গল্প ১.
কিছুক্ষণ আগেই বিছানায় নিজের স্বামীর বাহুডোরে বাঁধা ছিলেন সংযুক্তা দেবী। হঠাত দম বন্ধ হয়ে এল। হাতটা সরিয়ে এপাশ ফিরে শুলেন তিনি। আজ সারাদিন কম পরিশ্রম হয়নি। সকাল থেকে রান্নার মাসির উপর তদারকি করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করা । ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করে স্কুলবাসে তুলে দেওয়া। নিজের অফিস। সেখানে হাজার ঝামেলা। তারপর আবার ফিরে..... উফ্, জীবনটা নারী হতে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে গেছে। এভাবে চলতে পারেনা।
- কিগো এদিকে ফিরবেনা ?
স্বামী ডাকলেন।
না সাড়া দেওয়া যাবেনা। ঘুমানোর ভান করলেন। কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষা করলেন জেগে কিনা। না ঘুমোচ্ছে, ঘুমোক। উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমে ফ্রিজ থেকে জল খেলেন। ফেসবুকটা খুললেন। এইতো অনলাইন। মেসেজ পাঠাই।
- হাই, কি করছেন ?
- ভাবছি।
- কি ভাবছেন?
- কি ভাবা যায় তাই ভাবছি।
(এই তো আজকে এর সাথে একটু ভাঁটানো যাক)
- আজ কোন কবিতা লেখেননি। পাঠান না। পড়ি।
- পাঠাতে পারি, যদি সত্যি বলেন।
- জিগান।
- এই মাঝরাতে অন কেন ? আপনি তো একজন বিবাহিত নারী।
- না আমি একজন মেয়ে। একটু ভালোবাসা, ভালোথাকার খোঁজে এসেছি। আপনার না পোষালে না কথা বলতে পারেন।
- আচ্ছা...
- সরি, সরি সরি..প্লিজ.. ভুল হয়ে গেছে। আমায় তো কেউ ভালোবাসেনা।
- এই কথাটা হল টোপ । ছোটবেলা থেকে খেয়ে এসেছি।
- পাঠান না। আমার জন্য একটা গান লিখবেন বলেছিলেন কোথায় শুনি ?
- নিজের বউএর জন্য লিখবো।
- আপনি বিয়ে করলে আমায় জানাবেন। পরের দিন পেপারে হয়তো আমার ছবি দেখবেন।
- সেকি বিয়ে করতে পারবোনা তা'বলে।
- কেন, বিয়ে করবেন? মেয়েরা খুব বাজে হয়।
- আমি একজন নারীকে খুঁজেছিলাম। মেয়েকে তো খুঁজিনি।
- নারীর মধ্যেই মেয়েবেলা লুকিয়ে থাকে। কেউ সেটা বলে, কেউ বলেনা।
- তাহলে উপায় ?
- আমি রোজ মাঝরাতে এসে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। তার বদলে আমার জন্য লিখতে হবে। আমি ভাববো আমায় ভেবে লিখেছেন। ভেবেই ঘুমে চোখ বুজে আসবে।
- খুব মজা না ? আমি কাউকে ভেবে লিখিনা।
- আশ্চর্য একজন সুন্দরী মেয়ে যদি এভাবে ভাবে আপনার কোন অসুবিধে আছে ? আপনার তো ভাও খাওয়ার কথা।.... আপনি কিন্তু আমার থেকে খুব বেশি লম্বা হবেন না।
- হুম কেন ?
- বাহ্ তাহলে ঘাড় ব্যথা হবেনা। কি মজা।... কি হল, চুপ। আমায় দুশ্চরিত্রা ভাবছেন তো?
-না আপনি একজন মা।সেরকম ভাবার সাহস নেই। আমায় ক্ষমা করবেন। আমার কথা বলা ভুল হয়ে গেছে আপনার সাথে।আপনার সংগে আর কথা বলা যাবেনা।
- বলবেন না,আমিই আপনাকে পাঠাবো মেসেজ। একদিন না একদিন একা লাগলে ঠিক উত্তর দেবেন।
- কি ব্যাপার বলুন তো? প্রেমে পড়লেন নাকি?
- প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,
কে কখন ধরা পড়ে কে জানে।
- দেখুন আমি কারো বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে চাইনা।
- না আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু .... কিছু বোঝেন না ??
- আমায় ভালোবাসলে সেটা ভুল করেই ভালোবাসা হয়। গোলকধাঁধায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। আর কারো জীবনে কষ্টের কারণ হতে চাইনা। এলাম। আপনি যাতে আর মেসজ করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করলাম।
- আপনি ছেলে নন।সেলফিস।গোঁয়াড়।
- হ্যাঁ এটা ঠিক।
এর পরের রিপ্লাইটা পাঠাতে গিয়ে দেখলেন মেসেজ ব্লকড।
বিছানায় ফিরে এসে এপাশ ফিরে কাঁদতে লাগলেন। পাশ থেকে কে যেন বললো - একি কাঁদছো কেন ?
- তোমায় খুব ভালোবাসি।
বলে একজনের খাঁচায় বন্দী হল একটা পাখি। খাঁচা আর পাখি দুজনেই কাঁদতে লাগলো। শুধু কারণটা আলাদা।
কিছুক্ষণ আগেই বিছানায় নিজের স্বামীর বাহুডোরে বাঁধা ছিলেন সংযুক্তা দেবী। হঠাত দম বন্ধ হয়ে এল। হাতটা সরিয়ে এপাশ ফিরে শুলেন তিনি। আজ সারাদিন কম পরিশ্রম হয়নি। সকাল থেকে রান্নার মাসির উপর তদারকি করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করা । ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করে স্কুলবাসে তুলে দেওয়া। নিজের অফিস। সেখানে হাজার ঝামেলা। তারপর আবার ফিরে..... উফ্, জীবনটা নারী হতে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে গেছে। এভাবে চলতে পারেনা।
- কিগো এদিকে ফিরবেনা ?
স্বামী ডাকলেন।
না সাড়া দেওয়া যাবেনা। ঘুমানোর ভান করলেন। কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষা করলেন জেগে কিনা। না ঘুমোচ্ছে, ঘুমোক। উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমে ফ্রিজ থেকে জল খেলেন। ফেসবুকটা খুললেন। এইতো অনলাইন। মেসেজ পাঠাই।
- হাই, কি করছেন ?
- ভাবছি।
- কি ভাবছেন?
- কি ভাবা যায় তাই ভাবছি।
(এই তো আজকে এর সাথে একটু ভাঁটানো যাক)
- আজ কোন কবিতা লেখেননি। পাঠান না। পড়ি।
- পাঠাতে পারি, যদি সত্যি বলেন।
- জিগান।
- এই মাঝরাতে অন কেন ? আপনি তো একজন বিবাহিত নারী।
- না আমি একজন মেয়ে। একটু ভালোবাসা, ভালোথাকার খোঁজে এসেছি। আপনার না পোষালে না কথা বলতে পারেন।
- আচ্ছা...
- সরি, সরি সরি..প্লিজ.. ভুল হয়ে গেছে। আমায় তো কেউ ভালোবাসেনা।
- এই কথাটা হল টোপ । ছোটবেলা থেকে খেয়ে এসেছি।
- পাঠান না। আমার জন্য একটা গান লিখবেন বলেছিলেন কোথায় শুনি ?
- নিজের বউএর জন্য লিখবো।
- আপনি বিয়ে করলে আমায় জানাবেন। পরের দিন পেপারে হয়তো আমার ছবি দেখবেন।
- সেকি বিয়ে করতে পারবোনা তা'বলে।
- কেন, বিয়ে করবেন? মেয়েরা খুব বাজে হয়।
- আমি একজন নারীকে খুঁজেছিলাম। মেয়েকে তো খুঁজিনি।
- নারীর মধ্যেই মেয়েবেলা লুকিয়ে থাকে। কেউ সেটা বলে, কেউ বলেনা।
- তাহলে উপায় ?
- আমি রোজ মাঝরাতে এসে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। তার বদলে আমার জন্য লিখতে হবে। আমি ভাববো আমায় ভেবে লিখেছেন। ভেবেই ঘুমে চোখ বুজে আসবে।
- খুব মজা না ? আমি কাউকে ভেবে লিখিনা।
- আশ্চর্য একজন সুন্দরী মেয়ে যদি এভাবে ভাবে আপনার কোন অসুবিধে আছে ? আপনার তো ভাও খাওয়ার কথা।.... আপনি কিন্তু আমার থেকে খুব বেশি লম্বা হবেন না।
- হুম কেন ?
- বাহ্ তাহলে ঘাড় ব্যথা হবেনা। কি মজা।... কি হল, চুপ। আমায় দুশ্চরিত্রা ভাবছেন তো?
-না আপনি একজন মা।সেরকম ভাবার সাহস নেই। আমায় ক্ষমা করবেন। আমার কথা বলা ভুল হয়ে গেছে আপনার সাথে।আপনার সংগে আর কথা বলা যাবেনা।
- বলবেন না,আমিই আপনাকে পাঠাবো মেসেজ। একদিন না একদিন একা লাগলে ঠিক উত্তর দেবেন।
- কি ব্যাপার বলুন তো? প্রেমে পড়লেন নাকি?
- প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,
কে কখন ধরা পড়ে কে জানে।
- দেখুন আমি কারো বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে চাইনা।
- না আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু .... কিছু বোঝেন না ??
- আমায় ভালোবাসলে সেটা ভুল করেই ভালোবাসা হয়। গোলকধাঁধায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। আর কারো জীবনে কষ্টের কারণ হতে চাইনা। এলাম। আপনি যাতে আর মেসজ করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করলাম।
- আপনি ছেলে নন।সেলফিস।গোঁয়াড়।
- হ্যাঁ এটা ঠিক।
এর পরের রিপ্লাইটা পাঠাতে গিয়ে দেখলেন মেসেজ ব্লকড।
বিছানায় ফিরে এসে এপাশ ফিরে কাঁদতে লাগলেন। পাশ থেকে কে যেন বললো - একি কাঁদছো কেন ?
- তোমায় খুব ভালোবাসি।
বলে একজনের খাঁচায় বন্দী হল একটা পাখি। খাঁচা আর পাখি দুজনেই কাঁদতে লাগলো। শুধু কারণটা আলাদা।
গল্প ২
নদীর বাঁধে লুংগি পরে বসে বিড়ি খাচ্ছিলো তমোঘ্ন। এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের এই দিকটায় কেউ আসেনা। কি রূপসী আজকের আকাশটা। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এর রূপকে বর্ণনা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলোনা সে। চোখটা বুজে লালনের গান ধরলো - ডুবে দেখ দেখি মন কিরূপ লীলাময়, আকাশ- পাতাল খুঁজিস যারে এই দেহে সেই রয়।
হঠাত দেখলো দুজন মেয়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে।
১- গাও দাদা কি হল, গাও। থামলে যে ?
থতমত হয়ে দুজনের দিকে তাকালো তমোঘ্ন।
আরেকজন বললো - তুমি কাদের বাড়িতে এসেছো ?
- এই তো প্রধানদের বাড়ি।বুঝলি কি করে ? আমি বাইরের লোক ?
২- এখানে তো কেউ মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে বাউল গান গায়না। আর শুদ্ধ বাংলায় কথাও বলেনা।
- বিশাল ব্যাপার। তো তোরাও তো শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছিস।
১- তুমি কি গাঁইয়া ভেবেছো নাকি ? এই যে একে দেখছো কোলকাতায় পড়ে। এবার এম.এস.সি করবে।
- আর তুই ?
১- আমি বিএসসি ফার্স্ট ইয়ার।
এরপর দুজন মন্ত্রমুগ্ধর মতো তমোঘ্নর কথা, গান শুনছিল। কখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে।
১- উঠলে যে।
- সমস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যে নামলে সব লেন-দেন ফুরিয়ে সব পাখিকে ঘরে ফিরতে হয়।
২- বনলতা সেনের সাথে কথা বলবে ?
- না নিজের সাথে। এলাম রে।
১- উঠলে যে।
- সমস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যে নামলে সব লেন-দেন ফুরিয়ে সব পাখিকে ঘরে ফিরতে হয়।
২- বনলতা সেনের সাথে কথা বলবে ?
- না নিজের সাথে। এলাম রে।
তমোঘ্ন নাচতে নাচতে হাঁটছিল, পেছন থেকে চোখগুলো বড় বড় করে দেখছিল দুজন।
গল্প ৩
প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই বৃষ্টিতে বাড়ির পাশের পুকুরটায় সাঁতার কাটছে একটা ছেলে। দোতালার জানালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখছিলো শর্বরী। কখনো শুধু ছেলেটাকে, কখনো শুধু পুকুরটাকে, কখনো ছেলেটার শরীরের বিভিন্ন অংশকে... বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। পেটের ভিতরে কেমন যেন গুড় গুড় করছে। তারই দাদার বন্ধু। এসে চুপচাপই ছিল। হঠাত বৃষ্টি নামতেই নেমে গেল ঝাঁপিয়ে সামনের পুকুরটায়। মাথায় ছিট আছে। কি যে করবে এখন। মাথাটা এবার কেমন এলোমেলো লাগছে। না বুঝতে দেওয়া যাবেনা। খেতে বসলো সবাই।
চাঁটাইটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে বসলো শর্বরী - আমি আজ দাদার পাশে বসবো।
দাদা কপাল কুঁচকে তাকালো।
বুঝে গেলো নাকি ? না আবার খাচ্ছে।ওরে গাধা, একবার তাকা এদিকে। ধূস। কি বলা যায়।
- দাদা, বলছি এখান থেকে চলে গেলে আমাদের মনে রাখবে ?
- না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ভুলি।
রাগে গোটা গা-থেকে তাপ বেরোতে লাগলো। আর মুখ থেকে একটাই কথা বেরোল -
হার্টলেস।
চাঁটাইটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে বসলো শর্বরী - আমি আজ দাদার পাশে বসবো।
দাদা কপাল কুঁচকে তাকালো।
বুঝে গেলো নাকি ? না আবার খাচ্ছে।ওরে গাধা, একবার তাকা এদিকে। ধূস। কি বলা যায়।
- দাদা, বলছি এখান থেকে চলে গেলে আমাদের মনে রাখবে ?
- না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ভুলি।
রাগে গোটা গা-থেকে তাপ বেরোতে লাগলো। আর মুখ থেকে একটাই কথা বেরোল -
হার্টলেস।
No comments:
Post a Comment