Thursday, June 1, 2017

বর্-অফ্

'ও তাহলে তুই বিয়ে করবিনা, কুমুদ ? '
অবাক হয়ে কুমুদুনীকে প্রশ্নটা করলেন তার কাকিমা ।
কাকিমা মধ্যবয়স্কা প্রাচীনপন্থী, হোমমেকার। স্বামীই তার ধ্যান-জ্ঞান। বিষয়আশয়, সংসার সামলানো, বিকেলবেলা থেকে সিরিয়াল এই তাঁর জীবন।
কুমুদিনী তাঁর মেয়ের বয়সী। সে
একগাল হেসে উত্তর দিল,
'কেন করবোনা? তবে তোমাদের মত নয়। '
কুমুদিনী নামটা তার বাবার দেওয়া। বাবা রবি ঠাকুরের বড় ভক্ত। তাই মেয়েকেও ওইরকম নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধুরা তাকে কু-মুড বলেই ডাকে। রবি ঠাকুরের চরিত্রগুলোকে ন্যাকামি রিগ্রেসিভ ছাড়া কিছু লাগেনা তার। কলেজে মাস্টার্স পাস করেছে তার উপর বিজ্ঞানবিভাগে। প্রোগ্রেসিভ লিবারেল চিন্তাভাবনা তার। ওই রবিঠাকুরের চিন্তা লেখাকে তার পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পাকামো ছাড়া কিছু মনে হয়না। তার বিয়ের বয়স হয়েছে বলে বাড়ির চিন্তার শেষ নেই।যেন তাকে বড় করেছিল টুক করে বরমালাটা নিয়ে কারো গলায় ঝুলে যেতে। কিন্তু তার হাবেভাবে সেসব নেই। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে সে এক সোচ্চার ভাষণ। তার আশেপাশে ছেলের অভাব নেই। যাদের বা কুমুদের একটু ভালো লাগতো তাদের চরিত্র দেখে তাদের পোষা বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। যেসব বাড়ি থেকে তাকে দেখতে আসে তাদের ছেলেকে একটা ঘরের কোণে ডেকে নেয়। ছেলে ভাবে কতকিছু। কিন্তু কুমুদ আড়ালে ডেকে বলে - 'আমি একজনে সন্তুষ্ট নই।' কুমুদের আর তাই কোন সম্বন্ধ বিয়ে অব্দি গড়ায় না।
এহেন কুমুদের এরকম উত্তর শুনে কাকিমা বললেন - 'আমাদের মত নয় তো বুঝলাম, তো তোর ক্রাইট্রেরিয়া গুলো কি শুনি। '
কুমুদ উত্তর দিল - 'এমন কেউ যে বড়লোকের ছেলে। কম কথা বলবে, কম প্রশ্ন করবে, আমি রেগে ঝেড়ে দিলেও চুপ থাকবে। আমার জীবনের বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে ঘাঁটাবেনা। রান্না করে দেবে। কাপড় কেচে দেবে। আমার গা হাত ব্যথা হলে হাত পা টিপে দেবে। আমি মদ খেলাম না সিগ্রেট খেলাম, কোন বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখতে গেলাম, ঘুরতে গেলাম তার কোন কিছু বলার থাকবেনা। আমি যখন চাইবো চেষ্টা করবে সময় দেওয়ার। তার বাড়ির দায়িত্ব তার। তাকে আমার বাড়িতে এসে থাকতে হবে, আমার বাবা-মা কে দেখতে হবে। আমার মনে হলে মাঝে মাঝে তার বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসবো। '
এতক্ষণ মুখ হাঁ করে শুনছিলেন কাকিমা। কিছু বলতে গিয়েও বেরলোনা, শুধু একটা কথাই ঢোক গিলে বললেন,
' এরকম কোন শিক্ষিত ছেলে পাবি ? '
'বেশি শিক্ষিত নিয়ে আমি করবোটা কি? চৌধুরী পরিবারে কোচিং সেন্টার খুলবো? '
এরকম কুমুদিনী যে বাড়ির বিয়ের চাপে সত্যি সত্যি একজন ওরকম ঘরজামাই হোমমেকার কে কোথাও থেকে ধরে নিয়ে আসবে কে জানতো। যেদিন প্রথম ছেলেটি চৌধুরীবাড়িতে ঢুকেছিল, দেখে মনে হয়েছিল কোন রাস্তার ভিক্ষুক। দুচোখের তলায় কালি, চুল উস্কো-খুস্কো, দুটো গাল ঢুকে গেছে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে লাঠি। মুখেচোখে এমন একটা বিষাদের ভাব যেন তার থেকে দুখী আর কেউ নেই।
কুমুদ বাড়িতে চালিয়েছে যে এর মা-বাবা মারা গেছে তাই ওরকম।
আর বন্ধুদের কাছে বলেছে, 'একটা গাধাকে পেয়েছি। ট্রেনে বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলাম সেই সময়। মালটা বসেছিলো ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে ক্যাবলার মত তাকিয়ে ছিল। ওকে অনেকভাবে পরীক্ষা করলাম, খেতে টেতে পায়না বলে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। মাধ্যমিক পাশ। কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে এখন হাতে কোন কাজ নেই। আমি ভাবলাম, ওকে আমার বাড়িতে আমার বর সাজিয়ে নিয়ে গেলে কেমন হয়। আমার ও আর বিয়ে বিয়ে করে কেউ চেঁচাবেনা। ওর ও থাকা খাওয়া হয়ে যাবে বলে অফারটা দিলাম। ছেলেটা একবাক্যে একবার ঘাড় নেড়ে জানালো সে রাজি। আর এটাও বললো আমি যবে বলবো বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। '
কুমুদ ছেলেটির নতুন এক নাম দিয়েছে ঘুড়ি। মুখের ভাব সব সময়ই এক। এক অদ্ভুত বিষাদের ছায়া। বাড়ির সবাই তার কাজে খুব খুশি, তাই শুরুতে আপত্তি থাকলেও এখন সবাই তাকে নিয়ে খুশি। উড়িয়ে নেয় সুবিধেমত যে যখন পারে । রাতে বন্ধ দরজার এপারে কুমুদ খাটে ঘুমায়, ঘুড়ি নীচে মেঝেতে মাদুর পেতে ।
কুমুদের বাবা শুধু মেনে নিতে পারেন না। তাঁর বয়স হয়েছে। ডায়াবেটিসের রুগী। কুমুদকে তাঁর এখনো বাচ্চা মেয়ে লাগে, আজ আছেন কাল নেই। এরকম একজনের হাতে তাঁর মেয়েকে ছেড়ে যেতে মন চায়না।
একবার মেয়েকে এটা নিয়ে বলতে মেয়ে বলেছিল -
' দেখো বাবা, তোমাদের যুগে তোমরা মেয়েদের ঝি-বাঁদীর চোখে দেখেছ। এটা আমাদের যুগ। আমরা ছেলেদের চাকর করে রাখব।'
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। হঠাত একদিন কুমুদের কাকু মারা গেলেন। কাকু ছিলেন পন্ডিত মানুষ। এমন কোন বিষয় ছিলনা যেটা নিয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল না। কুমুদ বলতো চলমান উইকিপিডিয়া। তিনি মারা যাওয়াতে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এল। এদিকে কাকুর ছেলের আর ছয় মাস পর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, নানারকম এন্ট্রান্স এক্সাম। এতদিন তার বাবাই পড়াতেন। তিনি মারা যাওয়াতে সব দায়িত্ব এসে পড়ল কুমুদের ঘাড়ে। কুমুদ পড়েছে মহা বিপদে। সে পরীক্ষার আগে সাজেশন করে পাশ করেছে। একটা বিষয়ে মাস্টার্স। উ:মা: তে তার যদিও একদম ফুল মার্ক্স অংকে। উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান তাই তাও একটু পড়াশোনা করলে পারবে। কিন্তু কাকুর ছেলের কঠিন অংক গুলো সব মাথার উপর দিয়ে যায়। কোন মাথা মুন্ডু বুঝতে পারেনা কি করবে। কঠিন বিক্রিয়াগুলো কি করবে ধরতে পারেনা। অদ্ভুত অদ্ভুত সব পদার্থবিদ্যার অংক কি করবে বুঝতে পারেনা। সব সাজেশনের বাইরে। অগত্যা বন্ধুদের বলে। বন্ধুরা কে কত ব্রিলিয়ান্ট দেখাতে অংক কষে পাঠায়। সুন্দরী মেয়ের ব্রিলিয়ান্ট বন্ধুর অভাব হয়না। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়।
সে নাহলে এভাবে তাও কিছুটা ম্যানেজ করা গেল।কিন্তু বাংলা, ইংরেজি ? নোট মুখস্ত করে নাম্বার পেয়েছে সে। ভালো নাম্বার পাওয়াতে অনেকে হিংসে তে জ্বলে যখন তার জ্ঞানের সংগে নিজের জ্ঞান জাহির করতে এটা পড়েছিস, ওটা পড়েছিস বলতো তখন সে বলে দিত হ্যাঁ। সে পড়ুক, নাম শুনে থাক বা নাই পড়ুক। প্রেস্টিজ ইস্যু। কিন্তু এখন ? গ্রামার বই পড়বে সে ? নাকি ডিক্সনারি মুখস্থ করবে ? মুখে যখন ফটর ফটর ইংলিশে কথা বলে জানত না এত ভুল বলে। সাহিত্য ভালো জানে বলে দাবী করে এরকম বিজ্ঞানের বন্ধু আছে, কিন্তু কাকুর মতো অথেণ্টিক হবে এরকম কেউ নেই। এমতবস্থায়, তার কাকুর ছেলে যা পারতনা বা চেক করাতে হত, কুমুদ বলতো - তুই টেবিলে রেখে দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে যাবি। আমি সময় মত সকালে নিয়ে তোকে যবে হোক চেক করে দিয়ে দেবো।
শুরুতে প্রচুর অংক আটকাতো তার কাকুর ছেলের। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তার কাকুর ছেলে সবই নিজে পেরে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে এবারে যে পরীক্ষাতেই বসবে পেয়ে যাবে। কুমুদের খুব আনন্দ হল। ভাবলো গিয়ে একবার তার কাকুর ছেলেকে এনকারেজ করা দরকার। ভেবে তার পড়ার ঘরে গিয়ে বললো - 'কিরে ভাই তোর ব্রেন খুলে গেছে দেখছি। আসলে টিচার টা কে দেখতে হবে তো। '
ভাই বললো - 'হ্যাঁ সত্যি আমি তো অবাক হয়ে গেছি। তোকে বলতাম, তোর মাথায় গোবর ভরা। কিন্তু তোর ট্যালেন্ট দেখে মনে হল বাবার থেকেও তুই বেটার। সেদিন ওই অংক গুলো তুই তিন চার রকম ভাবে করে দিয়ে গেলি, আমি ওই ভাবেই ক্লাসে করেছি। জানিস আমায় স্যার কি বলেছেন ডেকে? ইউ আর এক্সেপসানালি ব্রিলিয়ান্ট। তবে উ:মা: এ যেন সিলেবাস মেনেই করি অংক। তবে দি সেদিন ওই জড়তা ভ্রামকের অংক টা আমি বুঝতে পারছিনা তুই কিভাবে করেছিস ?'
দিদি এতক্ষণ হাঁ করে শুনছিল। সে যে এত ব্রিলিয়ান্ট সে নিজেই জানতনা।তার বন্ধুরা এত কাজের ভেবেই ভালো লাগছে। সে বললো কই দেখি খাতা ?
ভাই খাতা এগিয়ে দিল। খাতায় করা চিন্হ গুলো দেখে তার মাথা গেল ঘুরে। এসব কি ? 'কে করেছে এগুলো ? ' বলে উঠলো কুমুদ।
সেদিন ঘরে একটা সভা বসলো। কুমুদ আত্মাতে বিশ্বাস করতো না। কিন্তু এই ঘটনার পর ? প্রায় হুবহু তার কাকার মত জঘন্য হাতের লেখায় হিজিবিজি করে একের পর অংক নানারকম ভাবে করা। কেউ যেন মোবাইল গেম খেলার মত আনন্দ নিয়ে করেছে অংক গুলো। প্রত্যেকটা সমাধানের পর লেখা 'গেম ওভার'। বাড়িতে যে কয়েকজন লোক, কুমুদ ছাড়া কারো ধারে কাছে শিক্ষা নেই যে ওইভাবে অংকগুলো নিয়ে খিল্লি ওড়াবে। শুধু তাই নয় বাংলা, ইংরেজি তেও যেরকম ভাবে কারেকশন করেছে। প্যারাগ্রাফ, বিশ্লেষণ অসাধারণ। সহজ সরল ভাষায়, যেখানে যে টার্ম একদম দরকার সেখানে সেটা। এটা কাকু ছাড়া কেউ পারতো না। মারা যাওয়ার পরও কাকু তার ছেলেকে দেখাচ্ছেন এভাবে।
বাড়িতে সবাই ঠিক করলো ব্যাপারটা কাউকে বলার দরকার নেই। গয়া তে কাকুর পিন্ডি দেওয়া হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পরেরদিনই টিকিট কাটার কথা ছিল, যদি না আবার একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতো বাড়িতে। ভাই এর মৃত্যুর পর কুমুদের বাবা খুব ভোলা মনের হয়ে গেছিলেন। তার উপর সেদিন বিকেলে যখন জানতে পারলেন তার ভাই এর আত্মা এখনো শান্তি পায়নি, আরো আনমনা হয়ে গেলেন। তারপর দিন সকালেই হঠাত অজ্ঞান হয়ে গেলেন। কুমুদ তার বাবা শুয়ে আছে মাটিতে দেখে ঘুড়ি কে ডাকতে লাগলো চেঁচিয়ে। একটু দূরে ওখানকার ডাক্তার নৃসিংহ বাবু আছেন ঘুড়ি সাইকেলে করে গিয়ে, ডেকে নিয়ে আসবে। তার ভাইও ঘরে নেই। ওই বোধহয় সাইকেলটা নিয়ে গেছে। মাথা কাজ করছিল না। কুমুদ নিজেই ছুটে গেল ডাক্তার ডাকতে। কুড়ি মিনিট পর যখন ডাক্তার নিয়ে কুমুদ বাড়ি এল, দেখল, বাড়ির লোকেরা একটা ঘরের বাইরে উঁকি ঝুঁকি মারছে। সাইকেলটাও যথাস্থানে।মানে ভাই ফিরে এসেছে। কিন্তু সে ও তো বাইরে উঁকি ঝুঁকি মারছে। ব্যাপারটা কি ? বাবার কিছু হল না তো ? ছুটে গেল ডাক্তার কে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখল একি। ঘুড়ি !! তার বাবার এক হাতে স্যালাইন চলছে। আর ঘুড়ি তার বাবার পায়ের কাছে হাত দিয়ে ঘষছে। ডাক্তার চেঁচিয়ে বললেন, একি বাড়ির চাকরের হাতে একজন মানুষের স্বাস্থ্যকে ছেড়ে দিয়েছে।
কুমুদ তেড়ে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তাকে থামিয়ে দিয়ে ওর বাবা বলে উঠলো জড়তা ভরা স্বরে। 'ও চাকর নয় ' বলে চোখ মিললেন।
'বাবা তুমি ঠিক হয়ে গেছ? ' বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো কুমুদ।
এবার মুখ খুললো ঘুড়ি।
নৃসিংহ বাবুকে বললো - নমস্কার আমি ডা: স্বপ্নলোচন দত্ত। এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। ইট ওয়াজ জাস্ট আ সিম্পল কেস অফ ডায়াবেটিক হাইপোগ্লাইসেমিয়া, দেখে বুঝতে পারি, কিন্তু ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল। তাই কাউকে কিছু না বলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাই প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে। এখন ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু খাওয়া দাওয়াটা ঠিক করে করতে হবে। আর আমি ফিরে দেখি ওনাকে জড়িয়ে ধরে সবাই কান্নাকাটি করছিল। ওটা ওনার হেলথের জন্য ভালো ছিলনা একেবারেই। তাই সবার সাথে বাজে ব্যবহার করতে হয়েছে, তাই দু:খিত।
যে দরজাটা বন্ধ ছিল, সেই দরজাটা ঠেলে আগেই খুলে দিয়েছিল কুমুদ। এতক্ষণ বাড়ির সবাই বাইরে ছিল তারা সবাই ভেতরে এসে হাঁ করে সব শুনছিল।
কুমুদের ভাই হঠাত বলে উঠলো- তুমি আমার জড়তা ভ্রামকের অংকটা বুঝিয়ে দিতে পারবে ?
স্বপ্নলোচন বললেন - নিশ্চয়ই ওগুলো আমারই করা।
কুমুদের বাবা বললেন - ও তুমিই তাহলে ভূত।
'ভূত না বরফের ছুরি।'
কথাটা বলেই কুমুদ গট গট করে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে কুমুদের ঘরে ঢুকলো স্বপ্নলোচন। দেখুন, ব্যাপারটা হল। আমি হায়ার এডুকেশনের জন্য একটা পরীক্ষায় বসেছিলাম, আমার অনেক বন্ধু পাশ করেছে। যে কারণেই হোক আমি পারিনি।এক বছর বেকার হয়ে বসেও পারলাম না। জীবনে কখনও চেষ্টা করে পারিনি এটা হয়নি। তার উপর মাথায় নিউরোফিজিক্স নিয়ে থিওরি বের করার ভূত ঘুরছিল। ফেল করে মাথাটা পুরো ঘেঁটে গেছিল। ভাবলাম তাহলে গান করি। কিন্তু কি লাভ। চাকরি নিতেও মন চাইলোনা। আমার বাড়ি আছে। কিন্তু এই পৃথিবীতে সব কিছুই ব্রম্ভ, মায়া মনে হল। সব দু:খের মূলে অসন্তুষ্টি। সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে ছিলাম। আমি কে? জীবন কি? আমার উদ্দেশ্য কি? খুঁজতে। আজ খুঁজে পেয়েছি। আপনার বাবা ঠিক হওয়ার পর আপানার মুখের হাসি দেখে। আমি ফিরে যাব। বাড়িতে কোন গ্রামের ডাক্তার হয়ে। ওখানে এরকম কত বাবা মা আছেন। যারা চিকিতসার অভাবে মারা যান। ওখান থেকেই বাকি জীবনটায় নিজেকে এক্সেলেন্ট করবো। আপনারা আমায় এতদিন থাকার জায়গা দিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ। '
ফিরে তাকালো কুমুদ। তাদের ভেতরে এতদিন যে একটা সম্পর্ক ছিল হঠাত সে অনুভব করতে লাগল। সে বরফ টা গলে গিয়ে কখন যে কাউকে সে বর্-অণ করে নিয়েছে নিজেই বুঝতে পারেনি। মুখ ফুটে বলতে চাইলো অনেক কিছু। কিন্তু বেরলোনা। এতদিন এতকিছু করেছে ওর সাথে ক্ষমা চাইতেও কেমন লাগে। বলতে ইচ্ছে হল তুমি ফেল করনি। তার কাকু ছোটবেলায় তাকে বলতেন হিন্দুধর্মের মূল কথা - ঈশ্বর ই আসল কথা, তিনি যে পথে নিয়ে যান, যা কিছু দেন সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত, মা গৃধ কস্যচিত ধনম্ ।
কাকুকে সে জিজ্ঞেস করতো - এরকম কাউকে দেখেছো যে খুব জ্ঞানী কিন্তু সন্তুষ্ট ?
কাকু বলতো - না। তবে এরকম কাউকে পেলে তাকে কখনো যেতে দিস না। কারণ সে সত্যর পথ খুঁজে পেয়েছে।
আজ তাকেই, সেই স্বপ্নকেই চোখের সামনে নিজের চোখে দেখছে কুমুদিনী।যে মাটিতে শোয়, নিজের রান্না নিজে করে খায়, যে বস্তুবাদী চিন্তা থেকে দূরে।এই প্রথম তার ঘুড়ির মুখে এত কথা শুনলো আর হাসি দেখলো কুমুদ।
ঘুড়িটা একটু হেসে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।হয়তো কোন খোলা আকাশের সন্ধানে।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...