Monday, October 6, 2025

মনের কথা - পর্ব ৬ - ভয়

 খুব ছোটবেলায় ভূতের ভয় পেতাম। টিভির স্ক্রিনে যখন সিনেমায় একটা মানুষ উল্টোদিকে উল্টে গিয়ে চার পায়ে তেড়ে আসে ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। আরেকটু বড় হলে যেটা শুরু করলাম সেটা হলো নিজে ভয় পেলে নিজের ভাইকে ভূতের ভয় দেখানো। ব্যাপারটা কিরকম? বিয়েবাড়িতে খেতে বসেছি। চারিদিকে আলোচনা চলছে বর কেমন? বউ কেমন ময়দা মেখেছে! মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে কি কি দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎ পাশে বসা এক দাদু চিল্লিয়ে উঠলো - "আরে ছেলেটার পাত খালি, লুচি দাও একে।" যে লুচিওয়ালা সে এসে আমার পাতে দুটি লুচি গুনে গুনে দিলো আর তার সাথে দাদুর আবদার - "এসেছো যখন আমাকেও দুটি দাও। " তো, নিজের লুচি নিয়ে ফেটিস্ আছে নিজে ডেকে খাও। না, ভাবখানা এরকম লুচিওয়ালা এদিকে এলো বলেই চাইলাম, নাহলে চাইতাম না। যাই হোক, প্রসংগে ফিরি। কথা হচ্ছিল ভয় নিয়ে। ভয় সবাই পায়। যে ভয় পায়না সে হয় শিশু নাহলে তার এম্যিগডালার মার্গারিতা হয়ে গিয়েছে।  আরেকটু যখন বড় হলাম, বুঝলাম ভূত বলে কিস্যুই নেই। সব আমাদের মস্তিষ্কের Perception-Cognition-Action র খেলা। তাবলে কি ভয় পাওয়া ছেড়ে দেবো ? না। এরপর বাড়ির লোকজনকে ভয় পেতে শুরু করলাম, তারপর বাইরের লোকজনকে। তারপর নিজেকে, সময়কে, পরীক্ষাকে, একা থাকতে, ভালোবাসাকে .... আমাদের ভয় পাওয়ার তালিকার কোন শেষ হয়তো বা নেই।

এখন কেউ যদি আমায় বলে - 'আমি তোমায় ভালোবাসি।' আমি প্রচন্ড ভয় পাবো। কারণ, আমার এম্যিগডালা amigo শুনলেই ভয়ে ঠিকরে ওঠে। ওই যে সময়কেও ভয় পাই যে। আজ যে বলবে amigo, কাল সে বলবে - কে তুমি - কোথাও কি দেখেছি আগে গো?
সবকিছু কি ক্ষণস্থায়ী, তাইনা?  বছর ঘুরতে না ঘুরতে ট্রু লাভের শীঘ্রপতন হয়। আর কোনভাবে বিয়ে হলে মানুষ এটাই ভাবে যে ভালোবাসার মানুষটা তার সম্পত্তি হয়ে গেলো। আমার ছাগল - তাকে নিয়ে যা খুশি করা যায়। ইচ্ছে হলে ঘাস খাওয়ালাম নাহলে বলি দিলাম। ভালোবাসায় যে মুহূর্তে অধিকারবোধ জন্মায়, সে মুহূর্তে সে তার শুদ্ধতা হারায়। সেখান থেকেই যত ঝামেলা, ঝগড়া, মারামারি, কাটাকাটি। অধিকারবোধ না দেখালে যদি চলে যায়? চলে যায়, যাবে। যাক্‌ না। সেই অমোঘ কথা -


'কস্য মাতা কস্য পিতা কস্য ভ্রাতা সহোদরঃ। 

কায়ঃপ্রাণৈর্ন সম্বন্ধঃ কা কস্য পরিবেদনা। '


এ পৃথিবীতে কে কার?
যে চলে যেতে চায়, তাকে মাথা নীচু করে হাসিমুখে চলে যেতে দিতে হয়, আটকে রাখতে নেই। সেখানেই ভালোবাসা মুক্তি পায়। মানুষ মুক্ত হয়।
"I am free, that's why i am lost"
হারাতেও যদি ভয় পাও, love is not for you...
You seek just attachment..
and you know - " What you seek, is seeking you !"
হ্যাঁ মনে পড়বে কখনো চলার পথে। স্মৃতির আর কি দোষ? তাবলে প্রেমিক পথ হারাতে কখনো ভয় পায়না। স্মৃতির আস্তাবলের সব থেকে তেজী ঘোড়ার পিঠে চাবুক মেরে সে হাসিমুখে Kafka বাণী বলে -
"I wish the world were ending tomorrow. Then I could take the next train, arrive at your doorstep in Vienna, and say: 'Come with me, Milena. We are going to love each other without scruples or fear or restraint."

Sunday, October 5, 2025

মনের কথা- পর্ব ৫ - This is bee-zzness

 "ব্যবসা" শব্দটা শুনলেই গড়পড়তা বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন নাক সিঁটকে ওঠেন। আচ্ছা, তাহলে দুটো সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন তোলা যাক।

পৃথিবীর সব থেকে বড় ব্যবসায়ী সংস্থার নাম কি? আর সেই কোম্পানির কর্মচারী-ই বা আনুমানিক কতজন?
না আমি Apple, Amazon, Microsoft, Wallmart এসবের কথা বলছিইনা। যার কথা বলছি তার ধারে কাছে নেই এরা। পাঠক ভাবছেন, এ এবার কার কথা বলবে রে ভাই?
আমি বলছি পৃথিবীর সব থেকে বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান - 'সমাজ' র কথা। কি পছন্দ হলো না উত্তরটা। বেশ তাহলে ব্যাখ্যা দিই। ব্যবসা মানে কি? "অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় ব্যবসায় এক ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড (বিজ্ঞান) যেখানে নির্দিষ্ট সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন বা লাভের উদ্দেশ্যে লোকজনকে সংগঠিত করা হয় ও তাদের উৎপাদনীয় কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।" ( Source - Wikipedia)
এবার? পরিষ্কার হলনা? সে কি? কোনদিন ভাবেনই নি এভাবে? আমি ভাবাচ্ছি। সেই ছোট থেকে ভাবুন। আপনার বাবা-মা- পরিবার যে তাদের লোকজনকে সংগঠিত করে তাদের উৎপাদনীয় কর্মকান্ডকে রক্ষণাবেক্ষণ করলেন, সেটা কবি কেন করলেন? এর উত্তর জানেন না আপনি? অবশ্যই বিবাহ এক সামাজিক কর্মকান্ড। ইহা বৈধ। এবং লাভের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আপনার জন্ম হয়েছে এই আশাতেই যে আপনি আপনার পরিবারের প্রয়োজনে ও বার্ধক্যে কাজে আসবেন। আপনার নিজের প্রয়োজনকে গুলি মারতে হবে সবার আগে এর জন্য। তার জন্য আপনাকে বিবাহ করতে হবে। তাহলে আপনার ব্যবসা লেগে গেলো। এই ব্যবসায়িক রিলেরেসে সূক্ষ্ম অনুভূতির জায়গা কোথায়?? আপনি একটা ব্যবসায়িক প্রোডাক্ট। হয় পরিবারে নয় সমাজে আপনাকে সামাজিক ভাবে বৈধ নিয়ম অনুযায়ী লাভ দিয়ে যেতে হবে। নাহলে খুব বিপদ। ওরা রেগে যাবে। তখন শাস্ত্রের শ্লোকের কথা উঠবে। পোয়েনজিতের "বাবা কেন চাকর" সিনেমার কথা উঠবে, কিন্তু বাবা কেন মা কে চাকর বানিয়ে রেখেছে সেই কথা উঠবে না।
উঠবে আপনি কতটা স্বার্থপর আর নীচ। কেউ দেখবেনা আপনি কিভাবে আপনার জায়গায় এসেছেন। আপনি কাজের কিছু হলেন - তো ব্যবসা আর আত্মীয়ের সংখ্যার অভাব হবেনা। নাহলে আপনার অবর্তমানে আপনাকে নিয়ে মিটিং বসবে কিভাবে আপনার মতো ছোটলোক কে পারিবারিক তথা সামাজিক ব্যবসায় কাজে লাগানো যায়। Free will, emotion এগুলো ওই দু তিনটে বইতে দাগ দেওয়া মার্কামারা রবীন্দ্রসংগীত কলার টিউন লাগালেই হবে। ছেলে হলে মাইনেটা কিন্তু মাসে এক লাখের উপরে চাই-ই চাই। নাহলে ছেলে হাঁস। এরপর চাই এক উচ্চ শিক্ষিত বুদ্ধিমতী বউমা, কিন্তু যে ঘরে এসে কাজের মাসির কাজ করবে ( ভালো ভাষায় হোম-মেকার) আর বৈধভাবে সন্তান উৎপাদন করে তার দেখভাল করবে। সোজা কথায় একটা পরিবারকে যদি সমাজের ইউনিট ভাবা হয়, সে পরিবারে work from home করবে তার বউমা। প্রথম কয়েকবারের দাম্পত্য কলহের একমাত্র সমাধান - একটা বাচ্চা তো নিতেই হবে। ব্যবসায়িক বুদ্ধি আনতে হবে তো মাথায়! বাচ্চা নেওয়ার পর বউমা, ছেলে ক্লান্ত। ঘুমানোর সময় নেই। ভালোবাসা থাকলেও কবে উড়ে গেছে। কিন্তু এবার বড় ছেলের সাথে খেলবে কে? অতএব, আরেকটা বাচ্চা নাও। সমস্যা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ইত্যাদি হাজার হতে পারে, দুয়ারে সমাধান একটাই - কি ঘরে কবে কার্তিক আসছে? কবে হবে? কাজের জায়গাতেও একই প্রশ্ন। আরে নিজের ঘুমানোর সময় নেই তো কি? বয়স থাকতে প্রোডাক্ট না তৈরি করলে পরে কিন্তু আফশোস হবে! এই যে এত খাটছো, এত দো-তালা বাড়ির বিপুল (!) সম্পত্তি কার জন্য করছো? না,না নিজের জন্য বললে তো ঠিক এলগরিদম এ মিলছেনা।
এবার ঘরে যদি মেয়ে হয়, তখন মুখটা একটু ভার হয়ে গেলো। কিন্তু মেয়ে একটু বড় হলেই বাড়ির লোক বুঝতে পারে তার মেয়ের তথাকথিত ভাই থুড়ি বন্ধুদের লাইন। এতে লাভ তো অনেক বেশি। ফ্রি তে প্রচুর ম্যান পাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সেখানে হেল্প হয়ে যাচ্ছে। কেউ ডিম এনে দিচ্ছে, কেউ মোবাইলের ব্যলান্স ভরে দিচ্ছে তো কেউ এসে ফ্রিতে বডি-ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। কারণ ভারতীয় সিনেমা থেকে কি ব্যবসায়িক শিক্ষা পেলাম? মেয়েকে পটানোর আগে তার বাবা-মা কে পটাও। Poetry, kind heart - ব্যবসা তে এর জায়গা নেই। কবিদের জায়গা অন্ধকার ঘরে এক কোণে আর ড্রেনের জলে। এবং অবশ্যই যার সাথে বিয়ে হবে সে যেন মেয়ের থেকে বেশি আয় করে আর খুব বড় প্রতিষ্ঠিত পরিবার ( পড়ুন ব্যবসা) থাকে। এখানে যায় আসে না সে মানুষ কেমন, দুটি জীবনানন্দের কবিতা জানে কিনা। কি বোঝালাম এতক্ষণ ! This is beeezzness.
এবার এখানে একটা সামাজিক দ্বিচারিতা আছে। বউমা হলে ঘরের কাজের লোক আর নিজের মেয়ে হলে ( সে যত গর্ধ-শিক্ষিতই হোক না কেন) জামাইকে নিয়ে নিজের ঘরে ( যদি নিজেরা তুলনামূলক প্রচুর টাকার মালিক হয়) ঘর-জামাই, অন্যথায় আলাদা থাকতে হবে শ্বশুর-শাশুড়ি-দেওর-ননদের বিষাক্ত ছোবলের বাইরে গিয়ে। এবার যুক্তি দিয়ে ভাবলে ইহা দ্বিচারিতা। কিন্তু ব্যবসা দিয়ে ভাবলে - This is pure and classic beeezzness ( বিশ্বাস করুন আসল ব্যবসার বানান আসছেনা)।
তো এবার বলুন এলন মাস্ক বড় নাকি আপনার মত এক জীবন্ত রোবোট তথা বুদ্ধিমত্তার উত্‌পাদনের ব্যবসা করা সমাজের প্রতিনিধি আপনার পরিবার বড় ব্যবসায়ী?
তফাৎ একটাই এলন মাস্ক রা পৃথিবীতে এলেন মাস্ক না পরা ব্যবসায়ী হয়ে। আর সমাজ হল আবেগী মুখোশের আড়ালে ব্যবসায়ী। একবার এই মিথ্যাচার আপনি যদি বুঝে যান আপনাকে এই সমাজের 'থ্যানোস' উপাধি দেওয়া হবে। সব মেনে নেওয়া যায়। শুধু আমাদের মত লোকজনকে সমাজ থেকে বের করে দেওয়ার আগে ওরা একবার যেন হাসিমুখে বলে দেয় - This is beeezzness!!!

একমিনিট তাড়াহুড়ো করবেন না। লাইন দিয়ে আসুন। গালাগালি দেওয়ার সুযোগ সবাই পাবেন! This is bee-zzness!!

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...