Wednesday, November 20, 2019

নেহাত কল্পবিজ্ঞান, রূপক নয়

তারিখটা ছিল ১০/০৪/২০১৯.. পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় দিন হতে পারতো। ওইদিন প্রথম ব্ল্যাকহোলের একটি ছবি পৃথিবীর সামনে আসে। কিন্তু হয়ে গেল মানব সভ্যতার বিদায়ের শুরুর দিন। তারপর পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে গেছে। ২০১৯ এর দশ বছরের মধ্যে চীন, রাশিয়া ও জার্মানীর একটা বড় বিজ্ঞানীর দল মিলে ব্ল্যাকহোলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। মহাকাশে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা space station এর ডেটা থেকে। তারপর থেকেই শুরু হয় আসল খেলা। গোপনে কৃত্রিম নক্ষত্র তৈরি করে তার শক্তি কাজে লাগাতে শিখে যায় রাশিয়া। ফসিলস্ ফুয়েলের ধারণা ফসিলস্ হয়ে যায়।
চীন ও পিছিয়ে থাকেনা। চৈনিক মিলিটারিতে আরো দশ বছরের মধ্যে সিংহভাগ দখল করে রোবোট ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শুধু তাই নয়, এয়ারপোর্ট, হাসপাতাল, রাজনৈতিক নেতারাও চীনে নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন রোবোট। এদিকে রাশিয়া থেকে মংগল গ্রহে কৃত্রিম নক্ষত্র এর শক্তি কে কাজে লাগিয়ে বসতি স্থাপন করে ফেলেন কিছু বিজ্ঞানীরা। আমেরিকা চেষ্টা করেও বানিয়ে উঠতে পারেনি ওই কৃত্রিম নক্ষত্র। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধার্মিক প্রতিষ্ঠান গুলো এর বিরোধিতা করতে থাকে। রাজনৈতিক বিরোধ হতে থাকে। উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন জার্মানীর বিজ্ঞানীর একটা বড় দল একটা গোষ্ঠী খোলেন যেখানে একটা এন্ট্রান্স দিয়ে ঢোকা যায়। আইকিউ টেস্ট একরকম। সেটাও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রিত। সেই গোষ্ঠীতে নাম লেখায় রাশিয়া, চীনের নামী বিজ্ঞানীরা। কারণ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন তাদের কাজে বাঁধা দিচ্ছিল৷ গোষ্ঠীর নাম দেওয়া হয় জেন-জেড্।
সেই গোষ্ঠীর কিছু বিজ্ঞানী তাদের প্রচেষ্টায় বানিয়ে ফেলেন ২০৫০ সালের মধ্যে স্পেস-টাইম ট্রাভেল করার ক্ষমতা। প্রথম পরীক্ষা হবে। কিন্তু যাবেন কে? যারা নামী বিজ্ঞানী তারা অনেকেই যেতে রাজী নন। যারা যেতে রাজী তাদের আবার গোষ্ঠী ছাড়তে রাজী নয়। অগত্যা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল জেন-জেড্ এ সদ্য যোগ দেওয়া এক ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্র ও একজন ইংল্যান্ড এর এস্ট্রোনট এলেক্স। তারাও বিজ্ঞানের স্বার্থে রাজী। কোনরকম বিপদ ছাড়াই তাদের মহাকাশ যান মহাকাশে তৈরি করা একটা ওয়ার্মহোল এর মাধ্যমে পৌঁছে গেলো ২১০০ সালে। ভারতীয় বিজ্ঞানীর অনুরোধে তাদের ল্যান্ডিং ফিক্স করা হল ভারতের স্পেস রিসার্চ সেন্টার এ। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ল্যান্ডিং এর আগে কোন মানুষের সাথে কথা বলার অনুমতি মিললনা। তারা পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিয়ে এসেছেন এই আনন্দ তো আর যাই হোক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাথে ভাগ করা যায়না। এলেক্স বললো তার একটু বিশ্রাম দরকার৷ তাই বিলম্ব না করে অত না ভেবে ল্যান্ড করতে৷ চন্দ্র মেনে নিলো। ল্যান্ড করতেই তাদের অবাক করে অভ্যর্থনা জানালো কিছু সশস্ত্র রোবোট৷ তারা বললো - "ওয়েলকাম স্যার৷ উই আর ওয়েটিং ফর ইউ ফর ৫০ ইয়ারস্। উই আর অর্ডার্ড টু টেক ইউ টু জেন-জেড্ চিফ্। প্লিজ কোওপারেট।"
চন্দ্র এইটা ভেবে হতভম্ভ হয়ে গেল তাদের গোষ্ঠী ভারতেও রয়েছে। অথচ পঞ্চাশ বছর আগে সে ছিল প্রথম ভারতীয় মেম্বার ৷ চিফ্ এর ঘরে যেতে যেতে আরো অবাক হল চন্দ্র। কোথাও ভারতের পতাকা নেই। যে কটা পতাকা উড়ছে প্রত্যেকটা জায়গায় একটাই চিন্হ "জেড্"!!
এলেক্স এর দিকে তাকাতে এলেক্স বিস্মিত মুখে চন্দ্র এর মুখের প্রশ্ন কেড়ে বললো - "হু এন্ড হোয়াট দ্য ফাক্ ইজ হ্যপেনিং হেয়ার!? "
চন্দ্র কিছু বলার আগেই রোবোট বলে উঠলো - "ইউ আর নট এলাওড টু সে দ্যাট স্যার। "
এলেক্স উত্তেজিত হয়ে গেল - "হু আর ইউ! ফাকিং মেশিন৷ "
রোবোট টা উত্তরে সজোরে এলেক্সের মুখে ঘুসি চালালো। তারপর বললো - "ইয়া দ্যট্স রাইট৷ আই ফাক্ড ইউ। টেস্ট ইউর ব্লাড। নাও শাট আপ্। "
ভয় পেলো দুজনেই। কিছুক্ষণ এর মধ্যে চলে এল তারা চিফ্ এর ঘরে। চিফ্ এর ঘরের রোবোট হ্যান্ডওভার নিল দুজনকে। আগের রোবোটগুলো বেরিয়ে যেতেই আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে চিফ বেরিয়ে এলেন- "ওয়েলকাম টাইম ট্রাভেলার্স। "
এলেক্স বললো - "ইজ দিস আ ওয়েলকাম!? "
চিফ্ - ওহ্ সরি ফর দ্যট। রোবোটরা মানুষ নয় সেটা বুঝতে হবে।
চন্দ্র - "এখানে কি চলছে? চিফ্ কথাটার মানে এখানে কি? পতাকায় জেড্ কেন? আর এলেক্স কে এভাবে অভ্যর্থনা দেওয়ার মানে কি? আমরা তো বিজ্ঞান আর গোষ্ঠীর স্বার্থেই এই ট্রাভেল এ রাজী হয়েছিলাম..."
চিফ্ - " ডু ইউ রিয়েলি থিংক সো? তোমরা রাজী হয়েছিলে নাকি তোমাদের ভাবানো হয়েছিল যে তোমরা রাজী হয়েছিলে? ( হেসে উঠলেন চিফ্) ইট ওয়াজ আ ডার্টি পলিটিক্স উই আর প্লেয়িং ফর লাস্ট সিক্সটি ইয়ার্স, চাইল্ড। আমরা মানে জেন-জেড্ এখন এই গোটা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তার করে শাসন করছে । এটা আমাদের বাইশ জন এর একটা অনেক অনেক বছরের প্ল্যান্ড্ গেম। তোমরা এখানে গিনিপিগ মাত্র। বাইশ জন কোর মেম্বার, মানে 'আমাদের ' স্পেশ্যালি চুজ করেছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর আমি তাদের মধ্যে ইলেক্টেড এজ চিফ। যে আমাকে মানবেনা আমার অংগুলি হেলনে তাকে মেরে ফেলা হবে। আমরা অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীকে শাসন করছি। "
তারপরের কথোপকথন আর বেশি এগোয়নি। এলেক্স পালাতে চেষ্টা করে আর তারপর রোবোট তাদের দুজন কে ধরে চিফের নির্দেশে রেখে দেয় মহাকাশে তৈরি হওয়া একটা কারাগারে। তাদের সাথে বোধহয় আরো কিছু কাজ বাকি আছে৷ তাই প্রাণে মারেনা তাদের৷ একই সেলে রাখেনি তাদের দুজনকে। সেলে টিভি আছে৷ টিভিগুলোতে সবসময় ভয়ংকর ভিডিও চলছে। কত মানুষ আমলা হিসেবে কাজ করছে এই গোষ্ঠীর হয়ে। কত মানুষ গুপ্তচর। কত মানুষ "উই ওয়ান্ট ফ্রিডম্ " লিখে এনে রাস্তায় জমায়েত করাতে রোবোটের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখতে দেখতে নিজের উপরে সন্দেহ হবে। এমনটা নয় ৫০ বছর আগে হতনা এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা। কিন্তু এখন আরো বুদ্ধিমত্তার সাথে অর্গানাইজড ভাবে হচ্ছে। স্তাবকদের ৫০ বছর আগেও অভাব ছিলনা, আজও নেই। মনে হচ্ছে আমিও ওরকম হয়ে গেলেই তো পারি। কি দরকার ঝামেলার!! আগে নেতাদের পা চাটতাম। এখন রোবোটের চাটবো। কে আমি? মানুষ নাকি জেন-জেড্ এর লোক? কি দরকার এদের কথা না শুনে। যা বলে শুনে নিলেই তো হয়।
ইতিমধ্যে কয়েকটা রোবোট এসে কিছু ইলোকট্রোড চন্দ্রর মাথা কামিয়ে লাগিয়ে দিয়ে যায়। এরকম বেশ কিছুদিন চলে মাঝে মাঝে কিছু ইঞ্জেকশন দিয়ে যায় রোবোট। হঠাৎ একদিন এসে তারা চন্দ্রকে ধরে নিয়ে যায় আবার চিফের কাছে।
চিফ্ - তুমি তাহলে রাজি?
চন্দ্র - হ্যাঁ। কিন্তু আপনি বুঝলেন কি করে?
চিফ হাসলেন। তারপর একটা রিমোটের বোতাম টিপলেন।
এলেক্স ( একটি ভিডিও স্ক্রিনে) - জাস্ট লেট মি গো৷ প্লিজ...
চিফ্- ইয়ং ম্যান্, ইউ আর ইন্টেলিজেন্ট এনাফ্ টু রিয়েলাইজ দ্য কনসেকোয়েন্সেস্। জাস্ট টাইম ট্রাভেল এগেইন। পাস্ট এ গিয়ে পাস দিস ডেটা টু চিফ্, ফিফটি ইয়ার্স ইয়ংগার দ্যান মি। বিলিভ মি দিস উইল হেল্প সায়েন্স।
চন্দ্র - ইয়েস আই বিলিভ ইউ।
চিফ্ - বেশ তাহলে নতুন স্পিসিস তৈরির উদ্দেশ্য এ যাত্রা শুরু করে দাও।
চন্দ্রর মাথা থেকে ইলেকট্রোড গুলো খুলে ওকে মহাকাশযান এ বসিয়ে দেওয়া হল। এলেক্স এখনো বন্দী৷ তবে চন্দ্র স্বাধীন হয়েও পরাধীন। চন্দ্র র মনে পড়লো এলেক্স কে একবার প্র্যাংক করেছিল চন্দ্র। একটা অন্ধকার ঘরে আটকে ভয় দেখাচ্ছিল। এলেক্স ঠিক একইভাবে কাঁদছিল আর বলছিল - "জিশাস্, প্লিজ লেট মি গো। "
হেল্পলেস অবস্থায় এলেক্স জিশাস্ বলে বারবার। আজ বলেনি। একবারো। কারণ ভিডিও কৃত্রিম। তৈরি করতে গিয়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভুলে গেছে সেটা লাগাতে। চন্দ্র বুঝতে পারলো এলেক্স আর বেঁচে নেই। হয় এলেক্স র উপর কোন এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে, নাহয় ও পালাতে গিয়ে ও মারা গেছে। মহাকাশযান এখন নির্দিষ্টভাবে ওয়ার্মহোলের খুব কাছে পৌঁছে গেছে। কি করবে চন্দ্র!? তারকাছে দুটো রাস্তা খোলা। যা হচ্ছে হতে দেওয়া নাহয় মৃত্যু বরণ করা। পরাধীনতার সংবাদ দেখে দেখে ব্রেনওয়াশ্ড চন্দ্র, মহাকাশযান ওয়ার্মহোল থেকে ঘুরিয়ে নিল অসীমের দিকে, হারিয়ে গেল সে স্বাধীন শূন্যে। তার শেষ বাক্য ছিল - "স্কাই ইজ not দ্য লিমিট"।।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...