Wednesday, November 20, 2019

একটু স্বপ্ন দেখতে শিখি

হাতে টাইম মেশিন পেলে যা হয়, সেই কেলো টা করেই ফেললাম আর কি। হঠাত্ দেখি আবার স্কুলে যাচ্ছি, হাফ প্যান্ট পরে। সে কি অশালীন ব্যাপার, মাইরি। চরম অস্বস্তি হচ্ছে। যাই হোক, প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে আছি বাকি ক্লাস সিক্সের বাচ্চাদের সাথে। প্রার্থনা শুরু হবে,সে সব ভগবানের উদ্দেশ্যে লিরিক্স মনে থাকে নাকি। মুখে ইড়ি মিড়ি কিড়ি করে লিপ সিংক করলাম বাকিদের সাথে। সে কি অসভ্যতা। এই পাপী মানুষের মুখে কি ভগবানের নাম মানায়। টাইম মেশিন শুধু শরীর টাকে ক্লাস সিক্স বানিয়েছে, মন তো পড়ে আছে সেই আজকের ডেটে।
যাই হোক, ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষক এলেন, পড়াতে শুরু করলেন মৌমাছি নিয়ে। আমার চুপচাপ থাকাই উচিত ছিল। কিন্তু মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল -" স্যার মৌমাছি, ব্যাঙ এদের লাইফস্টাইল পড়ে দশ বছর পর জীবনে কি লাভ হবে?"
স্যার প্রথমে গোল গোল চোখ করে তাকালেন। তারপর বললেন - "মৌমাছি যে এই সংঘবদ্ধ থাকে, এখান থেকে আমরা জীবনে একসাথে কাজ করা শিখতে পারি। আর ব্যাঙের কাছ থেকে চরম দুঃখেও যে লাফালাফি করা যায় সেটা শিখি।"
আমি বললাম - "কিন্তু স্যার, এই যে আপনারাও তো আপনাদের ছোটবেলায় শিখেছেন মৌমাছি থেকে, তাহলে ভারতে এতগুলো রাজনৈতিক দল কেন হতে হল? "
ব্যাস, হয়ে গেল গার্জেন কল। আমার গার্জেন এর নাম্বারের জায়গায় অভ্যেস বশত আমার বন্ধু স্বরাজের নাম্বার দেওয়া ছিল। স্বরাজের কাছে কল গেল টাইমলাইনের মাধ্যমে। স্বরাজ যথারীতি ম্যানেজ করে দিল। আবার ক্লাসে এলাম।
এবার অংক ক্লাস চলছে। স্যার ধার-সুদ-আসল এসব পড়াচ্ছিলেন। চুপই থাকতাম। হঠাৎ মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল - "স্যার, কিভাবে ট্যাক্স বাঁচাবো, ব্যাংকে সেভিংস বানাবো সেইসব শেখান। এত পড়াশোনা করে যদি কারো কাছে ধার নিতে হয়, অন্যের কাছে ট্যাক্স বাঁচানোর উপদেশ নিতে হয়, তাহলে পড়াশোনা করার মানে কি? ধারের হিসেব সেখাবেন তো ক্রেডিট কার্ডের হিসেব শেখান। "
স্যার রেগে গেলেন, " আমি কি শেখাবো তুই ঠিক করে দিবি? "
এবার স্যার আমাকে স্কেল পেটা করতে এলেন। আমি ভয়ে ছুটে পালিয়ে গেলাম। সবাই প্রশ্ন শুনলে রেগে যায় কেন? এর থেকে ছোটবেলায় যেরকম চুপ থাকতাম তাই থাকলে হত। কি আর করা যাবে!
ফিরে এলাম আবার আমার এই সময় ২০১৯ এ৷ কিন্তু বাটারফ্লাই এফেক্ট এর গেরোয় দেখলাম সব চেঞ্জ।
কেস টা কি। স্কুলে গিয়ে দেখি স্কুলএর বিল্ডিং আর নেই। একটা জংগল হয়েছে, ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলছে। গাছের নীচে আইপ্যাডে এ কিছু ছাত্ররা কিসব করছে। একজন দূরে পুকুর পারে ছবি আঁকছে। একটা জায়গায় কিছু বাচ্চা ছেলেকে ট্যাক্সের হিসেব শেখানো হচ্ছে। একটা জায়গায় একটা বট গাছের তলায় মিউজিক ক্লাসে একটা ছাত্রের গ্রুপ নিজেদের কম্পোজিশন পারফর্ম করছে। একটা জায়গায় মনে হল ড্রামার এর হাত স্লিপ করলো। শিক্ষকমহাশয় একবারো তার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টি দিলেন না। বরং হাসলেন। ড্রামার ও পাল্টা হাসি দিল। একটা জায়গায় দেখছি লজিকাল রিজনিং এর ক্লাস হচ্ছে। যেখানে কোন র্যাংকিং সিস্টেম নেই। একে অপরের বিরোধ করেও বাচ্চা রা গলায় জড়াজড়ি করে লাইব্রেরি যাচ্ছে। শিক্ষক দেখি লাস্ট বেঞ্চে বসে সব শুনছে আর মজা নিচ্ছে সেসব ভাঁটবাজি শুনে।
আরে এটা স্কুল না খিল্লি হচ্ছে! সবাই হাসছে খিল খিল করে। এটা কি স্কুল!? স্কুল মানে একজন গুরু গম্ভীর শিক্ষক, তার পায়ে প্রণাম করে ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাসে বসে থাকবে কখন ক্লাস শেষের ঘন্টা বাজবে সেই অপেক্ষায়।
মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখি হাসপাতাল ছাড়া আর কোন বিল্ডিং নেই। রুগীদের নিয়ে রুগীর আত্মীয়রা নয়,কিছু মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি একজন কে ধরে জিজ্ঞেস করলাম - কেসটা কি? বললো - একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া৷
আমি বললাম - না না, জানতে চাইছি, রুগী নিয়ে তোরা এপ্রণ পরে ছুটিছিস কেন? বাড়ির লোক কোথায়?
বললো - আসলে একটা নতুন ট্রিটমেন্ট রেজিম বানিয়েছি তিন বছর এটার উপর কাজ করে, বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারলে খুব ভালো লাগবে।
- তোর ডিগ্রী কি?
- বললো ডিগ্রী নেই।
- ডিগ্রী নেই মানে কি? হোয়াট দ্য ফাক্। আমি এক্ষুণি তোদের ডিপার্টমেন্টের হেড এর সাথে কথা বলবো।
- সরি, বাট আমাদের কোন হেড নেই, আমরা কোন ডিপার্টমেন্টেও বিলং করিনা। আমার কাজ ভালো লেগেছিল বোর্ডের, তাই এই কলেজে এডমিশন হয়ে গেছে। কলেজে ডিগ্রী ও দেওয়া হয়না। ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও, অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে যাও।
- এসব কি? এভাবে সিস্টেম চলে নাকি? দুটো প্রশ্নের বাটারফ্লাই এফেক্টে এসব কি হয়ে গেল৷ আমি সিএম এর সাথে দেখা করবো।
-সরি, আমাদের কোন সি.এম. ও নেই। রাজ্য নেই,দেশ নেই। রাজা নেই। আমরা সবাই রাজা। আর এতে আমরা সবাই খুশী।।

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...