল ম্যাচ হলো, যার থেকে এক মুহূর্ত ও চোখ সরানো গেলোনা। সকল ভারতবাসীকে জানাই অভিনন্দন। ডি লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস, ইয়াক, ইয়াক।।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...