সকালটা রোজ একইভাবে শুরু হয় প্রসূনের। মাঝরাত অব্দি পড়ে, ঘুম এমনিতে দশটার আগে ভাঙেনা তার। তারপর খেতে বসে বাবা-মা র কথা শোনা - "এই বিসিএস-টিসিএস এর জন্য না পড়ে তো সনাতন দা র কোচিং সেন্টার টা সামলাতে পারিস তো নাকি? আর কতদিন এভাবে... "
যেকোন কনজার্ভেটিভ মধ্যবিত্ত ফেমিলিতে এগুলো রোজকার কথা। গায়ে লাগেনা এখন আর। নিরুত্তর থাকে। শুরুতে গায়ে লাগতো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বোঝানো চাপ যে ধর্মতলা থেকে যে বাসগুলো ছাড়ে সবাই একই দূর, একই গতিতে, একই গন্তব্যে যায়না। কোচিং এর ডোবা র স্থির জলের থেকে অস্থির সমুদ্রের বিশালতায় ধাক্কা খাওয়া ভালো। কোথাও জোরে ধাক্কা না খেলে ঢেউ তৈরি হবে কি করে!?
নিজেকে নিয়ে খুব অহংকার ছিল তার। প্রসূন কোথাও হারতে মাঠে নামেনা ৷ স্কুল কলেজ এর পরীক্ষা থেকে খেলার মাঠ। আর আজ।
খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে পড়তে বসার আগে অভ্যেস মত কাজ হল তার প্রেমিকার মেসেজ চেক করা হোয়াটসঅ্যাপে। প্রেমিকার নাম দোলন৷ জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছে। অলরেডি ওদের ব্রেক আপ হয়ে গেছিলো যদিও। প্রসূনই করেছিল । একজন বেকার ছেলের মডার্ণ সাকার প্রেমিকা। খুব আনস্টেবল ভবিষ্যত । দোলনের বাড়িতেও মাঝে মাঝেই সম্বন্ধ আসছিল। দোলনের কথা শুনে আশ্বস্ত হতে পারছিলনা প্রসূন। ভেবেছিল এই মানসিক চাপ নেওয়ার থেকে একা চলাই ভালো। ও অপেক্ষা করে থাকতে চায়, থাকবে। এই ভেবেই অনেক বুঝিয়ে সরে আসতে চাওয়া ৷ কিন্তু পারলো কই। অনেক কান্নাকাটি, ইমোশনাল অত্যাচার। প্রসূন দোলনকে ওর বুকের আঁচিলের মত ভেবে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। বুঝেছিল দোলন যতদিন না অন্য কাউকে পাবে ওকে ছেড়ে যাবেনা। দোলন ওর প্রথম প্রেমিকা নয়। এর আগে যারা ছিল তাদের মধ্যে প্রথম জনের সাথে প্রেমের থেকে বেশি বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু যাহয়, ভেঙে যাওয়ার সময় এত তিক্ততা তৈরি হয় আর কথা বলা সম্ভব হয়না। যখন দোলন এর সাথে ওর সম্পর্ক দোদুল্যমান তখন প্রসূন হঠাত্ মেসেজ করে বসলো প্রথমজনকে, যে সে তার কেরিয়ার এর ভালো জায়গায় নেই, তার কি উচিত্ হবে দোলন এর সাথে ফিরে যাওয়া !??
প্রসূন ভেবেছিল কিছু উত্তর না দিয়েই ব্লক করে দেবে প্রথম জন। আগেও করেছে, তারপর আবার আনব্লকও করে দিয়েছে। তার উপর তারও বিয়ে ঠিক একদম বলতে গেলে। কোন রিস্ক সে নেবেনা। কিন্তু সে রিপ্লাই দিয়েছিল - "যদি ভালোবাসিস, ঠিক করে নিস। আমাকে আর মেসেজ করবিনা। ভালো থাকিস। "
আর তারপর যথারীতি ব্লক করে দিয়েছিল প্রসূনকে। বৃষ্টি নামল।
যেকোন কনজার্ভেটিভ মধ্যবিত্ত ফেমিলিতে এগুলো রোজকার কথা। গায়ে লাগেনা এখন আর। নিরুত্তর থাকে। শুরুতে গায়ে লাগতো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বোঝানো চাপ যে ধর্মতলা থেকে যে বাসগুলো ছাড়ে সবাই একই দূর, একই গতিতে, একই গন্তব্যে যায়না। কোচিং এর ডোবা র স্থির জলের থেকে অস্থির সমুদ্রের বিশালতায় ধাক্কা খাওয়া ভালো। কোথাও জোরে ধাক্কা না খেলে ঢেউ তৈরি হবে কি করে!?
নিজেকে নিয়ে খুব অহংকার ছিল তার। প্রসূন কোথাও হারতে মাঠে নামেনা ৷ স্কুল কলেজ এর পরীক্ষা থেকে খেলার মাঠ। আর আজ।
খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে পড়তে বসার আগে অভ্যেস মত কাজ হল তার প্রেমিকার মেসেজ চেক করা হোয়াটসঅ্যাপে। প্রেমিকার নাম দোলন৷ জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছে। অলরেডি ওদের ব্রেক আপ হয়ে গেছিলো যদিও। প্রসূনই করেছিল । একজন বেকার ছেলের মডার্ণ সাকার প্রেমিকা। খুব আনস্টেবল ভবিষ্যত । দোলনের বাড়িতেও মাঝে মাঝেই সম্বন্ধ আসছিল। দোলনের কথা শুনে আশ্বস্ত হতে পারছিলনা প্রসূন। ভেবেছিল এই মানসিক চাপ নেওয়ার থেকে একা চলাই ভালো। ও অপেক্ষা করে থাকতে চায়, থাকবে। এই ভেবেই অনেক বুঝিয়ে সরে আসতে চাওয়া ৷ কিন্তু পারলো কই। অনেক কান্নাকাটি, ইমোশনাল অত্যাচার। প্রসূন দোলনকে ওর বুকের আঁচিলের মত ভেবে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। বুঝেছিল দোলন যতদিন না অন্য কাউকে পাবে ওকে ছেড়ে যাবেনা। দোলন ওর প্রথম প্রেমিকা নয়। এর আগে যারা ছিল তাদের মধ্যে প্রথম জনের সাথে প্রেমের থেকে বেশি বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু যাহয়, ভেঙে যাওয়ার সময় এত তিক্ততা তৈরি হয় আর কথা বলা সম্ভব হয়না। যখন দোলন এর সাথে ওর সম্পর্ক দোদুল্যমান তখন প্রসূন হঠাত্ মেসেজ করে বসলো প্রথমজনকে, যে সে তার কেরিয়ার এর ভালো জায়গায় নেই, তার কি উচিত্ হবে দোলন এর সাথে ফিরে যাওয়া !??
প্রসূন ভেবেছিল কিছু উত্তর না দিয়েই ব্লক করে দেবে প্রথম জন। আগেও করেছে, তারপর আবার আনব্লকও করে দিয়েছে। তার উপর তারও বিয়ে ঠিক একদম বলতে গেলে। কোন রিস্ক সে নেবেনা। কিন্তু সে রিপ্লাই দিয়েছিল - "যদি ভালোবাসিস, ঠিক করে নিস। আমাকে আর মেসেজ করবিনা। ভালো থাকিস। "
আর তারপর যথারীতি ব্লক করে দিয়েছিল প্রসূনকে। বৃষ্টি নামল।
আজ দোলন একজনের সাথে ডেটে গেছে। প্রসূন কে ফোন করেছিল ডেটে গিয়ে। প্রসূন ফোন টা ছেলেটাকে দিতে বলে বলেছিল - বেস্ট উইশেস।
দোলন ফিরে এসে প্রসূনকে বলছে, ওসব কিছু ভেবোনা। ও আমার ভাইএর মত।
প্রসূন নির্বিকার৷ সেই নির্বিকার ভাবটা দুটো স্মাইলি রিপ্লাই তে ঢাকলো। দুজনেই বুঝতে পারছে কি হচ্ছে।
সত্যি কি বৃষ্টি কখনো হয়েছিল !!??
প্রসূন নির্বিকার। সে শেষ করবেনা তিক্ত ভাবে। আর দোলন আজ একজন, পরশু আর একজন এর সাথে বেরোচ্ছে ঘুরতে। প্রসূন ভাবলো এবারে যদি বিসিএস মেইন না ক্লিয়ার হয়, তাহলে কিন্তু কোচিং সেন্টারেই বসতে হবে কাজে। ভাবলো তাহলে কি শেষ করে দেবে একেবারে? হয়তো দোলন কে কোনদিন ভালোবাসেনি। দোলন ও অন্যদিকে ঝুঁকতে চাইছে। প্রসূন দোলনকে অনেকদিন নিজে থেকে ফোন করেনি। আজ কি ভেবে করলো৷ দেখলো ব্যস্ত। কয়েকবার এরকম ব্যস্ত পেলো। কিছুক্ষণ পর দোলন নিজেই কল ব্যাক করে বললো-" মা ফোন করেছিল৷ "
প্রসূন বললো - আমি তো জিজ্ঞেস করিনি।
তারপর এক মিনিটের নিস্তব্ধতা।
দোলন বললো - কিছু বলবে? অনেক কাজ আছে।
প্রসূন বললো - নাহ্।
বলে ফোন রেখে দিল।
কি বলবে প্রসূন৷ শেষ কটা দিন দোলনকে পাশে থাকতে বলবে? সেটাই বা বলবে কোন অধিকারে? নিজে তো স্বার্থপর এর মত কাজ করেছে এতদিন৷ অনেক কথা মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগলো৷ ফোন কাটার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার কল ব্যাক করলো প্রসূন৷ আবার ব্যস্ত পেলো। পরপর ফোন করেই যেতে থাকলো অধীর হয়ে। কিছুক্ষণ পর বুঝলো তাকে ব্লক করে দিয়েছে দোলন।
প্রসূন ধপ্ করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। চোখ শিলিং এ স্থির। তার মাথায় ইতিহাস এর কত সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হচ্ছে৷ কত জিকের এম.সি.কিউ আসছে। তার উদ্দেশ্য আজ সফল। দোলন অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। এবার তার নিঃশব্দে সরে যাওয়ার পালা। এতদিন মাঝে মাঝেই কাঁদতো একা লাগলে। আজও কান্না পাচ্ছিল। হঠাত্ একটা নোটিফিকেশন এলো। মেসেজের৷ দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে একটি মেয়ে মেসেজ করেছে। কথা বলে বুঝলো দোলনের বান্ধবী। বান্ধবীর দাবি হল- দোলন বলেনি, কিন্তু ও নিজেই কন্ট্যাক্ট করেছে। বেশ কয়েক মাস আগে ওকে দোলন সম্পর্কিত কিছু কথা মেসেজ করেছিল প্রসূন, তার রিপ্লাই দিতে। আজ প্রসূনের কাঁদার কথা ছিল। সে কাঁদল না৷
দোলন ফিরে এসে প্রসূনকে বলছে, ওসব কিছু ভেবোনা। ও আমার ভাইএর মত।
প্রসূন নির্বিকার৷ সেই নির্বিকার ভাবটা দুটো স্মাইলি রিপ্লাই তে ঢাকলো। দুজনেই বুঝতে পারছে কি হচ্ছে।
সত্যি কি বৃষ্টি কখনো হয়েছিল !!??
প্রসূন নির্বিকার। সে শেষ করবেনা তিক্ত ভাবে। আর দোলন আজ একজন, পরশু আর একজন এর সাথে বেরোচ্ছে ঘুরতে। প্রসূন ভাবলো এবারে যদি বিসিএস মেইন না ক্লিয়ার হয়, তাহলে কিন্তু কোচিং সেন্টারেই বসতে হবে কাজে। ভাবলো তাহলে কি শেষ করে দেবে একেবারে? হয়তো দোলন কে কোনদিন ভালোবাসেনি। দোলন ও অন্যদিকে ঝুঁকতে চাইছে। প্রসূন দোলনকে অনেকদিন নিজে থেকে ফোন করেনি। আজ কি ভেবে করলো৷ দেখলো ব্যস্ত। কয়েকবার এরকম ব্যস্ত পেলো। কিছুক্ষণ পর দোলন নিজেই কল ব্যাক করে বললো-" মা ফোন করেছিল৷ "
প্রসূন বললো - আমি তো জিজ্ঞেস করিনি।
তারপর এক মিনিটের নিস্তব্ধতা।
দোলন বললো - কিছু বলবে? অনেক কাজ আছে।
প্রসূন বললো - নাহ্।
বলে ফোন রেখে দিল।
কি বলবে প্রসূন৷ শেষ কটা দিন দোলনকে পাশে থাকতে বলবে? সেটাই বা বলবে কোন অধিকারে? নিজে তো স্বার্থপর এর মত কাজ করেছে এতদিন৷ অনেক কথা মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগলো৷ ফোন কাটার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার কল ব্যাক করলো প্রসূন৷ আবার ব্যস্ত পেলো। পরপর ফোন করেই যেতে থাকলো অধীর হয়ে। কিছুক্ষণ পর বুঝলো তাকে ব্লক করে দিয়েছে দোলন।
প্রসূন ধপ্ করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। চোখ শিলিং এ স্থির। তার মাথায় ইতিহাস এর কত সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হচ্ছে৷ কত জিকের এম.সি.কিউ আসছে। তার উদ্দেশ্য আজ সফল। দোলন অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। এবার তার নিঃশব্দে সরে যাওয়ার পালা। এতদিন মাঝে মাঝেই কাঁদতো একা লাগলে। আজও কান্না পাচ্ছিল। হঠাত্ একটা নোটিফিকেশন এলো। মেসেজের৷ দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে একটি মেয়ে মেসেজ করেছে। কথা বলে বুঝলো দোলনের বান্ধবী। বান্ধবীর দাবি হল- দোলন বলেনি, কিন্তু ও নিজেই কন্ট্যাক্ট করেছে। বেশ কয়েক মাস আগে ওকে দোলন সম্পর্কিত কিছু কথা মেসেজ করেছিল প্রসূন, তার রিপ্লাই দিতে। আজ প্রসূনের কাঁদার কথা ছিল। সে কাঁদল না৷
দোলনের বান্ধবী বোঝাতে থাকলো - দেখবে রাস্তায় কত লোক না খেতে পেয়ে শুয়ে আছে, তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করবে কত ভালো আছো৷
প্রসূন এর মজা লাগলো। বললো - সৌরভ গাঙ্গুলির ২০০৬-০৭ খারাপ সময় তো? তখন কি সৌরভ খেতে পেতনা?
এভাবে দিন চলতে লাগলো। প্রসূন বুঝলো এটা দোলনের কীর্তি। সান্ত্বনা পুরস্কার এর মত। যদি ওর বান্ধবীকে দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। দোলন তারপর থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতো। প্রসূন ধরতো। দোলন অনেকভাবে বলতো, ওই ছেলেটা তার ভাই। আরেকজন হল দাদা। অন্যভাবে যেন না ভাবে৷ ভালোভাবে যেন পরীক্ষা দেয়।
প্রসূন থাকতো নির্বিকার৷ প্রসূন এর নির্বিকার থাকাতে দোলন এর আরো সমস্যা হত।
"কি সমস্যা তোমার বলো। তোমার সাথে কি আমার বান্ধবী কথা বলছেনা!? "
প্রসূন নির্বিকার।
আগে ফোন কেটে কাঁদতো৷ এখন ফোন কেটে নিজেকে হেরে যাওয়া করুণার পাত্র ভেবে নিজের উপর হাসি পায়। কিন্তু তবু শেষ করলোনা প্রসূন। সব দরজা খোলা রেখে পড়তে চেষ্টা করে গেলো। প্রসূনের মাথায় অনেক প্রতিশ্রুতি, অনেক আদর্শের বুলি, অনেক স্বপ্নের কবর, অনেক সাহিত্য, কবিতা র কঙ্কাল একে একে ঘুরপাক খেতে লাগলো। পরীক্ষা হল৷ প্রসূন আর বাড়িতে থাকতে পারলোনা। ঘুরে বেড়াতে লাগলো চারিদিকে। প্রসূনের বন্ধুর অভাব নেই। এদিক ওদিক। বাড়ি আর ফিরলোনা। মাঝে মাঝে দোলন নিজে থেকেই ফোন করে। প্রসূন ফোন ধরে নির্বিকার থাকে। অপেক্ষা করে কবে আসবে সেই শুভ সংবাদ- দোলনের এনগেজমেন্ট এর। অবশেষে প্রসূনের রেজাল্ট বেরোলো। প্রসূন পাস করতে পারলোনা। কতদিন আর পকেট ফাঁকা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। যে বন্ধুর বাড়িগুলোতে এতবছর ধরে তাদের বাড়িতে ডাকতো- প্রসূনের যাওয়ার সময় হতনা, সেই কয়েকজন বন্ধুর বাড়িতে কাকু-কাকিমা রা স্পষ্ট বুঝিয়েই দিলেন - এভাবে বসে থাকার কোন মানেই হয়না। এর আগে অবশ্য ওনারা নিজের ছেলেদের বলতেন - প্রসূনকে দেখে শেখ্।
প্রসূন এর মজা লাগলো। বললো - সৌরভ গাঙ্গুলির ২০০৬-০৭ খারাপ সময় তো? তখন কি সৌরভ খেতে পেতনা?
এভাবে দিন চলতে লাগলো। প্রসূন বুঝলো এটা দোলনের কীর্তি। সান্ত্বনা পুরস্কার এর মত। যদি ওর বান্ধবীকে দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। দোলন তারপর থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতো। প্রসূন ধরতো। দোলন অনেকভাবে বলতো, ওই ছেলেটা তার ভাই। আরেকজন হল দাদা। অন্যভাবে যেন না ভাবে৷ ভালোভাবে যেন পরীক্ষা দেয়।
প্রসূন থাকতো নির্বিকার৷ প্রসূন এর নির্বিকার থাকাতে দোলন এর আরো সমস্যা হত।
"কি সমস্যা তোমার বলো। তোমার সাথে কি আমার বান্ধবী কথা বলছেনা!? "
প্রসূন নির্বিকার।
আগে ফোন কেটে কাঁদতো৷ এখন ফোন কেটে নিজেকে হেরে যাওয়া করুণার পাত্র ভেবে নিজের উপর হাসি পায়। কিন্তু তবু শেষ করলোনা প্রসূন। সব দরজা খোলা রেখে পড়তে চেষ্টা করে গেলো। প্রসূনের মাথায় অনেক প্রতিশ্রুতি, অনেক আদর্শের বুলি, অনেক স্বপ্নের কবর, অনেক সাহিত্য, কবিতা র কঙ্কাল একে একে ঘুরপাক খেতে লাগলো। পরীক্ষা হল৷ প্রসূন আর বাড়িতে থাকতে পারলোনা। ঘুরে বেড়াতে লাগলো চারিদিকে। প্রসূনের বন্ধুর অভাব নেই। এদিক ওদিক। বাড়ি আর ফিরলোনা। মাঝে মাঝে দোলন নিজে থেকেই ফোন করে। প্রসূন ফোন ধরে নির্বিকার থাকে। অপেক্ষা করে কবে আসবে সেই শুভ সংবাদ- দোলনের এনগেজমেন্ট এর। অবশেষে প্রসূনের রেজাল্ট বেরোলো। প্রসূন পাস করতে পারলোনা। কতদিন আর পকেট ফাঁকা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। যে বন্ধুর বাড়িগুলোতে এতবছর ধরে তাদের বাড়িতে ডাকতো- প্রসূনের যাওয়ার সময় হতনা, সেই কয়েকজন বন্ধুর বাড়িতে কাকু-কাকিমা রা স্পষ্ট বুঝিয়েই দিলেন - এভাবে বসে থাকার কোন মানেই হয়না। এর আগে অবশ্য ওনারা নিজের ছেলেদের বলতেন - প্রসূনকে দেখে শেখ্।
আত্মীয়রা অবশ্য অত স্পষ্টবাদী হয়না। যা বলার পেছনে বলে থাকে৷ পকেটফাঁকা হয়ে একদিন শিয়ালদহ স্টেশনে মাটিতে কাগজ পেতে রাত কাটালো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন৷ প্রসূনের চেহারা শুকিয়ে কাঠ। প্রসূন বাড়ি ফিরে এলো। তার কয়েকদিন পরেই দোলন জানালো - "আমি ভালোবাসা পেয়ে গেছি!! "
প্রসূন এতমাস এই মুহূর্ত টার জন্য অপেক্ষা করছিল। একটা স্মাইলি দিয়ে লিখে পাঠালো - "কনগ্রাচুলেশন।"
তারপর দোলন আর তার বান্ধবী, পরিচিত সবাইকে সব সোশ্যাল মিডিয়াতে ধরে ধরে ব্লক করে দিল৷ নিজের ঘরের দেওয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলো - "আমি নিজের ইচ্ছেতে সব জেনেবুঝে যা করার করেছি, আমার সব পরিণতির জন্য অন্য কেউ নয়, শুধুমাত্র আমি দায়ী। জীবনের শেষে শুধু তিনটে জিনিসএর মানে থাকে। কতটা সুন্দর ভাবে আমি বাঁচতে চেয়েছি, কতটা গভীরভাবে ভালোবেসেছি আর কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের যেতে দিয়েছি যারা আমার জন্য নয়।। "
প্রসূন এতমাস এই মুহূর্ত টার জন্য অপেক্ষা করছিল। একটা স্মাইলি দিয়ে লিখে পাঠালো - "কনগ্রাচুলেশন।"
তারপর দোলন আর তার বান্ধবী, পরিচিত সবাইকে সব সোশ্যাল মিডিয়াতে ধরে ধরে ব্লক করে দিল৷ নিজের ঘরের দেওয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলো - "আমি নিজের ইচ্ছেতে সব জেনেবুঝে যা করার করেছি, আমার সব পরিণতির জন্য অন্য কেউ নয়, শুধুমাত্র আমি দায়ী। জীবনের শেষে শুধু তিনটে জিনিসএর মানে থাকে। কতটা সুন্দর ভাবে আমি বাঁচতে চেয়েছি, কতটা গভীরভাবে ভালোবেসেছি আর কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের যেতে দিয়েছি যারা আমার জন্য নয়।। "
তিনদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকলো প্রসূন। তার মা আর থাকতে না পেরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। কোন সাড়া নেই। মা র কপালে ভাঁজ পড়লো। শেষবারের মত দরজায় ধাক্কা দিতে যাবে, এমন সময় প্রসূন বেরিয়ে এল। তিনদিনে এই প্রথম, দিনের বেলাতে। দুটো চোখ ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু দুঃখ এর চিন্হমাত্র নেই। উজ্জ্বল দীপ্তি। জীর্ণ শরীর। শুকনো ঠোঁট নেড়ে প্রথম বার প্রসূন বললো
- " সনাতন দা র মোবাইল নাম্বারটা দাও তো!! "
- " সনাতন দা র মোবাইল নাম্বারটা দাও তো!! "
No comments:
Post a Comment