গাছ ঢ্যামনা আর ঢ্যামনার গাছ এই দুটি শব্দের পার্থক্য কি? আমরা পাঁচজন ছিলাম গাছ ঢ্যামনা। মানে আমাদের গাছের শিকড় বা ভিত্তি ছিল ঢ্যামনামি। কিন্তু মনে একটু হলেও সুপ্রবৃত্তি ছিল। শিলু ছিল ঢ্যামনার গাছ৷ ওর মাথা থেকে যাই প্রোডাক্ট বেরোবে সেটা ঢ্যামনামিই হবে। ইদানীং শিলু আর নীলের খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল৷ শীলু ছিল এমন একজন যে আমাদের মধ্যে থেকেও ছিলনা। কারণ ও নেশাটা করতোনা। মাঝে ও কিছুদিন একটি জুনিয়র ছেলের সাথে খুব ঘুরতো। আমরা ছাদে গেলেই দেখতাম। দুজনে অন্ধকার এক কোণে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছে। শীলু ততদিনে তার বাঙাল টান ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা শিখে গেছে।
আমার কাছে আক্ষেপ করে একদিন বললো - আর তোরা তো এদিক ওদিক ঘুরতে বেরোস, সিনেমা দেখতে যাস, আমাকে ডাকিসও না। যখন কেউ থাকেনা তখন ডাকিস।
ওকে বললাম, "তুই ওই জুনিয়র ছেলেটার সাথে আর ঘুরিস না কেন? "
বললো - আর বলিস না। শুরুতে দেখতাম খুব ভালো বন্ধুর মত। আমার সাথে তো কেউ কথা বলেনা দরকার না থাকলে। তারপর দেখলাম, আমি যা বলবো করে দিতে পারে। মানে ধর্, এই ছাদ থেকে ঝাঁপাতে বললে ঝাঁপিয়ে দেবে। আমি বুঝলাম গন্ডগোল আছে। বলে সরে এলাম।
যাই হোক্, একদিন বিকেলে আমি, বিশু আর ভগা এনেক্সের ছাদে গিয়ে দেখি, নীল আর শীলু খাটে বসে গল্প করছে। আমরাও সেখানে বসলাম ভাঁটের আসর পেতে। শীলু হঠাৎ বললো - তোরা কেউ সেক্স করেছিস?
নীল বললো - ডিফাইন সেক্স।
শীলু - রিয়েল সেক্স উইথ আ রিয়েল গার্ল।
আমরা চারজনেই সমস্বরে না বললাম।
শীলু বললো - জানিস আমি কত বছর বয়সে সেক্স করেছি?
ভগা - এই শুরু হল গ্যাস।
শীলু - আরে না শোন্। আমি তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। আমার পাশের বাড়িতে একটা নতুন ভাড়াটেরা এসেছিল। তার একটা মেয়ে ক্লাস টেনে পড়তো। আমার কাছে অংক দেখতে আসতো।
ভগা - কোন চটি বই গাঁতিয়েছিস, আমাকে বল্।
বিশু - দাঁড়ানা ভগা, ওকে বলতে দে।
ভগা বিশুর আপত্তি শুনে চুপ করে গেল৷ শীলু বলে চললো - একদিন আমার বাড়িতে কেউ ছিলনা। বাড়ির সবাই মামাবাড়ি গেছিলো। ওর বাড়িতেও কেউ ছিলনা। ও আমার বাড়ি এসেছিল অংক কষার নাম করে। আমি বুঝতেই পেরেছিলাম ও আমার কাছে কিছু চায়। আমি টিভি টা চালিয়ে দিয়ে দুজনে খেলা দেখছিলাম। তারপর আর থাকতে না পেরে ধীরে ধীরে ওর থাইএর উপর বাম হাত টা রাখলাম।
ভগা - তুই পানু লেখ, ভাই। কাজে দেবে।
নীল - এই বাল্, তুই এখান থেকে বেরো।
আমি ভগাকে বসিয়ে দিলাম- ভাই চুপ করে শোন না।
শীলু আবার বলে চললো - আমি উপরের দিকে উঠছি, ও আমাকে আটকাচ্ছেও না। তারপর আমি আর থাকতে না পেরে ওকে জড়িয়ে কিস করতে শুরু করলাম। ও আমাকে ছাড়িয়ে বললো - শীলু, তুমি না ভারী দুষ্টু। তারপর...
শীলুর কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ একটু দূরে একটা শব্দ হলো। যেন একটা ভারী বস্তা কেউ নর্থের ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এরকম শব্দ আমরা কেউ আগে শুনিনি। সবাই ছুটে গেলাম শব্দ টা কি দেখার জন্য। যা দেখলাম, সে দৃশ্য জীবনে ভুলবোনা। একটা ছেলের শরীর নীচে উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে। মাটি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমি হঠাৎ দেখলাম আমি ছুটছি। আমার সাথে বিশু, নীল, ভগা, শীলু সবাই ছুটছে। বারান্দা থেকে সবাই হাঁ করে দেখছে। তখন হস্টেলে লিফট ছিলনা। আমরা ছুটে যখন নীচে নামলাম। দেখলাম আমাদের মত কিছু লোকজন পৌঁছে শরীরটাকে তোলার চেষ্টা করছে। একজন স্ট্রেচার, ট্রলি বলে পাগলের মত চেঁচাচ্ছে। বাকিরা বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। স্ট্রেচার বা ট্রলি কখন আসবে জানিনা। তখনো শরীরে প্রাণ ছিলো বোঝার পরেই আমরা শরীরটা হাতে তুললাম। ইমার্জেন্সি খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে তিন-চার মিনিট। কিন্তু ওই ভারী শরীর
এতটা রাস্তা এই কজনে হাতে চাগিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ। আমরা কিছু না ভেবে শরীরটা তুলে নিলাম। ছুটতে শুরু করলাম শরীরটাকে তুলে নিয়ে। কেউ হাঁফিয়ে গেলে, হাত বদল হচ্ছিল। কিন্তু এন্যাটমি বিল্ডিং পেরোতে না পেরোতেই শরীরটা থেকে শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেলো৷ আমরা কেউ কখনো এর আগে মৃত্যু দেখিনি। তাই সেটা বুঝেও আমরা শরীরটাকে নিয়ে পৌঁছালাম ইমার্জেন্সি তে। ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করলেন। আমাদের সবার গায়ে রক্ত লেগে আছে। আমাদের জুতো মাঝপথে পা থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। আমরা খালি পায়ে হেঁটে ফিরলাম। কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলিনি। হস্টেলে ফিরে যে যার রুমে ফিরে গেলাম। তারপর আমি রুমে ফিরে জামাটা এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তারপর সে কি প্রবল কান্না। রাতে যখন খেতে গেলাম একসাথে দেখলাম আমাদের সবার চোখ মুখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে। সেই আমাদের প্রথম মৃত্যু দেখা।
যে আত্মহত্যা করেছিল, দাদাটা আমাদের সিনিয়র। দাদাটার দোষ ছিল সে থিওরি তে ভালো নাম্বার পেয়েও স্যার কে খুশি করতে পারেনি, তাই তাকে ফেল করতে হয়েছিল। দাদাটা পড়াকু ছিল।
পরেরদিন দাদার শোকসভায় এসে শুনলাম ভূতের ভয়ে গোটা হস্টেলের অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গেছে।
যাই হোক্, আমাদের পাঁচ জনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছিল। দাদাটা আমার হাতের উপর শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল। আমার হাতে আজো সেই নিঃশ্বাসের স্মৃতি লেগে আছে।
শক কাটলো শিবেণের কাছে গিয়ে। রাত বারোটার সময় ঠিক হল আমরা দীঘা যাবো। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বেরিয়ে পড়লাম হলুদ ট্যাক্সিতে। হলুদ ট্যাক্সি করে আমরা পৌঁছে গেলাম ধর্মতলা। ধর্মতলাতে এসি ভলভো বাসে উঠেই ঘুম৷ সবাই ঘুমালেও আমার ঘুম আসছিলোনা৷ চিন্তা ছিল নীল কে নিয়ে৷ এর আগে ফার্স্ট এম বি র পরে নীল, ভগা আর বিশু মাইথন যাচ্ছিল৷ আমি বাড়িতেই ছিলাম৷ সে এক কেচ্ছা। মাঝরাতের ট্রেন হাওড়া থেকে ধরে ভোরে আসানসোল নামতো। তিনজন ভাঁটাতে ভাঁটাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু নীল সাহেব ঘুমান নি। উনি অন্ডালে নেমেছিলেন ব্যাগ, ফোন সব ট্রেনে রেখে জল খেতে৷ অন্ডালে বেশিক্ষণ তো দাঁড়ায়না। হঠাৎ একজন বুড়ি এসে নীলকে বলে বোতলে জল ভরে দিতে। দয়াপরবশ হয়ে নীল বোতল ভর্তি করতে শুরু করা মাত্রই ট্রেন চলতে শুরু করে। কিন্তু নীল তো হিরো৷ ও ভাবে ও ক্রিশের মত ছুটে ট্রেন ধরবে। তাই বোতলে জল ভরতেই থাকে। কিন্তু নীল কিছু বোঝার আগেই ট্রেন স্পিড নিয়ে নেয়৷ ও ওই মোটা শরীরে ছুটতে চেষ্টা করে বোতল ছুঁড়ে দিয়ে। ও ভাবে অন্তত ও ট্রেন না ধরতে পারুক, ওকে ছুটতে দেখে কেউ অন্তত চেন টানবে। ট্রেনের সবাই তাকিয়ে দেখে একটি মোটা ছেলে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছে। কেউ আর চেন টানেনা। তারপর ও ভোরবেলায় অন্ডাল থেকে হেঁটে নাকি রাণীগঞ্জ আসে। তারপরের লোকাল ট্রেন ধরে আসানসোলে গিয়ে বাকিদের হাতে চরম ক্যালানি খায়। সমস্যা টা আমার ক্ষেত্রে আলাদা। ওদেরকে তো নীলের বাবা চেনেনা। চেনে আমাকে। ওর বাবা বেশ জাঁদরেল টাইপের। আমাকে ডেকে প্রথমদিন বলেছিল, শোনো নীলের একটু খেয়াল টেয়াল রেখো।
ও যদি আবার এই বাস থেকে নেমে যায়, সেই ভয়ে আমি চোখের পাতা এক করতে পারলাম না।
দীঘা পৌঁছলাম যখন তখনো সূর্য ওঠেনি। একটা সস্তা হোটেলে ব্যাগ রেখেই নিউ দীঘার সমুদ্রে নামলাম। সমুদ্রতটে ওই ভোরেও বেশ কিছু লোকজন নেমে পড়েছে।
আমাদের মধ্যে ভগা বললো - সমুদ্রে নামলে আমার কান কটকট করে, তাই নামা যাবেনা। তোরা নাম্৷
আমরাও মুরগী পেয়ে ভগার কাছে আমাদের জামা কাপড়, জুতো, চশমা সব রেখে নেমে পড়লাম। সমুদ্র সেদিন উত্তাল ছিল। আমরাও উত্তাল হয়ে উঠেছিলাম। যে সবসময় ল্যাদ খেয়ে থাকতো সেই বিশু ট্রিগারটা প্রথম চাপল । হঠাৎ সমুদ্রের জল থেকে দুহাতে বালি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো - আমি সমুদ্রের রাজা।
শিবেণ আক্রমণ বলে ছুটে গেল বিশুর দিকে। বিশু বালি ছুঁড়ে মারলো শিবেণের গায়ে। বিশু আর শিবেণ বালিযুদ্ধ খেলছিলো। আমি আর নীল থাকতে না পেরে যোগ দিলাম। বিশু নীলকে তাক করে এক মুঠো বালি ছুঁড়েছিল। নীল সরে যেতে পাশের এক বৌদির গায়ে লাগলো। বৌদি হেসে সরে গেল দাদার দিকে। বিশু বললো - আমি একটা দেশলাই কাঠি। তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে দাও।
আমরা বিশুকে চ্যাংদোলা করে সমুদ্রের জলে ছুঁড়ে দিলাম। হঠাৎ দেখি ভগা দুহাত তুলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আমি আসছি, আমি আসছি করতে করতে। তার দুহাতে আমার আর ভগার চশমা ধরা। আমি বললাম -আরে আমাদের জামাকাপড়, জুতো।
ভগা - ওই ছেঁড়া জামা আর জুতো কেউ নেবেনা।
বলে নেমে এলো। বিশু এবার বললো - চলো আমরা সমুদ্রের জলের মধ্যে হাতের কাজ করি।
শিবেণ আবার খিস্তি দিলো - এই মালটা জলে নামলেই ওখানে ব্রেন চলে যায়।
আমি মনে করলাম্ একোয়াটিকাতে সুইমিং পুলে ও কি করেছিল। আমি বললাম - ভাই চল,আর নয়। বিশুকে চ্যাংদোলা করে তোল্।
প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে কারণটা বলাতে ওকে নিয়ে তোলা হল। বিশু কিছুতেই উঠবেনা।
বললো - যতক্ষণ বৌদি জলে থাকবে, আমিও থাকবো।
যাই হোক্, সন্ধ্যেবেলা আবার জলে নামবো বলে ওকে টেনে হিঁচড়ে তোলা হল।
ভগার কান যথারীতি কটকট শুরু হল। ও আমাদের মাঝে মাঝে ভয় খাইয়ে দিত। কিন্তু ভগার ওষুধ ও আমাদের কাছে ছিল। শিবেণ। শিবেণ শুদ্ধ গাঁজাখোর। কিন্তু বললো আমাকে, ভাই কয়েকটা বিয়ার বোতল কিনে নিয়ে আয়। আমাদের মধ্যে বিয়ার বিশেষজ্ঞ ছিল নীল। ওই একমাত্র মদ টা খেতো। বাকিরা শুদ্ধ গাঁজা খোর ছিলাম। শিবেণ বলতো - যারা গাঁজা তে ভেজাল মেশায়, তারা শিবের আশীর্বাদ পায়না।
তো সত্যি সেই বিয়ার খেয়ে ভগা চাঙ্গা হয়ে গেল একদম। সন্ধ্যে যখন নামলো, আমার আর বিশু কারোর আর সমুদ্রতীরে যাওয়ার ইচ্ছে হলনা। ভগা শুনলো না কারো কথা। একাই বেরিয়ে গেলো। বললো - আধঘন্টা একটু খোলা হাওয়া খেয়ে আসি।
আধঘন্টা হল, ভগার দেখা নেই। শিবেণ গেল খুঁজতে। পনেরো মিনিট গেলো, শিবেণের দেখা নেই। নীলকে একা পাঠাতে ভয় লাগলো। যক্ষ আর যুধিষ্ঠির কান্ড রিপিট হোক চাইনা। তাই আমরা বাকি তিনজন একসাথে ওদের দুজনকে খুঁজতে বেরোলাম৷ গিয়ে দেখি একটা লোকাল মঞ্চের সামনে বক্সে রিদমটিকা বাজছে। আর লোকাল ছেলেপুলের সাথে শিবেণ আর ভগা উত্তাল নাচছে। আমরা আর কি করবো। আমরাও সেই নাচে যোগ দিলাম। নাচের পর ওরা ফিরে গেলো। আমি আর বিশু সমুদ্রের তীরে বসে ভাবলাম একটা বিয়ার খাই। সমুদ্রের তীরে বসে আমাদের দুজনের পায়ে এসে সমুদ্রের জল এসে লাগছিলো।
বিয়ার খেতে খেতে বিশু বললো - ভাই তোকে একটা কথা বলবো?
আমি বললাম কি?
- আমি একজনের প্রেমে পড়েছি।
- কে?
- ভগার পাশের বাড়ির একটা মেয়ে।
- তুই চিনলি কি করে?
- আমি ওর বাড়ি গিয়ে দেখেছি।
(পড়ে যে শেয়ার, কমেন্ট না করে যাবে, তার দিন খারাপ যাবে)
(To be continued)
আমার কাছে আক্ষেপ করে একদিন বললো - আর তোরা তো এদিক ওদিক ঘুরতে বেরোস, সিনেমা দেখতে যাস, আমাকে ডাকিসও না। যখন কেউ থাকেনা তখন ডাকিস।
ওকে বললাম, "তুই ওই জুনিয়র ছেলেটার সাথে আর ঘুরিস না কেন? "
বললো - আর বলিস না। শুরুতে দেখতাম খুব ভালো বন্ধুর মত। আমার সাথে তো কেউ কথা বলেনা দরকার না থাকলে। তারপর দেখলাম, আমি যা বলবো করে দিতে পারে। মানে ধর্, এই ছাদ থেকে ঝাঁপাতে বললে ঝাঁপিয়ে দেবে। আমি বুঝলাম গন্ডগোল আছে। বলে সরে এলাম।
যাই হোক্, একদিন বিকেলে আমি, বিশু আর ভগা এনেক্সের ছাদে গিয়ে দেখি, নীল আর শীলু খাটে বসে গল্প করছে। আমরাও সেখানে বসলাম ভাঁটের আসর পেতে। শীলু হঠাৎ বললো - তোরা কেউ সেক্স করেছিস?
নীল বললো - ডিফাইন সেক্স।
শীলু - রিয়েল সেক্স উইথ আ রিয়েল গার্ল।
আমরা চারজনেই সমস্বরে না বললাম।
শীলু বললো - জানিস আমি কত বছর বয়সে সেক্স করেছি?
ভগা - এই শুরু হল গ্যাস।
শীলু - আরে না শোন্। আমি তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। আমার পাশের বাড়িতে একটা নতুন ভাড়াটেরা এসেছিল। তার একটা মেয়ে ক্লাস টেনে পড়তো। আমার কাছে অংক দেখতে আসতো।
ভগা - কোন চটি বই গাঁতিয়েছিস, আমাকে বল্।
বিশু - দাঁড়ানা ভগা, ওকে বলতে দে।
ভগা বিশুর আপত্তি শুনে চুপ করে গেল৷ শীলু বলে চললো - একদিন আমার বাড়িতে কেউ ছিলনা। বাড়ির সবাই মামাবাড়ি গেছিলো। ওর বাড়িতেও কেউ ছিলনা। ও আমার বাড়ি এসেছিল অংক কষার নাম করে। আমি বুঝতেই পেরেছিলাম ও আমার কাছে কিছু চায়। আমি টিভি টা চালিয়ে দিয়ে দুজনে খেলা দেখছিলাম। তারপর আর থাকতে না পেরে ধীরে ধীরে ওর থাইএর উপর বাম হাত টা রাখলাম।
ভগা - তুই পানু লেখ, ভাই। কাজে দেবে।
নীল - এই বাল্, তুই এখান থেকে বেরো।
আমি ভগাকে বসিয়ে দিলাম- ভাই চুপ করে শোন না।
শীলু আবার বলে চললো - আমি উপরের দিকে উঠছি, ও আমাকে আটকাচ্ছেও না। তারপর আমি আর থাকতে না পেরে ওকে জড়িয়ে কিস করতে শুরু করলাম। ও আমাকে ছাড়িয়ে বললো - শীলু, তুমি না ভারী দুষ্টু। তারপর...
শীলুর কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ একটু দূরে একটা শব্দ হলো। যেন একটা ভারী বস্তা কেউ নর্থের ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এরকম শব্দ আমরা কেউ আগে শুনিনি। সবাই ছুটে গেলাম শব্দ টা কি দেখার জন্য। যা দেখলাম, সে দৃশ্য জীবনে ভুলবোনা। একটা ছেলের শরীর নীচে উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে। মাটি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমি হঠাৎ দেখলাম আমি ছুটছি। আমার সাথে বিশু, নীল, ভগা, শীলু সবাই ছুটছে। বারান্দা থেকে সবাই হাঁ করে দেখছে। তখন হস্টেলে লিফট ছিলনা। আমরা ছুটে যখন নীচে নামলাম। দেখলাম আমাদের মত কিছু লোকজন পৌঁছে শরীরটাকে তোলার চেষ্টা করছে। একজন স্ট্রেচার, ট্রলি বলে পাগলের মত চেঁচাচ্ছে। বাকিরা বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। স্ট্রেচার বা ট্রলি কখন আসবে জানিনা। তখনো শরীরে প্রাণ ছিলো বোঝার পরেই আমরা শরীরটা হাতে তুললাম। ইমার্জেন্সি খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে তিন-চার মিনিট। কিন্তু ওই ভারী শরীর
এতটা রাস্তা এই কজনে হাতে চাগিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ। আমরা কিছু না ভেবে শরীরটা তুলে নিলাম। ছুটতে শুরু করলাম শরীরটাকে তুলে নিয়ে। কেউ হাঁফিয়ে গেলে, হাত বদল হচ্ছিল। কিন্তু এন্যাটমি বিল্ডিং পেরোতে না পেরোতেই শরীরটা থেকে শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেলো৷ আমরা কেউ কখনো এর আগে মৃত্যু দেখিনি। তাই সেটা বুঝেও আমরা শরীরটাকে নিয়ে পৌঁছালাম ইমার্জেন্সি তে। ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করলেন। আমাদের সবার গায়ে রক্ত লেগে আছে। আমাদের জুতো মাঝপথে পা থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। আমরা খালি পায়ে হেঁটে ফিরলাম। কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলিনি। হস্টেলে ফিরে যে যার রুমে ফিরে গেলাম। তারপর আমি রুমে ফিরে জামাটা এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তারপর সে কি প্রবল কান্না। রাতে যখন খেতে গেলাম একসাথে দেখলাম আমাদের সবার চোখ মুখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে। সেই আমাদের প্রথম মৃত্যু দেখা।
যে আত্মহত্যা করেছিল, দাদাটা আমাদের সিনিয়র। দাদাটার দোষ ছিল সে থিওরি তে ভালো নাম্বার পেয়েও স্যার কে খুশি করতে পারেনি, তাই তাকে ফেল করতে হয়েছিল। দাদাটা পড়াকু ছিল।
পরেরদিন দাদার শোকসভায় এসে শুনলাম ভূতের ভয়ে গোটা হস্টেলের অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গেছে।
যাই হোক্, আমাদের পাঁচ জনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছিল। দাদাটা আমার হাতের উপর শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল। আমার হাতে আজো সেই নিঃশ্বাসের স্মৃতি লেগে আছে।
শক কাটলো শিবেণের কাছে গিয়ে। রাত বারোটার সময় ঠিক হল আমরা দীঘা যাবো। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বেরিয়ে পড়লাম হলুদ ট্যাক্সিতে। হলুদ ট্যাক্সি করে আমরা পৌঁছে গেলাম ধর্মতলা। ধর্মতলাতে এসি ভলভো বাসে উঠেই ঘুম৷ সবাই ঘুমালেও আমার ঘুম আসছিলোনা৷ চিন্তা ছিল নীল কে নিয়ে৷ এর আগে ফার্স্ট এম বি র পরে নীল, ভগা আর বিশু মাইথন যাচ্ছিল৷ আমি বাড়িতেই ছিলাম৷ সে এক কেচ্ছা। মাঝরাতের ট্রেন হাওড়া থেকে ধরে ভোরে আসানসোল নামতো। তিনজন ভাঁটাতে ভাঁটাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু নীল সাহেব ঘুমান নি। উনি অন্ডালে নেমেছিলেন ব্যাগ, ফোন সব ট্রেনে রেখে জল খেতে৷ অন্ডালে বেশিক্ষণ তো দাঁড়ায়না। হঠাৎ একজন বুড়ি এসে নীলকে বলে বোতলে জল ভরে দিতে। দয়াপরবশ হয়ে নীল বোতল ভর্তি করতে শুরু করা মাত্রই ট্রেন চলতে শুরু করে। কিন্তু নীল তো হিরো৷ ও ভাবে ও ক্রিশের মত ছুটে ট্রেন ধরবে। তাই বোতলে জল ভরতেই থাকে। কিন্তু নীল কিছু বোঝার আগেই ট্রেন স্পিড নিয়ে নেয়৷ ও ওই মোটা শরীরে ছুটতে চেষ্টা করে বোতল ছুঁড়ে দিয়ে। ও ভাবে অন্তত ও ট্রেন না ধরতে পারুক, ওকে ছুটতে দেখে কেউ অন্তত চেন টানবে। ট্রেনের সবাই তাকিয়ে দেখে একটি মোটা ছেলে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছে। কেউ আর চেন টানেনা। তারপর ও ভোরবেলায় অন্ডাল থেকে হেঁটে নাকি রাণীগঞ্জ আসে। তারপরের লোকাল ট্রেন ধরে আসানসোলে গিয়ে বাকিদের হাতে চরম ক্যালানি খায়। সমস্যা টা আমার ক্ষেত্রে আলাদা। ওদেরকে তো নীলের বাবা চেনেনা। চেনে আমাকে। ওর বাবা বেশ জাঁদরেল টাইপের। আমাকে ডেকে প্রথমদিন বলেছিল, শোনো নীলের একটু খেয়াল টেয়াল রেখো।
ও যদি আবার এই বাস থেকে নেমে যায়, সেই ভয়ে আমি চোখের পাতা এক করতে পারলাম না।
দীঘা পৌঁছলাম যখন তখনো সূর্য ওঠেনি। একটা সস্তা হোটেলে ব্যাগ রেখেই নিউ দীঘার সমুদ্রে নামলাম। সমুদ্রতটে ওই ভোরেও বেশ কিছু লোকজন নেমে পড়েছে।
আমাদের মধ্যে ভগা বললো - সমুদ্রে নামলে আমার কান কটকট করে, তাই নামা যাবেনা। তোরা নাম্৷
আমরাও মুরগী পেয়ে ভগার কাছে আমাদের জামা কাপড়, জুতো, চশমা সব রেখে নেমে পড়লাম। সমুদ্র সেদিন উত্তাল ছিল। আমরাও উত্তাল হয়ে উঠেছিলাম। যে সবসময় ল্যাদ খেয়ে থাকতো সেই বিশু ট্রিগারটা প্রথম চাপল । হঠাৎ সমুদ্রের জল থেকে দুহাতে বালি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো - আমি সমুদ্রের রাজা।
শিবেণ আক্রমণ বলে ছুটে গেল বিশুর দিকে। বিশু বালি ছুঁড়ে মারলো শিবেণের গায়ে। বিশু আর শিবেণ বালিযুদ্ধ খেলছিলো। আমি আর নীল থাকতে না পেরে যোগ দিলাম। বিশু নীলকে তাক করে এক মুঠো বালি ছুঁড়েছিল। নীল সরে যেতে পাশের এক বৌদির গায়ে লাগলো। বৌদি হেসে সরে গেল দাদার দিকে। বিশু বললো - আমি একটা দেশলাই কাঠি। তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে দাও।
আমরা বিশুকে চ্যাংদোলা করে সমুদ্রের জলে ছুঁড়ে দিলাম। হঠাৎ দেখি ভগা দুহাত তুলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আমি আসছি, আমি আসছি করতে করতে। তার দুহাতে আমার আর ভগার চশমা ধরা। আমি বললাম -আরে আমাদের জামাকাপড়, জুতো।
ভগা - ওই ছেঁড়া জামা আর জুতো কেউ নেবেনা।
বলে নেমে এলো। বিশু এবার বললো - চলো আমরা সমুদ্রের জলের মধ্যে হাতের কাজ করি।
শিবেণ আবার খিস্তি দিলো - এই মালটা জলে নামলেই ওখানে ব্রেন চলে যায়।
আমি মনে করলাম্ একোয়াটিকাতে সুইমিং পুলে ও কি করেছিল। আমি বললাম - ভাই চল,আর নয়। বিশুকে চ্যাংদোলা করে তোল্।
প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে কারণটা বলাতে ওকে নিয়ে তোলা হল। বিশু কিছুতেই উঠবেনা।
বললো - যতক্ষণ বৌদি জলে থাকবে, আমিও থাকবো।
যাই হোক্, সন্ধ্যেবেলা আবার জলে নামবো বলে ওকে টেনে হিঁচড়ে তোলা হল।
ভগার কান যথারীতি কটকট শুরু হল। ও আমাদের মাঝে মাঝে ভয় খাইয়ে দিত। কিন্তু ভগার ওষুধ ও আমাদের কাছে ছিল। শিবেণ। শিবেণ শুদ্ধ গাঁজাখোর। কিন্তু বললো আমাকে, ভাই কয়েকটা বিয়ার বোতল কিনে নিয়ে আয়। আমাদের মধ্যে বিয়ার বিশেষজ্ঞ ছিল নীল। ওই একমাত্র মদ টা খেতো। বাকিরা শুদ্ধ গাঁজা খোর ছিলাম। শিবেণ বলতো - যারা গাঁজা তে ভেজাল মেশায়, তারা শিবের আশীর্বাদ পায়না।
তো সত্যি সেই বিয়ার খেয়ে ভগা চাঙ্গা হয়ে গেল একদম। সন্ধ্যে যখন নামলো, আমার আর বিশু কারোর আর সমুদ্রতীরে যাওয়ার ইচ্ছে হলনা। ভগা শুনলো না কারো কথা। একাই বেরিয়ে গেলো। বললো - আধঘন্টা একটু খোলা হাওয়া খেয়ে আসি।
আধঘন্টা হল, ভগার দেখা নেই। শিবেণ গেল খুঁজতে। পনেরো মিনিট গেলো, শিবেণের দেখা নেই। নীলকে একা পাঠাতে ভয় লাগলো। যক্ষ আর যুধিষ্ঠির কান্ড রিপিট হোক চাইনা। তাই আমরা বাকি তিনজন একসাথে ওদের দুজনকে খুঁজতে বেরোলাম৷ গিয়ে দেখি একটা লোকাল মঞ্চের সামনে বক্সে রিদমটিকা বাজছে। আর লোকাল ছেলেপুলের সাথে শিবেণ আর ভগা উত্তাল নাচছে। আমরা আর কি করবো। আমরাও সেই নাচে যোগ দিলাম। নাচের পর ওরা ফিরে গেলো। আমি আর বিশু সমুদ্রের তীরে বসে ভাবলাম একটা বিয়ার খাই। সমুদ্রের তীরে বসে আমাদের দুজনের পায়ে এসে সমুদ্রের জল এসে লাগছিলো।
বিয়ার খেতে খেতে বিশু বললো - ভাই তোকে একটা কথা বলবো?
আমি বললাম কি?
- আমি একজনের প্রেমে পড়েছি।
- কে?
- ভগার পাশের বাড়ির একটা মেয়ে।
- তুই চিনলি কি করে?
- আমি ওর বাড়ি গিয়ে দেখেছি।
(পড়ে যে শেয়ার, কমেন্ট না করে যাবে, তার দিন খারাপ যাবে)
(To be continued)
Comment korte esechlam comment kora hoye geche ebr to din vlo jabe
ReplyDelete