Saturday, September 7, 2024

লালবাজারে দ্বিতীয় দিন - We shall overcome

 সকাল ছটা। সেই দুপুর থেকে একটা গোটা রাত শেষ, তখনো সিপি মহাশয়ের ঘুম ভাঙেনি। এড্রেনালিনে কেটে গিয়েছে ১৬ টা ঘন্টা, এবার? চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে পঞ্চাশ জন পড়ে রয়েছে। কেউ চা খেতে খেতে বলছে - আমার মনে হয় যারা ফ্রেশ হবে বলে গেছে, আর মনে হয় ফিরবেনা। আরেকজন উত্তর দিলো - তবু আমরা যেকজন আছি, পড়ে থাকবো। 

আরেকজন একটু আশাবাদী হলো - না, না। সবাইকে ডেকেছি। দশটা বাজতে দাও না। সবাই আসবে। 

আমিও ডেকেছিলাম সবাইকে। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। কাল সারা রাত যা গেছে। পুলিশের রাবার গানের সামনে  গান-বাজনা - স্লোগান। 

পুলিশ শুরুতে হেলমেট পরে বিরাট কোহলি সাজলেও একটু রাত হতেই বুঝে গেছে আমরা ছ্যাবলামি করছি জাস্ট ওদের সাথে। ওরাও তাই হেলমেট খুলে চেয়ারে বসে আছে। 

হঠাৎ লোকজন দাবী তুললো আমরা ব্যারিকেডের এপাশে রাস্তায় ট্রামলাইনের উপর শুয়ে আছি, আর তোমরা চেয়ারে বসে আরাম করছো। ভোরবেলা দেওয়া হলো জন-গণ-মন বাজিয়ে। পুলিশ উঠে দাঁড়ালো আমাদের সাথে। একসাথে গাইলাম। বুঝলাম - দেশ এখনো স্বাধীন আছে। আর থাকবে। 

কিন্তু এখন সকালে বেশি লোক আর নেই। আমি আবার এক কাপ চা খেলাম। সিগ্রেট টানলাম। একটা ছোট্ট জমায়েতে জনমত কি জানতে গেলাম। বুঝলাম, কেউ আর ওঠার কথা ভাবছে না। সত্যি বলতে কি - আমিও না। সবার মাথায় এক জেদ চেপে গেছে - এর শেষ দেখে ছাড়বো। পুলিশ ভেবেছিলো, সকালে লোক কমে গেলে আমরা অবস্থান তুলে নেবো। কিন্তু সেটা হলো না। ফোন করলাম বেহালার এক বন্ধুকে। এক বোতল ও.আর.এস আর একটা প্যারাসিটামল আনতে বললাম। সেও ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলো। তার জ্বর ছিলো। কিন্তু এক ডাকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে এলো। লোকজন ছবি তুলে গ্রুপে গ্রুপে পাঠাতে লাগলো। ইটস নাও অর নেভার। লোক কম। সবাই সবাইকে ভরসা দিচ্ছে - আরে চিন্তা নেই, লোক আসবে। 

আর ওরা এলো। আমার বন্ধু এলো। তার এক ঘন্টার পরেই লোকজন ফিরে এলো। জানিনা সবাই কিভাবে তখনো স্লোগানিং করে যাচ্ছে। শরীরে এক ফোঁটা জোর নেই। শুধুমাত্র মনের জোরে। ততক্ষণে প্রচুর লোক আমাদের জন্য কেউ মুড়ি, কেউ রুটি কলা, কেউ সন্দেশ, কেউ কোল্ড ড্রিংক্স, কেউ জল ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে যাচ্ছে। এত খেয়েছি আমরা একজন তো বলেই দিলো - আর খেতে পারছিনা। এবার ঘুমিয়ে পড়বো। 

মানুষের এত ভালোবাসা আমরা সেদিন পেয়েছি। সেই মানুষের কোন ধর্‌ম, বর্‌ণ, জাত কিচ্ছু ছিলো না। আমরা সবাই সেদিন এক মানুষ ছিলাম।

আর দুপুর থেকে বিকেল গড়াতেই হল বাংলায় বাস্তিল দূর্গের পতন৷ আকাশটাও সেদিন কেঁদেছিলো ছাত্র আন্দোলনের এই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে।। 

No comments:

Post a Comment

পাঁচ মিনিট

"বিষ টা খাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতো!! " কথাটা শেষ করতে না করতেই গলা ধরে এলো কিরণ এর। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এর বাইরে ...