Sunday, March 29, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | পঞ্চম পর্ব | পঞ্চ পান্ডব |

অপর্ণার সাথে ব্রেক আপ হয়েছে প্রায় একমাস হল। আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে গান শুনতাম। এখন গান বুঝি। অবাক হয়ে জানালা দিয়ে চেয়ে থাকি। এক্স কে ভোলা আরো কঠিন হয়, সে যখন সামনের কোয়ার্টারেই ঘুরে বেড়ায়। এরকমই একদিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। এমন সময় রুমে ভগা ঢুকলো - কিরে এখনো দেবদাস হয়ে বসে আছিস?
আমি একটু লো হয়ে বললাম - অন্য কথা বল।
ভগা - না তুই আগে বল। ওকে ব্লক করেছিস ফোনে?
- না।
পাশে প্রবাল দা শুয়ে ছিল। প্রবাল দাকে শুনিয়ে ভগা বললো -
বুঝলে দাদা, আমি কাল বাসে আসতে আসতে দেখলাম একজন কানে হেডফোন দিয়ে আছে। অথচ তার ফোনে কোনো গান চলছেনা। মানে কি বোঝাতে চাইছে? সে সব পাবলিকদের ইগনোর করছে, কিন্তু গান ভালো লাগেনা। ধীরুর অবস্থাটাও সেরকম।

আমি - হ্যাঁ, খিল্লি নে।

- না না আর খিল্লি করবোনা। চল একোয়াটিকা ঘুরে আসি। শিবেন প্ল্যান করেছে।

পাঁচজন মিলে একোয়াটিকা গেলাম তখনকার হলুদ ট্যাক্সিতে দরদাম করে। সত্যি বলতে যদিও যাওয়ার একদমই ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু সারাদিন কোথা দিয়ে পেরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
সুইমিং পুলে নেমে বিশু বললো - আমার সুইমিং পুলে নামলেই পেচ্ছাপ পায়।

শিবেন - হাট্ বানচোঁদ। এইসব ছোটলোক দের নিয়ে আসা উচিত না। গাঁইয়া শালা।

বিশু চেপে গেলো। নীল কোলাব্যাং এর মত সুইমিং পুলে লাফাতে লাগলো। বিশু আমার কানে কানে এসে বললো - আমি কিন্তু শিবেনের কাছেই করেছি।

বলে একটা অদ্ভুত হাসি দিলো।
যাই হোক, সারাদিন জলকেলি করে ফিরলাম।
আর একদিন শিবের প্রসাদ টেনে আনমনা হয়ে এনাটমি প্র‍্যাক্টিকাল ক্লাসে বসে আছি। একজন ভালো স্যার ভ্যাজিনা, এনাল ক্যানাল এইসব পড়াচ্ছেন।
নীল আমাকে মেসেজ করলো - পেরিনিয়াম মানে আজ জানলাম। পাতি গাঁড়।
আমি খুব ডিপ্রেসড্ ছিলাম। মনে হচ্ছিল কোন ভাবে ক্লাসটা শেষ হোক। যাতে ঘুম না পেয়ে যায়, আমি স্যারের পাশেই বসেছিলাম।
স্যারকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম - স্যার, পার রেক্টাল এক্জামিনেশনে প্রস্টেট ফিল করা যাবে তো বুঝলাম, কিন্তু পার ভ্যাজাইনাল এক্জামিনেশনে কি প্রস্টেট ফিল করা যাবে?

স্যার আনমনে বললেন - হ্যাঁ কেন করা যাবেনা।

তারপর বুঝলেন আমি কি বলতে চাইছি।

আমাকে কান ধরে টেনে বললেন - আমার সাথে ইয়ার্কি।
আমি বললাম - না স্যার, এটা সিরিয়াস প্রশ্ন স্যার।

আমাকে স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। ক্লাস থেকে বেরিয়ে আমি ছাতিম গাছের তলায় বসে রইলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ অপর্ণা সেইদিক দিয়েই যাচ্ছিল। আমাকে দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়ালো।
"কেমন আছো? " জিজ্ঞেস করলো।
আমি বললাম - ভালোই। ক্লাস থেকে স্যার বের করে দিয়েছেন।
- কেন?
আমি তাকে কারণ টা বলাতে অপর্ণা হেসে উঠলো৷ হাসলে ওকে আরো সুন্দর লাগে। আমার একটা কান্না আসছিল। আমি অন্যদিকে তাকালাম।
অপর্ণা আমাকে বললো - আমি আসছি। ভালো না লাগলে মেসেজ কোরো।

তারপর থেকে অপর্ণার সাথে বন্ধু হিসেবেই থাকলাম। মুশকিল টা হত ওর ফোন ব্যস্ত পেলে। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম। কিন্তু বলা যায়না। একদিন ভালো লাগছিলনা। বিশুর কাছে গেলাম। দেখলাম সেই ঘুমাচ্ছে।
ডেকে তুলে বললাম - তুই ফার্স্ট সেম এ পাস করলি কিভাবে? বাকিগুলো ছেড়েই দিলাম। ফিজিওলজি হেড ম্যাম তো খুব কড়া।
বিশু বললো - ম্যামের কাছে আমি একটাও প্রশ্ন পারিনি। ম্যাম বললেন আমাকে ফেল করাবেন। আমি ম্যাম কে নাটক করে বললাম, ম্যাম আমি গ্রামের ছেলে। অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আমরা পড়াশোনা করি ম্যাম। বলতে ম্যাম ও সেন্টু হয়ে ছেড়ে দিল। পাশ করে গেলাম। তুই এখানে কি ব্যাপার বল।

আমি বললাম - আমি ভাবছিলাম বুঝলি। নিউরোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করবো।

- কিরকম?

- মানে ধর, এই যে আমাদের ব্রেনে অসংখ্য নিউরোন বরাবর যে কারেন্ট ভেক্টর আছে তাদের রিজিওন ওয়াইজ লব্ধি বের করবো। আমার ধারণা কোথাও একটা প্যাটার্ন ঠিক পাওয়া যাবে। আর যারা পাগল হয়ে যায় তাদের কোন একটা রিজিওনে হয়তো লব্ধি বেঁকে গেছে।

এইটা বলার পর আমায় নিয়ে এত খিল্লি করলো ভগা আর নীল কে ডেকে। সেই থেকে আমার আর একটা নাম লব্ধি হয়ে গেলো। এমনকি অপর্ণাকেও মেসেজ করে বিশু বলে দিল যে আমার নাম লব্ধি দেওয়া হয়েছে। কি আর করা যাবে। আমার আর অপর্ণার সম্পর্ক টা দিন দিন আরো জটিল সমীকরণ হতে লাগল। বন্ধুরা বলতো - সকালে ভাইয়া, রাতে সাঁইয়া।

আমি পাত্তা দিতাম না। একদিন লেকচার থিয়েটারেও গিয়ে দেখি আমি যেখানে বসি সেই বেঞ্চে লেখা - সকালে ভাইয়া, রাতে সাঁইয়া।
কে আবার লিখে রেখেছে -
আতি, পাতি, নূরজাহান,
লাইট নিভলে সব সমান।
আমি পাত্তা দিতাম না। সত্যি বলতে আমাদের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকার মতো কিছুই আর আগের মত ছিলনা। শুধু যেটুকু ছিল অপর্ণার ভাষায় স্পেশ্যাল ফ্রেন্ডশিপ।
 বিপদ টা হল হোলির দিন। সবাই চরম রং খেললাম৷ যারা ভয়ে রুমে ঢুকে গেল, তাদের দরজায় রং দিয়ে নানারকমের গালাগাল লিখে দিয়ে এলাম। দুপুর বেলা এনক্সের ছাদ থেকে ফোন করে অপর্ণাকে ছাদে ডেকে রংবেলুন ছুঁড়ে মারলাম। ও আমাকে আবীর ছুঁড়লো। মনটা এতটাই খুশি ছিল। সবাই মিলে রাতেরবেলা ভাং খেয়ে সবাই যে যার নিজের কথা বলছে।
নীল বললো আমার মনে হয় - রাস্তায় গর্ত করা থাকে কারণ যাতে বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল যাতে না জমে, গর্তে জমে।
সবাই বললো - এভাবে ভেবে দেখেনি।

আমি দুম করে বলে ফেললাম - আমার মনে হয় অপর্ণা আমাকে এখনো ভালোবাসে। কিন্তু বলছেনা। অপেক্ষা করছে, সেই ভরসা হলে বলবে।

ব্যাস্, সবাই আমাকে বার খাওয়ালো চরম লেভেলের। আমি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে বললাম - কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করার সাহস নেই। যদি আমার সাথে কনটাক্ট বন্ধ করে দেয়।
ভগা বললো - ওরে বাল, ও বিয়ে করে চলে যাবে কখন, বুঝতেও পারবিনা। আমি ফোন করছি।

আমি যে ওকে আটকাবো উঠে, ভাং গ্র‍্যাভিটেশনাল ফোর্স বাড়িয়ে দিয়ে, আমাকে শুইয়ে রেখেছিল। তখন রাত এগারোটা বাজে।
ভগা অপর্ণাকে ফোনে লাউডস্পিকারে রেখে ফোন করলো - হ্যালো অপর্ণা।
- হ্যাঁ।
- আমি ধীরুর বেস্ট ফ্রেন্ড ভগা বলছি।
- হ্যাঁ আমার নাম্বার সেভ আছে।
- তুই কি ধীরুকে ভালোবাসিস?
- না।
- তাহলে ওর সাথে কথা বলিস কেন?
- বন্ধু হিসেবে।
আর কিছু কথা আমার শোনার মত ব্যাপার ছিলনা। আমি কয়েকটা কাজ একসাথে করছিলাম। হামাগুড়ি দিয়ে নিজের রুমে ফিরলাম। হয়তো কাঁদছিলাম ও। এসে রুমে শুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে একদম ফ্রেশ হয়ে অপর্ণাকে মেসেজ করলাম। রিপ্লাই এলো - ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে? নেশা কেটেছে?

আমি ভাবলাম অপর্ণা ব্যাপারটা তাহলে বুঝেছে। স্পোর্টিংলি নিয়েছে।
আমি বললাম - হ্যাঁ।
এবার উত্তর এলো
- আমি এতদিন তোকে বন্ধু হিসেবে দেখেছি। কিন্তু আজ বলছি, আমি তোকে ভালোবাসিনা, কিন্তু ঘৃণা করি৷ আর কোনদিন কনট্যাক্ট করতে চাইলে পুলিশে দেবো।

সেই থেকে আমি আর দোলে রং খেলিনা।
তখন আমাদের গুগল ছিলনা, নেটফ্লিক্স, হটস্টার, ইউটিউব কিচ্ছু ছিলনা, কিন্তু আমরা পাঁচজন ছিলাম। হস্টেলের ছাদ ছিল। কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় বসে আমরা গভীর আলোচনা করতাম। এখন হস্টেলে খুব কম লোক একে অপরকে চেনে। আমাদের গোটা হস্টেলটাই একটা বড় পরিবার ছিল। একটা আলাদা রাজ্য। যেখানে পঞ্চ পান্ডব দাপিয়ে বেড়াতো। আমাদের জীবনে কোন ট্র‍্যাজেডি ছিলনা। পুরোটাই কমেডি। ওদের সাথে থাকতে থাকতে প্রথম প্রেম হারানোর দুঃখ যে কবে ভুলে গেছি, সেকেন্ড সেমিস্টার, প্রথম এমবি ও কখন দিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।।

(To be continued)
(Share the story with your friends if you like it.. Follow the blog to stay connected) 

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...