Wednesday, November 20, 2019

গ্লোবাল ওয়ার্ণিং

অ‍্যাভেঞ্জার-ইনফিটি ওয়ার কে শুধু সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে দেখলে খুব বড় ভুল করবেন। কেন ?
এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে থ্যানোস বলে একজন ভিলেন কে। যার নীতি হল একটি জায়গার জনসংখ্যা যদি অর্ধেক করে দেওয়া যায় কোনভাবে তাহলে সেই জায়গায় বেঁচে থাকা বাকি অর্ধেক মানুষ খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। থ্যানোস পৃথিবীতে এই নীতি প্রয়োগ করতে এসেছিল।
কোনটা বেশি প্র‍্যাকটিক্যাল ??
জনসংখ্যা অর্ধেক করা নাকি রিসোর্স বাড়ানোর চেষ্টা করা? আমাদের পৃথিবী কোন দিকে এগোচ্ছে। আসুন একটু পরিসংখ্যান ঘাঁটা যাক।
ইউনাইটেড নেশনস্ প্রতি দুবছর অন্তর পপুলেশন প্রোজেকশন পরিসংখ্যান করে। এর মাধ্যমে জানা যায় আগামী বছরগুলোতে জনসংখ্যা কিরকম দাঁড়াতে পারে। ওরা তিনটে ভ্যারিয়্যান্টে প্রোজেকশন করে। যদি ফার্টিলিটি রেট প্রত্যাশার তুলনায় খুব বেশি কমানো না যায় তাহলে হাই ভ্যারিয়ান্ট। ভালো কমলে লো ভ্যারিয়ান্ট। আর এ দুটির মাঝে একটা মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট। এই রিপোর্ট বলছে গত দশকে মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট উপরের দিকে উঠছে। মানে ফার্টিলিটি রেট সেই হারে কমছেনা। ২০১৭ তে শেষ পেশ করা রিপোর্ট অনুসারে, এইভাবে মিডিয়ান ভ্যারিয়ান্টে চলতে থাকলে ২০৫০ নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ১০ বিলিয়ন। ২১০০ সালে ওটা গিয়ে দাঁড়াবে ১১.২ বিলিয়নে। যদি লো ভ্যারিয়ান্টে চলতে থাকে তাহলে মজা হল ২০৫০ এর পর জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। আর ২১০০ তে গিয়ে দাঁড়াবে এখনকার ( ৭.৬ বিলিয়ন) থেকেও কম। কিভাবে সেটা সম্ভব?
১) যদি ফার্টিলিটি রেট অনেক কমানো যায় প্রত্যাশার থেকে। এটা প্র‍্যাকটিক্যালি পসিবল নয় বলে আমার মনে হয়।
২) যদি বিশাল কোন বিশ্বযুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক মানুষ মারা যায়।
৩) থ্যানোসের নীতি কেউ যদি প্রয়োগ করে।
বিশ্ব রাজনীতি ও সমাজ নীতি এখন যেদিকে যাচ্ছে অনেকেই এটা উপলব্ধি করছেন যে ২০৫০ এর মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ হওয়া সময়ের অপেক্ষা শুধু।
যদি না হয়, তাহলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিরকম হতে পারে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে বলছে আগামী ১০০ বছরে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আরো কিছু কারণে সমুদ্রের লেভেল ০.৮ থেকে ২ মিটার বাড়তে পারে। এর ফল কি হতে পারে? বে অফ বেংগল এ ৪০০ মিলিমিটার সমুদ্র লেভেল বাড়লে শুধু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এ ৭-১০ মিলিয়ন ক্লাইমেট রিফিউজি তৈরি হবে। তাহলে এবার আন্দাজ করে নিন ৮০০ থেকে ২০০০ মিমি বাড়লে কি হতে পারে!! ইকোসিস্টেম পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে। রোগ, জীবাণু নতুন নতুন আসবে। আর প্রচলিত এন্টিবায়োটিক গুলো রেজিস্ট্যান্ট হতে থাকবে। যারা উদ্বাস্তু হবেন তারা যে ভূমি এখনো জলে ডুববেনা তাদের কাছে গিয়ে উঠবে। রিসোর্স লিমিটেড। ফল একটাই সিভিল ওয়ার। এইভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় জনসংখ্যা লো ভ্যারিয়ান্টে নিয়ে আসতে পারে। আর অতীব ভয়ংকর এই পরিস্থিতি আন্দাজ করে কেউ যদি র‍্যান্ডম সিলেকশন করে থানোসের নীতি নেয় তাহলেও সেটা সম্ভব। তাহলে পুরোটা পড়ে কি অ‍্যাভেঞ্জার-ইনফিটি ওয়ার কে সায়েন্স ফিকশন মনে হল নাকি সুপারহিরো মুভি ?? আর যারা মনে করছেন সমুদ্র লেভেল বাড়া কে নিছক কাকতালীয়। তাদের বলি, মানুষ যখন প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে তার পেট একটু মোটা হয়, হজম হলে আবার ঠিক হয়ে যায়,
কিন্তু সে বিশ্বাস করতে চায়না এভাবেই ৫ বছর পর এক্সারসাইজ না করলে তার একটা স্থায়ী ভুঁড়ি হবে। ব্যাপারটা সেরকম। প্রকৃতির একটা ফিক্সড এরিয়া তে পপুলেশন অ‍্যাকোমোডেট করার ক্ষমতাও ফিক্সড, তাই একটা পিক এর পর জনসংখ্যা কমতে বাধ্য। সেটা অন্য গ্রহে পপুলেশন স্থানান্তর হতে পারে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ যেকোন ভাবেই হোক। থ্যানোস কে এই লেখায় যত অপ্রাসঙ্গিক ই মনে হোক, থ্যানোস কিন্তু যে কোন রূপেই আসতে পারে এ পৃথিবীতে । এটাই গ্লোবাল ওয়ার্ণিং।।

2 comments:

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...