Wednesday, November 20, 2019

নায়ক ও অভিনেতা

একটা পরিণত বৃক্ষ কখনো কি তার নিজের সুকোমল সদ্য প্রস্ফুটিত অংকুর অবস্থা কে মনে রাখতে পারে ? জানিনা। তবে এটুকু বলতে পারি, গাছেদের যদি প্রাণ থাকে, তবে চেতনা হয়তো থাকবে। সেই চেতনা দিয়ে যদি একদিন ভাবতে বসে আমার মত, যে তার জীবনে এরকম কত গুলো পর্যায় রয়েছে সে তাহলে কিরকম ভাবতে পারে? যেমন আমি। একসময় ছিল, বাড়ির দাদা দের দেখেছি শাহুরুখ, আমির, বচ্চন এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঝামেলা করতে। কেউ কেউ আবার উত্তম, সৌমিত্র কে এদের আগে রাখতেন ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে। তখন শুনতাম। ছোট ছিলাম৷ তারপর বড় হয়ে হস্টেলে সিরিয়াস ডিবেট৷ কে সেরা? তিন খানের জমানায়। কোন খানের নামে সবাই আহ্লাদে আটখান্ ? সেইসব ধোঁয়া ধোঁয়া ডিবেটে কোন এক পক্ষে ভক্ত্ হয়ে অংশগ্রহণ করেছি এককালে। বন্ধুদের সাথে মারামারিটাই শুধু বাকি ছিল। ডিবেট চলে যেত ঝগড়া তে। তারপর একটা গোটা দিন হয়তো ঠিক করে কথা বলা বন্ধ থাকতো। আর এখন।
শেষ কবে কোন খান্ এর সিনেমা দেখেছি মনে পড়েনা। সোমবার আমার এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল৷ সে শাহরুখের সিনেমা ডেকে ডেকে দেখাতো। মাঝে মাঝে সিনেমা থামিয়ে বুঝিয়ে দিত। নিজের বক্তব্য কোন সিন নিয়ে৷ আমি ছিলাম আমীর ভক্ত্। সত্যি কতটা ভক্ত্ ছিলাম দুজনে। দুজনে দুজনকে দুজনের প্রিয় এত সিনেমা দেখিয়েছি৷ শেষ দিকে দুজনেই দুজনের নায়ককে এপ্রিসিয়েট করতাম। আর একজন ছিল সলমন এর ফ্যান। তার কথা জানিনা। কিন্তু দুজনেই সোমবার মনে করে দেখলাম, শেষ কবে আমরা কোন খান এর সিনেমা দেখেছি মনে নেই, শুধু তাই নয়। দেখতেও ইচ্ছে করেনা। বোধহয় চার বছর আগে। জীবন এখন সাদামাটা, রঙীন নেই। তাই মন নায়ক নয়, অভিনেতা খোঁজে৷ ভারতীয় অভিনেতা কজন আছে, যাদের অভিনয় দেখলে গায়ে কাঁটা দেয় ৷ কে কে মেনন, নওয়াজউদ্দিন, ইরফান, নানা পটেকার, নাসীরুদ্দিন শাহ্ এর মত এই তো হাতে গোনা কয়েকটা নাম। আমার ব্যক্তিগত মতে বাদবাকি সবাই হয় অভিনয় আমার চোখে লাগেনা, কিংবা এত বেশি অভিনয় করে যে চোখে লাগে। অথচ এই কজন এর মধ্যে কেউ সেভাবে দাম পায়নি৷ একা ৩০০ পার করার ক্ষমতা এদের কারো নেই। করলেও সেটা ব্যতিক্রম। কিন্তু এখন মন অস্থির থাকলে এইসব অভিনয় দেখে মন শান্ত হয়৷ গোটা পৃথিবীর অভিনেতা ধরলে আমার লিস্টে খান ত্রয়ী প্রথম পঞ্চাশেও থাকবেনা। যার জন্য বন্ধুদের সাথে ধুন্ধুমার লেগে যেত, তারা এখন ৫০ এ ও নেই৷ বুড়ো বচ্চন থাকবেন যদিও। এভাবেই শিল্প হয়৷ আজ কে কে মেনন এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ খুলুন। কয়েক হাজার লাইক। সিরিয়াল অভিনেতা দের এর থেকে বেশি লাইক থাকে। কিন্তু আমার চোখে কে কে মেনন অনেক উঁচুতে থেকে যাবেন । মনে হয় যেন সিনেমা নয়, জ্যান্ত মানুষের থিয়েটার দেখছি। এত নিঁখুত কাজ অনেক মানুষ হয়ত নিতে পারেনা। তবে এসব শিল্পীরা এসব ভেবে কাজ করেন না। নিজের আনন্দে কাজ করে যায়, বুক চিতিয়ে। ফিজিক্সে গ্র‍্যাজুয়েশন করে, এম.বি.এ পড়ে থিয়েটার, টিভি, সিনেমায় অভিনয় করে যাচ্ছেন মানুষটা। লিড রোল পাননা৷ সিনেমার কাট আউটে জায়গা হয় হয়তো কোন এক কোণে। কিন্তু যখন ফ্রেমে থাকেন অভিনেতা হিসেবে যেকোন নায়ককে ম্লান করে দেন ৷।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...