Sunday, March 29, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | পঞ্চম পর্ব | পঞ্চ পান্ডব |

অপর্ণার সাথে ব্রেক আপ হয়েছে প্রায় একমাস হল। আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে গান শুনতাম। এখন গান বুঝি। অবাক হয়ে জানালা দিয়ে চেয়ে থাকি। এক্স কে ভোলা আরো কঠিন হয়, সে যখন সামনের কোয়ার্টারেই ঘুরে বেড়ায়। এরকমই একদিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। এমন সময় রুমে ভগা ঢুকলো - কিরে এখনো দেবদাস হয়ে বসে আছিস?
আমি একটু লো হয়ে বললাম - অন্য কথা বল।
ভগা - না তুই আগে বল। ওকে ব্লক করেছিস ফোনে?
- না।
পাশে প্রবাল দা শুয়ে ছিল। প্রবাল দাকে শুনিয়ে ভগা বললো -
বুঝলে দাদা, আমি কাল বাসে আসতে আসতে দেখলাম একজন কানে হেডফোন দিয়ে আছে। অথচ তার ফোনে কোনো গান চলছেনা। মানে কি বোঝাতে চাইছে? সে সব পাবলিকদের ইগনোর করছে, কিন্তু গান ভালো লাগেনা। ধীরুর অবস্থাটাও সেরকম।

আমি - হ্যাঁ, খিল্লি নে।

- না না আর খিল্লি করবোনা। চল একোয়াটিকা ঘুরে আসি। শিবেন প্ল্যান করেছে।

পাঁচজন মিলে একোয়াটিকা গেলাম তখনকার হলুদ ট্যাক্সিতে দরদাম করে। সত্যি বলতে যদিও যাওয়ার একদমই ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু সারাদিন কোথা দিয়ে পেরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
সুইমিং পুলে নেমে বিশু বললো - আমার সুইমিং পুলে নামলেই পেচ্ছাপ পায়।

শিবেন - হাট্ বানচোঁদ। এইসব ছোটলোক দের নিয়ে আসা উচিত না। গাঁইয়া শালা।

বিশু চেপে গেলো। নীল কোলাব্যাং এর মত সুইমিং পুলে লাফাতে লাগলো। বিশু আমার কানে কানে এসে বললো - আমি কিন্তু শিবেনের কাছেই করেছি।

বলে একটা অদ্ভুত হাসি দিলো।
যাই হোক, সারাদিন জলকেলি করে ফিরলাম।
আর একদিন শিবের প্রসাদ টেনে আনমনা হয়ে এনাটমি প্র‍্যাক্টিকাল ক্লাসে বসে আছি। একজন ভালো স্যার ভ্যাজিনা, এনাল ক্যানাল এইসব পড়াচ্ছেন।
নীল আমাকে মেসেজ করলো - পেরিনিয়াম মানে আজ জানলাম। পাতি গাঁড়।
আমি খুব ডিপ্রেসড্ ছিলাম। মনে হচ্ছিল কোন ভাবে ক্লাসটা শেষ হোক। যাতে ঘুম না পেয়ে যায়, আমি স্যারের পাশেই বসেছিলাম।
স্যারকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম - স্যার, পার রেক্টাল এক্জামিনেশনে প্রস্টেট ফিল করা যাবে তো বুঝলাম, কিন্তু পার ভ্যাজাইনাল এক্জামিনেশনে কি প্রস্টেট ফিল করা যাবে?

স্যার আনমনে বললেন - হ্যাঁ কেন করা যাবেনা।

তারপর বুঝলেন আমি কি বলতে চাইছি।

আমাকে কান ধরে টেনে বললেন - আমার সাথে ইয়ার্কি।
আমি বললাম - না স্যার, এটা সিরিয়াস প্রশ্ন স্যার।

আমাকে স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। ক্লাস থেকে বেরিয়ে আমি ছাতিম গাছের তলায় বসে রইলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ অপর্ণা সেইদিক দিয়েই যাচ্ছিল। আমাকে দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়ালো।
"কেমন আছো? " জিজ্ঞেস করলো।
আমি বললাম - ভালোই। ক্লাস থেকে স্যার বের করে দিয়েছেন।
- কেন?
আমি তাকে কারণ টা বলাতে অপর্ণা হেসে উঠলো৷ হাসলে ওকে আরো সুন্দর লাগে। আমার একটা কান্না আসছিল। আমি অন্যদিকে তাকালাম।
অপর্ণা আমাকে বললো - আমি আসছি। ভালো না লাগলে মেসেজ কোরো।

তারপর থেকে অপর্ণার সাথে বন্ধু হিসেবেই থাকলাম। মুশকিল টা হত ওর ফোন ব্যস্ত পেলে। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম। কিন্তু বলা যায়না। একদিন ভালো লাগছিলনা। বিশুর কাছে গেলাম। দেখলাম সেই ঘুমাচ্ছে।
ডেকে তুলে বললাম - তুই ফার্স্ট সেম এ পাস করলি কিভাবে? বাকিগুলো ছেড়েই দিলাম। ফিজিওলজি হেড ম্যাম তো খুব কড়া।
বিশু বললো - ম্যামের কাছে আমি একটাও প্রশ্ন পারিনি। ম্যাম বললেন আমাকে ফেল করাবেন। আমি ম্যাম কে নাটক করে বললাম, ম্যাম আমি গ্রামের ছেলে। অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আমরা পড়াশোনা করি ম্যাম। বলতে ম্যাম ও সেন্টু হয়ে ছেড়ে দিল। পাশ করে গেলাম। তুই এখানে কি ব্যাপার বল।

আমি বললাম - আমি ভাবছিলাম বুঝলি। নিউরোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করবো।

- কিরকম?

- মানে ধর, এই যে আমাদের ব্রেনে অসংখ্য নিউরোন বরাবর যে কারেন্ট ভেক্টর আছে তাদের রিজিওন ওয়াইজ লব্ধি বের করবো। আমার ধারণা কোথাও একটা প্যাটার্ন ঠিক পাওয়া যাবে। আর যারা পাগল হয়ে যায় তাদের কোন একটা রিজিওনে হয়তো লব্ধি বেঁকে গেছে।

এইটা বলার পর আমায় নিয়ে এত খিল্লি করলো ভগা আর নীল কে ডেকে। সেই থেকে আমার আর একটা নাম লব্ধি হয়ে গেলো। এমনকি অপর্ণাকেও মেসেজ করে বিশু বলে দিল যে আমার নাম লব্ধি দেওয়া হয়েছে। কি আর করা যাবে। আমার আর অপর্ণার সম্পর্ক টা দিন দিন আরো জটিল সমীকরণ হতে লাগল। বন্ধুরা বলতো - সকালে ভাইয়া, রাতে সাঁইয়া।

আমি পাত্তা দিতাম না। একদিন লেকচার থিয়েটারেও গিয়ে দেখি আমি যেখানে বসি সেই বেঞ্চে লেখা - সকালে ভাইয়া, রাতে সাঁইয়া।
কে আবার লিখে রেখেছে -
আতি, পাতি, নূরজাহান,
লাইট নিভলে সব সমান।
আমি পাত্তা দিতাম না। সত্যি বলতে আমাদের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকার মতো কিছুই আর আগের মত ছিলনা। শুধু যেটুকু ছিল অপর্ণার ভাষায় স্পেশ্যাল ফ্রেন্ডশিপ।
 বিপদ টা হল হোলির দিন। সবাই চরম রং খেললাম৷ যারা ভয়ে রুমে ঢুকে গেল, তাদের দরজায় রং দিয়ে নানারকমের গালাগাল লিখে দিয়ে এলাম। দুপুর বেলা এনক্সের ছাদ থেকে ফোন করে অপর্ণাকে ছাদে ডেকে রংবেলুন ছুঁড়ে মারলাম। ও আমাকে আবীর ছুঁড়লো। মনটা এতটাই খুশি ছিল। সবাই মিলে রাতেরবেলা ভাং খেয়ে সবাই যে যার নিজের কথা বলছে।
নীল বললো আমার মনে হয় - রাস্তায় গর্ত করা থাকে কারণ যাতে বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল যাতে না জমে, গর্তে জমে।
সবাই বললো - এভাবে ভেবে দেখেনি।

আমি দুম করে বলে ফেললাম - আমার মনে হয় অপর্ণা আমাকে এখনো ভালোবাসে। কিন্তু বলছেনা। অপেক্ষা করছে, সেই ভরসা হলে বলবে।

ব্যাস্, সবাই আমাকে বার খাওয়ালো চরম লেভেলের। আমি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে বললাম - কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করার সাহস নেই। যদি আমার সাথে কনটাক্ট বন্ধ করে দেয়।
ভগা বললো - ওরে বাল, ও বিয়ে করে চলে যাবে কখন, বুঝতেও পারবিনা। আমি ফোন করছি।

আমি যে ওকে আটকাবো উঠে, ভাং গ্র‍্যাভিটেশনাল ফোর্স বাড়িয়ে দিয়ে, আমাকে শুইয়ে রেখেছিল। তখন রাত এগারোটা বাজে।
ভগা অপর্ণাকে ফোনে লাউডস্পিকারে রেখে ফোন করলো - হ্যালো অপর্ণা।
- হ্যাঁ।
- আমি ধীরুর বেস্ট ফ্রেন্ড ভগা বলছি।
- হ্যাঁ আমার নাম্বার সেভ আছে।
- তুই কি ধীরুকে ভালোবাসিস?
- না।
- তাহলে ওর সাথে কথা বলিস কেন?
- বন্ধু হিসেবে।
আর কিছু কথা আমার শোনার মত ব্যাপার ছিলনা। আমি কয়েকটা কাজ একসাথে করছিলাম। হামাগুড়ি দিয়ে নিজের রুমে ফিরলাম। হয়তো কাঁদছিলাম ও। এসে রুমে শুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে একদম ফ্রেশ হয়ে অপর্ণাকে মেসেজ করলাম। রিপ্লাই এলো - ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে? নেশা কেটেছে?

আমি ভাবলাম অপর্ণা ব্যাপারটা তাহলে বুঝেছে। স্পোর্টিংলি নিয়েছে।
আমি বললাম - হ্যাঁ।
এবার উত্তর এলো
- আমি এতদিন তোকে বন্ধু হিসেবে দেখেছি। কিন্তু আজ বলছি, আমি তোকে ভালোবাসিনা, কিন্তু ঘৃণা করি৷ আর কোনদিন কনট্যাক্ট করতে চাইলে পুলিশে দেবো।

সেই থেকে আমি আর দোলে রং খেলিনা।
তখন আমাদের গুগল ছিলনা, নেটফ্লিক্স, হটস্টার, ইউটিউব কিচ্ছু ছিলনা, কিন্তু আমরা পাঁচজন ছিলাম। হস্টেলের ছাদ ছিল। কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় বসে আমরা গভীর আলোচনা করতাম। এখন হস্টেলে খুব কম লোক একে অপরকে চেনে। আমাদের গোটা হস্টেলটাই একটা বড় পরিবার ছিল। একটা আলাদা রাজ্য। যেখানে পঞ্চ পান্ডব দাপিয়ে বেড়াতো। আমাদের জীবনে কোন ট্র‍্যাজেডি ছিলনা। পুরোটাই কমেডি। ওদের সাথে থাকতে থাকতে প্রথম প্রেম হারানোর দুঃখ যে কবে ভুলে গেছি, সেকেন্ড সেমিস্টার, প্রথম এমবি ও কখন দিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।।

(To be continued)
(Share the story with your friends if you like it.. Follow the blog to stay connected) 

Sunday, March 15, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | চতুর্থ পর্ব | All or None law।

অপর্ণার বাড়িতে কাঁপতে কাঁপতে আমি ঢুকলাম। বিশু কিন্তু অনেকটাই স্বাভাবিক ভাবে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অপর্ণাও তাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে উপেক্ষা করছে। ভগা ওদের বাড়িতে ঢুকেই ওয়াশরুমটা কোথায় বলে হাত মুখ ধুতে চলে গেল। আর নীল সোফাতে বসেই বললো - "খুব খিদে পেয়েছে না রে?"
বলে আমাদের দিকে তাকালো। যাতে আমরা সায় দিই। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। খেতে কিছু দিলে তো খেয়েই নিতাম। কিন্তু এতটাও খিদে পাইনি যে নীলের মত নির্লজ্জ হয়ে বলতে হবে। বিশু নীলকে পাত্তা না দিয়ে অপর্ণা কে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা ঢুকলেন চারটে মিষ্টির প্লেট নিয়ে। অপর্ণা পরিচয় দিল ওর মা বলে।
বিশু সেই মুহূর্তে বলে বসলো - "কাকিমা ভালো আছেন? আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়, আপনার মেয়ের এরকম দেবীর মত গায়ের রং এর উৎস কোথায়?? "
আমি লজ্জায় মুখ লোকাবো না কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
আমাকে এসে অপর্ণা ফিসফিস করে বললো -" শোনো, তোমার এই বন্ধুটিকে এবার থামতে বলো। নাহলে কিন্তু ঠিক হবেনা। "
এমন সময় একজন ভদ্রলোক গাউন পরে ঢুকলেন। হাবভাব দেখেই বোঝা যায় তিনি বাড়ির কর্তা মানে, অপর্ণার বাবা।  আমাদের হস্পিটালেরই শিশুদের ডাক্তার। একটা ব্যক্তিত্ব আছে। কিন্তু পুরো ব্যক্তিত্বর ১০৮ বার মেরে রেখে দিয়েছে একটি হিটলারী গোঁফ। উনি বোধহয় সুকুমার রায় কে একটু বেশি সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন, আর ওনার কোন হারামী বন্ধু নিশ্চয়ই উপদেশ দিয়েছিল যে ওই গোঁফে তোকে দারুণ মানাবে।
 উনি ঢুকেই বললেন - "কেন আমি কি খুব কালো? "
বিশু কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো - নিকষ কালো না হলেও কালো তো বটেই।
ভদ্রলোক চোখ গোলগোল করে তাকালেন। বিশু এবার বললো - "না বলতে চাইছি। কালো তাতে আপত্তির কি? এই ধীরুও কালো, ভগা ও কালো, নীল ও কালো। কালো মানে আলো। "
ভদ্রলোক হো হো করে হেসে উঠলেন। কিছুটা হলেও ম্যানেজ হয়েছিল পরিস্থিতি৷ কিন্তু ততক্ষণে ভগা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ও এত ঠোঁটকাটা এটা শুনেই বললো - " সে কি তুই তো কালকেই বললি, কালো টা কোন রং না। যখন কোন রং থাকেনা, তখন কালো দেখায়। "

বিশু বললো - হ্যাঁ কিন্তু সেটা ফিজিক্সের সত্যি। আসল আধ্যাত্মিক সত্যি এটাই, কালো মানে আলো।

ভগা আবার উত্তর দিলো - "সে কি রে তুই না আবিষ্কার করেছিলি গ্রাউন্ড ফ্লোরের একটা কালো ছেলে জনির মুখ দেখলে দিন খারাপ যায়। এমনকি সে এত অশুভ যে উপর থেকে ওর মাথায় ইঁট ছুঁড়লে ইঁট নিজের মুখে এসে লাগে।"
সবাই চুপ।
আমি আর নীল ওই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত বুঝতে না পেরে মিষ্টি খাওয়াতে মনোনিবেশ করলাম। ওরা নিজেদের মধ্যে টুকটাক কিছু কথা বলছিল। মিষ্টি খাওয়া যখন শেষ হল তখন ভদ্রলোক বলছেন - "সেদিন যখন হস্টেলের পথে ফিরছিলাম ডিউটি সেরে, কে যেন আমার গায়ে গরম জল ফেলেছিল তোমাদের নর্থ উইং থেকে। আমিও তো এই হস্টেলেই থেকেছি একসময়। আমার মনে হয় ওটা তোমার ঘর থেকেই পড়ছিল। " বলে বিশুর দিকেই আংগুল তুললেন।
বিশু বললেন - "ওটা আমি না, রুমের অন্য কেউ হবে।"
স্যার বললেন - না আমি তোমাকেই দেখেছি৷

বিশু - ও তাহলে চা করার জন্য জল গরম করেছিলাম। এক্স্ট্রা গরম জলটা ফেলতে গিয়ে আপনার উপরে পড়েছে। রাস্তা অন্ধকার তো তাই আলো থেকে আপনাকে আমি দেখতে পাইনি, তাই হবে।
স্যার বললেন - হ্যাঁ, তোমার কেটলির নলমুখ টা আমি অন্ধকার থেকে দিব্যি দেখতে পেয়েছি।
আমরা কেউ কথাটা বুঝতে পারলাম না। অপর্ণা বললো - মানে?
ওর বাবা বললেন - উনি নিজের রুম থেকে নীচে মূত্র বিসর্জন করছিলেন।
বিশু এদিক ওদিক তাকালো। পুরো ঘর নিঃস্তব্ধ। হঠাৎ করে বিশু গিয়ে স্যারের পায়ের কাছে পড়ে গেল - "স্যার ভুল হয়ে গেছে, স্যার। আর হবেনা। আসলে আমি খুব অলস তো। সেদিন রুমে কেউ ছিলনা। তাই আর কি.. "
আমি, ভগা আর নীল তিনজনেই সাপোর্ট করলাম যে ও অলস।
আমাদের ধমকে বললেন - "শাট আপ। তোমরা বন্ধু হয়ে ওর এইসব কাজ কে সাপোর্ট করো। নেহাত আমার মেয়ে একটা ভুল কাজ করেছে নাহলে সুপারকে অভিযোগ জানাতাম। তোমরা এখন আসতে পারো। "
চারজন বিমর্ষ হয়ে ফিরছি হস্টেলে। এমন সময় নিরভ্র র সাথে দেখা। দেখা হতেই তার নির্দিষ্ট টোনে সে বললো - কি রে পেরিনিয়াম পড়লি?
আমরা কেউ কোন উত্তর দিলাম না দেখে বললো - "আমি ফেসবুক খুলেছি। তোদের ফেসবুক নেই? আমার অনেক বন্ধু৷ আমার ফটোতে আজ ২৫ জন লাইক করেছে। ইয়েস্। "
আমি এমনিতে শান্ত ছেলে। কিন্তু মাথা গরম হলে আমার মুখের আগে হাত চলে। আমি নিরভ্রকে মারতে গেলাম। ভগা আর নীল আমাকে চেপে ধরে থাকলো। বিশু বললো - কুল ডাউন ম্যান।
ব্যাস এবার আসল রাগের আউটবার্স্ট টা হল। বিশুকে তাড়া করলাম মারবো বলে। গোটা হস্টেল ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে যখন দুজনেই কুকুরের মত হাঁফাচ্ছি তখন আমাকে একটা লজেন্স দিয়ে বললো - চল্, ঠান্ডা হ এবার। আজ জনির মুখ দেখেছিলাম ক্যান্টিনে সবাই।

আমি কিছু না বলে লজেন্স টা নিয়ে মুখে পুরে দিলাম। আমাদের দিনগুলো ছিল এরকমই। সকালেই চরম ঝগড়া, মার। বিকেলে গলায় জড়াজড়ি করে সিগারেটের কাউন্টার নিচ্ছি। এর মাঝে একটা নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছিল। বলা নেই কওয়া নেই আত্মীয়রা আমাদের ফোন করতো সকাল, বিকেল। আমরা ডাক্তারীর ড ও জানিনা তখন। আমাদের ফোন করতো যাতে আমাদের মাধ্যমে বেলাইনে ঢুকে ডাক্তার দেখানে যায় আমাদের হস্পিটালে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের এড়িয়ে যেতে হত। কারণ আমাদের পড়াশোনা করতে হত। যে না বলতে পারতো না সে সারা জীবন ওই দালালিই করে যেত। বছরের পর বছর ইয়ার ল্যাক খেতো। আর রিলেটিভ ব্যাপারটা সত্যি রিলেটিভ। যার সাথে শেষ দশ বছরে কোন কথা হয়না। এতদিন জানতামই না একে অপরের অস্তিত্ব। তারাও ফোন করতো তার বাচ্চা এক চামচের জায়গায় দু চামচ কফ সিরাপ খেয়ে নিয়েছে কি হবে। কেউ হয়তো কোনদিন খোঁজ নেয়না। সেও ফোন করতো তার বাচ্চার দুধ গরম করতে করতে দুধে চামচ পড়ে গেছে- এখন কি হবে?
এইসব উদ্ঘট প্রশ্ন। আমি আর নীল একসাথে ট্রেনে বাড়ি ফিরতাম। আমরা দুজনেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ছেলে। শুরুতে ট্রেনে যখন কেউ জিজ্ঞেস করতো - কোথায় পড়?
বুক ফুলিয়ে বলতাম নিজেদের পরিচয়। আর তখনই সেই প্রশ্নকর্তা বলতে শুরু করতো তার মাসীর কাকার পিসির নাতির ছেলে ও ডাক্তারী পড়ে৷ সে তার হস্পিটালের নাম্বার ওয়ান ডাক্তার। তা বাবা তোমাদের নাম্বার টা দাও তো।
শুরুতে দিয়ে দিতাম। তারপর বুঝলাম সমাজের নিয়ম। নিজেরা বাকি সমাজ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যেতে শুরু করলাম। আমাদের যেসব ক্লাসমেটরা স্কুলে গালাগাল দিতো তারাও ফোন নাম্বার জোগাড় করে চিকিৎসার পরামর্শ চাইতো। আমরা প্রত্যেকেই অল্পদিনে নাম্বার পাল্টাতে বাধ্য হলাম। আমাদের সার্কেলটা খুব ছোট হয়ে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে।


যাই হোক, ইতিমধ্যে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম হস্টেলে একজন লাভগুরু দাদা আছে। নাম সত্যেন দা। সেদিন অপর্ণার কাছ থেকে ফিরেই সত্যেন দা র কাছে গেলাম। গিয়ে একটু অন্যভাবে আজকের ঘটনা টা বললাম। দাদা দশ টাকা ফিজ নিলো। তারপর বললো - শোন্, যে কোন মেয়েকে পটাতে গেলে আঁঠার মত সেঁটে থাকতে হবে। একদম ফেভিকুইক টাইপের। ঠিক পটবে।

দাদার সেই উপদেশ মেনে আমি রাতে অপর্ণার নাম্বারে মেসেজ করলাম। "আমার বন্ধু যা করেছে তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। "
মেসেজটা কি দেখলো, কিছু ভাবছে, নাকি পাত্তাই দিলনা, এইসব ভাবতে ভাবতে আমার পড়া লাটে উঠে গেল। একটু পরে রিপ্লাই এলো - আমিও সরি। আমার বাবা একটু বাজে ভাবেই চলে যেতে বলেছিল।

ব্যাস, আঁঠার কাজ শুরু। পুরো সেঁটে গেলাম। সারাক্ষণ ফোনে সেঁটে থাকতাম। গভীর রাত অব্দি গল্প চলতো। আমার বন্ধুরা আমাকে দেখলেই গান গাইতো - দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার ফোনের ওপারে।
আমি বাধ্য হয়ে দূরে চলে যেতাম। আমি আমার গোষ্ঠী থেকে দূরে চলে যাচ্ছি দেখেও আমি কিছু করতে পারছিলাম না। সামনে প্রথম সেমিস্টার। আর আমার প্রথম প্রেম। কাকে বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত বুঝতে পারছিলামনা।
ভগা একদিন সবাইকে ডেকে বললো - ভাই, ফার্স্ট সেম আসছে আমাদের গাঁড় মারার জন্য। আমরা এবার গভীর প্রস্তুতি শুরু করবো।
নীলের মাথায় সেই শিবেণের বাড়ি থেকে কনসেপ্ট করে পড়ার কথা মাথায় ঢুকেছিল। সে বললো - কিন্তু এরকম করে কি কনসেপ্ট হবে, বাল?
আমরা তাকালাম ওর দিকে। ও চুপ করে গেল। পড়াশোনা জোর কদমে চললো। সাথে প্রেম ও। আমার মনে হচ্ছিল আমার মত সুখী আর কেউ নেই৷ কখনো ভাবিনি আমার বন্ধুদের থেকে আমি দূরে সরে যাচ্ছি। ভাবলাম যেভাবে হোক সেমিস্টার শেষ করেই চুটিয়ে প্রেম করবো। কিন্তু সেমিস্টার শেষ করে বিছানায় এসে শুয়েছি, অপর্ণা মেসেজ পাঠালো - শোনো, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
আমি বললাম - কি?
- তোমার সাথে আমার সম্পর্ক রাখা আর সম্ভব নয়।


আমি কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার আঙুলগুলো কাঁপছিল। অনেক কথা মাথায় আসছিল। এই তো কালকেই আমাকে মেসেজ পাঠালো আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবেনা। আজ হঠাৎ কি হল?  তাহলে কি বাবা সমস্যা? না সেটাও তো বলেছিল ওর বাবা আমাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে খুশি। তাহলে? এসব ভাবছি। আবার মেসেজ এলো - তবে তুমি যদি বন্ধু থাকতে পারো, আমার কোন আপত্তি নেই।
মেয়েটা বলে কি? আমি উত্তর দিলাম - "এটা সম্ভব নয়। আজকেই পরীক্ষায় একটা টীকা এসেছিল- All or none law..  উত্তরটা আমি লিখে এসেছি। আমার জীবনেও একই নীতি। Either All or None.. ভালো থেকো। "


(To be continued)
(Share the story with your friends if you like it.. Follow the blog to stay connected) 

Saturday, March 7, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | তৃতীয় পর্ব | Einthoven's law|

ফিজিওলজি ক্লাস চলছে, ক্লাসের পরে শিবেনের বাড়ি গিয়ে আমাদের পাঁচজনের প্রথম শিবের প্রসাদ সেবন করার কথা। তার কারণ দাদারা হস্টেল থেকে দুমদাম জুনিয়রদের তুলছে, ফ্রেশারস্ এর কাজ করাবে বলে। দাদা দের দাবী - তোদের আমরা ফ্রেশারস্ ওয়েলকাম দেবো আর তোরা কাজ করবিনা??
আমি ক্লাসের মাঝেই এসব নিয়ে ভাবসাগরে ডুবে গেলাম।
আমাদের মত ছেলেরা দাদাদের সব থেকে বড় টার্গেট৷ খুব সহজে ম্যানিপুলেট করে ফাই ফরমাশ খাটানো যাবে। একটু লাইমলাইট আর মেয়েবাজির লোভ পেলে দাদা হতে কে না চায়।
 আর দুর্ভাগ্যক্রমে সিনিয়র ইয়ারের পার্টি এরেঞ্জ এর মূল দায়িত্ব ছিল আমার রুম মেট প্রবাল দা র কাঁধে। আমাদের একটা রাজনীতির রুম ছিল হস্টেলে৷ রুম নং ৩৭। আমাদের কাছে ছিল ত্রাস। আগের রাতেই আমি একটুর জন্য বেঁচেছি। আমি আগের দিন ক্লাস থেকে ফিরে শুনলাম, প্রবাল দা আমাকে ৩৭ নং রুমে ডেকেছে। আমি ভগা, বিশু আর নীল কে ডেকে জানালাম। ভগা একটা ভালো কথা বললো - "আমরা এখানে পড়তে এসেছি। রাজনীতি করতে নয়। যেভাবে হোক তোকে বেরিয়ে আসতে হবে। তারপর কাল সবাই যে কোন অযুহাতে শিবেনের বাড়ি পালাবো। "
আমরা সবাই তাতে সায় দিলাম। তারপর আমি কাঁপতে কাঁপতে রুম ৩৭ এ ঢুকে দেখি প্রবাল দা একা। হাতে খেলনা বন্দুক। অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম নেকড়ের দল কই। প্রবাল দা অত্যন্ত আন্তরিক গলায় বললো - আয়, বোস। পলাশ দা র সাথে আমাদের মাঠে যে জংগল আছে ওখানে এই বন্দুকটা নিয়ে কাক মারতে গেছিলাম একটু।
একটু থেমে আবার বললো -
তুই জানিস আমাদের এখন কি ছাত্র সংগঠন আছে?

আমি বললাম ভয়ে ভয়ে - এস.এফ.আই।

দাদা - বাহ্। তাহলে বল এস.এফ.আই. এর তিন মন্ত্র কি?
হস্টেলের প্রথম দিন আমাদের পাঠশালায় দুলিয়ে দুলিয়ে নামতা মুখস্ত করানোর মত এটা পড়ানো হয়েছে। আমি এক এক করে উগরালাম -
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আর...

এইসব ভাবছি। এমন সময় আজকের ফিজিওলজি ম্যাডামের কিছু কথা কানে ঢুকলো।
" লিড ওয়ান প্লাস লিড থ্রি ইজ ইকুয়াল টু " বলে লেকচার থিয়েটারের গ্যালারিতে বসে থাকা আমাদের দিকে তাকালেন।
আমরা সবাই একসাথে বললাম - "লিড টু"।
ম্যাডাম উল্লসিত হয়ে বললেন - " সি, দিস ইজ অল ম্যাথস্। ফিজিওলজি ইজ ম্যাথেমেটিক্স "।
শীলু ফিসফিস করে বলে উঠলো - হালার বেটা এখানে ম্যাথ টা কোথায়?
নীল বললো - ফিজিওলজি যদি ম্যাথ হয়, তাহলে হোমিওপ্যাথি ও সায়েন্স।
ভগা ফিসফিস করে বলার ছেলে ছিলনা। উঠে দাঁড়ালো - ম্যাম্, আই হ্যাভ আ কোয়েশ্চেন।
ম্যাম বলতে বললেন ভগাকে।
ভগা বললো - ম্যাম, ছোট থেকে তো ম্যাথ করেছি। আপনি বললেন ফিজিওলজি ম্যাথ একই। এই আইনথোভেন এর সূত্র কিভাবে প্রমাণ করা যাবে একটু যদি অংক কষে বলে দিতেন। আমার জানতে ইচ্ছে করছে। মানে গাইটন, গ্যানং খুঁজেছি ম্যাম। সেভাবে পাইনি।
ম্যাম একটু হকচকিয়ে গেলেন। ঠিক সেই সময় ঘড়ি দেখে বললেন - এর পরের অংশ পরে পড়াবো। আজকের মত এখানেই ক্লাস শেষ। এটেন্ডেন্স টা নিয়ে নিই।
সবাই ভগার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন অপরাধ করে ফেলেছে প্রশ্নটা করে।
আমি আমার ভাবনায় ফিরে এলাম। আজ যখন "ইজ ইকুয়াল টু " বলে ম্যাম ক্লাসের তোতাপাখি গুলোর দিকে তাকিয়েছিলেন লিড টু উত্তর শোনার জন্য, ঠিক সেরকমই কাল প্রবাল দা তৃতীয় মন্ত্র শোনার জন্য তাকিয়ে ছিল আমার দিকে চাতক পাখির মত। বললেই কমরেড বলে বুকে টেনে নিত। কিন্তু আমি ছিলাম হারামি। দাদাকে বললাম ঢোক গিলে - "দাদা, আমার তৃতীয়টা বাংলায় মনে নেই, ইংরেজি তে মনে আছে। "
দাদা বললো - "বেশ তো বল না। তুই জানিস বল। "
আমি বললাম - কমিউনালিজম্।
দাদা আমার দিকে একটা স্নেহভরা হাসি নিয়ে তাকিয়ে ছিল। প্রায় পাঁচ সেকেন্ড বিশ্বাস করতে সময় নিল যে আমি সত্যিই এতটা মূর্খ।
আমি একটা ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে রইলাম। দাদা যদি সেদিন আমাকে জানতো বুঝে ফেলতো কি উদ্দেশ্যে আমি ওটা বলেছিলাম। কিন্তু সিনিয়র জুনিয়রদের মুরগি হিসেবেই ভাবে। তাই ভাবলো এরকম মূর্খ কে নিয়ে কাজ করার থেকে না করা ভালো। বলে আমাকে যমের ও অরুচি র গোত্রের নানারকম কাঁচা খিস্তি দিয়ে বের করে দিল। নিজেকে ইউজলেস প্রমাণ করে এত আনন্দ কখনো পাইনি।

যাই হোক, কালকের কথা কাল শেষ। ক্লাস থেকে বেরিয়ে হস্টেলের বাকিদের দেখলাম দাদা রা নানারকম কাজ করাচ্ছে। তারা মুখ হাঁড়ি করে সব করছে। কেউ চরম বার খেয়ে গাছে উঠে দাদা দের দালালী ও শুরু করে দিয়েছে। আমরা কথামত চলে এলাম শিবেনের বাড়ি। আমাকে কোন দাদা কিছু জিজ্ঞেস করেনি আগেরদিনের জন্য। ভগার বাবা র নাকি কোলনোস্কোপি হবে। বিশু র আবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। তাই বাড়ি যেতেই হবে। নীলের দিদা র বাথরুমে স্লিপ খেয়ে পা ভেঙে গেছে। এইসব বাথরুম রিলেটেড বাং মেরে শিবেনের বাড়ি এলাম। শিবেনের বাড়িতে ওর বাবা মা থাকেনা। রাতে ফিরে ঘুমিয়ে যায়। সকালে উঠে কাজে বেরিয়ে যায়। ও নিজের বাড়িতেই স্বাধীন। কনসেপ্ট টা হজম করতে আমরা পারিনি৷ আর সেখানে ভগা কিনা তার বাবার নাম হিটলার বলে ফোনে সেভ করে রেখেছে। আমাকে কিনা বাড়িতে গল্প বইটাও পড়তে দেখলে কেড়ে নিত। বিশুকে বাইরে খেলতেই যেতে দিতনা, ছেলে বাজে সঙ্গে পড়ে যাবে বলে। আর নীল উচ্চমাধ্যমিকে একটা দু নাম্বারের অংক ভুল করে এসেছিল বলে বাবার কাছে জুতোপেটা খেয়েছিল। যাই হোক, শিবেন শহরের ছেলে। হতেই পারে।
 বিকেলে ওদের পাড়ায় ফুটবল খেললাম৷ তারপর সন্ধ্যেবেলা আমরা ওর বাড়ির ছাদে শিবের প্রসাদ গ্রহণ করলাম৷ আমাদের গুরু স্বয়ং শিবেন। শিবেন খুব সিরিয়াসলি নেশাটা করে। মানে ওর একটা ছোট্ট গুহার মত ঘরে কোন খাট নেই। মাটির কাছাকাছি থাকবে বলে মাটিতে বিছানা পাতা। ঘরে অসংখ্য বই। বেশিরভাগই ফিজিক্স এর। দেখলে মনে হবে কোন ফিজিক্স হনার্সের ছাত্র। ঘরে তিন চারটে গিটার রাখা। চারিদিকে দেওয়ালে বিভিন্ন ইংরেজি ব্যান্ড এর ছবি মারা। ঘরে দু তিনটে দড়ি টাঙ্গানো তবে জামা প্যান্ট শুকোনোর জন্য নয়। কিছু লাল - নীল - সবুজ টুনি বাল্ব ঝোলানো। ও আস্তিক। কিন্তু শিব কে ভাবে এলিয়েন বিজ্ঞানী। তাই একটা শিবের মূর্তি রাখা। আর তার চারিদিকে জয়েন্টের খোল পড়ে আছে। একটা বোস এর ছোট স্পিকারে পিংক ফ্লয়েড বাজছে। আমরা সবাই আসলে শিবেনের হাতে মানুষ হতে শুরু করি। মানে এই জীবনটা ঠিক সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন নয়। মদ না খেলেও এই জীবনের এক অদ্ভুত মাদকতা আছে। পুরুলিয়ার রাঙামাটি পেরিয়ে কোন জংগলে এক পশলা বৃষ্টির পর যে জিওসমিনের সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায়, সেই গন্ধের নেশা আছে।
আমাদের শিবের প্রসাদের ভাগ দিয়ে শিবেন বললো এবার ধ্যান কর সবাই গোল হয়ে বসে। একজন একজন করে কথা বলবে যা মাথায় আসছে। প্রথমে আমি বলবো। শিবেন বলে চললো সে কেন ডাক্তারি পড়তে এসেছে, তার আসার ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু জোর করেই একরকম সামাজিক চাপে তাকে আসতে হয়েছে। এরকম জানলে সে ইচ্ছে করে জয়েন্ট খারাপ দিত।
আলোচনা গুরুগম্ভীর হয়ে যাচ্ছিল দেখে শিবেন নিজেই বললো - তোরা কখনো কারো সাথে সেক্স করেছিস??
নীল ফট্ করে বললো - না সেক্স করিনি। কিন্তু টিউশন থেকে ফেরার সময় রোজ অটোতে একটা মেয়ের সাথে ফিরতাম। আমরা এত কাছাকাছি বসতাম অটোতে, যে ও কি কম্পানির শ্যাম্পু ইউজ করত কোনদিন, সেটাও বলতে পারবো।

বিশু এবার নীল কে থামিয়ে বললো - থাক্। সেদিন মেয়েটাকে দেখে দৌড়টা আমাদের মনে আছে। তুই চুপ কর। ভাই শিবেন, তোকে দেখলেই মনে হয় তুই কামজগতের রাজপুত্র। আমাদের কিছু টিপ্স দে ভাই। যাতে সারাজীবন ওই একটা মন্ত্র নিয়ে বাঁচতে না হয়।

শিবেন বললো - কি মন্ত্র?

নীল চেঁচিয়ে বললো - থাকিতে দক্ষিণ হস্ত, হইবোনা কারো দারস্ত।

আমরা সবাই হেসে উঠলাম।
শিবেন সেই টিপিক্যাল খিক খিক করে হেসে বললো - দেখ্ ভাই মেয়ে পটানো হল একটা আর্ট। ধর্ একটা পার্টি হচ্ছে। সেখানে তোরা সবাই গেছিস। একটা দারুণ দেখতে মেয়ে সেখানে এসেছে। তুই তাকালি মেয়েটার দিকে। মেয়েটা যেই তাকাবে, অমনি চোখ সরিয়ে নিবি। আবার যেই মেয়েটা অন্যদিকে তাকাবে তুই তাকাবি মেয়েটার দিকে। এরকম কিছুক্ষণ লুকোচুরি খেলার পর একটা হাসি দিবি। হাসি মানে মোনালিসা র মত রহস্যজনক হাসি। মেয়েটা মনে মনে ভাববে,  এই ছেলেটা ঠিক করে তাকাচ্ছেও না। আবার অদ্ভুত হাসি দিচ্ছে। এর মধ্যের রহস্যটা কি। ঠিক এই সময় তুই গিয়ে বলবি এমন একটা কথা যেটাতে বোঝায় যে তুই খুব ইন্টারস্টেড আবার এতটাও নয় যে আজকেই শুতে রাজি। তোর পেছনে অনেক মেয়ে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

ভগা যথারীতি প্রশ্ন করে বসলো - কিন্তু একটা কথায় এটাকে কিভাবে বোঝানো সম্ভব?

শিবেন বললো - ধর তুই বললি, আমার যদি গার্লফ্রেন্ড না থাকতো, তাহলে তোমার সাথে একদিন কফি খেতে বেরোতে চাইতাম্।

বিশু বললো - হুম্ রকেট সায়েন্সই বটে। আমার দ্বারা অত পরিশ্রম হবেনা। আমার ল্যাদ লাগে।

যাই হোক্, শিবেনের পর আমার পালা এলো। আমি বললাম- " বাড়ি ছেড়ে, ৩৭ নং রুমে দাদাদের কাছে চাঁটন খেয়ে মাঝরাতে যখন প্রথম হস্টেলে রুম পেলাম সেদিন মনে হয়েছিল এখানে সাড়ে পাঁচ বছর কাটাবো কিভাবে। যে আমি কোনদিন মদ ও খাইনি সে প্রথম দিন রুমে ঢুকে দেখি পুরো ধোঁয়া। প্রবাল দা মাটিতে তার বন্ধুদের সাথে বসে তাস খেলছে আর সিগারেট, মদের গন্ধে রুম ভরে গেছে। আমি বলেই ফেলেছিলাম, এটা কি আমার রুম?
প্রবাল দা নির্বিকারে বলেছিল, বাচ্চা, আজ শুয়ে পড়। কাল ক্লাস সেরে তোমার পরীক্ষা নেওয়া হবে।

মানে খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি যদি পালাতে চাইতাম বাবা মা বাড়ি থেকে বের করে দিত। আর এই গাঁত মারা বিদ্যে আমার আসেনা জাস্ট। মনে হয় ভুল জায়গায় চলে এসেছি। একট ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ দেখলে ভয় লাগে। রক্ত দেখলে মাথা ঘোরায়। আমি কি ডাক্তার হবো বলতো। তারপর ডারউইনের কথা মনে করি।  সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট। সারা জীবন বাড়িতে থোড়াই থাকবো। এই জংগলে বাঁচতে হলে জংগলী হতে হবে। তারপর তোদের মত বন্ধু পেলাম। ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে গেল। মানে আগে কখনো বাড়ি ছেড়ে থাকিনি। সেটার যে এত পজিটিভ দিক আছে তোদের থেকেই শিখেছি। আর হস্টেলে একটা লাইব্রেরি আছে জানিস। এই কয়েক মাসে গুছিয়ে বই পড়ছি। অস্ত্রোভস্কি, চমস্কি যাদের নাম ও শুনিনি আগে সব শেষ ভাই। আর এক বছর থাকলে তিনটে আলমারিই শেষ করে দেবো। এখানে কেউ বারণ করারও নেই। নিজেকে খোলা ষাঁড় মনে হয়। "

সবাই হেসে উঠলো। বিশু বললো- আমি শুধু শুনবো। বলতে আমার বড় ল্যাদ লাগে। তবে ভাবছি একটু স্প্যানিশ শিখবো। মানে বাংলা হিন্দী বা ইংরেজি তে মেয়েদের সাথে কথা বলতে একটু আড়ষ্ট লাগে। তাই স্প্যানিশে যদি সেটা না লাগে। আর আজ আমি সত্যি বলবো আমার পাঞ্জাবী পরে লোকজনের কাছে বেরোতে লজ্জা লাগে।

এরপর এলো ভগা র পালা। ভগা একটু চুপ থেকে বললো - আচ্ছা তোদের কি কখনো মনে হয়েছে এই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাটা ইউজলেস। মানে পড়ানো হয় তো গাঁতবিদ্যা। তার যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য এন্ট্রান্সে ফিজিক্সের অংক রাখা হয় কেন? মানে ওটা যদি না থাকতো তাহলে তো আমি, শিবেন, ধীরু এই তিনজনের কেউই এই লাইনে আসতে পারতাম না।
বায়োকেমিস্ট্রিতেও ছক গাঁতানো হয়। অথচ কত কনসেপচুয়াল সাবজেক্ট। এনাটমি নামতা পড়ানোর মত পড়ানো হয়৷ যেন তোতাপাখির মত কাগজ গিলছি। আর ফিজিওলজি। বুঝে পড়। তারপর কনসেপ্ট টাই ভুলে যাও। এটা কি বালের লাইন৷ আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল। আমি ক্যান্সার নিয়ে রিসার্চ করবো। ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার করে নোবেল পাবো।

বিশু বললো - ভাই আমরাও জয়েন্ট ক্লিয়ার করে আসতে পারতাম না।

ভগা বললো - চোপ্ হারামজাদা। তুই যখন ঘুমাস না তখন ও তোর নাক থেকে গাঁত গাঁত শব্দ বেরোয়। আর নীলের কথা কি বলবো?

নীল এতক্ষণ চুপ ছিল। সে ইনসাল্ট টা গায়েও মাখলোনা। বললো - ভাই, চরম খিদে পাচ্ছে।

শিবেন বললো - দাঁড়া এই যে ডিজায়ার এসেছে তোর মনে এটাকে কন্ট্রোল কর। এখন খেয়ে নিলেই তুই সেই ভাব টা পাবিনা। এই যে ইউনিভার্স তাকে বোঝ। তোর খিদের তার কাছে একটা ছোট জোনাকির মত। তুই বল তোর কিছু বলার আছে তো।

নীল আবার বললো - ভাই খাবো ভাই, খিদে পেয়েছে চরম।

শিবেন আর কি বলবে। নীল কে বললো - ঠিক আছে খাবো চল। কিন্তু তোরা এই ভগাকে সহ্য করিস কি করে?

বিশু বললো - সিম্পল। ও ধীরুর বন্ধু।

তারপর গোটা রাত বিশু আর ভগার দাম্পত্য কলহ চলতে লাগলো। বিশু প্রমাণ করবেই যে সে ভগা গাঁতু।
আর ভগা মানবেনা। উল্টে বিশুই যে গাঁতু সেটা প্রমাণ করবে৷

যাই হোক্, তারপরের দিন ফ্রেশারস পার্টির বেইজ্জতির কথা আর নাই বা লিখলাম। আমাদের ফেস্ট ও দেখতে দেখতে কেটে গেলো। জীবনের প্রথম ফেস্ট চরম আনন্দে কাটলো। তবে ফ্রেশার্স এর পর থেকেই সিনিয়রদের ভোল পাল্টে গেল। আগের নেকড়ে আর মুরগীর সম্পর্কটা আর থাকলোনা। সিনিয়ররা আমাদের বন্ধু আর গাইডের মত হয়ে উঠলো। এখন আমার রুমমেট অরুণ দা আমাকে দেখলে ভয়ে পালায়। কারণ অরুণ দার পেটে আমি ভালো কাতুকুতু দিতে পারি। অরুণ দাও এখন আর কিছু বলতে পারেনা।
ইতিমধ্যে একদিন পাশের বাড়ির মেয়েটা ছাদে ঘুরতে এসেছিল। আমি থাকতে না পেরে একটা কাগজে-" তোমার নাম কি?" লিখে একটা ছোট ঢিলে মুড়ে মেয়েটার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছি। মেয়েটা সেটা কুড়িয়ে হেসে আমার দিকে তাকালো। তারপর ছাদ থেকে নীচে নেমে গেলো। আমি এটা কাউকেই বলিনি। এরপর আমি একদিন বাড়ি থেকে ফিরছি সন্ধ্যেবেলা, মেয়েটার সাথে আবার সেই মর্গের কাছে দেখা। বারবার মর্গের কাছেই কেন দেখা হয় সিগন্যাল বোঝা উচিত ছিল তখন। এবারে আমার মধ্যে একটু কনফিডেন্স এসে গেছিল৷ আমি সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম - নাম টা কি বললে না তো?

মেয়েটা এবার নির্বিকার ভাবে বললো - অপর্ণা। তোমার নাম কি?

আমি আবার চাপ খেয়ে বললাম - ধর্মদাস৷

অপর্ণা হেসে বললো - ছি৷ এটা নাম !!

- আর কি করা যাবে। নাম তো পাল্টানো যায়না। কাজ পাল্টানো যায়।

মেয়েটা শুনে মুখটা একবার বেঁকিয়ে বললো - তুমি কোন ইয়ারে পড়ো?

- ফার্স্ট ইয়ার। তুমি কোথায় পড়?

- আমিও ফার্স্ট ইয়ার। যাদবপুর।

মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে এরপর বললো - আমি একটা জিনিস চাইবো দেবে?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। শুনেছিলাম যদু বংশের মেয়েরা চাপের হয়।
মেয়েটা একটু থেমে একটু ন্যাকামি করে বলে চললো - আসলে এত সুন্দর ওয়েদার। ঠান্ডাও লাগছে। একটু লজ্জা লাগছে কারণ প্রথমবার কথা বলেই জেনেরালি কেউ এটা চায়না। তুমি যদি না বলো কোন ব্যাপার না।

আমি জানিনা আমি কি ভাবছিলাম। কিন্তু আমার ঘাড়টা বললো - অবশ্যই।

মেয়েটা বললো - একচুয়ালি অনেক সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আমাকে বাড়িতে বলছিল একটা লেপ কিনে আনতে। তুমি আমার জন্য একটা লেপ কিনে এনে বাড়িতে দিয়ে যেতে পারবে??

আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এটা কিরকম হল। ভেবেছিলাম এক। চাইল আর এক।
মুখে বললাম - সিউর, সিউর। কিন্তু আমি কি লেপটা নিয়ে তোমার বাড়ি অব্দি দিয়ে আসবো?

মেয়েটা বললো - ও না না। তুমি আমার নাম্বার নাও। এখানে এসে ফোন করবে। আমি এসে লেপ টা নিয়ে নেবো।

"বাবা কেন চাকর সিনেমা " টা আমি দেখেছি। এখানে সিনটা ছিল " হিরো কেন চাকর "। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছিল - নিয়তির একি খেলা!
সব আমার পাপের ফল। ভাবতে ভাবতে আমি রুমে এলাম। রুমের দরজা খুলেই দেখি, অরুণ দা, শীলু, ভগা, বিশু, নীল আমার দিকে একদৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত শিকারির মত গম্ভীরভাবে চেয়ে আছে। শীলু প্রথম সেই বরফশীতল নিস্তব্ধতা ভেংগে বললো - অতক্ষণ কি কথা কইছস মাইয়াটার লগে?
অরুণ দা এতদিনে কাতুকুতু খেলার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অরুণ দা বললো - কি আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় কেয়া নাকি?

আমি কাউকে আসল ঘটনা বলতে পারলাম না। বললেই আমার প্রেসটিজ পাংচার৷ আমি বিশু আর ভগাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। ওদেরকে খুলে বললাম৷ ওরা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো। আমি বললাম - আমি না টা কিভাবে বলতাম?
বিশু বললো- সেটাও ঠিক৷

আমরা তিনজন লেপ বয়ে আনলাম। বিশু যেতে রাজি হল একটাই শর্তে। ওকে অপর্ণার সাথে আলাপ করিয়ে দিতে হবে৷ আমিও বললাম - কেউ যেন আসল ঘটনা আর না জানে।

অপর্ণাকে ফোন করতেই চলে এল। এসে বললো - ওর বাবা খুব রেগে গেছে আমাকে দিয়ে লেপ বইয়ে আনা করিয়েছে বলে। আমাকে ডেকেছে।

আমি চাপ খেয়ে বললাম, আমি গেলে নীল,বিশু আর ভগাকেও নিতে হবে।
মেয়েটা বললো ঠিক আছে। যেতে যেতে বিশু মেয়েটার সাথে নোংরামি শুরু করলো। হঠাৎ বলে উঠলো -" তে ভেস্ মুই হারমোসো।"
অপর্ণা তাকালো। বিশু বললো - "এটা স্প্যানিশে, তোমাকে সুন্দর লাগছে। "
অপর্ণা "ও" বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

(To be continued)
(Share the story with your friends if you like it.. Follow the blog to stay connected) 

Monday, March 2, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | দ্বিতীয় পর্ব | প্রথম সবকিছু |

সেদিন পূর্ণিমার রাত ছিল। পার্ট পরীক্ষায় একটু বেশি নাম্বার পাওয়ার অপরাধে আমার সাথে বিশুকে আলাদা করে দিয়ে বাকিরা একসাথে পড়তে বসেছে। আমরা জানি এই ছেলেমানুষী রাগটা একবেলার খুব বেশি হলে।  শিলু সবচেয়ে বেশি পেয়েছে। ও সবাইকে যেচে জিজ্ঞেস করছে - কত পাইলা মামা?
যাই হোক, আমি ঠিক করলাম আমি আর বাকিদের সাথে না পড়ে শিলুর সাথেই পড়বো। আমি আর বিশু এনেক্স বিল্ডিং এর ছ'তলার ছাদে বসেছিলাম। চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিশুকে বলছিলাম - ভাই চাঁদটাকে দেখ্।

বিশু - আর দেখে কি হবে? তুই জানিস, ওই যে গান্ডু মালটা.. প্রকাশ... শুয়োরের মত মুখ। ওরও গার্লফ্রেন্ড আছে। আর তোর আর আমার কি আছে? কয়েক নাম্বার বেশি?

আমি - সত্যি ভাই, আমরা একেবারেই অকর্মণ্য। জীবনে কিছুই হবেনা। সেই বাপ গুলো হস্টেলে ছেড়ে দিয়ে গেছে ট্যাংকির সাথে, খোঁজ ও নেয়না। নিজেকে কেমন খোলা ষাঁড় মনে হচ্ছে।

শিলু কোথা থেকে ছাদে এসে আমাদের কথা শুনতে পেয়ে উত্তর দিল - এটা কি কইলা। জীবনকে পজিটিভলি নিতে লাগবা ৷ মেয়েরা আইসলে পোষা প্রাণী পছন্দ কইরে। মাইনুষ না।

বিশু - ঠিকই। উঠতে বসলে উঠো। বসতে বললে বসো।  দুষ্ট গোরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো। চল ধীরু (আমি), সিগারেট খাবো।

আমি - ভাই , আমি খাইনা।

বিশু - আরে বাঁড়া, খাইনা কি। আমিও তো খাইনা। প্রেমও তো করিস না। তাবলে কি সারা জীবন করবিনা৷ সবকিছুরই প্রথম হয় একদিন। চল্। আজ প্রথম সিগারেট খাবো। গার্লফ্রেন্ড ও হয়ে যাবে।

শিলু রাজি হলনা। আমি আর বিশু সিগারেট খাবো বলে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি আমার সিনিয়ররা লোলুপ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সিনিয়রদের কাছে আমরা হলাম মুরগী আর সিনিয়র রা হল ফ্রাস্ট্রেটেড ক্ষুধার্ত নেকড়ে।
এখানে সিগারেট খেলে আমাদের খবর আছে। আমার রুমমেট প্রবাল দা সিগারেট খেতো। ঠিক করলাম রুমে কোন সিগারেট থাকলে ওটাই দুজন মিলে দরজা বন্ধ করে মেরে দেবো। যেমন কথা তেমন কাজ। দরজা বন্ধ করে দাদার সিগারেট টা সুন্দর করে মেরে দিলাম। শুরুতে একটু কাশি হল বটে। কিন্তু খেয়ে মাথাটা দুজনেরই অল্প অল্প ঘোরাচ্ছিল।
তারপর ঠিক করলাম আমি, বিশু, ভগা আর নীল মিলে প্রথম কোলকাতায় সিনেমা দেখবো। আমরা চারজনেই মফস্বল থেকে আসা ছেলে। ফলে কোলকাতায় প্রথম সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা ছিল খুব উত্তেজনাপূর্ণ। ঘটনা ঘটলো ফেরার সময়। এলিট সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে চারজন এস.এন.ব্যানার্জী রোডে দাঁড়িয়ে আছি ফেরার বাস ধরবো বলে। আমি অনেক্ষণ থেকেই লক্ষ্য করছিলাম সব বাস, ট্যাক্সি ধর্মতলার দিকে যাচ্ছে। উল্টোদিক থেকে কেউ আসছেনা। যারা এটা পড়ে অবাক হচ্ছেন তাদের বলি, তখন সবে মোবাইল এসেছে। মোবাইলে গুগল ম্যাপ বা নেট কিছুই নেই। আমাদের কোলকাতা সম্পর্কে ধারণা ছিল শূন্য। আর মফস্বল থেকে এসে ওয়ান ওয়ে রোড সম্পর্কে ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি বললাম সবাইকে - ভাই আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।

নীল বললো - ভাই, চাপ ই নাই। এত ধৈর্য কম কেন। একটু অপেক্ষা কর। ঠিক কিছু না কিছু চলে আসবে। নাহলে হেঁটে চলে যাবো।

বিশু বললো - না বাঁড়া আমি হেঁটে যাবোনা। আমার ল্যাদ লাগে।
এরকম ভাবে তিরিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর আমি আর থাকতে না পেরে শিবেন কে ফোন করলাম সমস্যাটা জানিয়ে। শিবেন বললো - আরে ওটা ওয়ান ওয়ে রোড। তোরা কাউকে জিজ্ঞেস করে লেনিন সরণীতে চলে যা। বাস পেয়ে যাবি।
আমি বললাম - ভাই তুই তো ডন। কোলকাতার সব রাস্তা তোর মুখস্ত, বল।
শিবেন বার খেয়ে গেল। বললো - ভাই, আমি না রোজ সকালে বেহালা থেকে ময়দান জগিং করতে করতে আসি। তারপর বাস ধরে ফিরি।
তারপর এরকম অনেক শিবেনের কাহিনী শোনার পর আমরা বাস ধরে ফিরলাম। হোস্টেল ঢুকছি। মর্গের কাছে একটা নিরিবিলি জায়গায় কোণটা ঘুরবো, এমন সময় মুখোমুখি দেখি সেই মেয়েটা। মানে আমার জানালা দিয়ে যাকে দেখা যায়। আমরা চারজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাদের দেখে মেয়েটাও হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
বিশুকে ফিসফিস করে বললাম - কিরে গিয়ে কথা বল৷ একদম নির্জন তো। তুই না বিশাল গার্লফ্রেন্ড চাস৷

বিশু -- আজ আমার দিনটা শুভ নয়। আর ল্যাদ লাগছে। তুই বল।

আমি -- আমি বলতেই পারি। কিন্তু যেহেতু শীলু বুক করে রেখেছে, তাই বলবোনা। আমি বন্ধুদের কথা ভাবি। ভগা, তুই না শাহুরুখ খানের ভক্ত। যা।

ভগা -- ভাই, চুপ কর। মেয়েটা শুনতে পেলে কি ভাববে।

আমি -- শালা, এমনিতে বিশাল ডন। আর মেয়ে সামনে দেখতেই হাওয়া বেরিয়ে গেল। নীল তুই যা না।

নীল আমাকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় মেয়েটা হেসে বললো - কিছু বলবে?
আমরা এর ওর দিকে মুখ চাওয়াচায়ি করে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। নীল দেখলাম এক ছুট্টে হস্টেলে ঢুকে গেল।
আমি কি করবো বুঝতে না পেরে মেয়েটাকে খাবি খেতে খেতে বললাম - হেলো, হাউ আর ইউ। আই এম ফাইন। থ্যাংক ইউ।
বলে আমিও দৌড় লাগালাম। আমার পেছনে দেখলাম বিশু আর ভগা ছুটে ছুটে আসছে। বিশু বলছে - ভাই ছুটিসনা। আমি ছুটতে পারছিনা। ল্যাদ লাগছে।

চাপ খাওয়ার কথা ছিল মেয়েটার। খেলাম আমরা। চারজন ছিলাম। হস্টেল এসে আমরা ঠিক করলাম এই কথা যেন পাঁচকান না হয়। কারণ তাহলে আমাদের মান ইজ্জত থাকবেনা। যাই হোক, সেই ছিল আমার কোন মেয়ের সাথে মুখোমুখি প্রথম ইন্টার‍্যাকশন। মনে মনে বুঝলাম আমাদের মত ছেলেরা শুধু ঝাড়ি মারতেই পারে, মুখোমুখি কথা বলার মত পরিস্থিতি এলেই আমাদের মধ্যবিত্ত সত্ত্বা বলে - ভাগ্ ডি কে বোস।
 ইতিমধ্যে আমাদের হস্টেলে আরো একটি ছেলেকে দেখে আমাদের খুব জ্বলতো। তার নাম নিরভ্র।
ছেলেটি এমনিতে ভালো। কিন্তু তার দোষ হল সে প্রচুর পড়াশোনা করে।  আর ভগা র ওর উপর প্রচুর ক্ষার। ব্যাপারটা খুলেই বলি তাহলে। একদিন কি হয়েছে, আমি রাতে খেয়ে এসে বাথরুমে গিয়ে দেখি ভগা জিভ বের করে জিভে সাবান ঘষছে। আমি তো দেখে থ। আমি বলি- কি রে কি হল।
ভগা বলছে- আর বলিস না এত ইনফেকশন চারিদিকে। এই যে মেসের জঘন্য খাবার টা খেলাম তাতে যে কত এন্টামিবা আছে তার ঠিক আছে, তাই জিভকে স্টেরিলাইজ করছি।

ভগা র এটা ছাড়াও আরো অনেক অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের উপসর্গ ছিল। ও সিগারেট খেয়ে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ এ কুলকুচি করতো। দরজায় ছিটিকিনি আটকালে হাত দিয়ে না আটকে লাঠি দিয়ে করতো৷ অন্যের হাতের ইনফেকশন যাতে না চলে আসে। একদিন ক্যান্টিনে সবাই খাচ্ছি৷ ভগা সিগারেট খেয়ে ওরকম মাউথওয়াশ সবার সামনে বের করে কুলকুচি করছিল। নিরভ্র সেটা নিয়ে সবার সামনে কি খিল্লি করলো। আমরাও তো ভালো ছেলে নই। আমরাও ওর সাথে খিল্লি করলাম। কিন্তু বুঝিনি সেটা ওর খারাপ লাগবে। ভগা আমাকে মাঝরাতে সেদিন ডেকে বললো - আমি জানি আমার কিছু কাজে আমাকে পাগল লাগে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমাকে এটা করতেই হয়।

আমি বুঝলাম ওর খারাপ লেগেছে। নিরভ্র র থেকে ভগার গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আমি, বিশু আর নীল মিলে প্ল্যান করলাম নিরভ্র কে নিয়ে একটা কান্ড করতে হবে। কাজটা সহজ করে দিল শীলু। শীলুর কাছে বিশ্বের যত আননোন নাম্বারের সিম ছিল। তখন আধার কার্ড লিংক টিংক এর গল্প ছিলনা। আর নীল খবর দিল যে নিরভ্র র ক্রাশ হল আমাদের ব্যাচের একটা মেয়ে সংগীতা। ইতনা হি কাফি হ্যায়। মেয়েদের সাথে সরাসরি কথা বলার ক্ষমতা হয়তো তখন ছিলনা। কিন্তু আননোন নাম্বার থেকে মেয়ে সেজে মেসেজ তো করা যায়। শুরু হল মেসেজে নিরভ্রর সাথে চরম প্রেমালাপ। একদিন নিরভ্র সকালে লিখে পাঠালো - "আজ ক্লাসে তোমার দিকে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকবো। দেখবো তুমি ফিরে তাকাও কিনা। "
সেদিন ক্লাসে গিয়ে দেখি নিরভ্র ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সংগীতার দিকে। সংগীতা জানেও না কেউ তার দিকে এরকম তাকিয়ে আছে। ভগাকে সব বললাম। ভগা তো বিশাল মজা নিল। সেই ছিল আমাদের একসাথে করা প্রথম শয়তানি। তবে আজ যখন ভাবি সেইসব প্রথম সবকিছুর কথা তখন মনে হয় - এই কাজ টা করা ঠিক হয়নি।
মেসেজ বন্ধ করার পর যখন নিরভ্র র রুমে গেছিলাম তখন দেখি সে পড়া বন্ধ করে ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।
ভগা বললো - বুঝলি কাজটা ঠিক হয়নি। যাই হোক, প্রথম সেমিস্টার আসছে। আমাদের পড়তে হবে।

নীল বললো - ভাই, কেকেআর এর খেলা দেখতে যাবি?

ভগা - না ভাই, পড়তে হবে।

নীল - ভাই কেকেআর এর জার্সি শিয়ালদা তে একশো টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। পেছনে আবার লেখা "খান"।

ভগা - চল, দেখে আসি। তবে স্টেডিয়ামে দেখতে গেলে অনেক টাকা লাগবে। সিনেমা হলে গিয়ে দেখবো। বিশু যাবি?

বিশু - না ভাই, ল্যাদ খাবো।

ভগা - তুই গাঁড় মারা। আমরা তিন খান যাবো কেকেআর এর ম্যাচ দেখতে। তারপর পড়তে বসবো।

( To be continued)
( Please follow the blog if you like my work and share among your friends)
( এই সিরিজের সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক)

Monday, February 24, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | প্রথম পর্ব | Pilot |


(এই রচনার সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক)
স্ক্রোল করতে করতে যদি মনে হয় একটু আমার জীবনের গল্প ও শুনে যাবেন। আমি ধর্মদাস। বয়স ৪০ বছর। তা বলে কাকু, জ্যেঠু বলে ডাকবেন না। আমি হলাম গিয়ে ২০৩০ সালে দাঁড়িয়ে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ১৮ বছরের যুবক। আর বাকি চার বছরটা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছি। আসলে প্যান্ট ভেজাতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম রিভিশন দেওয়া হয়নি। তাই মানে কথা, মনে পড়ছেনা। আমাদের সমবয়স্ক পাঁচ বন্ধুর একটা গ্রুপ আছে। ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম জীবনটা আসলেই ফাঁকা। তোমার জন্য কেউ ভাববেনা। কলেজে পড়াকালীন হস্টেলে যখন প্রথম এসেছিলাম  তখন হ্যান্ডওয়াশ টা বারান্দার পাশে জানালায় রেখে আসার ভুল করেছিলাম৷ দুই মিনিট পরে তাকিয়ে দেখি সেটা আর নেই। আধ ঘন্টা পরে দেখি সেটি আবার যথাস্থানে। মানে কোন জনাব সেটি নিজের মনে করে নিয়ে গেছে এবং যথাস্থানে রেখে গেছে। কিন্তু যখনই বাথরুমে আধ ঘন্টার কার্য কারণ বিবেচনা করেছি ওই হ্যান্ড ওয়াশটা আর ব্যবহার করতে পারিনি। ওই অজানা ব্যক্তিই ওটি ব্যবহার করে শেষ করেছেন। এত নির্লজ্জ শেষ হওয়ার পর আবার নোট ও রেখে গেছিল - " ওরে বাল, হ্যান্ডওয়াশ টা কি আমার বাবা কিনে দিয়ে যাবে? "
সেদিন থেকে শেখার শুরু। পৃথিবীটা আসলে এইরকমই। ব্যাপারটাকে কমেডি হিসেবে দেখি। কারণ কমেডি ইজ দ্য বেস্ট রেমেডি।
তো আমিও একটা কাগজে লিখে হ্যান্ড ওয়াশের কাছে লিখে দিলাম - "হে মহানুভব, আমি আপনার মত মহাত্মার দর্শনাকাঙ্ক্ষী। আপনার উদ্ঘট রূপ সচক্ষে দর্শন করতে এই গরীব জীবাত্মার মন চায়। "

তারপর আমার সাথে সেই মহাত্মা নিজে পরিচয় করতে আসে। সে হয়ে যায় আমার কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু। ছেলেটি আমারই ব্যাচের। তাই খুব কম দিনেই আমরা এত কাছাকাছি চলে এলাম যে আমাদের নামে সমকামিতার গুজব রটতে লাগলো। এটাকেও আমরা কমেডি হিসেবে নিতাম। একদিন আমি আমার অমিত শাহের সাথে হস্টেল পরিদর্শনে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম একটি রুমে একজন হৃষ্টপুষ্ট যুবা উলংগ হয়ে গিটার জড়িয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। এতটাও মোটা নয় যে তার চারপাশে স্পেস টাইম কার্ভেচার বেঁকে যাবে, কিন্তু বেশ নাদুস নুদুস টাইপের। ভগার মতে ছেলেটি যদি আরেকটু মোটা হত ওর অন্ডকোষ দুটো ওকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করতো। তাকে দেখে চলমান কমেডি র এনসাইক্লোপিডিয়া মনে হল। তাকে ডেকে তুললাম। সে যেন কিছুই হয়নি ভেবে গামছা পরে নিল। তাকে নিয়ে পরেরদিন কলেজে ক্লাস করতে গেলাম। এতক্ষণ বলা হয়নি আমরা নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষে তখন এম.বি.বি.এস পড়ি। আমি ধর্মদাস, নাম আগেই জানেন। ডাক নাম ধীরু। থাকতাম এনেক্স্ বিল্ডিং এর একটি রুমে। আমার রুম থেকে শিয়ালদহ স্টেশন ও তত্সংলগ্ন বিশাল উঁচু ফ্ল্যাটের মাউন্টেন ভিউ পাওয়া যেত। আমার পাশের জানালাতে ছিল ডক্টরস্ কোয়ার্টার। আমার রুম ছিল বাথরুমের প্রক্সিমালি। হ্যান্ডওয়াশ চোর এর নাম ভগা। সে আমার ফ্লোরেই থাকতো বাথরুম থেকে ডিস্টালি।  আর ওই হৃষ্টপুষ্ট যুবার নাম নীল। ও থাকতো আমাদের ফ্লোরের নর্থ উইঙ্গে। আমার রুমের জানালার পাশেই যে ডক্টরস্ কোয়ার্টার ছিল, সেখানে একটি মেয়ে রোজ সন্ধ্যেবেলা ছাদে আসতো। ব্যাপারটা প্রথম লক্ষ্য করে শিলু। শিলু আমার উপরের ফ্লোরে থাকতো। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমার রুমে ঝটিকাসফর সেরে যেতো। শিলু একদিন আমার রুমে এসে মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে বললো - "ওই দ্যাখ্, মাইয়া। "
আমি একটু রবীন্দ্রনাথ ভক্ত।
"আমার আনন্দ সকলের আনন্দ হউক " বাণীতে বিশ্বাসী। ভগা কে ফোন করে ডাকলাম - "ভাই, ব্যস্ত? "
বললো - "হ্যাঁ পড়ছি "
আমি কাব্য করে বললাম - "সন্ধ্যের সূর্যাস্তের মাঝে অপ্সরা দেখতে চাইলে রুমে এসো"
ভগা ফোনটা কেটে দিল। অগত্যা আমি আর শিলু দুজন আবার কাঁধে কাঁধ রেখে গালে হাত দিয়ে মেয়ে দেখাতে মনোনিবেশ করলাম। ভগা আসবেনা ভেবে খারাপ লাগছিল, এমন সময় দেখি, ভগা শুধু নিজেই আসেনি, নীলকেও ধরে নিয়ে এসেছে কই, কই করতে করতে।
শিলু বললো - হবে কোন ডাক্তারের মাইয়া। আমি এক মাসে পটাইয়া ফেলমু।
এরই মাঝে বাজি ধরাও হয়ে গেছে দু টাকার। যদি শিলু না পটাতে পারে এক মাসে তাহলে দু টাকা দেবে আমাদের। যাই হোক্, এরকমই চলছিল আমাদের জীবন। হঠাৎ জীবনে এসে গেল প্রথম পার্ট পরীক্ষা। ভগা বললো -" চল্ হস্টেলে কে কেমন পড়ছে সরেজমিনে তদন্ত করে আসি। "
নীলের রুমের দিকেই যাচ্ছিলাম, দেখলাম নীলের পাশের রুমে একটা ছেলে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। নীলের কাছে শুনলাম সে নাকি আমাদেরই ব্যাচের। কিন্তু প্রচুর অলস৷ ও নাকি এত অলস যে ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিলেও গ্র‍্যাভিটি স্লো হয়ে যাবে। কারণ ওর অবাধে পতনশীল হতে কিঞ্চিৎ ক্লেশ অনুভব হবে। ট্রেভর চ্যাপেল নাকি টাইম মেশিনে এসে ওর কাছে আন্ডার আর্ম বোলিং শিখেছিল৷ কারণ ফুল আর্মে ল্যাদ লাগে।
 ছেলেটির নাম - বিশু।
বিশুকে উঠিয়ে আমরা পড়তে বসালাম। রামায়ণের প্রিয় চরিত্র যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিশু রাম-রাবণ-হনুমান-মায় ইন্দ্রজিৎ কারো নাম বলেনি।
ওর আইডল হল কুম্ভকর্ণ। অলস আমরাও কম বেশি ছিলাম। কিন্তু ও হাইবেরনেশন জিনিসটা একটু বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিল। বেশ কিছুদিনের মধ্যেই আমরা চারজন মানে আমি, ভগা, নীল ও বিশু খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। আমরা ক্লাসে পেছন থেকে বসা শুরু করতাম। একদিন আমি এরকম প্র‍্যাক্টিক্যাল ক্লাসে বসে আছি। ভগার জ্বর, তাই আসেনি। নীল আর বিশু অন্য প্র‍্যাক্টিক্যাল ব্যাচে। তাই একাই বসেছিলাম। পাশ থেকে একটা ছেলে ফিশফিশ করে বললো - "ক্লাস শুনতে ভালো লাগছে? "
আমি বললাম -" না, এটেন্ডেন্স এর জন্য আসা। "
সে বললো - " কেন প্রক্সি দেওয়ার লোক নেই? আমরা তো পালা করে ক্লাস করি। "
আমি বললাম -" না আরেকজনের জ্বর। "
সে বললো - " তোর নাম কি? "
- " ধর্মদাস"
ছেলেটি খিক খিক করে হেসে উঠলো। ক্লাসের ম্যাডাম আমাকে দাঁড় করিয়ে বললেন - "হেই, হোয়াট আর ইউ টকিং?"
বাংলা মিডিয়াম আমি থতমত খেয়ে বললাম - "নাথিং টকিং "।
গোটা ক্লাস এতক্ষণে চুপ ছিল। আমাকে মুরগীর মত আওয়াজ বের করতে দেখে হেসে উঠলো।
ম্যাডাম বললেন - "নাথিং টকিং!! প্লিজ গেট আউট। "
আমি বললাম - "নো ম্যাম, আই ডোন্ট থিংক সো। "
এবার ম্যাডাম ট্রোল হয়ে গেলেন। ম্যাডাম বুঝলেন পচা শামুকে পা কেটে গেছে। বাংলা মিডিয়াম যে কি জিনিস! যাই হোক্, ম্যাডাম আবার পড়াতে শুরু করলেন আমাকে বসতে ইশারা করে। পাশের ছেলেটি হাসতে হাসতে বললো - "আমার নাম শিবেন। বেহালা থেকে রোজ আসি। শিবের প্রসাদ খাবি ক্লাসের পর?  এই যে ক্লাসের জাংক মাল গুলো গিলছিস পুরো ক্লিন হয়ে যাবি। "
আমি তখন বুঝতে পারিনি শিবের প্রসাদ কি? ওকে ভুলভাল ছেলে ভেবে হস্টেলে ফিরে এসেছি।
আমার রুমমেট ছিল দুজন সিনিয়র দাদা। আমার এক বছরের সিনিয়র দুজনে। একজনের নাম অরুণ দা, আরেকজন প্রবাল দা। অরুণ দা ছিল পড়াকু টাইপের। কিন্তু যখন জুনিয়র পেতো বিষাক্ত হয়ে যেতো। ও তোতাপাখির মত বইএর কাগজ গিলতো, আর যে হতাশা তৈরি হত সেটা জুনিয়রকে গালাগাল করে বের করে দিত। আমি এটাকেও কমেডি হিসেবে দেখতাম। প্রবাল দা আবার একটু অন্যরকম। জুনিয়র পেলে জিভ থেকে জল ঝরতো, তার সাথে পাগল ছিল। আমাদের হস্টেলে যে চা বিক্রি করতো রুমে রুমে তার নাম ছিল পলাশ দা। পলাশ দা শাহুরুখ খানের ভক্ত ছিল। প্রবাল দাও। শাহুরুখ খানের যখন সিনেমা মুক্তি পেত,  প্রবাল দা আর পলাশ দা দুজন মিলে পার্ক সার্কাসে সিনেমার লিফলেট বিলি করতো। চুলটা ছিল অদ্ভুত। একটা কেশ বিন্যাস নেমে আসতো কপালের উপর আর মাঝে মাঝে মাথা ঝাঁকিয়ে সেটা মাথায় তুলে নিতো দাদা। তো আমি এই বাংলা মিডিয়াম, একটা মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। শিবের নাম শুনেছি, কিন্তু পূজো নিয়ে উত্সাহ না থাকায় প্রসাদের ব্যাপার টা জানিনা। এমনিতেও ভেঙ্কটেশ প্রসাদের বোলিং বেকার লাগতো। তবুও কৌতূহলবশত প্রবাল দাকে এসে জিজ্ঞেস করলাম - দাদা শিবের প্রসাদ কেমন খেতে?

প্রবাল দা আঁতকে উঠলো। অরুণ দা বই বন্ধ করে নেমে এলো। তারপর আমাকে সে কি অপূর্ব ভাষার প্রয়োগ। আমাকে জিজ্ঞেস করলো -
সিগারেট খাস?
আমি বললাম - না, আমি শুধু দুধ খাই।
- দুধ খায়! তুই উপুড় হয়ে চার পায়ে বস। আর তোর হোমো পার্টনার ভগাকে ডাক। সে তোর দুধ খাবে।

সে কি লজ্জার কথা। শেষে একটা উত্তরে ব্যাপারটা শেষ হয়েছিল।
আমাকে অরুণ দা বললো - তুই প্যান্টের নিচে কোন কোম্পানির পরিস রে?
আমি বললাম - বাটা কম্পানির হাওয়াই চপ্পল।
এই সেমসাইড গোলে আর এগোয়নি। সেদিনের মত মাঝরাতে চাঁটন টা শেষ হয়ে গেছিল। চাঁটের এফেক্ট এমন ছিল যে ভগা আমার রুমে এলে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে নিত ওই দুই দাদা আছে কিনা। যাই হোক, দাদাদের কাছে কোন উত্তর না পেয়ে অগত্যা বাকি চারজনকেও ব্যাপারটা বললাম - "ভাই, শিবেন বলে একটা ছেলের কাছে শিবের প্রসাদ পাওয়া যায়। বলেছে খেলে নাকি সব জাংক ক্লিয়ার।"

বিশু বলল - "কদিন ধরে প্রচন্ড কনস্টিপেশন হচ্ছে। চাপ দিতে খুব ল্যাদ লাগে। এই শিবের প্রসাদ টা তো চেখে দেখতেই হয়। "

পরেরদিন শিবেন কে হস্টেলে ডেকে আনলাম। সেই আমাদের পাঁচজনের একসাথে পথ চলা শুরু।

(এরকম লেখা আরো পেতে ব্লগটি ফলো করে রাখুন ইমেল আই ডি দিয়ে। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন, নিজের এরকম বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না)
( To be continued...)  

Saturday, February 15, 2020

বোহেমিয়ান ডায়েরি - গড় পঞ্চকোট সার্কেল, পুরুলিয়া

"খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে "
এই ছড়া ছোটবেলায় মা, ঠাকুমার মুখে নিশ্চয়ই সবাই শুনে থাকবেন। এই বর্গীদের সন্ত্রাস বাঙালী মননে কতটা ব্যাপক ছিল এটা থেকে আন্দাজ করা যায়। এই বর্গী অষ্টাদশ শতাব্দীর লুটতরাজপ্রিয় অশ্বারোহী মারাঠা সৈন্যদলের নাম। ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দশ বছর ধরে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিয়মিতভাবে লুটতরাজ চালাত এরা। বর্গীরা পাঞ্চেত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন চালাতো ওই সময়।
 গড় পঞ্চকোট সার্কেল বলতে পাঞ্চেত বা পঞ্চকোট পাহাড়, জয়চন্ডী পাহাড়, পাঞ্চেত ড্যাম, বড়ন্তী পাহাড় ও লেক, মুরারডি ড্যাম, বোরো পাহাড় ইত্যাদি। এই পাহাড় গুলো সবই ছোটনাগপুর মালভূমির অংশ।
এটি এমন একটা সার্কেল যেখানে ইতিহাস, ভূগোল ও প্রকৃতির মেলবন্ধন ঘটে৷ যাই হোক্, আমি আর আমার ভাই একদিন বেরিয়ে পড়লাম অভিযানে।  আমাদের নির্দিষ্ট কোন প্ল্যান কিছু ছিলনা। কখন কি খেতে পাবো ঠিক নেই, তাই হাওড়া থেকে কিছু শুকনো ফল কিনে নিয়েছিলাম। রাতে হাওড়া স্টেশনে খেয়ে চক্রধরপুর এক্সপ্রেসে চেপে ভোর ৫.১০ এ নামলাম আদ্রা জংশনে। যখন নামলাম তখনো আদ্রা তে ভোরের আলো ফোটেনি আর কনকনে ঠান্ডা। আমরা ভালোরকম শীতের পোশাক গায়ে চাপিয়ে নিলাম। আমার ভাই জিজ্ঞেস করলো - এরপর কোথায়?
আমি বললাম - জানিনা। আমরা ট্রাভেল করবোনা, এক্সপ্লোর করবো।
গুগল ম্যাপে দেখলাম আদ্রা থেকে সব থেকে কাছে জয়চন্ডী পাহাড়৷ তিন কিলোমিটার দূরত্ব৷ দিনের শুরুতেই বেশি শক্তিক্ষয় করে লাভ নেই, তাই না হেঁটে আমরা অটোতে উঠলাম। অটো রিজার্ভ করে গেলে যে যা খুশি ভাড়া বলে, তাই আমরা পাবলিক অটো তেই উঠলাম৷ জয়চন্ডী পাহাড় মানে যেখানে "হীরক রাজার দেশে" সিনেমার কিছু শুটিং হয়েছিল। অটোতেই অটোচালক কে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, জয়চন্ডী পাহাড় স্টেশন থেকে মধুকুন্ডা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটো ধরে বড়ন্তী পৌঁছানো যাবে। তবে অটো সহজে পাওয়া যায়না। তাই রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। অটো থেকে নেমে আমরা কিছুটা হেঁটে জয়চন্ডী পাহাড়ের পাদদেশে এলাম। যে পাহাড়ে চন্ডী মন্দির আছে সেখানে সিঁড়ি করা আছে। যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের না ওঠা বা সাবধানে ওঠাই ভালো। নাহলে সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির এ পৌঁছাতে খুব একটা কষ্ট হবেনা। সিঁড়ির দুধারে কিছু মানুষরূপী জানোয়ার দেখলাম প্রচুর প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলে রেখেছে। মানুষ শিখবে কবে? মন্দির পৌঁছানোর আগেই একটা ভাঙা টাওয়ার সিঁড়ির ডানদিকে পড়বে। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটা ওয়াচ টাওয়ার ছিল একসময়ে। জানিনা কতটা সত্যি। জয়চন্ডী পাহাড়ের বাকি চূড়াগুলো কে মনে হচ্ছিলো শিবলিঙ্গের মত। সূর্য ওঠার আগে চাঁদ তাদের মাথায় শোভা পাচ্ছিল। পাহাড়ের চূড়া থেকে যখন চারপাশের সৌন্দর্য কে আমরা উপভোগ করছি, তখন কুয়াশার লেপ সরিয়ে সূর্যের ঘুম ভাঙলো।
 যেন মনে হল গুপী গাইন কানের ধারে গাইছে,
দেখো রে নয়ন মেলে, জগতের বাহার, দিনের আলো ঘোচায় অন্ধকার।
বেশিক্ষণ আমরা ওখানে থাকিনি। ট্রেন ধরে আমরা মধুকুন্ডা নামলাম। ওখান থেকে ট্রেকারে বড়ন্তী লেক।  তখন সকাল দশটা বাজে। বড়ন্তী লেক সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত। তবে আমার মনে হলনা দিনের বাকি সময়ের সৌন্দর্য ও কোন অংশে কম। বড়ন্তী লেকের চারিদিকের বাঁধ ধরে আমরা হাঁটতে লাগলাম বড়ন্তী নদী পেরিয়ে লেকের ধারের বাঁধের রাস্তা দিয়ে। জায়গাটার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় লোকাল হোটেলগুলো তৈরির জন্য ইঁট মাটি পুড়িয়ে  এখানেই তৈরি হয়। আমরা একটা রিসর্টে তাঁবু ভাড়া নিলাম। তাঁবুতে ব্যাগ রেখেই আমরা কিছু খেয়েই পাশের পাহাড়ে ওঠার পথ খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম। স্থানীয় গ্রামের মানুষদের জিজ্ঞেস করে জানলাম ওরা এই জংগল পেরিয়েই পাহাড়ে ওঠে। জংগলে বুনো শুয়োর থাকতে পারে বলে সাবধান করে দিল আমাদের। আমরা দুজন ওসবে পাত্তা না দিয়ে জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে পাহাড়ে ওঠার রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। হঠাত্ আমাদের চারিদিকে খসখস আওয়াজ হতে লাগলো। চারিদিকে চেয়ে দেখলাম, আমাদের চারিদিকে বুনো শুয়োর। আমরা কোনক্রমে ছুটে ওখান থেকে পালালাম। জংগলে ছুটতে গিয়ে আমার পা একটু কেটে গেল। যাই হোক্, এবার ঠিক করলাম, পাহাড়ে উঠে আর কাজ নেই, ফেরা দরকার। নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম, ফ্রয়েড সাহেব বলে গেছেন, "If you can't do it, Give up".. কিন্তু ফিরবো কি করে? যেদিকে তাকাই সেদিকে জংগল, ফেরার রাস্তা কোথায়! পথ হারালেই ভরসা গুগল ম্যাপ। মোবাইল খুলে দেখলাম নেটওয়ার্ক নেই। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর নেট পেলাম।  গুগলের সহায়তায় আমরা পীচ রাস্তায় ফিরে এলাম। তাঁবুতে ফিরেই ঠিক করলাম আর নয়, এবার লাঞ্চ খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়েই এখান থেকে পালাবো। দুপুরে হোটেলে অসাধারণ খেলাম। খিদেও পেয়েছিল চরম। খেয়ে দেয়ে আমরা দুজন তাঁবুতে ঢুকে একটু বিশ্রাম নিলাম। তাঁবুর মধ্যে হাল্কা রোদ এসে লাগছিল। আর একটা অদ্ভুত নেশা ধরানো মৃদুমন্দ হাওয়া দিচ্ছিলো। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল বিভিন্ন পাখির ডাক, আর মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে ট্রাক যাওয়ার আওয়াজ। আমরা দুজন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভাই কে বললাম - "বুঝলি, মানুষ চেনা কঠিন, তাই মানুষের কথা বলতে পারবোনা৷ কিন্তু কোন জায়গায় গিয়ে একটা রাত অন্তত না কাটালে চেনাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। "
ভাইও থেকে যেতে চাইলো। আমি বাথরুমে পা ধুতে গেলাম৷ ওখানকার ঠান্ডা জল হেঁটে হেঁটে ব্যথা হওয়া পা কে পুরো জুড়িয়ে দিল। আমি ঠান্ডায় স্নান করতে একেবারেই পছন্দ করিনা। তার উপর ঠান্ডা জলে? নৈব নৈব চ। কিন্তু এই জলে কি ম্যাজিক আছে জানিনা, গামছা নিয়ে চরম আনন্দের সাথে স্নান করলাম। গোটা শরীর ব্যথা করছিল দৌড়াদৌড়ি করে। পুরো শরীরটা যেন চাংগা হয়ে গেল। ভাইকেও বললাম স্নান করতে৷ ভাই স্নান থেকে ফিরে দেখলো আমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি। বিকেল সাড়ে তিনটেয় আমরা আবার বেরোলাম লেকের ধারে সূর্যাস্ত দেখতে। পরের দিন গড় পঞ্চকোট যাবো কিভাবে সেটা স্থানীয় মানুষদের কাছে জানলাম। বুঝলাম স্থানীয় মানুষেরা খুব কম বাইরে যান। গেলেও বাইক বা সাইকেলে। সারা দিনে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে ট্রেকার, তাও খুব কম। এইসব জায়গায় গেলে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই ভালো। কিন্তু গাড়ি ভাড়ার দাম শুনে ভাবলাম থাক। যেভাবে এখানে এসেছি সেভাবেই যাবো। সন্ধ্যে নামতেই বড়ন্তী লেকের চেহারা পুরো পাল্টে গেল। এই মায়াবী পরিবেশের ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বোরো পাহাড় ঘেঁষে সূর্য নামলো। ঠান্ডাও বাড়তে শুরু করলো। আমরা তাঁবুর ভেতর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলাম। এই শান্ত পরিবেশে হঠাৎ দূরের কোন হোটেলে বক্স বাজতে লাগলো। বেশিক্ষণ না বাজলেও এটা বুঝলাম এলাকাটায় বেশি মানুষ না আসা একদিক থেকে ভালো। স্থানীয় আদিবাসীরা শিক্ষিত মানুষদের থেকেও পরিবেশকে ভালোবাসতে জানে৷ রাতে মাংস ভাত খেয়ে আমরা শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। শোয়ার আগে ভাবছিলাম, জীবন যদি এতটাই সহজ সরল হয়, আমরা কেন তবে একে জটিল করে তুলি।
এত প্রতিযোগিতা, মারামারি, হানাহানি, নিজেকে এত বড় করে দেখানোর চেষ্টা.. প্রকৃতির কোলে মানুষ হলে মানুষ বোধহয় এত গাম্বাট তৈরি হতনা। আমরা যত প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি তত আমরা গাম্বাট তৈরি হচ্ছি। আগামী দুটো দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই কুড়িটা বছর আমাদের কাজের উপর নির্ভর করছে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ। আমরা যেভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করছি, সেভাবেই যদি করতে থাকি, তাহলে খুব শিগ্রি কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন এর শিকার হবে। বাকিরা রোগে মারা যাবে। যাই হোক, পরেরদিন সকালে উঠেই আমরা ট্রেকার ধরতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ঠিক সাড়ে আট টায় ট্রেকার ধরে আমরা পৌঁছলাম মধুকুন্ডায়।  সেখান থেকে বাস ধরে সরবড়ি। তারপর অটো ধরে পুয়াপুর মোড়ে নামলাম৷ পুয়াপুর মোড় থেকে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর রিসর্ট হেঁটে এক মাইল। আমাদের হাতে যেহেতু গুগল ম্যাপ রয়েছে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। পুয়াপুর মোড়েই বড় বড় কারেন্টের তার থেকে একটা বাজিং সাউন্ড পাওয়া যায়, শব্দটা আমার খুব ভালো লাগল। জংগলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা দিয়ে আমরা গান গাইতে গাইতে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। রুমে ব্যাগ রেখে খেতে এলাম। খেয়ে বেরিয়ে আমার এক স্কুলের ব্যাচমেটের সাথে দেখা। ও ঘুরতে এসেছে। আমরা ঠিক করলাম এখনই ফরেস্ট বাংলোর পেছনের রাস্তা ধরে পঞ্চকোট পাহাড়ে উঠবো। যেমন ভাবা তেমনি কাজ৷ রাস্তার শুরুতেই অনেক হনুমানের দাপাদাপিতে একটু ভয় পেলেও আমরা চুপচাপ চলে যাওয়াতে ওরা কিছু করলো না। কিন্তু মাঝপথে হল বিপত্তি। আমার ব্যাচমেটটির এক্রোফোবিয়া, মানে উচ্চতা তে ভয় থাকার জন্য। সে দেড়শো মিটার মত উঠে আর উঠতে চাইলোনা। আমি আর আমার ভাই অগত্যা দুজনেই উঠতে শুরু করলাম। যত উপরে উঠছি তত পথ খাড়াই হচ্ছে। আমার পায়ে ছিল সাধারণ কিটো জুতো। ট্রেকিং শু না থাকার জন্য মাঝে মাঝেই পা পিছলে যাচ্ছিল। একদম শেষ দিকে পথ এতটা খাড়া আর ওঠার সাহস হল না এই কিটো পরে। অগত্যা আবার নেমে এলাম। ফিরে স্নান করে আমরা খেয়ে দেয়ে আবার বেরোলাম পাঞ্চেত ড্যাম দেখবো বলে। হেঁটে পুয়াপুর মোড়ে এসে একটা ঝাড়খন্ডের অটোতে চাপলাম। এই বাহনের চালক বেশ সহজ সরল। নাম মানিক লাল৷ সে আমাদের বললো - টাকাটা বড় কথা নয়। আপনারা ঘুরতে এসেছেন আপনাদের ঘোরানো আমার কাজ।
পাঁচশো টাকায় সে ঝাড়খন্ডের ঝরণা ঘুরিয়ে আবার গড় পঞ্চকোট পাহাড় ঘুরে মন্দির ঘুরিয়ে ফরেস্ট বাংলোতে ছেড়ে দিতে রাজি হল। আগের দিন থেকে যা দৌড় ঝাপ করেছি আর করতে ইচ্ছে হলনা। পাঞ্চেত ড্যামে পৌঁছে বাহনের চালক মানিক লাল কে বললাম, তোমার সাথে একটা ছবি তুলবো। সে বাহনের আয়নায় চুল ঠিক করে আমার সাথে পোজ দিল। পাঞ্চেত ড্যামের রাস্তা দিয়ে আমরা ঝাড়খন্ড ঢুকলাম। সেখানে একটা স্নেক ক্যাম্প আছে। সেটা ঘুরে আমরা ধানবাদের একটা উষ্ণ প্রস্রবণ ঘুরে আবার পাঞ্চেত ড্যাম দিয়ে ফিরছি। এই ড্যাম না থাকলে দামোদর নদ যে কি ভয়াবহ সেটা এই ড্যামের জল দেখলে বোঝা যায়৷ প্রসংগত পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম ও মহারাজ দামোদর সিং।
 মানিক লাল কে বললাম - দূরের যে ওই পাহাড় দেখছো আমরা সকালে ওই পাহাড়ে উঠেছি।
মানিক লাল বললো - একবার উঠেছেন উঠেছেন, আর উঠবেন না৷ ওখানে ল্যাংরা বাঘ, চিতাবাঘ থাকে৷

  পরে জানলাম পঞ্চকোট পাহাড় ও তার আশেপাশের জংগলে চিতা, পাইথন, বুনো শুয়োর, হায়েনা সবই পাওয়া যায়। গড়পঞ্চকোট মন্দির পৌঁছাতে বিকেল নেমে এলে। ভাঙা মন্দিরগুলো যেন মাথায় একটাই লাইন এনে দিল - সাম্রাজ্যের অস্ত যায় সূর্যের মত। ওখান থেকে ফিরে এসে আমরা ঘুমিয়ে গেলাম। পরেরদিন উঠে আমরা আসানসোল দয়ে ফিরে এলাম। দুদিনে এত বড় জায়গা কতটুকু আর ঘোরা যায়। অনেক কিছুই বাকি থেকে গেল। তাই আবার যেতে হবে গড় পঞ্চকোট। অরণ্যের সংস্পর্শে এসে রাতে ভাবছিলাম আমরা যদি সাফল্যে দুঃখ আর ব্যর্থতাকে সেলিব্রেট করি, তাহলে পৃথিবীর ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ পাল্টে যেত৷ মানুষ যুদ্ধ পরবর্তী উল্লাস থেকে যুদ্ধজয়ের প্রেরণা পায়। কত যুদ্ধ এভাবে থেমে যাবে।
যে নেশা করেই এটা ভেবে থাকি, এটা ঠিক পরিবেশ বাঁচানোর উদ্যোগে সবাইকে কম বেশি এগিয়ে আসতে হবে। নাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শেষ করবো বায়রন দিয়ে -
"There is a pleasure in the pathless woods,/
There is a rapture on the lonely shore,/
There is society, where none intrudes,/
By the deep Sea, and music in its roar:/
I love not Man the less, but Nature more "



























( এই ভ্রমণকাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে ইহার কোন মিল খুঁজিবেন না।) 

Wednesday, January 29, 2020

Buddha and Marx


Marx and Buddha.. Probably you may claim that i am committing a crime by writing these names together.. Whereas approximately one million Tibetan including peaceful Buddhist monks were brutally killed during Chinese takeover of Tibet under Mao Ze Dong communist regime stating "religion is poison", forgetting the fact that any political opinion is also a kind of religion i.e. a way of life in a more logical way relevant to recent times .. Six thousand Buddhist monasteries were destroyed.. Marxist Government oppressed so many people around the world during their ruling, threatened and raped democracy.. Marx means terror, war and blood to general population.. Whereas Buddha means peace, serenity.. Probably your claim is right, but after going through this analysis you may find that may be this world misunderstood these two men.. No i am not stating that politics and religion should be merged like it did in Rome earlier.. Well, i must clear my opinion about communism and Buddhism.. I think human psychology is complex one, is developed and modified according to time, environment.. And so the problems of human civilization can't be solved by a single philosophy or a rigid point of view.. Now i am coming to the main discussion.. Both Buddha and Marx were worried about a single question from young age - "What is the root cause of human suffering".. Both were born in a economically stable family.. But eventually they faced this question and went in two different ways.. Siddhartha (Name of Buddha before enlightenment)  was born when Brahmin culture was polluting hinduism, caste struggle was too much prominent (in case of Marx there was class struggle) and Jainism due to its too soft nature couldn’t find a practical way.. Marx was born after French Revolution when people were too tired to obey all those Christian rules.. Siddartha abandoned his family and went into the woods to debate with himself through meditation to find a way out.. Marx was influenced by Hegel, Professor of his college..  They created a bohemian group who discussed ideas and philosophies how to liberate people out of their miseries.. Due to political pressure Marx had to abandon his wife and kids in young age.. If we think superficially Marxism has nothing to do with Buddhism.. But if you dig a little deeper you can find the true meaning of leftist? During French revolution, National Assembly divided into supporters of the king to the president's right and supporters of the revolution to his left. Thus the terms were evolved.. Later when the National Assembly was replaced by a Legislative assembly comprising entirely new members, the divisions continued. "Innovators" sat on the left, "moderates" gathered in the centre, while the "conscientious defenders of the constitution" found themselves sitting on the right.. You may find this funny that maximum self proclaimed leftists of West Bengal are not actually leftist.. And right wing people of India  not always belong to right.. Bengalis love a secure Government job, they love to stay in the same house and don’t want to discuss ideas, they are conservative in nature, love status quo .. They watch mind fucking low grade rotten serials.. They love patriarchal dominance, hindu muslim christian rituals and love to care about boy-education more than girls in their home.. Well, after all, thinking about your own bank balance should not be considered as leftist. No wonder why there is sudden right shift in Bengal Politics.. Because they belonged to right wing all along.. They voted for left once because probably they thought it was cute!!  And left leaders had no idea what leftist philosophy was.. They just opposed and grabbed the advantage of hate politics during 70s.. However coming to main topic, so when, Buddha was saying that, "Find your own path, be your own light ", do you really think that belongs to right wing? .. He opened a liberal wing..  He told that " Don’t go by reports, by legends, by traditions, by scripture".. Buddha asked to agree with reasons.. Remember this was the time when Jesus Christ was not even born.. Buddhism is not flawless.. Moreover his disciples were somewhat misunderstood him.. Buddha didn’t promote worshiping an Avatar.. Probably average human beings at that time ( also till now) were not so strong to bear the concept of a philosophy without avatar.. So, as the student was not ready, the teacher was somewhat misunderstood.. No doctrine is flawless according to any scientific mind.. But worshipping any Avatar or anything , didn’t allow any modifications.. So Buddhism became another modified version of Hinduism, full with rituals.. However, it offered us a most peaceful, liberal religious philosophy.. There is always a middle way.. Buddhism offered a central point of view with slight inclination to liberal leftist.. As we know, Marx also tried almost the same.. When followers of Hegel were extremist to state that religion is the root cause of all problems of the oppressed class, Marx modified their statement that Religion is like opium to them.. Nothing else.. Root problem is capitalism .. Not religion.. He worked together with Frederich Engles.. Marx never asked to worship him.. Still you can see so called communists to worship statue of Marx and right wing people vandalize wherever they see statue of Marx.. You can't vandalise an idea and also worshiping any statue doesn’t make any sense to any idea.. Modifications do.. Marxist rulers across the world assimilated the idea of Marxism in a wrong way.. Where Marx was fond of debate, discussion, Marxist rulers mostly never fond of opposition just like every other fascist rulers.. They forgot the fact that Marx himself started his protest through a newspaper journalism.. Engels told in grave of Marx - Your work will be remembered ages after your death.. Within 70 years, one third of Earth was ruled by communist Govt.. But they broke down easily.. Because people just accepted the ideology as school of fish.. They didn’t understand properly, didn’t discuss.. So their Government offered nothing but modified capitalism..
Buddha and Marx both were genius philosopher ahead of their time.. If you want to understand them go through their philosophy and debate with yourself and others.. Its very difficult for common people to assimilate such great ideas.. They just love to watch the apple to fall from the tree and eat them.. Same is true for Einstein's theory of relativity.. However, leftist never made a good ruler, because by definition of National assembly, they are a good opposition.. The ideal king should be a Buddha Who is in the centre to moderate and liberal enough to keep balance between conservative right and revolutionary left..

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...