Monday, February 24, 2020

নীলরতনের পাঁচ রতন | প্রথম পর্ব | Pilot |


(এই রচনার সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক)
স্ক্রোল করতে করতে যদি মনে হয় একটু আমার জীবনের গল্প ও শুনে যাবেন। আমি ধর্মদাস। বয়স ৪০ বছর। তা বলে কাকু, জ্যেঠু বলে ডাকবেন না। আমি হলাম গিয়ে ২০৩০ সালে দাঁড়িয়ে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ১৮ বছরের যুবক। আর বাকি চার বছরটা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছি। আসলে প্যান্ট ভেজাতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম রিভিশন দেওয়া হয়নি। তাই মানে কথা, মনে পড়ছেনা। আমাদের সমবয়স্ক পাঁচ বন্ধুর একটা গ্রুপ আছে। ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম জীবনটা আসলেই ফাঁকা। তোমার জন্য কেউ ভাববেনা। কলেজে পড়াকালীন হস্টেলে যখন প্রথম এসেছিলাম  তখন হ্যান্ডওয়াশ টা বারান্দার পাশে জানালায় রেখে আসার ভুল করেছিলাম৷ দুই মিনিট পরে তাকিয়ে দেখি সেটা আর নেই। আধ ঘন্টা পরে দেখি সেটি আবার যথাস্থানে। মানে কোন জনাব সেটি নিজের মনে করে নিয়ে গেছে এবং যথাস্থানে রেখে গেছে। কিন্তু যখনই বাথরুমে আধ ঘন্টার কার্য কারণ বিবেচনা করেছি ওই হ্যান্ড ওয়াশটা আর ব্যবহার করতে পারিনি। ওই অজানা ব্যক্তিই ওটি ব্যবহার করে শেষ করেছেন। এত নির্লজ্জ শেষ হওয়ার পর আবার নোট ও রেখে গেছিল - " ওরে বাল, হ্যান্ডওয়াশ টা কি আমার বাবা কিনে দিয়ে যাবে? "
সেদিন থেকে শেখার শুরু। পৃথিবীটা আসলে এইরকমই। ব্যাপারটাকে কমেডি হিসেবে দেখি। কারণ কমেডি ইজ দ্য বেস্ট রেমেডি।
তো আমিও একটা কাগজে লিখে হ্যান্ড ওয়াশের কাছে লিখে দিলাম - "হে মহানুভব, আমি আপনার মত মহাত্মার দর্শনাকাঙ্ক্ষী। আপনার উদ্ঘট রূপ সচক্ষে দর্শন করতে এই গরীব জীবাত্মার মন চায়। "

তারপর আমার সাথে সেই মহাত্মা নিজে পরিচয় করতে আসে। সে হয়ে যায় আমার কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু। ছেলেটি আমারই ব্যাচের। তাই খুব কম দিনেই আমরা এত কাছাকাছি চলে এলাম যে আমাদের নামে সমকামিতার গুজব রটতে লাগলো। এটাকেও আমরা কমেডি হিসেবে নিতাম। একদিন আমি আমার অমিত শাহের সাথে হস্টেল পরিদর্শনে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম একটি রুমে একজন হৃষ্টপুষ্ট যুবা উলংগ হয়ে গিটার জড়িয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। এতটাও মোটা নয় যে তার চারপাশে স্পেস টাইম কার্ভেচার বেঁকে যাবে, কিন্তু বেশ নাদুস নুদুস টাইপের। ভগার মতে ছেলেটি যদি আরেকটু মোটা হত ওর অন্ডকোষ দুটো ওকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করতো। তাকে দেখে চলমান কমেডি র এনসাইক্লোপিডিয়া মনে হল। তাকে ডেকে তুললাম। সে যেন কিছুই হয়নি ভেবে গামছা পরে নিল। তাকে নিয়ে পরেরদিন কলেজে ক্লাস করতে গেলাম। এতক্ষণ বলা হয়নি আমরা নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষে তখন এম.বি.বি.এস পড়ি। আমি ধর্মদাস, নাম আগেই জানেন। ডাক নাম ধীরু। থাকতাম এনেক্স্ বিল্ডিং এর একটি রুমে। আমার রুম থেকে শিয়ালদহ স্টেশন ও তত্সংলগ্ন বিশাল উঁচু ফ্ল্যাটের মাউন্টেন ভিউ পাওয়া যেত। আমার পাশের জানালাতে ছিল ডক্টরস্ কোয়ার্টার। আমার রুম ছিল বাথরুমের প্রক্সিমালি। হ্যান্ডওয়াশ চোর এর নাম ভগা। সে আমার ফ্লোরেই থাকতো বাথরুম থেকে ডিস্টালি।  আর ওই হৃষ্টপুষ্ট যুবার নাম নীল। ও থাকতো আমাদের ফ্লোরের নর্থ উইঙ্গে। আমার রুমের জানালার পাশেই যে ডক্টরস্ কোয়ার্টার ছিল, সেখানে একটি মেয়ে রোজ সন্ধ্যেবেলা ছাদে আসতো। ব্যাপারটা প্রথম লক্ষ্য করে শিলু। শিলু আমার উপরের ফ্লোরে থাকতো। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমার রুমে ঝটিকাসফর সেরে যেতো। শিলু একদিন আমার রুমে এসে মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে বললো - "ওই দ্যাখ্, মাইয়া। "
আমি একটু রবীন্দ্রনাথ ভক্ত।
"আমার আনন্দ সকলের আনন্দ হউক " বাণীতে বিশ্বাসী। ভগা কে ফোন করে ডাকলাম - "ভাই, ব্যস্ত? "
বললো - "হ্যাঁ পড়ছি "
আমি কাব্য করে বললাম - "সন্ধ্যের সূর্যাস্তের মাঝে অপ্সরা দেখতে চাইলে রুমে এসো"
ভগা ফোনটা কেটে দিল। অগত্যা আমি আর শিলু দুজন আবার কাঁধে কাঁধ রেখে গালে হাত দিয়ে মেয়ে দেখাতে মনোনিবেশ করলাম। ভগা আসবেনা ভেবে খারাপ লাগছিল, এমন সময় দেখি, ভগা শুধু নিজেই আসেনি, নীলকেও ধরে নিয়ে এসেছে কই, কই করতে করতে।
শিলু বললো - হবে কোন ডাক্তারের মাইয়া। আমি এক মাসে পটাইয়া ফেলমু।
এরই মাঝে বাজি ধরাও হয়ে গেছে দু টাকার। যদি শিলু না পটাতে পারে এক মাসে তাহলে দু টাকা দেবে আমাদের। যাই হোক্, এরকমই চলছিল আমাদের জীবন। হঠাৎ জীবনে এসে গেল প্রথম পার্ট পরীক্ষা। ভগা বললো -" চল্ হস্টেলে কে কেমন পড়ছে সরেজমিনে তদন্ত করে আসি। "
নীলের রুমের দিকেই যাচ্ছিলাম, দেখলাম নীলের পাশের রুমে একটা ছেলে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। নীলের কাছে শুনলাম সে নাকি আমাদেরই ব্যাচের। কিন্তু প্রচুর অলস৷ ও নাকি এত অলস যে ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিলেও গ্র‍্যাভিটি স্লো হয়ে যাবে। কারণ ওর অবাধে পতনশীল হতে কিঞ্চিৎ ক্লেশ অনুভব হবে। ট্রেভর চ্যাপেল নাকি টাইম মেশিনে এসে ওর কাছে আন্ডার আর্ম বোলিং শিখেছিল৷ কারণ ফুল আর্মে ল্যাদ লাগে।
 ছেলেটির নাম - বিশু।
বিশুকে উঠিয়ে আমরা পড়তে বসালাম। রামায়ণের প্রিয় চরিত্র যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিশু রাম-রাবণ-হনুমান-মায় ইন্দ্রজিৎ কারো নাম বলেনি।
ওর আইডল হল কুম্ভকর্ণ। অলস আমরাও কম বেশি ছিলাম। কিন্তু ও হাইবেরনেশন জিনিসটা একটু বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিল। বেশ কিছুদিনের মধ্যেই আমরা চারজন মানে আমি, ভগা, নীল ও বিশু খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। আমরা ক্লাসে পেছন থেকে বসা শুরু করতাম। একদিন আমি এরকম প্র‍্যাক্টিক্যাল ক্লাসে বসে আছি। ভগার জ্বর, তাই আসেনি। নীল আর বিশু অন্য প্র‍্যাক্টিক্যাল ব্যাচে। তাই একাই বসেছিলাম। পাশ থেকে একটা ছেলে ফিশফিশ করে বললো - "ক্লাস শুনতে ভালো লাগছে? "
আমি বললাম -" না, এটেন্ডেন্স এর জন্য আসা। "
সে বললো - " কেন প্রক্সি দেওয়ার লোক নেই? আমরা তো পালা করে ক্লাস করি। "
আমি বললাম -" না আরেকজনের জ্বর। "
সে বললো - " তোর নাম কি? "
- " ধর্মদাস"
ছেলেটি খিক খিক করে হেসে উঠলো। ক্লাসের ম্যাডাম আমাকে দাঁড় করিয়ে বললেন - "হেই, হোয়াট আর ইউ টকিং?"
বাংলা মিডিয়াম আমি থতমত খেয়ে বললাম - "নাথিং টকিং "।
গোটা ক্লাস এতক্ষণে চুপ ছিল। আমাকে মুরগীর মত আওয়াজ বের করতে দেখে হেসে উঠলো।
ম্যাডাম বললেন - "নাথিং টকিং!! প্লিজ গেট আউট। "
আমি বললাম - "নো ম্যাম, আই ডোন্ট থিংক সো। "
এবার ম্যাডাম ট্রোল হয়ে গেলেন। ম্যাডাম বুঝলেন পচা শামুকে পা কেটে গেছে। বাংলা মিডিয়াম যে কি জিনিস! যাই হোক্, ম্যাডাম আবার পড়াতে শুরু করলেন আমাকে বসতে ইশারা করে। পাশের ছেলেটি হাসতে হাসতে বললো - "আমার নাম শিবেন। বেহালা থেকে রোজ আসি। শিবের প্রসাদ খাবি ক্লাসের পর?  এই যে ক্লাসের জাংক মাল গুলো গিলছিস পুরো ক্লিন হয়ে যাবি। "
আমি তখন বুঝতে পারিনি শিবের প্রসাদ কি? ওকে ভুলভাল ছেলে ভেবে হস্টেলে ফিরে এসেছি।
আমার রুমমেট ছিল দুজন সিনিয়র দাদা। আমার এক বছরের সিনিয়র দুজনে। একজনের নাম অরুণ দা, আরেকজন প্রবাল দা। অরুণ দা ছিল পড়াকু টাইপের। কিন্তু যখন জুনিয়র পেতো বিষাক্ত হয়ে যেতো। ও তোতাপাখির মত বইএর কাগজ গিলতো, আর যে হতাশা তৈরি হত সেটা জুনিয়রকে গালাগাল করে বের করে দিত। আমি এটাকেও কমেডি হিসেবে দেখতাম। প্রবাল দা আবার একটু অন্যরকম। জুনিয়র পেলে জিভ থেকে জল ঝরতো, তার সাথে পাগল ছিল। আমাদের হস্টেলে যে চা বিক্রি করতো রুমে রুমে তার নাম ছিল পলাশ দা। পলাশ দা শাহুরুখ খানের ভক্ত ছিল। প্রবাল দাও। শাহুরুখ খানের যখন সিনেমা মুক্তি পেত,  প্রবাল দা আর পলাশ দা দুজন মিলে পার্ক সার্কাসে সিনেমার লিফলেট বিলি করতো। চুলটা ছিল অদ্ভুত। একটা কেশ বিন্যাস নেমে আসতো কপালের উপর আর মাঝে মাঝে মাথা ঝাঁকিয়ে সেটা মাথায় তুলে নিতো দাদা। তো আমি এই বাংলা মিডিয়াম, একটা মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। শিবের নাম শুনেছি, কিন্তু পূজো নিয়ে উত্সাহ না থাকায় প্রসাদের ব্যাপার টা জানিনা। এমনিতেও ভেঙ্কটেশ প্রসাদের বোলিং বেকার লাগতো। তবুও কৌতূহলবশত প্রবাল দাকে এসে জিজ্ঞেস করলাম - দাদা শিবের প্রসাদ কেমন খেতে?

প্রবাল দা আঁতকে উঠলো। অরুণ দা বই বন্ধ করে নেমে এলো। তারপর আমাকে সে কি অপূর্ব ভাষার প্রয়োগ। আমাকে জিজ্ঞেস করলো -
সিগারেট খাস?
আমি বললাম - না, আমি শুধু দুধ খাই।
- দুধ খায়! তুই উপুড় হয়ে চার পায়ে বস। আর তোর হোমো পার্টনার ভগাকে ডাক। সে তোর দুধ খাবে।

সে কি লজ্জার কথা। শেষে একটা উত্তরে ব্যাপারটা শেষ হয়েছিল।
আমাকে অরুণ দা বললো - তুই প্যান্টের নিচে কোন কোম্পানির পরিস রে?
আমি বললাম - বাটা কম্পানির হাওয়াই চপ্পল।
এই সেমসাইড গোলে আর এগোয়নি। সেদিনের মত মাঝরাতে চাঁটন টা শেষ হয়ে গেছিল। চাঁটের এফেক্ট এমন ছিল যে ভগা আমার রুমে এলে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে নিত ওই দুই দাদা আছে কিনা। যাই হোক, দাদাদের কাছে কোন উত্তর না পেয়ে অগত্যা বাকি চারজনকেও ব্যাপারটা বললাম - "ভাই, শিবেন বলে একটা ছেলের কাছে শিবের প্রসাদ পাওয়া যায়। বলেছে খেলে নাকি সব জাংক ক্লিয়ার।"

বিশু বলল - "কদিন ধরে প্রচন্ড কনস্টিপেশন হচ্ছে। চাপ দিতে খুব ল্যাদ লাগে। এই শিবের প্রসাদ টা তো চেখে দেখতেই হয়। "

পরেরদিন শিবেন কে হস্টেলে ডেকে আনলাম। সেই আমাদের পাঁচজনের একসাথে পথ চলা শুরু।

(এরকম লেখা আরো পেতে ব্লগটি ফলো করে রাখুন ইমেল আই ডি দিয়ে। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন, নিজের এরকম বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না)
( To be continued...)  

2 comments:

  1. Replies
    1. প্রিয় পাঠক, অবচেতনে আপনাকে স্বাগত। এই ব্লগে নানা স্বাদের লেখা আছে৷ ঘুরে দেখার জন্য আমন্ত্রণ রইলো।

      Delete

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...