Wednesday, November 20, 2019

সমসাময়িক

****

টাকার প্রয়োজন সকলের, প্রয়োজন সচ্ছল জীবনের। কিন্তু সেই প্রয়োজন যখন লোভে পরিণত হয় একজন ডাক্তারের অমানুষ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনা। দুদিন আগের আনন্দবাজারে প্রকাশিত এন.আর.এস এর খাঁটাল ল্যাবের গল্প পড়ে সাধারণ মানুষ শিউরে উঠেছেন। আর শিউরে উঠেছেন কিছু ডাক্তার নামধারী ব্যবসায়ীরা। বিশ্বাস করুন, আলু-পটলের ব্যবসা করেও প্রচুর টাকা আয় করা যায়। আপনার ভিতরেও একজন ভালো মানুষ রয়েছেন, বিচার করে দেখুন এই নোবেল প্রফ্রেসনকে কলংকিত করে আপনি কি হিপোক্রিটের মত কাজ করছেন না ? আপনারা অনেক বেশি অভিজ্ঞ, জ্ঞানী। আমার জ্ঞান খুব অল্প।তবু চাই এর প্রতিকার। এই সমস্যাগুলি বহুদিনের। সমাজ অসুস্থ, আপনার দায়িত্ব স্বাস্থ্য এর পথ দেখানো। সমাজের তালে ঝাঁকের কই হয়ে কোরাপশানে সতীত্ব খোয়ালেন যদি তাহলে আর ডাক্তার রইলেন কই। ডাক্তার শব্দের আক্ষরিক অর্থ তো শিক্ষক। সমাজকে আপনারা কি শেখালেন ? আজ এবিপি আনন্দে সুমন এবং কয়েকজন স্বাস্থ্যের বেহাল অবস্থা নিয়ে বক্তৃতা দেবেন। আমির খানের 'সত্যমেভ জয়তে' র মতই আরো কিছু অতিরঞ্জিত ডাক্তারদের কীর্তিকলাপ উঠে আসবে। আপনারা সেগুলোকে নিজেদের ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের সৎ প্রমাণ করতে চাইবেন। এতে আখেরে লাভটা কার ? আপনার কোন প্রিয় বন্ধু, আত্মীয় যখন কোন ডাক্তারকে দেখাতে যাবে, আর সেখানে যদি আপনার ক্যাচ কাজ না করে তখন সেও কিন্তু একই সিস্টেমের বলি হবে। মানছি ওরা ধোঁয়ার কুন্ডলী একটু বেশি কালো করে দেখায়, কিন্তু এটা আপনিও মানবেন, আগুন কিন্তু কোথাও না কোথাও লেগেছে। এইসব স্ক্যান্ডাল আরো বেশি করে প্রকাশিত হোক। যাতে একজন ডাক্তার কোন অসৎ কাজ করার আগে হাজার বার ভাবেন ।।

*****


এস.এস.কে.এম এ একজন রোগীর আত্মীয় মন্তব্য করেছেন - এরা হাসপাতাল আর কলকারখানা এক করে দিয়েছে।
এত বিচক্ষণ কথা আমি অনেকদিন পর শুনলাম। একজন নিজের নিকট আত্মীয় যখন রোগী হিসেবে ভর্তি হন তার উপর দিয়ে কি মানসিক ধকল যায় আমার জানা। ওনার উপর মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান ও সহমর্মিতা রেখেই বলছি...নিজের পাশের রুমের সিনিয়র পংগু হয়ে যাওয়ায় রক্তটা আজ একটু গরম, কটূক্তি  লাগলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।

ও দাদা, কলকারখানা, অনেক ভালো জায়গা। কখনো টানা ৫৪ ঘন্টা ডিউটি করা ইন্টার্ন এর মুখের দিকে চেয়েছেন। ওদের শরীর চলেনা। তবু বিবেক আর কর্তব্যের খাতিরে ওরা আপনাদের নিকটজনের স্বাস্থ্য নিয়ে ডিল করে।
ও দাদা, ওরা কত জলপানি পায় জানেন ?? ( থাক বেতন শব্দটা ব্যবহার করলাম না)
ও দাদা, ইন্টার্ন, পিজিটিদের ওয়ার্কিং আওয়ারস্ কত জানেন?
ব্যঙ্গ করে আমরা বলে থাকি ইন্টার্ন  রা হল নতুন বউ আর পিজিটি র ফুল ফর্ম পোষা গাধা-টি।
ও দাদা, ওদের ক্যাজুয়াল লিভ নামেই থাকে, নিতে পারেনা। অন্য ছুটি গুলো বাদ দিন। কারখানার মজুরদের মত সিকনেস বেনিফিট এরা পায় বলে তো শুনিনি। আমায় নিজেকে জ্বর গায়ে মেডিসিনে নাইট ডিউটি দিতে হয়েছে। যেখানে অসংখ্য রোগী,  আর তিনজন জুনিয়র  ডাক্তার। প্রায়োরিটি র বেসিস এ স্নেকবাইট র রোগী দেখতে গিয়ে অন্য রোগীর বাড়ির লোক এর কাছে আমার বাবা-মা সম্পর্কে খিস্তি শুনতে হয়েছে। 
একটু ভেবে দেখুন ও দাদা, কারখানা র সংগে কি এদের এক করা যায় ? নাকি আরো শোচনীয়??  আমার এক সিনিয়র বলেছিল তার ইন্টার্ন্সিপ পিরিয়ডে এক রুগীর বাড়ির লোক তাকে চা-বিস্কুট বিক্রেতা ভেবেছিল। পিরিয়ড খুব খারাপ চলছে দাদা আমাদের। রক্ত ও বেশি পড়ছে। আবার চাপ বাঁধা অনেক দিন ধরে। এর পরও আপনাদের হাতে মার খেতে হবে। কারণ আপনাদের মস্তিষ্কে পেশির মেটাপ্লাসিয়া হয়ে গেছে। প্রতিবাদ, মারামারি করতে হলে নিজের সরকারের বিরুদ্ধে করুন।  যারা বেসরকারিকরণ কে একমাত্র রাস্তা ভাবে। আই.আই.টি তে ঝাঁ চক চকে হোস্টেল, ফ্রি ওয়াই ফাই হয়,  আর সরকারি হাসপাতালে চলে দালালরাজ। আপনাদের রাগ যথাযথ। সেই রাগ টা সিস্টেমের বিরুদ্ধে দেখান। সেই রুগ্ন সিস্টেমকে নিয়ে যারা আপনাদের জন্য কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে নয়।নাহলে আপনাদের এই দিন দেখতেই হবে। শ্রেণীসংগ্রামের সূচনা আপনারা করেছেন। হাত তো পুড়বেই। একদিন এই জুনিয়র ডাক্তার রা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে হকিস্টিক নিয়ে আউটডোরে বসলে সামলাতে পারবেন তো ??
ও দাদা, আমরা সবাই আমাদের এলাকার ভালো ছাত্র। পড়াশোনা করে নিজের যোগ্যতায় ডাক্তার হচ্ছি সম্মানের জন্য। সমাজের ক্রীতদাস হতেও নয়, সিস্টেমের বলি হতেও নয়। মারামারি, ঘেরাও এসব দায়ে পড়ে করতে হয়। আমরা খুব শান্ত,  ভদ্র। কিন্তু মৌমাছির চাক এ ঢিল টা পড়লে পালটা সহ্য করতেই হবে।
আর ওই ট্যাক্সের গল্প দেবেন তো ??  আমার ফেমিলি থেকে সরকার কে যা ট্যাক্স দেওয়া হয় তাতে আমার বাড়ির সকলের ডাক্তারি পড়া হয়ে যাবে।  আর কিছু বলবেন ??? লেখাতে আমি বরাবর ই কাঁচা, সামনা সামনি এলে আরো কিছু শুনতেন।। 

সব জুনিয়র ডাক্তার ভাই-বোন-দাদা-দিদি এক হোন। অন্যায়ের প্রতিবাদে একসাথে দল-মত নির্বিশেষে গর্জে উঠুন। অভয় দাকে যারা পংগু করেছে,  তাদের একজন ও যেন শলাকার বাইরে না থাকে। আজ এটা না হলে,  কাল এর বলি আপনি ও হতে পারেন।  সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছেন কি ??


****

Respected Prime minister Narendra Modi ji, I am not a poltical minded person .. i am just a common man .. Please let me be.. This is not a political post .. I am a fan of your speech .. You know very well how to involve listeners .. You know very well how to hammer your words into the ears of audience ..  Yesterday i saw in news channel about digital India .. Today i have gone through Anandabazar .. till this it was right .. i could remain silent .. bt when I was asked 'do u support digital India' and I have seen in fb news feed .. many educated and respected personalities , friends and family members are supporting digital India.. By updating their profile picture.. My humble request is please make me understand what it actually is ??
May be my brain is too much tired to see the price hike , and in MBBS curriculum , I have lost the power to use my brain ..Some of my neighbours belong to lower middle class farmers. ..  they can't afford health ...They can't afford Daily goods ..  Please some supporters let me know what digital India is .. I just want to read ur comments .. I assure u i won't make any arguments .  I just wanna know.. My intelligence falls too short to understand this .. please help me ..

#First_make_healthy_India_then, #Digital_India, #MakeIndiaFirst

****

Hello dude, I am a Indian ( my English knowledge is too poor, I know.. please forgive me as i am an poor farmer ) farmer. Updating my first fb status through digital India.. this is a thanks giving message to those who changed my world after digital India..Please go through it.. and share..
I planned to commit suicide after the loss I faced.. but due to digital India I am dreaming again.. because I can directly sell to customers and there is no need for middle-man now.. but the problem was i had a hand set of old Nokia version .. i didn't even know how to operate it.. i kept it to receive calls only by pressing the green button...It didn't support fb or Internet.org. . Modiji arranged a smartphone awareness programme for us .. We were so thankful.. but my wife died that day due to post partum hemorrhage. .. she didn't have any awareness how to take care in antepartum period. .. so what ?? My son is alive now as malnourished .. We have very little food to serve him.. i ignored it.. because he is a son of an Indian farmer .. and where one-third malnourished children of this world are from India .. It's quite natural .. However , I am dreaming again .. as I don't have to face middle-man anymore... Thanks for supporting digital India...

N.B.- Thank you to the middle man who translated my local language into English ..and post it to my fb account ... yooo


#Ditijal_India

*****


কয়েকদিন আগে বিকেলে ডাক্তারকে গণধোলাই এর খবরটা দেখেই ঠিক করলাম- নাহ্ আর নয়, ডাক্তারির থেকে আমার জীবন প্রিয়। তাই আমার ডাঃ উপাধির আগে 'লেট' অথবা রিটায়ার্ড হার্ট বসার আগেই ঠিক করলাম দরকার হলে বাড়ি বাড়ি ঝাঁট দেবো, তাও ভালো। কিন্তু আর ডাক্তারি নয়। 'লেট' এ হলেও কোন লেঠেলের হাতে লেট উপাধিটা প্রাপ্তি নিয়ে আমার যে সমূহ আপত্তি রয়েছে সেটা বুঝলাম। ভাবলাম লোকাল প্রাইমারি স্কুলে রাঁধুনির কাজ নিই, কিন্তু ওখানে আগে থেকেই ঠিক করা কাকে নেবে । সব শেষে ভেবে চিন্তে একটা চা র দোকান খুললাম। স্বাধীন ব্যবসা। মার্কেটিং পলিসি নানারকম নিলাম।
দোকানের নাম কো-এড সেকুল্যার স্বাস্থ্যসম্মত চা এর দোকান। যেখানে ছেলে- মেয়ে সবাই মিলে মিশে চা খায়। আর নানা রকম শিক্ষা লাভ করে। এক কাপ চা খান দশ মিনিটের ওয়াই-ফাই ফ্রি পান। 
লিফলেট ছাপাতে গিয়ে ওটা প্রিন্টিং মিশটেক হয়ে 'দশ মিনিটের ওয়াইফ ' হয়ে গেছিল। যখন দেখলাম ওটার খোঁজে লোকজন আসছে। ওই অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ইচ্ছাকৃতভাবে আর ঠিক করলাম না। মিডিয়াও করে পাছার ভুল। আর আমি তো শিশু।
 নানারকম অপশন রেখেছিলাম, ছেলেদের জন্য দু প্রকার। দুধ চা, দুধ ছাড়া চা।
আর মেয়েদের জন্য। গোলাপি, হাল্কা গোলাপি, ডিপ গোলাপি, হাল্কা লাল, ডিপ লাল, খয়েরি এরকম অনেক রং এর চা। 
তার উপর সংস্কৃতি বজায় রাখতে একজায়গায় করিমায়ণ পড়া হয়। আর আব্দুলভারত। এভাবে আমার চা-র দোকানে সেকুলার বাতাবরণ বজায় থাকে। 
এছাড়া ব্যবস্থা করেছি একটা আড্ডা খানার। যেখানে জুয়া খেলা হয়। আর সেখানে কোন যুক্তিহীন বিতর্কে মেডিক্যাল যুক্তি লাগলে স্পেশ্যালিস্ট সার্ভিস চার্জ ও যোগ করে দিই। তবে প্রিকশন হিসেবে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিয়ে যাই। যাতে ছোট করে লেখা থাকে।
' দাদা, আমার এখনো বিয়ে হয়নি, ওই জায়গা তে প্লিজ মারবেন না। মানে পায়ে মারবেন না। টাকা নেই যে গাড়িতে যাবো। হেঁটেই যেতে হবে বিয়ে করতে। আপনার কথাই ঠিক। ডাক্তারদের পেটানো উচিত। আপনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা গান লিখেছি রঞ্জনার সুরে - ডাক্তারি আমি আর করবোনা। '

জুকারবার্গ ফেসবুক খুলেছিলেন, আমি জোকারবাগ্ পিছিয়ে থাকবো কেন চা র দোকান খুললাম। ব্যপারটা একি।WHO র যুগ শেষ, এটা হু-যুগের যুগ।

কেউ জানেনা যুগটা চা ওয়ালা দের। আমিই হয়তো কবে বিখ্যাত হয়ে গেলাম।

*****


নচিকেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে,

আমরা ডাক্তার, আমরা ডাক্তার
আমি কত শত পাশ করে, এসেছি রুরাল ঘুরে মানুষের যন্ত্রণা ঘোচাতে,
আমরা ডাক্তার।
ডাক্তার মানে সে তো মানুষ জেনো,
নই আমরা কোন ভগবান।
ভাইগিরি ডাক্তারি একই তো নয়,
কিন্তু দুটোই আজ প্রফেশন,
সমাজের প্রতি ভাঁজে যেভাবে কোরাপ্শান্,
এখানেও সমাজের প্রতিদান।
আমরা ডাক্তার।
রক্ত রিপোর্ট দরকারে দিতে হয়,
সবাই তো দালালিটা করেনা,
বিজ্ঞান জিনিসটা জটিল ধাঁধার মত,
প্রমাণ ছাড়া এটা চলে না।
রোগীরা রোগীই আছে হাসপাতালে,
খদ্দের বানালে তোমরা,
ডাক্তারে ভরসা না রেখে তোমরা,
দিলে আইনকানুনের ভোমরা।
সমাজের প্রতি ভাঁজে যেভাবে কোরাপ্শান,
এখানেও সমাজের প্রতিদান।
আমরা ডাক্তার।
নিজেদের ডাক্তার বলি কেন,
মজুর চাইলেও তো বলা যায়,
এথিক্স রক্ষাভার সমাজের মাঝে শুধু ডাক্তারিতেই যেন শোভা পায়,
সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ একবার ভালো করে ঘুরবে বেশ,
দুশজনের পিছু দুইজন ডাক্তার দিনরাত খাটছে জম্পেশ,
মানুষ নয় ওরা ডাক্তার বলে, ভাই,
খাওয়া -ঘুমের কি দরকার?
আমরা ডাক্তার,  আমরা ডাক্তার।
ভাইগিরি, কুংফু তো শিখিনি, ডাক্তারি পড়ে বলো কোথা যাই,
অসহায় আমাদের মারার আগে করজোরে নিবেদন করছি তাই।
ওই যে ডাক্তার গাড়ি চড়েন, দেখেছ কি তার ঘাম, রক্ত?
চোখের তলায় তার দেখেছ কি রাতজাগা শ্রম অব্যক্ত?
তোমার বিপদ হলে, ট্রমা কেয়ারে এলে,
দেখলে শুয়ে আছে আহত ডাক্তার।
এরাও ডাক্তার, আমরা ডাক্তার।


*****

" কিরে আমাদের রাষ্ট্রপতি আর মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন মুখে হাসি নিয়ে চিকিৎসা করতে, তোর মুখে এখনও সেই গাম্ভীর্য ! "
পুরানো চিকিৎসক বন্ধু শ্যামল কে হঠাত বাসে দেখতে পেয়ে এই প্রশ্নটাই মাথায় এল। আমিও বাসে যাচ্ছিলাম কোলকাতায় কাজে। আসলে যেদিন থেকে ওনারা এই কথাটি বলেছেন আমিও চেষ্টা করি সবসময় হাসিমুখে থাকতে। জিনিসটাকে একটা অভ্যেসে পরিণত করার জন্য আমি পায়খানাতেও আয়না নিয়ে যাই। পায়খানা করার সময় নিজের মুখটা আয়নায় ভালো করে দেখি। ওটাই তো অগ্নি পরীক্ষা। পায়খানা যে হাসিমুখে করতে পারবে সে সব জায়গায় হাসিমুখ করে থাকতে পারবে। আমি যেরকম বাধ্য জীব। শ্যামল চিরকালই উলটো। ও ডিপার্টমেন্ট এর হেড এর সাথে ঝামেলা পাকায়। ওর শূন্য পাওয়ার রেকর্ড আছে। ইন্সটিটিউট  এর ডিরেক্টরের সাথে ঝামেলা পাকায়। ও আসলে ঝামেলা কে ভালোবাসে,নাকি ঝামেলা ওকে বোঝা মুশকিল। এখনো পর্যন্ত কোথাও এক বছরও টিকতে পারেনা। ভয়ানক রেকর্ড। ওর ব্যক্তিগত জীবনটাও তাই। আমি সেই ছোট থেকে এক বউ তে মানুষ। সুখ-শান্তির সংসার। তাই যে যা বলে বাধ্য ছেলের মত শুনে নিই। সেরকমই এই হাসিমুখ। সেদিন এসে বললো এক মাতাল রোগী - এই শুয়োরের বাচ্চা ডাক্তার, আমার মাথাটা সেলাই কর শালা হারামি। 
আমি ভেবে দেখলাম, বিষ্ণুর ও বরাহ অবতার ছিল। আর সেদিক থেকে ভেবে দেখলে আমরা সবাই বরাহ শাবক। ঠিকই বলেছে। ওর বউ তো আমার বোনেরই মত। তাই আমি শালা এটাও ঠিক। আর রামের ভক্তকে হারামি বলা যেতেই পারে। আমাকে কত সম্মান দিল ভেবে আমি একগাল হাসিমুখ নিয়ে - হ্যাঁ বসুন।

বলে সেলাই করে দিলাম। 
যাই হোক, শ্যামল আমার প্রশ্ন টা শুনে বললো - আমার হাসি আসেনা সব সময়। কোলকাতা যাচ্ছি একটা নতুন কাজে ঢুকেছি।
আমি বললাম - কি কাজ ? 
- একটা জায়গায় ড্রাইভার এর কাজ পেয়েছি। সেটাই করবো।
- ডাইভার ! 
- হ্যাঁ, কেউ এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করতে পারবেনা যে কেন আমি হেসে হেসে গাড়ি চালাচ্ছিনা।
একটু থেমে শ্যামল আবার বলে চললো। অদ্ভুত দেশ ভাই। এই দেশে পাকিস্তান আর জংগি ইস্যু ছাড়া দেশভক্তি জাগেনা। এখানে যুক্তির থেকে ভক্তি আর আবেগ বেশি চলে। এই দেখ আজ দেখলাম, হোমিওপ্যাথি তে সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপকদের সম্বর্ধনা দেওয়া হল। তুই হোমিওপ্যাথ মানিস ?
আমি আমতা আমতা করে বললাম- না মানে আমি মানি না। আমার বউ মানে। বাড়ির সবাই মানে। তাই আমিও। তুই জানিস আমার ওখানে একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার বসে তার ফিজ তিনশ টাকা।
- হ্যাঁ আর আমরা ফিজ নিলে আমরা ডাকাত। কারণ লজিক আছে আমাদের সায়েন্সে। হোমিওপ্যাথে আছে টা কি। নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী হোমিওপ্যাথ কে ঝাড় ফুঁকের সাথে তুলনা করেছেন। বিদেশে হোমিওপ্যাথ ব্যান করার চিন্তা চলছে। আর আমাদের দেশ তাদেরকে সম্মান দিচ্ছে। কোনদিন দেখেছিস আমাদের সায়েন্সের কৃতী দের সম্মানিত করতে ? বরং তাদেরকে কিভাবে ইউজ করা যাবে সেই চিন্তা। তাদের বাইরে পড়তে যেতে দেবেনা। এখানেও সম্মান দেবেনা। যে যুক্তি গুলি আসে - হোমিও প্যাথে সাইড এফেক্ট নেই কোন। 
আরে এফেক্ট থাকলে তবে তো সাইড এফেক্ট থাকবে। হোমিওপ্যাথ এ বিশ্বাসের জন্য অনেকের চিকিতসার দেরী হয়। আরো খারাপ হয় অবস্থা।
হোমিওপ্যাথে আবার স্টেরয়েড থাকে। যে কারণে কিছু রোগ সেই সময়ের জন্য কমে যায়। তুই জানিস, আমাদের ওয়ার্ডে একবার স্টেরয়েড ইউথড্রয়ালের কেস ভর্তি হয়েছিল যার হিস্ট্রি নিয়ে জানা গেছিল সে হোমিওপ্যাথি রেগুলার পেশেন্ট ছিল। আমাদের ও দোষ আছে আমরা অনেক সময় মশা মারতে কামান দাগি। এর জন্য ট্রেনিং প্রয়োজন। কিন্তু ট্রেনিং এ তো সেই ডেফিনেশন ধরবে আর ড্রাগের রেজিমেন ধরবে। 
দ্বিতীয় যুক্তি কি না হানিম্যান যে নিজে একজন আলোপাথি ছিলেন,  ছেড়ে হোমিওপ্যাথ হয়েছিলেন, তাই আমাদের মেনে নেওয়া উচিত এটা আলোপ্যাথি র থেকে মাইল্ড ডিজিজে বেশি কার্যকর।
যুক্তি টা কিরকম বলতো।সিধু দা, পলাশ সেন, অর্ক দা ডাক্তারি ছেড়ে গানের জগতে গেছে, তাই গান দিয়ে রোগের চিকিতসা সম্ভব। কিভাবে করে এরকম বাজে কথার প্রচার ? ভারতের মত দেশেই চলে এসব। 

পাশে একজন শ্যামলের কথা মন দিয়ে শুনছিল, বলে উঠলো, আরে দাদা কি বলছেন, আপনারা আজকের ছেলেদের জন্যই দেশের এই অবস্থা, সীমান্তে আমাদের জওয়ান রা লড়ে এই দেশকে রক্ষা করছে, আর তবু আপনারা এই দেশের শুধু খারাপই দেখেন।
শ্যামল বলে উঠলো - মানেটা কি? 
আমি ওকে থামতে নির্দেশ দিলাম ইশারায়। 

ভরা বাসে 'দেশদ্রোহী' তকমা পেতে চাইনা। তারপর জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম রাস্তায় এরকম অনেক বাস যাচ্ছিল যেখানে শ্যামল রা চুপ করে আছে।

*****

কোন এক বিখ্যাত ব্যাক্তি বলে গেছেন - 'মৃত্যুর পর তোমার নামে একটা বেটার চ্যাপ্টার লেখা হয়।'
কাল থেকে বুঝছি সেটা। লিংকিন পার্ক r চেস্টার বেনিংটন এর আত্মহত্যার খবরে। আমার চারিপাশে যে এত মিউজিক লাভারের অস্তিত্ব আছে কাল থেকে জানলাম। জেনে খুব শান্তি পেলাম। লিংকিন পার্কের কয়েকটা গান সবার ওয়ালে 'নাম্ব', 'ইন দি এন্ড', 'লিভ আউট অল দ্যা রেস্ট'। তার বাইরেও এই ব্যান্ডটির সাতটা আলব্যামের প্রচুর গান রয়েছে যেগুলো অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ। একজনকেই লিখতে দেখলাম আমার প্রিয় 'হোয়াট আই হ্যাভ ডান' নিয়ে। লাস্ট আলব্যাম  'ওয়ান মোর লাইট' । এই বছরই রিলিজ করেছে। 
লিংকিন পার্ক নিয়ে সেই লেভেলের ইমোশন আমার কোনকালেই ছিলনা।
কারণ 'Minutes to midnight' এর গানগুলো ছাড়া বাকি গান গুলো ডিস্টার্বড মাইন্ড কিংবা লং ড্রাইভ ছাড়া কখনো শুনিনি। তবে এটাও ঠিক মিউজিকগুলোর মধ্যে অরিজিনালিটি আছে। আর এর ভিডিওগুলো যেন লিরিক্স বলে যায়, মডেল নিয়ে নাচানাচি করার জন্য ভিডিও করেনা। Ami প্রথম যে স্টুডিও তে গিয়েছিলাম তার যে রেকর্ডিস্ট ছিলেন বলেছিলেন - ' এখন লোকে গান শোনেনা, দেখে।'
সত্যি কথাই। হেমন্ত, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমার, নচিকেতা, সুমন শুনে বড় হয়েছি। এখন তো ভিডিও তে Model ছাড়া গান কেউ দেখে না। তবে লিংকিন পার্ক rap মিউজিক করলেও ভিডিও তে সেই নোংরামি গুলো করেনি। 
এই ব্যান্ডটির ভিডিও লিরিক্স এর মানে বুঝিয়ে যায়। 'হোয়াট আই হাভ ডান ' এর ভিডিওটি আমার অসাধারণ লাগে। গ্রামি উইনার ব্যান্ডের সমালোচনা করার ক্যাপা আমার নেই। তবু বলবো, অনেক ক্রিয়েটিভ আইডিয়া নিয়ে এলেও ভারসাটাইল নয় এই ব্যান্ড। হ্যাঁ এতক্ষণ চেস্টার এর কথা না বলে ব্যান্ড ব্যান্ড করছি। তার কারণ ভিডিও আপিয়ারেন্সে চেস্টারের রাগী ইন্টেন্স লুকের গায়ক এর অবেদন অনেক বেশি। 


 কিন্তু লিংকিন পার্ক মানে শুধু চেস্টার নয়। লাস্ট কয়েক বছর যে লোগো ইউজ হয় লিংকিন পার্কের। তার বাইরে যে ষড়ভুজ আছে ছটা কোণ 6 জন মেম্বার কে ডিনোট করে। বরং লিংকিন পার্কের মেন লোক মাইক সিনোদা বলা যেতে পারে। যারা ভাবছে লিংকিন পার্ক শেষ। আমার তো মনে হয়না। হ্যাঁ এবার চেস্টারের উদ্দেশ্যে বলা যাক, অসাধারণ শক্তিশালী ভোকাল, সংগে অসাধারণ বেল্টিং কোয়ালিটি। ইমোশনাল পার্সন। শোনা যাচ্ছে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে ডিপ্রেশনে ভুগছিলো তাই সুইসাইড। 
একজন আর্টিস্ট হিসেবে খারাপ লাগছে, কিন্তু শ্রোতা হিসেবে কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুতে যে আবেগ অনুভব করেছিলাম, এখন করছিনা। আশা করি, লিংকিন পার্ক চলবে। 
এক জায়গায় দেখলাম একজন এক পা বাড়িয়ে লিখেছে, 'হাইব্রিড থিওরি' র গান গুলো হিট হয়নি তাই ডিপ্রেশন। কাম অন ম্যান, চেস্টার এবার উপর থেকে মারতে ছুটে আসবে। 'হাইব্রিড থিওরি' যতদূর জানি এই ব্যান্ডের প্রথম হিট আলব্যাম। রাগ টা হচ্ছে এদের জন্যই.. এরা ময়দা মাখা মামণি র ফটো লাইক করবে। কিন্তু নতুন আর্টিস্টের গান শুনবে না। আর এইসব আজে বাজে পোস্ট করবে। আগে শোন তারপর খারাপ বলে নাক সিঁটকিও। 
আমার শৈশবে লিংকিন পার্কের কোন ভূমিকা নেই। আমি গ্রামে মানুষ। রবীন্দ্রসংগীত সাগর সেন বা শ্রীকান্ত আচার্য র গলায় আমার শৈশব। তবে এটা বুঝি লোকে যখন চোখ টা আধো বুজে দুহাত জড়ো করে ভক্তি তে গদগদ হয়ে রবীন্দ্র সংগীত গায় তারাও এই একি দলে পড়ে। এরা রবীন্দ্রসংগীত গিটারে অন্যভাবে গাইলে আঁতকে ওঠে।

 প্রথম কলেজ ফেস্ট এ ফসিলস্ এর লাইভ বেশ ভালো লেগেছিল। তবে মেটাল ব্যান্ডের পার্ফরমেন্স শুনতে গিয়ে দুকান চাপা দিয়ে অডি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল।  তারপর
ফার্স্ট ইয়ারে একজন বললো - তুই লিংকিন পার্ক শুনিসনি ? 

এমনভাবে যেন কোন অপরাধ করেছি বলে নাম্ব গান টা দিল। মিউজিকের জেনর টা শুনে এত ভালো লাগলো সব গান একধার থেকে শুনলাম। তারপর একটার পর একটা ব্যান্ড এক্সপ্লোর করতে লাগলাম। এখন আর ওরকম শোনা হয়না।

লিংকিন পার্ক ব্যান্ডটির জেনরই হল ইলেকট্রনিক সাউন্ড, রক, অলটারনেট মেটাল।
 শ্রোতা না থাকলে ক্রিয়েটিভ আর্টিস্টদের খুব অসুবিধে। তারা রোজ নিজের সাথে লড়াই করে কিভাবে আরো ভালো লেখা যায়। আরো ভালো আর্ট।
শিল্পীর মৃত্যু নেই। চেস্টার, তার বন্ধু ক্রিস কর্নেল, কালিকাপ্রসাদ, কিশোরী আমোনকার সবাই সত্যিকারের শ্রোতাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। আমি জানি ক্রিয়েটিভ লোকেরা কিভাবে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে সৃষ্টি করে তাই তারা স্ট্রেস, ডিপ্রেসনের শিকার হয় বেশি। 

যতদিন তাদের শ্রোতা থাকবে তারা সৃষ্টি করে যাবে তবু। তাই আপনারা থাকুন, লিংকিন পার্ক থাকবে। বেঁচে থাকবে আমাদের মত অনেক অতি ক্ষুদ্র জোনাকির মত গানের স্রষ্টারা। শেষ করছি চেস্টারের একটা কথা দিয়ে - 'The fans are the biggest reason we do what we do .'


Rest in peace Chester Bennington ..


****************



****

বিশেষত নন-মেডিক্যাল মানুষদের জন্য,

একজন ডাক্তার আর একজন গৃহবধূ নারী :

মিল :
সংসার সুখে হয় রমণীর গুণে। আর ডাক্তার না থাকলে সমাজ অচল। সবাই না থাকলেও সমাজ ধুঁকিয়ে চলবে, ডাক্তার আর কৃষক না থাকলে সমাজ অচল। 
একজন ডাক্তার যত ভালোভাবেই পেসেন্ট বাঁচাক, তাকে গালটা তখনই শুনতে হয়, মারটা তখনই খেতে হয় যখন হাজারে একটা কোন পেসেন্ট খারাপ হয়, মারা যায় বা ঠিক হয়না। এই সমাজটা তার যেন শ্বশুরবাড়ি। বাড়ির বউ এরও হঠাত কোনদিন রান্না খারাপ হলে যেমন তাকে গাল শুনতে হয়। সমাজে  ডাক্তার হল গৃহবধূ। ডাক্তার যুবক হলে, এত কম বয়স এর তো কোন অভিজ্ঞতাই নেই। ডাক্তার বয়স্ক হলে, এ তো সব ভুলে গেছে, এর কাছে কি দেখাবো। ডাক্তারকে সবসময় শ্বশুরবাড়িকে তেলিয়ে চলতে হয়। কোন ডাক্তার যদি নৈশক্লাবে যায়, মডার্ন ড্রেস পরে, সাংবাদিকের খবর হয়, দেখুন রাতে মদ খেয়ে ডাক্তারের উদ্দাম নৃত্য, আর হসপিটালে রুগী মরছে। পাবলিক খাবে আর ব্যাপারটা পড়ে চা খেতে খেতে খিস্তি দেবে। বেসিক্যালি বাড়ির বউকে যেরকম শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকতে হয়, আর বাদবাকি সবাই অবাধ বিচরণ করতে পারে, সেরকম একজন ডাক্তারের কাছে সমাজটা হল সেরকম শ্বশুরবাড়ি যেখানে বাদবাকি প্রফেসন হল নিজের সন্তান সমাজের,  আর ডাক্তাররা হল সমাজের জারজ সন্তান । নেতারা হল স্বামী। জবাবদিহি দিতে হয়। আর সাংবাদিকরা হল বিধবা পিসিমা বা মাসিমা গোছের কেউ যাদের কাজ হল সংসারে বউমার ইম্প্রেশান খারাপ করা। বাড়ির বউকে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চড় থাপ্পর মারতে পারে, গালাগাল করতে পারে। বউ করলে বিধবা পিসিমা গোটা পাড়া রটিয়ে বেড়ায় কি দজ্জাল বউমা আমার!!!  গালাগাল দেয়। নিজেদের ব্যবহার গুলো সচেতন ভাবে উহ্য রেখে। পাড়ার আরও যাদের কোন কাজ নেই , বা যাদের ঈর্ষা আছে কোন কারণে, কারো হয়তো ওই বাড়ির বউমা হওয়ার কথা বা ইচ্ছে ছিল, এন্ট্রাস পাশ করতে পারেনি। তারা সায় দেয়,  এরকম বউ কে পুড়িয়ে মারা উচিত। এরকম বউকে জুতো খুলে কেলাও। আর বাড়ির বউ ও অদ্ভুত। এত কিছুর চাপে কিছু করতে না পেরে, স্বামীর কাছে আবেদনে শুধু প্রতিশ্রতি পেয়ে কিছু সাপোর্ট না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেই পোস্ট অন্য বউরাও তাদের ওয়ালে শেয়ার করতে থাকে। তারাও হয়তো কখনো এর শিকার হবে বা হতে পারে এই ভেবে। 
কেউ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়। কেউ পরকিয়া করে। মানে প্রফেসন ছেড়ে পালায়। নাহলে দুটো প্রফেসন একসাথে চালায়। এভাবেই চলতে থাকে। সমাজে নারীবাদী লেখক-লেখিকা এতই কম যে তাদের লেখাকে পুরুষেরা হুলিয়ে খিস্তি দেয়। নারীরাই নারীদের বড় শত্রু অনেক ক্ষেত্রেই। ডাক্তারদের ও তাই। আরো ভাবলে আরো মিল পাওয়া যাবে হয়তো।

অমিল :
নারীদের জন্য সমাজে অনেক আইন আছে, কিন্তু এখনো সমাজে ম্যারিটাল রেপ হয়, গৃহবধূ হত্যা হয়। আর ডাক্তার সুরক্ষার থেকে ডাক্তারকে বাঁশ দেওয়ার আইন বেশি। আর যে আইনটা আছে - আজ অবদি পেপারে এই হেডলাইনটা পেলাম না ডাক্তার নিগ্রহের জন্য এত বছর জেলহাজত। 


পুনশ্চ- লেখাটা কারো মনে বা অভিমতে ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি দু:খিত। তবে একটু লেখা টা পড়ে সমাজের অসুস্থতা টা মন দিয়ে ভাবতে অনুরোধ করলাম।

****-


বুদ্ধিজীবি, বুদ্ধিজীবি কোথায় তোমার দাঁড়ি,
কলম তোমার বিক্রি হয়েছে তোমার সাথে আড়ি।
পাবলিসিটি না সমাজ কার সাথে তুমি বেশি,
তোমার চিন্তা শুধুই কি তবে যাদবপুরের ভিসি ??
রোহিংগা আর কাশ্মীর, চিয়েতনামে নামী,
তোমার কলম শুধুই কি তবে ওই ইস্যুতেই দামী ?? 
বুদ্ধিজীবি, বুদ্ধিজীবি আমার ভারী জ্বর,
সমাজের ইনফ্ল্যামেশনে কাঁপছি দিনভর।
প্লিজ মোমবাতিতে কন্ডোম দিয়ে হাসপাতালে এসো।

আমরা অসুর রূপে অপেক্ষাতে গলায় নিয়ে স্টেথো ।।

******

আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন। ঐক্যবদ্ধ সব চিকিৎসক সহযোদ্ধাদের জানাই অভিনন্দন। এই প্রথম চিকিৎসকদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হল, পিছু হটল মহম্মদ আলি পার্কের পূজো কমিটি । সরিয়ে ফেলা হল মূর্তির গা থেকে স্টেথো, আপ্রন। কারণ টা খুব সহজেই বোঝা যায়, বহুদিন ধরে ডাক্তারদের মধ্যে জমতে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এর ঐক্যবদ্ধ বিস্ফোরণ। ডাক্তার রা বুঝেছেন দরজা লাগিয়ে বই পড়ে আর ভালো ট্রিটমেন্ট  করলেও তারা আর সুরক্ষিত নয়। ডাক্তারদের এতটা ঐক্য সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায় বলে মনে পড়েনা। তাদের ঐক্য সাধারণ মানুষদের ও আকৃষ্ট করেছে। ফলস্বরূপ এক বৃহত্তর আন্দোলনের মুখে দাঁড়িয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। রোগটার সিম্পটোম্যাটিক ম্যানেজমেন্ট তো হল, কিন্তু রোগের কারণ টা কি সারলো?

যে দেশে ' ৯ টাইপ করুন আর মজা দেখুন ' টাইপের পোস্ট ভাইরাল হয়। যে দেশে একজন ক্রিমিনালের আরেস্টে দাংগা বাঁধে। যে দেশে একজন সিরিয়াল এর অভিনেতা জেলে করোলা সেদ্ধ খাচ্ছে খবর হয়। মুম্বাইএর অভিনেতা, অভিনেত্রীর বিজ্ঞাপন করা ফর্সা হওয়ার ক্রিম লোকে কেনে। যুক্তির থেকে যে দেশে ভক্তি আর ইম্পালসের প্রভাব বেশি সে দেশের মিডিয়া অনেক আগেই জনসাধারণের শিরায় শিরায় এই আইডিয়া ইঞ্জেক্ট করে দিয়েছে যে ডাক্তার রা শয়তান, পিশাচ,  অসুর। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এই টক্সিসিটির আন্টিডোট নয় । অসুখের শিকড় অনেক গভীরে বন্ধুরা। কিছু ক্ষেত্রে আমরাও দায়ী। আজ একটা জয় দিয়ে এই সংগ্রামের সবে শুরু। আমাদের পারস্পরিক অহংকার ভুলে আমাদের ঐক্য এরকমই অটুট থাক। আশা করি একদিন আসবে আজ মিডিয়া ইন্ডিয়ান আর্মিকে নিয়ে কিছু বললে পাবলিক যেরকম রিয়াকশন করবে, ডাক্তারদের ও সেই চোখে সবাই দেখবে।।


*****

ক্রিটিক্যাল সারমেয়াসুরদের একটি গল্প :

তারিখ ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ :
একটি ২৫-২৬ বছরের মেয়ে ভর্তি হয় তিন মাসের জ্বর নিয়ে। অনেক হাসপাতাল, Nursing Home ঘুরেছে এমনকি পাজি থুড়ি পিজি হসপিটালও। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকের ধৈর্য্যের ব্যাসার্ধ খুবই ছোট হওয়ার দরুন কোথাও থিতু হয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার ন্যূনতম সময় দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা ছিলেন না, কোথাও সম্পূর্ণ ডায়াগনোসিস হওয়ার আগেই বাড়ির লোক রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছেন । সম্প্রতি সংজ্ঞা হারানোয় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল সারমেয়াসুরদের হাতে রুগীকে ছাড়া হয়। গ্লাসগো কোমা স্কেল অনুযায়ী স্বাভাবিক মানুষদের স্কোর ১৫ হয়। ৩-৮ হলে বলা হয় মারাত্মক ব্রেন ড্যামাজ বা কোমাটোজ পেশেন্ট। ওই মেয়েটির স্কোর ছিল খুব বেশী হলে ৫। রক্তেও অক্সিজেন কমছিল। তাই দেরী না করে শ্বাসনালী তে টিউব পরিয়ে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র এ দেওয়া হয়। যেখানে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র আর রুগীর ফুসফুসের নিজস্ব সামান্য ক্ষমতা হাতে হাত ধরে রুগীর কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছাতে থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে রুগীর ফুসফুস নিজে আর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা একেবারে হারায়,কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র এর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । ব্রেনের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে বোঝা যায় মষ্তিষ্কের ভেতরের রস যেখান দিয়ে ড্রেন হয়, সেটা হচ্ছেনা। ফলে মস্তিষ্কের ভেতরের ড্রেনগুলো উপচে পড়েছে ব্রেন টিসুর উপরে। বিভিন্ন সেন্টারে চাপ দিচ্ছে, তার মধ্যে একটা শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার কেন্দ্র। ফলে ফুসফুস অকেজো। বাড়ির লোক কে আগাম বোঝানো হল যেকোন সময় একি কারণে হ্রত্পিন্ড ও বন্ধ হতে পারে। এই মুহূর্তে কিছু নিউরোসার্জন এর ইন্টারভেনশন লাগতে পারে। কিন্তু বাড়ির লোক বললো আপনারা যা করার করুন। ইতিমধ্যে সিটি স্ক্যান দেখে পিঠে সূঁচ ফুটিয়ে স্নায়ুরস টেনে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলো টিবি মেনিঞ্জাইটিস। টিবির ড্রাগ শুরু হল। ২০ তারিখ পেসেন্টের কার্ডিয়াক আরেস্ট হল। সিপিআর আর আড্রেনালিন, আট্রোপিন দিয়ে ইসিজি র সরলরেখায় জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে আনা হল। ড্রাগ দিয়ে পেসেন্টের ব্লাড প্রেসার বজায় রাখা হচ্ছিল। ২৫ তারিখ থেকে পেসেন্টের গ্লাসগো কোমা স্কেলের একটু উন্নতি হতে লাগল। ২৬ তারিখ রুগীর নিজের শ্বাস নেওয়ার ইচ্ছে দেখে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খোলা হল। কিন্তু ২৮ তারিখ আবার হ্রত্পিন্ড হঠাত্ পাম্প করা বন্ধ করে দিল। তাকে আবার সিপিআর দিয়ে ফিরিয়ে আনা হল। আবার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে দেওয়া হল। কিন্তু রুগীর শ্বাস নেওয়ার ইচ্ছে দেখে পরে আবার খোলা হল। ২৯ তারিখ থেকে রুগী সাড়া দিতে লাগলো। ২ তারিখে শ্বাসনালী থেকে টিউব খুলে নেওয়া হল। রুগীটি এখনো বেঁচে আছে। সম্পূর্ণ নিজে শ্বাস নিচ্ছে। অক্সিজেন ও দিতে লাগছেনা। 
নিজের নাম বলতে পারছে। কথা বলতে কষ্ট হলেও বলতে পারছে। হাত পা নাড়াতে পারছে। আশা করি ভালো হয়ে বাড়ি যাবে। এই টিমের সাথে কাজ করে আমি গর্বিত।
কৃতিত্ব প্রাপ্য সেই সব নার্সিং স্টাফ ও গ্রুপ ডি দাদা-দিদি দেরও যারা পূজোর সময় বাড়ির থেকে দূরে এরকম কত হাসপাতালে নিজেদের সময় দিয়েছেন। 
সারমেয়াসুর হই আর যা হই, অন্তত তোমাদের দেবতা যমও আমাদের এফর্ট দেখে খুশি হয়ে হার মেনেছেন। কে বলে সরকারী হাসপাতালে কাজ হয়না !!! 


লেখাটিতে প্রয়োজনীয় এডিট করেছেন - ডা: অনুপ বৈরাগী...

*****

কেন আমি মূলত বাংলায় গান লিখি ? হিন্দী নয় কেন ? কেন আমি মূলত বাংলা হরফে লিখি? ইংরেজিতে লিখিনা কেন? 

এটা ঠিক আমাদের এখন বলিউড পোস্ট প্রোডাকশন ( মিক্সিং, মাস্টারিং), বাজেট, প্রচারে অনেক এগিয়ে। নতুন বং জেনারেশন হিন্দী গানেই ঝুঁকে। কথোপকথনেও লোকে বাংলা ভাষাকে ভুলতে বসেছে। এই দশকের বাংলা গান নিয়ে মাতামাতি এই দশকের জেনারেশন আর সেরকম করেনা বললেই চলে। 

কিন্তু এটাও ঠিক এই ভাষাই জন্ম দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ, রাহুল, শচীন দেব বর্মণ, সলিল, হেমন্ত, কিশোর, মান্না দে আরো কত বলে শেষ করা যাবেনা।  এরা ক্লাসিক লোকজন গোটা ভারতের। বাংলা গান আমার প্রাণের। যে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে শহীদ হয়েছে লোকে, যে ভাষাকে ইউনেসকো সম্মান দিয়েছে, সেই ভাষায় গান ভোকাল কর্ড দিয়ে বেরোলে আমি শিহরিত হই। আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। বাংলা আমার প্রাণের ভাষা। আমার মাতৃভাষা। তাই বিশ্বাস করি, আমার বাংলা গানে যদি এতটুকুও পদার্থ থাকে লোকে শুনবেন ।।


****


প্রেসক্রিপশন প্যাডের সালের জায়গায় ২০৩০ লিখেই ডাক্তারবাবু প্রশ্ন করলেন রুগীকে - বলুন আপনার নাম কি ? 

রুগী বললেন - আগে আপনি পরীক্ষা দিন,  পাশ করলে তারপর আমাকে দেখবেন।

ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন - আসলে আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম, এরমধ্যে নতুন কোন বিল পাশ হল বুঝি !! ? 

রুগী - হ্যাঁ যে কোন রুগীকে দেখতে হলে সেই রোগের উপর একটা পরীক্ষা দিতে হবে এম.সি.কিউ। পাশ করলে তবেই সেই রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন সে যত ডিগ্রিধারীই হোক না কেন।

ডাক্তার - প্রশ্ন, রোগ কে ঠিক করবে?

রুগী - রুগীর যে রোগ হয়েছে বলে মনে হবে সেই রোগ সরকারী সাইট এ সার্চ করলে ওই রোগ সংক্রান্ত প্রশ্ন আর উত্তর বেরিয়ে যাবে। পাশ করলে তবেই চিকিৎসা  করতে পারবেন।

ডাক্তার - আর যদি আমার চিকিৎসা করতে গিয়ে অন্য কোন রোগ মনে হয়? 

রুগী - তাহলে ওই রোগের প্রশ্নের উপর আবার পরীক্ষা দিতে হবে।

ডাক্তার - সব ডাক্তার যদি ফেল করে পরীক্ষায় ? 

রুগী - না সেটা হতে পারেনা। আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথ, ভেটেনারি এদের এইসব পরীক্ষা দিতে হয়না। তাই ফেল করারও সম্ভাবনা নেই। আপনারা সবাই ফেল করলে ওদের কাছে যাবো। ওরা তিন দিনের ট্রেনিং নিয়ে ভালোই চিকিৎসা করছে। আপনাদের মত রুগীর জল্লাদ নয়। ওরা তো তাও চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে পারেনা। হতেই পারে। 

ডাক্তার - হতেই পারে, হতেই পারে।

এরপর ডাক্তার পরীক্ষায় পাশ করে, রুগীকে ওষুধ দিলেন। রুগী ফিজ দিলেন ৪৯ টাকা।
ডাক্তার অবাক হয়ে তাকাতে 

রুগী বললে- যখন আপনি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তখন একটা নতুন বিল পাশ হয়েছে। এমবিবিএস এমএস এমডি থাকা ডাক্তার রা ৫০ টাকা ফিজ নিতে পারবেন। আর ১ টাকা প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করার দাম।


****

হস্টেল লাইফে এরকম হলে স্বরাজের রুমেই যেতাম প্রথমে।
"কিরে স্বরাজ! " বলে স্বরাজের গায়ে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ছুঁড়ে মারতাম। স্বরাজ আমাকে তাড়া করতো। কিছুটা হাল্কা লাগতো।
নাহলে গিটার টা নিয়ে ছাদের অন্ধকারে বসে একলা গান গাইতাম। "না পেয়ে তোমার দেখা একা একা দিন যে আমার কাটে না রে" এর সাথে "দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা " বা "জেনেশুনে বিষ করেছি পান " এর সাথে "খেয়েছি বেজেতে কচু না বুঝে " গান মেশাতাম। রবীন্দ্র ঐতিহ্য এর ধ্বজাধারী আঁতেল রা তাতে সেন্সরবোর্ড এর বাঁধা নিষেধ লাগাতোনা। কিছুটা হাল্কা লাগতো।
ভারী লাগছে। গিয়ে সৌরভ দা র ভুঁড়িতে প্যাল্-পেট করা প্র‍্যাক্টিস করে নিতাম। কিছুটা হাল্কা লাগতো।
বৃষ্টির রাতে যখন রুমে কেউ থাকতোনা। না না ওটার কথা বলছিনা। নিজের অজান্তে কখন কবিতার হিজিবিজিতে ভরে উঠতো ডায়েরি।  হাল্কা লাগতো।
আরো অনেকে ছিল যারা এখন নেই।
যে মৃত্যু মানুষের কাছে এত ভয়াবহ। সেই মৃত্যু কে রোজ আইসিইউ তে সামনে থেকে দেখি। আরো ভারী লাগে। মনিটরের সাইরেন কবিতার জ্বালামুখী কে নিভিয়ে রাখে। খুব ভারী লাগে। একটু খোলা হাওয়া চাই, বসন্তের বিকেলে যখন আমি বন্ধুদের সাথে ক্যান্টিনে আড্ডা দেবো একটাই চিন্তা চাই - প্রক্সি টা পড়বে তো ঠিক ঠাক! ক্যান্টিনে কত টাকা বাকি? সন্নাসীদা চা তে একটু আদা দিও।

ট্যাক্সের চিন্তা চাইনা। এত কর্তব্য, আলার্ম আর রিমাইন্ডার এর ভিড়ে ফিরিয়ে দিতে পারো আমাদের সেই দিনগুলো ??

****


যেহেতু ডাক্তার,
গালাগালি-মার ;
আমাদের পেশাগত অধিকার।
নেই বাদ শিক্ষক - প্রফেসর,
বিজ্ঞানী তড়পানি খাবে এবার-
দিন নেই কারো ঠান্ডা ঘরে বসে চুপ থাকার, 
এবার প্রশ্ন আসছে ধেয়ে-
এ দায় কার?
সমাজের, তোমার না আমার?





****


একজন হতভাগ্য ডাক্তারের মন্ কি বাত্ :

আমাদের বাড়ির কাছে এক শিক্ষক থাকেন। নাম করছিনা। এক বছর আগে ওনাকে পাশ থেকে পেরিয়ে যেতে দেখে ডাকতে উনি না শোনার ভান করে চলে গেছিলেন। আমিও এক গাল হেসে চলে এসেছিলাম। আজ ওনাকে সামনাসামনি দেখতে পেতে উনি বললেন - তুই এখন আমাদের হাসপাতালে আছিস না ? তোর নাম্বার টা দে তো। কখন কি কাজে লেগে যায়।
আমি আবার হাসলাম। মনে মনে ভাবলাম -
কোথায় ছিলেন স্যার এতদিন ? 
একজন প্রফেসর মার খেলেন। গোটা সমাজ তার বিরুদ্ধ এ রুখে দাঁড়ালো। সংবাদ মাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে তাকে পৌঁছে দিলেন ন্যায় এর দোরগড়ায়। কারণ পাবলিক সেন্টিমেন্ট এটা খাবে। ওই প্রফেসর আমার নিকট আত্মীয় - সমাজের এই বার্তা কে কুর্নিশ জানাই। কিন্তু গত এক বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এ ৭৫ জন ডাক্তার মার খেয়েছে এটা রিপোর্টেড, গালাগালি, মার আরো কত আনরিপোর্টেড তার হিসেব নেই। এই সেদিন উত্তরবঙ্গ এর এক ডাক্তারকে মেরে চোখ ফুলিয়ে দেওয়া হল। সমাজের ছি ছি শুনতে পাইনা কেন?
যেন বেশ হয়েছে এরকম ভাব। চোরেরা মার খেলে যেরকম হয়। মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ভাইরা মার খেল এই সেদিন । কজন নন- মেডিক্যাল লোকজন এর বিরুদ্ধাচার করেছেন অন্তত তাদের ফেসবুক এর দেওয়ালে ?? কজন তার দেওয়াল ভরিয়েছেন। জানতে পারলাম তারা যখন ডেপুটেশন দিতে যাচ্ছিল তাদের কে মারা হয়েছে, গালাগাল করা হয়েছে। ছেলে মেয়ে কেউ বাদ যায়নি ? তাদের দোষটা কোথায় ? ডাক্তারদের শ্রেণিশত্রু বানানো র যে স্লো পয়জনিং চলছে তা সমাজের এই দ্বিচারিতা থেকে স্পষ্ট। নাকি আমরা যেহেতু ডাক্তার, গালাগালি-মার, আমাদের পেশাগত অধিকার ?? কাল হয়তো আমার, বা আমার কোন জুনিয়র বা সিনিয়রের ভাগ্য হবে পার্টির হাতে মার খাওয়ার। রুগীদের জন্য রাত জাগা সার্থক হবে। 
পাবলিকের দাবী ডাক্তার রা ফিজ নেয় চেম্বারে তাই তারা কসাই। কি অদ্ভুত দাবী। বেশ করেছে নেয়। এখনো অনেক ডাক্তার আছেন যারা অত্যন্ত গরীব লোকেদের নিজের দায়িত্বে চিকিৎসা করান। আপনি ততটা গরীব ও নন যতটা ভাবেন সেটা আপনার বিশাল আলো আঁধারী রেস্তোরাঁর হাই মেগাপিক্সেল ওয়ালা ডিপি দেখলে বোঝা যায়। তাই দেখতে পান না। পাবলিকের দাবী ডাক্তার রা ভুল চিকিৎসা করে মেরে ফেলে। কি শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে আপনাদের এই দাবী করার ?? ডাক্তারদের চোখের বালি করলে আপনার চোখটাই নষ্ট হবে শিক্ষিত হিপোক্রিট রা। 
কজন ইঞ্জিনিয়ার বিনা পয়সায় ডিজাইন তৈরি করেছেন??  কজন রিসার্চ স্কলার বিনা পয়সায় দেশের জন্য পেটেন্ট দান করেছেন? 
কজন বুদ্ধিজীবী আর্টিস্ট বিনা পয়সায় তার শিল্প কে উপভোগ করতে দিয়েছেন ??
কজন শিক্ষক বিনা পয়সায় ছাত্র পড়িয়েছেন?  কজন শিক্ষক একজন ফেল করা স্টুডেন্ট কে ভালো ছাত্র বানাতে পেরেছেন ? হ্যাঁ মৃতপ্রায় অনেক সময় হৃতপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়া রুগীকে আমরা বাঁচিয়ে ফেরাই। আর এটা আইসিইউ, ওটি, ট্রমা কেয়ার গুলোতে অনেক সময়ই হয়। 
আপনারা শুধু পাপেট হিসেবে ইউজড্ হচ্ছেন হিপোক্রিটেরা। একটু ভাবতে শিখুন। আজ চুপ আছেন। কাল আপনার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে - কোন ডাক্তার কে পাশে পাবেন না! কারণ তারা তো আপনার শ্রেণীশত্রু। হ্যাঁ যে ইন্টার্ন ভাই রা সেদিন মার খেলো তারা কিন্তু চিকিৎসা জীবন শুরুর আগেই এটা শিখে নিল হিপো-কীটেরা। একটু ভাবা শুরু করুন। কার্ডিয়াক আরেস্ট হলেও এখনো চিকিৎসক দের কোষে কোষে রেসিডিয়াল অক্সিজেন কিছু বেঁচে আছে। তাই সিপিআর দিলে কাজ হলেও হতে পারে। যেদিন সেইটা শেষ হবে সেদিন ভগবান আপনাদের রক্ষা করবেন নিশ্চয়ই।

 শেষ করার আগে বলি, আমি ওই শিক্ষক মহাশয়কে আমার ভুল নাম্বার হাসি মুখে দিয়ে এসেছি। মেরে যাবে কলসীর কানা, একবার প্রেম দেবো, তারপর....


****
ডা: স্যাটা স্যান্যাল এর গল্প :

আমার কলিগ ছিল স্যাটা স্যান্যাল। জিনোটাইপ মেল হলেও ফিনোটাইপ একটু মেয়েলি টাইপের, কিন্তু ঋতুপর্ণ স্যারকে শ্রদ্ধা করি তাই ওনার মত করে প্লিজ ভাববেন না ! 
অদ্ভুত কথা বলার টেকনিক ছিল তার। যেসব পেশেন্ট পার্টি ঝামেলা করার মত ছিল আমরা ওকে পাঠিয়ে দিতাম।
একবার কিছু পেশেন্ট পার্টি বললো - "শালা ডাক্তার এবার মারবো!! "
 স্যাটা খুব সরল মনে কথাটা নিয়েছিল। স্যাটা
বললে- "ও মা তোমরা মারবে! হাউ রোম্যান্টিক! প্লিজ ওয়েট। একটু মেক আপ করে আসি। সেল্ফি স্টিক টা নিয়ে আসি, ফেসবুক লাইভ যাবো। একটু বাদে ভাইরাল হবে ভিডিও - সবাই দেখবে। আমাকে তো সুন্দর দেখাতে হবে, নাকি? তোমাদের মারার ভিডিও। তুমি আমি ফেমাস হয়ে যাবো একেবারে - যা তা! "
স্যাটা সিরিয়াসলি কথাগুলো বলেছিল, কিন্তু মেক আপ করে গিয়ে দেখে পেশেন্ট পার্টি কেউ নেই।
তারপর থেকে কোন ঝামেলা বুঝলেই ওকে পাঠানো হয় । ওর গায়ে অদ্ভুত একটা গন্ধ আছে। নতুন কোন বিদেশী ব্র‍্যান্ডের লোকাল আনাস্থেসিয়া হবে বোধহয়। একবার এক ঝামেলাবাজ পেশেন্ট পার্টি দেখে ওকে ডেথ ডিক্লেয়ার করতে পাঠানো হল । ও পেশেন্ট এর বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। তার বাবা র বুকে দুহাত দিয়ে মেরে মেরে সে কি কান্না। স্যাটা পেশেন্ট এর সাথে এত একাত্ম হয়ে যেত কি বলবো মনে করতো যেন নিজেরই কেউ হয়। যাই হোক, ওই বাবা কিছুক্ষণ পর ওই গন্ধে আর স্যাটার সমবেদনা জানানোর স্টাইলে জ্ঞান হারায়। এখনো ভেন্টিলেটর এ। ওদের বাকি পেশেন্ট পার্টি কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বলেছে ওই বাবা মারা গেলে যেন ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়। স্যাটা কে কেন যে এত ভয় কে জানে!!  তবে একবার স্যাটা মার খেয়েছিল। পেশেন্ট পার্টি স্যাটার বুকে ধাক্কা মেরেছিল। তারপর স্যাটা সাদা মনেই বললো - "আউচ্ কি লাগলো। দাদা শুধু সামনে!  এবার পেছনে মারুন! আমাদের কাছে প্যারাফিন, লিগনোকেন, ব্যথার মলম সব আছে। প্রথমে আপনি, তারপর আমি নেব। আপনারও তো মারতে গেলে লাগবে। কোন চিন্তা নেই "
সেই পেশেন্ট পার্টি কে আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি।


( সব ঘটনা, চরিত্র কাল্পনিক)

****


#সিরিয়ার_জন্য
চলছে সময়, যেমন চলে ; মেকী মুখে মেকী হাসি,/
ডিপ্লোম্যাসির চিরকুটে -/
মেকী ভালো আছো ?  ভালো আছি। /
যুদ্ধ চলছে, যেমন চলে- মরছে শিশু নারী,/
সব যুদ্ধেই আমরা সবাই কেউ জিতি, কেউ হারি।/
মরছে রুগীও, যেমন মরে; চিকিৎসকের দায়,/
সব মৃত্যুই গাফিলতি - মনে সন্দেহ আর ভয়।/
একটা কথা প্রশ্ন এলো আজকে আমার মনে,/
আজকে এই কঠিন সময়ে শুধাই সকল জনে।/
যুদ্ধ হতে তো অনেক খরচ, জিডিপি উপড়ে ঢালি,/
স্বাস্থ্য তো প্রাণ বাঁচায়, কেন তখন পকেট খালি?/
হাসপাতালে মরলে শিশু চিকিৎসক এর দায়-/
এত যে মানুষ যুদ্ধে মরে কার দায় বর্তায়??


*****


এটা ট্রোল নয়, সত্যিই যে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায় এখন লেফ্টিস্ট দের রাখা হয়। দু-তিন বছর আগেও যারা লাফাতো 'আমার রক্ত লাল, আমিও লাল' - এসব বলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়না। ত্রিপুরা র পর একমাত্র ভারতের দক্ষিণ বামে এই বাম দের পাবেন। এমন সময় একটা ছবি দেখলাম - আগরতলায় জেতার পর লেনিনের মূর্তি দড়ি ধরে টেনে মাটিতে ফেলছে কিছু গেরুয়া রংগের টুপি পরা লোকজন । অন্য অনেক রাজনীতিবিদের মতই লেনিন একজন বিতর্কিত নাম ইতিহাসে। ইতিহাস, রাজনীতি নিয়ে খুব কম জানি, তবে লাল সন্ত্রাস কথা টা জানা সবার। তার সাথে এটাও জানা তত্কালীন তরুণ সমাজে যারা সমাজ পালটানো র কথা ভাবতেন তাদের জীবনে লেনিনের প্রভাব। 
কয়েকটা জাস্টিফিকেশন বলা হচ্ছে মূর্তি ভাংগার পেছনে -
ভারতে কেন লেনিনের মূর্তি থাকবে? ভগত্ সিং এর মূর্তি বসানো হোক। ভারতের ইতিহাসে লেনিনের অবদান কি? যারা চান লেনিনের মূর্তি থাকুক তারা যেন চীন, রাশিয়া তে চলে যায়, রাশিয়া তে কোথাও লেনিন মূর্তি ভাংগা হয়েছে ইত্যাদি, ইত্যাদি।

রাগ শান্ত কর ভাই। তোমার পরিবারের কেউ নিশ্চয়ই রাশিয়াতে ওই সময় লাল সন্ত্রাসে মরেছিল তাই তোমার রাগের যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু রাগে অনেক সময় বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। তর্কের খাতিরে ধরলাম ভারতে লেনিন এর মূর্তি বসার কোন যুক্তি নেই, তাবলে ভাংগার যুক্তি আছে এটা কে বললো ?
রাশিয়া তে কোথাও লেনিন মূর্তি ভাংগা হয়েছে বলে আমাদের ও যদি ভাংতে হয়,  একটু জানতে যাই রাশিয়ার ফলোয়ার তাহলে কারা?  আর অন্যান্য প্রশ্নে রাশিয়ার সমকক্ষ হতে পারছিনা কেন? 
 অদ্ভুত বাইনারি র মধ্যে দিয়ে চলছি আমরা। কেউ এসে হঠাত বললো তুই সরকারের এই নীতি সাপোর্ট করিস কি করিস না? যদি বলি 'করিনা '- যা পাকিস্তান যা চীন যা, থাইল্যান্ড যেতে কেউ বলে না যদিও ..  আর যদি বলি 'করি' আমাকে ধরে নিয়ে যাবে চল আমাদের সাথে দল বেঁধে ঝগড়ায় নামবো বাকিদের সাথে। এই বাইনারি কিসের ভাই?
ভারতের ইতিহাসে ধরা গেল লেনিনের অবদান নেই, তাহলে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গান্ধী মূর্তি কেন ? ওটা তো ওরা ভেংগে ফেলেনি। আইসিস এর বুদ্ধ মূর্তি ভেংগে ফেলার সাথে এর পার্থক্য কোথায়? এভাবে কোন আদর্শ মুছে ফেলা যায় ??  বিলুপ্তপ্রায় দের তো সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। নিজেরাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন বিলুপ্তপ্রায় নয়। যারা চায় লেনিনের বদলে ভগত্ সিং এর মূর্তি বসাতে তারা কি জানেন ফাঁসির ঠিক আগে ভগত্ সিং 'লেনিন ও তার বলশেভিক আন্দোলন' উপর বই পড়ছিলেন বলে জানা যায়। তারা কি জানেন এই বাংলায় একজন কবি ছিলেন-  সুকান্ত ভট্টাচার্য। মূর্তি তো ভাঙ্গবেন। কিন্তু তাঁর লেখা থাকবে - " বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমি-ই লেনিন। "

এবার আসি যেসব বাম রা মনে মনে গভীর দু:খ পাচ্ছেন এই ঘটনায়। ঘুষের টাকায় গান্ধীর ছবি রাখা নোট ইউজ হয় এখনো। কারণ ডিজিট্যাল মানি ধরা পড়ে যাবে। গান্ধীর ছবি দেওয়ালে টাংগিয়ে দুর্নীতি হয়। তাতে গান্ধীর ভাবমূর্তি খারাপ হয়না। গান্ধীর চিন্তাধারা এভাবে মোছা যায়না। তেমনি লেনিনবাদ প্রাসংগিক হলে তাকেও একটা মূর্তি ভেংগে মোছা যাবেনা। তবে স্টিফেন স্পিলবার্গ এর 'লেনিন' এর উপর যে ছায়াছবি টি হবে বলে শুনছি সেখানে লিও ডি ক্যাপ্রিও যদি প্রধান ভূমিকায় থাকেন তাহলে লেফট লিবারেল ( সোনার পাথরবাটি র মত অনেকটা ) আর গেরুয়া টুপিধারীরা যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওটা ব্যান করবে এটা ভেবে এখন থেকে কৌতুক অনুভব করছি।।



*****


#KishanLongMarch
তখন ভারতে ব্রিটিশরাজ চলছে। ব্রিটিশ সরকার হঠাত্ এক আইন প্রণয়ন করে সমুদ্রতীরে লবণ উত্পাদন এর উপর ট্যাক্স চালু করল , অন্যথা সেটি বেআইনি বলে ধরা হবে। সালটা ১৯৩০। একজন শ্বেতবস্ত্র পরিহিত মানুষ ঠিক করলেন এসব মানবোনা। মাস টা মার্চ মাস। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সবরমতী আশ্রম থেকে ৩৯০ কিমি হেঁটে Dandi পৌঁছালো একটা জনজোয়ারের মিছিল। গান্ধীজী নিজে হাতে সেখানে লবণ বানিয়ে আইন ভাংগলেন। কেন এসব বাজে কথা বলছি ? প্লিজ নোট মাই পয়েন্ট, একটু পরেই আসছি ফিরে।
এবার দেখা যাক, ২০১৮ সালের মার্চ মাস। ৩০ হাজার এর উপর কৃষকের মিছিল নাসিক থেকে হেঁটে পৌঁছালো মুম্বাই শহরের বুকে। বেশিরভাগের পায়ে জুতো ছিল না। হাতে ছিল লাল ঝান্ডা, মাথায় লাল টুপি, মুখে স্লোগান আর বুকে একরাশ যন্ত্রণা। তারা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। কৃষক আত্মহত্যা হয়েই চলেছে। দেনার দায়ে ডুবে। অনেক দিনের পূঞ্জিভূত ক্ষোভের বিষ্ফোরণ যেন বাণিজ্যনগরীর বুকে। হিউমানিটির উপর বিশ্বাস ফিরে আসে যখন দেখি এই মিছিলে আই আই টি বোম্বের ছেলেরা সাপোর্ট দেখাচ্ছেন পথে বেরিয়ে এসে। যে মুসলিমদেরকে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা সহ্য করতে পারেনা, তারা খাবার নিয়ে পথে অপক্ষা করছে " কিষাণ লং মার্চ " এসে পৌঁছানোর জন্য। শিখ দল, সাধারণ মুম্বাইবাসি চপ্পল, খাবার, জল নিয়ে রাস্তায় হাজির। এদের কোন পেড মিডিয়া কভারেজ নেই। কোন কৃষক টুইটার করেন না হয়তো। কিন্তু #KishanLongMarch টুইটার ট্রেন্ড এখন। ওনারা দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে আন্দোলন করে দাবী আদায় করতে হয়। এবার প্রসংগে ফিরে আসি। 
 কথা কিছু বলা হচ্ছে হিসেব দেওয়া হচ্ছে যে এই লং মার্চ করতে কে স্পনসর করছে। কেউ ওনাদের লাল ঝান্ডা দেখে নাক সিঁটকোচ্ছেন। কেউ ওনাদের মাও বলে দিচ্ছেন। লাল জনস্রোত দেখে কেউ লাল সন্ত্রাসের ভয় পাচ্ছেন। 
আমি ইতিহাসের ছাত্র নই। স্কুলে বোরিং ইতিহাসের শিক্ষকদের সৌজন্যে একদমই ভালো লাগতো না পড়তে। তখন বিবেকানন্দের একটা কথা পড়েছিলাম - 'ইতিহাস না জানলে ভবিষ্যত অন্ধকার।'
কেন বলেছিলেন তখন বুঝিনি,  আজ আপনাদের দেখে বুঝি। আমার তথ্যে ভুল হয়ে থাকলে সংশোধন করে দেবেন এটাই কাম্য। তবে বলি, গান্ধীজীর ওই ডান্ডি মার্চ কে "হোয়াইট ফ্লো রিভার" বলা হয়ে থাকে এটা জানেন তো ?? কারণ ১৯৩০ সালে ওই জনস্রোতের সবাই সাদা টুপি আর কাপড় পড়ে হেঁটেছিল। আপনাদের মনে আসেনি ইতিহাস পড়তে গিয়ে যে কে স্পনসর করেছিল ??  নাকি গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল ?? তর্কের খাতিরে যদি টাকা দেওয়া হয় আপনি হাঁটতেন তো ডান্ডি মার্চে ২৪ দিনে রোজ দশ মাইল করে ?? 30k People ???
আপনাদের চোখে ক্যাটারাক্ট হোক না হোক, আপনারা অন্ধ হয়ে পড়েছেন কিন্তু। রাজনীতি আর ধর্ম মানুষের চোখের ক্যাটারাক্ট এর থেকেও বেশি ক্ষতি করে জানবেন। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। 
History repeats itself .. Revolution has no colour ..
Vive la révolution ..



*****

খুব সম্প্রতি সি.এম.আর.আই এর একজন ডাক্তারকে খুব বাজে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিফেম করার চেষ্টা করছেন একজন দিল্লীর প্রফেসর ভদ্রমহিলা। ডাক্তার বন্ধুরা বলছে ডাক্তারের দোষ নেই, ডাক্তারবাবু নিজেও বলছেন। আমার মতে, অবশ্যই দোষ আছে ওনার। একজন নট রেকর্ডেবল বিপি র ডায়াবেটিক আকিউট কিডনি ইঞ্জুরি এর পেশেন্ট কে প্রায় সারিয়ে তোলার চেষ্টা দোষ তো বটেই। একি কথা ডাক্তার হয়েছ - তোমার তৃতীয় চক্ষু থাকবেনা! এর পরে স্ট্রোক হতে পারে তুমি আগে থেকে বুঝবেনা ? ওরা রুগির আত্মীয়। পেশেন্ট কে ফেলে রেখে তার সুগার বাড়তে পারে, ইনসুলিন মিস করতে পারে অনেক কিছুই করতে পারে, তুমি কেন সারাতে যাবে? দোষ তো বটেই। সোশ্যাল মিডিয়া তো রয়েছে আপনার মত রাক্ষস দের মারার জন্য। ডাক্তার মানে রুগী দেখবে ফটাফট বাঁচিয়ে দেবে গ্যারান্টি সহকারে। কি চাহিদা! আইনত কিছু করতে পারবেনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু আটেনশন ড্র করি মানুষের।
এ সব নোংরা লোকেদের মাঝে একটা কথাই মনে হয় কেন ডাক্তার হলাম। না সত্যি এসব এখন আর মনে হয়না। সারা রাত জেগে যখন আমরা নট রেকর্ডেবল বিপি র ৬.৮ পিএইচ ব্লাডের পেশেন্ট কে ফিরিয়ে আনি সকালে সে যখন চোখ খুলে তাকায় অবাক হয়ে উইথাউট নোইং সে কোথায় ছিল এতক্ষণ, তখন কে আমাকে কোথায় ডিফেম করলো খেয়াল রাখিনা। আমাদের মনে শান্তি হয়। রাক্ষস ভেবে মারতে পারো। কিন্তু এই শান্তি তোমরা পাবেনা। সেই বাড়ি ফিরে আমরা বইয়ের পাতায় প্যাশনেটলি ডুবে যাবো আরো ভালো ভাবে কিভাবে যম দেবতার সাথে যুদ্ধ করা যায়। রাক্ষস হয়ে তোমাদের দেবতার মুখের গ্রাস ফিরিয়ে আনা যায়। তোমরা সোশ্যাল মিডিয়া, চা র দোকানে, লোকাল ট্রেনের গসিপে, হস্পিটালে রাক্ষস মারতে মন দাও বরং। এই দোষটা ডাক্তারদের প্যাশনে মজ্জাগত।।

****

"মথুরাপুরে শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থার শিকার হলেন একজন নারী। লুংগি পরিহিত জনা বিশেক যুবক ওই নারীকে মারতে মারতে টেনে বের করে আনেন বলে অভিযোগ। গতকাল একটি সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যাচ্ছে ওই অভিযোগের সত্যতা।" 
এই পর্যন্ত সমাজের সবার রক্ত গরম হবে।

 যেই শেষ লাইনে লিখবো ওই নারী একজন ডাক্তার। 
ব্যাস, ও ডাক্তার, তাহলে নারী নয়..
শেষ লাইনের ওই একটা শব্দ যদি শিক্ষিকা, প্রফেসর, কেরানী, উকিল, বেশ্যা, ক্রিমিনাল আর যা কিছু হত রাস্তা মোমবাতি তে ভরে যেত।
যেখানে এই রকম নোংরামি চলছে ডাক্তারদের নিয়ে, আমরা এক অদ্ভুত অস্তিত্ব সংকটে দাঁড়িয়ে। সরকারী, বেসরকারী, প্রাইভেট চেম্বার সব যায়গায় আমরা নিরাপত্তার অভাব দেখছি। আমাদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কেউ যে কোন সময় ঢুকে যা খুশি করতে পারে। 
College life এ যারা আন্দোলনের সময় ব্যক্তিগত কাজের অযুহাতে দলছুট হত, তারাও আজ বুঝতে পারছে কি ভুল তারা করেছে। সরকারি- বেসরকারি নার্সিংহোম - চেম্বার কোথাও কোন ছাড় নেই। এন আর এস এ দু বছর আগে একজন দিদি কে পার্টি ছুরি দেখায়। পেরিফেরি তে তাহলে কিরকম অবস্থা বোঝাই যায়। সবার মনে অসহায় প্রশ্ন - পালানোর কি কোন পথ নেই ??

মানুষ চায়না আমরা থাকি। কিন্তু পালিয়েও যাবো কোথায় নিজের দেশ ছেড়ে। 


 যেটুকু করতে পারি একে অপরের পাশে থাকা এই কঠিন সময়ে। ডা: কৃষ্ণা বর্মণ, পাশে আছি।

****

Ajkal সেরকম কোন বড় চিকিৎসায় গাফিলতির খবর জোগাড় করতে না পেয়ে একজন সাংবাদিকের চাকরি যায় যায় অবস্থা। তো অগত্যা তিনি গেলেন তার বাল্যবন্ধু চেঁচিও কাকু র কাছে। চেঁচিও কাকু নতুন টাইম মেশিন বানিয়েছে। সেই টাইম মেশিনে চেপে সাংবাদিক সাহেব পৌঁছে গেলেন ২০০ বছর আগের চিকিৎসায় গাফিলতির খবর জোগাড় করতে। মনে মনে আগেই একটা ক্যাপশন ভেবে নিলেন উনি - "আজকের চিকিৎসার ভুল আজকের থেকে শুরু নয়, সব পূর্বপুরুষ দের থেকে শুরু এই কসাই জমানা।"

মেশিনটা ভালোই বানিয়েছে বটে। পৌঁছে গেলেন ২০০ বছর আগে। 
একজন ডাক্তারের ঘরে গেলেন। দেখলেন একজন রুগী হিস্টিরিয়ার। তাকে ডাক্তার গরম তেল আর জলের ছিটে দিচ্ছে। ঝাঁটা পেটা করছে। আর রুগীকে বলছে - "আমি জানি তুই কোন প্রেতাত্মা হবি। বল্ তুই কে?"

রুগীর পরিবার চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে। প্রচুর হই হট্টগোল। তার মাঝে রুগীর মা কে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন -
"নমস্কার আমি আগে এটিপি আনন্দ এ কাজ করতাম আর এখন ৪৮ ঘন্টা চ্যানেলে কাজ করি, এই যে চিকিৎসায় গাফিলতি-ভুল হচ্ছে সেটা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?"

মা তাকালো অবাক হয়ে। বোধহয় ঠিক করে শুনতে পায়নি, তারপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্বামী কে ডেকে বললেন - "এই শোনো এই লোকটা আমাকে এই টিপি আনন্দ.. ৪৮ ঘন্টা ধরে.. কিসব নোংরা কথা বলছে!  কিসব 'গাফিলতি' নাকি নোংরা শব্দ বলছে। যেগুলো কোনদিন শুনিও নি।"

সাংবাদিক বিপদ বুঝে কেটে পড়লেন। তারপর গেলেন আর এক ডাক্তারের ঘরে, দেখলেন একজন সাপে কাটা রুগীকে শেকড়ের গন্ধ নাকে দিয়ে চিকিৎসা চলছে।
রুগীটির নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।
 দেখেই বললেন - " আরে এ তো বিষধর সাপ কামড়েছে, একে এখুনি আন্টিভেনম দিতে হবে। আমার সাথে চলুন আমি নিয়ে যাবো।"

একজন বললো - 'শালা তুই ডাক্তার কে শেখাতে এসেছিস, তুই কে বে? ' 
উনি অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু মানুষদের মনে তখনো সামাজিক ডাক্তার-বিদ্বেষ এর বিষ না ঢোকায়, তাদের অভঙ্গুর বিশ্বাসে তারা না বুঝে মেরে বের করে দিলেন সাংবাদিককে । 

চেঁচিও কাকু ফিরিয়ে আনলেন ওনাকে আবার Ei samay এর Bartaman এ। অতীতে চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে খবর জোগাড় করতে গিয়ে নিজের উপর সাংবাদিক নিগ্রহ নিয়ে একটা খবর লিখলেন উনি । আর তার সাথে এটাও লিখলেন যারা সাংবাদিকদের শিরার বদলে ধমনীতে চ্যানেল করা লেখা নিয়ে হেসেছিলেন তারা আসলে দূরদর্শী নয়। এর জন্য চেঁচিও কাকুর টাইম মেশিন লাগে। যিনি লিখেছিলেন তিনি আসলে ভবিষ্যত থেকে এসেছিলেন আমাদের সময়ে। আপনাদের দোষ আপনারা সময়ে পিছিয়ে। Pratidin সংবাদমাধ্যম দেখুন, এগিয়ে থাকুন। 

প্রসংগত, সেই বছর ওই চ্যানেলের এম.এল.এ ফাটাকেস্ট পুরস্কার ওই সাংবাদিক পেয়েছিলেন। খবর দেখেনা, শোনেনা, খবর তৈরি করে। ক্যাপশন আগে তৈরি হয়, খবর পরে।


****



আমাদের চিনে রাখুন,
রাস্তায় রেপ হলে, কেউ মার খেলে -
আমরা মুখ ঘুরিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যাই।
আমাদের চিনে রাখুন,
সেন্ট্রাল পার্কে, মিলেনিয়াম বা ভিক্টোরিয়া তে
দেখবেন দিচ্ছি উঁকিঝুঁকি -
চোখের ফলাতে।
আমাদের চিনে রাখুন,
ঘরে বউ কে দাবিয়ে রাখি সিংহ এর মত ,
কোন মেয়েকে না চিনে তার সাথে শুয়েছি ,
একটা সই আর সাত পাক ঘুরে,
ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দোহাই জোরে।
আমাদের চিনে রাখুন,
বউকে পালন করতে শালী কে পাই ফ্রি,
এটা সমাজের আদিম ডিক্রি,
যখন তখন শালীর গায়ে হাত দেওয়া যায়,
ঘরের কোণে ।
না চিনলে পস্তাবেন,
কারণ রাস্তায় যখন নিজের প্রেমিক-প্রেমিকা কে আলিঙ্গন এর মত ভয়াবহ অপরাধ করবেন, তখন আমরা আবার নিজেদের অস্তিত্ব জানাবো -
ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির জোরে,
উদুম কেলাবো।
সই করে বা না করে অজানা মেয়ে কে রেপ করা অপরাধ নয়,
ভালোবেসে আলিঙ্গন আজ অপরাধ ।।



******

একটু দাঁড়ান, আপনি কি সুস্থ?
নিজেকে প্রশ্ন করেছেন কখনো?
আমি করি নিজেকে, আপনি করেন?
আমি খুব অসুস্থ বোধ করছি,
আমার ঘিলু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
কেন?
যে যুগল মার খেলো মেট্রোতে তারা ঠিক,
যারা মেরেছে তারা মনে করেছিল তারা ঠিক,
কেউ এই পক্ষে,
কেউ বিপরীতে।
ওরা নিজেদের ঠিক মনে করে মেরেছিল,
আজ তোমরা ঠিক মনে করে যাকে তাকে -
দিচ্ছ সুন্দর গালাগাল।
চারিদিকে যেন ট্রায়াল চলছে।
হুজুগে কেউ দোষী হলে তার মব লিঞ্চিং।
শারীরিক বা মানসিক ভাবে।
নিজে ঠিক বলে মারছ? নাকি অন্য ব্যাপার?
অফিসে রোজ বসের গালাগাল,
ঘরে ফিরে বউ এর গালি,
রাস্তা ঘাট ভোট গুন্ডায় জমজমাট,
ট্রাফিক জ্যাম,
ব্যাংকের লাইন,
ট্রেন-বাস- ট্রামে ভিড়ে ঠাসা প্রত্যেকটা দিন,
প্রত্যেকটা অন্যায়,
প্রত্যেকটা বিকৃতকাম,
প্রত্যেকটা চেপে রাখা হিংসে, হতাশা,
তোমার মনে দিচ্ছে গালাগালির ভাষা,
মেট্রোতে তোমরাই মারছো।
তুমি আলাদা কোথায়?
যার মত বিরোধী,
যার মন অন্ধ - ভাগাড়,
তারও রয়েছে অধিকার,
সুস্থ বিচার চাওয়ার।
যে সঠিক সে হিংসা কে ভালোবাসেনা।।
******




No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...