যে মানুষটা আমায় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে - আমার দাদু আজ এই পৃথিবীতে নেই ৪৮ ঘন্টা হতে চললো। কিভাবে একজন স্বপ্ন দেখতে শেখে? যখন সে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, হাওয়ায় আলপনা কাটে। দাদু আমায় সেই সাহস যোগাতো - ভয় কি? পড়ে গেলে আমি তো আছি। তুই স্বর্গের দেবতা, তোর আবার ভয়? তুই যা চাইবি তাই পারবি।
আমার আবেগের উদ্বেলতা, ভাষার সচ্ছলতা সবকিছুই দাদুর জন্য। আজ দাদু নেই। এবার ভাবার সময়, এ সবের শেষে দাদু তার প্রতিভার দাম পায়নি। আমিও হয়তো সেই পথেই এতদিন অন্ধের মতো চলেছি। যে কাজ আমি করতে চাই তার জন্য নিজের উচ্চশিক্ষাকে হেলায় ঠেলে দিয়েছি। কি লাভ? আমার জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে কোন ডিগ্রী লাগবেনা। দাদু কি পেয়েছে এসব করে? কিচ্ছু না। আমি এই পথে গেলে আমিও হতাশায় ডুবে ডুবে কিছুই পাবোনা। আমার আজ চোখ খুলে গেছে। না আমি স্বপ্ন দেখতে ভুলবোনা। ওটা ছাড়া আমি মৃত লাশ, ওভাবে বেঁচে থেকেও লাভ নেই। স্বপ্নের ফল্গুধারা নিজের মত বয়ে চলুক। আমি বরং একটু গতানুগতিক ধারায় ফিরে আসি। নাহলে দাদুর মত দাম না পেয়ে চলে যেতে হবে। সেটাও হজম হয়ে যাবে যদি কাজ করে যেতে পারি। কিন্তু যেকোন পেলব মনের জাদুকরের কখনো সাফল্যের আলো দেখলে তার আরো ভালো কাজ করার ইচ্ছে বেড়ে যায়। এটাকেই রিকোগনিশন বলে। আমি বড় কাজ করবো, কিন্তু আর অন্ধকার পথে হাতড়ে হাতড়ে নয়, আবেগের পালে হাওয়া দিয়ে নয়। এবার বাস্তবের কণ্টকাকীর্ণ পথে রক্ত ঘামের যুদ্ধে নামার পালা। এ যুদ্ধে আমার পাশে কেউ থাকবেনা। কেউ চিরদিন থাকেনা। দাদুও নেই। আমিও থাকবোনা। কিন্তু যাওয়ার আগে নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে যেতে হবে। নিজের স্বার্থে নয়। মানব সভ্যতার স্বার্থে।
ড.সুকুমার সেন পরিষ্কার তার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিচারে লিখে গেছেন, রবীন্দ্রনাথ এর খ্যাতি তার নোবেল পাওয়ার পরেই বেশি ছড়িয়েছে, তার আগে বাঙালি মনন বঙ্কিম ছেড়ে বেরোতে পারেনি।
এখান থেকে প্রমাণ হয়, কোন জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে গেলে অন্ধকারের আবডালে নয়, আমায় আলোর ফোকাসে থাকতেই হবে। তার জন্য দরকার এচিভমেন্ট। আর এচিভমেন্ট থেকে দূরে পালানোর দিন যে শেষ। তারপর যাবো তো সেই একই জায়গায়। তখন নাহলে দাদু তোমার সাথে কথা হবে বঙ্কিম বড় নাকি রবীন্দ্রনাথ? রোমান্টিক পেলবতার দিন শেষ। বাস্তবের হিসেবের মাটিতে নিজের হিসেব বুঝে নিতে হবে। অনেক দেরী হয়ে গেছো। তবুও এখনো আছে সময়। আর বিলম্ব নয়।।
No comments:
Post a Comment