Monday, May 18, 2020

সমালোচনা

বাঙালিরা ঠিক কতটা ফাঁপা হয়? না, আমি অবশ্যই সব বাঙালিদের কথা বলছিনা। আমি বলবো বেশিরভাগ বাঙালিদের কথা। একটা ঘটনা দিয়ে লেখাটা আরম্ভ করি। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে। এর আগে স্কুলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কোন বিষয়ে আমি পুরস্কার কখনো পাইনি। এমনকি আমি যে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি সেখানে একজন দিদিমণি আমাকে থাপ্পড় মেরে বলেছিল - তোর মত ক্যালাসের দ্বারা আর যাই হোক আঁকা হবেনা।
 বাংলা তে আমি নামে মাত্র নাম্বার পেতাম। আমি ক্লাস সিক্স থেকে লেখা-লিখি করি। মানছি সেগুলো ভালো লেখা নয়৷ কিন্তু লিখতাম। কেউ সেগুলো কোন পত্রিকা তেও ছাপেনি কোনদিন৷ স্কুলের পত্রিকাতে আমার জায়গা হয়নি৷ আমি কোন বিতর্ক সভাতে অংশগ্রহণ করিনি৷ কারণ আমার মনে হত ওখানে বিচার হবেনা। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় চুপচাপ লিখে আসতাম। কোনদিন সান্ত্বনা পুরস্কার জোটেনি। প্রসংগত, আমি স্কুলের কোন শিক্ষক মহাশয়ের কাছে কখনো টিউশন পড়িনি৷ এরপর জীবনে একটি ঘটনা ঘটল। নরেন্দ্রপুরে একটি ইন্টারস্কুল প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়ে গেলাম। তারপর থেকে প্রতিবছর পত্রিকায় আমার লেখা ছাপানো হল। আমি না চাইলেও যেচে লেখা নিয়ে যায় পত্রিকার সম্পাদক। দেবোনা বললে স্যারদের দিয়ে লেখা চাওয়ায়। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাতে পরপর দু বছর পুরস্কার। তারপর প্রতিযোগিতার নিরপেক্ষতা নিয়ে ভেবে আমিই আর অংশগ্রহণ করিনি। বাংলা তে আগের থেকে নাম্বার বাড়লো৷ কিন্তু সর্বোচ্চ নাম্বার পেলাম না। সর্বোচ্চ পেলাম মাধ্যমিকে। তারপর এগারো বারো তে পরীক্ষায় আংবাং হাবিজাবি যাই লিখেছি আমার বাংলার নাম্বার সবচেয়ে বেশি এসেছে৷ আরো অনেক কিছুই লেখা যায়, তবে এই লেখার উদ্দেশ্য কোন বিশেষ স্কুল বা কোন বিশেষ শিক্ষক মহাশয় নয়। যেখানে গোটা জাত একই রোগে আক্রান্ত সেখানে আমি এত নরম জায়গা নিয়ে সমালোচনায় নিজেকে আবদ্ধ রাখতে যাবো কেন? আমি সেই সব বাঙালি জাতির বিজ্ঞ আঁতেল দের ঢ্যামনামি নিয়ে লিখছি৷ গোটা জাতটা কত প্রতিভাকে উঠতে দেয়নি৷ সে বিজ্ঞানের সুভাষ মুখার্জি থেকে শুরু করে আর্টের ঋত্বিক ঘটক। তোমরা কয়েকটা বই মুখস্ত করে নিজেদের বিশাল বিজ্ঞ আর আঁতেল ভেবে ফেলো। এখন তো বই পড়তেও লাগেনা, গুগুল বাবা আছে। করেছোটা কি? নিজের জাতকে নিজে ভাতে মেরেছো । পাশের বাড়ির কেউ ভালো কিছু করলে আড়ালে তাকে নিয়ে সমালোচনা করেছো।  তার চরিত্র খারাপ, তার প্যান্ট ছোট ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন আর্টিস্ট উঠতে চাইলে এমন ভাব দেখিয়েছো তোমার এত সময় নেই তার আর্ট বোঝার, তুমি রোজ পায়খানা করে পিকাসোর ছবি দিয়ে পেছন মোছো। ভ্যান ঘঘ তোমার বাগানে আম চুরি করতে এসে মাঝে মাঝেই কানমলা খায়। আর তুমি শুনবে আমার কাজ। আমার কি যোগ্যতা আছে তোমার মত গুরুদেবের এক্সটার্ণাল ইয়ার ক্যানালের ইয়ার ওয়াক্সে গিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার। দিনের শেষে তো সেই রঙীন ছবি দেখে আত্মনির্ভর হও। তোমার দৌড় জানা আছে। পনের আগস্টে বুক ফুলিয়ে জয় হিন্দ আর বাকি দিনে গান্ধীজীর ছবি টাঙিয়ে টেবিলের তলায় হাত।
আজ মনটা প্রচন্ড ভারী। তাই এসব কথা লিখতে বাধ্য হলাম। আমি একটা গিটারে গান করলে বলবে পূর্ণ এরেঞ্জমেন্ট দরকার, গিটারের টুংটাং এ ঠিক জমছে না । পূর্ণ এরেঞ্জমেন্টে করলে বলবে এত যন্ত্রের আওয়াজে কিছু শুনতে পেলাম না। এই করলে বলবে ওই, ওই করলে বলবে এই। তুমি একটি ঘৃণাপূর্ণ প্রজাতির ড্রেনের জলের কীট যারা কাঠিবাজি করে বেড়াতে ভালোবাসে। তোমাদেরকে সেই ছোট থেকে কোনদিন পাত্তা দিইনি৷ আজো দিইনা। আমি যাই কাজ করি, সেটা আমার কাজ। শুনতে ইচ্ছে হলে শোনো। নাহলে শুনোনা। পড়তে ইচ্ছে হলে পড়, নাহলে পড়তে হবে না।  মিটে গেল। আমার কাজ ভালো না লেগেও যদি তুমি যেচে এসে কাঠি করতে থাকো, তার মানে তোমাকে আমি কাঠি পোকা ফ্যান হিসেবে ধরে নেবো। বাকিদের আমি সম্মান করি।যারা সত্যি নিজেরাও গুণী আর আমার ভুল ধরিয়ে আমাকে আরো ভালো কাজে উত্সাহ দিয়ে চলেছে। যারা আমাকে ভালোবেসে আরো কাজ করতে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছে। আসলে এখনো কিছু সত্যিকারের মানুষ আছে, যাদের জন্য এই কাঠিপোকারা পরজীবী হিসেবে টিকে থাকার জন্য একটা চায়ের দোকান, একটা সমাজ আস্ত পাচ্ছে।



*****



আমি যে আমার মনের কথা বলবো কা'রে,
বুঝবে আমায় কোন্ জন?
সব জায়গায় ঠোকর খেয়ে, ক্লান্ত এই মন।
তেমন করে বুঝবে, শুনবে আমায় কোন্ জন?

সবাই যে যার ধান্দা শেষে,
ছুঁড়বে ফেলে তোমায়,
তুমি তখন আপন দেশে,
যাবে অকুল স্রোতে ভেসে,
হয়তো কারো অপেক্ষায়।

কেউ নয় ভাই আপন মোদের,
আমরা ভাবের পাগল,
ভাবের সাগরে ডুব দিয়ে ভাই,
দিন হয়ে এল শেষ।
সময়ে কেউ কাছেতে আসে,
আঁকড়ে ধরি তারে,
দিনের শেষে,
কাজ ফুরালে -
বদল করে বেশ।

দরকারে সব ভক্ত তোমার,
যেদিন পাবে আঘাত কারো কাছে,
কেউ রবে না, বন্ধু তোমার -
যদি না থাকে স্বার্থ তাহার -
তোমার আশে পাশে।

কেউ শোনেনা আমার গান,
কেউ বোঝেনা আমার লেখা,
জ্ঞান দেওয়াতে কিন্তু আগে,
মেসেজে তে কলম জাগে।
যদি তোমার যায় না আসে,
কেন তবে জ্ঞানের বহর?
পেলেই বড় পুরস্কার,
তোমার কাছে আমি তখন হয়ে যাবো মহান।
তোমার জীবনে যেটুকু অবদান,
দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে,
আমার ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে,
ফুলের মালা দিয়ে করবে কীর্তন।
যার বাবা দিত গালি,
পুরস্কারের পরে ছেলে,
বলবে আমার, অনেক বড় মন।

ভাবনার আগ্নেয়গিরি ভেতরে ফোঁপায়
কান্না হয়ে,
কেউ শোনেনা,
কেউ বোঝেনা -
কি বেদনা।
আমি শুধু নিজের দেশে -
নিজের কাছে ফাটতে থাকি।।


 *****



নীলরতনের পাঁচ রতন | অষ্টম পর্ব | ভগ্ন অংকুর |

ভগার নাম কি শুরু থেকেই ভগা ছিল? কখনোই না। ওর নাম আমাদের মধ্যে সব থেকে ভালো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে ওকে ওরকম একটা নাম পেতে হয়েছে। গল্পটা বলি তাহলে। MBBS এর একদম শুরুর দিকে এনাটমি প্র‍্যাক্টিকাল ক্লাস চলছে। হঠাৎ স্যার দেখতে পেলেন আমার দিকে তাকিয়ে একজন মুখ ভেঙাচ্ছে।
স্যার ডাকলেন - হেই ইউ, তোমার নাম কি?
ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে বললো - স্যার, অংকুর।
তুমি এদিকে এসো ৷ বলে অংকুরকে একটা ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম ধরিয়ে দিয়ে বললেন - তোমাকে আমি কঠিন প্রশ্ন করবোনা। তুমি এটা ধরে বিভিন্ন অংশের নাম বলো।

অংকুর সবই ঠিক ঠাক বললো, শুধু ক্লাইটোরিস এ আংগুল দেখিয়ে বললো - স্যার এর বাংলা টা মনে আছে। ইংরেজিটা মনে নেই। আসলে বাংলা মিডিয়াম তো।
স্যার বললেন - বেশ বলো।
অঙ্কুর বললো - ভগাঙ্কুর।
ব্যাস্ ক্লাসে সেই যে হাসির রোল উঠেছিল সেই থেকে অংকুর কে দেখলেই সবার ভগাঙ্কুরের কথা মনে পড়ে৷ সেখান থেকে ছোট হতে হতে ভগা। বাকিদের নীলাদ্রি থেকে নীল, বিশ্বজিৎ থেকে বিশু, শিলাদিত্য থেকে শীলু আর আমার ধর্মদাস থেকে ধীরু। শিবেনের আসল নামটা কি মনে নেই। আমি ছিলাম বাংলার বদ। শিবেন বং এর ব্যাড। ভগার ছিল সং সাজার শখ। নীলের চং আর বিশুর ল্যাদ৷ এই নিয়ে ছিলো আমাদের জীবন। আমরা স্বপ্ন দেখতাম সমাজ থেকে wedding ceremony  র ধারণা বদলে weeding ceremony হবে একদিন। তো যাই হোক্। বিশু সেদিন দীঘার সমুদ্রের ধারে যে গল্পটা বললো সেটা হলো বিশু একবার ভগার বাড়ি গিয়েছিলো। ভগার পাশের বাড়ির মেয়েটাকে দেখে ওর মনে প্রেম জেগেছে৷ মেয়েটার নাম সায়নী৷ ঘটনাচক্রে ও ভগার বন্ধু৷ কথাটা ওর ভগাকে বলার সাহস নেই। তাই আমায় বলছে। আমি ওখান থেকে ফিরে ভগাকে বললাম৷ ভগা রেগে তো গেলোই না বরং আমার কানে কানে বললো - ভাই চলো, হস্টেল ফিরে মস্তি হবে।
ভগা বিশু কে বললো - কোন চাপ নেই ভাই। তোদের দেখা করানোর দায়িত্ব আমার। ও আমার বন্ধুই হয়।

কয়েকদিন পরে ক্লাস বাংক করে মানি স্কোয়ার মলে আমাকে ধরে নিয়ে গেল ভগা, অবশ্যই সাথে বিশু আছে। আর ওদিক থেকে দেখা করতে আসছে মেয়েটি। মেয়েটি প্রেসিডেন্সির ছাত্রী। ওকে ভগা বলেছে - এমনি তিনজন গল্প করবো।
বিশু খাওয়াবে।
তিনজন মানে আমার তখনও যাওয়ার প্ল্যান ছিলনা। শেষ মুহূর্তে ভগা আর বিশু আমাকে অনেক জোর টোর করে নিয়ে গেল। প্রথম দৃশ্য আমরা ফুড কোর্টে অপেক্ষা করছি। সায়নী এসে সবার সাথে হ্যান্ড শেক করলো। পরিচয় হল। ও তিনটেই চকলেট কিনেছিল। আমি বাড়তি। বললো ভাগ করে খেয়ে নিতে। সায়নীর হাত থেকে যখন চকোলেট টা নিল বিশু দেখি পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। চোখ দুটো স্থির। পিউপিল ডাইলেটেড। বুঝলাম ওর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। আমরা কেএফসি তে খাবো বলে কেএফসি র সামনে বসলাম। বিশু দেখি তখনো সায়নীর দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললাম - ঠিক আছে, তোরা কথা বল্। আমি কেএফসি তে অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসি।
বলে উঠতে যাবো, বিশু বললো - নো, ম্যান্। আজ আমার ট্রিট। আমি যাচ্ছি।
ভগা আমার কানে কানে বললো, এই ছেলের কিছু হবে তোর মনে হয়?
আমরা গল্প করছিলাম খেতে খেতে। বিশু হাঁ করে তাকিয়ে ছিল।
খেয়ে দেয়ে উঠে সায়নী বললো একটা জামাকাপড়ের সেকশনে ঢুকবে। সায়নীর পেছনে সবসময় বিশু হাঁটছিল। সায়নী যখন ওকে বলছে - এই তুই সামনে হাঁট।
ও আরো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে। আর ভগা ওকে বলছে- যা ওর সাথে আঁঠার মতো সেঁটে থাক্। নাহলে হবে কি করে৷
বিশু আবার চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থা সায়নী জামাকাপড়ের লেডিজ সেকশনে ঢুকে অন্তর্বাস দেখছিল। তাকিয়ে দেখে বিশু হাঁ করে তাকিয়ে।
আবার ওকে তাড়িয়ে দিল। শেষে বিশু বেরিয়ে আসার সময় নার্ভাস হয়ে সিঁড়িতে স্লিপ খাচ্ছিলো। ভগা ওকে বললো - যা সায়নীর নাম্বার চা।
বিশু ও হ্যাঁ বলে নাম্বার চেয়ে আনলো।
সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে ফিরেই প্রোপোজ। প্রোপোজ মানে কি একদম কাঁচা পনীরের মত ভাষা। আমি তোমায় ছাড়া বাঁঁচবোনা।
যা হয়। ব্লক। আমি আমার নাম্বার থেকে একবার বোঝাতে গেলাম। আমাকেও ব্লক করে দিল। আমি বিশুকে বুদ্ধি দিলাম - ভাই তুই বেলুনে সরি লিখে প্রেসিডেন্সির সামনে দাঁড়িয়ে থাক।
প্রসংগত বলে রাখি, আমি কিন্তু তখন এতটা ঢ্যামনা ছিলাম না। আমি সত্যিই ভেবেছিলাম জীবনটা বাংলা সিনেমার মত কিছুটা তো বটেই।
বিশু একটা কাগজে লিখে নিয়ে চলে ও গেছিল। প্রেসির সামনে প্রায় এক সপ্তাহ এরকম দাঁড়িয়ে থাকা ওর রুটিন ছিল। শুধু কাগজটা বের করেনি। করলেই মার টা খেত।

ভগার দৌলতে বিশুর জীবন টা ভগ্ন অংকুরের মত হয়ে গেছিল। যাই হোক্, এই সময়ে গালাগাল ছাড়া এমনি ডাকতাম না। কোথাও গাল দিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। যত রকমের বাজে কাজের বুদ্ধি আসতো আমার আর শিবেণের মাথায়। একদিন ঠিক করেছিলাম ফার্মার হেড ম্যাডামের ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে তাস খেলবো। কারণ ক্লাস তো চরম বোরিং। আমরাই হয়তো বোকা ছেলে। বুঝতে পারিনা। বাকিরা চালাক ক্লাসে বসে ঘাড় নাড়ে। যাই হোক আমরা যে শেষ বেঞ্চে বসে কিছু একটা কুকর্ম করছি, ম্যাডাম সেটা বুঝতে পেরে ক্লাসের মাঝে পাঁচজনকে দাঁড় করিয়ে দুজনকে বের করে দিলেন। আর আমি, ভগা আর শিবেণ কে ক্লাসের তিন প্রান্তে বসিয়ে দিলেন। খোলা দরজা দিয়ে দেখছিলাম বাইরে বেরিয়ে বিশু আর নীল লাফাচ্ছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে অংগভংগি করছে। যেন কৃতিত্বটা তাদেরই। এরকমই একবার আমার পাশে শিবেণ বসে। ফরেন্সিক মেডিসিন হেড এর ক্লাস চলছে। শিবেণ শেষ বেঞ্চে বসে হেডস্যারের ছবি আঁকছে। আমি মন দিয়ে তার ছবি আঁকা দেখছি। হঠাৎ মুখ তুলে দেখি, সামনে স্যার দাঁড়িয়ে শিবেণের ছবি আঁকা দেখছে। আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। শিবেণকে স্যার ডিপার্টমেন্টে ডেকেছিলেন। ওখানে ওর সাথে কি হয়েছিল শিবেণ আজ ও বলেনা।
যাই হোক্, এভাবেই একদিন তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা চলে এল। আমাদের মধ্যে চুক্তি হল কে কত কম পড়ে বা না পড়ে বাজে ভাবে ফেল করতে পারে এটা এই সেমে পরীক্ষা হবে৷ যে সফল হবে সবচেয়ে তার দুঃসাহস সব থেকে বেশি। আমি না পড়ে সেম দেওয়ার কয়েকটা নীতি আবিষ্কার করলাম। নাম দিলাম - রুল অফ নাইন।


(To be continued)
(Share the story with your friends if you like it.. Follow the blog to stay connected) 

Friday, May 15, 2020

আবোলতাবোল দিনলিপি

আমার কাছে অনেকেই মিউজিক শিখতে চেয়েছেন। বিশেষত সবাই যেহেতু গিটার বাজাতে দেখেন, তাই গিটার শিখতে চেয়েছেন। আমি আজ অব্দি একজনকেই কিছু শেখানোর চেষ্টা করেছি। সে এখন মিউজিক নিয়েই কাজ করছে। আমার খুব ভালো লাগে এটা। শেখালে শেখানোই যায়। কিন্তু যে শিখবে তার যাপন বা দর্শন আমার পছন্দ না হলে তাকে শেখাই কেমন করে? টাকার জন্য তো শেখাবোনা। শেখালে ভালোবেসেই শেখাবো। সেখানে যাপন টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাইকেই ভালো করে বুঝিয়ে সরে আসি ৷ যে শিখবে তাকে আমার সাথে বাঁশঝাড়ে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চুপ করে বসে থাকতে হবে। তাকে নদীর পাড়ে গিয়ে শব্দ শুনতে হবে৷ নাহলে শিখিয়ে লাভ কি? কয়েকটা কর্ড বাজিয়ে গান নেট খুললেই শেখা যায়। ওই প্রথাগত শিক্ষা নিজেও ওভাবে শিখিনি, কাউকে খুব টাকার অভাব না পড়লে শেখাবোও না কখনোই। আর সব থেকে বড় কথা কোন বিজ্ঞানী তো নতুন ভাবে পৃথিবীর নিয়মকে ব্যখ্যা করবে। নতুন কাজ আনবে। তার পক্ষে অ আ ক খ ওভাবে শেখানো খুব কষ্টকর কাজ৷ ওটা শিক্ষক, অধ্যাপকদের কাজ। ওনারাই করুন। আর সমালোচক রা মুখে মাংস চেবাতে মুখ বেঁকিয়ে বলুক - এটা কোন কাজ হল? আমার এসবে কিছুই যায় আসেনা। সুরের কৃষক আমি, চাষবাস করা কাজ। একদিন নিশ্চয়ই অনেক লোকে বুঝবে আমার কাজের একটা নতুন ধারা কে, আমাকে।
However, do not follow my path.. I repeat do not follow my path.. As its much more difficult than the conventional way.. I risked my everything for this.. My life, my career, my sanity, my reputation, my money.. I have realised the advantages of unconventional way of learning.. Its funny, end result is fruitful.. And u will never know the end.. Rabindranath to Tesla.. Most revolutionary philosophers are unconventional learner..


****


I have received many request in past months from my well-wishers ( at least they think that) to stay as myself that people seem i was. A love song or poem writer, a soft spoken person, gentleman. A good boy who rarely speaks. People cannot accept this form of mine. I am losing my audience, viewers for this reason and i should care about that. Now i am telling a story.

When i was in college, I watched arrogant artists and thought how could they live that life. I watched musicians of folk, rock genre and wondered that " Is that a life? " I couldn’t understand them.  So i tagged them as psychopath, abnormal, unstable, useless, anti-social etc. Later, i have gone through a heavenly(!!) process that has made me as this. I have seen so called normal people and analysed them as i am an alien. After that i started reacting to their behaviour. I was true to myself.. Now i am in a corner of a world, and i can clearly understand the normal world. I have found so much loopholes that made me unstable. Repeated brainstorming and so much beloved (?) behaviour from normal people has made me this what you called abnormal. May be i am the same, but not to you, **sho*es.. If you don't like my work, don’t watch, read. I don’t do art to get people’s approval.


****


যদি এরকম হয়,
দুটো পথ থাকে,
একটা আলোর দিকে,
আর একটা অন্ধকার।
আমি অন্ধকার পথে হাঁটতে চাই।
আলোর ট্রেনিংটা উজ্জ্বল পথে ভালো শেখা যায়না।
আমি ২০০৩ এর রানার্স আপ -
ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাপোর্টার হয়ে কাটাতে চাই,
একটা সীমাহীন অহংকার নিয়ে।
ওই হার থেকে ২০১১ র স্বপ্ন দেখতে চাই।
আমি ব্রাজিলের ২০০৬ এ অবাক বিদায়ের সংগী।
আমি মেসির ২০১৪ র আর্জেন্টিনা হতে চাই।
কিংবা বার্সার পর পর চারবার বিদায়ের সংগী।
আমি যেন সবসময় হেরে যাওয়া দলে থাকি।
সেখানে জেতা শেখা যায়।
যদি এরকম হয়,
দুটো পথ থাকে,
যার একটা সাফল্যে মোড়া ছায়া প্রকাশনী,
আর একটা ব্যর্থতার কাঠিন্যের ছাঁচে,
কপালের ভাঁজের ছোটনাগপুর মালভূমি।
আমি দ্বিতীয় পথে হাঁটতে চাই।
ওই পথেই পেশী শক্ত হয়,
স্নায়ু তীক্ষ্ণ হয়,
দর্শন হয়ে ওঠে পরশপাথরের মত অনন্য দামী।
জিপে চেপে জংগল সাফারি হয়,
জংগলকে চেনা যায়না ।
যদি এরকম হয়,
দুটো পথ থাকে,
যার একটা রেড কার্পেট মোড়া,
মুখে হাভানা চুরুট আর
চারিদিকে ফ্যানেদের ঢল।
আর একটা একাকী হ্রদের ধারে,
একলা বিকেলের জমে যাওয়া রোদে -
মুখে বিড়ি আর ছেঁড়া পকেটে,
এসরাজের সুর।
আমি দ্বিতীয় পথে হাঁটতে চাই।
মৃত্যু সবার আসবে আজ নয় কাল,
কাজ দিয়ে মানুষের মনে বাঁচতে চাই।
আমি সমাজের অভিধান নতুন ভাবে লিখতে চাই ।।

©অবচেতন

***

এই সংকট সমাপ্ত হইলে একটি খামারবাড়ি বানাইবো। সেথায় রকমারি খাদ্যশস্য ও ফল-ফুলের কর্ষণ করিবো। আমার নাম হইবে কৃষক সুপ্রভাত। খাদ্যশস্য যাহাতে বায়সে ভোজন না করিতে পারে , একটি যন্ত্রমানব স্থাপন করিবো যাহা দূর হইতে আরেকটি যন্ত্রের দ্বারা কেহ পরিচালনা করিতে পারিবে।

খাদ্যশস্য ও ফল-ফূলের তালিকা -
তরমুজ, শসা, লিচু, আম, জাম, আঙুর, আপেল, ভূট্টা, গম, ধান, আলু, পেঁয়াজ, টম্যাটো, লেবু, কাঁচালঙ্কা, পেয়ারা, সবেদা, কলা ( এই একটি গাছ নানারকম উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইতে পারে। কলাপাতায় খাবো.. মোচার তরকারি... কলা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাদ্য হিসেবে গৃহীত হইতে পারে। কলামান্দাসে জলে ভাসিলে প্লবতা বৃদ্ধি পায়, ফলে ভাসিয়া থাকিতে সুবিধা )... ফুলের তালিকায় শুধুমাত্র শিউলি, কদম, ছাতিম ও গোলাপ চাষ করা হইবে।

একটি দেশি আপেল-পাই তৈরির ছোট কারখানা, একটি দেশি ওয়াইন কারখানা, একটি গোরু ও দেশি কুক্কুটীর খামার, একটি দেশি পপকর্ণ  কারখানা, একটি দেশি ক্ষীর ও ছানা তৈরির কারখানা, একটি দেশি মৎস উৎপাদনের হ্রদ, একটি দেশি চিপস্ তৈরির কারখানা, মৌমাছি পালন কেন্দ্র এই খামারবাড়িতে অন্তর্ভুক্ত থাকিবে। উপরন্তু শূলপক্ক কুক্কুটীর মাংস ও আমার বিশেষ নির্দেশের বিরিয়ানি রন্ধনের নির্দিষ্ট একটি স্থান থাকিবে। উক্ত খামারবাড়ির চারিপাশে একটি পরিখা খনন করা থাকিবে ও উঁচু দুর্ভেদ্য প্রাচীরের দ্বারা উহা বেষ্টিত থাকিবে। পরিখার জলে ক্ষুধার্ত কামুক কুমির জলকেলি করিবে। দুষ্ট মানবকুলকে এই সম্পত্তিতে লোলুপ দৃষ্টি হইতে বিরত রাখিতে দুটি দন্তবিহীন ব্যাঘ্র পালন করিবো, যাহারা শুধুমাত্র গর্জন করিতে পারিবে, আবার ক্ষুধার তাড়নায় আমাকে ভোজন করিবার প্রবৃত্তি রাখিবেনা।

Damn, I am going to be rich...


***

আমার খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিভিন্ন পারসনালিটিতে নিয়ে গিয়ে আর্ট বা লেখালেখি করতে।
কখনো টিনেজ, কখনো পরিণত, কখনো যুবক, কখনো বাচ্চা, কখনো শিশু, কখনো পুরুষ, কখনো নারী, কখনো কোন প্রিয় চরিত্র ইত্যাদি। আমি একটা জেনারেশনে বা একটা আর্টে বেশিদিন থাকলে বোর ফিল করি। যা করি নিজে উপভোগ করি, দেওয়ার মত হলে ফেবুতে দিই। নিজের নানারকম স্পেকট্রাম এক্সপ্লোর করা যায়। সবকিছু ফেসবুকে দেওয়া যায় না। তবে যেটুকু দেওয়া যায় লোকজন খুব কনফিউজড্ বা বিরক্ত হয়ে যায়, এটা আমার সব থেকে বড় পাওনা। কারো কারো চরম ভালো লেগে যায়। এরকম ঘটনা আমার সাথে প্রায় হয়ে থাকে যেমন, আমার থেকে বয়সে অনেক বড় কোন স্যারের সাথে আমার দেখা। আলাপ হল। স্যার চোখ বড় করে বললেন - ও তুমিই সুপ্রভাত। তুমি তো আমার থেকে অনেক ছোট।
আমি উত্তরে, আমি সত্যিই অনেক ছোট, স্যার। উল্টোটাও হয়। "তুমি তো আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। "
এতে নিজের মানসিক ব্যালেন্স একটু হলেও ডিস্টার্বড হয়। এই দুদিন আগেই এত হতাশা এসেছিল মনে হল আর নিজেকে নিতে পারা যাচ্ছেনা। কিন্তু যেহেতু বন্ধুদের মতে, আমি একটা সাইকিয়াট্রির বই, নিজের একটা সমস্যাকে ডিফেন্ড করতে আরেকটা সমস্যায় চলে যাই। একটা অজানা হস্টেলের অজানা ঘরে বসে থাকা আমার পক্ষে খুব অসুবিধেজনক। ভাবছি একটা নতুন কিছু আর্ট ফর্ম চেষ্টা করবো।

***

ধনী - এই শব্দের দ্বারা এম.এস.ধোনি কে বোঝানো হয়না, কিংবা যার প্রচুর ধন-সম্পদ আছে তাকে বোঝানো হয়না। বরং যে বেঁচে থাকতে তার যেটুকু সম্বল সেটা যতটা ব্যবহার করতে পারে, তাকেই তত বেশী ধনী বলা যেতে পারে। এটির বিচার পরিস্থিতির সাথে পাল্টাতে পারে।
ধরা যাক্, একজন ব্যবসায়ীর প্রচুর টাকা। এই মহামারীর সময় সে চাইলেই রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতে পারবেনা। কিন্তু ধরা যাক্, তার এত টাকা, সে ঘরেই একটা রেস্তোরাঁ খুললো। সেখানে শুধু নিজের জন্য রাঁধুনি নিযুক্ত করলো। তারা বাড়ি না গিয়ে শুধুমাত্র মোটা টাকার লোভে সেখানে পড়ে থেকে বাবুর আড়ালে খিস্তি করতে করতে বার্বিকিউ চিকেন, মাটন রেজালা রেঁধে খাওয়ালো। কিন্তু কতদিন? ধরা যাক্, তাঁর এত টাকা যে, অনন্তকাল সে এটা চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের জন্য তাকে যে পরিমাণ শ্রম বা মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করতে হবে, যে তার সেই খাবার হজম হবে না। ধীরে ধীরে প্রেসার, সুগার হবে। সে মোটা হবে৷ সেই চর্বি ঝরাতে তাকে ট্রেডমিল কিনতে হবে। একদিন ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় মারা যাবে। লাভবান হবে তার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার। যাদেরকে সে হয়তো সময়ের অভাবে অদৃশ্য দেওয়ালের ওপার থেকে দেখেছে। মৃত্যুর পর কিছুদিনের লোকদেখানো কান্নাকাটির পর তারা সম্পত্তি ভাগাভাগিতে বসবে। সে কঠিন হিসেব। সারা জীবনের দুশ্চিন্তার এই জীবনের পর তাকে ধনী আমার অভিধান অনুযায়ী আমি বলতে পারছিনা। আমার অভিধানে সেই ধনী, যার বাড়ির উঠোনে ঝিঙ্গে, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, পালং চাষ করা হয়েছে৷ পুকুরে টাটকা মাছ। পোলট্রিতে দেশি মুরগি, আর গোয়ালে গোরু আছে। বাঁধ পেরোলেই নদী। সেখানে ফ্যান লাগেনা, এসি লাগেনা। ফাঁকা মাঠে হু হু করে হাওয়া দেয়। রান্নার গ্যাস ও কিনতে হয়না। সব বেসিক টেকনোলজির মাধ্যমে সমাধান করে সে স্বনির্ভর। তার টাকার দরকারই নেই সেরকম। ক্লান্ত দিনের শেষ হয় ছাদে কাঁচের শেডে আকাশে তারা গুনতে গুনতে পিয়ানোতে ইন্টারস্টেলার জ্যামিং করে, দিনের শুরু হয় পেয়ারা গাছে উঠে বাঁশি বাজিয়ে। যে কারো উপর অতি নির্ভর নয়। যার কোন চাকর নেই, যে কারো চাকর নয়। যে তার জীবনলব্ধ শিক্ষা মানুষকে দিয়ে যেতে চেষ্টা করে সফল হয়, সেই ধনী। দুশ্চিন্তা তার একটাই, এই জীবনটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন?


***

|| আমি ভাইরাল হতে চাই ||
রাস্তায় হসপিটাল যাওয়ার বাস ধরবো বলে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় একজন মহোদয় আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন - হে ব্রো, এটা কি মদের লাইন?

প্রশ্নটা অবান্তর ছিলনা। কারণ একটু দূরেই ছিল মদিরার দোকান। আর আমাকে দেখে সবাই মাতাল ভাবে কেন জানিনা। অথচ আমি জল ও কোল্ড ড্রিংক্স ব্যতীত কোনরকম তরল পদার্থ পান করিনা। চা, কফিও না। নিজেকে বোঝালাম প্রশ্নকর্তা তার দূরদৃষ্টির অভাবে আমার সাথে মদের লাইন গুলিয়ে ফেলেছেন৷
আমি বললাম - Bon Jour !! এটা মদের লাইন নয়। তবে মোদের একটা গানের লাইন শোনাতে পারি, দেওয়াল ভাঙো, দেওয়াল ভাঙো, দেওয়াল ভাঙো।

মহাশয় হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে বললেন - শালা পাগল নাকি।
আমি বললাম - আমি পাগল নয়। আমি শুধু চাই আমায় করোনার মত ভাইরাল করো।

ভদ্রলোকটি আমাকে খিস্তি দিতে দিতে মিছিলের শেষ মুখে দাঁড়ালেন। মদের লাইনের আরো কাছে গেলাম। দেখলাম তিনটি স্তরে লাইনে কাজ হচ্ছে৷ প্রথম স্তর লাইনে দাঁড়াচ্ছে। দ্বিতীয় স্তর লাইনে দাঁড়াচ্ছেনা। তারা প্রথম স্তর থেকে কিনছে। কারণ কাউকে দুটির বেশি বোতল একবারে দেওয়া হচ্ছেনা। দ্বিতীয় স্তরের কাছে টাকা বেশি৷ আর তৃতীয় স্তরে পুলিশ আর আমি।
আমি বললাম পুলিশ কাকুকে - কাকু, দাঁড়িয়ে বোর হচ্ছেন? একটা গান গাই ? বাংলা গান।

পুলিশ কাকু বললেন - গাও৷
আমি এবার ঠিক করলাম আমার গান আর গাইবোনা। আন্তর্জাতিক শিল্পীর গান গাইবো৷ একেবারে বাংলা অনুবাদ করে। গাইতে শুরু করলাম - "তোমার শরীরকে ভালোবেসেছি, চুম্বকের মত টেনেছি, ঠেলেছি। হুয়া হুয়া হুয়া... "

পুলিশকাকু - এই বেটা, এটা গান না শিয়ালের ডাক?

আমি - কাকু গানটা ২০০ কোটির উপর লোক শুনেছে৷ গ্র‍্যামি ট্যামিও পেয়েছে জানেন?

কাকু - তাই নাকি?  গ্রানিও পেয়েছে? এর থেকে আমাদের পাড়ার পচা পেঁয়াজকলি, পটল গানে নিয়ে এসে লেখে, ভালোই লেখে।

আমি - কাকু কিন্তু আমার ভাইরাল হওয়াটা??

কাকু - ভাগ্।

আমি - না মানে, ভাগ করে রেট বেড়ে গেলে পরিসংখ্যানের গলদ ধরা পড়ে যাবে।

কাকু এবার এমন ভাবে তাকালো। আমি চলে এলাম। এখন না ভাগলে নিজের গুণ আর ভাইরাল হওয়া হবেনা। পুরো বেগুনের ভার্তা করে দেবে।
অতঃপর রাস্তার ডিভাইডারে একটা পাগল বসে ছিল। তার কাছে গিয়ে, আমি আমার লেখা "আমি পাগল " গানটা শোনালাম। সে বেজায় খুশি। গানটি ১২ তারিখ গাইবো। ফেসবুক লাইভে। সন্ধ্যে ৬ টায়। এতটা পড়ে যারা খিস্তি মারছেন, তারা যেন আমাকে ভাইরাল করে খিস্তি মারেন। আমি দুষ্টু ভাইরাস।





****


মতামত ব্যক্তিগত -
যেকোন রকমের শিল্পীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন থাকতেই পারে। কারণ তারা মানুষ। কিন্তু যেহেতু তারা শিল্পী, তাদের সামাজিক কর্তব্য হল নিজের জায়গাটা ধরে রেখে ঠিক কে ঠিক, আর ভুলকে ভুল বলা। একজন শিল্পী যখন কোন রাজনৈতিক দলের পতাকা ধরে হাঁটেন, তিনি আর শিল্পী থাকেন না। শিল্পীর আবার ব্যক্তিগত দর্শন বলে কিছু হয় কি? শিল্পীর সামাজিক কর্তব্য নিজেকে একটা ধূসর জোনে রেখে দেওয়া। যাতে যেকোন দর্শনে তার আর্ট সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকে৷ যেমন - লিও লেনিন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে যদি বলে, আমি করবোনা, কারণ আমি কমিউনিস্ট নই৷ তাহলে আর কিসের আর্টিস্ট।
শিল্পীদের যেকোন গোষ্ঠীর সাথে কাদায় পাঁকাল মাছের মত সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।


****

আগের পোস্টে কালচার কাকুদের কিছু প্রশ্ন করায় কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট আমার উপর। সখী, কালচার কারে কয়? সে কি কেবলি যাতনাময়? আজ একটু স্বপ্ন দেখাবো তাহলে। জানেন, St louis lambert international airport এ পিয়ানো রাখা থাকে। আর্টিস্ট যারা এয়ার ট্র‍্যাভেল করেন, তারা যাওয়ার পথে পিয়ানো বাজিয়ে যান। ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন। আমি প্রায় শুনি আর স্বপ্ন দেখি। শুধু তাই নয়, সব থেকে বড় কথা যাত্রীরা যাওয়ার পথে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে শোনেন। বিদেশে স্ট্রিট আর্ট কে এরকম হ্যাটা করে দেখা হয়না। আজ কোলকাতার রাস্তায় গান গাইলে পাগল ছাগল বলবে। কিন্তু বিদেশে দেখুন ওটাই ওদের কালচার।  বিখ্যাত আর্টিস্ট রা বিখ্যাত হওয়ার পরেও রাস্তায় দুমদাম নেমে পড়ে পারফর্ম করে থাকেন। চেস্টার বেনিংটনের স্ট্রিট পারফরম্যান্স খুঁজলেই পাবেন। বিদেশে লাইভ মিউজিক শোগুলোতে সবাই দল বেঁধে যান, শিষ দিতে না, একসাথে গাইবেন বলে। একসাথে যখন সবাই গান গায়, তখন প্রত্যেকটা মানুষ একে অপরের মাঝে নিজেকে খুঁজে পান। তখন এই যে মানুষে মানুষে নানা অজুহাতে বিভেদ সেগুলো ভুলে যায় লোকে। সা পাওলো তে কোল্ড প্লে র লাইভ শো আর মুম্বাই তে ওই একই কোল্ড প্লে র লাইভ শোর পার্থক্যটা দেখবেন, বুঝে যাবেন। কোথায় ফারাকটা আছে। আমাদের গান নাহলে উপরে উপরে শুনে রেখে দেবে, ঠিক আছে। কিন্তু কোল্ড প্লে শুনেও মনে রাখতে পারছে না? সাও পাওলো তে তো গাইছে হাজার হাজার লোক একসাথে। মুম্বাই তে কেন পারছেনা? একদিন একটা লাইভ গাইছি রাস্তায়৷ একজন বললো তুমি "নাথিং এলস্ ম্যাটারস্" এর সোলো টা বাজাতে পারবে? মুড গরম ছিল। বললাম - ভাই, Metalica র লাইভ শো তে গিয়ে তাকে বোলো তো সুপ্রভাতের Renovatio র সোলো টা বাজাতে। কি উত্তর দেয়।
একটু ফুটবলে আসি। আমি যেহেতু বার্সিলোনার ভক্ত, ক্যাম্প নৌ এর কথা বলবো। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ শুরুর আগে প্রত্যেকের চেয়ারে নির্দিষ্ট রঙের প্ল্যাকার্ড রাখা থাকে। তারা সেটা তুলে ধরে আর একসাথে প্রায় এক লাখ দর্শক বার্সা এন্থেম গায়। আমাদের স্টেডিয়ামগুলোতে এটা খুব বিরল এ দৃশ্য। তাও শৃঙ্খলার অভাব। এরকম একটা শব্দব্রহ্ম র মধ্যে খেলোয়াড়রা এমনিই ভালো খেলবে। এমনিই তাদের প্র‍্যাক্টিসে উত্সাহ বাড়বে। আর এবার আসি আমাদের মধ্যবিত্ত চেতনা। সায়েন্স টাই একমাত্র সাবজেক্ট, বাকিরা অনাথ বাচ্চা। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং টাই একমাত্র লাইন, বাকিরা বানের জলে ভেসে এসেছে। আমাদের আর্টিস্ট দের অল অর নান ল তে ফেলে দেওয়া হয়। হয় প্রচুর সম্মান, নাহলে পাত্তাও দেওয়া হয়না।
গান করিস? ওটা তো শখে করে। শখে যেরকম লোকে বিড়াল পোষে সেরকম। আঁকিস? এঁকে নিজের ঘরের দেওয়াল ভরিয়ে রেখেছিস। আরে ওর উপর নেরোল্যাক পেন্ট মেরে দে। ধুয়ে যাবে। এটাই তো বিজ্ঞাপন না? আরে ছিঁড়ে ফেলে দে, দেওয়াল নোংরা লাগছে। কি ছেলে বায়োলজি না গাঁতিয়ে ক্যানভাস কিনেছে? আঁকার মাস্টার কেই বের করে দে। বাড়িতে ডবল, ট্রিপল বাথরুম চাই, কিন্তু ঘরে যে একজন আর্টিস্ট আছে তার যে একটা নিসংগ গুহা লাগবে সেটা কেউ ভাবেনা। আরে জায়গার অপচয় শালা। আঁকার থেকে হাগু করবে তাও ভালো।
এটাকে কালচার বলেনা কাকু। এটাকে ভাঁড়ামো বলে। ক্লার্ক তৈরির সিস্টেমের জাঁতাকলে কত ছাত্র ছাত্রীর সৃজনশীল মস্তিষ্ক রোজ ধর্ষিত হয় কে হিসেব রাখে?

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...